#হৃদ_মাঝারে_তুমি
#পর্ব_১৪+১৫
#Written_by_Mehebin_Nira (ছদ্মনামী)
আদ্রাজ ফ্রেশ হয়ে এসে একটা টিশার্ট পড়ে আয়নায় নিজের চুল ঠিক করতে গিয়ে নিরার বলা তখনকার কথা গুলো মনে পড়ে। নিরা বলছিলো আদ্রাজ যেনো তার ক্ষতি না করে! কথাটা মনে পড়তেই আদ্রাজ চোয়ালে শক্ত করে বলল,
‘কে ক্ষতি করে আর কে তাকে রক্ষা করে আগলে রাখতে চায় তা বুঝার সেন্স টুকুও নেই, এই মেয়ের মধ্যে! স্টুপিড একটা!’
বলেই আদ্রাজ রেগে রুম থেকে বের হয়।
এদিকে নিরা আদ্রাজের কাছ থেকে ছাড়া পেতেই ছুট লাগিয়ে দেয়। রাতুল আর আশা চলে যায় অন্য কাজে। নিরা ছাড়া পেয়ে এক দৌড়ে প্রিয়ার কাছে চলে যায়। তাকে কি একটা পরিস্থিতি তে ফেলে দিয়ে রাতুল আর আশা। তাদের সাথে আজকে কথাই বলবে না হুহ! প্রিয়া নিরা কে অপ্রস্তুত ভাবে দেখে বলল,
‘কি ব্যাপার নিরা তোমাকে এমন দেখাচ্ছে কেন?’
‘ঐ আসলে… না মানে..
‘কি আমতা আমতা করছো? কি হয়েছে বলো তো?’
‘উহুঁম কিছু না!’
‘কিছু তো হয়েছে! বলো বলো! একটু পর তো আমি চলে যাবো তখন তো আর কেউ তোমাকে জিঙ্গেস করবে না!'(মৃদু কন্ঠে বলল)
নিরা প্রিয়ার কাছে এসে বলল,
‘আপু এমন করে বলছো কেন বলোতো?’
‘সত্যি তো এটাই তাই না?’
‘আচ্ছা শুনো বলছি কি হয়েছে…
নিরা ইমোশনাল হয়ে সব কিছু গড়গড় করে বলে দেয়! প্রিয়া সব শুনে হা হয়ে আছে! কিছু সময়ের জন্য নিজের কথা ভুলে গিয়ে আদ্রাজ আর নিরা কে নিয়ে ভাবতে থাকে! নিরা আদ্রাজের রাগী লুক হুবহু কপি করতে চেয়ে চোখ বড় বড় করে বলল,
‘জানো উনি কেমন ভয়ংকর চোখে তাকিয়ে ছিলো! আমার তো ভয়ে জান টাই বেরিয়ে যাচ্ছিলো! আর একটু হলে তো আমি একদম পগাড় পাড়!’
‘হাহাহা!’ [নিরার ফেইস রিয়েকশন দেখে+ কথা শুনে প্রিয়া আর হাসি আটকে রাখতে পারলো না]
‘আপু তুমি হাসছো?'(গাল ফুলিয়ে)
‘এতো ভয় পেতে হবে না। রিল্যাক্স! আর যাই হোক এতোটুকু বিশ্বাস রাখতে পারো আদ্রাজ তোমার কোনো ক্ষতি করতে পারে না! কারণ….
‘কারণ কি আপু?’
‘কারণ আদ্রাজ তোমাকে….
প্রিয়া পুরো কথাটা শেষ করার আগে রুমে অন্য লোকজন চলে আসে। তাই আর কথা টা কমপ্লিট করতে পারলো না। এতো লোকজনের ভিড় যে নিরার আর জিঙ্গেস করা হয় নি আদ্রাজ তাকে তারপর কি? প্রিয়া তাদের সাথে ব্যস্ত হয়ে পড়ায় নিরা সেখান থেকে বেরিয়ে চলে আসে। অসম্পূর্ণ কথা টা অসম্পূর্ণ ই রয়ে যায়! নিরা আনমনে হাটতে হাটতে বলল,
‘রাতুল ভাইয়া আমাকে ডেয়ার দেয় যেনো আমি উনার বন্ধুর ঘুম ভেঙ্গে দেই! আর এখন উনি আর আশা দুজন ই গায়েব আশ্চর্য! আমি যে ভাবছি ওদের উপর রাগ দেখাবো সেটা সফল কিভাবে হবে?’
আদ্রাজ কফি হাতে নিয়ে খুশি মনে হেঁটে আসছিলো। ভাবছে এই কফি টা আয়েশ করে ঠিক কোথায় খাওয়া যায়! এমনিতেই সকাল সকাল মুড+ ঘুম দুটোই তুঙ্গে উঠিয়ে একদম ঝফাং করে আছাড় মেরেছে নিরা। মেজাজ ভালো করতে এই কফি টা যথেষ্ট! তবে যদি সুন্দর করে বসে খাওয়া না যায় তাহলে কেমন হলো? আদ্রাজ এসব আনমনে ভেবে হেঁটেই আসছিলো পাশ থেকে কোনো মেয়েলি কন্ঠে কিছু একটা শুনে! থমকে দাঁড়িয়ে পেছন ফিরে দেখলো এটা আর কেউ নয় নিরা! উফ গড সেই মেয়েটা আবার তার সামনে? নিরার বলা কথাটা বুঝতে চেষ্টা করে সে! এবং ঝটপট বুঝে ও যায়। কেননা রাতুলের বন্ধু তো এই গোটা বাড়ি তে একমাত্র সে! তার মানে রাতুল নিরা কে ডেয়ার দিয়েছিলো? আর এই জন্যই নিরা তখন কিছু একটা বলতে চাইছিলো! রাগের চোটে তার কথা ও শুনতে চায় নি! একবার রাতুল কে হাতের কাছে পেয়ে নিক তারপর দেখাবে মজা!
আদ্রাজ আর না দাঁড়িয়ে থেকে রুমে চলে আসে। বেলকনিতে দাঁড়িয়ে বাহিরের পরিবেশ টা দেখতে দেখতে কফি পান করছে সে!
চারদিকে ঘোরাঘুরির পর রুমে আসে রাতুল। দেখলো দরজা খোলা বিছানায় আদ্রাজ নেই! আর না তো নিরা আছে! তার মানে কাজ হয়ে গেছে! ভাবনার মাঝেই আদ্রাজ ও বেলকনি থেকে রুমে চলে আসে। আর এসেই দেখলো রাতুল কে! সঙ্গে সঙ্গেই রাগ বর্ষণ করলো! রাতুল চিল আছে! কারণ সে ডেয়ারে এটাও উল্লেখ করেছিলো যে এই ডেয়ার টাই কে দিয়েছে তা বলা যাবে না! আর নিরা ও নিশ্চয়ই বলবে না! আদ্রাজ চুপচাপ বিছানায় বসে! রাতুল তা দেখে বলল,
‘কিরে তোর ঘুম কখন ভাঙ্গলো?’
এমন ভান করছে যেনো সে কিছুই জানে না। দুধে ধোয়া তুলসী পাতা। রেসপন্স করছে না দেখে রাতুল ফের বলল,
‘কথা বলছিস না কেন? যেভাবে ঘুমিয়ে ছিলি আমার তো মনে হয়েছিলো আজ সারাদিন এক ঘুমে পার করে দিবি!’
‘আমার ঘুমের চৌদ্দ টা বাজিয়ে এখন এমন নাটক করছিস যেনো ভাজা মাছ টা উল্টে খেতে পারিস না!’
‘মানে!’
‘নিরা কে ডেয়ার দিয়ে আমার ঘুম ভাঙ্গিয়ে দিয়েছিস! আবার এখন কিছুই না জানার ভং ধরছিস! তোকে তো…
বলেই আদ্রাজ রেগে বিছানার একটা বালিশ ছুড়ে মারে রাতুলের দিকে। দুজনার কথা কাটাকাটি চলে ভালোই! শেষমেশ রাতুল হাসতে হাসতে বলল,
‘আমার কি দোষ বল তুই নিজেই বলেছিলো নিরার জন্য রাতে ঘুমাতে পারিস নি। তাই ভাবলাম যার জন্য ঘুমোতে পারিস নি সে এসেই তোকে ঘুম থেকে জাগ্রত করুক! ব্যাপার টা কিউট না?’
‘এই একদম মিথ্যে কথা বলবি না তোকে আমি কখন বলেছি নিরার কথা?’
‘দেখ ভাই আমি একদম মিথ্যে বলছি না। তুই নিজের মুখে বলেছিস! সত্যি বলছি!’
রাতুল কথাটা সিরিয়াস ভাবে বলল যে আদ্রাজ ফেলতে পারলো না। সে রাতের অনেক টা টাইম ঘুমায় নি কথাটা সত্য তবে রাতুল কে কিভাবে বলে দিলো বুঝতে পারছে না! সে যখন ঘুমোতে পারছিলো না তখন রাতুল গভীর ঘুমে মগ্ন ছিলো! তাই তার তখন দেখা সম্ভব নয়! রাতুল আদ্রাজ কে ভাবতে দেখে দুষ্টু হাসি হেসে বলল,
‘কি ভাই মনে মনে লাড্ডু ফুটছে তোমার তাই না?’
‘মানে?’
‘এই যে নিরার জন্য রাতের ঘুম হারাম!’
‘সাট আপ রাতুল! তোর জন্য আমি ঐ মেয়ে কে বকা দিয়েছি। তুই গিয়ে এখন ওকে সরি বলবি! তা নাহলে আমি তোর সাথে নাই! থাক তুই আমি যাচ্ছি!’
‘আহা রাগ করছিস কেন? ঠিক আছে সরি বলে দিবো নিরা কে! কিন্তু তুই এটা জানিস কিভাবে?’
আদ্রাজ বললো সে কিভাবে কথা টা জেনেছে! রাতুল বলে,
‘আমি আরো ভাবছিলাম নিরা তোকে বলে দিয়েছে!’
‘আমাকে ডিরেক্টলি বলবে কিভাবে ভয়ে ভিতুর ডিম হয়ে ছিলো! তখন আমাকে খেয়াল করে নি নিজেই বিড়বিড় করে যাচ্ছিলো আমি যে তার সামনে দিয়ে যাচ্ছি তাও দেখে নি! আজব একটা মেয়ে!’
‘তোর সাথে মানাবে ভালো!’
‘তোর মুখে আমি তালা মেরে দিবো কিন্তু রাতুল!!’
আদ্রাজ রেগে রুম থেকে চলে যেতে নেয় রাতুল ও দৌড় দেয়!
‘সরি সরি!’
‘মুখ টা বন্ধ রাখ। চল এখন নিচে অনেক কাজ আছে!’
‘আচ্ছা চল!’
আশা নিরা কে খুঁজতে থাকে। এদিকে নিরা নিজের ফোন টা নিয়ে ছাঁদে চলে যায়! নির্দিষ্ট নাম্বার টা কল লিস্ট থেকে বের করে কল দেয়! কয়েক বার রিং হওয়ার পর পরই কল টা রিসিভ করা হয়!
‘কি হলো কল রিসিভ করছিলে না কেন বলোতো? আমার কতো টেনশন হচ্ছিল!’
‘ঐ একটু কাজ করছিলাম তো তাই!’
‘ও আচ্ছা। কেমন আছো? ওদিকে সব ঠিকঠাক তো?’
‘ভালো আছি! হ্যাঁ একদম সব ঠিকঠাক! তুই চিন্তা করিস না রে পাগলী! বিয়ে তে গিয়েছিস আনন্দ কর! এদিক টা ভেবে মন খারাপ করিস না!’
‘হু বললেই হয়ে গেলো! আমি কাল ই চলে আসবো!’
অপরপ্রান্ত থেকে আরো কিছু কথা ভেসে আসে। আশা কে আসতে দেখে নিরা বলল,
‘সাবধানে থেকো! তোমার কিছু হলে খুব খারাপ হয়ে যাবে কিন্তু! তুমি ভরসা দিয়েছো বলেই আমি এখানে এসেছি! আর আমার অনুপস্থিতিতে তোমার সাথে কোনো অঘটন ঘটলে….
অপরপ্রান্তের জন নিরা কে সান্ত্বনা দিয়ে কল টা কেটে দেয়। আশা কে তার দিকে এগিয়ে আসতে দেখে নিরা উল্টো দিকে হাঁটা ধরে।
নিরা রেগে আছে তার জন্যই এমন করছে বুঝতে পেরে আশা দৌড় দিয়ে নিরার সামনে এসে দাঁড়ায়। হাঁপাতে হাঁপাতে বলে,
‘দোস্ত তুই এখানে আমি তোকে সারা বাড়ি তন্নতন্ন করে খুঁজেছি!’
রাগী লুকে তাকায় নিরা। আশা তা দেখে বলল,
‘কি?’
‘সামনে থেকে সর নয়তো একটা ঠুসি মেরে নাক ফাটিয়ে দিবো!’
‘আমি কি করলাম?’
‘আমাকে ভূমিকম্পের উপর ফেলে দিয়ে তুই কিনা চলে এলি? এইই তুই আমার বান্ধবী? বান্ধবী নামের কলঙ্ক তুই!’
‘তখন তো আমার রাগ ছিলো! আচ্ছা যা সরি এই দেখ কান ধরেছি!’
‘ঢং করবি না একদম!’
‘আমার ভাই কেমন রিয়েক্ট করেছে বলতো?’
নিরা রাগ দেখিয়ে আবার হাঁটতে থাকে। যাই হোক অনেক কিছু পর নিরার রাগ ভাঙ্গে! এদিকে বেলা গড়তে শুরু করে! প্রিয়ার মাকে আসতে দেখে নিরা উঠে দাঁড়ায়। উনার হাতে দুটো ব্যাগ। এই ব্যাগে কি আছে জানতে আগ্রহী নিরা! তিনি এসে বলল,
‘নিরা, আশা কে দেখছি না ও কোথায়?’
‘মামি মনি আশা ওয়াশরুমে!’
‘আচ্ছা তাহলে তুমি ই নাও এগুলো!’
তিনি ব্যাগ দুটো নিরার দিকে এগিয়ে দেয়। প্রশ্নবোধক দৃষ্টি নিরার! তা বুঝতে পেরে উনি হেসে বলল,
‘তোমাদের দুজনের জন্য দুটো লেহেঙ্গা! দেখো তো কেমন হয়েছে!’
‘মামি মনি এসবের কি দরকার ছিলো?’
‘দরকার ছিলো বলেই তো নিয়ে এসেছি! আহা দেখো না কেমন হয়েছে!’
দুজনার কথার মাঝখানে আশা ও আসে। তাকে নিরা সবটা বলল! নিরা আর আশা ব্যাগ দুটো খুলে দেখলো। খুব সুন্দর দুটো লেহেঙ্গা! একটা মিষ্টি কালার আর অন্য টা গোল্ডেন কালার! দেখেই মনে হচ্ছে বেশি দামী! চোখ ধাঁধানো সৌন্দর্য্য দুটো তেই বিদ্যমান! প্রিয়ার মা বলল,
‘দুজনের জন্য পারফেক্ট হয়েছে! বলতেই হয় আদ্রাজের পছন্দ আছে!’
আদ্রাজের কথা শুনে নিরার হাত থেকে ব্যাগটা বিছানায় পড়ে যায়। প্রিয়ার মা সেটি দেখে কিছু টা অবাক হয়। আশা হেসে বলল,
‘ভাইয়া তো কখনো মেয়েদের শপিং করে নি! তাহলে এসব?’
‘তোদের দুজনার জন্য গতকাল লেহেঙ্গা নিয়ে আসার কথা ছিলো! এতো ব্যস্ত ছিলাম যে বেমালুম ভুলে গিয়েছিলাম! সকালে মনে পড়তেই আদ্রাজ কে পাঠিয়েছিলাম সে নিয়ে এসেছে! গতকাল দিতে পারি নি এজন্য সরি রে!’
‘ইট্স ওকে মামি মনি! এন্ড আমাদের দুজনার পক্ষ থেকে থ্যাঙ্কস!’
আরো কিছুক্ষণ কথা বলে মামি মনি সন্তুষ্টির হাসি হেসে দুজন কে রেডি হয়ে নিতে বলে চলে যায়। এদিকে বরযাত্রী আসার সময় হয়ে যায়। নিরা আর আশা রেডি হয়ে প্রিয়ার কাছে চলে যায়। প্রিয়া পাথরের মতো হয়ে আছে। নিরা আর আশা যতটা সম্ভব তাকে হাসিখুশি রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে! পিয়াসের সাথে সেই সকালে একবার কথা বলিয়ে দিয়েছিলো তারা! পিয়াস সাফ জানিয়ে দিয়েছে সে যেনো না কাঁদে! আরো অনেক কিছু বলে! বুঝতে বাকি নেই পিয়াস কতটা কেয়ার আর ভালোবাসে প্রিয়া কে! ভালোবাসার মানুষ গুলোকে এভাবে দেখতে ভালোই লাগে! পরিপূর্তা পাচ্ছে এই ভালোবাসা!
একটা সময় বাহিরে থেকে শোনা যায় বরযাত্রী চলে এসেছে। প্রিয়ার তত মনে হচ্ছে সে সব কিছু হারাতে বসেছে! ফলে কান্না জুড়ে দেয়! এই জন্য নিরা আর আশা যায় নি গেট এর সামনে! অন্য মেয়েদের পাঠিয়ে দেয়! পার্লার থেকে কয়েক টা মেয়ে এসে প্রিয়া কে সাজিয়ে দেয়! এই সুযোগে নিরা আর আশা ভাবলো পিয়াসের সাথে একটু দেখা করে আসা যাক! প্রিয়া কে সেটা জানিয়ে বের হয় দুজন!
পড়বে না পড়বে না বলেও প্রিয়ার মায়ের কথা ভেবে আদ্রাজের নিয়ে আসা লেহেঙ্গা টাই পড়তে হয় নিরা কে! চুল গুলো একপাশে ছেড়ে দিয়ে মুখে হালকা সাজ আর চোখে গাঢ় কাজল দেয়! ব্যাস এই টুকুই!
‘বল তো নিরা মেয়েদের জীবন টা এমন কেন? সব কিছু ছেড়েছুড়ে চলে যেতে হয়! ইশ কি কষ্ট!’
‘তাহলে তুই বিয়ে করিস না ব্যাস হয়ে গেলো!’
আশা গাল টা বাংলা পাঁচের মতো করে রাখলো যা দেখে নিরা হো হো করে হেসে দেয়। পিয়াসের কাছে গিয়ে আড্ডা জুড়ে দেয়!
এদিকে রাতুলের অশান্ত দু চোখ খুঁজে চলেছে আশা কে! কিন্তু হন্ন হয়ে খুঁজেও পাচ্ছে না! ভাবছে মেয়েটা গেলো কোথায়?
পিয়াসের কিছু বন্ধু রা ও এসেছে। তাদের চাহনি নিরার ভালো না লাগায় সে বলল,
‘ভাইয়া এখন তাহলে আমরা যাই!’
পিয়াসের বন্ধু রা বলে,
‘আরে বেয়ান চলে যাচ্ছেন কেন?’
তাদের কে কোনো ভাবে বুঝ দিয়ে চলে আসে নিরা সঙ্গে আশা কেও নিয়ে আসে। আশা কিছুই বুঝলো না!
‘কিরে এভাবে চলে এলি কেন?’
‘দেখিস নি পিয়াস ভাইয়ার সাথের ছেলে গুলোর দৃষ্টি কেমন?’
‘কি বলিস?’
‘জ্বি! তোর তো হুঁস ই নেই!’
‘আমি সত্যি ই দেখিনি!’
‘যা তাহলে ওদের সামনে গিয়ে বসে থাক। আমি প্রিয়া আপুর কাছে যাচ্ছি!’
‘এটা কি আমি একবার ও বলেছি? তাছাড়া তুই যেখানে নেই আশা সেখানে থাকবে এ আবার হয় নাকি? চল তো!’
নিরা হাসে। রাতুল অনেক খোঁজাখুঁজি করার পর অবশেষে পায় সেই কাঙ্ক্ষিত ব্যক্তি কে! তাদের সামনে গিয়ে দাঁড়ায় সে! আর আশা কে আদ্রাজ জরুরী প্রয়োজনে ডাকছে বলে মিথ্যা একটা কথা বলে নিয়ে চলে যায়।
এদিকে পিয়াসের সঙ্গে থাকা মাহিম নামের ছেলেটার নজর আটকে গেছে নিরার দিকে! তার মতে সে হয়তো এতো সুন্দর কোনো মেয়ে কে আগে কখনো দেখে নি! তাই সে ও নিরার পিছু নেয়! আশা চলে যেতেই উপযুক্ত সুযোগ পায় সে। নিরা কে পেছন থেকে ডাকে,
‘এই যে শুনছেন?’
নিরা পেছন ফিরে তাকায়! মাহিম এক গাল হেসে তার দিকে এগিয়ে আসে।
‘হাই আমি মাহিম আপনি?’
‘আ-আ-মি!’
আদ্রাজ পিয়াসের মেয়ে কাজিন গুলোর হাত থেকে বাঁচতে পথ খুঁজছে। মেয়ে গুলো সাংঘাতিক! তাকে কিছুতেই ছাড়ছে না! রাতুল ও সঙ্গে নেই! নাজেহাল অবস্থা তার! কোনো ভাবে সেখান থেকে বেরিয়ে আসতেই অপ্রত্যাশিত ভাবে সামনে পড়ে যায় নিরা আর মাহিম! নিরা কে তার চয়েজ করে দেওয়া সেই লেহেঙ্গা পরিহিত অবস্থায় দেখে চোখ জুড়িয়ে যায় আদ্রাজের! সত্যি ই খুব সুন্দর মানিয়েছে ড্রেস টা তাকে! কিন্তু চোখ সরে ছেলেটার উপর পড়তেই আচমকা রাগ উঠে যায়! ভালোই লক্ষ্য করলো ছেলেটা নিরা কে জোড়াজুড়ি করছে! আদ্রাজ সামনে এসে দাঁড়ায়! সে ছেলেটা কে উদ্দেশ্য করে বলে উঠে,
‘তোমাকে কোথায় যেনো দেখেছি?’
‘আমি মাহিম! পিয়াস ভাইয়ের কাজিন আপনি কে?’
‘ও আচ্ছা আচ্ছা! আমি আদ্রাজ প্রিয়া আপুর ফুফাতো ভাই!’
আদ্রাজের রাগী চেহারা টা লক্ষ্য করে নিরা আমতা আমতা করে বলল,
‘আ-আ-মি-এ-খন আসি!’
মাহিম বলে,
‘চলে যাবেন?’
আদ্রাজ বলে,
‘ও হ্যাঁ নিরা তোমাকে তো আশা ডাকছে যাও যাও!’
নিরা ঢোক গিলে দ্রুত সেখান থেকে চলে যায়। আদ্রাজ আর মাহিম তার যাওয়ার পানে তাকিয়ে চোখ ফিরিয়ে নেয়! তবে আদ্রাজ লক্ষ্য করে অন্য কিছু! সে যা লক্ষ্য করেছে এটি হয়তো নিরা খেয়াল করে নি! এতো কেয়ারলেস হলে চলে? রাগ হয় আদ্রাজের!
মাহিম বলে,
‘আচ্ছা তার মানে উনার নাম নিরা? থ্যাঙ্কস আপনাকে!’
‘কেন বলোতো?’
‘আরে উনি তো কিছুতেই বলছিলো না!’
‘আচ্ছা আমিও যাই। পরে কথা হবে ব্রো!’
মাহিম কে কোনো ভাবে মানিয়ে চলে আসে আদ্রাজ। এখন নিরা কে খোঁজার পালা! কই সে? প্রিয়ার রুমে মানুষ গিজগিজ করছে!
নিরা কে পেয়ে গেলেই কিছু না বলে তার হাত টা ধরে সোজা নিয়ে আসে আদ্রাজ। নিরা তো খুব অবাক এমন কেন করছে আদ্রাজ! গতকালের ঘটনা মনে পড়ে তার!
‘আমি ঐ ছেলেটার সাথে কথা বলি নি! সত্যি বলছি! পিয়াস ভাইয়ের ওখানে কেমন করে তাকিয়ে ছিলো দেখে আমি আর আশা সেখানে থেকে চলে আসি! বিশ্বাস করুন আমি কিছু করিনি! একদম সত্যি বলছি!’
আদ্রাজ আলাদা একটা রুমে নিয়ে আসে তাজে। এর ফাঁকে আশা কেও খুঁজেছে পায় নি।
নিরা একা একটা রুমে নিজেকে দেখে অজানা আশঙ্কায় ভয় পেয়ে যায়। পূর্বে রোহানের ঘটনা টায় টনক নড়লো তার! কাঁদো কাঁদো হয়ে যায় নিরা।
‘এমন কেন করছেন আপনি? আমাকে এখানে কেন নিয়ে এসেছেন?’
‘মুখ টা বন্ধ রাখতে পারো না? এতো কেয়ারলেস কেন তুমি?’
‘মানে?’
নিরার পিঠের দিকে লেহেঙ্গার চেইন টা কিছু টা খুলে গিয়েছে। যা পিঠের দিক থেকে তার খোলা চুল সরে যেতেই চোখে পড়ছে। আদ্রাজ দ্বিধাদ্বন্দ্ব শেষ করে কথা টা তাকে বলে দেয়! নিরা কে সেটি বাঁধার জন্য বলে আদ্রাজ বাহিরে চলে যায়! কিছুক্ষণ পর এসে দেখে সেই এক ভাবে দাঁড়িয়ে আছে নিরা! নিচের দিকে তাকিয়ে বলে,
‘আ-মি পারছি না!’
আদ্রাজ কি করবে বুঝে উঠতে পারছে না। আশা কেউ পাওয়া যাচ্ছে না। এই মুহূর্তে কি করা যায়? ভাবাভাবির চূড়ান্ত পর্যায়ে গিয়ে নিরার পেছনে এসে দাঁড়ায় আদ্রাজ! কাঁপা কাঁপা হাতে সেই কাজ টা করে যা করতে সে একেবারে অপ্রস্তুত ও অনিচ্ছুক ছিলো! চেইন টা লাগিয়ে দিয়ে সোজা বের হয়ে চলে যায় আদ্রাজ!
চলবে———————