খাটের উপর একটা নীল কালারের থ্রি-পিস ছুড়ে দিয়ে নিহাল রিধিকে কিছুটা রাগ জড়ানো কন্ঠে বলে উঠে,
“তোকে ওই ড্রেসে মানায় না, রিধি!এইটা তোকে মানাবে!ভালোয় ভালোয় এইটা পড়ে নে!”
রিধি তার নিহাল ভাইয়ার কথা শুনে অবাক হয়ে যায়।তার কাজিন-ফাজিন যা আছে সবাই স্কার্ট এবং জিন্স পড়েছে তার মামাতো ভাইয়ের বিয়ে উপলক্ষে।বউ বাড়িতে যাবে সবাই একই ক্যাটালগের ড্রেস পড়বে এরকম প্লান হয়েছে।রিধিও তাই পড়েছে।গাড়িতে উঠবে এমন সময় নিহাল কোথায় থেকে এসে রিধিকে হেঁচকা টানে বাসায় রুমের ভেতর নিয়ে আসে।এনেই এসেই জামাটা পড়তে বলে।রিধির রাগ উঠে যায় প্রচণ্ড!
“মানে কী ভাইয়া?টোয়া,টুম্পা,বাতাসা সবাই এই ড্রেস পড়েছে।আমিও ওদের সাথে শখ করে একটু পড়েছি।তো কি এমন ক্ষতি হবে শুনি?একদিন ই তো!”
“ওরা পড়ুক,রিধি!তুই পড়বি না!”
“দেখুন ভাইয়া দেরী হয়ে যাচ্ছে!গাড়ি ছেড়ে দিবে!ওইটা পড়তে গেলে পরে আমি আর যেতে পারবো না।”
“দেরী হলে হোক!আমি তোকে যেটা বলেছি সেটা কর!আমি বাইরে অপেক্ষা করছি!”
“ভাইয়া একটু বেশি বেশি হয়ে যাচ্ছে না?”
“আমি বেশি বেশি করছি না!তুই বেশি বেশি করতেছিস রিধি!তুই কখনো এইসব পড়েছিস?আর গ্রামে এসব পড়ে?হঠাৎ এসব ড্রেস পড়ে নিজেকে কি হাসির পাত্র বানাতে চাচ্ছিস!তুই যেই ড্রেসে অভ্যস্ত ওসব ড্রেসেই মানাবে তোকে!”
রিধির এবার সত্যিই আত্মসম্মানে লাগলো খুব!নিহাল ভাইয়া তাকে এতটা ছোট্ট চোখে দেখলো!?সে গ্রামের মেয়ে তাই বলে ওসব ড্রেস পড়তে পারে না?বাতাসাও তো গ্রামের!সেও তো পড়েছে!তাকে তো তিনি কিছু বললেননি!রিধিকেই বা কেনো?রিধির অভিমানে,লজ্জায় চোখ জ্বলে উঠে।ফ্যাসফ্যাস করে চোখের উপর পানিকণা ভাসছে।রিধি ক্ষিপ্রতা ভরা কন্ঠে নিহালকে বলে উঠে,
“আমি যাচ্ছি না ভাইয়া!আপনার ভাইয়ার বিয়েতে আপনিই যান!”
এই বলে নিহালকে রুম থেকে বের করে দিতে উদ্ভূত হয়ে পড়ে রিধি,
“রুম থেকে যান,ভাইয়া!আমি ঘুমাবো!প্লিজ যান!”
নিহাল সাথে সাথে রিধিকে একটা চড় বসিয়ে দেয় গালে!রিধি আরো অবাক হয়ে যায় নিহাল ভাইয়া কেনো এরকম করতেছে তার সাথে!এবার কিছুটা আওয়াজ করেই কেঁদে উঠে রিধি!নিহাল পেছন ঘুরে সাথে সাথে দরজা বন্ধ করে ফেলে।রিধি কাঁদতেছে এটা যদি বাইরে থাকা কারো কানে যায়,তাও নিহাল থাপ্পড় মেরেছে তাকে সেকারণে কাঁদছে এটা যদি শুনে অবস্থা বেগতিক হয়ে যাবে।নিহাল দরজা থেকে এবার রিধির দিকে তাকায়।মেয়েটা কাঁদছে।নিহাল নিজেকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করে রিধির দিকে এগিয়ে যায়।ডান হাত দিয়ে দুইগালের উপর উপচে পড়া চোখের পানি মুছে দেয়।তারপর মিষ্টতা কন্ঠে বলে,
“রিধি?তুই এসব ড্রেস পড়ে যদি ওই বাসায় যাস তাহলে অনেকেই তোর দিকে তাকাবে।বিয়েবাড়িতে কিছু আবাল টাইপের ছেলেরা থাকে যাদের দৃষ্টি ভালো না। পিছু নিবে।নাম্বার চাইবে।আরো অনেককিছু।আমি চাইনা তোকে সব ডিটেইলসে বুঝাই।তুই আশা করি সবটা বুঝে নিতে পারবি।তাই আমি চাই তুই শালীনতা বজায় রেখে ভদ্রমেয়েদের মতন ওই বাসায় যাবি।যাতে কেউ তোর দিকে খারাপ নজরে না তাকাতে পারে!”
বলে নিহাল থাকে।রিধিও চুপ করে থাকে।ছোট্ট একটা শ্বাস ছেড়ে তারপর নিহাল বলে,
“আমি তাহলে গেলাম।তোর যদি ইচ্ছে হয় পড়ে নিতে পারিস।”
তারপর আলতো পায়ে হেঁটে রিধির সামনে থেকে নিহাল চলে আসে।নিহাল চলে যাওয়ার পর রিধি বিছানার উপর থাকা নিহালের দেওয়া নীল ড্রেসটার দিকে তাকায়।সামনে আয়না ছিল তারপর আবার নিজের দিকে তাকায় রিধি!এবার রিধি ভাবে,আসলেই নিহাল ভাইয়া খারাপ বলে নি।ড্রেসটা কতটা বিশ্রীভাবে শরীরের সাথে লেগে আছে!তারউপর রেশমের স্কার্ট!রিধি নীল কালারের ড্রেসটা তাড়াতাড়ি পড়ে নেয়।সাঁজটাও কমিয়ে দেয়।মুখটা ধুঁয়ে নেয় আবার।মুখে হালকা করে একটু ফাউন্ডেশন মেখে পাওডার দিয়ে ম্যাট করে নেয়।তারপর ঠোঁটে গোলাপী কালারের লিপস্টিপ লাগায়।ব্যাস্ হয়ে গেল!
——————————————————
রিধি বাইরে এসে চারপাশে তাকায়। নিহাল ভাইয়া কোথাও নেই।তারপর নিচে নামে।সাতটা গাড়ি ছিল।ছয়টা ছেঁড়ে দিয়েছে।আর মাত্র একটা গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে।গাঁড়িতে থাকা লোকজনের হাবভাবে বুঝা যাচ্ছে তারা তার জন্যেই অপেক্ষা করতেছে।রিধি গাড়িটার সামনে যেতে ড্রাইভার ভেতরে থেকে বলে,
“তাড়াতাড়ি উঠুন! ”
রিধি উঠে পড়ে।জানলার পাশে বসে। জানলা দিয়ে শেষ আরেকবার বাইরে তাকায়।নিহাল ভাইয়াকে দেখতে পায়নি।আচ্ছা,উনি কি চলে গেছেন?হয়তো চলে গেছেন!
———————————————————বউকে বাসায় নিয়ে আসতে আসতে সন্ধে হয়ে যায়!সোফায় এনে বসাতে প্রতিবেশী এবং আত্মীয়-স্বজনদের হৈ-চৈ লেগে যায় বউকে দেখার জন্যে!এদিক দিয়ে রিধি,বাতাসা,টুম্পা আরো অনেক কাজিন মিলে নিলয়কে ধরেছে।টুম্পা বলে,
“ভাইয়া?আপনার বাসরঘর আমরা সাঁজাবো!আমাদের চল্লিশ হাজার টাকা দিতে হবে,হুঁ!”
সাথে অন্যরাও টুম্পার কথায় তাল মেলাতে থাকে।বেচারা নিলয়ের কানজোঁড়া ঝালাপালা ।এই ঝাঁজরার দল এই বাসায় পর থেকেই বলতেছে ওরা বাসরঘরটা সাঁজাবে।কিন্তু কথা হলো,সে ডেকোরেটর আগে থেকেই ঠিক করে রেখেছে বাসরঘর সাজানোর জন্যে!তাকে ত্রিশ হাজার দিবে বলে রেখেছে।কিন্তু এরা মাঝখান দিয়ে কিলবিল করছে বাসরঘর সাজাবে।একেতো সবগুলা কাঁচা ডেকোরেটর।তারউপর আবদার “চল্লিশ হাজার!”নিলয় বলে,
” তোরা যা চেয়েছিস তা আমার ইনকাম করতে আরো একযুগ লেগে যাবে।আমি তোদের সবাইকে এমনিই বখশিশ পাঁচ হাজার কলদিয়ে দিব সেটা নিয়ে কেঁটে পড়।আর বাসরঘরও সাজাতে হবে না।”
“নাহ,আমরা বাসরঘর সাজাবো!প্লিজ ভাইয়া এত কিপ্টামি করো না তো?এত টাকা মাসে ইনকাম করো,সেখানে তোমার এমন কিপ্টামি খাটে না!”
রিধি বাতাসার সাথে বলে,
“হ্যাঁ,ঠিক বলেছিস!”
নিলয় বলে,
“অর্ধ পাগলতো বানালি,এবার পুরা পাগল বানানোর ইচ্ছে?পরে তো পুরা পাগল হয়ে গেলে তোদের ভাবী আর থাকবে না!আমাকে তালাক দিয়ে চলে যাবে!”
“এত পাগল তোমাকে হওয়া লাগবে না।তুমি রাজি হয়ে যাও।তাহলেই তো রাস্তা পরিষ্কার!”
নিলয় বেচারার ধৈর্য্যের সীমা শেষ!কয়েক হাত দূরে তার ছোটভাই নিহালকে দেখে।হাত দিয়ে ইশারা করে উঠে,
“ছোটভাই আমার,ওদের সামলা!”
নিহাল ভাইয়ার অবস্থা বুঝতে পেরে হেসে উঠে।তারপর তাদের দিকে আসে।বলে,
“কি হয়েছে এখানে!এত হট্টগোল কেন!”
টুম্পা বলে,
“ভাইয়া?নিলয় ভাইয়াকে বলো ওই হাতুড়ী মার্কা ডেকোরেটর বেটাকে কল করে বারণ করে দিতে বাসরঘর সাজাতে যেন না আসে!”
“তাহলে সাজাবে টা কে!”
সবাই একযোগে বলে উঠে,শুধু রিধি ছাড়া,
“আমরা!”
রিধি শুধু হাসে।নিলয় নিহালের দিকে তাকিয়ে,
“দেখছিস ওদের কান্ড!?”
নিহাল বলে,
“ভাইয়া তুমি যাও!দেখি কি করা যায়!”
নিলয় নিহালের থেকে ভরসা পেয়ে যেন হাঁপ ছেড়ে বাঁচলো।তরতর করে বেরিয়ে যায় সবার মাঝখান থেকে!নিহালকে দেখে কেউ আর কিছু বলতে পারলো না।নিলয়ের থেকেও নিহালকে সবাই একটু ভয় পায়।কারণ সবার ভাবনায় নিহালের মুখাভাব সবসময় রাগ রাগ থাকে।কারণ সে রাগী মানুষ!নিহাল বলে,
“এবার আমাকে বল কেনো ভাইয়াকে সবাই ওইভাবে পিঁপড়ের মতন ধরেছিস!”
টুম্পা বলে,
“কিছু না ভাইয়া!”
তারপর সবার দিকে আবার তাকিয়ে,
“চল,চল আমরা চলে যাই!”
সবাই চলে যায়।রিধি কেনজানি সেখানে দাঁড়িয়ে থাকে।নিহাল বলে,
“কি ব্যাপার সবাই গেলো তুই যে যাচ্ছিস না?”
রিধি বলে,
“এভাবে রাগ রাগ ভাব দেখান কেনো?আমাদের সবার কত ইচ্ছে ছিল বাসরঘরটা সাজাবো, আর আপনি সেই আশাতে বালি ঢেলে দিলেন!”
“তুই আরেকজনের বাসরঘর সাজাতে লাফালাফি করতেছিস তোর বাসরঘর কে সাজাবে,শুনি?”
রিধি লজ্জা পেয়ে যায় নিহালের এহেন কথায়।মুচকি হেসে মাথা নুইয়ে ফেলে কিছুটা!নিহাল বুঝে ফেলে রিধি যে লজ্জা পেয়ে গেছে খুব।তাই সে কথা ঘোরানোর চেষ্টা করে,
“তা ওদের সাথে গিয়ে আড্ডা দে।গেলাম।”
বলে হন্নতন্ন পায়ে চলে যায় নিহাল।
#হারিয়ে_গেলে_ভুলো_না_আমায়
#রোকসানা_আক্তার
#সূচনা_পর্ব
চলবে…..