#হৃদ_মাঝারে_তুমি
#পর্ব_১২
#Written_by_Mehebin_Nira (ছদ্মনামী)
আশা এক কাফ ধোঁয়া ওঠা কফি নিয়ে আয়েশ করে কোথায় খাওয়া যায় তা ভাবছিলো। এমন সময় হুট করে তার সামনে কেউ এসে দাঁড়ায়। কফি টা হাত থেকে পড়ে যেতে যেতে সামলে নেয় সে। চোখ তুলে রেগে সামনের মানুষ টার দিকে তাকিয়ে বলল,
‘মানুষ না রোবট? এভাবে কেউ আসে?’
‘জ্বি আমি একদম স্বশরীরে একটা জলজ্যান্ত মানুষ!’
আশা চোখ উঠিয়ে দেখলো তার সামনে গতকাল রাতের সেই ছেলে টা অর্থাৎ যাইফ দাঁড়ানো। ঠোঁটে তার ভূবন ভুলানো হাসি। আশ্চর্য!
‘আপনি?’
‘হ্যাঁ আমি যাইফ! আচ্ছা আপনি এখন ঠিক আছেন? এক্সুলি আমি রাতের ঐ ঘটনার জন্য সত্যি খুব সরি!’
‘তাই নাকি?’
‘জ্বি!
‘যদি সরি ই ফিল করতেন তাহলে ফের এই ভাবে আমার সামনে আসতেন না! একটু হলেই তো গতকাল আমার কোমড় ভেঙ্গে এখন এই কফি আর কফির মগ টাও ভাঙ্গতে যাচ্ছিলেন!’
‘আ-মি তো খেয়াল করিনি! তাছাড়া আমি কি জানতাম সকাল হতেই আপনি আবার আমার সামনে চলে আসবেন?’
‘জানতেন! ইচ্ছে করেই এমন করেছেন!’
‘নো নেভার! বিলিভ মি আমি জানতাম না!’
‘তাহলে নিশ্চয়ই আপনার মানুষের সাথে হুটহাট ধাক্কা খাওয়ার রোগ আছে! কুয়িকলি ডক্টর দেখান! এই যাহ আমার সাধের কফি তো ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে! সরুন তো!’
আশা যাইফের পাশ কাটিয়ে চলে যাওয়া ধরে। যাইফ আশার পুরো কথার সারমর্ম বুঝতে পেরে বলে,
‘এই যে হ্যালো, কোন ডক্টরের ট্রিটমেন্ট নিতে হবে বললেন নাতো!’
আশা পেছন ফিরে ভেঙ্গচি মেরে চলে যায়। যাইফ তা দেখে হাত দিয়ে মাথার পেছনে চুল গুলো চুলকিয়ে হাসে! আর কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে তার চলে যাওয়া দেখে সে ও প্রস্থান করে!
রাতুল ফ্রেশ হয়ে দেখে আদ্রাজ এখনো ঘুমে কাবু! বেঘোরে ঘুমোচ্ছে সে। রাতুল কয়েকবার ডাকলো কিন্তু ফল কিছুই হলো না। ঘুমে পুরোপুরি কাতর সে! তাই ভাবলো আর ডাকবে না! এই সকাল সকাল এক কাফ কফি হলে মন্দ হয় না। রুম থেকে বের হয়ে ভাবছে কি করা যায়! ভাবতে ভাবতে হঠাৎ ই আশা কে আশতে দেখে! আর দেরি না করে সে আশার সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। আশা নিচের দিকে তাকিয়ে থাকায় রাতুল কে খেয়াল করে নি। পূর্বের মতো যাইফ ভেবে বলে,
‘উফ আপনি আবার এসছেন?’
বিরক্তিকর চোখে সামনে তাকাতেই চোখ দুটো শান্ত হয়ে যায়। এযে তার সামনে অন্য কেউ দাঁড়িয়ে আছে! গত কাল রাতে যে কিনা তার বিনা অনুমতিতে কপালে ঠোঁট ছুঁয়ে দিয়েছিলো! জীবনে প্রথম বারের মতো কোনো ছেলে তার কাছে আসার ব্যাপার টা তৎক্ষণাৎ আশার ভাবভঙ্গি পরিবর্তন না করলেও পরে বেশ লজ্জা পেয়ে গিয়েছিলো। যা নিরার সামনে প্রকাশ করার সাহস পায় নি। সেই কথা মনে পড়তেই চোখ নামিয়ে নেয় আশা। নিচের দিকে দৃষ্টি নত করে বলল,
‘আপনি?’
রাতুল আশার কথা টা শুনে ভাবতে থাকে সে কে ছিলো যার জন্য তার এই উক্তি?
‘কার কথা বলছিলে?’ [কঠিন কন্ঠস্বর]
‘কই কারো না!’
আশা চলে যেতে নিলে রাতুল হাত দিতে বাঁধা দেয়।
‘ওয়েট!’
‘কি?’
‘আমার প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে কোথায় যাচ্ছো?’
‘বলছি তো কেউ না!’
রাতুল দেখলো আশার হাতে কফি। এই সুযোগ হাত ছাড়া করা যায় না। সে কে ছিলো সেটা বের করতে গিয়ে কথা কাটাকাটি হলে পরে কফি যে হাত ছাড়া হয়ে যাবে।
‘ওকে ফাইন। কফি টা আমার জন্য নিয়ে আসছিলে তাই না দাও তো! আমার আবার টাইম মতো কফি না পেলে মন টন ভালো থাকে না!’
আশার হাত থেকে রাতুল ছোঁ মেরে কফি টা কেড়ে নেয়। আশা বোকা বনে গেলো। এই একটু আগে মনে হচ্ছিল কতটা গম্ভীর মানুষ আর এখন?
রাতুল কফি টা মুখে নিয়ে এক চুমুক দিতেই কফির সাধ কতটুকু নির্ধারণ করে ফেললো। বুঝতে দেরি হলো না যে, এটা আশার হাতে বানানো কফি ছিলো! দুষ্টু বুদ্ধি মাথায় খেলে গেলো!
‘ইস ছিঃ ওয়াক এসব কি বানিয়েছো? এটা খাওয়া যায়? কি বাজে খেতে!’
এতো আয়েশ করে বানানো কফি একে তো কেড়ে নিলো তার উপর এখন খেয়ে কিনা বদনাম করছে! গায়ে লাগলো তার। সে জানে সে কফি ভালো বানাতে পারে। সবাই তার হাতে বানানো কফি খেয়ে কমেন্ট করে ভালো হয়েছে অপরদিকে রাতুল কিনা তার উল্টো টা করলো আজ? গায়ে লাগলো আশার। সে বলল,
‘ইমপসিবল কফি টা খারাপ হতেই পারে না! আপনার রুচি খারাপ!’
‘এহ আসছে! বিশ্বাস না হলে তুমি নিজেই খেয়ে দেখো!’
‘কিহহহ! আপনার এটোঁ কফি আমি খাবো?’
‘এই দেখলে আমি যখন সত্যি বললাম এখন খারাপ হয়েছে দেখে নিজেই আর খেয়ে দেখতে চাচ্ছো না! এসব আমরা বুঝি বুঝলে?’
রাতুলের উস্কানিমূলক কথায় আশা কফি টা তার হাত থেকে নিয়ে এক চুমুক দিয়ে দেখলো কফি তো ঠিক ই আছে! তাহলে রাতুল মিথ্যা বললো কেন যে, কফি টা খারাপ হয়েছে? রেগে তাকায় সে! রাতুল পুনরায় কফি টা আশার থেকে নিয়ে দ্রুত আশার ই কফিতে চুমুক দেওয়া স্থানে নিজেই চুমুক দেয় কফি তে। ভ্রুঁ কুঁচকে দুষ্টু হাসি দিয়ে বলল,
‘বাহ। এই বার তো দেখছি একদম ঠিক আছে! জাদু জানো নাকি তুমি? আচ্ছা আমি এখন যাই আর হ্যাঁ থ্যাঙ্কস!’
রাতুল মানে মানে কেটে পড়ে। আশা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায়। রাতুলের কথা টা শুনে ঠিক কি রিয়েকশন দিবে কনফিউজড হয়ে বলে,
‘এ্যাঁহ??’
রাতুল হাসতে হাসতে রুমে ঢুকে যায়। আশার মাথায় আসে ব্যাপার টা। নাক মুখ খিঁচে বলল,
‘আপনাকে আমি দেখেই নিবো মিস্টার হনুমান!’
প্রিয়ার কান্না দেখে নিরা ও কান্না করে দেয়। দুজনের কান্না প্রিয়ার মা আসতেই তিনজন হয়ে যায়। মেয়ের কান্না দেখে তিনি ও আর সহ্য করতে পারলেন না। সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষা পুরোপুরি হারিয়ে নির্বাক হয়ে যায় নিরা। আশা আরেক কাফ কফি বানিয়ে সোজা প্রিয়ার রুমে আসে। তিনজনের কান্নাকাটি দেখে সে হকচকিয়ে যায়। শেষে কান্নাকাটি পর্বের এন্ডিং টানে আশা!
এদিকে রাতুল কফি টা শেষ করে দেখে আদ্রাজের ঘুম এখনো কাটেনি। ভেবে পায় না এতো ঘুম আসলো কোথা থেকে। সহসা সে তো এতো ঘুমায় না। রাত জাগতে পটু আদ্রাজ! তবে কোনো প্রেম টেমের চক্করে নয় বিজনেস এর কাজে! বাবার পাশাপাশি নিজেও বিজনেস এর দেখাশোনা করার দায়িত্ব পালনের চেষ্টা করছে কিনা!
‘আদ্রাজ! ভাই আর কতো ঘুমাবি এবার তো উঠ প্লিজ!’
‘এই ব্যাটা উঠবি তো নাকি?’
আদ্রাজ মিটমিট চোখ খুলে বলল,
‘ঘুমোতে দে আমাকে! রাতে একটু ও ঘুমাতে পারিনি!’
‘তার মানে আমি ঘুমিয়ে যাওয়ার পর ও তুই জেগে ছিলি?’
‘হুম!’
‘তো ঘুম আসে নি কেন?’
‘ঐ মেয়ে টার জ…
আর কিছু বলে না আবার ঘুমে ঢলে পড়ে আদ্রাজ। রাতুল বলল,
‘ঐ মেয়ে? মানে নিরার জন্য তোর ঘুম আসে নি! লাইক সিরিয়াসলি?’
রাতুল আদ্রাজ কে ডাকে কিন্তু আর সাড়াশব্দ পায় না।
‘ও আচ্ছা আচ্ছা তলে তলে এতো দূর বন্ধু! যাকে সহ্য করতে পারো না তার জন্য তোমার রাতের ঘুম হারাম? বাহ দারুণ তো! কিন্তু এখন তুমি ঘুমালে আমি তো একা জেগে থাকতে পারি না বন্ধু! যার জন্য রাতে তোমার ঘুম আসে নি এখন এই দিনে তোমার ঘুম সব ছুটাতে আমি তাকেই নিয়ে আসার ব্যবস্থা করছি ওয়েট!’
কথা গুলো আদ্রাজের কানে ঢুকে নি। কারণ সে তো ঘুমে বিভোর! রাতুল ভাবতে থাকে কি করা যায়!
ভাবনার চূড়ান্ত পর্যায়ে মাথায় একটা চমৎকার বুদ্ধি এসে গেলো! রাতুল রুম থেকে বেরিয়ে নিরা কে খুঁজতে থাকে! খুঁজে খুঁজে একসময় নিরা কে পায় তবে একা নয় আশার সাথে! আশা তাকে দেখা মাত্রই ক্রুদ্ধ দৃষ্টি নিক্ষেপ করেছে। রাতুল সেটা দেখে ও না দেখার ভান ধরে বলল,
‘নিরা তোমার সাথে একটা কথা ছিলো!’
‘কি কথা?’
আসা বলল,
‘এই নিরা তুই কারো কথায় একদম কান দিবি না! চল আমরা ওদিকে যাই!’
‘ওয়েট! চলো আমরা তিন জনে মিলে ট্রুথ ডেয়ার খেলি!’
‘ভাইয়া আসলে..
আশা রেগে,
‘কোনো দরকার নেই!’
শেষে অনেক বলার পর রাজি হয় নিরা। আশা কে নিরা বুঝায়। তবে নিরা বুঝলো না রাতুলের মাথায় হঠাৎ ট্রুথ ডেয়ার খেলার ভূত কেন চাপলো! আশা ধারণা করেছে নিশ্চয়ই কোনো গন্ডগোল আছে এখানে! এই রাতুল তাকে কি আবার ফাঁসানোর চেষ্টা করছে? হতে ও পারে! একে কোনো বিশ্বাস নেই! তাই আশা মনে মনে ঠিক করলো তার সময় আসলে সে কিছুতেই ডেয়ার নেবে না!
চলবে———————