হৃদমাঝারে তুমি পর্ব -১৬

#হৃদ_মাঝারে_তুমি
#পর্ব_১৬
#Written_by_Mehebin_Nira (ছদ্মনামী)

আশা রাতুলের সঙ্গে গিয়ে এদিক ওদিক তাকিয়ে আদ্রাজ কে খুঁজছে। কিন্তু কোথায় নিজের ভাই টার দেখা সে পেলো না। তাহলে রাতুল যে বললো আদ্রাজ তাকে ডাকছে! আশা বলে,
‘ভাইয়া কোথায়?’

‘ও তো নাই!’

‘মানে? এই না একটু আগে আপনি বললেন ভাইয়া আমাকে জরুরি প্রয়োজনে ডাকছে? তাইতো এখানে নিয়ে আসলেন!’

‘আসলেই বলেছিলাম নাকি?’

‘তার মানে?'(ভ্রুঁ কুঁচকে তাকায় আশা)

‘আদ্রাজ তোমাকে ডাকে নি! মিথ্যা বলেছিলাম!’

আশা পুরোপুরি কথাটা বুঝতে পেরে বলল,
‘এই আপনার সমস্যা কি? তখন আমাকে…

রাতুল আশার দিকে নিষ্পলক তাকিয়ে উৎকন্ঠা ননিয়ে বলল,
‘এভাবেই থাকো! স্টাচুর মতো!’

‘হ্যাঁ?’

রাতুল পকেটে দু হাত রেখে আশা কে দেখছে। এই রিয়েকশনে আশা কে জোস লাগছে। ঠোঁটে মুচকি হাসি ফুটে উঠে। আশা তা দেখে রেগে যায়।

‘ধুর! আমি যাচ্ছি!’

‘এ-এই কোথায় যাচ্ছ?’

‘আপনি আমাকে এখানে কেন নিয়ে এসেছিলেন?’

‘উম্ সত্যি বলবো?’

‘না আপনার তো মিথ্যা বলার অভ্যাস! সেই মুখ দিয়ে কি আর সত্যি বের হবে?!’

‘জ্বি হবে! এবার সত্যি বলছি! আসলে তোমাকে এই ড্রেস টা পরিহিত অবস্থায় দেখতে ভীষণ ইচ্ছে করছিলো!’

রাতুল এবার সত্যি কথা টাই বলে। আশা ভেঙ্গচি মেরে বলল,
‘দেখা হয়েছে? এবার আমি গেলাম!’

‘অন্তত থ্যাঙ্কস টা তো দিয়ে যাও!’

‘কেন?’

‘শত হোক ড্রেস টা তো আমার চুজ করা!’

‘কিহহহ..

‘জ্বি!’

‘কিন্তু মামিমনি যে বললো এগুলো ভাইয়া নিয়ে এসেছে!’

‘ঐ বলেছে আর কি!’

যাই হোক রাতুলের সাথে আরো কিছুক্ষণ কথা কাটাকাটি করে চলে আসে আশা। খুঁজতে থাকে নিরা কে। নিরা অনেক্ষণ থম মেরে থাকার পর রুম থেকে বের হয়। আনমনে আদ্রাজের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে ভাবতে ভাবতে হাঁটছিলো। ওমনি ওপাশ থেকে হুট করে কেউ চলে আসলে দুম করে একটা ধাক্কা খায় দুজন! আশা বলে,
‘ওমাগো কে রে আমার মাথা টা ফাটিয়ে দিলে?’

নিরার হুঁস ফিরলেন সে দ্রুত নজর ফিরিয়ে আশার দিকে তাকিয়ে দেখে বেচারি মাথায় হাত দিয়ে আছে।

‘সরি সরি আমি তোকে খেয়াল করিনি ব্যাথা পেয়েছিস?’

‘নিরা তুই! তুই না প্রিয়া আপুর কাছে যাচ্ছিলি? এই দিকে কি করছিস?’

‘আ-ব-ও-ই একটা কাজে!’

‘কি ব্যাপার বলতো তোতলাচ্ছিস কেন?’

‘ধুর কি বলিস? যাক তুই ও এসেছিস ভালোই হয়েছে চল এবার দুজন মিলে প্রিয়া আপুর কাছে যাই!’

‘আচ্ছা চল! শুন তখন এই রাতুল ভাইয়া আমাকে মিথ্যা বলে ডেকে নিয়ে গেছে! আসলে আমার ভাই আমাকে ডাকে ই নি!”

‘কি বলিস কেন মিথ্যা বলল?’

‘সেটা তো উনি ই ভালো জানে! বাদ দে চল ঐ দিক টায়!’

নিরা ও আশা দুজন একত্রে প্রিয়ার রুমে চলে যায়। প্রিয়া কে সাজানোর কাজ অলমোস্ট শেষ!

রাতুল ও দৌড়ে আশার পেছন পেছন যাওয়ার চেষ্টা করে। কয়েকজন লোকজন তার সামনে পড়তেই আশা অনেক দূরে চলে যায়। ব্যর্থ হয়ে রাতুল হাল ছেড়ে দেয়। আদ্রাজ কে দেখে তার কাছে চলে যায়। আদ্রাজ আচমকা রাতুল কে খেয়াল করে বলল,

‘রাতুল কোথায় হাওয়া হয়ে গিয়েছিলি তুই? আমার জীবন কতটা সংকটাপন্ন ছিলো এ নিয়ে তোর কোনো ধারণা আছে?’

‘কি বলিস? ঘুর্ণিঝড়, ভূমিকম্পের মুখোমুখি হয়েছিলি নাকি?’

‘তার থেকে বও বড় কিছু! পিয়াস ভাইয়ের কাজিন গুলো আমাকে যেভাবে আটকে রেখেছিলো আমি তো ধরেই নিয়েছিলাম আজ আমি শেষ!’

‘ইশ আমাকেই আজ পর্যন্ত কেউ ধরলো না!’

রাতুল আদ্রাজের সিরিয়াস কথা টা মজা করে উড়িয়ে দিচ্ছে দেখে বলে,

‘তোর কি মনে হয় আমি তোর সাথে মজা করছি?’

‘না তো কেন মনে হবে?’

‘তো হাসছিস কেন?’

‘আরে হাসছি কই আমার তো আফসোস হচ্ছে!’

‘ঠিক আছে আয় তোকে সব মেয়ের গোডাউনের মাঝখানে ছুঁড়ে মেরে দিয়ে আসি! চল আয়!’

রাতুল আদ্রাজ কে টেনে নিয়ে যেতে শুরু করে। রাতুল এবার না না করতে থাকে! আদ্রাজ ও প্রতিশোধ নেয়ার জন্য বলে,

‘তুই আমার একমাত্র জানে জিগার দোস্ত! তোর আফসোস দেখে কি আমার ভালো লাগে বল?’

‘ছেড়ে দে ভাই! আমার যে জন আছে ঐ টাই ভালো! মেয়ের গোডাউন লাগবে না!’

আদ্রাজ রাতুলের মুখে এমন কথা শুনে তাকে ছেড়ে দেয়। এবং রাতুলের কোন জন আছে সেটা জানার জন্য উদগ্রীব হয়ে যায়! মুখ ফসকে বেরিয়ে যাওয়া কথা টা কে কিভাবে আদ্রাজের মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলা দেওয়া যায় রাতুল এখন সেটা ভাবতেই ব্যস্ত!

_____________

আয়নায় নিজের শরীরের ক্ষত গুলোর দিকে তাকিয়ে সিংহের মতো গর্জন করে উঠে রোহান! তার থেকে বয়সে ছোট হয়ে ও আদ্রাজ কোন সাহসে তার গায়ে হাত লাগায়? এতো সাহস ওর? আদ্রাজের কথা পরে নিরার কথা আগে উঠছে! কি এমন চেয়েছিলো তার কাছে? বিনিময়ে কি জুটলো চড় কিল ঘুষি? এতো তেজ মেয়েটার! রোহানের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে একজন লোক বললো,

‘ভাই আসবো?’

‘হ্যাঁ!’

‘রোহান ভাই খবর তো একেবারে চাঙ্গা!’

‘ভনিতা না করে বলে ফেল! জোগাড় করেছিস ঐ মেয়েটার নাম ঠিকানা/পরিচয়?’

‘তা আর বলতে? এ টু জেট খোঁজ খবর নিয়ে এসেছি!’

‘দেরি না করে বলতে শুরু কর!’

লোক টা গড়গড় করে বলতে শুরু করে দেয় নিরার পরিচয়। সব শুনার পর রোহান বলে,

‘তুই এখন যা! বাকি টা আমি পরে জানাচ্ছি!’

‘ওকে ভাই!’

‘ভালো একটা খবর নিয়ে এসেছিস নে এই টাকা রাখ!’

লোক টা জোড় পূর্বক হেসে মাথা চুলকাতে চুলকাতে বলল,

‘এসবের কি দরকার ছিলো!’

‘এই রোহান দরকার ছাড়া কিছু করে না! বুঝি?’

লোকটার পকেট গরম করে দেয় রোহান। ফলস্বরূপ খুশি মনেই লোকটা বিদায় নেয়! রোহান নাক মুখ খিঁচে রক্ত চক্ষু নিয়ে বলে,

‘এবার তোমাকে আমি দেখেই নিবো মিস নিরা! এই রোহান মির্জা কে ইনসাল্ট করার শাস্তি এখন থেকে তুমি হাড়ে হাড়ে টের পাবে! আদ্রাজ ছেলেটা কে পরে দেখা যাবে! আমার প্রথম টার্গেট হলে তুমি! রেডি থাকো নিজের কৃতকর্মের সাজা ভোগ করার জন্য! তোমার জন্য অগ্রিম শুভকামনা রইল! হা হা হা হা…!’

বলে রোহান স্ব-শব্দে হেসে উঠে। এই হাসির অর্থ অন্য কিছু বয়ে বেড়াচ্ছে! যা খুব সম্ভবত নিরার ক্ষতির দিকে বেশি ইঙ্গিত করছে!

_______________

প্রিয়ার বিদায়ের পালা এসে যায়। আনন্দে উল্লসে উৎফুল্ল থাকা পরিবেশ টা এক মুহুর্তে মধ্যে পুরো বিষাদে ভরপুর হয়ে যায়। থমথমে পরিবেশ বিদ্যমান। প্রিয়া কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে সেই সঙ্গে তার বাবা মা ও। উনাদের ঘরের রাজকন্যা কে বিদায় দিতে গিয়ে বুক ফেটে আর্তচিৎকার বেরিয়ে আসে। শক্ত করে বাবা মা জাপটে ধরে কাঁদছে নিরা। উপস্থিত সকলের চোখে পানি চলে আসে। নিরা আর আশা ও সেখানে উপস্থিত! পিয়াসের কেন যেনো কষ্ট লাগছে! প্রিয়া কে এভাবে কাঁদতে দেখে তার বুকের বা পাশে চিন চিন ব্যথা অনুভব হচ্ছে! সে মনে মনে ওয়াদা করে প্রিয়া কে কখনো কাঁদতে দিবে না! কষ্ট পেতে দিবে না! যে মেয়েটি পরিবার পরিজন আপন পরিবেশ ছেড়ে তাকে বিশ্বাস করে তার হাত ধরে সারাজীবন থাকতে বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছে সেই মানুষটি কে কিভাবে কষ্ট দিতে পারবে সে? কি করে পারে মানুষ এসব করতে? কেন বুঝে না তারা? একটা মেয়ের জীবনে সব চেয়ে বড় ত্যাগের সূত্রপাত শুরু হয় এখান থেকেই! নারী তুমি অনন্য!

যাই হোক অবশেষে প্রিয়া কে বিদায় দেওয়া হয়! প্রিয়ার মা কে সকলে সান্ত্বনা দিতে ব্যস্ত কিন্তু তিনি কেঁদেই চলেছে। নিরার নয়ন জোড়া ভিজে যায় প্রিয়ার বাবা মায়ের ভালোবাসা দেখে! স্বজন হারানোর ব্যথা টা হাহাকার দিয়ে উঠে নিরার বুকে। দৌড়ে সে ছাঁদের এক পাশে চলে যায়। ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠে! মনের আকাশে ঘুটঘুটে কালো মেঘের আনাগোনা! এই দুঃখ ভুলেও সে দিব্যি হাসে কারণ এটাই দুনিয়ার নিয়ম! কিন্তু আজ প্রিয়ার বাবা মা কে দেখে আর নিজেকে আটকাতে পারলো না! সে ও যদি তার বাবা মা কে ধরে এভাবে কাঁদতে পারতো! হঠাৎ করে নিরার হাতে থাকা ফোন টা বেজে উঠে! নিরা অশ্রুসিক্ত নয়নে ফোনের স্ক্রীনে যে নামটা ভেসে উঠে তার দিকে এক ধ্যানে তাকিয়ে থাকে!

‘তুমি না থাকলে হয়তো আমার এই ধরনীতে আর আপন বলতে কেউ ই অবশিষ্ট থাকতো না!’

কল টা বাজতে বাজতে কেটে গেলে নিরার হুঁস ফিরে! সে চোখের পানি মুছে কল ব্যাক করতে যায় কিন্তু তার আগেই আবার ওপাশ থেকে আবার কল আসে। এবার আর দেরি না করে ঝটপট কল রিসিভ করে নিরা তারপর অপরপ্রান্ত থেকে যা শুনলো তার শুনার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলো না সে! অজানা ভয়ে অনর্গল কাঁপতে থাকা হাত টা থেকে ফোন টা অটোমেটিক নিচে পড়ে যায়!

চলবে———————?

(বলুন তো নিরা কি শুনেছে?)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here