হৃদয়ে লুকানো প্রেম পর্ব -৪০+৪১

#হৃদয়ে_লুকানো_প্রেম
#নুুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_৪০
চেয়ারপার্সনের রুমে জারিফ, প্রিয়া, প্রিয়ার বন্ধুরা ও সকালে যারা প্রিয়া ও জারিফকে নিয়ে নোং*রা কুটক্তি করেছে সেই মেয়েগুলো অবস্থান করছে। মেয়েগুলো এখন ভয়ে তটস্থ হয়ে আছে। জারিফ দুই হাত পেছনে রেখে স্ট্রেটফরওয়ার্ড দাঁড়িয়ে আছে। প্রিয়া বারবার জারিফের দিকে তাকাচ্ছে কিন্তু তাতে জারিফের কোনো হেলদোল নেই। খানিকটা ভয়েও আছে! জারিফ আবার রে*গে নেই তো? মুখাবয়ব দেখে কিছু বোঝা যাচ্ছে না। এদিকে রূপা ও তার বান্ধুবীদের অবস্থা নাজেহাল। চেয়ারপার্সন স্যার সরাসরি জিজ্ঞেস করলেন,

“রূপা, ন্যান্সি, শারিকা ও শীলা। আপনারা প্রিয়াকে জারিফ রিলেটেড কী বলেছেন?”

রূপারা ভয়ে ঢোক গিলল। ওদের চুপ করা দেখে চেয়ারপার্সন স্যার হুং*কা*রে ন্যান্সি ভয়ে কেঁপে উঠে বলল,
“স্যার, আমরা খারাপ কিছু বলিনি।”

“আমি জানি আপনারা কী বলেছেন। কে কী করল তাতে আপনাদের কী? আপনারা এখনি জারিফ ও প্রিয়ার কাছে ক্ষমা চাইবেন তারপর আপনাদের আমি কিছু কথা বলব। যদি আপনাদের সেটাতে অপরাগতা থাকে তাহলে হ্যা*রাস*মেন্টের জন্য ভার্সিটি থেকে সাসপেন্ডও হতে পারেন!”

রূপারা ভয় পেয়ে গেলো। তাদের পরিবার পর্যন্ত খবর পৌঁছালে ঝামেলা হয়ে যাবে কিন্তু ক্ষমা চাইতেও ইতস্ততবোধ করছে। কিন্তু ক্ষমা না চাইলে যে খুব বড়ো খেসারত দিতে হবে! এই মুহূর্তে প্রিয়ার প্রতি রাগ হলেও কিছু করার নেই। চারজন একে অপরের দিতে তাকাতাকি করে শেষ পর্যন্ত না পারতে ক্ষমা চায়। চেয়ারপার্সন স্যার বলতে শুরু করেন,

“আপনাদের জারিফ স্যার আর প্রিয়ার মধ্যে বিয়ের আগে কোনো প্রেম-ভালোবাসা ছিল না। প্রিয়া যে জারিফের বন্ধুর বোন সেটাও জারিফ জানত না। পারিবারিক ভাবে জারিফের বিয়ে তার বন্ধুর বোনের সাথে ঠিক হয় তারপর যখন জারিফ জানতে পারে তখন সে আমাদের সকল ফ্যাকাল্টি মেম্বারদের জানায়। সে দ্বীমনাতে ছিল যা আমরা ক্লিয়ার করেছি। এমনকি প্রিয়ার পরীক্ষার খাতা আমি নিজে দেখতাম। মিড২ ও ফাইনালের প্রশ্ন জারিফ আমার কাছে দিয়ে গিয়েছিল যাতে আমি মডিফাই করে দেই। প্রিয়া যেসব সেকশনে থাকবে জারিফ সেসব সেকশনে ক্লাস নিবেনা বলে জানিয়েছে। এতোকিছু কিন্তু সে নাকরলেও পারত। কিন্তু এখন বুঝতে পারছি এসব করার কারণ! যাইহোক, আগামীতে এরকমটা যেনো না হয় সেইদিকে লক্ষ্য রাখবেন।”

রূপা ও তার বান্ধুবীরা চেয়ারপার্সন স্যারকে বলে বেরিয়ে চলে গেল। প্রিয়ারাও চলে আসল। জারিফ চেয়ারপার্সন স্যারকে কৃতঙ্গতা স্বরূপ বলে,

“থ্যাংকিউ স্যার।”

“মাই প্লেজার বেটা। আগাছা ছোটো থাকতেই উপড়ে ফেলতে হয়। সবসময় মনে রাখবে। মে আল্লাহ ব্লেস বোথ অফ ইউ।”

জারিফ মুচকি হেসে বলে,
“দোয়ায় রাখবেন স্যার। আসি।”

____________
প্রিয়া ক্যাম্পাসে বসে দাঁত দিয়ে নখ কা*টছে। হুট করে বলে উঠে,
“উনি এই ব্যাপারে কীভাবে জানল! আমি তো বলিনি আর সে আশেপাশে ছিলও না। তার মানে রাদ!”

প্রিয়া তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে রাদের দিকে তাকায়। রাদ বাঁকা দৃষ্টিতে তাকিয়ে জারিফের অফিস রুমের জানালার দিকে আঙুল তাক করে বলে উঠে,
“আপনার স্বামী ওই ওইযে উপরে তার অফিস রুমের জানালা দিয়ে পুরো ঘটনা দেখছেন কিছু না শুনলেও। আপনাকে কাঁদতেও দেখেছেন আপা! তারপর আমি ডিপার্টমেন্টে ফারুক স্যারের কাছে গেলে সে আমাকে তার অফিস রুমে ডেকে সব জানতে চেয়েছেন।”

প্রিয়া ভাবুক কণ্ঠে বলে,
“ওহ আচ্ছা। তাহলে এই ব্যাপার!”

রাদ বলে,
“হ্যাঁ। ভালোই হয়েছে স্যার সব মিটমাট করে ফেলেছে। এসব ঝামেলা না রাখাই ভালো।”

প্রিয়াও সায় দেয়। কিন্তু জারিফ যে প্রিয়ার সাথে কথা বলল না! চেয়ারপার্সন স্যারের রুম থেকে বের হয়ে প্রিয়া জারিফকে ডেকেছিল কিন্তু জারিফ না তাকিয়ে কোনো জবাব না দিয়ে চলে গেছেন।

বাসায় ফেরার পথেও জারিফ একদম নিরব। ড্রাইভিং করে যাচ্ছে একমনে। আর বেচারি প্রিয়া! কখন থেকে উুঁশখুশ করছে। একবার জারিফের থেকে পানি চাইছে তো আরেকবার টিসু চাইছে! জারিফও চুপ থেকে সব এগিয়ে দিচ্ছে কিন্তু কথা বলছে না। প্রিয়া এই অবস্থা দেখে মুখে নখ কা*টতে কা*টতে ভাবল কিছু একটা করবে। হঠাৎ করে প্রিয়া গাড়ির ব্রেকে চাপ দিয়ে জারিফকে ব্রেক করতে বাধ্য করল। গাড়ি থামিয়ে জারিফ এখন সামনের দিকে অনড়ভাবে তাকিয়ে আছে। প্রিয়া নিজের সিটবেল্ট খুলে জারিফের দিকে এগিয়ে নিজের কান ধরল! তারপর বলল,

“সরি সরি। দেখেন ওদের কথাগুলো আমার খুব খারাপ লেগেছিল। ট্যুর থেকে ফেরার দিনই দেখেছি। আপনি ওদেরও স্যার তাই জানাতে চাইনি। আজকে সামনাসামনি ওদের কথাবার্তা আমাকে স্তব্ধ করে তুলেছিল। মস্তিস্কে কিছু বলার মতো শব্দ বা জবাব আসছিল না।”

জারিফ তাও নিরুত্তর। প্রিয়া আবার বলে,
“ঝামেলা হওয়ার ভয়ে কিছু বলতে চাইনি। এরপর থেকে এমন কিছু হলে সবার আগে আপনাকে জানাব। প্রমিস।”

“এমন কিছু হবেও না আশাকরি।”

প্রিয়াকে প্রত্যুত্তর করে গাড়ি স্টার্ট করল। ওদের বাড়ি ফিরতে ফিরতে সন্ধ্যা হয়ে গেছে।

__________

রাতে আয়ান দেখল পিহুর কোনো জবাব আসেনি। আয়ান লম্বাশ্বাস নিয়ে লিখল,
“অ্যাই ওয়ান্না মিট উইথ ইউ। আগামীকাল বিকেলে। তোমার ঠিকানা থেকে রমনাপার্ক কাছে। সেখানেই আসব। ঠিক বিকেল পাঁচটায়।”

পিহুর ফোনে নোটিফিকেশন আসা মাত্রই সে শোয়া থেকে লাফ দিয়ে উঠে বসল। পিহুর হঠাৎ লাফ দিয়ে উঠাতে পরী হকচকিয়ে উঠল। বেচারি পরী হেডফোনে গান শুনছিল। পিহু পরীকে হুড়মুড়িয়ে জড়িয়ে ধরে উচ্ছাসের সাথে বলে,

“ইয়েয়ে! সে দেখা করতে আসবে।”

পরী থতমত খেয়ে বুকে থু*থু দিয়ে বলে,
“ওহ। তাহলে যা। বইন দয়া করে একটু ধীরে সুস্থে কথা বলিস। ভাইয়া না আবার ভয়ে পালায়!”

পিহু ভ্রুঁ বাঁকিয়ে বলে,
“উফ! আপু। একটু এক্সাইটমেন্টে করে ফেলেছি। কালকে তুমিও যাবা আমার সাথে।”

“এই না না। আমি তোদের দুজনের মাঝে যেয়ে কী করব?”

“আমাকে নিয়ে যাবা। আমি কি চিনি নাকি! কাছে হলেও একা একা যাব না। তুমি নাহয় দূরে দাঁড়িয়ে থেকো। তাও চলো প্লিজ প্লিজ। একা গেলে খালামনি অন্যকিছুও মনে করতে পারে। খালামনিকে বলবা, ফুচকা খে*তে যাব তাহলেই হবে।”

পরী অবাক! পিহুটা এতো চালাক! পিহুর কান জোড়ে মলে দিয়ে বলে,
“ওরে বা*টপা*র! ভালোই তো বা*টপা*রি শিখছ। প্রেমিকের সাথে দেখা করতে যাবা ফুচকার বাহানায়!”

পিহু কানে হাত বুলাতে বুলাতে মুখ কুঁচকে বলে,
“কোনো প্রেমিক ফেমিক না বুঝেছ! সে নিজেই বলেছে এটা। তাও তাকে দেখার ইচ্ছে দমাতে পারিনা।”

পরী হালকা হেসে বলে,
“তুই একটু বেশি চিন্তা করিস। সবকিছু হুট করে হয় না। টাইম দে সব ঠিক হবে। তখন এসব প্রেম হওয়ার আগের সময়টা খুব মিস করবি। তখন এই অনুভূতি গুলোই হৃদয়ে কড়া নাড়বে। এখন চল খেতে যাই। মা পরে ডাকতে চলে আসবেন।”

পিহু মুচকি হাসে অতঃপর ওরা ডিনার করতে যায়।

__________

সুন্দর একটা সবুজ থ্রিপিস ও সবুজ রঙের হিজাব পরে এসেছে পিহু। পরীর সাথে সে রমনাপার্কের একটা বেঞ্চিতে বসে আছে। পাঁচটা বাজতে এখনও পাঁচ মিনিট বাকি কিন্তু পিহু বারবার সময় দেখছে।

“রিল্যাক্স পিহু। সময় তো হয়নি এখনও। তোর জন্য দশমিনিট আগে এসে বসে আছি।”

পরীর কথায় ভাবান্তর হলো না ওর।
“সবুজ রঙে ভালো লাগছে আমায়?”

“এই এক কথা তোকে কতোবার বললাম বলতো? সুন্দর লাগছে অনেক।”

পিহু লাজুক কণ্ঠে বলে,
“তার সাথে প্রথম দেখা হওয়ার দিন সে সবুজ টিশার্ট পরেছিল। পাহাড়ের বুকে তাকে কতোটা স্নিগ্ধ লাগছিল!”

পরী একটু রম্যস্বরে বলে,
“কিন্তু এই রমনাপার্কে তোকে গাছের মতো লাগবে!”

পরীর কথায় পিহু রেগে যায় যার বিনিময়ে কিছুটা ভুগতে হয়েছে পরীকে।

আয়ান ও রাদ এসেছে রমনাপার্কে। রাদকে বলার পর রাদ জোড় করেই এলো। তার বাহানা সে ছবি তুলে দিবে! আয়ান ও রাদ, পিহুদের কাছে গেল। ওদের পরিচয় পর্ব হলো। আয়ান ও পিহুকে আলাদা কথা বলতে দিয়ে রাদ ও পরী অন্যদিকে হাঁটতে থাকে।
#হৃদয়ে_লুকানো_প্রেম
#নুুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_৪১
“আপনি কীসে পড়েন?”
আনমনে হাঁটছিল পরী। অচেনা ছেলেটার সাথে একসাথে হাঁটতে খানিক লজ্জা ও ভীরুতাও কাজ করছিল। হঠাৎ ছেলেটির কণ্ঠস্বরে ছেলেটির দিকে তাকায়। ছেলেটি সুদর্শনও বটে! পরী কয়েক সেকেন্ড নিরন্তর তাকিয়ে থাকে যার দরুণ ছেলেটি বিব্রত হলো। হালকা কাঁশির শব্দে পরী থতমত খেয়ে নজর সরিয়ে নেয়। দুজনেই চুপচাপ হাঁটছে। কিছুক্ষণ পর রাদ আবারও জিজ্ঞেস করে,

“কোথাও বসবেন? চলুন বসি।”

ওরা দুজনে একটা বেঞ্চিতে বসল।
“আপনার নামটাই তো জানা হলো না।”

“আমি পরী! অ্যাই মিন, আমার নাম ‘রিদিতা পরী’। আপনার নামটাও জানা হলো না।”

রাদ হেসে বলল,
“রায়হান ইসলাম রাদ। আপনার নামের সাথে মিল আছে লক্ষ্য করেছেন?”

কথাটা বলেই হাসলো। পরীও হেসে বলল,
“হুম কিছুটা।”

“আপনি কীসে পড়েন বললেন না তো?”

“এইতো এইচএসসি দিলাম। সামনে এডমিশন টেস্ট।”

“কোচিংয়ে ভর্তি হয়েছেন?”

“হ্যাঁ। উন্মেষে ভর্তি হয়েছি। মেডিকেল লাইনে যাওয়ার ইচ্ছে সাথে একটু ভার্সিটির ম্যাথও প্র্যাকটিস হয়ে যাবে। কিছুদিন পরেই ক্লাস শুরু হবে।”

“তাহলে তো ভালোই। দোয়া করি ভালো কিছু হোক।”

এক চা-ওয়ালা মামাকে দেখে চা নেয় দুজনে। চুপচাপ সবুজের মাঝে সাথে যানবাহনের হর্ণ! এসবে দুজনে চা উপভোগ করতে থাকে।

_________

এদিকে পিহু ও আয়ান পুকুরপাড়ে এসে বসেছে। দুজন এখনও নিশ্চুপ। আয়ান পানিতে কংকর নিক্ষেপ করছে বসে বসে। পিহু হাঁটতে হাঁটতেও উুঁশখুশ করছিল কথা বলতে। আয়ান পানির দিকে দৃষ্টি রেখেই বলে,

“কেমন আছো পিহু?”

পিহু এখন চুপ করে আছে। তার অভিমান পরিলক্ষিত। আয়ান নিরব হাসে।
“এতো অভিমান যে করে বসেছ? অভিমানের সাথে মনে পাহাড়সম আকাঙ্ক্ষা জমিয়েছ তা যদি কেউ পূরণ না করে তখন?”

পিহু মুখ ভাড় করে ফেলে। ছেলেটা এমন কেনো? এতো স্পষ্ঠভাষী কি হতেই হবে? একটু কম হলে হয় না! ফুস করে নিঃশ্বাস ছেড়ে বলে,

“হয়তো একটু বেশিই আশা করে ফেলেছি! আপনাকে তার জন্য আসতেও হলো। সরি।”

আয়ানের হাত থেমে যায়। ঘুরে বসে পিহুর দিকে। সে বলে,
“যার ভালোবাসার মানুষটা অন্যের হয়ে যাওয়ার পরেও সে নিরব ছিল। তার থেকে তুমি প্রেম না করে প্রেমিকা হওয়ার আশা করছ। পরে নিজেই কস্ট পাচ্ছ। আমার জানো, কাউকে সজ্ঞানে আশা দিতে মন চায় না। যদি নিয়তিতে থাকে তবে সব হবে। বর্তমানকে ভালোবাসা উচিত। আমার মনে হচ্ছে আমার একটা রো*গ হচ্ছে! আমি কেমন যেন হয়ে গেছি।”

পিহু মনোযোগ দিয়ে শুনল। সে বলল,
“আপনি বাহ্যিকভাবে নিশ্চুপ থাকলেও আপনার মন কিন্তু নিশ্চুপ ছিল না। আপনি নিজের মধ্যে দমিয়ে রেখেছেন বলেই হয়তো খারাপ লাগছে। তাছাড়া সেই মানুষটার বিয়েতেও আপনি গিয়েছেন বলেছিলেন।”

“হ্যাঁ। সেই মানুষটাকে আমি প্রতিদিন দেখি। ও হাসলে, ওর ভালোবাসার মানুষটার সাথে খুশি থাকলে আমার হৃদয়ে শূণ্যতার বদলে ভালো লাগা অনুভব হয়। কেনো হয় জানিনা। বন্ধুত্ব চিরকাল থাক।”

পিহুর মনে হলো আয়ান আবার অন্যমনা হচ্ছে। তাই সে নিজের মুড পরিবর্তণ করে উচ্ছাসের সাথে বলে উঠল,
“চলুন ফু*চকা খা*ই। ঝাল ঝাল করে। যাতে চোখ বেয়ে পানি পরে!”

আয়ান পিহুর উচ্ছাসতা দেখে ভ্রুঁকুটি করেও হেসে ফেলে।
“চলো তাহলে। আমি ফু*চকা খাইনা এমনিতে তবে তোমার ফুচকার প্রতি এক্সপ্রেশন দেখে ইচ্ছে হলো।”

পিহু ঝাল ঝাল ফুচকা খাচ্ছে আর কাঁদছে! ফুচকাওয়ালাকে সে বাড়তি বো*ম্বাই ম*রিচ দিতে বলেছিল। এমনিতেও ফুচকাওয়ালা মামা বো*ম্বাই ম*রিচ দেন। আয়ান আবার নিজেরটাতে মোটামুটি ঝাল দিতে বলেছিল। পিহুর এই বেসামাল অবস্থা দেখে আয়ানের মনে পরল, সে তো পিহুর জন্য চকোলেট এনেছিল। বেচারি ঝা*লে কাঁদছে তারপরেও খাওয়া থামাচ্ছে না। আয়ান ওর দিকে চকোলেটটা এগিয়ে দিলো। পিহু ঝাপসা চোখে চকোলেটটা দেখে খুশি হলো। ছিনিয়ে নিলো আয়ানের হাত থেকে। আয়ান হাসলো।

ফুচকা খাওয়া শেষে পিহু চকোলেট খাচ্ছে আর ঝাল কমানোর চেষ্টা করছে। পাশাপাশি হাঁটছে। আয়ান পকেটে হাত গুঁজে বলল,

“সন্ধ্যা হয়ে আসছে। আমি রাদকে ফোন করে তোমার বোনকে নিয়ে আসতে বলি।”

পিহু আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখল, আকাশে লালিমা ছড়াচ্ছে। সূর্য ডুবে গেছে। পিহু আফসোস করে বলল,
“এতো সময় কখন চলে গেলো বুঝতেই পারলাম না। আরেকটু থাকতে ইচ্ছে করছে।”

আয়ান হাসলো। কোনো প্রত্যুত্তর করল না। পিহু হুট করে বলে উঠল,
“একটা কথা বলি? ওই আপুটার নাম কী? আপনি যে তাকে ভালোবাসেন সে জানে?”

আয়ান বিকেলের শেষ বাতাসে নিজের দীর্ঘশ্বাস উড়িয়ে দিয়ে বলল,
“ওর নাম প্রিয়া। আমি কখনও নিজের ফিলিংস জাহির করিনি। ফ্রেন্ডরা যেভাবে থাকে সেভাবেই থেকেছি। স্বভাবত ইন্ট্রোভার্ট হওয়ার একটা সুবিধা।”

পিহু মুখ ফসকে বলে ফেলে,
“আপনার সাথে তিন মাসের পরিচয় আমার। আপনি অন্যকারও হননি তাও আমি সেটা ভাবলেও সহ্য করতে পারিনা। আর আপনি! আপুটা অন্যকারও হয়ে গেছে। কীভাবে সহ্য করেন?”

আয়ান মৃদু হাসলো তবে জবাব দিলো না। পিহু কী বলেছে ভেবেই মুখ চেপে ধরল। লজ্জায় চোখ খিঁ*চে দাঁ*ত দিয়ে জি*ভ কা*টল। আয়ান রাদকে ফোন করে আসতে বলল। দশমিনিট পর রাদ ও পরী এসে পরেছে। পিহু ও পরীকে এগিয়ে দিয়ে আয়ান ও রাদ চলে যায়।
______________

পেরিয়ে গেছে অনেকগুলো দিন। পড়াশোনা, পরীক্ষা, আড্ডা সবমিলিয়ে চলছে ওদের দিন। রূপা ও তার বান্ধুবীরা প্রিয়াদের সাথে আর কথাই বলতে আসেনি। মূলত ভয়ে আসেনি তবে সামনে পরলে মুখ বাঁকিয়ে চলে যায়। দেখতে দেখতে এই সেমিস্টারটাও শেষ। প্রিয়ার তো পরীক্ষা শেষ হয়েছে আজকে। সকাল সকাল পরীক্ষা শেষ তাই চলে এসেছে। বন্ধুদের সাথে কালকে ঘুরতে যাওয়ার প্ল্যানিং আছে তাও কাশবনে। জারিফের পরীক্ষার গার্ড বিকেল পর্যন্ত বলে প্রিয়া জারিফকে নিজের জন্য ও তুতুলের জন্য চকোলেট আনতে বলে দিয়েছে। এখন সে আর তুতুল ড্রয়িংরুমে অপেক্ষারত। তামান্না বলে,

“তোদের দুটোকে বাচ্চার থেকে কম লাগছে না!”

“আরে ভাবী চকোলেট আনলে তোমাকেও দিবো বুঝছ।”

“হু! তুতুলই খেয়ে নিবে। ওর বাবার আনা সব চকোলেট ওর পেটেই যায়।”

“এবার নো চিন্তা। তুতুলের জন্য আলাদা আনবে।”

হঠাৎ কলিংবেল বেজে উঠলে প্রিয়া তুতুলকে নিয়ে উঠে দরজা খুলতে যায়। ডোর মিররে দেখল দরজার ওপাশে জারিফ। প্রিয়া তুতুলকে শিখিয়ে দিলো কী করতে হবে। দরজা খুলেই প্রিয়া ও তুতুল নিজেদের ডান হাত বাড়িয়ে দিল। জারিফ ওদের মুখের দিকে একবার তাকায় আবার হাতের দিকে। প্রিয়া হাত নাড়াতে নাড়াতে বলে,

“চকোলেট দিন। চকোলেট দিন।”

“দিবো তো। আগে ঢুকতে দেও।”

জারিফের কথায় না সূচক বলে,
“উঁহু! আগে চকোলেট দিবেন তারপর।”

তুতুলও বলে,
“দাও দাও দাও। নাহলে তোমাকে আবার দোকানে পাঠাব!”

জারিফ কপাল কুঁচকে ব্যাগ থেকে চকোলেট গুলো বের করে ওদের হাতে দেয় আর বলে,
“এই নাও! এখানে তোমার, তুতুলের ও ভাবীর জন্য আছে। এবার তো ঢুকতে দাও!”

প্রিয়া দাঁ*ত বের করে হেসে বলে,
“হ্যাঁ হ্যাঁ আসুন।”

জারিফ ফ্রেশ হতে নিজের ঘরে চলে যায়। প্রিয়া ও তুতুল দরজা লাগিয়ে চকোলেট ভাগাভাগি করে নেয়। ভাগাভাগি শেষে প্রিয়া জারিফের ও নিজের, দুজনের জন্য দুধচা+কফি একসাথে চাফি বানিয়ে নিয়ে যায়। সাথে আবার চকোলেট গলিয়ে চাফিতে দিয়েছে। জারিফ এতক্ষণে জামা-কাপড় বদলে ফ্রেশ হয়ে বেড়িয়েছে। প্রিয়া মগটা এগিয়ে দিয়ে বলে,

“এই নিন! গ*রম গ*রম চাফি!”

জারিফ মৃদু হেসে মগটা নেয়। এক চুমুক খেয়ে বলে,
“চকোলেটও দিয়েছ? বাহ।”

প্রিয়া খুশি খুশি হয়ে বলে,
“হুম। এটার টেস্টটা অনেক রিফ্রেশিং। এনার্জি পাওয়া যায়। কোনো ফ্লেবারই কড়া না।”

“হুম।”

গোধূলিরাঙা আকাশ দেখতে দেখতে দুজনে ব্যালকনিতে বসে। জারিফ প্রিয়াকে নিজের বুকে আগলে নেয়।

চলবে ইনশাআল্লাহ্‌,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here