#হৃদয়ে শুধু আপনি❤️
#লেখনীতে:অনুসা রাত(ছদ্মনাম)
#পর্ব:১১(বিয়ে স্পেশাল🤣)
আরশিকে ঘিরে গোল হয়ে বসে আছে সবাই।আরশির দুহাত দুদিক থেকে নিয়ে মেহেদী দিচ্ছে। আরশির কাজিনরা আরশির সাথে মজা করছে।তারিন আর ফারিহা এসেই আরশির দুপাশে বসলো।আরশি অসহায় চোখে ফারিহার দিকে তাকালো।ফারিহা চোখের ইশারায় আশ্বাস দিয়ে নিম্ন স্বরে বললো,
-“তুই মুগ্ধ কে ভালোবাসিস এটা আমরা জানি।”
আরশি করুণ চোখে তাকিয়ে বললো,
-“বাবা আমার সাথে কেন এমন করছে ফারিহা!”
তারিন আরশির কাঁধে হাত রেখে বললো,
-“একটুও ভয় পাস না।মুগ্ধের সাথে কথা হয়েছে আমাদের।ও বলেছে সব ঠিক করে দিবে।একটু ধৈর্য্য ধর!”
আরশি আবারো করুণ দৃষ্টিতে তাকায়। তারপর নিম্ন স্বরে বলে,
-” বিয়ে এটা!কবুল বললেই আমি জিসানের। একটু দেরী হলেই সব শেষ!”
ফারিহা কিছু বলতে যাবে তার আগেই মেহেদী আর্টিস্ট বলে উঠলো,
-“আপু হাতে কোন অক্ষর দিবো?”
আরশি চট করে বললো,
-“ইংরেজি ‘M’ অক্ষর।”
আরশির কাজিনের মধ্যে একজন বলে উঠলো,
-“তোর বরের নাম তো ‘J’ দিয়ে হয়। তাহলে হাতে অন্যটা লিখবে কেন।”
আরশি চুপ হয়ে গেলো।কি বলবে এবার?মেহেদী আর্টিস্ট ও তাড়া দিচ্ছে।পাশ থেকে তারিন বললো,
-“আপনারা আদৌ জানেন কিছু? জিসান জিজুর পুরো নাম মেহেরাজ জিসান।”
আরশি অবাক হয়ে তারিনের দিকে তাকালো।তারিন চোখ টিপে আশ্বাস দিলো।আরশিও হেসে বললো,
-“হ..হ্যা। আমি ওর প্রথম নামের অক্ষর টাই লিখতে চাই।”
-“জ্বী আচ্ছা।”
মেহেদী আর্টিস্ট আরশির হাতে ‘M’ ই লিখে দিলো।মেহেদী দেয়া শেষ হতেই আরশি হাতটা উঁচু করলো।মুচকি হেসে শুকিয়ে যাওয়া অক্ষর টার উপর ঠোঁট বুলালো।চোখ এড়ায় না ফারিহার।আরশির কাঁধে ঠেস দিয়ে বলে উঠলো,
-“বাহ বাহ।সেই রোমান্টিক!”
আরশি ফারিহার দিকে হাত নিয় বললো,
-“লাগিয়ে দিবো।”
ফারিহা হেসে ফেললো।বেশকিছুক্ষণ পর ফারিহা আর তারিন বাদে সবাই রুম থেকে চলে গেলো।সবাই অন্য রুমে বসে মেহেদী দিবে।তাই তারা বের হয়ে গেছে। আরশি তারিনকে উদ্দেশ্য করে বললো,
-“তোরা মেহেদী দিবি না?যা দে।”
তারিন দু হাত উঁচু করে বললো,
-“তুই মনে হয় তাহলে দেখিসনি এটা।”
আরশি এবার খেয়াল করলো!তারিন আর ফারিহার হাত ভর্তি মেহেদী।তবে এতটা গর্জিয়াস না।নন ব্রাইডাল!আরশি বিস্ময় নিয়ে বলে,
-“তোরা কখন দিলি?”
ফারিহা দাঁত কেলিয়ে বললো,
-“আমরা পার্লার থেকে দিয়েছি।মুগ্ধ আমাদের বিল পে করেছে।”
আরশি হা হয়ে গেলো। মানে সে কিছুই জানে না অথচ তার বান্ধবীদের কে মুগ্ধ ঠিকই পটিয়ে নিয়েছে।আরশি মনে মনে ভাবলো,
-“এরা নিশ্চিত মুগ্ধের প্ল্যান সম্পর্কে জানে।”
ভেবেই আরশি ফারিহার দিকে এগিয়ে বললো,
-“জানু তুই কি জানিস কিছু মুগ্ধের প্ল্যান সম্পর্কে?পিচ্চিটা কি করতে চায় একটু বলবি?”
ফারিহা আর তারিন একে-অপরের দিকে তাকিয়ে মিটমিটিয়ে হাসলো।আরশি ভ্রু কুঁচকে বললো,
-“কি সমস্যা?”
ফারিহা হেসেই বললো,
-“জানি বাট তোকে বলতে না করেছে।”
আরশি অসহায় গলায় বললো,
-“প্লিজ দোস্ত। বল!দেখ আমি টেনশনে মরে যাচ্ছি।”
তারিন চোখ টিপে বললো,
-“ও তোকে সারপ্রাইজ দিতে চায়।তুই একদম শক খেয়ে যাবি আরশি।দেখে নিস।”
আরশি চিন্তিত গলায় বললো,
-“আর সারপ্রাইজ!আমি টেনশনে শেষ হয়ে যাচ্ছি। এই পিচ্চি টা এত শয়তান!আমাকে ইচ্ছে করে টেনশনে রাখছে।”
ফারিহা আরশির মাথায় হাত দিয়ে বললো,
-“তোকে টেনশন করতে না করেছে।আমাদের বলেছে তোকে দেখে রাখতে।যেন টেনশনের বশে কিছু করে না ফেলিস।”
তারিন জোরে শ্বাস নিয়ে বললো,
-“ইশশ!এমন একটা পিচ্চি যদি আমার প্রেমে পড়তো!”
আরশি ছোট ছোট চোখ করে তাকিয়ে বললো,
-“বুঝতি তাহলে,কেমন লাগে।”
-“কেমন লাগতো?ভালোই লাগত!আমাকে ভালোবাসতো একদম মুগ্ধের মত।”
ফারিহা মুচকি হেসে সম্মতি দিয়ে বললো,
-“আসলেই!মুগ্ধের মত ছেলে দুটো হয় না। ও ঠিকই তোকে সামলে রাখবে আরশি।”
আরশি আর কিছু বললো না।তার চোখের সামনে মুগ্ধের চেহারাটা ভেসে উঠলো।লাজুক হাসলো আরশি।তারিন আর ফারিহাকে দিয়ে হাতের ছবি তুলিয়ে মুগ্ধকে সেন্ড করে দিলো সে।মনে মনে ভাবলো,
-“যখন ওকে বুঝতে পারিনি তখন কেঁদেছি।এখন ওকে বুঝতে পেরেছি। এখনও কাঁদছি?ধূর কত বোকা আমি!”
ভেবেই আরশি নিজের কপালে নিজেই একটা চাটি মারলো।তারপর আবার ভাবলো,
-“মুগ্ধ যখন বলেছে ও ঠিকই আমায় নিয়ে যাবে।ওর ভালোবাসায় বিশ্বাস আছে আমার!”
।
।
পার্লারের মেয়েদের বাসায়ই ডেকে নিলেন জুনায়েদ।মেয়েকে আর বাহিরে পাঠাতে চান না তিনি।সন্ধ্যাও হয়ে গেছে।রাত ৮ টায় বিয়ের অনুষ্ঠান শুরু হবে।আরশি চুপ করে বিছানায় মূর্তির মত বসে আছে।দৃষ্টি তার সামনে থাকা ছোট্ট টেবিলে।যেখানে নানান রকম গহনা সাজানো।আরশিকে সাজাতে ব্যস্ত সবাই।ফারিহা আর তারিন কখন থেকে মুগ্ধ কে ফোনে ট্রাই করছে বাট মুগ্ধ ফোন তুলছে না৷ তারা খুবই চিন্তিত হয়ে পড়েছে।কারণ এমনটা তো হওয়ার কথা ছিল না।আরশিকে সাজিয়ে দেয়া হলো।আরশি এখনো মূর্তির মত বসে আছে।মনে মনে ভাবছে,
-“একটু পরেই বিয়ে। আপনি কোথায় মুগ্ধ?”
আরশিকে নিচে নিয়ে যাচ্ছে সবাই,বিয়ের আসরে।আরশি তখনও চুপচাপ।মনে মনে নিজের সাথেই কথা বলছে,
-“আজ যদি আপনি বিশ্বাস ঘাতকতা করেন মুগ্ধ,তাহলে আমার মন থেকে সারাজীবনের জন্য উঠে যাবেন। আল্লাহ সবাইকেই জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি করেছেন। আমি নিজেও জানি না যে আমার সাথে কার জোড়া!তবে জিসান হয়ত আমায় ভালেবাসে না৷ ও ভালোবাসে আমার সৌন্দর্য কে।আল্লাহ যদি ওর সাথেই আমাকে মিলিয়ে থাকেন তাহলে আমি তা মেনে নেব।”
আরশির ভাবনার মাঝেই জুনায়েদ মেয়ের পাশে বসে মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,
-“একদম মন খারাপ করবি না মা। তুই সুখী হবি দেখিস। সবরকম ইচ্ছে পূরণ হবে তোর।”
আরশি তার বাবার দিকে অনুভূতিহীন চোখে তাকিয়ে বললো,
-“তুমি নিজের চাকরী বাঁচাতে আমায় জিসানের সাথে বিয়ে দিচ্ছো বাবা?”
আরশির মুখে এমন কথা শুনে বুক কেঁপে উঠলো জুনায়েদের।তার মেয়ে এসব ভাবছে?সে তো এটার জন্য মেয়ের বিয়ে দিচ্ছে না জিসানের সাথে!সে চায় যেন তার মেয়ে সুখে থাকে।জুনায়েদ আরশির দিকে বিস্ফোরিত চোখে তাকিয়ে বললো,
-” না মা। আমি আমার চাকরীর জন্য মেয়ের জীবন নষ্ট করব?আমি চাই যেন তুই সুখে থাকিস।তোর যেন কোনো ক্ষতি না হয়। পাঁচটা লোকের কথা না শুনতে হয়।”
-“তাহলে মুগ্ধ কি দোষ করেছিল বাবা?”
-“মুগ্ধ খুব ভালো একটা ছেলে।কিন্তু ওকে বিয়ে করলে তোকে পাঁচটা লোকের কথা হজম করতে হবে,অপদস্ত হতে হবে।তোকে তো বলেছিই,ও নিতান্তই বাচ্চা একটা ছেলে।তোকে রোজগার করে খাওয়াতেও পারবে না।”
আরশি হালকা হেসে বললো,
-“মুগ্ধ থাকতে আমাকে অপমান করবে এমন সাহস হয়ত কারোর নেই।আর বাকি রইলো রোজগারের?
টাকা থাকলেই সুখ হয় না বাবা। ভালোবাসা দিয়ে একটা সুন্দর ঘর বাঁধা যায়।আর মুগ্ধ এতটা গরীব না।তার যথেষ্ট রয়েছে। হয়ত জিসানের থেকে কম।কিন্তু আমার তো চলবে।”
জুনায়েদ দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,
-“আমি কথা দিয়ে দিয়েছিলাম আমার বসকে।কারণ আমি ভেবেছিলাম আমার মেয়ে আমার কথামতই বিয়ে করবে।তোর কথা শুনে যদি ওনাকে না করে দিতাম তাহলে উনি অপমানিত হতেন। হয়ত আমাকেও কোনো না কোনো ভাবে অপমান করতেন।চাকরীটা বড় না!সবার সামনে অপমানিত হতাম। তাছাড়া তোর সুন্দর ভবিষ্যত ভেবে আমি আর কিছু বলিনি রে মা। পারলে আমায় ক্ষমা করে দিস।কিন্তু একটা কথা মনে রাখিস,তোর বাবা তোর খারাপ চায় না।জিসানের সাথে তুই ভালোই থাকবি।”
বলেই জুনায়েদ উঠে গেলেন।সবার আড়ালে চোখটা মুছে নিলেন। কোনো বাবাই তার মেয়ের খারাপ চায় না। তিনি তার মেয়েকে সুখী দেখতে চেয়েছিলেন।আরশিও বাবার দিকে তাকিয়ে মনে মনে ভাবে,
-“বাকিটা আল্লাহর ইচ্ছে।”
জুনায়েদ অতিথি আপ্যায়ন করতে ব্যস্ত।আটটা বেজে ১০ মিনিট হয়ে গেছে।এখনো বরের কোনো খবর নেই। অথচ বরের ৭ টায় আসার কথা ছিল।জুনায়েদ বেশ চিন্তিত হয়ে এদিক-ওদিক পায়চারী করছেন।জিসানের বাবা ফারুক আর জিসান কেউই ফোন ধরছে না।আশপাশ থেকে কানাঘুষা শোনা যাচ্ছে,
-“শুনেছি বর এখনো আসেনি।বিয়ে কি হবেনা নাকি?”
জুনায়েদ কি করবেন বুঝতে পারছেন না। আরশিও এসব শুনে অসহায়ের মত এদিক-ওদিক তাকাচ্ছে।বারবার গেইটের দিকে তাকিয়ে একজনের আসার অপেক্ষা করছে।আশপাশ থেকে মানুষ বলছে,
-“মেয়ের নিশ্চয়ই সমস্যা রয়েছে। নয়ত বর এখনো আসছে না কেন?মনে হয় বিয়ে করতে চায় না মেয়েটাকে।”
জুনায়েদ আরশির পাশে বসে বললেন,
-“তুই চিন্তা করিস না আরশি।আমি তোকে অপমানিত হতে দেবো না। আজই তোর বিয়ে হবে।”
জুনায়েদ বারবার কল করছে ফারুককে।এবারের ফোনটা তোলা হলো।জুনায়েদ ব্যস্ত হয়ে বললো,
-“কোথায় আপনারা?আমার মেয়ে বসে আছে বউ সেজে।”
ফারুক ঠান্ডা গলায় বললো,
-“মাফ করবেন।এই বিয়ে হবে না।”
জুনায়েদের মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়লো।তিনি রাগী গলায় বললেন,
-“ফাইজলামি পাইছেন?নিজেরাই প্রপোজাল দিয়ে নিজেরাই বিয়ে ভাঙবেন?ফাজলামু এসব?”
-“জুনায়েদ মাথা ঠান্ডা করো।আমার ছেলে বিয়ে করার মত অবস্থায় নেই।”
-“কি ঠান্ডা করবো মাথা!এখন আমার মেয়ের কি হবে?”
-“একটা সমস্যা হয়ে গেছে জুনায়েদ। আমার ছেলে তোমার মেয়েকে বিয়ে করতে চায় না।আমি এর ক্ষতিপূরন দিতে রাজি আছি।”
জুনায়েদ আবার রাগী গলায় বললেন,
-” সবকিছুর ক্ষতিপূরন হয় না।এখন আমার মেয়ের কি হবে?”
-“তুমি আগামীকাল আমার অফিসে এসো আমি সব খুলে বলছি।”
বলেই তিনি কল কেটে দিলেন। জুনায়েদ গালি দেয়ার সুযোগ আর পেলেন না।তিনি আবার কল করলেন কিন্তু ফোন বন্ধ।তিনি চিন্তিত হয়ে আরশির দিকে এগিয়ে গিয়ে বললেন,
-“জিসান তোকে বিয়ে করতে চায় না আরশি। নিশ্চয় কোনো কাহিনী করেছে।একটা ফালতু ছেলে ও।”
আরশি অসহায় গলায় বললো,
-“আমি তো আগেই বলেছিলাম বাবা।”
জুনায়েদ কাঁদতে কাঁদতে মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়ে বললেন,
-” এখন আমার মেয়েকে কে বিয়ে করবে!”
ঠিক তখনই পিছন থেকে কেউ একজন বলে উঠলো,
-“শ্বশুরমশাই,মে আ গায়ি হু।নো ফিকার,মুগ্ধ ইজ হেয়ার!”
চলবে….
(আমার ভুলক্রুটি গুলো ধরিয়ে দিবেন।অযথা সেগুলো নিয়ে মজা না করে ক্ষমার চোখে দেখবেন আর ভালো কিছু লিখতে অনুপ্রাণিত করবেন।ভুলক্রুটির জন্য ক্ষমাপ্রার্থী😌❤️🩹)