###__স্বামী__###
পর্ব-৩৪
#Nirzana(Tanima_Anam)
-আমি খুব করে চাই ভালোবাসতে চাই ভালো থাকতে, আমি বাঁচতে চাই তোমাকে নিয়ে। আমার চাওয়া তুমি শুধু তুমি…..
নির্ঝর অনুর হাতটা শক্ত করে ধরে আছে।অনু পিট পিট করে নির্ঝরের দিকে তাকিয়ে আছে।আবার কখনো চোখ বুজে নিচ্ছে।বড্ড ক্লান্ত সে।চোখে মুখে ক্লান্তির ছাপ স্পষ্ট।
অনুর ৩৫ উইক চলছে।
নির্ঝর শত চেষ্টা করেও অনুর অ্যাবর্শনটা করাতে পারেনি। কয়েকবার হাসপাতাল নিয়েও গিয়েছিলো তবে শেষ মেষ অনুকে রাজি করাত পারে নি।
অনু নিজের প্রানের বিনিময়ে হলেও বাচ্চাটাকে পৃথিবীর আলো দেখাবেই।
মা হওয়ার সুখ এক মুহূর্তের জন্যে হলেও সেপেতে চায়।তাতে সে বাচুক বা মরুক ক্ষতি নেই
তাই অবশেষে অনুর জিদের কাছে হার মানতে হয় নির্ঝরকে।তবে যতো দিন যায় নির্ঝরের বুকে অনুকে হারানোর ভয়টা ডানা মেলতে থাকে।এটাই তো স্বাভাবিক……
নির্ঝরের জীবনে এখন বিনিময়ের খেলা চলছে।হয় সন্তান না হয় বউ।
একটু আগেও অনুর হটাৎই পেইন হচ্ছিলো।ব্যাথ্যা সহ্য করতে না পেরে অনু তো পারলে চিৎকরে কাঁদে।নির্ঝর বাড়ি না থাকায় নির্ঝরের মা ও বেশ ভয় পেয়ে গিয়েছিলো।কোনো রকমে ডাক্তারকে খবর দিয়ে ব্যাপারটা সমলে নিয়েছেন ওনি।আজকাল ওনার ও যে অনুকে নিয়ে চিন্তা টিন্তা কম হয় এমনটা নয় তবে ঐ যে একটা নাতি নাতনীর সাদ তাই ওনিও অনুর সাথে তাল মিলিয়ে নির্ঝরকে আটকেছে।
ওনার এক কথা”বউয়ের প্রথম বাচ্চা এই বাচ্চা ফালানোর চিন্তা মাথাতেও আনবি না বাবা না হলে আমার মরা মুখ দেখবি”
অনুর অসুস্থতার খবর পেয়ে নির্ঝর ছুটে আসে।এতোক্ষন যেন দমটা গলার কাছে আটকে ছিলো।।।অনুকে দেখার পরই হৃদযন্ত্র
টা আবার রক্ত সঞ্চালন করা শুরু করে দিয়েছে।
নির্ঝরকে দেখে অনু মাথাটা একটু উচু করে নির্ঝরও অনুকে ধরে তুলে নেয়।
-আমি ঠিক আছি!!
-জানি।।
-তাহলে এতো চিন্তা কিসের??
-বুঝবানা ভালো তো আর বাসো না বুঝবা কেমনে????
-হুহ সব ভালো আপনি একাই বেসে বসে আছেন তাই না??
-হুহ না হলে তুমি এভাবে…আমায় ছেড়ে যাওয়াী প্লান করতা!!!
-ওওও তার মানে আপনি ধরেই নিয়েছেন আমি মরে যাবো…
-চুপ!!
কতো বার বারন করেছি এসব বলবা না!!
-অনু আমার খুব ভয় করছে…!!
-আল্লাহ্ যা চাইবে তাই হবে।কেউ আটকাতে পারবে না।মনে একটু সাহস রাখো আর বিশ্বাস
-হুম্ম
নির্ঝর অনুকে জড়িয়ে ধরে……
অনু ও নির্ঝরকে জড়িয়ে ধরে……!!
ভরসা বিশ্বাস আর ভালোবাসা নিয়ে অনেক দূর যায়
হয়তো এই ভালোবাসার জোড় নিয়েই অনু বাকি পথ পারি দিতে পারবে পথ যে এখনো অনেক বাকি!!
বারান্দায় দাড়িয়ে লম্বা লম্বা নিঃশ্বাস নিচ্ছে নীরা।তবুও মন ভরছে না নীরার।অবশ্য নিজের দেশের বাতাসে যে মায়া ভালোবাসা আর পরিচিতির গন্ধ রয়েছে তা কি এই সাত সমুদ্র দূরে পাওয়া যায়!!
নীরা আর সায়ন এখন নিউইয়র্কের ওয়াশিংটন শহরে রয়েছে।সায়নের সময়ের প্রয়োজন ছিলো নিজেকে নীরার সাথে মানিয়ে নিতে ঠিক মানিয়ে নিতে নয় ভালোবাসতে।শুধ মানিয়ে নিলেই তো আর সংসার হয় না।সংসার করতে প্রয়োজন হয় ভালোবাসার।ভালোবাসা ছাড়া কি ভালো থাকা যায়!!
তবে হটাৎ অনুর প্রেগনেন্সি নিউজটা পাওয়ার পর সায়ন কেমন গো মেরে গিয়েছিলো।বোধয় কোনো এক অজানা অপরাধবোধ নিজেকে কুড়ে কুড়ে খাচ্ছিলো।
সায়ন অসহায় হয়ে যাচ্ছিলো কোনো এক অজানা কারণে নীরার সাথে দোটানা বেড়েই চলছিলো। অবশেষে সায়ন নিজে থেকেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলো নীরাকে নিয়ে দূরে চলে যাবে পাড়ি দিবে কোনো এক অজানা শহরে যেখানে নীরাকে নিয়ে ভালো থাকবে সে।হুম্ম ভালো থাকতে যে ভালোবাসা লাগে…..!!!
ব্যাস যেই ভাবা সেই কাজ নীরাকে নিয়ে সোজা পাড়ি জমায় বিদেশ।বেশ কিছু জানা অজানা অনুভূতির মাঝে কেটে যায় নীরা সায়নের নতুন সংসাস।সময়ের সাথে সাথে বেশ স্বাভাবিক হয়ে এসেছে তাদের সম্পর্ক।একটা স্বাভাবিক দাম্পত্য জীবন কাটাচ্ছে তারা।
হুট করে কিছু একটা পড়ার শব্দে নীরার ধ্যান ভাঙ্গে।নীরা পেছন ফিরে তাকায়।খাটের উপর রাখা কাগজটা বাতাসে উড়ে মেঝেতে পড়ে আছে।নীরা কাগজটার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দেয়।কাগজটা তার নতুন ভালো থাকার চাবি কাঠি………
নীরা কাগজটা হাতে তুলে নেয়।চোখে পানি টলমল করছে।কিছু দিন হলো নীরার থেকে থেকে মাথা ঘুরছে বমি পাচ্ছে,মান্থলিও মিছ গিয়েছে,…. তবে সায়ন বেশ চিন্তায় আছে কি হলো নীরার।
নীরা কিছুটা আন্দাজ করতে পারলেও সায়নকে এ বিষয়ে কিছুই জানায় নি।সায়নের চিন্তা থমথমে মুখ দেখতে বেশ লাগছে নীরার।নীরার ইচ্ছা একেবারে সিউর হয়ে সায়নকে জানাবে তাই গতকাল চুপি চুপি গিয়ে ইউরিন টেস্ট করিয়ে এসেছে।সকালেই রিপোর্ট টা এসেছে।তবে ততোক্ষনে সায়ন অফিসে বেড়িয়ে পরেছে।
এটাই সেই রিপোর্ট।রিপোর্ট পজিটিভ। ব্যাস নীরার খুশি আর কে দেখে।
এখন শুধু অপেক্ষার পালা কখন সায়ন আসবে আর কখন খবরটা সায়নকে জানাবে সে…………সবার আগে আমার গল্প পড়তে চাইলে “নীল ক্যাফের ভালোবাসা” পেজে পাবেন।
দেখতে দেখতে ন মাস কেটে গেছে।অনুর ডেলেভারির সময়ও চলে এসেছে।দিন যতো এগিয়ে আসছে অনুরও কেমন বেশ ভয় ভয় লাগছে।
“আচ্ছা যদি আমি মরে যাই তাহলে তো আমি আর মা ডাক শুনতে পারবো না।তাহলে কি হবে??
যা ই হোক না কেন নির্ঝর তো বাবা ডাক শুনতে পারবে…..
আমায় আর কেউ বাজা বলবে না”
কথাগুলো নিজের মনেই ভাবছিলো নীরা।আজ দুপুর থেকে এই সন্ধ্যে পর্যন্ত না খেয়ে আছে সে।একটু একটু করে থেমে থেমে ব্যাথ্যাটা বাড়ছে।তবে এখন ব্যাথ্যাটা কেমন চড়ে বসছে…….
“তবে কি সময় হয়ে এলো…..ওকি বাহিরে বেরোতে চাইছে??”
এতো কষ্টের মধ্যেও অনুর মুখে হাসি…….
মা হওয়া অনুভূতি আজ বড্ড বেশি মাথা চাড়া দিয়ে উঠছে…..
চলবে…………