হয়তো_তোমারি_জন্য
#সামানিয়া_জামান_প্রজ্ঞা
[পর্ব – 06]
মাহিরকে কথা বলার সুযোগ না দিয়ে চলে যাই অনুরাগ। ও যে অগ্নিশর্মা হয়ে আছে এ থেকে পষ্ট আজকে ছেলে গুলো বাচতে পারবে না। তাই সে পরবর্তী কাজের জন্য প্রস্তুতি নিতে লাগলো। কিন্তু মনের মাঝে কোন একটা জাইগায় একটা কথা বাজছে তার ‘আসলেই কি তাই মেধার জন্য কি কোন ফিলিংস নেই ওর?’
আসরাফ কোথায় তুমি? জনকে খবর পাঠাও যেকরে হোক ইমান নামের ছেলেটাকে আমার চাই। আমি যতক্ষণ পযর্ন্ত নিজে হাতে ওকে শাস্তি দিতে পারছি আমি ঠিক থাকতে পারবো না। প্রচণ্ড রাগে অনুরাগের মুখটা লাল হয়ে গেছিলো ওর শরীর কাপঁছিল কারন সে ইমানকে খোঁজ পাচ্ছিলো না। অনুরাগ আসরাফের আশায় না থেকে নিজে গাড়ি নিয়ে বেড়িয়ে পরে। সঙ্গে আসরাফ আসতে চাই কিন্তু অনুরাগ কঠিন করে নিষেধ করে। ল্যাব থেকে বের হতেই ওর জনের সঙ্গে দেখা হয়ে যাই এজন্য অনুরাগ জন সহ কয়েকজনকে সঙ্গে করে নিয়ে যাই।
এদিকে নিজের রুমে বসে উপন্যাস পরছিলাম। কিছুই ভালো লাগছে না। আজকের ঘটনাটা মনের ভিতর বিষণ ঝড় তুলেছে। একটু আগে মেধাকে ফোন করেছিলাম তার হাতের ইনজুরির ব্যাপারে জানতে চাইলে বলল তার নাকি ব্যাথা নেই। ও যে মিথ্যা বলছে এটা বুঝতে আমার বাকি নেই। আমি ও রাগ দেখিয়ে ওরে ঠিক মতো ওষুধ নিতে বললাম। তারপর কিছুক্ষণ কথা বলার পর ফোনটা রেখে উপন্যাসের বই হাতে নিলাম। ‘তোমার নামে সন্ধ্যা নামে ‘ উপন্যাসটা আমার খুব পছন্দের। অলরেডি শেষ করেছি তারপর ও কেনো জানি পড়ার জন্য ওটাই বেস্ট মনে হয়।
_________
ডিউটি থাকাকালীন নিজের ক্যেবিনে বসে থেকে ফাইল চেক করছে মাহির। তার মনটা যতই কাজে ব্যস্ত করার চেষ্টা করছে ততই মনে হচ্ছে ব্যকুল হয়ে উঠেছে। এমন অনুভূতির সঙ্গে সে এর আগেও পরিচিত। কিন্তু সে কোনভাবে মানতে চাইছে না। মেধাকে নিজের লাইফে জরিয়ে সে মেধার কোনো ক্ষতি করতে চাইছে না। ও আজও মিহুকে ভুলতে পারেনি এখনো কোথায় না কোথায় মিহুর মৃত্যুর জন্য নিজেকে দ্বায়ী করে কষ্ট পাই। ওর এই জীবনে সে মিহু ব্যতিত কাউকে আসতে দেয়নি কিন্তু মিহু ওকে ছেড়ে চলে গেছে না ফেরার দেশে। মাঝে মাঝে মাহিরের বড্ড অভিমান হয় তার মিহুর উপর। কেনো সে মাহিরকে একা করে চেলে গেছে এইটা ভেবে।
দুইবছর আগে মাহির আর মিহুর বিয়ে ছিলো ধুমধাম করে। বিয়েতে অনুরাগের ফুল ফেমেলী আর তুরের ফেমেলীর সবাই উপস্থিত ছিল। কিন্তু বিয়ের মাঝপথে বিকট শব্দে গুলির আওয়াজে সবাই চমকে উঠে আত্মীয়স্বজনরা । সবাই ভেবেছিল গুলিটা মাহিরের লেগেছিল। কিন্তু না মাহিরকে বাচাতে গিয়ে ওর সামনে দাড়ায়ঁ মিহু। আর গুলিটা ওর গায়ে লাগে। পুরো বিয়ে বাড়িতে সরগম পরে যায় মুহূর্তের মধ্যে বাড়িতে কান্নার চাপা আর্তনাদ ভেসে আসে। সবাই খুনিকে ছেড়ে মিহুকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পরে এইফাকে খুনি দৌড়ে পালাই। মাহির যেনো স্তব্ধ হয়ে যাই তার চোখ দিয়ে ঝর ঝর করে অশ্রু ফোটা বেরিয়ে যাচ্ছে। মিহুর লাস্ট সময়ে কথা বলতে সমস্যা হচ্ছিলো তারপর ও থেমে থেমে অনেক কষ্টে বলে,
-“আমার এই জন্মে তোমাকে পাওয়া হলোনা। আমাকে ক্ষমা করে দিয়ো। আমি জানি এই ঘটনার পর তুমি আফসেট হয়ে নিজেকে দোষী ভাববে কিন্তু এতে তোমার কোন দোষ নেই। আমার যাওয়ার সময় এসে গেছে মাহির তুমি কি আমাকে একটা চুমু খাবে প্লীজ! আমি যাওয়ার আগে তোমার একটু স্পর্শ পেতে চাই।”
কথা গুলো বলার সময় মিহুর চোখ দিয়ে পানি পরছিল। মাহিরের এসবকিছু দেখে মনে ওর নিশ্বাস বুঝি এখুনি বন্ধ হয়ে যাবে। মিহু কেনো করলো এটা? আদেওকি সে মিহুকে ছেড়ে বাচতে পারবে যে এইভাবে ওকে বাচাতে গিয়ে নিজেকে এইভাবে বলি দিয়ে দিলো?
মাহির মিহুর কপালে চুমু দিয়ে কলে তুলে নেয় হসপিটালের উদ্দেশ্যে যাওয়ার জন্য। কিন্তু মিহু ওকে নিষেধ করে বলল,
-“মাহির আমি জানি আমার আর সময় নেই। আমি এটাও জানি আমি চলে যাওয়ার পর তোমার কি হাল হবে! তুমি আমাকে কথা দেও আমার জন্য নিজেকে কষ্ট দিবেনা। অন্যএক শান্ত শীষ্ঠ পরীর মতো মেয়েকে বিয়ে করবা। আমার জন্য দুঃখ করবা না?”
-“আমি তোমার কিছু হতে দিবো না মিহু! আমার উপর ভরসা রাখো এই কে কোথায় আছো গাড়ি বের করো।”
বলেই মিহুকে কলে নিয়ে গাড়ির দিকে এগুলো। প্রত্যেকটা কথা বলার সময় মাহিরের চোখদিয়ে অশ্রু গরতে থাকলো। তার মধ্যে এক ফোটা অশ্রু মিহুর গালে পরতে ও একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে অন্যএক পৃথিবীতে পা রাখলো যেখানে কেউ একবার প্রবেশ করলে আর ফিরতে পারেনা। মিহুর নিশ্বাস থেমে যাওয়ায় মাহির ও স্টপ হয়ে যাই। গাড়িতে সবেমাত্র উঠতো কিন্তু ভাগ্যের নিম্র্ম পরিহাসে আজ সে তার ভালোবাসা মিহুকে হারালো। সে ওখানে ধপ করে বসে পরলো তারপর মিহুকে নিজের সঙ্গে মিশিয়ে নিলো। চুপচাপ চোখের পানি ফেলতে ফেলতে সে জোরে চিৎকার করে কেদে উঠলো।
ওই ঘটনার পর থেকে মাহির অনেকটা চুপচাপ হয়ে যাই। সেই পুরোটা সময় ওকে আয়মান আঙ্কেল আর মাহিমা আন্টি মাহিরকে সামলাতে থাকে। এভাবে থাকতে থাকতে ওর হ্দয় শক্ত পাথরে পরিনিত হতে থাকে। মেয়েদের প্রতি অসম্মান না থাকলেও সে তার আশেপাশে কোন মেয়েকে পছন্দ করতো না। দুইবছর পার হলে আমাদের সুত্র ধরে মেধার সঙ্গে পরিচয় হয় উনার। মেধাও উনাকে দেখে পছন্দ কলে ফেলে কিন্তু উনার অত্যন্ত কঠিন আচরণে মেধা ও নিজেকে যথাসম্ভব উনার চেয়ে দুর রাখার চেষ্টা করতো।
মেধার সঙ্গে কঠিন গলাই কথা বললেও ইন্সপেক্টর মাহির বুঝতে পারে ও অনেকটা আলাদা মেয়ে। ওর সঙ্গে মিহুর ভিহেভ অনেক টা মিলে যাই। এটা মাহিরের জন্য বেশ অসস্থিকর। যার কারনে মেধার কথা মনের গহীন কনে বাজে সেটা যতই রাগের হোক বা ঘৃনার । ভালোবেসে যদি কারো মনে নিজের জন্য একটু ঘৃণা বা ভালোলাগা না জন্মাতে পারো তবে কিসের ভালোবাসলে তুমি? সেটাই হয়েছে মেধার ক্ষেত্রে। মেধা মাহিরের মনে ওর জন্য সমান্য কিছু ফিলিংস তৈরি করতে পেরেছে এটাই অনেক।
অনুরাগ যখন দেশে আসলো ও মাহিরের সঙ্গে প্রাইসময় কাটাতো। বিভিন্ন ডিসকার্স করতো। একটা সময়পর ও মাহিরের কিছুটা দুঃখ দুর করতে সক্ষম হয়। ও মাহিরকে অনেকটা আখের লাইফে ফিরিয়ে আনে। কিন্তু মাহিরের ভিতরের কথা গুলো অনুরাগের জানা ভিষণ প্রয়োজন। মাহির ও সবটা খুলে বলে অনুরাগকে কারন সেও চাই তার জীবনের সবকিছু আগের মতো হয়ে যাক। সবটা শুনে অনুরাগ বলে,
-” মিহু চলে গেছে তোর কথা ভেবে। ও সবসময় চাইতো তুই ভালো থাক কিন্তু না তুই তো সবচেয়ে খারাপ আছিস। তুই একবারো ভেবে দেখেছিস মিহু এগুলো দেখে কষ্ট পাচ্ছে কি না? ওকে ভালো রাখার জন্য হলেও তো তোর ভালো থাকা দরকার মাহির। তাই বলছিলাম কি একটু সময় দে নিজেকে!! নিজেকে আগের মতো তৈরি কর তোকেতো মিহুর কথাও রাখতে হবে নাকি?”
সেদিন থেকে মাহিন অনেকটা সামলে নেয়। তবুও মেয়ে ব্যাপারে মস্তিষ্কে কোন ধারনা আনতে চাইনা সে। মাঝে মাঝে ওর বুকের ভিতরটা হাহাকার করে উঠে মিহুর জন্য। কিন্তু তাকে পাওয়ার সাধ্য নেই যে ওর। সেদিন থেকে মিহুর খুনিদের একটা একটা করে বদলা নিতে অনুরাগ তাকে সাহায্য করেছিল। এর জন্য সে অনুরাগের সব সমস্যার দেখাশোনা করে। আজপযর্ন্ত অনুরাগের মাধ্যমে যতগুলো খুন হয়েছে সবটা মাহির সামলেছে। অনুরাগের ফুল ফেমেলীর উপর ওর চরম কৃতজ্ঞতা। যেটা ওর দ্বারা শোধ করা কখনোই সম্ভব না ভেবে ওই ফেমেলীর উপর তার গভীর মমত্বোধ।
__________
বড় কোন গোডাউনের ভিতরে ইমান সহ তার বন্ধু বসে এলকোহল খাচ্ছে সঙ্গে চিকেন লেগপিস। তাদের কথা বার্তা লিমিট ক্রস করা লেভেলের। হঠাৎ পরিত্যক্ত গোডাউনে কোন কিছুর শব্দ পেয়ে ইমান কয়েকজনকে চেক করতে পাঠায়। ওদিকে সবাই চারিদিকে আওয়াজের রহস্য উন্মচণ করতে ব্যস্ত। কিন্তু ইমান এখনো পযর্ন্ত এলকোহল খেয়েই যাচ্ছে।
সবাই যখন শব্দের রহস্য খুজতে ব্যাস্ত তখনি অনুরাগ তার কয়েকটা গার্ডকে নিয়ে ভিতরে প্রবেশ করে। আর সে কোন সাড়াশব্দ না করে ইমানের পিছনে গিয়ে দাড়ায়ঁ। ইমান ওর বন্ধু ভেবে নেশার ঘোরে বলে ওদিক থেকে আরেকটি বটল দিতে। অনুরাগ কোন কথা না বলে আরেকটি এলকোহলের বটলটি ইমানকে এগিয়ে দিলে নেশার মাঝেই ইমান চমকে উঠে। ও চোখ কচলে ব্যাপারটা বোঝার ট্রাই করছিল অবশেষে সে বুঝতে পারলো ওটা অনিরুদ্ধ জুবায়ের। ইমান তার সঙ্গিদের চিৎকার করে ডাকতে থাকে। ওরা দৌড়ে আসে।
ওদেরকে আসতে দেখে জন বলে উঠলো,
-“স্যার আপনি ওর ক্লাস নেন আমি দেখছি এদের।”
জন অনুরাগের বহু পুরোনো বডিগার্ড। বিশাল বলিষ্ঠ দেহের অধিকারী সে। পাচঁ ছয়টা মানুষকে সে অনায়াসে মেরে দিতে পারবে কেউ টেরই পাবে না এমন ট্রেনিং প্রাপ্ত সে। অনুরাগ প্রতি জনের উদারতা মুগ্ধ করে বারবার অনুরাগকে। ও জনের দিকে তাকিয়ে মাথা ঝাকিয়ে সম্মতি দিলে সবগুলোকে বেরোধম মারতে থাকে জন। এদিকে রিভলবার হাতে ইমানের সামনে বসে আছে অনুরাগ। ওর যে রাগ মনে হচ্ছে কখন বলে সুট করে দেবে ইমানকে। ইমান ভয়ে জরোসরো হয়ে বলতে থাকে,
-” ভাই প্লীজ ভাই! মাফ করে দিন আমাকে। আমি আর কোনদিন তৃষাতুরের সামনাসামনি হবো না কথা দিচ্ছি এইবার লাস্ট সুযোগ দিন।”
ইমানের কথায় অনুরাগ রিভলবার দেখতে দেখতে বলল,
-” তোকে একবার সুযোগ দিয়েছিলাম তুই গুরুত্ব দিসনি। আমি এবার তোর কথায় গুরুত্ব দিবো কেনো? তুই তৃষাতুরকে দ্বিতীয়বার টাচ করেছিস। মেধাকে হার্ট করেছিস তোকে তো শাস্তি পেতে হবে। আর এই শাস্তিটা একটু ভিন্ন ধরনের হবে।”
অনুরাগের কথায় ইমানের নাজেহাল অবস্থা। ও যে প্রচণ্ড ভয় পেয়েছে সেটা ওর ফেস না দেখলে কেউ বুঝবে না। অনুরাগ সময় নষ্ট না করে ওর কপালে রিভলবার টা ধরল। ইমান হাতজোড় করে মাফ চাইল তবুও কোনকিছুই আজ অনুরাগকে থামাতে পারবে না।
সে গুলি চালিয়ে দিলো ইমানের কপালে। দুরে ছিটকে পরলো ইমানের নিথর দেহ। এদিকে জন ওর বন্ধুদের যেই ভাবে মেরেছে অবিয়েসলি ওদের কমায় চলে যাওয়ার কথা।
~চলবে ইনশাআল্লাহ্
(