#হৃদমাঝারে – [০৯]
৭,
ক্যাম্পাসে বন্ধুদের সাথে বসে গল্প করছিলো মেহরিমা। এমন সময় রনি তার দল নিয়ে মেহরিমার সামনে এসে দাঁড়ালো। মেহরিমা রনির দিকে তাকাতেই রনি স্মিত হাসলো। মেহরিমা রাগে কটমট করে ওর দিকে তাকাতেই রনি অন্যদিকে তাকালো আর তখনি একটা ছেলে এসে মেহরিমার দিকে একগুচ্ছ লাল গোলাপ দিয়ে বলে,
– আ- আই লাভ ইউ।
মেহরিমা ছেলেটার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকালো। তারপর বলল, তুমি আমাকে ভালোবাসো? কিন্তু কেন?
ছেলেটা এবার থতমত খেয়ে গেলো। তারপর বলল,
– না মানে, আমি আসলে,,
– তুমি আসলে কি? উঠে দাঁড়ায় মেহরিমা।
– না আসলে আমি না। ওই সাইম তোমাকে ভালোবাসে। ছেলেটা এবার মাথা তুলে তাকালো মেহরিমার দিকে তাকালো। মেহরিমা ছেলেটার দিকে একটু তাকিয়ে থেকে সাইমের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। রনির এই দলটা মেহরিমার আগে থেকেই চেনা তাই সাইমকে চিনতে ওর অসুবিধা হয়নি। মেহরিমা সাইমকে জিগ্যেস করলো,
– এসব কি হচ্ছে সাইম।
সাইম একগাল হাসলো। তারপর বলল,
– কি করবো বলো সুইটহার্ট। তোমাকে দেখলেই ভালোবাসতে ইচ্ছে করে। তোমার এই গুলুমুলু চেহারা ওয়েস্টার্ন ড্রেসে তোমাকে যা হ*ট লাগে না। ইশ আমি তো নিজেকে,,
আর কিছু বলতে পারলো না সাইম আর আগেই মেহরিমা বলে উঠলো,
– ভদ্রভাবে কথা বলো সাইম। না হলে কিন্তু
– কি করবে তুমি হ্যাঁ। তুমি জানো এই ছোট ছোট তোমাকে দেখলে আমি ভিবোর হয়ে যাই। নিজেকে সামলাতে আমার কতটা কষ্ট হয়।
সাইমের কথা শেষ হতে না হতেই মেহরিমা ওর গালে সজোরে চড় বসালো। তারপর সাইমের দিকে তাকিয়ে কঠিন গলায় বলল, আমাকে দেখতে হ*ট লাগে তাইনা। তুই নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারিস না। আজকের পর নিজেকে আরো ঠিক রাখতে পারবি না। তারপর সাইমকে ইচ্ছেমত মারতে লাগলো। মেহেরিমাকে দেখে অপু রাজু ও বর্ণা ও ওকে মারতে লাগলো। কিছুক্ষণ মারার পর রনি এসে মেহরিমা কে আটকিয়ে বলে,
– কি করছিস মুন। মেরে ফেলবি নাকি?
– ছাড়ো আমায় রনি। একে তো আজ আমি একেবারে মেরে দিবো। বলেই মেহরিমা এক লাথি দিলো সাইমকে। রনি মেহরিমাকে টেনে একটু দূরে নিয়ে বলল, এই মুন থাম এবার। অনেক হয়েছে।
মেহরিমা রনির দিকে তাকিয়ে চক্ষুূ্দ্বয় কিছুটা সংকোচিত করে বলল,
– এরা তোমার বন্ধু রনি। এর ছেলের সাহস দেখে আমি অবাক হয়েছি। আর রনি, এই ছেলেটা আমাকে এত খারাপ কথা বলল আর তুমি কিছু বললে না।
মুনের দিকে স্মিত হাসলো রনি। মাথা চুলকিয়ে বলল,
– আমি বলেছিলাম তোর কাছে না আসতে কিন্তু সাইম আমার কোন কথা শুনেনি। তাই আমিও আর কিছু বলি নি। ছেলেটা তোর হাতের মিষ্টি আদর পেতে চাইছে তাই আমিও আর না করলাম না। কিন্তু তুই যে এত আদর করবি সেটা ভাবতে পারিনি। আর একটু হলেই মরে যেতো।
– মরে যাক। যাক মরে। রাগে কটমট করে আবার সাইমের দিকে তাকায় মেহরিমা। রনি মেহরিমার হাত ধরে বলল,
– চল এখান থেকে। তারপর রনি মেহরিমাকে টেনে সেখান থেকে নিয়ে যায়। উপর থেকে এই দৃশ্য দেখছিলো ফারহান আর রাগে ফুঁসছিল। হাতের শক্তমুঠি করে বড় বড় করে শ্বাস নিলো কয়েকবার। তারপর দেয়ালে ঘুসি দিয়ে সেখান থেকে চলে আসলো।
কলেজ শেষে সব বন্ধুরা মিলে পার্কিং লটে আসে। রাজু আর অপু ওদের বাইক আনতে গেলে মেহরিমা আর সুবর্ণা ওখানে দাঁড়িয়ে থাকে। আর তখন ওদের সামনে আসে ফারহান। ফারহানকে দেখে মেহরিমার ভ্রু আপনা আপনি কুঁচকে উঠে। ফারহান মেহরিমার নিকটে এসে পকেট থেকে একটা মার্কার পেন বের করে তারপর মেহরিমার সামনে কিছুটা ঝুকে ওর হাটুর নিজ বরাবর দাগকাটে। ফারহানের এমন কান্ডে হতবম্ব হয়ে যায় দুইজনেই। মেহরিমা দু-পা পিছিয়ে যায়। আর বলে,
– কি, কি করছেন আপনি?
ফারহান সোজা হয়ে উঠে দাঁড়ায় আর পেনটা পকেটে পুরে স্মিত হাসে। তারপর বলে,
– কাল থেকে যেন এই দাগটা দেখা না যায়। মানে হাটুর নিচে জামা পরে কলেজে আসবে।
– আপনি কি আমাকে অর্ডার করছেন।
– ধরে নাও তাই।
– কখনোই না। আমি ওসব লং ড্রেস পরি না।
– এখন থেকে পরবে।
– হে ইউ। আপনি কে হুম! আমাকে অর্ডার করার আপনি কে?
– তোমার ভবিষ্যৎ। কথাটা বিরবির করে বললেও মেহেরিমার কর্ণপাত ঠিক-ই হলো। মেহরিমা মাথা তুলে সামনে জিগ্যাসু দৃষ্টিতে তাকাতেই ফারহান বলে উঠে,
– না মানে বলছিলাম, এতে ভবিষ্যৎতে তোমারই ভালো হবে।
– আমার ভবিষ্যৎ নিয়ে আপনাকে ভাবতে হবে না। ফারহান কিছু বলবে তার আগেই অপু আর রাজু বাইক নিয়ে এসে হাজির হয়। মেহরিমা ফারহানের দিকে এক পলক তাকিয়ে বাইকে উঠে বসে। আর ফারহান সেখানেই ঠাঁয় দাঁড়িয়ে তাকিয়ে থাকে মেহরিমার চলে যাওয়ার দিকে। মেহরিমা চলে যাওয়ার পর ফারহান মনে মনে বলে উঠে, তোমার ভবিষ্যৎ নিয়ে তো আমিই ভাববো মেহুরানি। হুম শুধু আমি।
রাতে বিছানায় শুয়ে এপাশ ওপাশ করছে ফারহান। বারবার ওর চোখের সামনে ভেসে উঠছে মেহরিমা সেই শান্ত চেহারা। সেদিন যখন মেহরিমা সাইমকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিচ্ছিলো তখন মেহরিমা ছিলো শান্তু। আর আজ যে মেহরিমাকে দেখলো সে, আচ্ছা এই মেহরিমা সেই মেহরিমা-ই তো। কথায় কথায় রেগে যায় কেন মেয়েটা। আচ্ছা কেমন হয় যদি মেহরিমা সবসময় সেদিনের মত শান্ত থাকে। শুয়া থেকে উঠে বসে ফারহান। আমি একটু বেশীই ভাবছি মেহরিমাকে নিয়ে। এত হাইপার কেন হচ্ছি আমি।
পরেরদিন মেহরিমা সেই আগের লুকেই কলেজে আসে। পরনে ওয়েস্টার্ন ড্রেস, ব্রাউন কালারের চুলে দুটো ঝুটি আর ঠোটে গোলাপি লিপস্টিক। ফারহান মেহরিমাকে দেখে দ্রুত ওর কাছে চলে আসে। রাগী দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ ওকে অবলোকন করে নিয়ে শক্ত গলায় বলে,
– এই তোমাকে বলেছিলাম এই ড্রেসে তুমি কলেজে আসবে না।
মেহরিমা ফ্যালফ্যাল দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে ফারহানের দিকে। মেহরিমাকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে ফারহান ওর সামনে তুরি বাজিয়ে বলে,
– এভাবে হা করে কি দেখছো। ফারহান একটু ভাব নিয়ে বলে, মানছি আমি হ্যান্ডসাম, তাই বলে এভাবে তাকিয়ে থাকবে নাকি?
ফারহানের কথা শুনে মেহরিমা একগাল হেসে বলে,
– আপনি হ্যান্ডসাম! এই ভুল ধারনা কবে থেকে পুশছেন আপনি?
ফারহান মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে মেহরিমার হাসির দিকে। তারপর আবার নিজের গলার স্বর কঠিন করে বলে,
– কাল তো তোমাকে বলেছিলাম এই ওয়েস্টার্ন ড্রেস পরে কলেজে আসবে না। আমার কথা শুনলে না কেন?
– আমি কেন আপনার কথা শুনবো। তাছাড়া বাসায় আমার ওয়েস্টার্ন ড্রেস ছাড়া অন্য কোন ড্রেস নেই।
মেহরিমার কথা বলা শেষ হতেই ফারহান ওর হাত ধরে বলে,চল আমার সাথে। মেহরিমা নিজের হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করে বলে, হাত ছাড়ুন আমার। আমাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন? ফারহান মেহরিমার কোন কথার জবাব না দিয়ে ওকে টেনে গাড়িতে নিয়ে বসিয়ে গাড়ির দরজা লক করে দেয়। মেহরিমা কিছু বলার জন্যে মুখ খুলতেই ফারহান ওর মুখে আঙ্গুল দিয়ে ওকে চুপ করিয়ে দিয়ে বলে, একদম মুখ খুলবে না বলে দিলাম। তারপর মেহরিমাকে কিছু না বলে গাড়িতে বসে চুপচাপ ড্রাইভ করতে থাকে। মেহরিমা আড় চোখে ওর দিকে ওর দিকে তাকাচ্ছে আর রাগে ফুঁসছে।
মিনিট দশেক পর ফারহানের গাড়ি এসে থামে একটা শপিংমলের সামনে। ফারহান গাড়ি থেকে নেমে মেহরিমাকে নিয়ে চলে যায় শপিং মলের ভিতরে। তারপর ওকে নিজের পছন্দমত কয়েকটা ড্রেস কিনে দেয়। আর একটা রেড কালারের চুড়িদার মেহরিমার হাতে ধড়িয়ে দিয়ে বলে,
– যাও এটা পরে এসো।
মেহরিমা রাগে কটমট করে ওর দিকে তাকাতেই ফারহান ওকে ধমক দিয়ে বলে,
– এখানো এখানে দাঁড়িয়ে আছো তুমি। যাও এগুলো পরে এসে।
মেহরিমা রাগে গটগট করতে করতে চলে যায়। কিছুক্ষণ পরে মেহরিমা লাল চুড়িদার পরে বাহিরে আসে। ফারহান মুগ্ধ হয়ে সে দিকে তাকিয়ে থাকে কিছুক্ষণ। তারপর মেহরিমার পিছনে গিয়ে দাঁড়ায়। আর বলে,
– সেদিন তুমি সাইমকে মারছিলে কেন?
– কারন, ও আমাকে বাজে কথা বলছিলো।
– সাইমকি কিছু ভুল বলেছে। তুমি ছোট ছোট ড্রেস পরে ছেলেদের ঘুরবে আর ছেলেরা তোমায় কিছু বললেই দোষ হয়ে যায়। একটা নারীর বড় অহংকার হলো সম্মান। নিজের সম্মানকে ধুলিস্সাৎ করো না।
– মা-মানে কি বলতে চাইছেন আপনি?
– ওই ছোটখাটো ড্রেস পরে আর বাহিরে এসো না। নিজের অঙ্গ ঢেকে রাখো। মানুষের ললাসু দৃষ্টি থেকে নিজেকে দূরে রাখো।চ
মেহরিমা কিছু বলে না। শুধু অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে।
চলবে,,,,,
#মাহফুজা_আফরিন_শিখা।