#স্বামী
#লেখনীতেঃ_নুসরাত_জাহান
#পর্বঃ_২৭
সারারাত বিছানায় ছটফট করছে সোহান। এপাশ ফিরছে তো ওপাশ ফিরছে তবুও দুচোখে ঘুম আসছে না। বিছানার বালিশের উপরে মাথা রেখে চোখদুটো বন্ধ করে শুয়ে আছে সোহান। মাথার একপাশে চিনচিন করে ব্যথা করছে। কষ্টে দুচোখ দিয়ে পানি পরছে। মাকে ডাকার জন্য অনেকবার চেষ্টা করেও মুখ দিয়ে আওয়াজ বের করতে পারছে না।
জান্নাত শুয়ে শুয়ে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে আছে। ঘড়ির কাটা ঠকঠক করে ঘুরে চলেছে। হঠাৎ ক্যালেন্ডারের দিকে চোখ পরতেই বুকের ভেতরটা নাড়া দিয়ে ওঠে। আজকে সাথীর বার্থডে ছিল ইশশ কত স্বপ্ন ছিল ঘটা করে আয়োজন করবে কিন্তু এক ধাক্কায় সব শেষ হয়ে গেল। খুব খারাপ লাগছে এটা ভেবে একটাবার কল করেও উইশ পর্যন্ত করতে পারল না।
মধ্যরাতে জান্নাতের মা রুমে এসে দরজায় কড়া নাড়ল।
জান্নাত বিছানা দিয়ে ধড়মড় করতে করতে নেমে মা আসছি বলে চেঁচিয়ে উঠল। দরজাটা খুলে দিয়ে মাকে এত রাতে দেখে অনেক অবাক হয়ে বলল,
– মা তুমি এত রাতে? জরুরি কোন কাজ আছে নাকি?
– তুই এখনো ঘুমাসনি?
– ঘুম যে আসছে না তাই শুয়ে ছিলাম। বাবা কোথায়? কোন সমস্যা হয়নি তো? জলদি বলো টেনশন লাগছে।
– টেনশন করিস না। তোর বাবা অনেক আগেই ঘুমিয়ে পরেছে। রাতে ঘুমের মেডিসিন খেয়েছে তো তাই ঘুম চলে এসেছে।
– বাবা কবে থেকে ঘুমের ওষুধ খাওয়া শুরু করল। আমি তো জানতামই না।
– আজকেই প্রথম খেয়ে শুয়েছে। প্রচণ্ড রকমের মাথা ব্যথা ছিল যার কারণে আমি নিজে থেকে ওষুধ খেতে বলেছি।
আচ্ছা জান্নাত শোন, এত রাতে তোর কাছে যে কারণে এসেছি সেটা হলো জাকির তোর জন্য একটা ফোন রেখে গেছে সীম কার্ডসহ। এখন তোর যদি আপত্তি না থাকে তাইলে ব্যবহার করতে পারিস।
– আমার তো ফোনের দরকার নেই আমি যেমন আছি দিব্বি ভালো আছি। নতুন করে কোন ঝামেলায় জড়াতে চাচ্ছি না
– কীসের ঝামেলা মা?
– কিচ্ছু না মা।
– আচ্ছা বাদ দে আমি যেটা বলছি সেটা শোন, ফোনটা তুই রেখে দে। তুই যদি ফোনটা না নিস আর সেটা যদি তোর বাবা জানতে পারে যে জাকির তোকে ফোন দেওয়ার পরেও ফিরিয়ে দিয়েছিস তাইলে সে খুব কষ্ট পাবে।
– দীর্ঘশ্বাস নিয়ে জান্নাত বলল, ঠিকাছে আমি রাখছি তবে নিজের ইচ্ছায় না তোমার অনুরোধে।
সোহানের ফোনটা বেজে ওঠে। দুইবার বাজার পরে কলটা রিসিভ করে হ্যালো বলতেই অপরপাশ থেকে বলল,
– হ্যালো জান, কেমন আছো? তোমার বউ তো তোমাকে ছেড়ে চলে গেছে। ভালোই হলো আপদকে তাড়ানো লাগেনি নিজে থেকেই চলে গেছে।
– কে আপনি?
– ওহ্ জান, এভাবে কথা বলছ কেন? মাত্র কয়েকমাসের ব্যবধানে বউকে পেয়ে আমার কণ্ঠস্বরটাও ভুলে গেছ হায়রে পোড়া কপাল আমার।
– হোয়াট রাবিশ। এতক্ষণ ধরে কীসব উল্টা পাল্টা বলে যাচ্ছেন। আমি আপনাকে চিনি না আর যদিও কখনো চিনে থাকি তাইলে সেটা অতীত। আর অতীতকে মনে করার মতো বোকা এই সোহান নয়।
– এই তুমি আমাকে ধমকাও কেন? তার উপরে আপনি করে বলছ? তোমার বউ কী তোমাকে আমার চেয়ে হ্যাপি রেখেছে? আমাকে একটাবার সুযোগ দাও দেখবে আমার মন প্রাণ উজার করে তোমাকে ভালোবাসা দিব। কোনদিন অভিযোগ করার সুযোগ দিব না। আসবে সোহান? খুব মিস করছি তোমাকে। তোমার ঠোঁটের ছোঁয়া পাওয়ার জন্য পাগল হয়ে আছি। একবার এসে আমার মনের বাগানে ধরা দাও।
– দেখুন এখনো ভদ্রভাবে বলছি তবুও যদি না শোনেন তাইলে মাথা খারাপ হয়ে যাবে। এমনিতেই খুব চিন্তায় আছি তার উপরে আপনি এসব বলছেন।
– তুমি বারবার আপনি করে বলছ কেন? আমার নেশা কী উঠে গেছে। আচ্ছা সোহান তুমি এখন আমাকে না চেনার অভিনয় করছ কেন? তুমি কী অন্যকোন মেয়ের সাথে শুয়ে আছো? যদি এমনটা হয় তাইলে তো খুলে বলবে নাকি! আমি তোমার জন্য সারারাত অপেক্ষা করতে পারব। আজকে আমি তোমার জন্য, হুম শুধুমাত্র তোমার জন্য নাইটি পরেছি। আমি জানি তুমি এমন পোশাক খুব পছন্দ কর। সোহান তুমি তাড়াতাড়ি এসো আমি আর পারছি না। আরেকটা কথা তুমি আসার সময় কনডম নিয়ে এসো না হলে তোমার সমস্য আরও বেরে যাবে।
অপরিচিত নাম্বারের মেয়েটির কথা একদম পছন্দ হয়নি সোহানের। মূহুর্তের মধ্যেই পায়ের রক্ত মাথায় উঠে গেছে সোহানের। ওই মাগি তোর সাহস হলো কীভাবে আমাকে এই ধরণের কথা বলার। তোকে আমি চিনি না আর তুই আমার নামসহ জেনে ইচ্ছা করে বিরক্ত করছিস। তোর যদি এতই চাহিদা মিটানোর ইচ্ছা জাগে তাইলে রাস্তায় নাম অনেকগুলো মাল পেয়ে যাবি যাদের দিয়ে সারারাত চাহিদা মেটাতে পারবি। আরেকটা কথা বিয়ের আগে আমার কাছে সব মেয়েরাই সুন্দর ছিল কিন্তু বিয়ের পরে এখন একটাই মেয়ে সুন্দর সেটা হলো জান্নাত। একদম জান্নাতের মতো পবিত্র। যার সাথে তুলনা করলে তোর পাপা হবে। কথাগুলো এক নিঃশ্বাসে বলে ফোনটা কেটে দিল সোহান। ওর মাথায় এখন রক্ত উঠে গেছে। কাছে পেলে আজকে হয়তো জানে শেষ করে দিত।
এমনিতে জান্নাতের কষ্টে মাথাসহ সমস্ত শরীর ব্যথা করছে।
২ দিন পরে,,
সারাদিন টিভি দেখে সময় কাটায় জান্নাত। সন্ধ্যার পরে জাকির ভাই আসলে তার সাথে গল্প করে বাকিটা সময় কেটে যায়। আর কয়েকদিন পরে সে চলে যাবে তার গন্তব্যে।
রাতের ডিনার করে বিছানায় শুয়ে আছে জান্নাত। হঠাৎ
সোহানের স্পর্শে ঘুম ভাঙল জান্নাতের। সোহানকে পাশে দেখে ভুততততত বলে চিৎকার দিয়ে ওঠে। সোহান এই মূহুর্তে জান্নাতের পাশে কীভাবে আসল ভেবেই পাচ্ছে না জান্নাত।
– এই জান্নাত আমি সোহান। আমি কোন ভুত না।
– ভুততততত, মা ভুত।
সোহান জান্নাতকে জড়িয়ে ধরে মূহুর্তেই ঠোঁট দখল করে নেয়।
জান্নাত তো পুরো অবাক। না এটা সোহান হতে পারে না। সোহানের বেশ ধরে ভুত এসেছে বলে আরও জোরে চিৎকার করার চেষ্টা করছে। একটুপরে সোহানকে গায়ের সমস্ত শক্তি দিয়ে ধাক্কা মারল জান্নাত। সোহান বিছানা দিয়ে নিচে পরল। আউচচচচচ বলে জান্নাতের দিকে তাকায়।
– জান্নাত এভাবে কেউ ধাক্কা মারে?
জান্নাত তো পুরো অবাক। তাইলে কী সত্যি সোহান এসেছে?
#স্বামী
#লেখনীতেঃ_নুসরাত_জাহান
#পর্বঃ_২৮
সোহান ফ্লোর থেকে কোনভাবে উঠে জান্নাতের পাশে বসে বলল,
– এই মেয়ে কী সমস্যা তোমার? আমি কোন ভুত না, আমি সোহান। এত রাতে বাচ্চাদের মতো চিৎকার করছ কেন? মাথার স্ক্রু কী ঢিলা হয়ে গেছে? বাপের বাড়িতে কয়েকদিন এলে এর ভেতরে আমাকে ভুলে গেলে।
জান্নাতের এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না যে এটা সোহান! সোহান তো বলছিল কখনও আমার বাবার বাসায় আসবে না। গ্রাম ওর পছন্দ না তাইলে এটা নিশ্চয়ই সোহানের বেশ ধরে ভুত এসেছে। বাবা সন্ধ্যার পরে ইলিশ মাছ নিয়ে এসেছে হয়তো তার পিছু পিছু এই ভুতটা এসেছে। জান্নাত দিশাবিশা না পেয়ে চোখ বন্ধ করে জোরে চিৎকার দিয়ে বলল,
– মা ভুতততততত, আমার রুমে মানুষরুপি ভুত এসেছে।
বাবা ভুতততত। কে কোথায় আছো তাড়াতাড়ি আসো। না হলে ভুতে আমাকে মেরে ফেলবে।
সোহান এবার মেজাজ গরম করে বিছানা দিয়ে নেমে রুমের লাইট জ্বালিয়ে দিল। জান্নাত তুমি কী ফাজলামি করছ? নিজের স্বামীকে তুমি চিনতে পারছ না। এটা কীভাবে সম্ভব? এতদিন আমার শরীরের সাথে আষ্টেপৃষ্টে থাকতে সেটা তো ভুলে যাওয়ার কথা নয়। তাছাড়া আমার চেহারার কী কোন জায়গায় পরিবর্তন হয়েছে যার কারণে তোমার কাছে আমাকে ভুত মনে হচ্ছে। আমি তো ভাবতেও পারিনি তুমি আমাকে এভাবে ভুলে যাবে।
জান্নাতের চিৎকার শুনে দরজায় টোকা পরল। সোহান দরজাটা খুলে দিলে সবাই ভিতরে ঢুকল।
– জান্নাত দৌড়ে গিয়ে মায়ের পাশে দাঁড়িয়ে মাকে জড়িয়ে ধরল। মা দেখো সোহানের বেশ ধরে ভুতততত এসেছে।
– কী বলছিস মা তুই?
– এটা সোহানের ভুত কোথায়? সোহান নিজেই তো এসেছে তোর কাছে। আর তুই সোহানকে দেখে ভুত বলে চিৎকার করছিস।
শিরিন জান্নাতের কাছে এগিয়ে গিয়ে বলল,
– তুই তোর স্বামীকে চিনতে পারিসনি? এতদিন তাইলে কার সাথে সংসার করেছিস? এখন তো মনে হয় তুই এতদিন এই ভুতের সাথে সংসার করেছিস বলেই হাসল সে। সোহান ভাইয়া প্রায় আধা ঘণ্টা আগে বাসায় এসেছে। হাত মুখ ধুয়ে মাত্র পাঁচ মিনিট হল রুমে এসেছে তার তুই কিনা তাকে ভুত বানালি?
সখিনা বেগম শিরিনকে থামিয়ে দিয়ে বলল, জান্নাত তুই মনে হচ্ছে বেশি ভয় পেয়েছিস তাই না? আয় পানি খেয়ে শান্ত হও।
– চুপচাপ পাথরের ন্যায় দাঁড়িয়ে থাকে জান্নাত। মুখ দিয়ে কোন কথা বলছে না। এদিকে সোহান আড়চোখে জান্নাতকে দেখছে। মনে মনে ইচ্ছা করছে জান্নাতকে জড়িয়ে ধরতে কিন্তু সবাই সামনে দেখে কিছু করতে পারছে না।
– আচ্ছা ভাইয়া লাইট বন্ধ করে শুয়ে পরেন। অনেক রাত হয়েছে।( শিরিন)
– মা শিরিন যা বলল সবটা কী সত্যি? সোহান যে এসেছে আমাকে জানাওনি কেন? আমি তো একাই শুয়ে ছিলাম সে কখন এলো টের তো পেলাম না।
– হা সত্যি। আধাঘণ্টার মতো হবে জামাই এসেছে। নাইট কোসে এসেছে তাই তোকে ঘুম থেকে তুলেনি। যাই হোক রাত অনেক হয়েছে সারা রাস্তা জার্নি করে এসেছে যা বলার কাল সকালে বলিস এখন জামাইকে বিশ্রাম নিতে দে।
সবাই চলে গেলে সোহান রুমের লাইট বন্ধ করার আগে পুরো রুমে একবার করে চোখ বুলায়।
রুমটা ছোট হলেও বেশ গুছানো। খুব সুন্দর একটা পরিবেশ। সোহানের চোখ হঠাৎ দেয়ালের এক কোণে আটকে যায় দেখল জান্নাতের ছবি। কাছে গিয়ে ভালো করে দেখে মেডেল পরে জান্নাত ফুল হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। লাইট অফ করে কৌতুহল বশত জান্নাতের কাছে গিয়ে বসল। মিনিট পাঁচেক পরে বলল, জান্নাত তুমি কী খেলায় মেডেল পেয়েছ? ভালো খেলোয়ার ছিলে মনে হয়?
– নিশ্চুপ জান্নাত।
– কী হলো চুপ করে আছো কেন? বোবা হয়ে গেলে নাকি?
নাকি প্রতিজ্ঞা করেছ যে কথা বলবে না।
সোহান জান্নাতের হাত নিজের হাতে নিয়ে চুমু খাচ্ছে সে। জান্নাত হাতটা সরিয়ে নিল।
– আপনি এত রাতে আমার বাসায় কেন এসেছেন? কী চান আমার কাছে? আমি আপনাকে ভুলে গেছি। কয়েকদিন অপেক্ষা করেন ডিভোর্স লেটার পেয়ে যাবেন। ভয় নেই কাবিনের টাকার দাবী করব না। সেচ্ছায় আপনাকে মুক্তি করে দিব। প্লিজ চলে যান এখান থেকে।
– জান্নাত কথাগুলো কী তোমার মনের কথা? আমি খুব আসা করে এসেছি তোমাকে নিয়ে যেতে। আমি অসুস্থ শুনেও একবারের জন্য দেখতে যাওনি। আমি তো মরতে মরতেও ফিরে এলাম হয়তোবা তোমার টানে। জান্নাত বিশ্বাস কর এতদিন আমার দিনগুলো কীভাবে কেটেছে একমাত্র আমি জানি। তুমি আমাকে না দেখে থাকলে কীভাবে? এতটা পাষাণ কীভাবে হলে তুমি?
– হ্যাঁ কথাগুলো আমার মনের কথা। আপনার তো মেয়েদের অভাব নেই তাইলে আমার কাছে কেন এসেছেন? কোন মেয়েদের পাননি বুঝি যার কারণে আমার কাছে এসেছেন পুরুষত্ব মিটাতে। কিন্তু একটা কথা ভালো করে মনে রাখবেন জোর করে সবকিছু পাওয়া গেলেও মনের ভেতর থেকে যে ভালোবাসা থাকে সেটা কখনও পাওয়া যায় না। তাছাড়া মাকে তো সব বলে এসেছি তিনি আপনাকে কিছু বলেনি?
– হ্যাঁ বলেছে।
– তারপরও এসেছেন?
– আমি আমার বউয়ের কাছে এসেছি। আরও আগেই আসতাম কিন্তু অসুস্থতার কারণে আসতে পারিনি। জান্নাত আমি কিন্তু এখনো পুরোপুরি সুস্থ নই তবুও তোমার কাছে এসেছি কেন জানো? তোমাকে ভালোবাসি বলে। কথা বলতে বলতে সোহান জান্নাতের হাত আবারও ধরল। জান্নাত বিশ্বাস কর তুমি যখন আমার কাছে ছিলে তখন বুঝতে পারিনি তোমার প্রতি আমার অনুভূতি কেমন? কিন্তু যখন আমাকে রেখে দূরে চলে এলে তখন তোমার অনুভূতিটা ভালো করে বুঝলাম। আমার জীবনে তোমার খুব প্রয়োজন। জান্নাত আমি তো ভুল করেছি তাই বলে আমাকে এত বড় শাস্তি দিবে? তুমি বললে আমি তোমার পা ধরে ক্ষমা চাইব তবুও আমাকে তোমার ক্ষমা করে দিতে হবে। আমি অনেক বড় অন্যায় করেছি প্লিজ আমাকে ক্ষমা করে একবার ভালো হওয়ার সুযোগ দাও।
জান্নাত সোহানের হাত ঝাড়া দিতে সোহান জান্নাতকে একটানে বুকে জড়িয়ে ধরল। শক্ত করে ধরে রেখেছে জান্নাতকে।
– ছাড়েন ব্যথা পাচ্ছি আমি।
– কেন ছাড়ব? তোমার এত সাহস হল কীভাবে তুমি আমাকে ছেড়ে চলে এসেছ? আমার অসুস্থতার সুযোগ নিয়ে চলে আসবে ভাবতেও পারিনি। তোমাকে ছাড়া আমি থাকব কী করে? তুমি জানো এতটা দিন আমি কতটা ছটফট করেছি। কত রাত নির্ঘুমভাবে কাটিয়েছি। সারাক্ষণ অস্থিরতা কাজ করছে নিজের ভেতরে।
– সোহান সত্যি আমি ব্যথা পাচ্ছি খুব।
– এবার জান্নাতকে কিছুটা হালকা করে ধরল।
কিন্তু খবরদার একদম ছাড়ানোর চেষ্টা করবে না তাইলে আবার শক্ত করে চেপে ধরব।
– এসব নাটকের মানে কী সোহান?
– কীসের নাটক জান্নাত?
– এখন আপনি যা করছেন সেগুলো কী? এসব তো এখন নাটকই।
– আমি আমার বউয়ের সাথে মনের কথাগুলো শেয়ার করছি এতে নাটকের কী দেখলে?
– আপনি কালকে সকাল হলে এখান থেকে চুপচাপ চলে যাবেন। কথাটা বলেই সোহানকে ধাক্কা মেরে সরিয়ে বিছানার উপরে শুয়ে পরল জান্নাত। সোহানও জান্নাতের পাশে শুয়ে পরে পিঠের উপরে চুমো খেতে লাগল। এবার ভীষণ মেজাজ গরম হল জান্নাতের। জান্নাত সোহানকে ছাড়ানোর জন্য অনেক চেষ্টা করছে কিন্তু পারছে না কারণ সোহান তার হাতদুটো চেপে ধরে রেখেছে।
জান্নাত নিজেকে ছাড়াতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। সোহান মুখ তুলে হাসছে। এভাবে করছ কেন? তোমাকে সামলাতে আমি হিমশিম খেয়ে যাচ্ছি।
– অতিরিক্ত করছেন কিন্তু! এতটা বাড়াবাড়ি কিন্তু মানাচ্ছে না।
– বাহ্ রে অতিরিক বাড়াবাড়ি করার কী আছে? তুমি আমার বউ তাই আমি অতিরিক্ত বাড়াবাড়ি করব না তো অন্য কেউ করবে?
– মাকে কী বলে এসেছি সেটা শোননি মনে হয়? আমি আপনার সাথে সংসার করব না। আমি আপনার থেকে মুক্তি চাই। দরকার হলে সারাজীবন একা থাকব তবুও আপনার কাছে যাব না।
– জান্নাত যা বলেছ সেটা এই পর্যন্তই সমাপ্ত থাক। যদি আবারও এসব বল তাইলে আমার চেয়ে খারাপ কেউ হবে না।
– আপনার হুমকি আমি ভয় পাই না। যদি ভয় পেতাম তাইলে তো চলে আসতাম না।
– ভদ্রভাবে বলছি আমার কথাগুলো মেনে নাও।
– আমিও ভদ্রভাবে বলছি। আমি আপনার সংসার করব না। এখন ঘুমিয়ে পরেন কালকে সকাল হলে চলে যাবেন।
– যাবো তো অবশ্যই তবে তোমাকে সাথে করে নিয়ে যাব। তোমাকে ছাড়া এক চুল ও আগাব না।
– মামার বাড়ির আবদার পেয়েছেন নাকি? আপনি যা ইচ্ছা তাই করবেন আর আমি চুপচাপ সহ্য করব? আমার জন্য এত দরদ উত্তলে উঠল কেন রাত কাটানোর জন্য কাউকে পাননি বলে? শোনেন আমি কোন প্রোস্টিটিউট না যে আপনার কথা মতো উঠব আর বসব। আমার নিজেরও মতামত বলে কিছু আছে।
– জান্নাত তুমি আমার ওয়াইফ রাত কাটানো ছাড়াও তোমাকে আমার অন্য কাজেও প্রয়োজন আছে।
– না আমি আপনার রাত কাটানো বউ। আমি হলাম মিডেল ক্লাস পরিবারের মেয়ে। আমার স্থান পায়েই শোভা পায় কারও বুকে নয়। কী বলেছিলেন মনে নেই টাকা থাকলে মেয়েদের অভাব হয় না। যান টাকা নিয়ে আরেকটা মেয়ের সাথে রাত কাটান। কয়েকদিন পরে পুরানো হলে আরেকটা মেয়েকে আনবেন। এভাবে চলতে থাকবে আপনার জীবন। তবে একটা লাভ হবে নতুন নতুন শরীর পাবেন। প্রতিদিন ইনজয় করতে পারবেন।
– হুম কথাটা সত্যি বলেছ। তোমার চেয়ে সুন্দর সুন্দর মেয়ে পাওয়া যায় কিন্তু সমস্যা হচ্ছে ওদের বেড পারফরমেন্স ভালো না। তুমি আমাকে যেভাবে সার্পোট দাও ওরা সেভাবে পারে না।
– আপনি কী গিয়েছিলেন ওদের কাছে?
– না, আমি এতটাও লুচ্চা না যে বউ থাকতে অন্য মেয়ের বিছানায় যাব। আমার যত কষ্টই হোক না কেন নিজেকে সামলিয়ে নিয়েছি। এবার তোমার সাথে সহবাস করব হা হা হা।
– ছিঃ সোহান ছিঃ। আপনি কখনও বদলাবেন না।
এবার শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে সোহানকে ধাক্কা মেরে সরিয়ে দিল জান্নাত। আপনি এখনি রুম থেকে বেরিয়ে যান। আপনাকে দেখলেও শরীরের ভেতরে ঘিনঘিন লাগছে।
– হ্যাঁ আমি যাব আগে বল তোমার লাগেজ কোথায়? আমি তো আর একা যাব না তোমাকে সাথে করে নিয়ে যাব।
– আমি আপনার সাথে কোথাও যাব না।
– তোমার ঘাড় ধরে নিয়ে যাব। আমাকে চিনো তুমি? প্রয়োজনে আমি কতটা খারাপ হতে পারি সেটা তুমি কল্পনাও করতে পারবে না।
– কী করবেন আপনি?
– তোমার বাবা হার্টের রোগি সেটা নিশ্চয়ই জানো। তুমি চলে আসাতে তিনি এত বেশি আঘাত পেয়েছেন যেটা সে কাউকে প্রকাশ করছেন না। তিনি আমার বাবার কাছ থেকে বিয়ে উপলক্ষে পাঁচ লক্ষ টাকা ধার হিসাবে নিয়েছিল। কিন্তু সেই টাকা এখনো ফেরত দেয়নি। আমি চাইলে এমন সিচুয়েশন তৈরি করব তিনি টাকার চিন্তায় সাথে সাথে হার্ট এ্যাটাক করবে এমনকি মারাও যেতে পারে। এখন তুমি বল তুমি কী চাও? বাবাকে জীবিত দেখতে চাও নাকি মৃত!
– আপনি এতটা নিচে নামতে পারবেন আমি ভাবতেও পারিনি।
– ঐ যে বললাম না প্রয়োজনে আমি সব করতে পারি। আমার যেভাবেই হোক তোমাকে চাই সেটা যে কোন কিছুর বিনিময়ে। আমি হারতে শিখিনি তাই হার কী জিনিস সেটা আমি জানি না।
জান্নাতের দুগাল বেয়ে পানি পরছে। আর সেই পানি গিয়ে সোহানের কব্জির উপরে গিয়ে পরল।
সোহান জান্নাতের চোখের পানি দুহাত দিয়ে মুছে দিল। বোঁকা মেয়ে কাঁদছ কেন? কাঁদলে আমার কষ্ট লাগে।
– ঝামেলা আপনার আর আমার মাঝে এর ভেতরে তুমি বাবাকে কেন টানছ? সে তো আপনার কোন ক্ষতি করেনি।
– আমি বাবাকে টানছি না পরিস্থিতি তাকে নিয়ে এসেছে। এখন তুমি আমার সাথে চল তাইলে সব কিছু ঠিক হয়ে যাবে। ট্রাস্ট মি। কিন্তু যদি না যাও তাইলে আমি দ্বিতীয় রাস্তায় যেতে বাধ্য হব।
– সোহান প্লিজ এমনটা করবে না।
সোহান জান্নাতের দুগালে হাত দিয়ে ধরে বলল, তুমি বাসায় চল। এভাবে হুট করে তোমার চলে আসাটা উচিত হয়নি। তুমি তো আমাকে চিনতে পেরেছ এতদিনে আমি কেমন? তবুও এমন কাজ করটা একদম উচিত হয়নি। তোমার কারণে মা আমাকে কত কিছু বলেছে।
বিয়েটা তো তুমি একা করনি আমিও করেছি তাই যদি ডিভোর্স দেওয়ার কথা আসে সেটা দুজনের সিদ্ধান্তের উপরে হবে। তুমি একা সিদ্ধান্ত নিলে সেটা আমি মেনে নিব ভাবলে কী করে?
জান্নাত অবাক হয়ে সোহানের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। চোখ দিয়ে অনবরত পানি পরছে তার।
চলবে………….
চলবে……..