#হৃদপিন্ড
#জান্নাতুল নাঈমা
#পর্ব-৩৬
ইমন আদর করে ক্লান্ত হচ্ছে না অথচ মুসকান আদর পেয়ে ক্লান্ত। মুখ দিয়ে অল্প আওয়াজ ও বের করতে পারছেনা। ঘনঘন শ্বাস ছেড়ে ইমনের গালে হাত দিয়ে আঁকড়ে ধরলো। ইমন মুসকানের হাতে চুমু খেয়ে আবারো ডুবে রইলো তাঁর মাঝে।
“বাড়ি ফিরেছিলো তৃষ্ণার্ত হয়ে সেই তৃষ্ণা মেটাতে পারেনি বলে শুধে আসলে ভালোবাসার তৃষ্ণা মিটিয়ে নিচ্ছে ”
,
সন্ধ্যা হয়ে এসেছে ইমন নিজের সাথে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে রেখেছে মুসকান কে।
ঘুমিয়েছে কিনা বুঝতে পারছে না।
হালকাভাবে ছাড়াতে নিতেই ইমন চোখ খুললো।
মুসকানের দিকে চেয়ে মৃদু হেসে ফিসফিস করে বললো,,,
— ভয় কেটেছে,,,নাকি আবারো ট্রাই করবো ভয় কাটানোর??
মুসকান যেনো এবার লজ্জায় কেঁদে ফেলবে।
ছাড়াতে চেষ্টা করতে নিতেই ইমন তাঁকে আবারো জাবটে ধরে ঘাড়ে মুখ ডুবিয়ে দিলো।
মুসকান এক ঢোক চিপল মনে মনে ভাবলো এখন যদি আবারো পাগলামো শুরু করে আমি শেষ।
মিনমিনে স্বরে বললো,,,
— সন্ধ্যা হয়ে গেছে প্লিজ ওঠতে দিন রান্না করতে হবে। আপনিতো কিছু খাননি,,,
ইমন থেমে গেলো চোখ তুলে চেয়ে কপালে আলতো করে চুমু খেলো।
— মহারানীর খেয়াল হলো যে তাঁর মহারাজের খিদে পায়।
মুসকান অপরাধীর মতো মুখ করে রইলো।
ইমন মুসকানের জামা হাতে নিয়ে ইশারা করলো,,,
— পড়ে নিয়ে সোজা বাথরুম চলে যাও।
মুসকান বড় বড় চোখ করে নিজের কম্বল টা ভালোভাবে গায়ে জরিয়ে নিলো।
ইশ কি অসভ্য ছিঃ, পরোক্ষনেই ইমনের মাতলামো ভরা পাগলামো মনে পড়তেই শিউরে ওঠলো।
লজ্জায় মুখ লুকাতে থাকলো।
ইমন বাঁকা হেসে ওপাশ হয়ে বালিশে মুখ গুঁজে শুয়ে পড়লো।
শরীরটা ব্যাথায় টনটন করছে। অমনি শাওয়ার নিয়ে নিলো। নিচে গিয়ে রান্নাটা সেরে ফেললো।
রাত হয়ে গেছে বেশ ইমন ঘুমে আছে। এতদিন না ঠিকভাবে ঘুম হয়েছে আর না খাওয়া দাওয়া।
তাই এখন তৃপ্তি সহকারে ঘুমাচ্ছে।
মুসকানের শরীর টা ভালো লাগছে না।
বিছানাটা টানছে ভীষণ কিন্তু ইমন তো ওঠছেই না।
তাঁকে খাওয়িয়ে তারপর শুবে তাই ধীরে ধীরে বিছানার কাছে গিয়ে ডাকলো,,,
— এই যে শুনছেন খাবাড় রেডি ওঠুন এখন আটটা বাজে।
শ্যাম্পুর কড়া স্মেল পেয়ে জোরে একটা শ্বাস নিয়ে চোখ খুললো ইমন।
ভেজা চুলে তাঁর মুগ্ধময়ী কে এখন স্নিগ্ধময়ী লাগছে।
ঠোঁটের কোনে হাসির রেখা ফুটিয়ে ওঠে বসলো।
পিঠে বেশ জ্বালা করছে বুকেও দাগ লেগেছে।
ইমন গাড় চোখে চেয়ে বললো,,,
বড্ড জ্বালিয়েছো এতদিন, আজ এসব না করলেও পারতে বলেই নিজের বুকের দিকে ইশারা করলো।
মুসকান অবাক হয়ে চেয়ে খামচির দাগগুলো দেখলো। কিন্তু সে এগুলো কখন করলো।
ভ্রু কুঁচকে চেয়ে বললো,,,
— আমি কখন এসব করলাম মোটেও আমি এসব করিনি।
ইমন হেচকা টান দিয়ে নিজের ওপর ফেলে কোমড় জরিয়ে চুলে নাক ডুবিয়ে বললো,,,
— ইমন চৌধুরীর গায়ে এই দাগ মুসকান ছাড়া কেউ দিতে পারবেনা মাইন্ড ইট।
মুসকান এক ঢোক চিপে ভয়ে ভয়ে বললো,,,
“আপনি শুধু আমার দোষটাই দেখলেন নিজের দোষটা দেখলেন না বলেই কেঁদে ফেললো”
ইমন চোখ খুলে মুসকানের মুখ তাঁর মুখোমুখি নিয়ে বললো এমন ছিঁচকাঁদুনি হচ্ছো কেনো।
বেশী আদর দিয়ে দিয়ে মাথায় তুলে ফেলেছি তাইনা।
বলেই মুসকানের ঠোঁটের ঝখম হওয়া জায়গাটায় হাত বুলাতে লাগলো।
মুসকান লজ্জায় মিইয়ে গেলো খুব।
সরে যেতে নিতেই ইমন ঘাড়ের সেই গাড় লাল হওয়া জায়গাটায় ঠোঁট ছোঁয়ালো।
কেঁপে ওঠলো মুসকান,,,
প্রত্যেকটা জখম হওয়া জায়গায় ইমন ঠোঁট ছুয়িয়ে বললো,,,
— যাও আদর করে দিয়েছি।
তোমার মতো হিংসুটে নই আমি।
আমি যেমন আঘাত করতে পারি তেমন ভালোবেসে পুষিয়েও নিতে পারি।
,
খাওয়া শেষে সব গুছিয়ে উপরে আসতেই ইমন দুটো টেবলেট এগিয়ে এক গ্লাস পানি দিলো।
মুসকান জিগ্যাসু চোখে তাকাতেই ইমন বললো,,,
— রেডি হও মিসেস পাঁচ দিনের সবটা উসুল করতে হবে তো,,,
মুসকান চমকে তাকালো। ইমন বাঁকা হেসে ইশারা করলো ওষুধ গুলো খেতে।
মুসকান মুখটা কাচুমাচু করে বললো,,,
— আমার খুব খারাপ লাগছে।
পুরো শরীর ব্যাথায় অবশ হয়ে যাচ্ছে।
আর কিছু করবেন না প্লিজ।
ইমন দুষ্টু হাসি দিয়ে কড়া চোখে ইশারা করলো ওষুধ খেতে।
মুসকান কাঁদো কাঁদো মুখ করে খেয়ে নিলো।
ইমন গ্লাসটা রেখে মুসকানকে কোলে তুলে নিয়ে বিছানায় শুইয়িয়ে দিলো।
মুসকানের হাত পা কাঁপছে। শুধু তাঁর শরীরের কাঁপুনি নয় বুকের ভিতরের কাঁপুনিও অনুভব করছে ইমন।
গায়ে কম্বল জরিয়ে মুসকান কে টেনে নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে নিয়ে কানের পিঠে কিস করে বললো,,,
— ওগুলো শরীর ব্যাথা, জ্বরের ওষুধ ছিলো।
এবার ঘুমাও কাল অফিসের লোকজন আসবে এ কদিনে অফিসের অনেক কাজ জমে আছে।
ফ্রাইডে থাকায় বাড়িতেই ডেকেছি। বুয়া আসবে তুমি শুধু দেখিয়ে দিবে কি কি করবে ওকে।
মুসকান স্বস্থির এক শ্বাস ছাড়লো।
— মানুষ কতোটা ভালো হতে পারে। নিজের বোনের সাথে এতো বড় একটা জঘন্য ঘটনা ঘটে গেলো যার জন্য তাঁকেই কিনা এতটা আগলে রাখছে।
অথচ আমি ভয়ে ভয়ে মরেই যাচ্ছিলাম।
যে ওনি আমায় আর ভালোবাসবে না।
আমায় অপরাধী ভেবে দূরে ঠেলে দিবে ওদের মতোই আমাকে আঘাত করবে।
ইমনের বুকে পরম আবেশে মুখ গুঁজে ঘুমিয়ে পড়লো মুসকান।
মাঝরাতে ফুঁপানির শব্দে ঘুম আলগা হয়ে গেলো ইমনের। ভ্রু কুঁচকে মুসকানের দিকে তাকালো।
হ্যাঁ মুসকান কাঁদছে,,,
— কেনো কাঁদছে ব্যাথা কমেনি??
কপাল চেক করতে দেখলো স্বাভাবিক তাপমাত্রা।
নরম স্বরে বললো মুসকান,,,
— কি হয়েছে??
মুসকান কিছু বললো না তাঁর বুকে মুখ গুঁজে কেঁদেই চলেছে। বুঝলো মনস্তাত্ত্বিক সমস্যা।
ইমন আদুরে গলায় বললো,,,
— কি হয়েছে বলো? মায়ের কথা মনে পড়ছে?
— আপনি আমায় ও বাড়ি কেনো নিয়ে যাচ্ছেন না।
সবাই আমাকে অপরাধী ভাবছে তাইনা,ইয়াশফা আপুও বলেই হুহু করে কাঁদতে লাগলো।
ইমন এক দীর্ঘ শ্বাস ছাড়লো।
মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,,,
— এমনটা নয় মুসকান। কেউ তোমায় অপরাধী ভাবছে না। যারা অপরাধী সবাই তাঁদেরকেই অপরাধী ভাবছে।
মুসকান রেগে গেলো। জোর গলায় বললো,,,
— তাহলে আমাকে নিয়ে চলুন। আমি ওখানে যেতে চাই।
ইমনের মেজাজ গরম হয়ে গেলো। বার বার নিষেধ করার পরও মাঝরাতে সিনক্রিয়েট শুরু করেছে।
ইদানীং যে সব আচরন করছে সবটাই অস্বাভাবিক।
যেখানে ওর শুধু ইমনকে নিয়ে ভাবা উচিত সেখানে অন্যদের নিয়ে এতটাই মগ্ন যে কতটা খারাপ আচরন করে ফেলছে নিজেও জানেনা।
ইমনের কাছে এই মূহুর্তে মুসকান কে চরম বেয়াদব একটা মেয়ে লাগছে।
চোখ তুলে কথা বলার সাহস যে মেয়ে দেখায় না সেই মেয়ে এমন গর্জন ছাড়ে কি করে।
রাগ ওঠে গেলো ভীষণ।
দুহাত বিছানায় নিজের দু’হাতে চেপে মুখোমুখি হয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বললো,,,
— আর একটা কথা তুমি বলবে না।
অসভ্যতামির একটা সীমা আছে। আমি যখন বলেছি তুমি ও বাড়ি যাবে না তো যাবে না,,,আমি যদি বলি এই চারদেয়ালে সারাজীবন বন্দী থাকবে তুমি।
তাহলে কারো সাধ্য নেই এখান থেকে বের করার।
সো,,, নিজেকে সংযত রাখো।
ইমন মুসকানের থেকে সরে ওপাশ হয়ে চোখ বুজে রইলো। রাগটা নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করছে সে।
মুসকান ও পিছন ঘুরে চোখের পানি ফেলতে লাগলো।
,
ইয়াশফা শারীরিক ভাবে অনেকটাই সুস্থ।
আজ সকাল থেকে বেশ অন্যমনস্ক আছে সে।
কিছু খাচ্ছেও না, নিপ্রা ইমনকে মেসেজ করে জানাতেই ইমন অফিস থেকে সোজা তাঁদের বাড়ি চলে গেলো।
#হৃদপিন্ড
#জান্নাতুল নাঈমা
#পর্ব-৩৭
মনটা বেশ ভালো লাগছে।এতোদিন একটা ডিপ্রেশন কাজ করলেও এখন আর ডিপ্রেশন লাগছে না।
ইয়াশফা বেশ অভিমানের স্বরেই বলেছে তাঁদের পরিবারের ছোট মেয়ে এবং বড় বউ কে যেনো খুব শিঘ্রই বাড়ি ফিরিয়ে নেয়।
বড় ভাই, ভাবী সকলে মিলে একসাথে একি বাড়িতে থাকতে চায় সে। মুসকানের প্রতি তাঁর কোন রাগ বা অভিযোগ নেই বুঝতে পেরে বেশ স্বস্তি পেলো ইমন।
আর কোন ভয় নেই নিশ্চিন্ত হলো বেশ।
বাড়ি ফিরে মুসকান কে ড্রয়িং রুমে পেলো না।
রুমে গিয়েও পেলো না, বেলকুনিতে যেতেই দেখতে পেলো ভেজা চুলগুলো মেলে দিয়ে রেলিঙের উপর হাত রেখে দাঁড়িয়ে আছে।
ইমন ধীর পায়ে এগিয়ে গেলো। পিছনে দাঁড়িয়ে একহাতে চুলগুলো সরাতেই চমকে ওঠলো মুসকান।
কাঁধে ঠোঁট স্পর্শ করতেই শিউরে ওঠলো পিছন ঘুরতে নিতেই ইমন তাঁকে একদম জরিয়ে নিলো বুকের মাঝে।
হাতে একফোঁটা পানি পড়তেই ইমন বুঝলো মুসকান কাঁদছিলো কিন্তু কেনো??
নিজের থেকে ছাড়িয়ে সামনে ঘুরিয়ে নিয়ে শক্ত হাতে কোমড় জরিয়ে একদম মুখোমুখি হয়ে কড়া গলায় জিগ্যাস করলো,,,
— কাঁদছিলে কেনো?
মুসকান আমতা আমতা করে বললো,,,
— কই না তো, আমি কাঁদিনি।
আপনি ফ্রেশ হয়ে নিন আমি খাবাড় রেডি করছি।
বলেই ছারাতে নিতেই ইমন ধমকে ওঠলো।
— আমি যা জিগ্যেস করেছি তাঁর উত্তর দাও মুসকান।
মুসকান ঘাবড়ে গেলো ভীষণ। মিনমিনে স্বরে বললো,,,
— সায়রী আপু ফোন করেছিলো।
ইমন ভ্রু কুঁচকে বললো,,,
— তো,,,
মুসকান মাথা নিচু করে একদমে বলে ফেললো।
— আপু প্র্যাগনেন্ট। তাই আমারো মন খারাপ হয়েছে।
আপুর তো সুপ্তি আছেই এছাড়া ওখানে আরো কতো মানুষ। আর এখানে কেউ নেই আমারো যদি একটা বাবু আসতো তাহলে আমার আর সারাদিন একা কাটাতে হতো না।
ইমন হকচকিয়ে গেলো। বুকের ভিতর বয়ে গেলো প্রশান্তির বাতাস। চোখে ভেসে এলো তাঁর মুগ্ধময়ীর আবদার মাখা মুখটা। তেত্রিশ বছর বয়সে এসে যে কোন পুরুষই চায় ফুটফুটে এক বাচ্চার বাবা হতে।
ইমন ও তো চায়, বাবা হতে চায় সে, তাঁর মুগ্ধময়ীর গর্ভে তাঁর সন্তান আসবে, তাঁর মুগ্ধময়ীর সন্তানের বাবা হবে সে। এমন সৌভাগ্যের বিষয় কি আর দুটো আছে নাকি।
এই প্রথম কোন একটা কথা,কোন একটা বিষয় এমন ভাবে এট্যাক করলো তাঁকে যে সে পরিপেক্ষিতে একটা স্বরও বের করতে পারলো না।
কেমন একটা ঘোরে চলে গেলো সে।
,
মুসকান খাবাড় সামনে দিয়ে চুপচাপ বসে বোঝার চেষ্টা করছে ইমনকে তাঁর মনোভাবকে।
কিন্তু তাঁর মাথায় ঢুকছেই না মানুষ টা ঐ কথাটা শোনার পর এমন নিশ্চুপ হয়ে গেলো কেনো??
আমি কি ওনাকে আঘাত দিয়ে ফেললাম??
,
বিছানায় বসে পড়াশোনা করছে মুসকান।
ইমন বেশ কিছুক্ষন কাগজপএ ঘাটাঘাটি করে বিছানায় এসে বসলো মাথাটা ধরেছে ভীষণ।
মুসকান বই বন্ধ করে পাশে রেখে বললো,,,
— শুয়ে পড়ুন আমি মাথা টিপে দিচ্ছি।
ইমন এক পলক চেয়ে দেখে শুয়ে পড়লো।
মুসকান চুলগুলো হালকা ভাবে টেনে দিচ্ছে ইমন চোখ বুজে রয়েছে।
বেশ কিছু সময় পর ইমন বললো,,,
— মুসকান,,,
কাল রেডি হয়ে থেকো সব কিছু গুছিয়ে নিও আমরা ও বাড়ি যাচ্ছি অফিস থেকে ফেরার পথে তোমায় নিয়ে যাবো।
মুসকানের মুখে হাসির ঝলকানি ফুটে ওঠলো।
— সত্যি,,,
পরোক্ষনেই মনটা ভারী হয়ে গেলো।
একা লাগে বলে ও বাড়ি নিয়ে যাচ্ছে। তাঁর মানে বাবু দিবে না।
মন টা ভার করে ফেললো।
— আপনি আমাকে বাবু দিবেন না??
ইমন চোখ খুলে শীতল দৃষ্টি তে তাকালো।
মৃদু হেসে এক ঝটকায় মুসকান কে নিজের বুকের ওপর ফেলে গাল টিপে দিয়ে বললো,,,
— বাচ্চা কি খেলনা জিনিস যে এভাবে চাইছো??
মুসকান কপাল কুঁচকে বললো,,,
— আপনি এমন কেনো সবসময় নিজের ইচ্ছে কে প্রাধান্য দিন। আমার কোন কথাই শুনেন না।
আমার খুব মন খারাপ হয়।
ইমন দু’হাতে জরিয়ে নিলো মুসকান কে।
— কোনটা সঠিক কোনটা ভুল তুমি এখনো বুঝোনা মুসকান। তোমার কিসে ভালো হবে,কিসে মন্দ হবে সেটা তোমার থেকে ভালো আমি বুঝি। হ্যাঁ তোমার কথা আমি শুনিনা, তোমার ব্যাপারে আমার সিদ্ধান্তই বেশী গুরুত্বপূর্ণ মনে করি তোমার না। আর এই সিদ্ধান্ত গুলোর জন্য আজ মন খারাপ হলেও এমন একটা সময় আসবে যখন নিজেকে ভাগ্যবতী ভাববে।
— বাবু চাই আমার প্লিজ আর কোনদিন কিছু চাইবো না।
ইমন মৃদু হাসলো মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,,,
— আমার সবটা তো তোমারই কি চাইবে আর?
সায়রীর বেবিটা হোক তারপর আমরা নিবো।
ওর বেবি হবে অবশ্যই ছেলের আশা করি যাতে আমাদের প্রিন্সেস এর জন্য প্রিন্স খুঁজতে অসুবিধা না হয়।
মুসকান চমকে ওঠলো। ইমনের দিকে চেয়ে আবার চোখ ফিরিয়ে নিলো লজ্জায়। নিচু স্বরে বললো,,,
আমার এখুনি চাই আমি যেনো আপুকে এক,দুমাস পর ফোন করে বলতে পারি আমিও মা হচ্ছি।
কথাটা বলা মাএই ইমন মুসকান কে আরো গভীর ভাবে চেপে নিলো।
— তোমার সাহস দেখে অবাক হয়ে যাই।
তুমি জানো সায়রী তোমার থেকে বয়সে কতোটা বড়। ফার্স্ট বেবী হয়েছে তখন বয়স ২৬ সেকেন্ড টার সময় ৩২ সো ওর সাথে তোমার তুলনা করলে চলবে না। ও এখন বেবি না নিলে পরবর্তী তে সমস্যা হতো কিন্তু তোমার তা নয়। অনেক সময় আছে বুঝলে।
একদম ঘর ভর্তি ছেলে-মেয়ে দিবো যাতে আমি মরে গেলে তাঁরা আমার মুগ্ধময়ীর দায়িত্ব নিতে পারে আগলে রাখতে পারে।
মুসকান আঁতকে ওঠলো একহাতে ইমনের ঠোঁট চেপে ধরে শক্ত করে জরিয়ে বুকে মাথা রাখলো।
ইমন মৃদু হাসলো।
— কথার কথা বলছিলাম আর কি।
মুসকান ফুপিয়ে কেঁদে ওঠলো।
— আপনি আমায় ছেড়ে কোথাও যাবেন না ।
আপনাকে ছাড়া আমি এক সেকেন্ড ও টিকতে পারাবো না বিশ্বাস করুন। প্লিজ এমন কথা আর বলবেন না প্লিজ।
— ইশ কি বলে ফেললাম এখন সামলাও বউ।
আগে কান্না অফ করো তারপর মুড অন করো।
ভেবেই মুসকান কে শান্ত করার চেষ্টা করলো।
,
হসপিটাল থেকে ফোন এসেছে রিতিশা হসপিটালের যে কেবিনে ছিলো সেই কেবিনের সিলিং ফ্যানে নিজের ওড়না টাঙিয়ে গলায় ফাঁস দিয়ে সুইসাইড করেছে।
খবড়টা শোনামাএই চৌধুরী পরিবারের সকলে গায়ে কাঁটা দিয়ে ওঠলো। ইমন খবড়টা শুনেই একবার ইয়াশফা আরেকবার মুসকানের দিকে তাকালো।
“ইয়াশফার চোখে ঘৃনার পরিমান ছিলো শতভাগ ”
“মুসকানের চোখে দুঃখের পরিমান ছাড়া কিছু দেখতে পেলো না”
সাজিয়া বেগম আঁচলে মুখ ঢেকে সোফায় বসে হুহু করে কেঁদে ওঠলো। হাজার হলেও তাঁকে নিজের সন্তানের চোখেই দেখেছে। তাঁর মায়ের থেকেও বেশী ভালোবাসা সে দিয়েছে।
আর তাঁর জন্যই ইভান এতোটা নীচ পথে নেমেছে আর তাঁদের দুজনের জন্যই তাঁর আদরের মেয়ের সর্বনাশ ঘটেছে। তবুও সে যে মা বুক ফেটে কান্না আসছে তাঁর। ইয়াশফা দৌড়ে উপরে চলে গেলো।
ইমন সহ আরো অনেকেই পিছন পিছন গেলো।
মুসকান নিঃশব্দে চোখের পানি ফেলতে লাগলো।
,
রিতিশার মৃত্যুর খবড় শুনে ইভান কারাগারে ছটফট করতে শুরু করলো। দেয়ালে সমানে মাথা ঠেকতে শুরু করলো।
“তুই তো মরে গিয়ে বেঁচে গেলি কিন্তু আমি, আমি তো মরতেও পারছিনা”
কি করবো আমি, কি করবো, নিজ হাতে নিজের বোনের জীবনটা বিষিয়ে দিয়েছি। আমার ইয়াশফা আমার একমাএ আদরের বোনের সাথে জঘন্যতম অপরাধ করেছি। বেঁচে থাকার অধিকার আমারো নেই। কেউ প্লিজ আমায় মেরে ফেলো, মেরে ফেলো আমায় সাজা দাও আরো কঠিন আরো নির্মম সাজা দাও। আর অপেক্ষা করো না আজি মেরে ফেলো আমায়। আমি এই যন্ত্রণা আর সহ্য করতে পারছি না। হয় আমায় মারো নয়তো আমায় মরতে দাও।
সমানে দেয়ালে মাথা ঠেকছে আর পাগলের মতো ছটফট করছে ইভান।
নতুন পুলিশ অফিসার জয়েন করেছে আজি।
সাব -ইন্সপেক্টর আরুশ সরকার।
যাকে বলা হয় পুলিশ বাহিনীর মেরুদণ্ড।
মাঠ পর্যায়ে কাজ সহ সকল মামলার তদন্ত,আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন।
ইভানের চিৎকার, চেঁচামেচি শুনে কনস্টেবল কে জিগ্যেস করলো ইভানে ব্যাপারে। ওনি আরুশ সরকারের সামনে যাবতীয় কাগজ পএ তুলে ধরলেন। আরুশ সরকার সবটা দেখে বললেন,,,
ওহ মাই গড চৌধুরী বাড়ির ছেলে, মি.ইমন চৌধুরীর সৎ ভাই এম আই রাইট।
— ইয়েস স্যার,,, আপনি কিভাবে চেনেন?
আরুশ এক দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো,,,
— ওনি আমার পরিচিত এক বড় ভাই। ওনার বিষয়ে পাস্টের সবটাই জানা এই পেশায় কর্মরত হওয়ার পর থেকে নিজের ফ্যামিলির খবড়ই নেই না আর তো এসব তাই প্রেজেন্টের সবটাই অজানা।
যাই হোক এমন জঘন্য একটা মানুষ কে সত্যি বাঁচিয়ে রাখার মানে হয় না অবশ্য এটাকে বাঁচাও বলে না।
— হ্যাঁ স্যার মাঝে মাঝে বেশ অদ্ভুত আচরন করে।
আরুশ চোখে সানগ্লাস দিয়ে থানা থেকে বেরিয়ে গেলো।
,
গভীর রাত মুসকান বেশ কান্না কাটি করছে বাড়ির প্রত্যেকের মনেই আজ বিষাদের ছায়া পড়েছে।
দাফন করতে অবদি কেউ যায় নি। প্রত্যেকেই ঘৃনায় মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে একটা মরদেহ থেকেও।
শুধু কি মানবজাতি??যিনি সৃষ্টি করেছেন তিনিও যে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন জানাজা টা অবদি পড়ানো হয়নি। গোরস্থানে জায়গা অবদি দেওয়া হলো না।
তাঁর বাবার গ্রামের বাড়ির এক জঙ্গলের পাশে কবর দেওয়া হলো তাঁকে।
“ইসলামে আত্মহত্যা মহাপাপ ও অত্যন্ত ঘৃণ্য কাজ হওয়া সত্ত্বেও এমন অনেক লোক আছে, যারা জীবনযাপনের কঠিন দুঃখ-দুর্দশা ও ব্যর্থতার গ্লানি থেকে পরিত্রাণের জন্য অথবা জেদের বশবর্তী হয়ে বেছে নেয় আত্মহননের পথ। কিন্তু ধৈর্য ধারণ করে আল্লাহর ওপর ভরসা ও দৃঢ় আস্থা থাকলে কারও আত্মহত্যার মতো ক্লেশকর পথে পা বাড়াতে হয় না। আত্মহত্যা থেকে বিরত থাকতে আল্লাহ তাআলা বিশেষভাবে নির্দেশ দিয়েছেন এবং আত্মহত্যার পরিণামে কঠোর শাস্তির বর্ণনা দিয়ে পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেছেন, ‘তোমরা নিজেদের হত্যা কোরো না, নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের প্রতি পরম দয়ালু এবং যে কেউ সীমা লঙ্ঘন করে অন্যায়ভাবে তা (আত্মহত্যা) করবে, তাকে অগ্নিতে দগ্ধ করব; এটা আল্লাহর পক্ষে সহজ।’ (সূরা আন-নিসা, আয়াত: ২৯-৩০)
রিতিশা অন্যের জীবন দুঃখ, দূর্দশায় ফেলতে গিয়ে নিজের আপনলোক সহ নিজের পুরো জীবনটাকেই অভিশপ্ত করে তুলেছিলো। মানসিক যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে নিজেই নিজেকে শেষ করে দিলো।
সকল কষ্ট,যন্ত্রণা, পাপ থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য।
কিন্তু সে কি সত্যি মুক্ত হতে পারলো???
দুনিয়াতে মানুষের সাথে যতোপ্রকার জঘন্য অপরাধ করেছে তাঁর থেকেও জঘন্য অপরাধ করলো নিজের সাথে।
” যারা অন্যের ভালো চায় না অন্যের ক্ষতি চায় সারাজীবন শেষে তাঁরা নিজেরাই নিজেদের চরম ক্ষতি করে ফেলে ”
যেমনটা রিতিশা করেছে।
,
মুসকান ফুঁপিয়ে কেঁদে চলেছে ইমন মাথায় হাত রেখে বললো,,,
— মুসকান শান্ত হও। এভাবে কেনো কাঁদছো যা সব ঘটে যাচ্ছে তাতে আমাদের কারো হাত নেই।
এভাবে কান্নাকাটি করে নিজের ক্ষতি করার কোন মানে হয় না। বরং যা সব ঘটেছে এগুলো হওয়ার ছিলো ওর মৃত্যু ওভাবেই ছিলো মেনে নাও।
খারাপ লোকের সাথে খারাপটাই হয় মুসকান।
মুসকান ইমনকে জাবটে ধরে হাউমাউ করে কাঁদতে শুরু করলো।
— আমার খুব কষ্ট হচ্ছে বিশ্বাস করুন খুব কষ্ট হচ্ছে আমার।
— মুসকান রিল্যাক্স। এমন ভাবে ভেঙে পড়োনা।
প্লিজ কেঁদোনা এটাই ওর নিয়তি ছিলো।
ইগনোর করো বিষয়টা।
যারা অন্যের ক্ষতি চায় অন্যের দিকে বার বার আঙুল তোলে, নিরপরাধদের অপরাধী, অসহায়দের অসহায়ত্বের সুযোগ নেয় তাঁদের কোন দিন ভালো হয় না মুসকান। ওদের সাথে যা সব ঘটছে সবটার জন্য ওরা নিজেরাই দায়ী।
আমাদের আশে পাশের, সমাজের মানুষ দের এই ঘটনা দেখে বোঝা উচিত জানা উচিত,,,
মানুষ তাঁর নিজ কর্মফল নিজেই ভোগ করে।
মানুষ অন্যের দিকে ঢিল ছুঁড়লে সেই ঢিল পালটা তাঁর দিকেও ফেরত আসতে পারে।
“অন্যের দিকে আপনি একটা আঙুল তোলার আগে একটু ভেবে আঙুল তুলবেন”
“দেখবেন বাকি তিনটা আঙুলই আপনার দিকে তাক করা”
“অন্যকে কুলসিত করার আগে একবার ভেবে নেবেন
যে আপনি নিজে বা আপনার আপন কেউ কুলসিত হলে আপনার ঠিক কেমন লাগবে”
“যে অন্যের সম্মানে আঘাত হানতে চায় উপরওয়ালার তরফ থেকে তাঁর ওপরই অভিশাপ বর্ষিত হয়”
“মানুষ তাঁর নিজ কর্মফল যেমন নিজে ভোগ করে
তেমনি তাঁর আশে পাশের মানুষ আপনজনরাও সেই কর্মফলের ভাগীদার হয়”
“কর্মফল হতে পারে সম্মানীয় বা অসম্মানী”
“হতে পারে সুন্দর, সুখময় বা অভিশপ্ত”।
চলবে…..