#স্বামী
#লেখনীতেঃ_নুসরাত_জাহান
#পর্বঃ_৩৫
সোহান নাস্তা সেরে বেরিয়ে গেল।
জান্নাতকে খাটের সাথে শুয়ে দিয়ে শুভ চলে গেল। জান্নাত বালিশের সাথে মাথা ঠেকিয়ে চুপচাপ ওপাশ ফিরে তাকিয়ে থাকে। বুকের ভেতরে চাপা কষ্টটা মাঝেমাঝে কান্না হয়ে ঝরে পরে। কেউ দেখার আগে সে পানি দুহাত দিয়ে মুছে নিয়ে স্বাভাবিক হওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করে।
জান্নাত বুঝতে পারল তার জীবনটা শেষ হয়ে গেছে সোহানকে যতই আপন করার চেষ্টা করুক না কেন মনটা কখনও সাড়া দিচ্ছে না। দীর্ঘশ্বাস নিয়ে চোখ বন্ধ করল জান্নাত।
বিকাল ৫ টায় সোহান এসে রুমে ঢুকল। জান্নাতের দিকে তাকায়। জান্নাত এখনো ঘুমাচ্ছে। সোহানের উপস্থিতি টের পেয়ে জান্নাত চোখ মেলে তাকায়। উঠতে যাবে তখন অনুভব করল শরীরটা বড্ড খারাপ লাগছে। মাথাটা ঝিমঝিম করছে। খুব কষ্ট করে শোয়া ছেড়ে উঠল।
সোহান জান্নাতের দিকে তাকিয়ে বলল,
– সন্ধ্যার পরে ডাক্তার এসে দেখে যাবে। আমাদের কষ্ট করে তার কাছে যাওয়া লাগবে না।
– ওহ্।
– তোমার শরীর এখন কেমন?
– আলহামদুলিল্লাহ।
– বমি ভাবটা কী আছে? আর মাথা ব্যথা।
– এতক্ষণ একটু কম ছিল কিন্তু এখন বেশি খারাপ লাগছে। কথা বলার সময় সোহানের ফোনটা বাজল। পকেট থেকে ফোনটা হাতে নিতে হাত থরথর করে কাঁপছে। সেই নাম্বারটা যেটা দিয়ে তখন কল এসেছিল। নাম্বারটা দেখে সোহানের কাপাল বেয়ে তরতর করে ঘাম পরছে। বুকের ভেতরটা হাহাকার করে উঠেছে। অনেকক্ষণ বিষয়টা লক্ষ করে জান্নাত এবার মুখ খুলল।
– কী হয়েছে আপনার কী শরীর খারাপ? এভাবে ঘামছেন কেন? তাছাড়া কল আসার আগ পর্যন্ত তো ঠিক ছিলে হঠাৎ করে কার নাম্বার দেখে এভাবে আৎকে উঠলেন।
-“……….”
– আপনি উত্তর দিচ্ছেন না কেন? আর কলটাও রিসিভ করছেন না? কোন সমস্যা হয়েছে? দেখুন এভাবে চুপ থাকাটা কোন সমাধাণ না। প্লিজ বলুন কী হয়েছে?
– “………..”
– বুঝতে পারছি সোজা আঙুলে ঘি উঠবে না একটু বাঁকাতে হবে। ওয়েট করেন আমি গিয়ে মাকে ডেকে আনছি। কথাটা শেষ করে বিছানা দিয়ে ধড়মড় করে নেমে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতে যাবে তখনি সোহান হাতটা টেনে ধরল।
– কী ব্যাপার হাত ধরলেন যে?
– এমনি।
– হাত ছাড়ুন।
– যদি না ছাড়ি।
– তাইলে আমি চেঁচাব।
– চেঁচাও।
– মা,,,,,বলে একবার ডাক দেওয়ার সাথে সাথে সোহানের বাম হাত দিয়ে জান্নাতের মুখ চেপে ধরল।
– এবার চেঁচাও। যত ইচ্ছা চেঁচাও।
জান্নাতের চোখ বড় হয়ে গেল। কথা তো বলতে পারছে না তাই মনের ভেতরে সংকোচ চলছে। একটুপর সোহান জান্নাতের মুখ ছেড়ে দিলে জান্নাত ওয়াক থু, থু করে মুখটা ঘষতে লাগল।
– কী হয়েছে তোমার বমি আসছে? আসো আমি তোমাকে ওয়াশরুমে নিয়ে যাই।
প্রায় পাঁচ মিনিট ওয়াক থু, ওয়াক থু করেই যাচ্ছে জান্নাত।
এবার অনেকটা বিরক্তবোধ করল সোহান।
জান্নাত কী হয়েছে? এমন করছো কেন?
– আপনি আপনার বাম হাতটা এতক্ষণ আমার মুখের চেপে রেখেছেন কেন? ছিঃ আমার বমি আসতেছে। আপনি কী মানুষ? এমন করে কেউ? জান্নাতের কথা সোহান অনেকটা লজ্জা পেল আবার মনে মনে ভীষণ রাগও হলো। রাগে ফোঁসাতে ফোঁসাতে এক ধমক দিয়ে বলল,
– চুপ এমনভাবে বলছ মনে হচ্ছে কী যেন পাপ করে ফেলেছি নাহ্ নাহ্ শুধু পাপ নয় মহাপাপ। তোমরা মেয়েরা খুব নোংরা তারচেয়ে আমি পরিষ্কার আছি। ইশশশশশ তামশা শুরু করেছে একদম। নিজের দোষ খোঁজ কর কাজে লাগবে। এমনিতে অসুস্থ সেদিকে একটু নজর দাও। আর হ্যাঁ কিছুক্ষণ পরে ডাক্তার চলে আসবে তাই তুমি নিজে থেকে প্রস্তুতি নাও।
– আমার কথা আপনার ভাবতে হবে না। আগে বলেন এতবার কল বাজার পরেও কেন কল রিসিভ করেননি?
– তোমার কথা আমি ভাববো না তো কে ভাববে? পাশের বাসার জলিল, রহমান, সালমান এরা।
– দেখুন অতিরিক্ত হচ্ছে কিন্তু। আমি কিন্তু এখনি মাকে গিয়ে বলে আসব।
– হুমকি দিচ্ছি।
– যদি মনে করেন হুমকি তাইলে তাই আর যদি মনে করেন নিজের দোষে নালিশ যাবে তাই সেটাই। এখন আপনি কী করবেন সেটা আপনার সিদ্ধান্ত। আমার খিদে লেগে যদি তোমার দয়া হয় তাইলে এক কাপ কফি করে আনো সাথে চিপস।
– চিপস কই পাব?
– রান্নাঘরে বাটার ভেতরে মা রেখেছেন অনেকদিন আগে সেখান থেকে আমার জন্য ভেজে নিয়ে আসো। আর হ্যাঁ ভাজার পরে উপরে একটু বেশি করে চিনি ছিটিয়ে দিও।
জান্নাত মনে মনে ভাবলো কী রাক্ষস রে বাবা, শুধু খাই খাই করে। এত খায় তবুও পেট ভরে না।
– আচ্ছা ঠিকাছে।
জান্নাত রান্নাঘরে ঢোকার আগে শুভ আপু জান্নাতকে বলল,
– রান্নাঘরের সামনে কী? বলছি না রিপোর্টে না জানা পর্যন্ত কোন কাজ করবা না। তবুও এখানে আবার কী?
– মানে আপু, বুঝলাম না।
– মানে সোজা, ডাক্তার এসে রিপোর্ট দিবে তারপর যে সিদ্ধান্ত নেওয়ার নেবে।
শুভ আপুর কথা শুনে রীতিমত চমকে গেল জান্নাত। দ্বিতীয়বারের মতো মাথা নাড়িয়ে আপুর কথায় ঠোঁটের কোণে মুচকি হেসে বলল,
– আচ্ছা আপু আমি যাচ্ছি।
– হুম।
জান্নাত রুমে ঢুকতেই মাগরিবের আজান কানে আসলে সোজা ওয়াশরুমে ঢুকে অজু করে বেরিয়ে নামাজ আদায় করে বিছানার উপরে বসল। সোহান কিছুক্ষণ পরে রুমে ঢুকল। সোহানের মাথায় টুপি দেখে কিছুটা বিস্মিত হল জান্নাত। বিয়ের পরে আজকে এই প্রথম তাকে টুপি পরে রুমে আসতে দেখল। ভাবসাব দেখে মনে হচ্ছে নামাজ পরে এসেছে।
জান্নাত কিছু বলার জন্য মুখ খুলবে তখনি দরজায় বেল পরল। সোহান রুম থেকে বেরিয়ে দরজার কাছে গেল। দরজটা খুলে ডাক্তারকে দেখে খুশিতে আত্নহারা হওয়ার মতো উপক্রম হয়েছে। মনে হচ্ছে সে চাঁদ পেয়েছে।
চশমার ফ্রেমটা হাত দিয়ে চোখের উপরে ভালো করে চাপিয়ে দিয়ে বলল,
– কী ব্যাপার সোহান তোমাকে আজকে বেশ উৎফুল্ল দেখাচ্ছে? নিশ্চয়ই কোন খুশি সুসংবাদ আছে তাই না!
– না আংকেল, কোন খুশির সংবাদ নেই। আপনি ভেতরে আসুন জান্নাত আপনার জন্য অপেক্ষা করছে।
– ওহ্ সিউর, লেটস গো।
– জি চলেন।
রুমে ঢুকে ডাক্তার আংকেল সোহানের দিকে একপলক তাকিয়ে তারপর জান্নাতের দিকে তাকায়।
– আংকেল চলেন।
– জি।
ডাক্তার আংকেল জান্নাতের পাশে বসল।
সোহানকে বলল,
– আমার জন্য এক গ্লাস পানি আনবে খুব পিপাসা পেয়েছে।
– আপনি এখানে বসেন আমি যাব আর আসব।
সোহান চলে গেলে ডাক্তার আংকেল জান্নাতকে ভালো করে পরীক্ষা করে সিউর হল। তারপর ঠোঁট জোড়া মুচকি হাসি দিল।
সোহান আংকেলের সামনে পানির গ্লাসটা এগিয়ে দিয়ে বলল,
– পানিটা খেয়ে নিন।
– শুধু পানি খেলে কী হবে মিস্টার সোহান। মিষ্টি কই! আমি কিন্তু যে সেই মিষ্টি খাব না আমার কিন্তু রসমালাই আর দই চাই সেটাও বগুড়ার দই আর হকের রসমালাই।
– সোহানের মুখের রঙ ফ্যাকাশে হয়ে গেল। মাত্র কয়েক সেকেন্ডের ব্যবধানে এমনটা হবে সেটা কখনও আসা করেনি ডাক্তার।
তোতলাতে তোতলাতে বলল,
– আপনি কী বলছেন আমি বুঝতে পারিনি কষ্ট করে আবার বলেন।
– হা হা হা কী যে বলেন না, কংগ্রেচুলেশন সোহান। তুমি বাবা হতে চলেছে তাই মিষ্টি দাবি করেছি। তাছাড়া এই প্রথম বাবা হওয়ার স্বাদ গ্রহণ করবা আর আমাদের মিষ্টি মুখ করাবে না।
– সত্যি বলছেন?
– জি সত্যি বলছি। তবুও কালকে আমি একটা টেস্ট করাব তারপর ১০০% সিউর হব। তবে হ্যা আমার ডাক্তারি লাইফে এমন কেস হাজারও হয়েছে আমি মৌখিকভাবে যেটা বলেছি সেটাই কার্যকর হয়েছে।
ডাক্তারের কথা শেষ হতে না হতে শুভ এসে হাজির হল। দরজার সামনে দাঁড়িয়ে সমস্ত কথাটা শুনে ভিতরে এসে সোহানের কাঁধে হাত রেখে বলল,
– বলছিলাম না জান্নাত কোন নরমাল অসুস্থ না তাই তো ওকে দিয়ে কোন কাজ করাইনি।
-“………”
– সোহান চুপ কেন? তোর মুখে হাসি কোথায়? যা মাকে গিয়ে নিউজটা দিয়ে আয়।
সোহান জান্নাতের দিকে তাকিয়ে হতভম্ব হয়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায়। এদিকে জান্নাত টেনশনে মুখটা কালো মেঘে ছেয়ে গেছে।
#স্বামী
#লেখনীতেঃ_নুসরাত_জাহান
#পর্বঃ_৩৬
সোহানের পা কেন জানি চলছে না। মনে হচ্ছে বুকের উপরে বিশাল বড় একটা পাথর চাপা দেওয়া যেটা সরিয়ে হাঁটা সম্ভব হচ্ছে না। ডাক্তার কী বলল এটা? আমার তো বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে। জান্নাত প্রেগন্যান্ট হলো কীভাবে? যতদিন আমাদের ভেতরে কিছু হয়েছিল সব সময় প্রোটেকশন ইউজ করেছি কিন্তু এমনটা কীভাবে সম্ভব? এটা সত্যি আমার খুব ইচ্ছে বাবা হওয়ার কিন্তু এমনটা না যেটা শোনার পরে নিজেকে বুঝানোটা কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। জান্নাতের পেটে কী আমার সন্তান? নাকি অন্য কারও! নাহ্ নাহ্ এমনটা ভাবাও পাপ। জানি না তবে কেন জানি বিশ্বাস করতে পারছি না। সোহান এক পা করে সামনের দিকে হাঁটছে। আচমকাই সাথীর সাথে ধাক্কা খেলো।
– আরে ভাইয়া তোমার চোখ কোথায়? তাছাড়া তুমি এখানে কী চাও? ভাবী না অসুস্থ যাও তার সেবা কর।
– আমি কারও সেবা করতে পারব না তুই গিয়ে দেখে আয়। আর শোন মা কী রুমে?
– হুম মা রুমে। তখন তো দেখিলাম নামাজ পরে এখন শেষ হয়েছে কিনা জানি না।
– আচ্ছা ঠিকাছে।
সোহান মায়ের রুমের সামনে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মায়ের বের হওয়ার অপেক্ষা করছে কিন্তু মা বের হচ্ছে না। দরজাটা একটু ফাঁকা করে দেখল মা সবেমাত্র সালাম ফিরিয়ে তার দিকে তাকায়। সোহানকে দেখে অনেকক্ষণ তাকিয়ে থেকো বলল,
– কী রে সোহান কিছু বলবি? জান্নাতের শরীরের অবস্থা কেমন?
দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বলল,
– জান্নাত ভালোই আছে।
– ও এখন কোথায়?
– রুমে।
– ডাক্তার কী বলল?
– তুমি নিজে গিয়ে যেনে এসো।
– তুই বললে তো এখন আর যাওয়া লাগে না।
– তুমি নিজে গিয়ে যেনে আসো। আমি বলতে পারব না।
সোহানের কথা শুনে আগা মাথা না বেয়ে জায়নামাজ ভাঁজ করে বিছানার উপরে রেখে রুম থেকে বেরিয়ে জান্নাতের কাছে গেল।
জান্নাতের রুমে ঢুকে দেখে শুভ আর সাথী ঘিরে রেখেছে। তিনি সবার মুখের দিকে তাকিয়ে আস্তে আস্তে জান্নাতের পাশে বসল। কাঁধে হাত দিতে জান্নাত মাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগল। আচমকাই জান্নাতের এমন কান্না কিছুতেই বুঝতে পারছে না। কী বলবে সেই বিষয়ে কোন টপিক খুঁজে পাচ্ছে না। জান্নাতের মাথায় হাত বুলিয়ে চুলগুলো টানতে লাগল। জান্নাত কী হয়েছে? আমাকে বল? ডাক্তার কী বলে গেল?
বিছানার পাশে বসা শুভ বলল,
– মা তুমি কোন চিন্তা করো না এটা খুশির কান্না। তুমি দাদি হতে চলেছ। আর এই বিষয়টা ওরা দুজনে কেউ মানতে পারছে না। ডাক্তার আংকেল যখন নিউজটা বলল, বিশ্বাস করবে না মা, সোহানের চেহারার রঙ পুরোপুরি পরিবর্তন হয়ে গেল। এদিকে জান্নাতও কেন জানি বিষয়টা মানতে পারছে না।
– আচ্ছা শোন, তুই আর সাথী একটু বাহিরে যা আমি জান্নাতের সাথে কিছু কথা বলব।
– ঠিকাছে মা আমরা যাচ্ছি। সাথি আমার সাথে আয় আমরা ফ্রিজ খুলে আইসক্রিম খাই। ভাই তো আর মিষ্টি খাওয়াবে না তাই কী আর করার মিষ্টির বদলে আইসক্রিম খেয়ে মনটাকে সান্ত্বনা দিব।
সোহানের মা রাগি লুকে শুভর দিকে তাকিয়ে বলল,
– ভাই মিষ্টি না আনছে তাতে কী বোন তো আছে সে আনলেই তো হয়।
জান্নাতের ভীষণ লজ্জা লাগছে সবাই এভাবে তাকিয়ে আছে দেখে।
জান্নাতের পাশে কিছুক্ষণ বসার পরে সোহান দরজার কাছে এসে দাঁড়াল। সবার চোখ সোহানের দিকে পরতেই বসা ছেড়ে উঠল।
– আচ্ছা মা, তুই বিশ্রাম কর আমি আবার পরে আসব।
– আচ্ছা।
সবাই চলে গেলে সোহান বিছানার কাছো এসে জান্নাতকে বলল,
– এটা কীভাবে সম্ভব হল? তুমি তো সব সময় প্রোটেকশন ইউজ করতে তাইলে হঠাৎ করে প্রেগন্যান্ট হলে কীভাবে? আমার তো বিশ্বাস হচ্ছে না।
– “………….”
– জান্নাত কথা বলছো না কেন?
– “………….”
সোহান অনেকটা রাগান্বিত হয়ে গলায় ভার এনে বলল,
– তুমি শুধু একটা কথা বল তোমার পেটে যদি বাচ্চা থেকে থাকে তাইলে কী এই বাচ্চাটার বাবা আমি? হ্যাঁ অথবা না উত্তর দাও।
– আপনার কী মনে হয়? আমি যদি প্রেগন্যান্ট হয়েও থাকি তাইলে কী এই বাচ্চার বাপ অন্য কেউ? ছিঃ আপনি এমন নোংরা বিষয় ভাববেন সেটা আমি ভাবতেও পারিনি। তবে কী জানেন আমি ভেবেছিলাম আপনি হয়তোবা পরিবর্তন হয়েছেন কিন্তু এখন বুঝতে পারছি আমার ধারণা ভুল ছিল। মানুষ যে এতটা নোংরা মেন্টালিটির হয় জানতাম না। সত্যি আপনাকে যত দেখছি ততই মুগ্ধ হচ্ছি। শোনেন আমরা গরিব হতে পারি কিন্তু চরিত্র একদম খাঁটি। যদি তাই না হত আপনাকে ডিভোর্স দিয়ে আমি জাকির ভাইকে বিয়ে করতাম। আপনার ডিভোর্স দেওয়ার অনেক কারণ ছিল আমার কাছে সেটা তো আপনি নিশ্চয়ই জানেন।
জান্নাতের কথাগুলো ছুড়ির মতো গিয়ে বুকে বিঁধল সোহানের। জান্নাতের এমন কঠিন এবং উপযুক্ত জবাবে সোহান মর্মাহত। কোন ভাষা নেই জান্নাতের প্রতিউত্তর দেওয়ার। সোহা মাথাটা নিচু করে অনেকক্ষণ পাথরের ন্যায় স্থির হয়ে থাকল। অনেকক্ষণ এভাবে থাকার পরে জান্নাতের দিকে মুখ তুলে তাকিয়ে বলল,
– আজ তুমি যতগুলো কথা বলেছ তার পুরোটাই সত্যি। আমি তোমার সাথে ভীষণ অন্যায় করেছি যার কোন ক্ষমা নেই তবুও আমি আমার ভুলের জন্য আবারও ক্ষমা চাচ্ছি। আসলে আমি তোমাকে হার্ট করার জন্য কথাগুলো বলিনি। তোমার সাথে যতবার মিলন হয়েছে প্রতিবার প্রোটেকশন নিয়েই হয়েছি সেটা তুমি নিজেও জানতে। এখন আমার প্রশ্নটা তোমাকে কষ্ট দেওয়ার জন্য নয় শুধুমাত্র জানার জন্য ছিল। তুমি সেটাকে দোষ ধরেছো। আমি কেন সব পুরুষমানুষই এটা নিয়ে প্রশ্ন তুলবে। আমি তোকে খারাপ ভেবে কথাটা বলিনি।
– আমার সব মনে আছে আপনি হয়তো ভুলে গেছেন। আমি যখন চলে গেছিলাম তার কিছুদিন আগে আপনি আমাকে জোর করেই বিনা প্রোটেকশনে ব্যবহার করেছেন। তার ফলশ্রুতিতে আমি এখন প্রেগন্যান্ট। জানেন ডাক্তার যখন বলল, আমি প্রেগন্যান্ট তখন ইচ্ছা করছিল সুইসাইড করি। আপনার জন্মের সন্তান আমার একদমই কাম্য ছিল না। স্বামী-স্ত্রীর মতের উপরে নির্ভর করে তারা কখন বেবি কনসেপ্ট করবে কখন করবে না আর এটা তারা বিয়ের পরেই পরিকল্পনা করে রাখে।
কিন্তু আমার ক্ষেত্রে এগুলোর কিছুই ছিল না। প্রতিটি মেয়ের নিজস্ব একটা স্বপ্ন থাকে বিয়ের পরে স্বামীকে নিয়ে অনেক প্লান থাকে কিন্তু আমার কিছুই হল না। সত্যি আমি একটা অভাগী। কথায় তো আছে অভাগী যেখানে যায় তার সব রাস্তা আপনাআপনি বন্ধ হয়ে যায়।
– জান্নাত প্লিজ আমাকে ভুল বুঝো না। আমি স্বীকার করছি তোমার পেটের সন্তান আমার।
– হাসালেন আমাকে মিস্টার সোহান। আপনি স্বীকার করেন আর নাই বা করেন তাতে আমার কিছু আসে যায় না। আমি যদি সত্যি প্রেগন্যান্ট হয়ে থাকি তাইলে এই সন্তান আমি এর্বোশন করিয়ে ফেলব। আমি কারও সন্তানকে আমার পেটে ঠাঁই দিতে পারব না।
জান্নাতের এমন নিষ্ঠুর উত্তরে সোহান আবেকে আপ্লুত হয়ে নিষ্পাপ দৃষ্টিতে তাকিয়ে চোখের জল ছেড়ে দিল।
জান্নাত মুখটা ঘুরিয়ে পিছনের দিকে তাকায়। চোখ পানিতে টলটল করছে। বুক ফেটে হাহাকার করছে তবুও সোহানের কাছে ধরা দিচ্ছে না।
সোহান ধপাস করে ফ্লোরে বসে পরল। জান্নাত তুমি কী কথা শোনালে আমি যে সহ্য করতে পারছি না। তুমি আমার সন্তানকে মেরে ফেলতে পারবে। তুমি এতবড় কথাটা কীভাবে বললে আমি তো ভাবতে পারছি না।
সোহানের কথা শুনে কোন উত্তর দেয়নি জান্নাত। উত্তর দেওয়ার মতো অবস্থায় নেই। জান্নাতের চোখে পানি ছলছল করছে। একহাত দিয়ে চোখের পানি মুছে নিয়ে ভার গলায় বলল,
– কালকে সকালে ইউরিন টেস্ট করিয়ে সিউর হতে হবে যদি শুনি সত্যি আমি প্রেগন্যান্ট তাইলে যা বললাম তাই করব।
সোহান বসা ছেড়ে জান্নাতের হাত ধরে অনুনয়ের সহিত বলল,
– তুমি যেমনটা ভাবছো তেমনটা নয়। সত্যি আমি অন্য কোন উদ্দেশ্য নিয়ে তোমাকে কিছু বলিনি আমি তো শুধুমাত্র…
কথাটা শেষ হওয়ার আগেই জান্নাত গর্জে উঠে চেঁচাতে লাগল, মিস্টার সোহান আপনি কী আমাকে বোঁকা ভাবছেন? আপনি কী ভাবছেন সেটা আমি ভালো করেই জানি! আমাকে ওসব বলে কোন লাভ নেই। সব কিছুর একটা লিমিট আছে। আপনি প্লিজ আমাকে স্পর্শ করবেন না।
– কী বলছ এসব? আমি তোমার স্বামী আমাকে এমন কথা বলতে কষ্ট হচ্ছে না। তুমি কী আদৌ জান্নাত নাকি অন্য কেউ! আমার জান্নাত তো এমন কথা কখনও বলে না। হাজারও কষ্ট দিয়েছি সবটা মুখ বুঝে সহ্য করেছে। তখন আমি অন্যায় করেছি সেটা আমি উপলদ্ধি করতে পারছি। জীবনে কারও কাছে মাথা নত করিনি কিন্তু তোমার কাছে করেছি কেনো জানো? কারণ সত্যি আমি তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছি। সারাজীবন আমার পাশে তোমাকেই চাই। জান্নাত আমাকে তুমি ফিরিয়ে দিও না। বড্ড ভালোবাসি তোমায়। তুমি ছাড়া আমার অস্তিত্ব নেই।
রাগান্বিত হয়ে সোহানের হাত ছাড়িয়ে বিছানা দিয়ে ধড়মড় করে নেমে হাঁটা শুরু করলে সোহান পিছন থেকে ডাক দিল। জান্নাত যেও না আমি সত্যি তোমাকে ভালোবাসি। একটিবার আমাকে আপন করে নাও।
জান্নাত এদিকে ভ্রুক্ষেপ না করে জোড়ে হাঁটলে নিতে পাপোষে টান খেয়ে ধপাস করে ফ্লোরে পরে যায়। ওমাগো বলে নিচে পরে যায়। ব্যাথায় পেটে হাত দিয়ে গড়াতে লাগল।
সোহান দৌড়ে গিয়ে জান্নাতকে হাঁটুর উপরে মাথা রেখে জোরে চিৎকার দিল।
সোহানের চিৎকার শুনে শুভ, মা, সাথী দৌঁড়ে আসে।
নোট:: কোন রিভিশন দেইনি। ভুল ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।
চলবে………………
চলবে…………..