হয়তো_তোমারি_জন্য
#সামানিয়া_জামান_প্রজ্ঞা
[পর্ব – 05]
-“কেমন শাষন করেন আপনারা? যে একবার নিষেধ করার পর ও অন্য একটা মেয়ের পিছনে পরে থাকে?
ওই রাসকেলটা তুষের হাত ধরেছে ওকে তো আমি বলে আবারো এগিয়ে যেতে লাগলো।
ইমান নামের ছেলেটা তখন ভয়ে স্যারদের পিছনে চলে যাই!
প্রত্যেকটি স্যার উনার কথায় কোন রকম উত্তর দিতে পারছেন না। সবাই উনাকে খুব ভালো মতো চিনতে পেরেছে। উনাকে কোনরকম বুঝিয়ে সুঝিয়ে স্যাররা শান্ত করলেন। আমি তো নিরব দর্শকের মতো চোখের পানি ফেলতে লাগলাম। আম্মু যদি এগুলো জানতে পারে আমাকে বকা দিবে প্রচুর। আমি উনাকে কিছু বলতে যাবো তার আগেই উনি রেগেমেগে গাড়িতে করে চলে গেলেন। অপরাধির মতো উনার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে কাদতেঁ লাগলাম। আমাদের ডিপার্টমেন্টের একজন স্যার আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,
-“কেঁদো না তৃষাতুর! অনিরুদ্ধ জুবায়ের কে হয় তোমার?”
আমি চোখ মুছে বললাম,
-” আব্বুর ফেন্ড আয়মান আঙ্কেলের ছেলে। ”
-“বুঝেছি রিলাক্স বসো। বসো এখানে। এই কেউ পানি নিয়ে আসো।”
পানি খেয়ে কান্না থামালাম। মেধা সবট দেখছিল ও অনুরাগ ভাইয়ার রাগ দেখে চরম লেভেলের শকড্। ও আমাকে শান্ত করতে বলল,
-“তৃষা যা হয়েছে ভুলে যা। সব ঠিক হয়ে যাবে।”
আমি ওকে জরিয়ে ধরলাম। স্যার আব্বু আম্মুকে জানাতে চাইলে মেধা নিষেধ করে। এদিকে কিছু ভালো লাগছিল না আমার। সেদিন ক্লাসে কোন রকম মনোযোগ দিতে পারিনি। স্যাররা ও আমাকে কিছু বলেনি। ক্লাস করে বাড়ি ফিরি আমি তারপর সোজাসুজি রুমে চলে যাই সেদিন রাতে খাই ও নি। আম্মু আব্বু ডেকেছিল খিদে নাই বলে পাঠিয়েছিলাম। তারপর থেকে একমাস হয়ে যাই অনুরাগ ভাইয়ার সঙ্গে কথা হয় না আমার। ভাইয়া ও আসেনি একবারো আমাদের বাসায়। অবশ্য আয়মান আঙ্কেল আর মাহিমা আন্টি কয়েকবার এসেছিল আমাদের বাসায়। আমি ভদ্রতার খাতিরে আসতাম কথা বলতাম। আবার রুমে চলে যেতাম।সেই টাইমে কলেজেও খুব একটা যেতে চাইতাম না গেলেও মেধার সঙ্গে দুইএকবার। আব্বু আম্মু কিছু বললে বলতাম অসুস্থ। তখন তারাও জোর করতো না।
অন্যদিকে অনুরাগ ভাইয়া ল্যাবে ভিতরে ব্যস্ত থাকতো সারাক্ষণ। মাঝে মাঝে নিউজে উনাকে দেখতাম। বড় কোন প্রজেক্টে কাজ করছে মনে হয় উনি। এজন্য এতো ব্যস্ত যে চুল দাঁড়ি কাটার সময় পান না। একদম বড় বড় করে রেখেছেন চুল দাড়িঁ।
উনাকে এমন অবস্থাতেও অনেক সুন্দর লাগে। আসলে আমরা যাকে পছন্দ করি তাকে সব অবস্থাতেই সুন্দর মনে হয়।
_______
এর মাঝে অনেক দিন পার হয়ে যাই। একদিন আমি আর মেধা কলেজ থেকে কচিং করে বাসায় ফিরছিলাম। কলেজ থেকে আমাদের বাসা বেশি দুর না। সেদিন আবার আমাদের নিতে কোন গাড়ি এসেছিল না এজন্য আমরা হেটেঁ আসছিলাম পথে ইমান আর তার কয়েকজন বন্ধুর সঙ্গে আমাদের দেখা হয়। ওরা প্রচুর বাজে কথা বলছিল আমাদের। বিশেষ করে আমাকে। আমরা সবটা শুনে না শুনার ভান করে জোরে হাটতেঁ থাকি। ওরা পিছনে পিছনে চলে আসে। সামনে একটা রিক্সা পেলে আমরা দুজন রিক্সায় চড়ে বসি। ওরা এসে রিক্সা ওয়ালাকে দাড়ঁ করিয়ে আমার হাত ধরে নিচে নামায়। রিক্সা ওয়ালা কিছু বলবে তখনই ওর কয়েকজন বন্ধু রিক্সা ওয়ালার নাকের উপর একটা ঘুষি দেয়। রিক্সা ওয়ালার নাক থেকে রক্ত পরতে থাকে। মেধা কি করবে ভেবে না পেয়ে বলল
-” আমি এখনই পুলিশ আঙ্কেলকে ফোন করছি রাস্তার মাঝে সিনক্রিয়েট বের করছি।”
ওদের মধ্যে একজন আবার ওর ফোনটা কেড়ে নিয়ে
রাস্তায় আছাড় মারে। সঙ্গে সঙ্গে ফোনটা দু টুকরো হয়ে যাই। মেধা কাদতেঁ থাকে। ছেলেটি এবার মেধার উদ্দেশ্যে বলল,
-” যাহহহ এবার তোর বাপকে কল দে।”
মেধা রাগে ওর গালে চড় মারতে যাবে ছেলেটি ওর হাতটা মুচড়ে ধরে। মেধাতো ব্যথায় কাদতেঁ থাকে।
এমন সময় রাস্তা দিয়ে ইনসপেক্টর মাহির যাচ্ছিলো। উনার গাড়ির শব্দে ওরা আমাদের হাত ছেড়ে দেয়। তারপর পালাতে থাকে। ইনসপেক্টর মাহির গাড়ি থেকে নেমে আমাদের চোখে পানি দেখে আর রিক্সাওয়ালা আঙ্কেলকে আহত অবস্থায় দেখে জিগ্যেস করলেন,
-” কি হয়েছে এখানে? এনার কি হয়েছে?”
রিক্সাওয়ালা আঙ্কেলকে উদ্দেশ্যে করে বললেন উনি। তারপর কাদঁতে কাদতেঁ সবটা বললাম আমি।
সবটা শুনে ইনসপেক্টর মাহির বললেন,
-“আমাকে আসতে দেখে পালিয়েছে ওরা? সমস্যা নেই আমি দেখছি ব্যাপারটি। তোমরা গাড়িতে বসো। উনাকে নিয়ে হাসপাতালে যেতে হবে।”
আমরা চুপচাপ চোখের পানি মুছে গাড়িতে উঠলাম রিক্সাওয়ালা আঙ্কেলকে নিয়ে!! এদিকে ইনসপেক্টর মাহির কাউকে ফোন দিয়ে বললেন বনানীর এই সাইড থেকে রিক্সা নিয়ে যেতে। তারপর গাড়িতে উঠে গাড়ি ড্রাইভ করতে শুরু করলেন। অন্যদিকে মেধার হাত মুচড়ে ধরার কারনে মেধা অনেকটা ব্যাথা পাই। এখনো পযর্ন্ত ও কাদছেঁ। ওকে কোন ভাবে থামিয়ে আমরা হসপিটালে পৌঁছে গেলাম। সেখানে ডাক্তাররা রিক্সাওয়ালা আঙ্কেলের চিকিৎসা করতে থাকে। মেধার হাতের জন্য ইনসপেক্টর মাহির অর্থি বিশেষজ্ঞ ডক্টরের কাছে মেধাকে নিয়ে গেলো। ডক্টর মেধার হাত দেখে বললেন,
-” ভয় পাওয়ার কিছু নেই হাত ভেঙে যাইনি । হাতটা মুচড়ে যাওয়ার কারনে ব্যাথা সৃষ্টি হয়েছে। একটা ওষুধ দিচ্ছি ওটা লাগালে ব্যাথা কমে যাবে।”
এদিকে রিক্সাওয়ালা আঙ্কেলের নাকের ইনজুরির জন্য সমস্ত খরচ ইনসপেক্টর মাহির বহন করলেন এবং উনাকে উনার রিক্সা সহ বাড়িতে পৌঁছে দিলেন। যাওয়ার আগে হাতে কিছু টাকা আর ফলমূল ও কিনে দিলেন। সবশেষে আমাদের বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে আমার আর মেধার নাম্বার নিয়ে চলে গেলেন উনি। যাতে ওই ছেলেগুলোকে উনি আইডেন্টিফাই করতে পারে ভালো মতো। আমাদের সঙ্গে উনি আগে থেকে পরিচিত। যখনই কোনো সমস্যায় পরে আব্বু বা আয়মান আঙ্কেল তখনই উনি আমাদের সমস্যা ঠিক করে দেয়। ভিষণ ভালো মানুষ উনি। বাবা মা নেই উনার। তবে আয়মান আঙ্কেল আর মাহিমা আন্টির কাছে উনি ছেলের মতো।আব্বু উনাকে থাকতে বললেন কিন্তু কাজ আছে বলে চলে গেলেন উনি।
এদিকে হালকা কিছু কথা জানালাম আব্বুকে। ওই ছেলেগুলো যে আমাদের হাত ধরেছে অসভ্যতা করেছে এগুলো বলিনি। এগুলো বললে হয়তো আব্বু অনেক রেগে যেতো তাই বলেছিলাম অসভ্যতা করার চেষ্টা করেছে আর রিক্সা ওয়ালাকে মেরেছে।
আব্বু সবটা শুনে রেগে গেছিলো ছেলে গুলোর উপর। তারপর আমি আব্বুকে বললাম ইনসপেক্টর মাহির সবটা দেখবেন বলেছে। আব্বু কিছুটা শান্ত হলেন।
তারপর আব্বুকে বললাম যাতে রিক্সাওয়ালা আঙ্কেলকে কোন কাজ দিতেন উনার জন্য খুব ভালো হতো। যেহুতু আমাদের জন্য উনি ইনজুরিড। আব্বু বললেন সমস্যা নাই আমি উনার জবের ব্যবস্থা করবো আমাদের অফিসে। আমি তো অনেক খুশি হয়ে গেলাম।
___________
অনুরাগ অগ্নিশর্মা হয়ে সোফায় বসে আছে। পাশে বসে মাহির ওকে শান্ত হতে বলছে। ওকে নিশ্চয় আজকের ঘটনার সবটা জানিয়েছে মাহির। মাহির শান্ত গলাই বলল,
-” দেখ অনুরাগ ব্যপারটা সহজ ভাবে নেও। ওই বখাটে ছেলে গুলোর দায়িত্ব আমি নিচ্ছি ওরা আর এমনটা করার সাহস কখনো পাবেনা আমি কথা দিচ্ছি। তুমি প্লীজ বাড়াবাড়ি করোনা। অন্য ক্ষেত্রে সবটা ধামাচাপা দেওয়ার কোন না কোন কারন আমরা খুজে বের করি কিন্তু এক্ষেত্রে কোন কারন দেখাতে পারবো না আমরা।
আর যদি কোন কারন দেখাতে যাই তবে তৃষাতুর আর মেধার একটু প্রবলেম হবে। কারন ছেলেগুলো ওদের সঙ্গে অসভ্যতামি করেছিল এমনকি হাত ধরেছিল!”
অনুরাগ চাপা একটা রাগ নিয়ে বলল,
-” দেখ আমি কিছু শুনতে চাইনা। আমি শুধু আমার সিদ্ধান্ত জানিয়েছি বাকিটা তোর ব্যপার আমি তোর থেকে পারমিশন চাইনি। আমি অন্যায় করলে শাস্তি দিই। এখন শাস্তির সবটা নিভর্র করে অন্যায় এর অপর। ওরা অনেক বাড়াবাড়ি করে ফেলেছে। আমি এতো বাড়াবাড়ি কখনো সহ্য করিনি। আজ ও করবো না। আমার ক্ষমতা সম্পর্কে তো জানিস। আমি কখনো আইনের পরোয়া করিনি আজ ও করবো না।”
অনুরাগের অগ্নিশর্মা কথা বার্তায় মাহির বলল,
-” দেখ বিষয়টি নিয়ে এতো সিরিয়াস হোসনা আমি আছি এর জন্য। ওদের ব্যবস্থা আইন নিবে তুই ওই উচকে পুচকের এর জন্য সময় নষ্ট করিসনা।”
অনুরাগ এবার সোফা থেকে উঠে চিৎকার করে বলল,
-” সিরিয়াস হবো না মানে? ওরা তুর আর মেধার সঙ্গে অসভ্যতা করেছে। এর আগে আমি ওকে ওয়ার্ন করেছিলাম তাও শোনেনি। কোথায় ছিল তোর আইন? দেখ ভালো ভালো বলছি এই ব্যপারে তোর কোন এক্সপেলেইন আমি শুনবো না। তোর নাহয় কোন যায় আসেনা এইব্যাপারে কিন্তু আমার আসে কারন আমি তুরকে পছন্দ করি মাহির। আর মেধা আমার কাছে বোনের মতো। অবশ্য তোর যায় না আসারই কথা কারন তুর আর মেধাতো তোর কেউনা।”
অনুরাগের কথা শুনে মাহিরের বুকের ভেতর টা ধুক করে উঠলো। আসলেই কি তাই? মেধার আর তুরের জন্য ওর যায় আসেনা? তুরকে তো ও বোনের মতো দেখে কিন্তু মেধা? ওর জন্য কি একটুও ফিলিংস আছে ওর? ও কি মিহু বাদে সত্যি কাউকে কখনো ভালোবাসতে পারবে? মিহুকে তো অনেক আগেই হারিয়েছে ও। তারপর থেকে মেয়েদের নিয়ে কোন মাথা ব্যাথা নেই বললেই চলে। কিন্তু অনুরাগ যা বলল সত্যি কি সেটাই?
মাহিরকে কথা বলার সুযোগ না দিয়ে চলে যাই অনুরাগ। ও যে অগ্নিশর্মা হয়ে আছে এ থেকে পষ্ট আজকে ছেলে গুলো বাচতে পারবে না। তাই সে পরবর্তী কাজের জন্য প্রস্তুতি নিতে লাগলো। কিন্তু মনের মাঝে কোন একটা জাইগায় একটা কথা বাজছে তার ‘আসলেই কি তাই মেধার জন্য কি কোন ফিলিংস নেই ওর?’
~চলবে ইনশাআল্লাহ্
[