________ #বউ_কিডন্যাপ ________
লেখক: ShoheL Rana
________ #পর্বঃ০২ ____________
আমার কথা শুনে আমার বন্ধুরাও চিৎকার করে উঠলো। কী করতে গিয়ে কী হয়ে গেলো! কাশেম কিডন্যাপার একপাশে সরে যেতে লাগলো ধীরে ধীরে, মুখটা তার বাংলার আটের মতো করে ফেলেছে। আমি তার সামনে গিয়ে দাঁড়াতেই সে বোকা বোকা টাইপের একটা হাসি দিলো। তার শার্টের কলার ধরে বললাম, ‘কী বলেছিলি তুই? কিডন্যাপ বিশেষজ্ঞ? কেরামতি দেখাবি? এই তোর কেরামতি?’
কাশেম কিডন্যাপার মুখটা অন্যরকম করে বললো, ‘আমার কী দোষ? উনি যেভাবে সেজেছেন, ভাবলাম উনিই পাত্রী।’
-পাত্রীর সাইজ আর পাত্রীর মায়ের সাইজ তোর কাছে একই মনে হলো?’
পাশ থেকে বিজয় বললো, ‘আহ রানা, বাদ দে তো, এখন উনাকে নিয়ে কী করবো সেটা ভাব।’
-কী করবো? উনার জ্ঞান ফেরার আগেই বাসায় পৌঁছে দিয়ে আসতে হবে। আর স্নেহাকে তুলে আনতে হবে।’
-হুমমম, চল তাহলে…..’
.
.
আবারো আমরা গাড়িতে উঠলাম স্নেহার আম্মুকে নিয়ে। ওদের বাসার কাছাকাছি আসতেই চোখে পড়লো বাড়িতে পুলিশ এসেছে। তারমানে এতক্ষণে সব জায়গায় খবর হয়ে গেছে রফিক সাহেবের স্ত্রী কিডন্যাপ হয়ে গেছে। এখন তো ঝামেলায় পড়ে গেলাম। সব ঐ কাশেম কিডন্যাপারর এর জন্য। ইচ্ছে করতেছে শালারে ধরে ইচ্ছে মতো পিঠায়। পুলিশের কারণে ভেতরেও ঢুকতে পারতেছিনা। এখন এই মহিলাকে নিয়ে কী করবো?
বিজয়কে পাঠালাম ভেতরের পরিস্থিতি জানার জন্য। এখনো স্নেহার আম্মুকে কে কিডন্যাপ করেছে, তা কেউ জানেনা। তাই বিজয়কে দেখে কেউ সন্দেহ করবেনা।
.
কিছুক্ষণ পর বিজয় এলো, উত্তেজিত হয়ে বললো, ‘রানা সর্বনাশ হয়ে গেছে।’
-কী সর্বনাশ?’
-স্নেহাকেও কেউ যেন কিডন্যাপ করে নিয়ে গেছে।
-হোয়াট?
-হুমম, রফিক আঙ্কেল পুলিশকে বলেছে তার স্ত্রী এবং মেয়েকে খুঁজে আনতে।’
-কিন্তু স্নেহাকে আবার কে কিডন্যাপ করলো?
-এখন এসব বলার সময় নাই, এখানে থাকলে আমরাও ফেঁসে যাবো, চল এখন….’
-কিন্তু স্নেহার আম্মুকে নিয়ে কী করবো?’
আমার কথা শেষ হতেই স্নেহার আম্মু নড়ে উঠলো। সর্বনাশ! এখন কী হবে? কাশেম কিডন্যাপার তাড়াতাড়ি চেতনানাশক স্প্রে বের করে স্নেহার আম্মুর মুখে মেরে দিলো, স্নেহার আম্মুর জ্ঞান ফেরার আগে আবার অজ্ঞান হয়ে গেলো। তা দেখে কাশেম কিডন্যাপার ‘হে হে হে’ করে হেসে উঠলো, তারপর আমাদের দিকে এমনভাবে তাকালো, যেন বিরাট কিছু করে ফেলেছে সে। আমি স্প্রেটা তার হাত থেকে নিয়ে তার মুখে মেরে দিলাম। তারপর কাশেম কিডন্যাপারও অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেলো। বিজয় হঠাৎ বলে উঠলো, ‘এখন আমরা কোথায় যাবো?’
-তাই ভাবছি। এখানে থাকলে আমরা পুলিশের হাতে ধরা পড়বো। দূরে কোথাও পালিয়ে যেতে হবে।’ বললাম আমি।
সাদ্দাম বলে উঠলো, ‘পেয়েছি একটা জায়গা। ডাক বাংলোর ঐ বিল্ডিংটা তো খালি পড়ে আছে। কেউ থাকেনা ওখানে। এলাকাটাও জঙ্গল এলাকা। ওখানে নিরাপদে থাকতে পারবো। পরিস্থিতি ঠান্ডা হলে পরে চলে আসবো।’
সাদ্দামেরর কথায় আমরা একমত হলাম। রাতের খাবার কিনে আমরা ডাক বাংলোর দিকেই গেলাম। বাংলোতে আসতে আসতে আবার নড়ে উঠলো স্নেহার আম্মু। স্প্রেটা নিয়ে আবার মারতে যাবো, তখন দেখি স্প্রে শেষ। সর্বনাশ এখন কী হবে? আমাকে আর বিজয়কে দেখলেই তো চিনে ফেলবে।
তাড়াতাড়ি করে স্নেহার আম্মুকে পাঁজাকোলা করে নিয়ে এসে বাংলোর একটা রুমে শুয়ে দিলাম। তারপর আমি বের হয়ে যেতে চাইলাম রুম থেকে, তখন পেছন থেকে স্নেহার আম্মু ডাক দিয়ে বললো, ‘ওগো কই যাও আমাকে একা রেখে?’
উনার কথা শুনে আমি চমকে উঠলাম। সর্বনাশ! উনি পাগল/তাগল হয়ে যাননি তো? এভাবে কথা বলছেন কেন?
আমি স্নেহার আম্মুর কাছে গিয়ে বসতেই উনি আমাকে বললেন, ‘আমাকে তুলে নিয়ে আসছো, আবার একা রেখে চলে যাচ্ছো কেন ওগো? আমার পাশে বসো, আজ সারারাত দু’জন বসে গল্প করবো।’
হায়! হায়! উনি দেখছি সত্যি সত্যি পাগল হয়ে গেছেন। এখন এই পরিস্থিতি কীভাবে সামাল দিই? স্নেহার আম্মুকে বললাম, ‘আন্টি, আপনার মনে হয় খিদে লেগেছে, খাবার নিয়ে আসবো আপনার জন্য।’
স্নেহার আম্মু আমার হাত ধরে উনার পাশে বসালেন। তারপর আমার কাঁধে হাত রেখে বললেন, ‘ওগো, আমাকে আন্টি বলছো কেন? আমাকে দেখে কী আন্টি মনে হয়?’
আমি উনার পাশ থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বললাম, ‘আন্টি, আপনি থাকুন, আমি আপনার জন্য খাবার নিয়ে আসতেছি।’ বলেই আমি বেরিয়ে আসলাম রুম থেকে। উফ! কি করতে গিয়ে কী হয়ে গেলো!
.
.
অন্যরুমে এসে দেখলাম কাশেম কিডন্যাপারেরও জ্ঞান ফিরেছে। সেও পাগলামি শুরু করে দিয়েছে স্নেহার আম্মুর মতো। আমাকে দেখেই সে বললো, ‘ঐ ছেলে আমার বউ কোথায়?’
আমি অবাক হয়ে বললাম, ‘মানে? তোমার বউ আবার কে?’
-তোমাকে না কতবার বলেছি আমার বউ এর পেছনে ঘুরবেনা? এখন আমার বউকে কোথায় লুকিয়ে রেখেছো বলো?’
যাহ বাবা! একজনকে সামলিয়ে উঠতে না পারতেই, আরেক পাগলের উদয় হলো। এখন এটারে নিয়ে কী করবো? রেগে উঠে কাশেম কিডন্যাপারের মাথায় একটা বাড়ি মারলাম। সাথে সাথে আবার অজ্ঞান হয়ে গেলো সে। এবার অজ্ঞান হয়ে বউকে খোঁজ।
বিজয় আমাকে জিজ্ঞেস করলো, ‘স্নেহার আম্মুর জ্ঞান ফিরেছে?’
-হ্যা ফিরেছে, কিন্তু কিসব পাগলামি করতেছে, আমার সাথে প্রেমিকের মতো কথা বললো?’
-কী বলিস?
-হ্যা রে দোস্ত, কী করবো বুঝতেছিনা, মেয়ের বদলে মাকে তুলে এনে ফেঁসে গেলাম মনে হয়।’
-আচ্ছা চল, দেখে আসি উনাকে।’
-চল….’
কাশেমকে ওভাবে রেখে আমরা বন্ধুরা স্নেহার আম্মুর কাছে এলাম। এসে দেখলাম উনি তৃতীয়বারের মতো অজ্ঞান হয়ে পড়েছে……
.
(চলবে…….)
.
(