#হৃদয়ে শুধু আপনি❤️
#লেখনীতে:অনুসা রাত(ছদ্মনাম)
#পর্ব:০৮
আরশিদের সামনে এসে মুগ্ধ টেবিলটায় হাত রাখলো।বেশ শক্ত হাত পড়ায় আরশি কেঁপে উঠলো।মুগ্ধের চোখে-মুখে কঠোরতা ফুটে উঠেছে।আরশি কেঁপে উঠলো।জিসান নিজের চোখে সানগ্লাস টা খুলে উঠে দাঁড়ায়।ভ্রু কুঁচকে বলে,
-“জ্বী?”
আরশি তখনো নিচের দিকে তাকিয়ে।মুগ্ধ আরশির দিকে তাকিয়ে আছে আড়চোখে।আরশি কিছু বলছে না।জিসান আবার বললো,
-“হ্যালো?আপনি কে?”
মুগ্ধ ঘাড় ঘুরিয়ে জিসানের দিকে তাকালো। হালকা হেসে বললো,
-“আরশিকেই জিজ্ঞেস করুন।”
জিসান আরশির দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে বললো,
-“তুমি ওকে চিনো নাকি আরশি?”
আরশি জোরপূর্বক হাসলো।মুগ্ধ দাঁতে দাঁত চেপে বললো,
-“চেনেন না?”
আরশি মুগ্ধের চাহনী দেখে ঢোক গিলে বললো,
-“চিনি তো।আমার স্টুডেন্ট।”
মুগ্ধ রাগে চোখ গরম করে তাকায়।আরশি আর তাকালোই না।জিসান বসতে বসতে বললো,
-“ওহ আচ্ছা আচ্ছা।তো বসুন।এখানে কেন?”
মুগ্ধ সুযোগ পেয়ে গেলো।আরশির পাশে গিয়ে বসে পড়লো।তারপর বলতে লাগলো,
-“এমনিই এসেছিলাম। কিন্তু আরশিকে দেখে এগিয়ে এলাম।”
বলেই সে আরশির দিকে তাকায়। আরশি জিসানের দিকে তাকিয়ে হাসার চেষ্টা করলো।জিসান অবাক হয়ে বললো,
-“আপনি আরশিকে নাম ধরে ডাকছেন কেন?আপনার না টিচার?”
মুগ্ধ হাসলো।গালে ছোট্ট একটা ফুটো দেখা গেল যেটাকে হয়ত টোল বলা হয়।বুড়ো আঙুলের সাহায্যে কপালের উপরিভাগ চুলকে বললো,
-“হ্যা ভিষণ আপন টিচার তো।তাই নাম ধরে ডাকি।তাই না আরশি?”
আরশি শুধু হেসে সায় দিলো।এদিকে জিসানের বিষয়টা কেমন যেন লাগলো।আরশির পাশে এভাবে বসে পড়া,এমনভাবে কথা বলাটা জিসানকে ভাবাচ্ছে।তবুও বিষয়টাকে মনের মধ্যে রেখেই বললো,
-“বাহ বাহ।আপন টিচার?”
-“জ্বী।”
জিসান পড়েছে ফাঁদে!সে মুগ্ধ কে উঠে যাওয়ার কথাও বলতে পারছে না।মুগ্ধ আরশির কপালে পড়ে থাকা চুলগুলো সরিয়ে দিলো।আরশি ঘেমে উঠছে বারবার।মনে মনে ভাবছে,
-“এই ছেলের কি এখানেই এসব কেয়ারিং ফেয়ারিং করতে হবে?”
মুগ্ধ নিজের গালে হাত দিয়ে টেবিল ঘেষে বললো,
-“কিছু খাননি নিশ্চয়ই! স্যান্ডউইচ খাবেন?”
বলেই সে উত্তরের অপেক্ষা না করে স্যান্ডউইচ অর্ডার করে দিলো।জিসানের একটু লজ্জা লাগলো।কারণ সে এতক্ষণে আরশিকে খাওয়ার কথাটাও জিজ্ঞেস করেনি।তবে মুগ্ধের ভাব দেখে মনে হচ্ছে মুগ্ধ আর আরশি এখানে ডেটে এসেছে আর সে মাঝখান থেকে উড়ে এসে জুরে বসেছে।অথচ কাহিনী উল্টো!মুগ্ধ জিসানকে খেয়াল করে বললো,
-“আপনার জন্যেও অর্ডার করবো?”
জিসান ফোঁস করে শ্বাস ছেড়ে বললো,
-” নাহ আমি ব্রেকফাস্ট করেছি।”
-“ওকেহ!”
বলেই সে আবারো আরশির দিকে তাকিয়ে রইলো।জিসান এবার মুগ্ধ কে উদ্দেশ্য করে বললো,
-“আপনি জিজ্ঞেস করলেন না যে আমি কে?”
মুগ্ধ হালকা হেসে বললো,
-“না জানলেও চলবে।”
-“জানাটা উচিত।”
মুগ্ধ এবার ভ্রু কুঁচকে বললো,
-“ওকে দ্যান,কে আপনি?”
জিসান এবার সুযোগ পেলো।আরশির দিকে তাকিয়ে হাতটা ধরে বললো,
-“আমি আরশির ফিয়ন্সে।”
আরশির হাত ধরায় মুগ্ধ রেগেমেগে চোখ গরম করে আরশির দিকে তাকায়। আরশি মাথা নিচু করে আছে। মুগ্ধের চোখদুটো তার নজরে আসেনি। সে আস্তে করে হাতটা ছাড়িয়ে নিলো।জিসান মুচকি হেসে বললো,
-“কি হলো আরশি?পরিচয় করিয়ে দিন ওর সাথে আমায়।”
মুগ্ধ রেগে মুখটা ঘুরিয়ে নিলো।আরশির প্রতি ভিষণ অভিমান জমছে তার। সে কেন ছেলেটাকে কিছু বলছে না?আরশি এবার মুখ খুললো,
-“এখনো হইনি।”
জিসান কিছু বলার আগেই খাবার চলে এলো।আরশি সেখান থেকে ব্যাগ নিয়ে বের হয়ে গেলো।মুগ্ধ সেদিকে তাকিয়ে স্যান্ডউইচ টা প্যাকেট করে দিতে বললো।জিসান পরিস্থিতি সামাল দিতে বললো,
-“হয়ত লজ্জা পেয়েছে।”
মুগ্ধ তাচ্ছিল্য হেসে বললো,
-“লজ্জা পেয়ে মুখ লুকায় শুনেছি। দৌড়ে বাসায় যায় তা তো শুনিনি।”
জিসান হাসার চেষ্টা করলো।নিজের আইফোনটা বের করে মুগ্ধের সামনে ধরে বললো,
-” দেখো, টাইম হয়ে গেছে ক্লাসের তাই হয়ত চলে গেছে।”
মুগ্ধ ফোনটা হাত দিয়ে নামিয়ে বললো,
-“আমিও একই ভার্সিটিতে পড়ি।এখনো ১ ঘন্টার মত সময় আছে।”
-“ওহ।”
বলেই জিসান এদিক-ওদিক তাকাতে লাগলো।আরশি নামক মেয়েটাকে সে এত পছন্দ করে।কিন্তু আরশি যে কেন তাকে পছন্দ করছে না এটা সে বুঝতে পারছে না। কিছুক্ষণ পর সে সামনে থাকা মুগ্ধের দিকে তাকালো। ছেলেটা বাঁকা হেসে তার দিকেই তাকিয়ে।আরশির রাজি না হওয়ার পিছনে এই ছেলেটাই নয়ত?ভেবেই জিসান হেসে বললো,
-” গার্লফ্রেন্ড আছে নাকি?”
মুগ্ধ নিচের দিকে তাকিয়ে হাসলো।তারপর বললো,
-“আছে তো।অনেক সুন্দর, মিষ্টি।পরীর মত।”
-“এই বয়সেই গার্লফ্রেন্ড!”(তাচ্ছিল্য হেসে)
-“ওহ হ্যা!আমি তো ভুলেই গেছিলাম।আরে আমি তো আজ সবে মায়ের পেট থেকে বের হয়ে এখানে এলাম।”
মুগ্ধের এমন জবাবে জিসান চুপ হয়ে গেলো।মুগ্ধ শয়তানি হেসে বললো,
-“আ’ম জাস্ট কিডিং।টেক ইট ইজি।’
-“ইয়াহ।”
মুগ্ধ স্যান্ডইউচের প্যাকেটটা নিয়ে বললো,
-“আমার মনে হয় আপনার ফিয়ন্সে আপনাকে পছন্দ করে না।”
জিসান মুখ তুলে তাকাতেই মুগ্ধ কাঁধ চাপড়ে বললো,
-“হয় হয়।নতুন প্রেমে পড়লে এমনই হয়।”
বলেই মুগ্ধ সেখান থেকে চলে গেলো।জিসান সেদিকে তাকিয়ে রইলো।মনে মনে ভাবলো,
-“নতুন প্রেমে পড়া বলতে ছেলেটা কি বুঝালো?আরশি কি তবে অন্য কাউকে পছন্দ করে?আমি কি আরশিকে পাবো না?নাহ!আরশিকে আমার চাই ই।”
ভেবেই সে ফোনটা নিয়ে একটা নাম্বারে ডায়াল করে কানে দিয়ে বললো,
-“বাবা আরশি রাজি।তুমি সবকিছু রেডি করো।”
______________
আরশির সামনে অনেকক্ষণ ধরে পায়চারী করছে মুগ্ধ। আর আরশি বারবার উপরের দিকে তাকিয়ে একটা করে বাইট দিচ্ছে স্যান্ডউইচে।আপাতত সে গাছের নিচে বসে আছে।আর মুগ্ধ সামনে পায়চারী করছে।মুগ্ধ রাগে গজগজ করতে করতে এদিক-ওদিক হাঁটছে।হঠাৎ মোবাইলে কল আসায় মুগ্ধের ভ্রু কুঁচকে গেলো।সে তৎক্ষনাৎ কল ধরে গর্জে উঠে বললো,
-“কে রে শা**লা!”
আরশি ভড়কে গেলো।মুগ্ধ অপরপাশের কথা শুনে বললো,
-“শা**লারে পুইত্তা ফেল।”
আরশির চোখ বড় বড় হয়ে গেলো।মনে মনে ভাবলো,
-“এই ছেলে কাকে পুঁতে ফেলার কথা বলছে?জিসানকে নয়ত?”
সে স্যান্ডউইচটা মুখে পুড়ে উঠে দাঁড়িয়ে বললো,
-“এই আপনি কাকে পুঁতে ফেলার কথা বলছেন?”
মুগ্ধ আঁড়চোখে একবার তাকালো।কলে থাকা মানুষটাকে গম্ভীর গলায় বললো,
-“আমি একটু পর আসছি।আপাতত সামলে নে।”
বলেই সে ফোনটা পকেটে পুড়ে নিলো।তারপর আরশিকে উদ্দেশ্য করে বললো,
-“জিসানকে।”
বলতে বলতে আরশি ঠাস করে মুগ্ধের গালে চড় বসিয়ে দিলো।মুগ্ধ গালে হাত দিয়ে ভ্রু কুঁচকে তাকায় আরশির দিকে। আরশি বুঝলো যে চড়টা জোরে লেগেছে তবুও সে রেগে বললো,
-“কিছু হলেই মারপিট করতে হয় নাকি মুগ্ধ? কে বলেছে এই কথাটা?”
মুগ্ধ মাথা নিচু করে রাগ সংবরণ করতে ব্যস্ত।আরশি আবার বললো,
-“আজ চড়টা দিতাম না।দিতে বাধ্য হলাম আপনার বাচ্চামো দেখে।জিসান আমায় প্রপোজাল দিলেই কি আমি তা একসেপ্ট করে নিয়েছি?আর প্রপোজাল দিলে কি মারতে হয়?তাছাড়া ওকে আমি সরাসরি না করতে পারতাম।পারছি না তার নিশ্চয়ই কোনো কারণ রয়েছে। একবারো জিজ্ঞেস করা যেতো না?”
বলেই কিছুক্ষণ চুপ রইলো আরশি।তারপর আবার বললো,
-“আমি যদি সরাসরি না করে দিই তাহলে আমার বাবার চাকরী নিয়ে টানাটানি হবে। আমার বোনটার পড়াশোনা তো সবে শুরু হলো।কি হবে ওর?আমাকে ধীরে ধীরে সময়-সুযোগ বুঝে জিসানকে ইনিয়েবিনিয়ে না বলতে হবে।”
এতটুকু বলতেই মুগ্ধ আচমকা আরশিকে টেনে নিজের সাথে চেপে ধরলো।আরশি মোচড়ামুচড়ি করতে লাগলো।আর নাক-মুখ কুঁচকে বললো,
-“ছাড়ুন মুগ্ধ! কেউ দেখে ফেলবে।”
মুগ্ধ আশেপাশে তাকিয়ে আরশিকে ছেড়ে দিলো।তারপর সামনে থাকা একটা পাথরে লাত্থি দিয়ে বললো,
-“আমি ওকে এখান থেকেই সরিয়ে দিবো।যদি আপনি আমাকে চড় দিতে দিতে মেরেই ফেলেন তবুও আমি ওকে সরাবোই।”
-“মুগ্ধ!!”
মুগ্ধ আবারো আরশির বাহু চেপে ধরলো।চোখে চোখ রেখে অসহায় গলায় বললো,
-“ও শুধু আপনার হাত ধরে আরশি।কেন ধরবে ও?ওর হাতটা আমি ভাঙবোই।”
আরশি দীর্ঘশ্বাস ফেললো।কিছু বলার আগেই মুগ্ধ আবার বললো,
-“ও হাত ধরলে তো কিছু বলেন না আপনি। আর আমি একটু মিথ্যা মিথ্যা মজা করে মারার কথা বলায় আপনি আমাকে চড় দিলেন।”
বলেই সে আরশিকে ছেড়ে একটু দূরে এসে দাঁড়ায়।আরশি আড়চোখে তাকিয়ে বলে,
-“রাগ উঠে গেছিলো।”
-“হ্যা রাগটা শুধু আপনার আমার উপরই আসে তাই না?”
-“আচ্ছা সরি।আপনি এমন কথা বললেনই বা কেন যাতে করে আমার রাগ হয়?একটু অপেক্ষা করুন। আমি নিজেই ওকে না করে দিবো।”
মুগ্ধ আরশির কাছে এগিয়ে এসে ফিসফিস করে বললো,
-“অন্যের বউ অবস্থায় দেখার জন্য অপেক্ষা করবো আমি?”
আরশি অসহায় চোখে তাকায় মুগ্ধের মুখপানে। মুগ্ধ হেসে বলে,
-“শুধু বয়সেই আমার থেকে বড়।শাসনটাই করতে পারবেন।”
আরশি মুখ ফুলিয়ে বললো,
-” আপনি তো পারলে শুধু মারতেই পারবেন।কাজের কাজটা কি পারবেন?”
-“আপনাকে পেতে সবই করব আমি।কিন্তু আপনি কি করবেন তা জানি না।”
আরশি জিজ্ঞাসাসূচক দৃষ্টিতে তাকায় মুগ্ধের দিকে।মুগ্ধ মলিন হেসে বললো,
-“আমাকে আপনি ভালোইবাসেন না আরশি।ভালোবাসলে আপনি তখন আমাকে পরিচয় করিয়ে দিতেন ওই জিসানের সামনে।আর জিসান আপনার হাতও ধরেছিল।”
মুগ্ধের কথায় অভিমানের ছোঁয়া পেলো আরশি। মুগ্ধের দিকে এগুনোর আগেই মুগ্ধ পিছিয়ে বললো,
-“আপনি থাকুন আপনার জিসানকে নিয়ে।আমি ওকে কিছুই করবো না।আমি শুধু আমার প্রিয়জনকে নিজের করে পাওয়ার চেষ্টা করবো।”
-“মুগ্ধ….”
-“না খেয়েই এসেছিলাম। আর খাবোও না। আপনি আবার রেস্টুরেন্টে যান ওকে ডেকে।টাটা।”
বলেই মুগ্ধ চলে গেলো।আরশি ওর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে নিজের মাথায় হাত দিয়ে বললো,
-“কি যে করবো আমি!রাগে ওকে চড় মারাটা আসলেই উচিত হয়নি।এখন এনার অভিমান ভাঙাও!ধূরর!”
চলবে….
(আমার ভুলক্রুটি গুলো ধরিয়ে দিবেন।অযথা সেগুলো নিয়ে মজা না করে ক্ষমার চোখে দেখবেন আর ভালো কিছু লিখতে অনুপ্রাণিত করবেন।ভুলক্রুটির জন্য ক্ষমাপ্রার্থী😌❤️🩹)
(আগেই বলে রাখি,আমি গল্প কিন্তু বেশু বড় করব না। বেশি বড় করলে গল্প প্যাচ মারতে মারতে সৌন্দর্যে নষ্ট হয়😊আর ভুলক্রুটি অবশ্যই ধরিয়ে দিবেন)