#হৃদয়ে শুধু আপনি❤️
#লেখনীতে:অনুসা রাত(ছদ্মনাম)
#পর্ব:১০(বোনাস)
রাত ১ টা বেজে গেছে।অনেকবার কল করেও মুগ্ধ কে পাচ্ছে না আরশি।সে বেয় বিরক্ত এখন!মুগ্ধের কি অভিমান করার এটা সময়?সে কি বুঝতে পারছে না যে আরশি যখন এতবার কল করছে তাহলে নিশ্চয়ই কোনো কারণ রয়েছে।কিন্তু মুগ্ধ কিছুতেই কল ধরছে না।এবার আরশি রেগে বিরবির করলো,
-“এটাই লাস্ট।এখন না ধরলে আমাকে হারাবেন মুগ্ধ।”
বলেই আরশি কল লাগালো।কিছুক্ষণ বাজার পরই ধরলো মুগ্ধ।জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে সে।কল ধরায় আরশির যেন দেহে প্রাণ এলো।দুহাতে ফোনটা ধরে বললো,
-“মুগ্ধ!কতক্ষণ ধরে কল করছি আমি?আপনার কি কোনো আক্কেল নেই?”
মুগ্ধ তখনো হাঁপাচ্ছে। আরশি বুঝতে না পেরে বললো,
-“কি হলো?হাঁপাচ্ছেন কেন?”
-“আর বলবেন না আরশি!আমার ফোনটা হারায় গেছিলো।খুঁজতে খুঁজতে এখন স্টোর রুমে পেলাম।”
-“ফোন স্টোর রুমে যায় কেমনে?”(ভ্রু কুঁচকে)
-“আমি এখানে পুরনো জিনিস রাখতে এসে ভুলে ফেলে গেছিলাম। আসলে রুম গুছাচ্ছিলাম তো।রুমটা সাজাচ্ছিলাম নতুন করে।নতুন একজনকে বরণ করতে হবে।তাই।”(মুচকি হেসে)
আরশি চুপ করে রইলো।মুগ্ধ তার মানে তার জন্য ঘর সাজাচ্ছিল।মুগ্ধ আবার বললো,
-“এরপর মার্কেটে গেছিলাম শাড়ি কিনতে।তাই ফোনটার কথা মনেই ছিল না। আসলে আমি ভীষণ এক্সাইটেড তো।নিজের ভালোবাসাকে পাব।”
আরশি নিজের কান্না আটকে বললো,
-“পাবেন না তো মুগ্ধ।”
মুগ্ধের গলার স্বর পাল্টে গেলো।অবাক হয়ে বললো,
-“মানেহ?”
-“হ্যা মুগ্ধ,বাবা আমার বিয়ে ঠিক করেছে।”
মুগ্ধ হেসে উঠে বললো,
-“ওহ এজন্য চিন্তিত আপনি?আমার সাথেই তো বিয়ে ঠিক করলো।আমাকে তো বাবা আর মা বললো শ্বশুর আব্বা নাকি রাজি।তাহলে চিন্তিত কেন আপনি?”
-” না মুগ্ধ, আপনার সাথে না।জিসানের সাথে।”
-“মানেহ?”(শক্ত গলায়)
-“হ্যা মুগ্ধ।বাবা আমার বিয়ে ঠিক করেছে জিসানের সাথে।জিসান ছেলেটা ভীষণ খারাপ মুগ্ধ।”
-“কি করেছে ও?”(রাগী গলায়)
আরশি এক এক করে মুগ্ধ কে সব খুলে বললো।জিসান ওকে কি কি বলেছে সব বললো ও মুগ্ধ কে।মুগ্ধ চুপচাপ সবকিছু শুনলো।তারপর বললো,
-“প্রস্তুতি নিন আরশি।”
-“কিসের?”(কাঁদতে কাঁদতে)
-“শ্বশুরবাড়ি যাওয়ার।”
-“মজা করছেন আপনি?চড় মেরেছিলাম বলে?”
-“একদম না। আর চড় মারার কথাটা ভুলিনি অবশ্য। এর প্রতিশোধও তুলবো কিন্তু বাসর রাতে।”(বাঁকা হেসে)
-“মজা করিয়েন না মুগ্ধ। বাবা সিরিয়াস।”
-“আ’ম অলসো সিরিয়াস।”
আরশি চোখ মুছে ফেললো।মুগ্ধ কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো,
-“আপনি চিন্তা করবেন না আরশি। মুগ্ধ আপনাকে নিতে আসবে।”
-“আর কবে মুগ্ধ?কাল বাদে পরশু বিয়ে।”
-“হ্যা,তাও আমার সাথে।’
-“না মুগ্ধ। আমি তো বললামই৷ এমন কিছু করা যাবে না যাতে আমাদের সম্মান হানি হয় ”
-“করবো না।”
আরশি এবার একটু শান্ত হলো।মুগ্ধ নরম গলায় বললো,
-“আপনার কান্না সহ্য হয় না আরশি।প্লিজ কাঁদবেন না।নয়ত আমি কিন্তু জিসানকে মারবো গিয়ে।”
-“প্রয়োজন নেই ওকে মেরে হাত নষ্ট করার।”(নাক টেনে)
-“আচ্ছা।খেয়েছেন?”
-“না।”
-“খেয়ে নিন আরশি।”
-“আমার কিচ্ছু ভালো লাগছে না মুগ্ধ। আমি খাবার খাওয়ার অবস্থায় নেই।”
-“তাহলে কি আমি আসব?”(মুচকি হেসে)
-“যাচ্ছি খেতে!”
-“ওকে টাটা।”
বলেই মুগ্ধ কল কেটে দিলো।তার এখন অনেক প্ল্যান করতে হবে।নিজের ভালোবাসাকে পাওয়ার জন্য তাকে নিজের সর্বস্ব দিয়ে চেষ্টা করতে হবে।মুগ্ধ ফোনটা চার্জে লাগিয়ে ইজি চেয়ারটায় বসলো।দুলতে দুলতে থুতনিতে আঙুল রেখে কি যেন ভাবলো।কিছু ক্ষণ পর বাঁকা হেসে বললো,
-“হাহ,এতে করে আরশির ওয়াদাও ভাঙবো না আর জিসানকে পিটিয়ে মনের ইচ্ছে টা পূরণ করতে পারব।”
ভেবেই সে সেখান থেকে উঠে গেলো।দরজার দিকে যেতেই দেখা পেলো শর্মিলার।মুগ্ধ ভ্রু কুঁচকে বললো,
-“মা তুমি আমাকে মিথ্যা বলেছিলে কেন?”
শর্মিলা বুঝলেন যে তিনি ধরা পড়ে গেছেন।তবুও হাসার চেষ্টা করে বললেন,
-“কি মিথ্যা বলেছি?”
-“আরশির বাবা রাজি হয়েছেন এটা।”
শর্মিলা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন,
-“আর পাগলামী করিস না মুগ্ধ। কোনো বাবা-মা ই রাজি হবে না।বাদ দে এসব। তোকে আমি ভালো মেয়ে দেখে বিয়ে দি…”
আর কিছু বলার আগেই মুগ্ধ সামনে থাকা ফুলদানিটা নিচে ছুঁড়ে মেরে বললো,
-“আমার আরশি চাই। ”
শর্মিলা আঁতকে উঠে বললেন,
-“জিনিসটা ভেঙে কি মজা পেলি?এত জেদ যে কেন তোর।”
-“আরশিকে এনে দাও,জেদ কমে যাবে।”
শর্মিলা অসহায় চোখে তাকান ছেলের দিকে।কিছু বলতে যাবেন তার আগেই মুগ্ধ বললো,
-“জানি পারবে না।তাই যা করার আমাকেই করতে হবে।আসছি।চিন্তা করিও না।বউ নিয়েই ফিরবো।পরশু দিন সেজেগুজে আরশিদের বাসায় চলে যেও।”
বলেই মুগ্ধ বের হয়ে গেলো। শর্মিলা দীর্ঘশ্বাস ফেললো।ছেলের যাওয়ার পানে তাকিয়ে বিরবির করলেন,
-“যা বলে তাই করে এই ছেলে।যাই ঘর সাজানো শুরু করি।নতুন বউ আসবে।
বলেই তিনি মায়া মায়া হাঁক ছেড়ে বের হয়ে গেলেন।তার এখন বহুত কাজ।ছেলের বউকে বরণ করতে হবে!
।
।
।
সকাল সকাল আরশির ঘুম ভাঙলো মানুষের চেচামেচি তে।আরশি হাই তুলতে তুলতে উঠে বসলো।ভ্রু কুঁচকে নিজের রুমের দরজা খুলতেই এক ঝাঁক মেহমানের দেখা মিললো।আরশির কাজিনরা হুরমুর করে রুমে ঢুকে পড়লো।শুধু দিবাকে দেখা গেলো না।আরশির কাজিনরা আরশিকে ঘিরে বিছানায় বসিয়ে বললো,
-“এখন ফ্রেশ হয়ে নে রে আরশি।দুপুরে গায়ে হলুদ, রাতে মেহেন্দি আর আগামীকাল সন্ধ্যায় বিয়ে।নে তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে আয়।”
আরশি শুধু বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে আছে।সবাই মিলে ঠেলে আরশিকে ওয়াশরুমে পাঠিয়ে দিলো।আরশি ফ্রেশ হয়ে বের হতেই একেকজন হামলে পড়লো।আরশিকে টিজ করে বিভিন্ন কথা বলছে।কিন্তু আরশির মধ্যে কোনো ভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। এসবে সে বিরক্তই বটে।বেশ কিছুক্ষণ পর আরশিকে ছেড়ে সবাই বের হয়ে গেলো।বলে গেলো আরশিকে রেডি হয়ে থাকতে।একটু পর হলুদ হবে।
সবাই চলে যেতেই আরশি ধূপ করে বসে পড়লো বিছানায়।মাথায় হাত দিয়ে ভাবছে,
-“মুগ্ধ যে কোথায় আছে!”
সারা বিছানা খুঁজেও নিজের ফোনটা পেলো না আরশি।বুঝলো!তার বাবা সেটা সরিয়ে ফেলেছেন।আরশি দীর্ঘশ্বাস ফেলে অসহায় ভাবে বসে রইলো। দরজা খুলে প্রবেশ করলো দিবা। গুটিগুটি পায়ে এগিয়ে এলো আরশির দিকে।আরশির পাশে বসে বললো,
-“আমার ভীষণ মন খারাপ আপু।”
আরশি নিজের নোখ খেতে খেতে বললো,
-“কেন রে?তোর আবার কি হলো?”
-“মুগ্ধ ভাইয়া কি তোর বর হবে না আপু?”
আরশি চোখ বড় বড় করে তাকালো দিবার দিকে।দিবা মুখ ফুলিয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে।আরশি তুতলিয়ে বললো,
-“ত..তুই কি করে জানলি?”
দিবা বোনের দিকে চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে মুখ ভেংচি কেটে বললো,
-“মুগ্ধ ভাইয়ার সাথে আমার কত কথা হলো!স্কুল থেকে আসার সময় আমাকে রোজ মুগ্ধ ভাইয়া ফুচকা,চকোলেট খাওয়ায়। এর বদলে আমি তেমার খবর আরকি ওনাকে দিতাম। আর উনিই তো বললেন উনি নাকি আমার জামাইবাবু হবেন। তাই তো আমি ভীষণ খুশি হয়েছিলাম। ইশ!রোজ রোজ ফুচকা।”
একটানে নাকিকান্না কেঁদে বললো দিবা। বলে শ্বাস ছেড়ে দিলো।আরশি হা হয়ে বললো,
-“এতকিছু হয়ে গেলো?আর তুই ফুচকার লোভে বোনের সব খবর দিতি?”
-“হ্যা তো।সেসব বাদ।এখন বল না,মুগ্ধ ভাইয়া কি আমার জামাইবাবু হবে না?”
আরশির মনটা মুহূর্তেই খারাপ হয়ে গেলো।দিবার মাথায় হাত রেখে বললো,
-“জানি না রে।”
-“আমার তো জামাইবাবু হিসাবে মুগ্ধ ভাইয়াকেই পছন্দ। আমি চাই সেই যেন আমার জামাইবাবু হয়।”
আরশি শুধু শুনে গেলো।কিছু বললো না। দিবা আবার বললো,
-“জানিস আপু, বাবা না তোর ফোন নিয়ে লুকিয়ে রেখেছে।”
আরশির চোখমুখ উজ্জ্বল হয়ে গেলো।দিবার দিকে তাকিয়ে বললো,
-“তুই জানিস কই রেখেছে?এনে দিতে পারবি?”
-“খুব পারবো।”(ভুবন ভোলানো হাসি দিয়ে)
-“যা না বোন।নিয়ে আয়।”
দিবা ফোন আনতে চলে গেলো। আরশি দরজা আটকে ক্রমাগত পায়চারী করতে লাগলো।আর ভাবতে লাগলো গায়ের হলুদ হয়ে যাবে একটু পরেই।মুগ্ধ কই গেলো!আদৌ কি মুগ্ধ কিছু প্ল্যান করছে নাকি জেদের বশে বাইক নিয়ে ঘুরছে?হঠাৎ জানালায় ঠক ঠক শব্দ হলো।আরশি ভ্রু কুঁচকে সেদিকে তাকালো।মুগ্ধ জানালার বাইরে থেকে ইশারা করছে জানালা খুলতে।আরশি দৌড়ে গিয়ে জানালা খুলে দিলো।মুগ্ধ ঘরে ঢুকেই জানালাটা বন্ধ করে হাঁপাতে লাগলো।আরশি করুণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মুগ্ধের মুখের দিকে।মুগ্ধ আরশির চেহারায় তাকিয়ে মুচকি হেসে আরশিকে জড়িয়ে ধরলো।আরশিও মুগ্ধর পিঠে হাত রাখলো।চোখ থেকে দু’ফোটা পানি গড়িয়ে পড়লো।
-“মিস করছিলেন?”(মুচকি হেসে)
আরশি নাক টেনে বললো,
-“আপনি না বউ নিতে আসবেন?তাহলে এখন এলেন যে?আর আপনি কোনো প্ল্যান করেছেন?”
-“প্ল্যান ট্যান বাদ। আপাতত আমি এসেছি একটা কাজে।”
আরশি মুগ্ধ কে ছেড়ে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বললো,
-“কি কাজে?”
মুগ্ধ পকেট থেকে একটা পলিথিনের মত কিছু বের করলো।সেখান থেকে হাত ঢুকিয়ে বাটা হলুদ বের করে আরশির গালে লাগিয়ে দিয়ে বললো,
-“আমার বউকে হলুদে রাঙাতে এসেছি। ”
আরশি কান্নার মাঝেই হেসে দিলো।মুগ্ধ আরশির কপালে চুমু দিয়ে বললো,
-“চিন্তা করবেন না আরশি। আমি আসবই আপনাকে নিতে।”
আরশি নিজের গাল থেকে হলুদ নিয়ে মুগ্ধের নাকে
লাগিয়ে বললো,
-“অপেক্ষায় থাকবো আমি।”
এমন সময় দরজায় কেউ নক করলো।আরশি ভয় পেয়ে গেলো। কাপা গলায় বললো,
-“ক…কে?”
জুনায়েদ চেচিয়ে বললেন,
-“আমি,আরশি।দরজা খোল।”
-“আসছি বাবা।”
আরশি মুগ্ধ কে যাওয়ার জন্য তাড়া দিলো।মুগ্ধ আরশির গালে হাত রেখে চোখের ইশারায় আশ্বাস দিলো।আরশি মুগ্ধের হাতের উপর হাত রেখে চোখ নামায়।
মুগ্ধ বাঁকা হাসলো।দরজার দিকে তাকিয়ে বললো,
-“আমি আমার বউ নিতে আসবো শ্বশুর মশাই।”
চলবে….
(আমার ভুলক্রুটি গুলো ধরিয়ে দিবেন।অযথা সেগুলো নিয়ে মজা না করে ক্ষমার চোখে দেখবেন আর ভালো কিছু লিখতে অনুপ্রাণিত করবেন।ভুলক্রুটির জন্য ক্ষমাপ্রার্থী😌❤️🩹)
(বিয়ের দাওয়াত রইলো🫥👀)