#হৃদপিন্ড
#জান্নাতুল নাঈমা
#পর্ব-৮
মধুমালতী ডাকে আয়
ফুলফাগুনের এ খেলায়..(২)
যুঁথিকামিনী কতো কথা..(২)
গোপনে বলে মলোয়ায়
মধুমালতী ডাকে আয়
চাঁপাবনে কলিসনে আজ লুকোচুরি গো লুকোচুরি
আলোভরা কালোচোখে কি মাধুরি কি মাধুরি
মোনো চাহে যে ধরা দিতে…(২)
তবু সে লাজে সরে যায়
মধুমালতী ডাকে আয়
মালাহয়ে প্রাণেমম কে জরালো কে জরালো
ফুলরেণু মধুবায়ে কে ঝরালো কে ঝরালো
জানি জানে কি মোর হিয়া..(২)
রাঙালো রাঙা কামনায়
মধুমালতী ডাকে আয়
ফুলফাগুনের এ খেলায়..(২)
সাউন্ড বক্সে গানের তালে নাচছে ইয়ানা,,,
ইয়ানা ইমনের ছোট কাকার ছোট মেয়ে।
খুবই নম্র-ভদ্র স্বভাবের মেয়ে এবার ইন্টার ফার্স্ট ইয়ারে পড়ছে সে। সারাসারাক্ষণ বইয়ে মুখ গুঁজে থাকলেও যখন মনটা ফুরফুরে থাকে সাউন্ড বক্সে গান ছেড়ে প্রানখুলে নাচতে শুরু করে বা যখন মনটা ভীষন খারাপ থাকে তখন গান ছেড়ে নাচতে শুরু করে। স্কুল-কলেজে যে কোন অনুষ্ঠানই হোক না কেনো ইয়ানা চৌধুরীর নাচ ছাড়া কোন অনুষ্ঠান কমপ্লিট হবে না। শুধু চেহেরার জন্যই নয় নাচের জন্যও শতশত ছেলেরা তাঁর জন্য পাগল। কিন্তু সেসবে তাঁর কোন আগ্রহ নেই। মন দিয়ে পড়াশোনা করা ছাড়া, মন-প্রান দিয়ে নাচ করাও তাঁর প্রতিদিনের রুটিন হয়ে গেছে। মা নেই বাবার আদরের মেয়ে, তাঁকে কোন কিছুতে কেউ বাঁধা দেয় না। বরং বাড়ির সবাই অন্য সবার থেকে তাঁকে বেশী মাথায় করে রাখে।
নাচের মাঝে হঠাৎ গান বন্ধ হয়ে গেলো ইয়ানাও নাচ বন্ধ করে ভ্রু কুঁচকে তাকালো। জোরে জোরে শ্বাস নিতে নিতে বললো আপি তুই,,,গান বন্ধ করলি কেনো?
তুই নাচ কর ধেই ধেই করে ওদিকের খবড় জানিস,,,
ধামাকা হতে চলেছে, ধামাকা।
ইয়ানা বিছানায় বসে ওড়না দিয়ে ঘাম মুছতে মুছতে বললো কিসের ধামাকা কি সব বলছিসরে,,,
ইয়াশফা ইমনের সৎ বোন এসে পাশে বসলো। ইয়ানার দিকে ঘুরে বিস্ময় চোখ মুখ করে বললো জানিস বড় দাদাভাই আসছে,,,
ইয়ানা অবাক হওয়ার সাথে ভীষণ খুশি হয়ে বললো সত্যি দাদাভাই আসছে???
ইয়াশফা কপাল কুঁচকে বললো এমন ভান করছিস যে তোর নিজের ভাই আসছে,,,
ইয়ানা মুখ গুমরা করে বললো ওমা সে কি কথা বড় দাদা ভাই তো আমাদের নিজের ভাই ই। আমার নিজের চাচার ছেলে আর তোর তো নিজের ভাই।
ইয়াশফা মুখ বাঁকা করে বললো সৎ ভাই।
ইয়ানা বললো কিসের আবার সৎ ভাই, ভাই বোনের মধ্যে আবার সৎ,অসৎ আছে নাকি। একি বাবার ছেলে মেয়ে তো তোরা, তবে এটা ঠিক বড় দাদাভাই সত্যি সৎ মানুষ, সে হিসেবে সে আমাদের সবার সৎ ভাই হিহিহি।
ইয়াশফা বিরক্তি মুখ করে বললো তোর সাথে কিছু শেয়ার করতে আসাও যায় না ধূর বলেই ওঠে পড়লো।
ইয়ানা হাত টেনে বসিয়ে বললো এই আপি রাগ করছিস কেনো? বল না কি বলতে এসেছিস,,,
ইয়াশফা বসে বললো বড়দাদা ভাই য়ের সাথে নাকি একটা মেয়েও আসছে, ঐ যে কিসব মেয়ে আছে না ওরকম। ভাবতে পারছিস মম এটা কীভাবে নিচ্ছে যা হবেনা আসার পর,,,বাড়িতে এবার সিরিয়াস ড্রামা দেখতে পারবো।
ইয়ানা বললো কিছু হবে না বড়দাদা ভাইয়ের সামনে কেউ কিছু বলতেই পারবে না।
ইয়াশফা বললো সামনে না পারলো মম তো পিছনে ঠিক মেয়েটা কে হেনস্তা করে ছাড়বে।
আই থিংক মেয়েটা টাকার লোভে পড়ে দাদাভাইকে ফাসিয়েছে বুঝেসিস, শুনেছি মেয়েটা নাকি দেখতেও তেমন সুন্দর না তাহলে ভাব দাদা ভাইয়ের মতো মানুষ ওরকম মেয়ে কে কেনো নিজের কাছে রেখেছে,আবার এ বাড়িতেও নিয়ে আসছে ভাবা যায়,,,
ইয়ানা বললো কিসব বলছো নিশ্চয়ই মেয়েটা ভালো তাই দাদাভাই নিয়ে আসছে।
,
নাজমা চৌধুরী ইমনের দাদী এসে সাজিয়া বেগমের সামনে দাঁড়ালো। কড়া গলায় বললো বাইরের ময়লা -আবর্জনা তবুও ধুয়ে মুছে সাফ করা যায়।কিন্তু কারো মনে ময়লা আবর্জনা থাকলে সেটা কি আর সাফ করা যায়।
সাজিয়া বেগম ক্ষেপে গেলেন একরামুল চৌধুরী কে বললেন দেখেছো দেখেছো তোমার মা কথাগুলো আমাকেই বলছে।
একরামুল চৌধুরী বিরক্ত হয়ে মা, বউয়ের মাঝখান থেকে চলে গেলেন।
না পারবে মা কে কিছু বলতে না পারবে বউ কে কিছু বলতে এর থেকে সরে যাওয়াই ভালো মনে করলো তিনি।
নাজমা চৌধুরী বললেন আমার দাদু ভাই যাকে খুশি তাকে এ বাড়িতে নিয়ে আসবে এতে কার বাপের কি?
সাজিয়া বেগম চোখ বড় বড় করে রাগে, কান্না করে বললেন আপনি আমার মৃত বাবাকে টেনে আনছেন?
নাজমা বেগম বললেন আমি কি তোমার মতো বেয়াদবের নাম ধরে কিছু বলেছি?
কি আমি বেয়াদব,,,
,
ইমন আর মুসকান দুজনই বাড়ির ভিতরে আসতেই বাড়ির কাজের লোক আর নাজমা চৌধুরী হৈচৈ বাজিয়ে দিলো, দুজন কাজের লোক তাঁদের ল্যাগেজ গুলো নিয়ে উপরে চলে গেলো।
মুসকান অবাক হয়ে সব দেখতে লাগলো।
হায় আল্লাহ এটা তো আরো বিশাল বড় বাড়ি এখানে তো মানুষ ও বেশী, বাহ বেশ মজা হবে তো।
ইমন গিয়ে সোফায় পায়ের ওপর পা তুলে বসলো।
নাজমা চৌধুরী মুসকান কে অবাক চোখে দেখতে লাগলেন তাঁর চোখের কোনে পানি এসে গেছে, এ সে কাকে দেখছে সেই চোখ, সেই নাক, সেই চুল গায়ের রং টা তাঁর থেকে একটু চাপা।
মুসকান হা করে পুরো বাড়িতে চোখ বুলাচ্ছে।
ইমন সোফা থেকেই গম্ভীর গলায় বললো মুসকান ওনি আমার দাদী,,,
মুসকান এবার মুখটা স্বাভাবিক করে নিয়ে দাদীর দিকে তাকালো। কাছে গিয়ে সালাম দিতেই দাদীর চোখ গড়িয়ে পানি পড়লো।
মুসকান ভয় পেয়ে গেলো, মাথা নিচু করে ফেলতেই দাদী এসে মুসকানের হাত দুটি ধরে কেমন ছটফট করতে লাগলো,হাত ছেড়ে দুগালে ধরে আদর করতে শুরু করলো। মুসকানের চোখ দিয়ে পানি ঝড়ে পড়লো। কতোগুলো বছর পর কেউ তাঁকে এতো আদর ভালোবাসা দিচ্ছে, মায়ের কথা তাঁর মনে পড়ে গেলো।
তাঁর মা ও তাকে এভাবে আদর করতো।
নাজমা চৌধুরী মুসকান কে ধরে নিয়ে ইমনের পাশে বসালো। দুজনের দিকে অপলক ভাবে চেয়ে রইলো সে। তাঁর চোখ, মন দুটোই তৃপ্তি তে ভরে ওঠলো।
ইয়ানা, ইয়াশফা দুজনই উপর থেকে এসে একসাথে বললো দাদাভাই কেমন আছো?
ইমন গম্ভীর ভাবেই বললো ভালো, তোমাদের কি অবস্থা।
দুজনই বললো এই তো ভালো।
ইয়াশফা মুসকানের দিকে নাক ছিটকে তাকালো।
ইশ কেমন গেও ভূতরে বাবা, কেমন আন স্মার্ট, দেখে তো মনে হচ্ছে আমার থেকেও ছোট। কি পড়েছে সাদা সেলোয়ার আজিব লোক সব কোথা থেকে ধরে এনেছে দাদাভাই কে জানে?
ইয়ানা মুসকানের দিকে চেয়ে মিষ্টি এক হাসি দিয়ে বললো তোমার নাম কি?
মুসকান জান্নাত।
কাজের লোকরা ইমন, মুসকানের হালকা নাস্তা সামনে এনে দিলো মুসকান খেতে না চাইলেও দাদী জোর করে মুসকান কে খাওয়িয়ে দিলো। মুসকানের বুক ফেটে কান্না পেলো ভীষণ এতো আদর এতো ভালোবাসা সে পাবে ভাবতেও পারেনি। ইমন মুসকানের মনের অবস্থা বুঝে বাঁকা হেসে সোফা ছেড়ে ওঠে উপরে যেতে নিতেই একরামুল চৌধুরী, সাজিয়া বেগম, ইভান নেমে এলো।
ইভান বললো দাদাভাই কেমন আছো ইমন ইভানের সাথে কথা বলে তাঁর বাবা, মায়ের সাথে কথা বললো।
সাজিয়া বেগম কে খুব একটা পছন্দ না করলেও কখনো অসম্মান করে না।
ইয়াশফা, ইয়ানা দুজনই সোফায় বসে মুসকান কে দেখে যাচ্ছে। ইয়ানার ভালো লাগলেও ইয়াশফার বিরক্ত লাগছে।
ইমন উপরে চলে যেতেই সাজিয়া বেগম আর একরামুল চৌধুরীর চোখ গেলো সোফায় নাজমা চৌধুরীর পাশে বসে থাকা মুসকানের ওপর।
একরামুল চৌধুরী মুসকান কে দেখে বিস্ময় চোখে তাকালেন, এ সে কাকে দেখছে??
নাজমা চৌধুরী একরামুল চৌধুরীর দিকে চেয়ে বললো তুই যা দেখেসিস আমিও তাই দেখেছি।
একরামুল চৌধুরী চোখ মুখ স্বাভাবিক করে চলে গেলো।
নাজমা চৌধুরী মুসকান কে সবার সাথে পরিচয় করিয়ে সাজিয়া বেগম কে করাতে যেতেই সাজিয়া বেগম মুখ ঘুরিয়ে চলে গেলো।
মুসকান বেশ বুঝতে পারলো ওনি তাঁকে পছন্দ করলেন না। মুসকান মন খারাপ না করে ভাবলো
সবাই এতো আদর করছে ভালোবাসছে একজন অপছন্দ করতেই পারে,,,
ইভান মুসকানের দিকে কেমন দৃষ্টিতে যেনো চেয়ে রইলো।
মনে মনে ভাবলো বাহ একদম টাটকা জিনিস এসে হাজির আমার সামনে,,,অনেক দিন পর একটা টাটকা জিনিস পেলাম বেশ জমবে।
দাদী আর মুসকান মিলে অনেক গল্প স্বল্প করলো।
গল্পের ফাঁকে দাদী মুসকানের থেকে সব জেনে নিলো। কিন্তু মুসকানের নিজের মা নেই শুনে বুকের ভিতর টা কেমন করে ওঠলো তাঁর। আর ভাবলো আমি যাকে ভাবছি সে তো নাও হতে পারে আবার হতেও পারে।
তোর মায়ের নাম কি??
মুসকান বললো নয়ন তাঁরা,,,
,
দুপুর গড়িয়ে বিকাল হয়ে গেছে মুসকান দাদীর সাথে অনেকটা সময় কাটিয়ে এখন ড্রয়িং রুমে এসেছে।
সাজিয়া বেগম বললেন এই মেয়ে এখানে হাত পা গুটিয়ে বসে আছো কেনো?
মুসকান চমকে ওঠে দাঁড়িয়ে পড়লো।
না মানে কোন কাজ করে দিতে হবে বলুন আমি করে দিচ্ছি, আমি সব পারি।
বাহ একদম প্রশিক্ষন প্রাপ্ত কাজের লোক মনে হচ্ছে,,, সেই এটা হলেই ভালো।
চলো আমার সাথে।
সাজিয়া বেগমের পিছন পিছন মুসকান চলে গেলো।
সাজিয়া বেগম অন্যান্য কাজের লোকের কাজগুলো মুসকান কে দিয়ে করাতে লাগলো।
মুসকান কখনো এতো এতো কাজ করেনি বেশ হাঁপিয়ে গেছে সে, তবুও মন দিয়েই কাজগুলো করছে।
ইমন উপর থেকে সব দেখছে,,,
এতো বেশি সবজি দিয়েছে যে এগুলো কাটতে সন্ধ্যা পেরিয়ে যাবে,পুরো বাড়ির সকলের খাওয়ার জন্য সব সবজি এনে দিয়েছে তাঁকে। কাজের লোকগুলো সাহায্য করতে গেলেও সাজিয়া বেগম ধমকাচ্ছেন।
মুসকান তারাহুরো করে সবজি কাটতে গিয়ে তাঁর হাতের বেশ কিছু অংশ,কেটে রক্ত পড়তে শুরু করলো।
ইমন একবার আহ শব্দ টি শুনতে পেলো। আর কোন আওয়াজ পেলো না। বাধ্য হয়ে নিচে নেমে রান্নাঘরের দিকে যেতে নিতেই কাজের লোকদের গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেলো নাজমা চৌধুরী ইমনকে রান্নাঘরের দিকে যেতে দেখে বেরিয়ে এলো।
,
ইমন রান্নাঘরে গিয়ে দেখলো সাজিয়া বেগম দাঁড়িয়ে আছে। মুসকান বামহাতে সবজি কাটছে।
সাজিয়া বেগম ইমনকে দেখে মুখে হাসি এনে বললো তুমি এখানে কিছু লাগবে।
ইমন কড়া গলায় বললো মুসকান কে লাগবে।
মুসকান সবজি তারাহুরো করেই কাটতে লাগলো।
সাজিয়া বেগম বললেন কাজগুলো শেষ হলেই যাবে তুমি রুমে যাও।
ইমনের রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছে। চোয়াল শক্ত হয়ে এসেছে তাঁর দাঁতে দাঁত চেপে বললো বাড়িতে কি কাজের লোকের অভাব পড়েছে।
সাজিয়া বেগম ভয় পেয়ে গেলো।
মুসকান চট করে ওঠে দাঁড়িয়ে ভয়ে কাঁপতে লাগলো।
নাজমা চৌধুরী এসে বললেন একি তুই এসব করছিস কেনো?ফিরোজা,আশা তোরা কই।
এই যে আমরা এই যে? বলেই দুজন দ্রুত চলে এলো।
নাজমা চৌধুরী বললেন তোরা থাকতে ও এসব করে কেনো।
দুজনই মাথা নিচু করে ফেললো।
ইমন কড়া গলায় বললো মুসকান এখানে কারো কাজ করে দেওয়ার জন্য আসেনি। আর যদি এসে থাকে তো সেটা আমি মাইন্ড ইট, নেক্সট ওকে দিয়ে এক গ্লাস পানি ভড়িয়ে খাওয়ার আগেও আমার কাছে পারমিশন নিতে হবে।
বলেই চলে যেতে নিয়ে আবার থেমে মুসকানের দিকে কঠিন চোখে চেয়ে বললো কি হলো এখনো ওখানে দাঁড়িয়ে আছো কেনো।
মুসকান মাথা নিচু করেই ইমনের পিছনে হাটা ধরলো।
নাজমা চৌধুরী এই দৃশ্য দেখে বললো বাহ,,, একদম রাজযোটক।
সাজিয়া বেগম বললেন বুড়ির ভীমরতী দেখে বাঁচি না। ঠিক সময় বিয়ে করলে ঐ বয়সী একটা মেয়ে থাকতো ওর।
নাজমা চৌধুরী কড়া গলায় বললেন তোমার মতো মূর্খের থেকে আমি কিছু শুনতে চাইনা।
কি আমি মূর্খ,,,
তা নয়তো কি মেট্রিক ফেল,,,আন্ডার মেট্রিকুলেশন বলেই মুখ চিপে হাসলো।
কাজের মেয়ে দুটোও মুখ চিপে হেসে কাজে লেগে পড়লো।
সাজিয়া বেগম তেলে বেগুনে জ্বলে ওঠলো।
,
তোমাকে ওসব করার জন্য এনেছি,,, দেখি হাত দেখাও,কি হলো হাত সামনে আনো। ইমনের ধমকে মুসকান সহ দরজার বাইরে ইভান,ইয়ানা, ইয়াশফাও কেঁপে ওঠলো।
মুসকান ভয়ে ভয়ে হাত সামনে আনতেই ইমন হাতটা ধরে বিছানায় নিয়ে বসালো।
এই দৃশ্য দেখে দরজার বাইরে তিন জনেরই হার্ট অ্যাটাক করার মতো অবস্থা।
ইমন চৌধুরী যে কিনা নিজের বেড রুমে কাউকে এলাও করে না,একমাএ দাদী ছাড়া কেউ সাহস ও পায় না তাঁর রুমে আসার তাঁর বিছানায় এই মেয়েটাকে নিয়ে বসালো। তবুও যদি বুঝতাম মেয়েটার কোন ক্লাস আছে, একদম গেও ন্যাপা, ন্যাপা দেখতে।
ইয়াশফার কথা শুনে ইভান চলে গেলো। ইয়ানা বললো নারে আপি মেয়েটা ভীষন কিউট দেখ।
কিউট না ছাই আমাদের মতো ফর্সা না দেখ তুই।
তো কি হয়েছে কালোও তো না। ফর্সা হলেই সে সুন্দরী এমন তো কথা না, মুসকান ও ভীষন সুন্দরী। আমাদের কলেজের বাংলা ম্যাম এর মতো।
ইয়াশফা রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে চলে গেলো।
ইয়ানাও পিছন পিছন চলে গেলো।
ডানহাতে বেশ যত্ন নিয়ে ব্যান্ডেজ করে দিয়ে বললো এখানে তুমি কারো কাজ করে দেওয়ার জন্য আসোনি। আর তোমাকে বেশী পাকনামো দেখানোর জন্যও এখানে আনা হয় নি।
হাত কেটে গেলে মানুষ সেটা দেখিয়ে চিকিৎসা নেয়, আর তোমার মতো স্টুপিটরা লুকিয়ে রাখে।
এইটুকু বয়সে এতো ব্যাথা কি করে সহ্য করো তুমি,অবাক হয়ে যাই আমি।
ইমনের রাগ দেখে মুসকানের বেশ ভালো লাগছে।
তাঁর ব্যাথায় এই মানুষ টা এতো রেগে যায়,এতো যত্ন নেয় কেনো?? সত্যি কি ওনি আমাকে ভালোবাসে??
সায়রী আপা তো বলেছে ওনি আমাকে ভালোবাসে তাহলে আবার
বকে কেনো,,, ওওও ভালেবাসে বলেই তো বকে।
ছোটবেলা মা ও তো বকতো আমি ব্যাথা পেলে আরেকটা ব্যাথা দিয়ে তারপর কোলে নিয়ে বাড়ি যেতো।
স্কুলের নিপার বয়ফ্রেন্ডও নাকি ওকে অনেক ভালোবাসে, ও কাঁদলে সে সহ্য করতে পারেনা।
তাহলে কি ওনিও তেমনই। লজ্জায় লাল হয়ে গেলো মুসকান।
কি হলো হা করে কি ভাবছো,,,
মুসকান মুখটা বন্ধ করে চুপ করে রইলো।
ইমন বিছানা ছেড়ে ওঠে বললো রুমেই থাকো।
আমি না আসা অবদি বেরুবে না।
,
মুসকান কে তাঁর জন্য যে রুম ঠিক করে দেওয়া হয়েছে সেই রুমে রেখে আসা হলো। মুসকান প্রথমে কিছুটা ভয় পেলেও পরে ঠিক মানিয়ে রুমটাতে একা থাকতে পারলো।
,
বেশ কয়েকদিন হয়ে গেছে ইমন সারাদিন অফিসের কাজে ব্যাস্ত থাকে বাড়ি ফেরে রাত এগারোটা বারোটার দিকে।ইয়ানার সাথে মুসকানের বেশ ভাব হয়ে যায়।দাদী আর ইয়ানার সাথেই তাঁর সারাদিন সময় কাটে।
মুসকান তার নিয়মেই প্রতিদিন জেগে থাকে ইমন বাড়ি ফিরলে তাঁকে খাবাড় বেড়ে দেয়। ইমনের টুকটাক সব কাজ করে দেয়। বাড়ির সবাই বিষয় গুলো লক্ষ করে।কেউ কেউ বিষয় টা অপছন্দ করলেও কিছু বলতে পারেনা।
সেদিন প্রায় এগারোটা ছুঁই ছুঁই ইমন এসে সারেনি।
ইভান গার্লফ্রেন্ডের সাথে কথা বলতে বলতে রুম ছেড়ে বেরিতেই নিচে তাকালো। মুসকান কে দেখে বললো বেবী প্রচন্ড ঘুম পাচ্ছে এখন রাখি উম্মাহ,,,
ফোন রেখে পকেটে দুহাত ঢুকিয়ে মুসকানকে দেখতে লাগলো।
মুসকান বসে পড়াশোনা করছে চোখ বন্ধ করে বিরবির করে পড়ছে আবার পরোক্ষনেই চোখ খুলে খাতায় লিখছে।
হাতে কলম নিয়ে মাঝে মাঝে হাত ওঠিয়ে ওঠিয়ে পড়ছে খুবই মনোযোগী হয়ে। পাতলা ওড়নাটা বুক থেকে সরে যেতেই আবার ঠিক করে নিয়ে পড়ছে।
ইভান লোভাতুর দৃষ্টি তে চেয়ে আছে। মেয়ে দেখলে তাঁর নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে খুবই কষ্ট হয়।
বাইরে সব অকাজ-কুকাজ করে বেড়ায় বড় বাড়ির ছেলে বলে কেউ কিছু বলতে পারেনা। তাঁর দৃষ্টি যার ওপর একবার পড়ে তাঁকে নিজের স্বীকার করেই ছাড়ে। এবার তাঁর দৃষ্টি পড়েছে এমন একজনের ওপর যাকে নিজের কাছে বন্দি করাটা তাঁর বা হাতের খেল ভেবেই বাঁকা হেসে নিচে নেমে আসলো।
নিচে এসে বললো হেই মুসকান,,,
মুসকান ভয় চোখে তাকিয়ে ওঠে দাঁড়ালো।
মুসকানের ও ইভানকে কেমন একটা লাগে।
ইভানের তাকানোটা তাঁর পছন্দ হয় না। মনে হয় চোখ দিয়ে গিলে খাচ্ছে তাঁকে।
আমি একটা সমস্যায় পড়েছি তুমি কি আমাকে হেল্প করবে,,,
মুসকান আমতা আমতা করে বললো কি,,,
ইভান বললো আমার খুব ইম্পরট্যান্ট একটা জিনিস খুঁজে পাচ্ছি না,তুমি কি আমাকে হেল্প করবে খুঁজতে।আসলে সবাই ঘুমিয়ে গেছে,তুমি ছাড়া কেউ জেগে নেই, না হয় ওদেরই বলতাম।
মুসকান কিছু বলার আগেই ইভান মুসকানের ডানহাতটা চেপে ধরলো চলো তো তারাতারি খুঁজতে হবে ওটা লাগবে আমার কালকেই।
ইভানের স্পর্শ পেতেই মুসকানের শরীর টা শির শির করে ওঠলো। কেমন একটা ঘৃনা হতে লাগলো। অস্বস্তি ছড়িয়ে পড়লো পুরো শরীর জুরে।
গলাটা শুকিয়ে গেছে,খুব ভয় করছে তাঁর। হাতটা এতো শক্ত করে চেপে ধরেছে যে ছাড়াতেও পারছে না।
ওনি আমার হাত ধরলে তো এতো অস্বস্তি হয় না,এতোটা খারাপ লাগায় মন ছেয়ে যায় না।
ওনি স্পর্শ করলে মনে হয় কতোটা পবিএ মন নিয়ে আমায় স্পর্শ করেছে, মনে কোন প্রকার ভন্ডামি নেই, কোন প্রকার খারাপ নেশা নেই। কিন্তু এর স্পর্শে এমন লাগছে কেনো। ঠিক যেমন টা ভুড়িওয়ালা লোকটার স্পর্শে লেগেছিলো।
ইভান নিজের রুমে ঢুকেই মুসকানের হাত ছাড়িয়ে রুমের দরজাটা লক করে দিলো।
দরজা লাগানো দেখে ভয়ে মুসকানের অন্তর আত্মা কেঁপে ওঠলো।
চলবে………