#হয়তো_তোমারি_জন্য💙
#Part_02
#Writer_Ayana_Ara (ছদ্মনাম)
[আগেরটা ছোট হয়ে গিয়েছিলো তাই আবার পোস্ট দিয়েছি]
গেট ধরে আমি,ইলমা আপু আরো কিছু বোনেরা দাঁড়িয়ে আছি। আমাদের বিশ হাজার টাকা দাবি কিন্তু তারা দিতে নারাজ কিন্তু আমরাও নাছোড়বান্দা যতক্ষন না টাকা দিবে তার গিন্নিকে নিয়ে যেতে দিবো না।
সায়ান ভাইয়া কাঁদো কাঁদো মুখ করে বলল,”ভাই দিয়ে দে টাকা। আমারে কতক্ষন যাবত দাড়া করায় রাখছে!”
আমি দাঁত কেলিয়ে বলি,”তো দেন না মিয়া। টাকা দেন গিন্নি নিয়া যান।”
আমার কথায় সবাই হেসে উঠলো। অতঃপর তারা হার মেনে নগদ বিশ হাজার টাকা দিয়ে ভিতরে ঢুকে। গ্রামের বিয়েতে এইভাবে টাকা আদায় করার মজাই আলাদা।
আমি ভিতরে যেতেই আমাকে হেঁচকা টান দিয়ে আড়ালে নিয়ে যেয়ে ফিসফিসিয়ে বলে,”কিরে টাকা লুট করতে তো ভালোই পারিস!তা কতোবার লুট করেছিস!”
চির পরিচিত কন্ঠস্বর শুনে চমকে উঠি। বুঝতে পারি এটা আর কেউ না আয়াশ ভাইয়া। আমি মুচকি হেসে বলি,”হ্যা তোমার মতো তো আর আমি রশকষহীন মানুষ না যে সাধু সেজে বসে থাকবো।”
বলে ভোঁ দৌড় দিলাম। এক দৌড়ে ইলমা আপুর সামনে এসে হাঁপাতে লাগলাম। ইলমা আপু এতক্ষন ছবি তুলছিলো। আমাকে হাঁপাতে দেখে আমার কাছে এসে বলে,”কিরে আয়ানা হাপাচ্ছিস কেনো?”
আমি নিজেকে সামলে বললাম,”না আপু। কি করছিলে?”
ইলমা আপু সেলফি তুলতে তুলতে বলে,”তোর আসার আগ পর্যন্ত ছবি তুলছিলাম। এখন তুই আমাকে একটা ছবি তুলে দে।”
ইলমা আপুকে ছবি তুলে দিয়ে আমি মুন আপুর কাছে গেলাম। মুন আপুকে সায়ান ভাইয়ার পাশে বসানো হয়েছে। দুইজন বেশ মানাচ্ছে। মানাবেই না কেনো প্রেমের বিয়ে তাদের! মুন আপুনি আর সায়ান ভাইয়ার ছবি তুলছে ফটোগ্রাফারা।
আমি অন্যদিকে চলে গেলাম। চাচিরা আর মা মিলে বসে গল্প করছে। আমিও গিয়ে তাদের গল্পে যোগ দিলাম।
৫.
তিন কবুলে মুন আপু আর সায়ান ভাই এক পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ হলো। আজ থেকে তারা স্বামী স্ত্রী।
বিয়ের পর্ব শেষ হতেই খাওয়ার পর্ব শুরু হয়ে যায়। সব গ্রামের মানুষেরা খাওয়ার জন্য বসে পড়েছে। আমরাও বসে পড়ি। আয়াশ ভাইয়া ঠিক আমার পাশের চেয়ারে বসেন। আমার অস্বস্তি বোধ হতে লাগে হঠাৎ করে।তবুও চুপচাপ খেতে লাগলাম।
খাওয়ার পর্ব শেষ হতেই শুরু হয় বিদায় পর্ব। মুন আপুর জন্য কষ্ট লাগছিলো অনেক। মুন আপু অনেক কান্না করে। অবশেষে সেও চলে যায় গাড়িতে উঠে। আয়াশ ভাইয়ার মুখে কোনো কষ্টের ছাপই দেখতে পাচ্ছিলাম এ কেমন ভাই?বোনের বিয়ে হলো আর একটু কাঁদলোও না?
🍁🍁🍁🍁
রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে কোনোমতে বিছানায় গা এলিয়ে দেই। সারাদিনে অনেক দখল গিয়েছে যার জন্য শুতেই ঘুম চলে আসে।
সকালে_
শীত অনুভব হতেই পিটপিট করে চোখ খুললাম। না চাইতেও ফোনটা হাতে নিয়ে উঠে দেখলাম আটটা ত্রিশ বাজে। লাফ দিয়ে বিছানা থেকে ফ্রেশ হয়ে নিচে গিয়ে দেখলাম সবাই ব্রেকফাস্ট করছে। আমাকে আসতে দেখে আম্মু বলল,”জলদি আয় আয়ানা ব্রেকফাস্ট করতে হবে তো একটু পর আবার মুনের শশুড় বাড়ির উদ্দেশ্যে বের হতে হবে।”
আমি ব্রেকফাস্ট সেরে নিলাম।
৬.
প্রায় তিন ঘন্টা জার্নির পর মুন আপুর শশুড় বাড়ি এসে পৌছেছি। বাড়িটা দেখতে খুব সুন্দর। আমরা ঢুকতেই মুন আপুর শশুড় বাড়ির লোকজন আপায়্যন শুরু করে দেয়।
মুন আপুকে সায়ান ভাইয়ার পাশে বসানো হয়েছে। মুন আপু নতজানু হয়ে আছে মনে হচ্ছে লজ্জা পাচ্ছে।
__________
বাসায় এসেছি অনেকক্ষন হয়েছে দুইদিন এইখানে থাকবো। আমি বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে নিচে গেলাম। আয়াশ ভাইয়া ফোন টিপছে। বুঝি না সারাদিন এই ফোনের ভিতর ঢুকে থেকে এই লোক কি মজা পায়?
আমি কিচেনে চলে গেলাম। দেখলাম ডিনার তৈরি করছে ফুপি,চাচি আর আম্মু। আমিও তাদের সাহায্য করলাম। ডিনার বানানো শেষে সবাই খেতে লাগলাম।
খাওয়া শেষে আমরা যে যার রুমে চলে গেলাম। আমি রুমে এসে সোজা বেলকনিতে চলে গেলাম। হঠাৎই আমার নজরে এলো ইজি চেয়ারে বসে থাকা আয়াশ ভাইয়ের দিকে। উনি নিষ্পলক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন যার জন্য আমি ইতস্তত বোধ করতে লাগলাম। জলদি নিজের চোখ তার থেকে সরিয়ে রুমে এসে পড়লাম।
_________
আয়াশ বোকা চোখে আয়ানার যাওয়ার পানে তাকিয়ে রইলো বুঝলো না এইভাবে চলে গেলো কেনো?তখনই আয়াশের ফোন বেজে উঠে ফোন হাতে নিয়ে দেখলো ডিরেক্টর ফোন দিয়েছে। ও ফোন উঠাতেই উনি বললেন,”আয়াশ তুমি কালকের মধ্যে ঢাকা ব্যাক করতে পারবা?”
আয়াশ অবাক হয়ে বলে,”স্যার আমি ঢাকা ব্যাক তো পরশু করবো।”
রূপম সেন চিন্তিত হয়ে বলেন,”রিলিজের ডেট আগে পিছে হয়ে গিয়েছে একটু চেষ্টা করো ঢাকা ব্যাক করার।”
আয়াশ ইজি চেয়ার ছেড়ে উঠে রুমের দিকে হাঁটা দিয়ে বলে,”স্যার চিন্তা করবেন না কালই আসার চেষ্টা করবো আমি।”
বেশ কিছুক্ষন কথা বলে রেখে দেয়।
সকালে_
শীত শীত ভাব। চারদিকে হিম স্নিগ্ধ বাতাস বইছে। পাখির কিচিরমিচির। বিয়ে বাড়ির কোলাহলে আমার ঘুম ছুটে যায়। উঠে ফ্রেশ হয়ে নিচে যেয়ে দেখি সবাই বাড়ি যাওয়ার জন্য ব্যাগ পত্র গুছাচ্ছে। আমি ভ্রুকুচকে তাকিয়ে বলি,”কোথায় যাচ্ছো তোমরা?”
মা বলেন,”আমরা ঢাকা ব্যাক করছি। তোর আয়াশ ভাইয়ের কাজ আছে তাই আমরাও তোর ফুপিদের সাথে ব্যাক করছি।”
আমার মন খারাপ হয়ে যায় হঠাৎ। বিয়ের জন্য গ্রামে মজা করতে পারিনি, উড়োচন্ডির মতো মানুষের বাড়িতে বাড়িতে যেয়ে ঘুরতে পারি নি ভেবেই মন খচ খচ করে উঠছে।
আমাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে মা বলেন,”আয়ানা যা রেডি হো একটু পর বের হবো আমরা।”
আমি মাথা নাড়িয়ে চলে যাই রেডি হতে।
৭.
রেইলওয়ে স্টেশনে এসেছি বেশ কিছুক্ষন আগেই!দাঁড়িয়ে আছি , টিকেট কিনতে গিয়েছে। আমরা ট্রেনে উঠার পর জানতে পারি ট্রেন আরো পাঁচ মিনিট পর ছাড়বে। আয়াশ ভাই বিরক্তি নিয়ে বলেন,”বলেছিলাম না প্লেন দিয়ে আসতে?তাহলে এতক্ষনে বাসায় পৌছে যেতাম।”
বড় ফুপি আয়াশ ভাইয়াকে ধমকে বলেন,”তুই কি বুঝবি ট্রেনে ছড়া ঢাকায় যাওয়ার মজা?সবসময় তো খিটখিটে মুড নিয়ে থাকিস।”
আয়াশ ভাই প্রতুত্তরে কিছু না বলে হাত বুকে গুজে রাখেন। এমতাবস্থায় আমার হাসি পাচ্ছে। আয়াশ ভাই আমার দিকে একবার কড়া দৃষ্টি নিক্ষেপ করে দাঁতে দাঁত চেপে বলে,”তোর হাসি পাচ্ছে?দাড়া একবার বাসায় যেয়ে নেই তোর হাসি ছুটাচ্ছি।”
আমি সাথে সাথে চুপ হয়ে যাই তা দেখে আয়াশ ভাই বাকা হেসে বসে থাকেন।
দুই ঘন্টা জার্নির পর ঢাকা এসে পৌছাই আমরা। বড় ফুপির অনেক শখ ছিলো ভাইয়ের সাথে বাড়ি করবেন তাই আমাদের বাসার পাশেই তারা নিজেদের বাড়ি করেন।
বাসায় এসে আমি নিজের রুমে চলে যাই শাওয়ার নিয়ে বের হই সোজা।
নিচে চলে যাই। আম্মু খাবার তৈরি করছে ফুপিরা আমাদের বাসায় এসেই খাবে আজ। ওই বাড়ি থেকে রাতের খাবার নিয়ে এসেছিলো তাই এখন আর খাবার না বানিয়ে গরম করছে আম্মু।
কিছুক্ষন ফুপিরাও চলে আসলো। আমরা সবাই একসাথে খেতে বসলাম। খাওয়া দাওয়া শেষে ফুপি আমাদের বাসায় গল্প করেন। গল্পের এক পর্যায়ে তিনি বলেন,”কালকে আমাদের বাসায় দাওয়াত আছে, মুনের শশুড় বাড়ির লোকজনেরা আসবে। তোরাও উপস্থিত থাকিস কিন্তু।”
কাল মুন আপুর সাথে দেখা হবে ভেবেই কেমন আনন্দ লাগলো। কত শত গল্প করবো মুন আপুর সাথে ভাবতে ভাবতে রুমে চলে আসলাম……
#চলবে
[রিচেক দেওয়া হয়নি ভুল ক্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন, হ্যাপি রিডিং]