পাত্রপক্ষের সঙ্গে আসা সুদর্শন পাত্রকে দেখে পাত্রী জ্ঞান হারালো, এমন ঘটনা ইতিহাসে বিরল। অথচ এমনই একটা কান্ড ঘটিয়ে বসলো প্রিয়তা। সে কল্পনাও করতে পারেনি যে পাত্র কলেজের নুরুল স্যারের বড় ছেলে ‘অভী’ হবে।
অপমানে মুখ থমথমে হয়ে গেলো অভীর। বাকিরা সবাই মেয়েটাকে নিয়ে পড়ে থাকলেও রাগে তার ব্রহ্মতালু ফেটে যাচ্ছে। তার মুখ দেখতে এতটাই কুৎসিত যে বাবার প্রিয় এই ছাত্রীটি তার মুখ দেখার সাথে সাথেই মূর্ছা গেলো?
প্রিয়তার চাচী তড়িঘড়ি করে পানি এনে ছিটা দিতে থাকলো মেয়েটার চোখে-মুখে। বেশ কিছুক্ষণ পর পিটপিট করে চোখ খুললো প্রিয়তা। মাথাটা ভনভন করছে। চট করে স্মরণ করতে পারলো না যে অজ্ঞান হলো ঠিক কি কারনে। যেই না মনে পড়লো, সেই মুখমন্ডল হয়ে গেলো বিবর্ণ। কি করলো বাবা? স্যারের ওই নিরামিষ ছেলেটার সাথে বিয়ে দেওয়ার জন্য এতবড় চক্রান্ত করলো? বাবা না বললো ছেলে আধবুড়ো? ওই লোকের ঘাড়েই নাকি প্রিয়তাকে বসিয়ে দিবে? যদিও প্রিয়তা জানতো এ মজার ছলেই বলা। তবে এখন অভীকে দেখে মনে হচ্ছে একটা আধবুড়ো ভুড়িওয়ালা বর-ই ভালো ছিলো। এ তো সাক্ষাৎ যম। বাবার মজার কথার ছলে তাই সে এটা ঘুণাক্ষরেও ভাবতে পারেনি যে ছেলেটা অভী হবে।
নুরুল আলম বসা থেকে উঠে দাঁড়ালেন। এগিয়ে এলেন সোফায় মায়ের কোলে মাথা দেওয়া প্রিয়তার দিকে। নরম কন্ঠে বললেন,
‘ এখন ঠিকাছো প্রিয়তা?’
প্রিয়তা অকপটে চাইলো। সে জানে এই মানুষটা বাড়াবাড়ি রকমের স্নেহ করে প্রিয়তাকে। কলেজে থাকাকালীন অন্য সবার চোখেই এই বাড়াবাড়ি স্নেহটা পড়তো। তবে সে ভাবতো হয়তো সে প্রথম সারির ছাত্রী, নম্র-ভদ্র, রক্ষণশীল পরিবারের মেয়ে এজন্যই বোধহয় এতকিছু। তবে আজ প্রিয়তা স্পষ্ট বুঝলো কেন এত স্নেহের মূল কারন। প্রিয়তা উঠে সাবলীল ভাবে বসার চেষ্টা করলো। ওর মুখ হয়ে গিয়েছে নত৷ গালে লালাভ আভা। এতগুলো মানুষের সামনে এভাবে অভী কে দেখে বিস্ময়ে এমন কান্ড ঘটানোতে ওর নিজেকেই পৃথিবীর সেরা বোকা মনে হচ্ছে। আর প্রিয়তার ধারনা কমবেশি সবাই বুঝেছে সেটা। প্রিয়তা বলে উঠলো,
‘ ঠিক আছি স্যার।’
ব্যাস! প্রিয়তা নিশ্চুপ। তারপর প্রিয়তাকে ইশারায় নিয়ে যেতে বললো ওর বাবা। তাই হলো। যাওয়ার অনতিপূর্বে একঝলক দেখে নিলো অভীর রূপ। গালের একপাশ শুধু দেখা যাচ্ছে। লম্বাটে মুখের সেই নির্বিকার মুখ দেখে বোঝা গেলো না ছেলেটার প্রতিক্রিয়া। রুমে গিয়ে বিছানায় ধপ করে বসে পড়লো সে। ওকে ঘিরে বসলো ওর চাচাতো ভাই রুদ্র আর বোন অদ্রি। আর একজন অরিন যে ওর আপন বোন৷ রুদ্র-অদ্রি জমজ! প্রিয়তার সমবয়সী, একসাথেই তিনজন অনার্স তৃতীয় বর্ষে পড়ছে, তাই এই দুটোর সঙ্গেই তার বোঝাপড়া বেশি। ফ্যালফ্যাল করে সে চাইলো রুদ্র-অদ্রির দিকে। বলে উঠলো,
‘ তোরা জানতি?’
ভ্যাবাচ্যাকা খেলো দু’জন। কি বলবো বুঝে উঠতে পারলো না। প্রিয়তা কাঠ হয়ে পুনরুপি প্রশ্ন ছুঁড়লো,
‘ জানতি তোরা এ কথা?’
রুদ্র এবার বলে উঠলো,
‘ আজ সকালেই জেনেছিলাম!’
রুদ্র কথাটা বলতেই দেরি, তারপরই গালে সপাট করে চড়ের শব্দে কান ভোঁতা হয়ে গেলো ওর। চড়টা প্রিয়তাই মেরেছে। চোখে সরষে ফুল দেখছে এখন রুদ্র। কিছুক্ষণ থম মেরে শেষমেশ গর্জে বলে উঠলো,
‘ আমার গালরে কি পাইসস তুই? তোর জামাইয়ের সম্পদ এটা যে কিছু হইলেই চড় মারস?’
‘ আগে বলিসনি কেন যে ছেলেটা অভী ভাইয়া?’
রুদ্র পরোয়া করলোনা প্রিয়তার কথায়। নিখাদ স্বরে অদ্রির কাধে বাহুর ভর করে বললো,
‘ আমি বলতে চয়েছিলাম। ছোট আব্বু তোকে বলতে দেয়নি। এমনিতেও গতরাত ছোটোআব্বু যখন তোকে বললো তোর বিয়ে এক বুইড়া ধেড়ী লোকের সাথে ঠিক করেছে মুখটা দেখার মতো ছিলো তোর। তাই ভেবেছিলো বুইড়া ব্যাডার সাথে এক্সচেন্জ হয়ে তোরই প্রাণপ্রিয় স্যারের বড় ছেলেকে দেখলে তুই সারপ্রাইজ হবি। কিন্তু যেই কান্ড ঘটালি বইন, জীবনেও ভুলবার মতো না। পাত্রদৃষ্টি হওয়ার সাথে সাথেই তুই ফিট খালি। আজ হুমায়ূন থাকলে তোর কাহিনী লিখলে হাসতে হাসতে মরে যেত সবাই।’
অদ্রিরও একই অভিরূপ। রুদ্র আর অদ্রি জমজ ভাইবোন হলেও ওদের বিরাট ফারাক। রুদ্র প্রানবন্ত হলেও ঠোঁটকাটা না, বাট অদ্রি গ্যাংস্টার। দুর্বোধ কথা দিয়েই বুক ফালা ফালা করে ফেলে। নিজের ভাইকে সায় দিয়ে সেও তুমুল উত্তেজনায় বললো,
‘ আরে তুই কি আসলেই মেয়ে প্রিয়তা? অভী ভাইয়া চরম একরোখা টাইপ হলেও ভার্সিটিতে তুমুল জনপ্রিয়তা। বিয়ে না-ই করতে পারলি তাই বলে দেখামাত্রই জ্ঞান হারাবি? জ্ঞান হারাবি ভালো কথা কষ্ট করে দু’পা এগিয়ে অভী মহাশয়ের বুকেই ঢলে পড়তি? উফফ! তাইলে তো পুরাই হতো সালমান শাহ্ টাইপ সিন হতো।’
মাথায় রাগ চেপে বসলো প্রিয়তার। ইচ্ছে করছে এই অসভ্য উজবুক মেয়েটার মুখে দাঁতে গোবর দিয়ে মাখামাখি করতে। অভী ভাইয়ার নাম শুনলেই বুক কাঁপে তার, এমন গম্ভীর মানুষটার সামনে দুদন্ড দাঁড়াতেই ভয় পেত এতকাল আর এই মেয়ে সরাসরি বুকে ঢলে পড়তে বলছে? প্রিয়তা তীক্ষ্ণ চাউনি দিলো। ব্যাধিগ্রস্থে বললো,
‘ ফাজলামো হচ্ছে? অশ্লীল কথাবার্তা বকবি না!’
‘ অশ্লীল কি বললাম আবার? আমি কি তোকে বলেছি তুই আব্বু, ছোটো আব্বু আর আমাদের ঠুনঠুনা দাদীজানকে সাক্ষী রেখে অভী ভাইয়া পুরু ঠোঁটে চু’মু খেতে?’
প্রিয়তা বাকশক্তি হারালো। রুদ্রর চোখে মুখেও ভাব নেই। যেন সে জানে ওর এই জমজ বোনটা এর থেকেও ভয়ঙ্কর কথাবার্তা বলতে পারে। প্রিয়তার কান দিয়ে গমগম করে বের হচ্ছে ধোঁয়া। ট্রেনের মতো সিটি বাজাচ্ছে। রুদ্রর তামাটে গালে চড় মারলেও ওর গাল রুদ্রর চেয়েও ভয়াবহভাবে লাল হয়ে আছে। দশম শ্রেণিতে পড়া অরিন নিজের ডোন্ট কেয়ার অদ্রি আপুর দিকে ফ্যালফ্যালিয়ে চেয়ে আছে। প্রিয়তা ঢোক গিললো। বললো,
‘ অভী ভাইয়ার ঠোঁট কেমন তুই এটাও খেয়াল করিস!’
‘ তো করবো না? হাজার হোক আমি তো তোর মতো নামেমাত্র মেয়ে নই। কোনো এক লেখক বলেছিলো মেয়ে মাত্রই তার কাজ পুরুষের প্রতিটা বৈশিষ্ট্য খুটিয়ে দেখা। আমার তো সেই ধারাটা বজায় রাখা উচিত তাই না রে? রুদ্র জীবনেও বলতে পারবো না কোন ছেলের ঠোঁট কান নাক কেমন। এখন মাইয়ার কথা জিগা? হালায় মন্ত্র পড়ার মতো সব বলবো। এটাই স্বাভাবিক। মেয়ে তো ছেলের ঠোঁটই দেখবে। লেসবিয়ান তো না যে মেয়ের ঠোঁটের দিকে তাকাবে।’
হাল ছেড়ে দিলো প্রিয়তা। এদের সাথে কথা বলাই বেকার। প্রিয়তার অস্বস্তি হচ্ছে। ভীষণ রকমের অস্বস্তি হচ্ছে। নিজের প্রিয় এবং সম্মানীয় স্যারের বড় ছেলে যে কি-না ওদেরই ইউনিভার্সিটির সিনিয়র স্টুডেন্ট। আর কিছুসময় পরই চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতোকোত্তর উপাধি নিয়ে বেরোবে তার সাথে নিজেকে ভাবতেই অন্যরকম লাগছে। আচ্ছা অভী কি জানে তার প্রতিক্রিয়া? সে কি জানে যে স্যারের এই গম্ভীর ছেলেটাকে প্রিয়তা যমের মতো ভয় পায়?
—-
বাইরে নিকষ আঁধার। মনে হয়না এটা সন্ধ্যা। এই নগরে যেন সন্ধ্যা পেরোতে না পেরোতেই রাত হয়ে যায়। গহীন রাত। প্রিয়তার মুখ ভার। কেননা আজ বিয়ে পাকাপোক্তভাবে স্থির হয়েছে। এই মাসের শেষ শুক্রবারই আংটি পড়িয়ে দেবে। তারপর বিয়ে পড়াবে অভীর ইউনিভার্সিটির ফাইনাল ইয়ারের ইতির পর।
মুনির সাহেব নিজের মেয়ের দিকে তাকিয়ে আছেন নিষ্পলকভাবে। কিন্তু প্রিয়তার কোনো প্রতিক্রিয়া নেই। বোকা রমনীর মতো সে ঘড়ির টিকটিক কাটার দিকে দৃষ্টি রেখেছে যে একটু আগেই বললো নাকি জরুরি কথা আছে। সালেহা বানুও রীতিমতো ক্ষিপ্র মেয়ের কান্ডে। প্রথমত আজ বিকালে এত ভালো ভালো শাড়ি থাকতে ইচ্ছে করেই দাদীর সেই বাবা আমল যুগের বিশ্রি বেগুনি রঙের শাড়ি পড়ে গেছে। তারপর তো ঘটলো সিনেমা। পাত্রকে দেখার সাথে সাথেই মূর্ছা গেলো। অমন ভালো ছেলেকে দেখে মেয়ে এমন বিশ্রি কান্ড ঘটিয়ে ফেললো ভাবতেই লজ্জা লাগছে তার৷ মুনির সাহেব শেষমেশ নীরবতা কাটিয় বললো,
‘ কিছু বলবি প্রিয়তা?’
‘ বলার জন্যই তো এসেছি।’
ভ্রুকুটি করলো মুনির সাহেব। মেয়েটার ওপর রেগে যেতে ইচ্ছে করলেও চট করে রাগতে পারছে না। কেননা সে জানে একটু পরই তার স্ত্রী মেয়েকে ভয়াবহ একটা ঝাড়ি দিবে কোনো না কোনো কথার জন্য৷ দুজনের একসাথে কড়া হওয়া মানায় না। তাই বলে উঠলো,
‘ কি বলবি বল?’
প্রিয়তা এবার ঢোক গিললো। আম্মার দিকে একঝলক ভয়ার্ত চোখে তাকিয়ে বললো,
‘ আব্বু আমি এই বিয়ে করবো না?’
মুনির সাহেব নিশ্চল। যেন জানতেন এমন কিছুই হবো। কোনো কথা বললো না সে। আনমনে চায়ের কাপে চুমুক দিলো। প্রিয়তা অবাক। ভীষণ অবাক। সে তো প্রতিক্রিয়া দেখানোর মতোই কথা বলেছে। তাহলে এরা এমন করছে গেলো। সবাইকে ওই যমদূত তাবিজ টাবিজ করে ফেলেছে নাকি? প্রিয়তা পুনরায় ঢোক গিললো। স্থির করলো নিজেকে। এদে রমতিগতি ভালো দেখাচ্ছেনা। মনে হচ্ছে একটা কান্ড ঘটবে। খুবই ভয়াবহ কান্ড ঘটবে বাইরের শীতল হাওয়ারমমতো। সে বললো,
‘ শুনেছো কি বলেছি?’
‘ শুনলাম তো?’
বাবার একচ্ছটা বিহেভ প্রিয়তাকে বিস্ময়ে নিয়ে যাচ্ছে। বলে উঠলো,
‘ কিছু বলবে না?’
‘ কি বলবো?’
‘ এইযে আমি বিয়ে করবো না শুনে কিছু বলবে না? চড় থাপ্পড় মারবেনা?’
‘ বিয়েটা কেন করবিনা শুনি?’
প্রিয়তা কথা খুঁজে পেলো না। আমতা আমতা করে বললো,
‘ এমনেই।’
‘ এমনেই যেভাবে আমায় বলেছো ওমনেই তোর বড় আব্বুকে বল। নুরুল স্যারের ছেলের সাথে তোর বিয়ে তোর চাচাই ঠিক করেছে বুঝলি? তাকে বল।’
প্রিয়তা এতক্ষণে বুঝলো বাবার নির্বিকারে থাকার কারন। কোনো এক কারনে বড় আব্বুকে প্রিয়তা ভীষণ ভয় পায়। প্রিয়তা বুঝতে পারেনা তার বাবার মতো এত দুর্দান্ত মানুষের এমন ক্যাটক্যাটে ভাই কিভাবে হলো। এরা ভালোমতোই জানে, আর যাই হোক! বড় আব্বুর মুখের ওপর প্রিয়তা এজীবনে না বলতে পারবে না। অথচ বলা প্রয়োজন। প্রিয়তার দুশ্চিন্তায় মাথা ফেটে যাচ্ছে। যদি ভার্সিটিতে জানাজানি হয়ে যায় ভার্সিটির সিনিয়র স্টুডেন্ট অভীর সাথে প্রিয়তার বিয়ের কথাবার্তা চলছে ব্যাপারটা দাবানলের মতো ছড়িয়ে যাবে। ইউনিভার্সিটির হলের সামনে স্টলে বসা পুলু মামাও জিজ্ঞেস করবে,
‘ কি গো আফা, তোমার নাকি অভী ভাইজানের সাথে বিবাহ হইয়াছে?’
না হলেও এরা ধরে নিবে হয়েছে। প্রিয়তা মুখ থমথমে অবস্থায় বসে রইলো। অসহ্য লাগছে তার। এর একটা বিহিত করতেই হবে। অভীকে সে বিয়ে করবে না। কিছুতেই না।
______________
রোদ উঠেছে আকাশে। সে রোদ আবছাভাবে ছড়িয়ে পড়ছে সারা উঠোনে। সকালের এই রোদটা ভীষণ মিষ্টি। প্রিয়তা প্রতিদিনই এসময় বাড়ির সামনে থাকা বাগানে পানি দিতে আসে। প্রিয়তাদের বাড়িটা সুন্দর৷ সামনে বিশাল ফাঁকা জায়গা। দক্ষিণ পশ্চিম পাশে একটা কৃষ্ণচূড়া গাছ ছাদের দিকে বাকিয়ে আছে। বসন্তকালে তখন সেটা অবর্ণণাতীত সুন্দর দেখায়।বাড়িটা তার মরহুম দাদাজানের। যৌথ পরিবারে থাকার সুবাদে ছোটোবেলা থেকেই রুদ্র অদ্রির সাথে ওর বোঝাপড়া। আরও কয়েকটা গিনিপিগ আছে৷ সবমিলিয়ে হৈ হুল্লোড়ে মশগুল তাদের এই সাখাওয়াত ভিলা।।
দাদীজান উঠোনে ভর্তা বানাচ্ছে। কাঁচকলা ভর্তা৷ একটু পরই সব গিনিপিগ হৈ হৈ করে ছুটে চলে আসবে দাদীর ভর্তা খাওয়ার জন্য৷ দাদী এবার বললো,
‘ ওই প্রিয়তা যা পাকের ঘর থেইকা ধনিয়া পাতা লইয়া আয়।’
মুখ ভেংচালো প্রিয়তা। বললো,
‘ গাছে সার দিচ্ছি দেখো না। তুমি নিয়ে আসো যাওগে। আমার ঠেকা পড়ে নাই।’
‘ কয় কি মাইয়াডা দেইখা যাও কেউ। এই মাইয়ারে নাকি পরের বাইতে পাঠাইবো। শ্বাশুড়ি তো ঝাড়ু দিয়া পিটাইবো বুঝলি?’
প্রিয়তা পরোয়া করলো না। বললো,
‘ শ্বশুরবাড়িতে কি হইবো তোমার না ভাবলেও চলবো। আমি এখন বিয়ে করবো না। খবরদার বুড়ি কানপড়া দিবা না।’
রুদ্র একসাইডে বসে সাইকেল ধুচ্ছে। গতকাল বৃষ্টিতে সাইকেল চালিয়ে কাদায় মাখামাখি অবস্থা করে ফেলেছিলো৷ তখনই এসে পড়লো সায়রা বানু। বললো,
‘ এই প্রিয়তা। এই সব ময়লা পানি ফটাফট বাইরে ফেলে দে। একটু পর অভী আসবে। তোর নুরুল স্যার ফোন করেছিলো। কি যেন পাঠাবে তার সাথে।’
মুখ বিবর্ণ হয়ে গেলো প্রিয়তার। বললো,
‘ আসুক গে। আমার কি কাজ?’
‘ তোর কি কাজ মানে? তোরই তো সব কাজ। শোন এখনই এসব ছালাবালা জামাকাপড় পাল্টে ভালো জামা পড়। খবরদার দাদীর বিশ্রি কাপড়গুলো পড়বি না। অভী আসবো, তার সাথে মিষ্টি মিষ্টি কথা বলবি৷ এমনিতেও গতকাল ভয়াবহ কান্ড করেছিস তুই৷ আরেকবার এমন কিছু করলে বেলচা দিয়ে পেটাবো!’
অন্ধকার নামলো প্রিয়তার চোখেমুখে। সেই সাথে চাপা ক্ষোভও। দাদী ফোকলা দাঁতে হাসছে। পান খাওয়া মুখটাতে কদাকার সেই হাসি৷ প্রিয়তা হাল ছাড়লো। এক হাতে বেলচা নিয়ে আগাছাগুলো কুড়োলো। তারপর ময়লা পানির বালতি দিয়ে চলে গেলো রাস্তার গেটের দিকে। এই লেনের বরাবরই ওদের বাড়ি। উঠোনের একপাশে মার্বেল পাথরের রাস্তা পেরিয়ে গেট খুললেই লেনের রাস্তা। প্রিয়তা পানিগুলো রাস্তায় ফেলার জন্য উদ্যত হলো৷ ও প্রতিদিনই বাড়ির সামনের রাস্তাটি পানি দিয়ে ভিজিয়ে দেয় যাতে ধুলো না পড়ে। গেট খুলে স্বভাবসুলভ ভাবে পানি ছুড়ার জন্য উদ্যত হলো প্রিয়তা। তবে হলো অন্যকিছু্। পরিস্থিতি তার নিয়মিত ধারা পাল্টে আজ অন্যকিছুই চেয়েছিলো প্রিয়তার কাছে। প্রিয়তা বোকার মতো দাঁড়িয়ে আছে। ডান হাতে খালি বালতি, বাম হাতে বেলচা। সামনে অভী, সমস্ত ময়লা পানি গায়ে মাখামাখি হয়ে আছে। ছেলেটার ধারালো চোয়াল, চোখে মুখে বিস্মের আভা। চুলগুলো ভিজে টুইটুম্বুর। গহীন চোখজোড়া দৃষ্টি ফেলেছে প্রিয়তার তটস্থ মুখের ওপর। বাবার পাঠানো হাতে বগুড়ার দইয়ে সে পানি ঢুকেছে কি না কে জানে!
অভী অবাক পানে তাকিয়ে রইলো বোকাসোকা মেয়েেটার দিকে। গতকাল তাকে দেখে জ্ঞান হারালো, আজ তাকে দেখে গায়ে পানি ছুঁড়ে মারলো। এই মেয়ে বোধহয় পণ করেছে পদে পদে অভীকে অপমান করে বেড়াবে। অভীর মনে হচ্ছে যেন পুরো পৃথিবী ওকে নিয়ে হাসছে। রুদ্র এদিকে সাইকেল নিয়ে আসতে আসতেই থমকালো। দেখামাত্রই গলা ফাটিয়ে বললো,
‘ ছোটআম্মু জলদি আসো, প্রিয়তা অভী ভাইয়ার গায়ে গোবরসহ ময়লা পানি ফেলে দিয়েছে!’
.
.
.
.
#প্রিয়কাহন❤️
#লেখিকা – কায়ানাত আফরিন
#পর্ব [১]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here