#স্বামী
#লেখনীতেঃ_নুসরাত_জাহান
#পর্বঃ_৪
কিছুক্ষণবাদে সোহান আলমারি খুলে কাপড় বের করে রেডী হচ্ছে। আমি তার দিকে তাকিয়ে আছি। ঘড়ির দিকে আড়চোখে তাকিয়ে দেখি ৮.৫০ বাজে। মনেমনে ভাবলাম এত সকালবেলা রেডী হয়ে কোথায় যাচ্ছে..? জিজ্ঞেস করব নাহ্ থাক যদি আবার উল্টা পাল্টা কিছু বলে।
আমি খাটের সাথে হেলান দিয়ে শুয়ে আছি। মুখটা জানালার দিকে ফিরিয়ে রেখেছি।
সাথী খকখক করে কাশি দিয়ে রুমে চা নিয়ে আসল। সোহানকে রেডী হতে দেখে বলল,
– ভাইয়া তুমি এত সকালবেলা রেডী হয়ে কোথায় যাচ্ছ..?
– ব্যাংকে যাব।
– আজকে তুমি ব্যাংকে যাবে মানে..? তুমি না ৭ দিন ছুটি নিয়েছ..?
– ছুটি নিয়েছি তো কী হয়েছে আমার জরুরি কাজ আছে তাই যাওয়া লাগবে।
– ভাবীকে একা রেখে যাওয়াটা কী ঠিক হবে এই মূহুর্তে..?
– তোর ভাবী তুই সামলা আমি কাজে যাচ্ছি বলে হাতে ঘড়ি আর মোবাইলটা নিয়ে বেরিয়ে যায় সোহান।
সাথী চায়ের মগ দুটো হাতে নিয়ে আমাকে একটা দিয়ে আরেকটা নিজে খেতে লাগল। মগে চুমুক দিয়ে সাথী বলে কার চা কে খায়..? ভাইয়া আজকে এতটা সেন্টিমেন্ট হয়ে গেল কেন বুঝতে পারলাম না। আচ্ছা ভাবী তোমার সাথে কিছু হয়েছে..?
– আমার সাথে আবার কী হবে..? আমি কিছু জানি না।
– ভাইয়াটা খুব জেদি তবে মনটা খুব ভালো।
– আচ্ছা ভাবী তুমি না কলেজে ভর্তি হয়েছিলে.?
– হ্যাঁ, হয়েছিলাম তো তার মাস খানেকের ভেতরে তো বিয়ে হয়ে গেল।
– তোমার পড়তে মন চায় না?
– খুব চায়। পড়াশুনার মতো আনন্দের জীবন আর কোথাও পাওয়া যায় না। আমার পড়তে খুব ভালো লাগে। এখন ইচ্ছা থাকা স্বত্বে পড়তে পারছি না বলে খুব আফসোস লাগছে।
– মগে শেষ চুমুক দিয়ে তুমি চা খাও ভাবী আমি মায়ের কাছে যাচ্ছি।
চা খাওয়া শেষ করে মগদুটে নিয়ে কিচেনে ঢুকে ধুয়ে টেবিলের উপরে উপুর করে রাখলাম পানি ঝরানোর জন্য।
সোহানের বাবা আমার হাতে পানি দেখে বলল,
– কী রে মা বিয়ে হলো আজ দুদিন তার ভেতরে তুই রান্নাঘরে কেন এসেছিস.? জানিস তো মেয়েদের সারাজীবনের সাথী হলো রান্নাঘর। তাই যতদিন না গিয়ে থাকতে পারবি ওটাই তোর বোনাস। তাছাড়া বাড়িতে দু’জন কাজের লোক আছে তোর শাশুড়ি আর ননদ আছে তাই রান্না নিয়ে তোর ভাবা লাগবে না। তুই যা রুমে গিয়ে বিশ্রাম নে।
বাবার কথায় মনের ভেতরে শান্তি পেলাম। লোকটা আসলে খুব ভালো মানুষ কিন্তু তার জন্মের ছেলেরা এমন বেয়াদব কেন..? কাউকে তো সম্মান দেয় না। মা- বাবাকে দেয় কিনা আল্লাহ ভালো জানে।
দুপুরে কোন রকমে খেয়ে হাঁটাহাঁটি করে বিছানায় গা এলিয়ে দিয়ে শুয়ে পড়লাম।
বিকাল ৫.৩০ এর দিকে সাথীর ডাকে ঘুম ভাঙল আমার।
শোয়া থেকে উঠে আস্তে আস্তে দরজার কাছে গিয়ে বললাম, দাঁড়িয়ে কেন..? ভেতরে আসো!
– না ভাবী ভেতরে আসতে পারব না তুমি আমার সাথে আসো আমরা ছাদে যাব।
– এখন..?
– হ্যাঁ। বিকালের রৌদ্রের তাপ কমে গেলে ছাঁদে হাঁটতে ভালো লাগে। মনের মাঝে স্বস্তি ফিরে আসে। জানো ভাবী আমার মন খারাপ হলে আমি ছাদে যাই। খুব ভালো লাগে।
আচ্ছা ভাবী তোমাকে যদি কলেজে ভর্তি করে তাহলে তুমি পড়াশুনা কী করবে..?
সাথীর কথায় অবাক হয়ে চমকে উঠলাম। আমতা আমতা করে বললাম,
– তুমি কী সত্যি বলছ নাকি মজা করছ..? যদি সত্যি বলে থাকো তাহলে বলব হ্যাঁ আমি পড়াশুনা করতে চাই। আমার চাকরী করার খুব ইচ্ছা।
– এএএ মা, ভাবী চাকরী করার কথাটা ভুলেও মুখে আনবে না। আমরা সবাই মেয়েদের চাকরীকে সাপোর্ট দেই কিন্তু ভাইয়া পছন্দ করে না। তিনি যদি জানতে পারে তুমি পড়াশুনা করে চাকরী করতে চাও তাহলে এখানেই পড়াশুনা করার কথাটাকে কবর দিতে হবে। আমার ভাইয়ের এক কথা মেয়েরা শুধু সংসার করবে, বাচ্চা দেখাশুনা করবে, স্বামীর দেখাশুনা করবে। চাকরী করলে মেয়েদের চোখ ফুটে যায় তারা পরোকিয়ার লিপ্ত হয়ে যায়।
সাথীর কথা শুনে মুখ চেপে হাসলাম। আমি তো ভাবছিলাম সোহান সামাজিক কিন্তু এখন তো দেখছি পুরোই অসামাজিক। তার মনমানসিকতা তো সেকেলের মানুষদের মতো। সাথী শোন তোমার ভাই যেহেতু মেয়েদের পড়াশুনাকে ভালো চোখে দেখে না তাই এসব শুনে আমিও পড়াশুনা করতে চাই না। আমি সংসারে ঝামেলা চাই না।
ঝগড়া ঝাটি একদম পছন্দ না।
– আচ্ছা আমি মায়ের সাথে এ ব্যাপারে কথা বলব। ভাবী এখন প্লিজ চলো না ছাদে যাই।
– হুম চলো।
সাথীকে সাথে নিয়ে ছাদে উঠলাম।
কিছুক্ষণ ছাদে ঘোরাঘুরির পরে সাথীকে বললাম, সত্যি তোমাদের ছাদটা খুব সুন্দর। সন্ধ্যার পরে আরও ভালো লাগে চারদিকের পরিবেশটা।
– হুম।
– সাথী ছাদটা তো খালি পড়ে আছে এখানে বিভিন্ন ফলের গাছ, ফুলের গাছ, সবজির গাছ তো লাগাতে পার। নিজের গাছের তাজা জিনিস খাওয়ার মজাই আলাদা।
– থাকলে মন্দ হত না কিন্তু কে লাগাবে বলো..? কারও কাছে তো সময় নেই।
– এখন থেকে আমি লাগাব। আমার বাগান করার খুব সখ।
– সত্যি ভাবী তুমি লাগাবে..?
– হুম।
– তাহলে তো ভালোই হবে তাজা সবজি খেতে পারব।
মাগরিবের আজান কানে ভেসে আসতে আমি সাথীকে বললাম,
– আজান দিচ্ছে চলো আমরা নিচে যাই।
নিচে নেমে আমি আমার রুমে ঢুকে ওজু করে নামাজ আদায় করে মায়ের রুমে ঢুকলাম। মা জায়নামাজে বসে তসবি পড়ছে। আমার আওয়াজ শুনে কিছক্ষণ পরে বলল,
– জান্নাত কিছু বলবি..?
– নাহ্। একা একা রুমে ভালো লাগছে না তাই আপনার সাথে গল্প করতে চলে আসলাম।
– বেশ তো! তুই তোর রুমে গিয়ে বস আমি কিছুক্ষণ পরে তোর কাছে আসতেছি।
– আচ্ছা মা।
কিছুক্ষণ পরে মা ট্রেতে করে খাবার নিয়ে এসে বিছানার উপরে রাখল।
– মা আপনি এসব কেন করলেন..? আমার তো পেট ভরা।
– সেই দুপুরবেলা কাকের ঠোঁটে করে ভাত খেয়েছিস সেগুলো কী এখনো তোর পেটে আছে..? বেশি কথা না বলে ফলগুলো খেয়ে নে।
মায়ের কথা মতো ফল খাওয়া শুরু করলাম। মা কফি খেতে খেতে বলল,
– জান্নাত তোর সাথে আমার কিছু কথা ছিল।
– জি মা বলুন।
– আমি যদি তোকে কলেজে ভর্তি করি তাহলে তোর আপত্তি আছে..?
– নাহ্ মা। আমার পড়াশুনা করতে ইচ্ছা করে।
– হুম আমি সেটা তোর ভাব ভঙ্গি দেখেই বুঝতে পারছি। তাছাড়া সোহানের বাবা এত কম বয়সী এবং অল্প শিক্ষিত মেয়ের সাথে ছেলেকে বিয়ে করিয়েছে বলে সবাই এটা নিয়ে খুব হাসাহাসি করছে। অনেকে রাগ করে বিয়েতে আসেনি যদিও ঘরোয়া ভাবে বিয়ের অনুষ্ঠান করেছি। সোহানের ছোট ভাইয়ের কথা তো সাথী তোকে বলেছে তবুও আমি আরেকটু বলছি আমার ছোট ছেলে রিলেশন করে বিয়ে করেছে তারই ক্লাসমেট রিতুকে। বিয়ে করে আমাদের জানায়নি। বিয়ের পাঁচ বছর পরে যখন সজলের আমেরিকাতে চাকরী হয় তখন আমরা বিষয়টা জানতে পারি। এটা নিয়েও আমাদের আত্মীয় স্বজনরা হাসি ঠাট্টা করেছে যে বড় ভাই থাকতে বলে ছোট ভাই আগে কেন বিয়ে করেছে..? তাহলে কী বড় ভাইয়ের সমস্যা আছে..? কিন্তু বিশ্বাস কর সোহানের মতো ছেলেকে আমি পেটে ধরে গর্বিত। ওর মতো ছেলে হয় না। এখন আমি জীবনের চরম বাস্তবতার মুখোমুখি হয়ে দাঁড়িয়ে আছি। আমার কাছে দুইটা রাস্তা খোলা আছে। ১. আত্মহত্যা করা।
২. তোকে শিক্ষিত করে সবার মুখে চুনকালি দেওয়া। সবার সাথে আমি চ্যালেঞ্জ করছি তোকে আমি শিক্ষিত করব। তার জন্য আমাকে যতটা কঠোর হতে হয় আমি হব। জান্নাত কথা দে আমার মান রাখবি..?
– কথা দিলাম মা।
– আজ থেকে তোর দ্বায়িত্ব আমি নিলাম। আমি তোর গ্রামে গিয়ে ভর্তি ট্যান্সফার করিয়ে ঢাকায় এনে ভর্তি করব।
– এত কষ্ট করবেন..?
– এটা কোন কষ্ট না মা, এটা হলো জেদ। কথাগুলো বলে মা চলে গেলেন।
রাত ৯ টায় সোহান বাসায় এসে রুমে ঢুকে ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে আসে। আমি বসে আছি চেয়ারের সাথে হেলান দিয়ে। সোহান এসে পিছন থেকে কোমড়ে হাত দিতে চমকে উঠলাম।
– কী হলো ভয় পেলে নাকি..?
– এভাবে এসে ধরলে ভয় পাব না তো কী করব..?
– ভয় পাওয়ার কী আছে..? আমি ছাড়া এখানে আর কে আছে যে তোমাকে ধরবে…? আচ্ছা যাই হোক রাতে তাড়াতাড়ি খেয়ে রুমে চলে আসবে দেরী করবে না। আজকে তোমাকে খুব বেশী আদর করব।
আমি কোন কথা না বলে চুপ করে অন্য দিকে তাকিয়ে থাকলাম। সোহান ডিনার সেরে রুমে এসে বিছানার উপরে ল্যাপটপ নিয়ে বসেছে। সাথী খেতে ডাক দিলে আমি চলে গেলাম।
সোহান বিছানায় বসে আমার জন্য অপেক্ষা করছে। একটুপরে আমি রুমে আসলাম।
সোহান ল্যাপটপের ভেতরে ডুবে আছে। আমি বিছানার কাছে আসতে জিজ্ঞেস করল,
– এত দেরী করলে কেন..?
– কোথায় দেরী করলাম.?
– দেরী না তো কী..? কয়টা বাজে..?
– ১১ টা।
– এখন লাইট বন্ধ করে এদিকে আসো। আচ্ছা পিল খেয়েছ..?
– নাহ্।
– কেন..? আচ্ছা জান্নাত তোমার কী সমস্যা..? তুমি কী চাচ্ছ বলতো..?
– আমি কিছুই চাচ্ছি না।
– তাহলে পিল খাওনি কেন…?
– ইচ্ছা করে না।
– এখানে আসো।
– ভালো লাগছে না।
– প্লিজ আসো।
– আজ থাক নাহ্। মনটা খারাপ লাগছে।
তারপর আমাকে জোর করে বিছানায় টেনে নিয়ে শুরু হয় শরীরের খেলা। যেখানে শুধুমাত্র এক তরফা চাহিদা ছিল। সোহান দৈহিক চাহিদায় মেতে উঠে। আমার একদম ভালো লাগছিল না তবুও জোর করে….!
চলবে……..