হয়তো_তোমারি_জন্য
#সামানিয়া_জামান_প্রজ্ঞা
[পর্ব – 02]
এইইই আম্মু তুমি ওই ছেলের জন্য আমার উপর রাগ ঝাড়ছো? আজিব তো? দেওনা এদিকে তরকারির বাটিটা চলে যাচ্ছো কেনো? কি অদ্ভুত সবাই!
সেদিন পুরোটা সময় আম্মু আমাকে রাগ দেখিয়েছিলো। আমার আর কি করার চুপচাপ খেয়ে দেয়ে রুমের দরজা লাগিয়ে ফোন স্ক্রল করতে করতে দুইটার দিকে ঘুমিয়েছি। সকালে ঘূম থেকে উঠতে লেট হয়ে গেলে আম্মুর রক্তিম বর্ণ চোখ দেখে ভয়ে সুর সুর করে সমস্ত কাজে হেল্প করার কথা বলি। আম্মু তখন দাতঁ চেপে বলতে লাগল,
-“আর সাহায্য হাহ্!! তোর জন্য বাসার কাজ বসে থাকে নাকি রেহানা সেই সকালে এসে সব কাজ সেরে কখন চলে গেছে। আর মহারানি এখন ঘুম থেকে উঠে ন্যাকা করছে। নিজের কাজটাও তো করতে পারিস। বিছানায় লেহেঙ্গা রেখেছি গোসল সেরে রেডি হয়ে নিচে নাম। একটুয়ো দেরী যেনো না হয়। তোর তো আবার সবকিছুতে দেরী। তোর মাহিমা আন্টি একটু তাড়াতাড়ি যেতে বলেছে। কারন অনুরাগ নাকি দুপুরের মধ্যে পৌঁছে যেতে পারে। ”
উফফফ এই অনুরাগ নিয়ে আর কতো পরে থাকবে আম্মু? একটু নিজের মেয়ের দিকেও তো দেখো। তোমার ইগনোরে মনে হচ্ছে আমি তোমার মেয়ে নয় ডাইনি বান্ধুবী!
-“এক থাপ্পড় দিবো অসভ্য মেয়ে। এই আম্মুকে ডাইনি বান্ধুবী কে বলে হ্যা? আমি তোর বান্ধুবী?”
যাহহহ বাবাহ্ আমি কখন তোমাকে ডাইনি বান্ধুবী বললাম? কথা না বুঝে চিল্লাও ক্যান? আমি বললাম তুমি যেইরকম বিহেভ করছো অনুরাগ ভাইয়ার জন্য আমার মনে হচ্ছে তুমি আমাকে তোমার ডাইনি বান্ধুবী ভাবছো।না বুঝে খালি কথা বলে ভাল্লাগে না।
-” এবার আমার হাতের মার খাবি কিন্তু তুষ!গেলি এখান থেকে?”
কি হয়েছে আমার তুষের? আমার প্রিন্সেসকে মারার কথা বলছো কেনো তৃণা?
আমার মাথায় হাত দিয়ে কথা গুলো বলল আব্বু।
আমি আরো আহ্লাদি হয়ে আব্বুকে জরিয়ে বললাম দেখনা আব্বু ‘আম্মু অনুরাগ বলে বলে মাথা খারাপ করে দিলো। আমি নিষেধ করছি তো আমাকে মারার কথা বলছে আআআআআ।
-” শুরু হয়ে গেলো ন্যাকামো। বাবা মেয়ে পুরোপুরি এক ধাচের। এগুলো কিছু না শুধু শাসনের অভাব। নাচো আরো মেয়েকে নিয়ে যতপারো।”
আম্মু চলে যেতেই আমি আর আব্বু হো হো করে হেসে ফেললাম। এই একটা মানুষ আমার পৃথিবী। আমাদের মাঝের বন্ডিংটা এতো ভালো যে আমি সবসময় দোয়া করি আল্লাহ্ আমার আব্বুকে নেকহায়াত দান করুন আর হেফাজত করুন সবসময়। আম্মুরজন্যও একি দোয়া করি কিন্তু আব্বু প্রথমে। 😁
-” মামুনি যাও রেডি হয়ে নেও নাহলে অনেক দেরী হয়ে যাবে এমনিতেই তোমার আয়মান আঙ্কেল অনেক আগে যেতে বলেছে। তোমার মামুনি কিন্তু আবার রাগ করবে দেরী হলে।”
ওকে আব্বু আমি গেলাম তুমি ও রেডি হয়ে নেও।
-” আমি তো রেডি আছি। তোমার আর তোমার মায়ের সময় লাগে বেশি আরেকটু আগে থেকে রেডি হওয়া উচিত ছিলো।”
সমস্যা নেই আব্বু আমি এখুনি যাচ্ছি যাস্ট শাওয়ার নিবো লেহেঙ্গাটা পরে গাড়িতেই হালকা সেজে নিবো বলে উপরে এক দৌড় লাগালাম।
আব্বু হাসতে হাসতে বললেন,
-” আমার ছোট্ট প্রিন্সেসটা বড় হবে কবে?”
______________
তৃষাতুর!!!!!!!!!!!
-“হলো আর কতোক্ষণ লাগবে? আম্মু আব্বু ওয়েট করছে তো নাকি?”
এইতো আম্মু হয়ে গেছে আসছি আর পাচমিনিট!
-“পাঁচমিনিট করতে করতে একঘন্টা হয়ে গেলো খেয়াল আছে?”
আসলেই তো অনেক লেট হয়ে গেছে আমি হালকা মেকআপ করে হাতের পার্স নিয়ে নিচে নামলাম।
আব্বু সামনে বসল আমি আর আম্মু পিছনের সিটে বসলাম। গাড়িতে উঠতেই আম্মুর রাঙা চোখের দিকে তাকিয়ে শুকনো একটা হাসি দিয়ে বললাম ‘লেট হয়ে গেছে না?’
-” না সোনা লেট হয়নি। অনেক ফাস্ট এসেছো তুমি!”
আম্মুর কথায় মুখটা কাচুমাচু করে অন্যদিকে ফিরলাম। আয়মান আঙ্কেলের বাসা বেশিদুর না হওয়াই বিশমিনিটের মধ্যে পৌছেঁ গেলাম আমরা। একটা বাংলোর সামনে আব্বু গাড়ি দাড়ঁ করলেন। বাংলাটা যেমন সুন্দর তেমন বাহারি ডিজাইনের দ্বারা কারুকাজ করা। তারওপর লেভেন্ডার আরো অনান্য বিদেশি ফুল দিয়ে বাংলোটা ভালো মতো সাজানো হয়েছে। সবমিলিয়ে ভিষণ সুন্দর লাগছে। আব্বু আর আয়মান আঙ্কেল প্রাই অনেক বছরের বিজনেস পার্টনার এজন্য তাদের মাঝে ভাই ভাইয়ের সম্পর্ক। আম্মু আর মাহিমা আন্টির মাঝেও বোনের সম্পর্ক বিরাজমান কিন্তু আয়মান আঙ্কেলের ছেলে আর আমার মাঝে কোন সম্পর্কই বিরাজ মান না। হাহ্ থাকবে কি করে আমার জানা মতে আমি ওকে দেখিনি পযর্ন্ত।
গাড়ি থেকে নামতেই আয়মান আঙ্কেল সহ সবাই এগিয়ে আসলো আমরা গিফট্ গুলো দিয়ে ভিতরে প্রবেশ করলাম। বাইরে থেকে যতটা সুন্দর লাগছিল বাংলো ভিতরের ডেকরেশনটা আরো সুন্দর ছিলো।
পার্টিতে আরো একটি সারপ্রাইজ পাই আমি। সেটা হলো মেধা। মেধা আমার বান্ধুবী,ক্লাসমেট, একদম কলিজার বান্ধুবী। মিনহাজ আঙ্কেল আর রেশমি আন্টির একমাত্র মেয়ে। ওরাও নাকি ইনভাইটেড। ওকে পেয়ে খুশি হয়ে একপ্রকার জরিয়ে ধরি। ব্যাস পার্টিতে বান্ধুবীকে পেয়ে দুজনে একসঙ্গে সময় কাটাতে লাগলাম।
_______________
প্রাই দীর্ঘ অপেক্ষার অবশন ঘটিয়ে সাদা ঝকঝকে ল্যাম্বরগিনি কারে আগমন করলেন অনিররুদ্ধ জুবায়ের। অরুফে অনুরাগ ভাইয়া। উনাকে দেখে সবাই বিশাল ভাবে শকড্। আমি তো প্রচুর লেভেলে শকড্। যেমন লম্বা চওড়া তেমন দেখতে মিষ্টি। আমি গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারি এখানকার সব মেয়েরা উনার উপর ক্রাশড্ হয়ে গেছে। অনুরাগ ভাইয়া কার থেকে নামার সঙ্গে সঙ্গে মেয়েরা মাথায় ফুল ছিটিয়ে ওয়েলকাম জানাতে লাগলো। উনি গাম্ভীর্য ভাবে কারো দিকে না তাকিয়ে হাত উচিয়ে ফুল ছিটাতে নিষেধ করলেন। মেধাতো আমাকে ধাক্কা দিয়ে বলল
-“দোস্ত ছেলেটা কি হ্যান্ডসাম, সেক্সি মাইগড। এই আমার না লাভ এট ফাস্ট সাইট হয়ে গেছে তুষ!”🙈
মেধার কথায় মুখটা অন্যদিকে ঘুরিয়ে বললাম লাভ এট ফাস্ট সাইট হয়েছে দেখ পাত্তা দেয় কিনা। শুনেছি অনেক রাগি আর অহংকারী। এসব ছেলেদের থেকে ডিস্টেন্স বজাই রাখবি।
মেধাকে উপর উপর এগুলো বললেও বাস্তবে আমি ও কিন্তু অনুরাগ ভাইয়াকে দেখে ক্রাশ খাইসি। ক্রাশ খাওয়ারই কথা এতো সুন্দর ভদ্র,সাবলীল,সুশীল সুশিক্ষিত,মার্জিত ছেলেকে দেখে যেকোন মেয়ের বুকের বা পাশে ব্যাথা হতেই পারে। আমার ও ব্যতিক্রম কিছু না কিন্তু কেনো যেনো মনে মনে স্বিকার করতে অসুবিধা হচ্ছে।
আমি আর মেধা উনার সামনে ছিলাম উনি আমাদের পাত্তা না দিয়ে আয়মান আঙ্কেল আর মাহিমা আন্টির কাছে গেলেন। উনার এটিটিউডে মেধা তো পুরাই দেওয়ানা হয়ে গেলো। এদিকে আমার কেমন যে রাগ রাগ ফিল হচ্ছে অনুরাগ ভাইয়ার উপর।
আয়মান আঙ্কেল স্পিকার নিয়ে সবার উদ্দেশ্যে বললেন,
-” আসসালামু আলাইকুম। সবাই নিশ্চয় ভালো আছেন। আমি ও ভালো আছি। এই পার্টিটা আমার ছেলে অনিরুদ্ধের জন্য থ্রো করা হয়েছে।আমার ছেলে অনিরুদ্ধ জুবায়ের দীর্ঘ আটবছর পর দেশে ফিরেছে। এতোদিন বিদেশে থাকার পর আমার ছেলের আমাদেরকে মনে পরেছে। তাই ভাবলাম আজকের দিনটাকে একটু সরনীয় করা যাক।এইজন্যই এই বিশাল পার্টির আয়োজন। আরেকটি কথা না বললেই নয় এই যে এতোবড় পার্টি এর আয়োজন কিন্তু একদিনে করা পসিবল ছিলনা কিন্তু আমার বন্ধু তূণর্ব চৌধুরীর সাহায্যে এটা পসিবল হয়েছে। চারিদিকের হাত তালিতে পুরো বাংলোটা জমজমাট হয়ে গেছে। এদিকে আমি শুধু অনুরাগ ভাইয়কেই পরোক্ষ করছি কিন্তু উনার কোন দিকেই আগ্রহ নেই কেমন গাম্ভীর্য পূর্ন মূখে হাতে থাকা ঘড়িটায় টাইম দেখতে ব্যাস্ত। পার্টির লাস্ট পযার্য়ে সবাই যখন খাওয়া দাওয়ায় ব্যাস্ত মাহিমা আন্টি আর আয়মান আঙ্কেল আমাকে অনুরাগ ভাইয়ার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়।
-” অনুরাগ এইযে এটা হচ্ছে তোর তূর্ণব আঙ্কেল আর তৃণা আন্টির মেয়ে তৃষাতুর। তোর মনে আছে ওকে? তুই যখন আস্টেলিয়ায় চলে যাস তখন অনেক ছোট ছিল আমাদের তুর!! ”
আন্টির কথায় উনি শুধু একবার আমার দিকে তাকিয়েছিলেন। উনার তাকানোতে একধরনের অদ্ভুত কিছুর আকাঙ্ক্ষা ছিল। উনি আমার চোখের দিকে বেশিক্ষণ তাকাতে পারেনি দ্রুত চোখ নামিয়ে ফোনটা নিয়ে কার সঙ্গে কথা বলতে একটু দুরে চলে গেলেন। আমি হা করে তাকিয়ে রইলাম কি অদ্ভুত কোথায় পরিচিত হবে তা নয় এমন ইগনোর করার কি আছে? সবসময় এটিটিউড হুউউ এসব ছেলেদের চেনা আছে। আমি ও মেধার কাছে চলে গেলাম। আমাকে দেখে মেধা অদ্ভুত একটা বাইনা করে বসল,
-” তুষ তোর ওই অনিরুদ্ধ ভাইয়ার সঙ্গে আমার পরিচয় করিয়ে দেনা। ইশশ উনি কতো হ্যান্ডসাম। আমার যদি এমন একটা বয়ফেন্ড থাকতো না তবে কতো ভালো হতো বল?”
নিজে এখনো পযর্ন্ত কথা বলতে পারলাম না সেই আমি নাকি এখন যেচে ওই এটিটিউডের ডিব্বাটার সঙ্গে ওর পরিচয় করায় দিবো হুউউ আসছে!!
-“এইইই তুষ কি ভাবছিস চল না পরিচয় করায় দিবি!”
দেখ আমি পারবো না। তোর যদি এতো ইচ্ছা থাকে ওর সঙ্গে পরিচিত হওয়ার তবে তুই যা আমাকে টানছিস কেনো? আমি এগুলোর মধ্যে নাই।
-“হয়েছে তুই এতো রাগ করছিস কেনো? আমি কি অন্যায় কিছু বলেছি নাকি?”
মেধার কাদোঁ কাদোঁ চেহারা দেখে হেসে ফেললাম আমি। আমাকে হাসতে দেখে মেধাও হেসে ফেলল।
সেদিন উনি পার্টিতে কিছুটা সময় দিয়ে ভিতরে চলে যান। আর একবারো এমুখো হয়নি।এদিকে সব রিলেটিভরা চলে গেলে আমরাও আসার জন্য পা বাড়ায়। আব্বু আর আম্মু আয়মান আঙ্কেল আর মাহিমা আন্টিকে কালকের জন্য দাওয়াত করলেন যেনো অনুরাগ ভাইয়া সহ উনারা আমাদের বাড়িতে মাস্ট আসে। আঙ্কেল আন্টি হেসে সম্মতি দেয়। আমরাও গাড়িতে চড়ে রওনা দেওয়ার প্রস্তুতি নিলাম।যাওয়ার পথে পুরো বাংলোটার দিকে চোখ বুলালাম। হঠাৎ ভাইয়ার রুমের বেলকুনিতে অনুরাগ ভাইয়াকে দেখলাম উনি এদিকেই তাকিয়ে আছেন। উনাকে তাকিয়ে থাকতে দেখে আবার অন্যদিকে চোখ ফিরলাম।
~ চলবে ইনশাআল্লাহ্
[ গল্পটা কেমন লাগলো জানাবেন! আর গল্পের ভুল ট্রুটি তুলে ধরার অনুরোধ রইল ]