###__স্বামী__###
পর্ব-৩২
#Nirzana(Tanima_Anam)
হটাৎই নির্ঝরের ডাক পড়ে।অনু কোনো রকমে ঘর অব্দি গিয়ে নির্ঝের সমনে দাড়াতেই গড় গড় করে বমি করে দেয়।
নির্ঝর হতম্ভের মতো দাড়িয়ে আছে…..
অনু ক্লান্ত হয়ে পড়ে যেতে নিলেই নির্ঝর দুহাত ধরে বুকের মধ্যে আকড়ে ধরে…….
অনুকে ওয়াশরুমে নিয়ে গিয়ে মুখ হাত ধূয়ে কোলে করে এনে বিছানায় শুয়ে দেয়।
-অনু ঠিক আছো তুমি??
অনু ক্লান্ত চোখে নির্ঝরের দিকে তাকিয়ে আছে।
-কেমন বমি বমি পাচ্ছে কিন্তু হচ্ছে না।হলে একটু শান্তি পেতাম।
-খুব কি কষ্ট হচ্ছে??
-না তেমন কিছু না!!আমি ঠিক আছি।
-ওকে।এদিকে ঝামেলাটা মিটুক তারপর তোমাকে…. ওয়েট ওয়েট আনিকা আপুকে ডাকি!!আনিকা আপু তোমাকে দেখে দিবে।।
-না না আপু নীরার সাথে আছে নীরাকে সাজাতে নিয়ে গেছে শুধু শুধু ওনাকে এখন ডাকবেন না পরে সময় করে দেখিয়ে নেবো খন আমার তো তেমন কিছু হয় নি বোধয় উল্টা পাল্টা কিছু খেয়েছি তাই এমন বমি বমি লাগছে!!
-ওকে ওকে…….এসো তো কাছে আছো একটু……
-ওম্মমমমমমম বমি করে দিবো কিন্তু!!
-ইউউউউউ
অনু হাসতে হাসতে ছুল লাগায়….নির্ঝর বিছানার উপরই বসে আছে।
-আজ তোমার মজা দেখাবো
-আমাকে কাছে পেলে তো!!
রাতে নীরা আর সায়নের বিয়ে।বেশ বাঙ্গালী মতে বিয়েটা হচ্ছে।দুজনকে সামনা সামনি বসিয়ে সামনে চাদর দেওয়া আছে।
অবশেষে সেই মাহিন্দ্র খন।এখন কবুল বলার পালা।
নীরাকে কবুল বলতে বলা মাত্র এক নিঃশ্বাসে গড় গড় করে বলে দেয়।
এতো বছরের সাধনা ইচ্ছে চাওয়া সব যেন তার পূরণ হলো।
নীরার কবুল বলা দেখে পাশ থেকে অনু জোড়ে হেসে দেয়।শুধু অনু নয় অনুর সাথে সাথে সবাই হেসে দেয়।
নীরা অনুকে চিমটি কাটে।
মেয়েটা বেশ লজ্জা পেয়েছে।
-কি ব্যাপার ননদিনী এতো তাড়া কিসের?তোমার বর তোমারই থাকবে।
অনুর হাসিটা কারো কানে না গেলেও সায়নের কান অব্দি পৌছে গেছে।
সায়নকে কবুল বলতে বলা হচ্ছে কিন্তু তার মুখ দিয়ে কোনো কথায় বেরুচ্ছে না।
বুকের ভেতরে একটা নাম বার বার বাজছে।একটা প্রশ্ন বার বার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে
“যা হচ্ছে তা কি ঠিক হচ্ছে।নিজের সুখের জন্য নীরাকে বিয়ে করছে সে কিন্তু নীরাকে কি যোগ্য সন্মান দিতে পারবে সে??নাকি নীরার সাথে নিছকই একটা খেলা ঘর বাধতে চলেছে সে??”
নাহ্ মাথা কাজ করছে না।এদিকে কাজি সাহেব বার বার সায়নকে কবুল বলতে বলছে কিন্তু সে চুপ।নীরা কিছু একটা আচ করতে পেরে ভয়ে বুক কাঁপছে।
ঐ যে বলে না ঘর পোড়া গরু সিঁদুরে মেঘ দেখলেও ভয় পায়।
নীরার হয়েছে সেই অবস্থা।
নীরার চোখে পানি টলমল করছে।তবে কোনো এক অদৃশ্য প্রাচীর সেই পানিকে চোখ থেকে গড়িয়ে পরতে দিচ্ছে না।
সেই নোনা জলের স্রোতকে চোখেই আবদ্ধ করে রেখেছে।
নীরা নিজেকে তৈরী করছে কোনো এক অপ্রীয় সত্য সোনার জন্য।নিজেকে নিজেই সান্ত্বনা দিচ্ছে।
একটা মানুষের নিজের জন্য নিজের চেয়ে বড়বন্ধু আর কে হতে পারে!!
একটা সময় দুম করে সায়ন বলে দেয়
“কবুল কবুল কবুল”
সবায় একসাথে সুবহানাল্লাহ বলে উঠে
তবে এবার নীরার চোখের জলের বাঁধ ভেঙ্গে গেছে।গড় গড় করে চোখ দিয়ে পানি পড়ছে।আর সায়নের বলা এই তিনটে শব্দ সমস্ত ইন্দিয় বেয়ে মস্তিষ্কে চলে যাচ্ছে।
নীরার সমস্ত অঙ্গ পতঙ্গ জানান দিচ্ছে সায়ন ভাই কবুল বলেছে। এখানে উপস্থিত সবাইকে সাক্ষী রেখে তাকে বউ বলে গ্রহন করেছে।
অনু নীরার কানের কাছে মুখ নিয়ে গিয়ে বলতে শুরু করে
-ননদিনী শ্বশুড় বাড়ি গিয়ে তোমার মুখের এই আঁটা ময়দা আই মিন এই এত্ত এত্ত মেক আপ ঘসে ঘসে তুলবে কিন্তু না হলে বিয়ের দিনই তোমার বেচারা বরের পেট খারাপ করবে।
হি হি হি
অনু দাঁত বের করে হেসে দেয়।
এদিকা নীরা অনুকে আরো জোড়ে চিমটি দেয়।
অনু নীরার দিকে তাকাতেই নীরাও হেসে।
অনেক নিয়ম কানুনের পর নীরা আর সায়নের বিদায় হয়।
বিদায়ের সময় বেঁচারা নীরা তো ভাইকে ধরে কি কান্না।শুধু ভাই নয় অনুকে ধরেও বেশ কান্না কাটি করেছে।মাঝে অনুকে ভুল বুঝে বেশ কষ্ট দিয়েছে।
নির্ঝরতে শেষ অব্দি নীরার হাত ধরে ছিলো।
একমাত্র বোনকে অন্যের হাতে তুলে দেওয়া যে কি কষ্টের তা একমাত্র ভাইয়েরায় জানে।
নীরাকে সায়নের হাতে তুলে দেওয়ার সময় নির্ঝর সায়নকে শুধু একটা কথায় বলেছিলে
“ভাই আমি জানি তোর সাথে আমার অনেক ভুল বোঝা বোঝি আছে তবে তার দায় শুধু আমার৷ আমার বোনের না।তোর যদি কখনো মনে হয় আমার বোন তোর কাছে বোঝে হয়ে যাচ্ছে আমাকে খবর দিস আমি নিজে গিয়ে ওকে নিয়ে আসবো।ওকে কোনো কষ্ট দিস না আজ থেকে ওর সুখের দায়িত্ব শুধু তোর”
-নির্ঝর আমি এখন তোর খারাপ হতে পারি তবে এতোটাও খারাপ নয়।নীরাকে ভালো রাখার সর্বোচ্চ চেষ্টা আমি করবো!!
নির্ঝর সায়নের কথায় ভর্সা পায়।সায়ন আর যায় হোক সৎ একজন মানুষ
অবশেষে নীরা সায়নকে বিদায় দিয়ে ঘরে চলে আসে নির্ঝর।অনু অবাক হয়ে নির্ঝরকে দেখছে।
ছেলেটা বোনকে বিদায় দেওয়ার সময় চোখের জল নাকের জল এক করে ফেলেছে।
অনু গিয়ে নির্ঝরের গা ঘেষে বসে পড়ে
-কি হলো
-😘😘😘
-😶😶😶😶
-হিহিহি
-ব্যাপার কি?
-কিছু না
-ওকে….
নির্ঝর অনুকে টান দিয়ে কাছে নিয়ে আসে।তারপর খাটের উপর ফেলে দিয়ে অনুর উপর উঠে যায়।অনু দিকে একটি এগোতেই অনু গায়ের সর্ব শক্তি দিয়ে নির্ঝরকে ধাক্কা মেরে দেয়।নির্ঝর মেঝেতে পড়ে যায়।
তারপর অনু দৌড় লাগায় ওয়াশ রুমে।গড় গড় করে বমি করে দেয়।নির্ঝরও পেছন পেছন ছুট লাগায়
-অনু খুব কষ্ট হচ্ছে কি?
-মনে হচ্ছে পেটের সব বেরিয়ে আসবে
-কিছু হবে না।
নির্ঝর অনুর চোখে মুখে পানি দিয়ে ওয়াশরুম থেকে বার করে আনে।
একটু পর নির্ঝর অনুভব করে অনু তার উপর ঢলে পড়েছ।অনু গ্ঞান হারিয়েছে।
নির্ঝর অনুকে কোলে তুলে এনে বিছানায় সুয়ে দেয়।অানিকা আপুকে ডাকা হয়।
আনিকা আপু অনু লক্ষন দেখে মুখ কালো করে নেয়।
নির্ঝর আনিকা আপুর মুখের দিকে তাকিয়ে আছে
-কি হয়েছে আপু সিরিয়াস কিছু??
-নির যেই ভয় পেয়েছিলাম তাই হয়েছে!
-মানে??
-মানে অনু ইজ প্রেগনেন্ট।অনু মা হতে চলেছে…
নির্ঝর ভয়ার্ত চোখে আনিকা আপুর দিকে তাকিয়ে আছে।
-কি বলো আপু…
-হুম্ম
-বাট এটা অনুর জন্য রিসকি!!
-জানি না।বাট আই আম সিউর অনু মা হতে চলেছে।সি ইজ প্রেগনেন্ট!!
অনুর কানে অন্য কোনো কথা না পৌছালেও আনিকা আপুর বলা শেষ কথাটা ঠিকই পৌছেছে….
“অনু মা হতে চলেছে”
অনু আর এক মুহূর্ত না দাড়িয়ে কাঁদতে কাঁদতে ছুটে গিয়ে নির্ঝরকে জড়িয়ে ধরে।
অনু নির্ঝরকে জড়িয়ে ধরে হাউ মাউ করে কেঁদে দেয়।
নির্ঝর মুর্তির মতো দাড়িয়ে আছে।মুখে কোনো কথ নেই।
অনু টলমল পায়ে নির্ঝরকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে রয়েছে
নির্ঝর অনুকে ধরে নিয়ে গিয়ে বিছানায় বসিয়ে দেয়।
অনু একটু শান্ত হয়ে নির্ঝরের হাতটা অনুর পেটে নিয়ে যায়
“দেখো এখানে আমাদের বেবি আছে।আমি মা হতে চলেছি।আমারও একটা বেবি হবে আমাকে আর কেউ বাজা বলবে না।সে আমাকে সবসময় মা মা বলে ডাকবে আর তোমাকে বাবাই”
কথাটা বলেই অনু নির্ঝরের কাধে মাথা রাখে।
তবে অনুর কোনো কথায় নির্ঝরের কানে ঢুকছে।তার মাথায় বার বার একটা কথায় ঘুরপাক খাচ্ছে…..
“এ ধরনের পেশেন্টদের জন্য বাচ্চা নেওয়াটা খুব রিস্কি।এতে হয় বাচ্চার ক্ষতি হয় নয়তো মার”
কথাটা আনিকা আপু বলেছিলো অনুর পরিবারকে সেদিন হাসপাতালে।নির্ঝর আড়াল থেকে শুনেছিলো।
তবে কি এবার অনুকে হারিয়ে ফেলতে হবে না কি সারা জীবনের মতো বাবা হওয়ার ইচ্ছেটা বিসর্জন দিতে হবে??
চলবে….