#হঠাৎ_হাওয়া (১৯)
অসম্ভব এখানে থাকলে মায়া পাগল হয়ে যাবে! মায়া দুইহাতে নিজের মাথা ধরে মেঝেতে বসে পড়লো,চোখ বন্ধ করতেই হিমালয়ের সেদিনের কথাগুলো কানে বাজতে লাগলো
—তুমি বিয়ের জন্য না করে দিয়েছ মায়া?
—হ্যা
—কেন?
মায়া চুপ করে আছে, হিমালয় ধৈর্য হারিয়ে ফেলছে,চিৎকার করে বলল
—চুপ থাকবে না আমি জিজ্ঞেস করছি কেন?
দরজার বাইরে থেকে ওসমান চাচা মায়ার বাবাকে বলছে,
—ভাইজান, ডাক্তার আব্বা মামনিরে রাগ করতেছে,মামনি তো অসুস্থ হইয়া যাবে।
মায়ার বাবা ভীষণ বিধ্বস্ত হয়ে বলল,
—তোমার মামনিকে আমি ঠিক বুঝি উঠি না ওসমান, কিছু বলতেও পারি না,তাই যে পারে তাকে বাধা দিচ্ছি না।
হিমালয় এবার ভেঙে পড়ল,মায়াকে এভাবে ও কখনোই নির্বিকার থাকতে দেখেনি,মায়ার কাছে একদম কাছে গিয়ে বলল
—এই মায়া, কি হয়েছে বলো প্লিজ কোথায় সমস্যা তুমি এমন করছ কেন?তুমি আমাকে বলো আমি সব ঠিক করে দেব,
—আপনি শুধু এটুকু করুন এখান থেকে চলে যান আর কক্ষনো আসবেন না,কানাডাতে যাচ্ছেন খুব পড়াশোনা করুন জীবনে খুব সফল হন।
হিমালয় মায়ার দুই বাহু ধরে মায়ার খুব কাছে গিয়ে বলল,
—আমি শুধু তোমাকে চাই মায়া শুধু তোমাকে
—আমি চাই না।
হিমালয় অসহায় ভাবে মায়ার দিকে তাকিয়ে মেঝেতে বসে মায়ার পা নিজের বুকের মধ্যে জড়িয়ে বলল,
—আমায় তুমি নিঃস্ব করে দিও না মায়া,আমি পাগল হয়ে যাবো
মায়ার শরীর কেপে উঠলো নিজেকে ছাড়িয়ে উঠে দাঁড়িয়ে একটু দূরে গিয়ে বলল
—এটা তো হিমালয় আহমেদ নয়,আপনি তো এত ছেলেমানুষ নন,আপনি স্ট্রং আত্মবিশ্বাসী একজন সামান্য মেয়ে কি করে আপনাকে নিঃস্ব করার ক্ষমতা রাখে।
হিমালয় বেশ কিছুক্ষণ মাথা নিচু করে বসে রইলো দুজনেই নিঃশ্চুপ,
—তুমি কি সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছ মায়া?
মায়া দাত দিয়ে ঠোঁট কামড়ে বলল
—হু
—পরিষ্কার করে বলো
—হ্যা
হিমালয়ের কপালের রগ স্পষ্ট হয়ে উঠলো নিজের স্বকীয় ফিরে পেয়ে উঠে দাঁড়িয়ে মায়ার কাছে গিয়ে ওর কোমর পেচিয়ে ধরে বলল,
—ভেরি গুড ভাগ্যিস বিয়ের আগে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছ,মনে আছে তোমায় আমি বলেছিলাম আমায় কোনোদিন চলে যেতে দিও না,বাট ইউ ফুল!ইউ ডিসাইড টু লিভ মি!ওকে দেন গুড বাই।
হিমালয় আর এক মুহূর্ত না দাড়িয়ে গটগট করে বেরিয়ে গেলো আর কক্ষনো, কক্ষনো ও মায়ার সাথে যোগাযোগ করে নি একবারের জন্যেও না!
সাহিত্য ফিরে এসে দেখলো মায়া নিজের ঘরে হাউমাউ করে কাদছে ও দৌড়ে মায়ার কাছে গিয়ে বলল
—কি হয়েছে! মায়া! এই মায়া কাদছিস কেন তুই!
মায়ার কান্না থামার কোনো নাম নেই,এদিকে সাহিত্য অস্থির হয়ে উঠেছে,মায়ার কান্না ও একটুও সহ্য করতে পারে না রীতিমত পাগলামি শুরু করে দিয়েছে
—মায়া আমায় বল কি হয়েছে আমি, আমি সব ঠিক করে দেব মায়া এই মায়া,তুই প্লিজ কান্না থামা,
মায়া কি করে বোঝাবে আর কিচ্ছু ঠিক হওয়ার নেই কোনোদিন আর ফিরবেনা সে!এই ঘরে এই ঘরেই তার সাথে বিচ্ছেদ হয়েছিল মায়ার এখানে দাড়িয়েই মায়া দেউলিয়া হয়ে গিয়েছিল!
সাহিত্য নিজেকে কন্ট্রোল না করতে পেরে পাশে থাকা ফ্লাওয়ার বাস্ক টা ছুড়ে ফেলতেই মায়া চমকে উঠলো নিজেকে সামলে উঠে দাড়িয়েই চোখ মুছলো,অদ্ভুত ওর সাথেই এরকম হয় ওর শান্তি মত কান্না করার ও কোনো জায়গা নেই!এতটাই হতভাগ্য ওর!মায়া ছোট করে নিঃশ্বাস ফেলে সাহিত্যের মাথায় হাত রেখে বলল,
—শান্ত হ এই দেখ আমি কাদছি না!ওষুধ খেয়েছিস তুই!
সাহিত্য জোরে জোরে নিঃশ্বাস ফেলছে মায়া সাহিত্যের হাত নিজের হাতের মধ্যে নিয়ে বলল,
—প্লিজ, আমাকে মেরে ফেলিস না শান্ত হ, ডাক্তার তোকে উত্তেজিত হতে না করেছে,এত দায় নিয়ে আমি বেচে থাকতে পারি না আমার মরে যেতে ইচ্ছে করে, কেন বলতো আমার কোনো কঠিন অসুখ হয় না! আমি কি এতটাই খারাপ যে সৃষ্টিকর্তাও আমাকে চান না!
সাহিত্য করুন চোখে মায়ার দিকে তাকালো,
—কঠিন অসুখ করলে কি হয় জানিস মায়া? এই যেমন ধর তোর ব্রেনে টিউমার হলো তুই পৃথিবীর কোথাও গিয়ে অপারেশন করতে পারবি না,এভাবেই থাকতে হবে যখন তুই জানতে পারবি একসময় এই টিউমার টা ব্লাস্ট করে তুই মারা যাবি তখন সব কিছু সুন্দর লাগে, তোর আশেপাশের সবচেয়ে নিষ্ঠুর মানুষটাকেও জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছে করে, আরো কিছুদিন বেচে থাকতে ইচ্ছে করে প্রিয় মানুষটার খুব কাছে গিয়ে একটু নিঃশ্বাস নিতে ইচ্ছে করে…. আফসোস!
এবার মায়াও কেদে ফেললো সাহিত্যের চোখ দিয়ে পানি পড়ছে তার মধ্যেই ও একটু বাকা করে হাসলো,
—আমায় করুণা করিয়া না প্লিজ মায়া, আমি সহ্য করতে পারি না, আজকাল সবাই আমাকে করুণার চোখে দেখে এই যে আমি মাকে এত কঠিন কঠিন কথা বলি মা প্রতিবাদ করতে গিয়েও থেমে যায় আমি দেরি করে বাড়ি ফিরলে কেউ কিছু বলে না আমার বন্ধুরা আমায় পচায় না, এরা সবাই আমাকে পদে পদে বুঝিয়ে দেয় আমি আর বেশিদিন থাকবোনা, বিশ্বাস কর মরে যাওয়ার থেকেও এই কষ্ট বেশি, একমাত্র তুই ছিলি যে আমাকে স্বাভাবিক ভাবে নিতি,আমি তোকে ভালোবাসি বললেই তুই প্রতিবাদ করতি তুই আমায় অপমান করতি, তবে আজকাল তুইও….
মায়া অসহায়ের মত তাকিয়ে রইলো সাহিত্যের দিকে,তারপর মাথা নিচু করে বলল,
—কেন বল তো!আমার কাছের মানুষ গুলো দূরে চলে যায়! আমাকে কি বিধাতা একা করেই পাঠিয়েছেন! বিশ্বাস কর একা থাকার মত বড় অভিশাপ আর কিচ্ছু নেই!
—আমি তোর কাছের মানুষ মায়া….
মায়া মৃদু হেসে বলল,
—বিকেলে তোর এপোয়েন্টমেন্ট আছে না?
সাহিত্য ছোট করে নিঃশ্বাস ফেলে বলল,
—হু
—আমি যাবো তোর সাথে
—না!
—কেন!
—তুই ডাক্তারদের কাছে খুব ফেমাস তুই গেলেই সবাই তোর সাথে গল্প করতে বসে যায় এমন ভাব আসমান থেকে ডাক্তারদের দেবী মাটিতে পা রাখছে! অসহ্য খুব অসহ্য!
মায়া মুখ বিকৃত করে বললো
—ওহ! ইউ আর গেটিং জেলাস!
—তুই একটা ভাঙ্গা গেলাস, হেহ তোরে দেইখা আমি জেলাস হবো?তোর আছে টা কি?গান গাইতে গেলে কাউয়ার মত কাউ কাউ করস রান্নাও তো শিখস নাই রান্না করতে গেলে বাড়ি ঘরে আগুন ধরায় দিস এলাকার মানুষরে বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা লাগে, আর যাও একটু চেহারা তাও দিন দিন যাইতেছে, পারিস ওই একটু পড়ালেখা ওই ধুয়ে কি পানি খাবি? হেহ!
মায়া আহত হয়ে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বলল,
—তোর মত বেয়াদব আমি আর একটাও দেখি নাই
—তার জন্য চোখ থাকা লাগে
মায়া বিরক্ত হয়ে উঠে দাড়াতে দাড়াতে বলল,
—ভাবছিলাম দুপুরে তোর প্রিয় গরুর কালাভুনা দিয়ে তোকে ভাত খেয়ে যেতে বলব,বাট সরি টু সে তুই এখন বাড়ি যেতে পারিস আমি বিকালে ডাক্তারের কাছে যাওয়ার সময় তোর বাসা থেকে তোকে পিক করে নেব।
—কিইহ! কালাভুনা!
—গেট আউট
—ইয়ে মানে মায়া শোন তুই খুব ভালো চা বানাস
—আমি কিছু শুনতিছি না
—আর তুই ভালো কবিতাও লিখিস মাঝে মাঝে
—গোসলে যেতে হবে বাই…
—মায়া শোন একজন মৃত্যু পথযাত্রীর মুখের সামনে থেকে কালাভুনা কেড়ে নিয়ে তুই খেতে পারবি তোর পেট খারাপ হবে না!?
মায়া থমকে দাড়ালো, প্রচন্ড বিরক্তি আর হতাশা নিয়ে বলল,
—আর কতভাবে বলতো আমায় কষ্ট দিবি?
—মৃত্যুর আগ পর্যন্ত সর্বভাবে, তাও আমার কষ্টের কাছে তোর কষ্ট কিছুই না আমার আক্ষেপ আমৃত্যু দেবী অপ্রাপ্তির।
চলবে….
সামিয়া খান মায়া
#হঠাৎ_হাওয়া (২০)
বিকেলে মায়া সাহিত্যের সাথে হসপিটালে যাওয়ার জন্য রেডি হয়ে অপেক্ষা করতে লাগলো সাহিত্য সেই যে ওয়াশরুমে ঢুকে বসে আছে বের হওয়ার নাম নেই
—ওই ফুপ্পার বাচ্চা সাহিত্য বের হবি তুই আজকে? ডাক্তার কি তোর দুলাভাই লাগে? তোর জন্য বসে থাকবে?
—মায়া যত কথা বলবি তত দেরি হবে তুই চুপ থাক প্লিজ,
মায়া বিরক্ত হয়ে উঠে বাইরে গিয়ে দাড়ালো ওর ফোনে আননোন নম্বর থেকে একটা কল আসলো মায়া ঠিক বুঝতে পারলো না কি করবে রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে একটা নারী কন্ঠ শোনা গেলো
—মায়া! আমি আমি হিমালয়ের মা!
মায়া ছোট করে নিঃশ্বাস ফেললো
—কেমন আছেন আন্টি?
—তোর সাথে আমার দেখা করা খুবই দরকার মায়া, এই দুই বছরে আমি হাজার বার চেষ্টা করেছি তোর সাথে যোগাযোগ করার।
—আন্টি এখন আর আপনাকে সাহায্য করার মত তো আমার কিছু নেই
—মায়া,আমায় ক্ষমা কর মা, অনেক বড় ভুল আমি করেছি তোকে আমার খুব দরকার
মায়া ঠোঁট বাকিয়ে হাসলো সবারই শুধু দরকার,
—আন্টি আমি ঢাকায় থাকি না বড়জোর দুদিন আছি আপনার দরকার আমি কিভাবে মেটাতে পারি বলুন
—আমি জানি মায়া আমার উপর তোর খুব রাগ, আমি তখনও অসহায় ছিলাম এখনো অসহায়,
সাহিত্যকে দূর থেকে আসতে দেখে মায়া বলল
—আমার নম্বর কি আপনাকে আবির ভাই দিয়েছে
—হ্যা, আমরা সবাই তোকে খুজেছি তোর ফিরে আসাটা যে আমাদের জন্য কতটা আনন্দের ভাবতে পারবি না তুই
—আমি একটু বাইরে আছি আন্টি আপনি একসময় বাসায় আসবেন আমরা কথা বলব।
রেহেনা আহমেদ এবার অসহায় কণ্ঠে বলল,
—তোকে খুব দরকার মায়া আমার অন্যায়ের শাস্তি আমার ছেলেটা…
মায়ার দম বন্ধ হয়ে গেলো, ও শুনতে চায় না ওই মানুষটার কথা ও জানতে চায় না
—আমি রাখছি।
মায়া অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে চোখের জল আড়াল করে বলতো
—আর দুই ঘন্টা বসে থাকতি
—শুধু শুধু বাথরুমে কেন বসে থাকব!অদ্ভুত কথা বলিস আমার কি বাড়িঘর নাই?
মায়া গাড়িতে উঠতে উঠতে বলল,
—ডাক্তার কি এখন আছে?
—থাকলে থাকবে না থাকলে তুই তো আছিসই ডাক্তারদের দেবী
—সবসময় মজা করবি না
—আচ্ছা কোন সময় করব তুই বলে দিস।
—সাহিত্য হসপিটালে পৌছানোর আগে তুই যদি একটা শব্দ করিস আমি গাড়ি থেকে নেমে কোথায় যে যাবো আর খুজে পাবি না।
সাহিত্য আর একটা কথাও বলল না,মায়াকে ও যথেষ্ট ভয়ই পায় শুধু বুঝতে দেয় না।
সাহিত্য আড়চোখে মায়ার দিকে তাকিয়ে আছে ওরা যে নিউরোলজিস্ট এর সামনে বসে আছে সে ধ্রুব।মায়া সাহিত্যের দিকে তাকিয়ে একটা শুকনো হাসি দিলো,ধ্রুবকে উত্তেজিত দেখাচ্ছে
—তুমি কিন্তু এখনো বলছো না তুমি এতদিন কোথায় ছিলে
—বলতে চাচ্ছি না ধ্রুব, কারণ আমি আবার ফিরে যাবো
—তুমি জানো মায়া কত কিছু পালটে গেছে
—কই? তুমি তো সেই আগের ধ্রুবই আছো এখনো শুনলাম মেয়েদের সাথে ফ্লার্টিং করো বিয়েশাদীর প্লান নেই
ধ্রুব ছোট করে নিঃশ্বাস ফেলে বলল,
—তুমি মেয়েটা খুব খারাপ
—জানিতো
ধ্রুব ওর পিএ কে ডেকে সমস্ত এপোয়েন্টমেন্ট ক্যান্সেল করে দিতেই সাহিত্য ঘাবড়ে বলল,
—প্লিজ ডাক্তার আমি খুব বিজি মানুষ অনেক প্লান বাদ দিয়ে আজ এসেছি আমার এপোয়েন্টমেন্ট ক্যান্সেল করবেন না, আমার দেখানোর ওতো গরজ নেই তবে বাসায় ঢুকতে হলে আমার ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন নিয়ে ঢুকতে হবে
—তুই কিসের বিজি
—স্টপ, তুই আর কখনোই আমার সাথে হসপিটালে আসবি না
মায়া অসহায় ভাবে তাকাতেই ধ্রুব হেসে বললো
—তোমার ফাইলটা দাও
সাহিত্য ফাইল এগিয়ে দিতে দিতে বলল,
—ডক্টর আদনান আমায় সাজেস্ট করেছে আপনার কাছে আসতে
ধ্রুব হেসে হেসে ফাইল দেখছিলো ওর মুখটা শুকিয়ে গেলো, মায়া অধীর হয়ে ধ্রুবের দিকে তাকিয়ে আছে ধ্রুব সাহিত্যের দিকে তাকিয়ে রইলো,সাহিত্য হেসে বললো
—কিছু বলবেন ডক্টর? আমি কিন্তু সব জানি।কিচ্ছু করার নেই।
ধ্রুব একটু গলায় জোড় এনে বলল
—অনেক কিছুই আছে, আমি একটু স্টাডি করতে চাই তোমার ব্যাপারে তারপর তোমাকে জানাবো।
—শুধু শুধু সান্ত্বনা দিচ্ছেন ডক্টর
—সাহিত্য শেষ পর্যন্ত হাল ছাড়তে নেই, এটা আমরা অনেকেই বুঝে উঠি না
ধ্রুব এবার মায়ার দিকে তাকালো
—আবির তোমাকে কি বলেছে আদৌ কিছু বলেছে কি না আমি জানি না, তোমার সাথে এখানে দেখা না হলেও আমি তোমার বাসায় যেতাম
মায়া চোখ নামিয়ে নিলো,
—আমরা এখন আসি ধ্রুব…
—হিমালয় কোথায় জানতে চাও না?
মায়ার গলা শুকিয়ে গেলো এই একটা নামের প্রতি ওর তীব্র আকর্ষণ ও জানতে চায়, তাকে একবার দেখতে চায় কিন্তু….
—তুমি যে একটা স্টুপিড সেটা কি তুমি বোঝো?সব তোমার ইচ্ছে মত হয়? তুমি জানো আজ দেড়বছর হিমালয় ওর বাসায় যায় না, ও তোমাকে কত খুজেছে তোমার কোনো ইয়াত্তা আছে?কি করে পারলে বলোতো মায়া একজন জীবন্ত মানুষকে নিষ্প্রাণ করে দিতে..
মায়া ভয়ে ভয়ে বলল,
—মানে!…উনি কানাডাতে যান নি! কথা আপু আর উনি….
—তুমি কি বোকা মায়া? লাইফটা কি সিনেমা? যে তুমি সরে গেলেই সব স্মুথ হয়ে যাবে? হিমালয় পাগল হয়ে গিয়েছিলো মায়া তোমার প্রত্যাখ্যান ও মানতে পারে নি ওর বিস্ফোরক আচারণ দেখে আমরা সবাই হতভম্ব ছিলাম, রাগের মাথায় সেদিন ও চলে এলেও পরে তোমার বাসায় গিয়ে দেখে তুমি নেই…. প্রথম ছয়মাস ওর মানসিক অবস্থা এক্কেবারে খারাপ ছিলো প্রচুর ড্রাগ নিতে শুরু করেছিলো,আমাদের চোখের সামনে আমাদের যে বন্ধুটার সবচেয়ে ব্রাইট ফিউচার সে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছিলো,অথচ আমরা কিচ্ছু করতে পারছিলাম না…. অতিরিক্ত ড্রাগ নেওয়ার কারণে হসপিটালে এডমিট হতে হয়েছিলো তখন আন্টি খুব ভেঙে পড়ে আর আঙ্কেলের কাছে সবটা জানায় তোমার আর আন্টির মধ্যে যা কথা হয়েছিলো সে সম্পর্কে, সবকিছু জানাজানি হওয়ার পর কথাও খুব ভেঙে পড়ে, এটা ঠিক কথা ছোট বেলা থেকে হিমালয় কে খুব ভালোবাসতো কিন্তু ও কখনোই চায় নি তোমার আর হিমালয়ের মধ্যে বাধা হতে…।আমরা তোমার আব্বুর কাছে তোমার খোজ নিয়ে গেলে জানতে পারলাম তুমি তার সাথেও যোগাযোগ রাখো না! তুমি এরকম কিভাবে করতে পারো মায়া!
মায়া বিস্মিত হয়ে গেলো ওর চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়তে লাগলো, ও সবসময় বোকামি করে সবসময়! ও কেন ভাবলো না হিমালয় ওকে ভালোবাসে! কেন ও হিমালয়ের সাথে অন্যায় করলো!
—ধ্রুব…. মহারাজ! এখন কোথায়?!
ধ্রুব হালকা হাসলো,
—এখন তার খোজ করছ মায়া! এখন কি চাইলেই তুমি তাকে পাবে?সবকিছু কি চিরস্থায়ী মায়া?তুমি হিমালয়ের জীবনে একটা হঠাৎ হাওয়ার মতো এসে ওর পুরো জীবন ওলটপালট করে দিয়ে পালিয়ে গেলে অদ্ভুত না! একটা ছেলে তোমায় পাগলের মতো ভালোবাসলো তার কাছে সকাল দুপুর মাঝরাত সব তুচ্ছ হয়ে গেলো তোমার জন্যে আর তুমি….
মায়ার কান শো শো করতে লাগলো ও কিচ্ছু বুঝতে পারছে না ওর কাছে পৃথিবী পুরো অন্ধকার হয়ে আসছে, এতবড় পৃথিবীতে ও একটুও নিঃশ্বাস ফেলতে পারছে না!
সাহিত্য অবাক হয়ে ওদের কথা শুনছে, এতদিন ও শুধু মায়ার ভালোবাসার গভীরতাটা দেখেছে আজ বুঝতে পারছে যাকে মায়া এত ভালোবাসে তার কাছে ভালোবাসার ভান্ডার আছে তার সামনে সাহিত্য অতি নগন্য!
চলবে….
সামিয়া খান মায়া