________ #বউ_কিডন্যাপ ________
লেখক: ShoheL Rana
__________ #পর্বঃ০৮ ___________
বিজয়ের কথা শুনে আমার প্রচণ্ড রাগ হলো কাশেমের উপর। বেটা কাশেমের বাচ্চা কাশেম এটা কী করলো? স্নেহার মুক্তিপণ নিয়ে পালালো? এখন আমি স্নেহাকে কীভাবে উদ্ধার করবো?
-আচ্ছা কাশেম ৫ লাখ টাকার কথা শুনে আন্টিকে আবার রফিক সাহেবের কাছে নিয়ে যায়নি তে?’ ভাবতে ভাবতে জিজ্ঞেস করলাম আমি।
-হতে পারে।’ জবাব দিলো বিজয়।
-যদি তাই হয়, কাশেম হারামজাদা কতবড় জোচ্চোর একবার ভেবে দেখ, নিজেই তুলে নিয়ে আসছে, আবার নিজেই পৌঁছে দিয়ে পুরস্কারের টাকা আদায় করবে রফিক সাহেবের কাছ থেকে। চল, আমরাও বের হয়ে পড়ি। ওকে আটকাতে হবে।’
আবার বেরিয়ে পড়লাম সবাই। মোটকু কান্না থামিয়ে সবার আগে যেতে চাইলো, কিন্তু ভারি পেটের কারণে পিছিয়ে পড়লো সবার। ওর কারণে আমাদেরও দেরি হতে লাগলো।
কিছুদূর যেতেই দেখলাম কাশেম দৌঁড়ে আসতেছে এদিকে। আমাদের পাশে এসে সে হাঁপাতে হাঁপাতে বললো, ‘পালাও সবাই, গাড়ি নিয়ে অনেকগুলো গুন্ডা আসতেছে এদিকে।’
আমি কাশেমকে জিজ্ঞেস করলাম, ‘কারা আসতেছে?’
-রফিক সাহেবের লোক না কার লোক বললো স্নেহার আম্মু। দূর থেকে দেখলাম ওদের হাতে অনেক অস্ত্র।
-কিন্তু আন্টি কোথায়? উনাকে কোথায় রেখে এসেছো?’
-উনাকে রেখেই পালিয়ে এসেছি আমি ভয়ে। উনাকে তো কিছুই করবেনা ওরা, কিন্তু আমাকে পেলে তো মেরে কিছুই রাখবেনা।’
কাশেমের গালে জোরে একটা চড় বসিয়ে বললাম, ‘উনাকে নিয়ে পালাতে গেলি কেন?’
কাশেম গালে হাত বুলাতে বুলাতে বললো, ‘আমার ভুল হয়ে গেছে। আমি ৫ লাখ টাকার লোভে ওকে ওদের হাতে তুলে দিতে গেছিলাম, কিন্তু দূর থেকেই ওদের দেখে আমি ভয় পেয়ে যাই। তাই পালিয়ে আসি। টাকার চেয়ে আমার জীবন বড়।’
কাশেমের কথা শেষ না হতেই গাড়ির আওয়াজ শুনা গেলো। আমরা পালাতে শুরু করলাম। পালিয়ে একটা ঝোপের আড়ালে লুকিয়ে পড়লাম। আড়াল থেকে দেখতে লাগলাম ওরা কী করে।
.
.
ওরা সংখ্যায় ১২/১৫ জন ছিলো। সবাই বাংলোর ভেতরে প্রবেশ করলো। কিছুক্ষণ আগেও ওটা আমাদের দখলে ছিলো, এখন ওদের দখলে। আফসোস হতে লাগলো। আন্টিকেও দেখলাম ওদের সাথে ভেতরে ঢুকতে স্বামীর হাত ধরে। তা দেখে এদিকে মোটকুর রাগ বেড়ে গেলো, বাচ্চা ছেলের মতো কান্না শুরু করে দিলো, কাশেম তার মুখ চেপে ধরলো যাতে কান্নার কোনো শব্দ না হয়। মোটকু তাকে ধাক্কা দিয়ে বললো, ‘তোর জন্য হয়েছে সব।’
মোটকুর ধাক্কা খেয়ে কাশেম অনেক দূরে গিয়ে পড়লো। কোমরব্যথায় কিছুক্ষণ উঠতে পারলো না সে। তারপর হঠাৎ উঠে এসে পাল্টা আক্রমণ করলো মোটকুকে। লেগে গেলো যুদ্ধ কাশেম বনাম মোটকুর মধ্যে। কাশেম শুধু ঘুষি চালাতে লাগলো মোটকুর পেটে, আর মোটকু কাশেমকে ঝাঁকাতে লাগলো। পরিস্থিতি কন্ট্রোলের বাইরে চলে যাচ্ছে বুঝতে পেরে আমরা সরে পড়তে লাগলাম ওদের দুজনকে রেখে। রফিক সাহেবের লোকেরা এসে গেলে সমস্যা হতে পারে।
.
.
আমাদেরকে সরে যেতে দেখে কাশেম এবং মোটকু যুদ্ধ থামিয়ে আমাদের সাথে সাথে চলতে লাগলো। এরপর আমরা ৭ জনের টিমটা এলাম রমজান ডনের আস্তানায়। সবাই ভয়ে ভয়ে ছিলাম রমজান ভাই এর সামনে যেতে। ভেবেছিলাম পালোয়ান টাইপের বিশাল দেহের অধিকারী হবেন উনি। কিন্তু উনার সামনে গিয়ে দেখলাম উনার সাইজটা কচু গাছের মতো। দেখেই হাসিয়ে বেরিয়ে এলো আমাদের সবার। আমি জিজ্ঞেস করলাম, ‘এটাই তাহলে এই এলাকার ডন?’
আমার কথা শেষ হতেই মোটকু হাসতে হাসতে একহাতে তুলে ফেললো ডনকে। তারপর হাসি না থামিয়েই বললো, ‘তুই ডন? তোর বদলে তো আমি ডন হলে মানাতো ভালো।’
ব্যাপারটা রসিকতায় চলে যাচ্ছে বুঝতে পেরে ডান সাহেব শূন্য ভাসতে ভাসতে তার সৈন্যদের আদেশ দিলো আমাদের মারতে। হঠাৎ অনেকগুলো সৈন্য এসে আমাদের ঘিরে ফেললো, ভয় পেয়ে মোটকু বাধ্য ছেলের মতো ডনকে নিচে নামিয়ে দিলো। তারপর এমনভাবে নিচের দিকে তাকিয়ে দাঁড়ালো, যেন জন্মের পর থেকে সে কোনো অপরাধ করেনি, একদম নিষ্পাপ বাচ্চা।
আমি ডনকে বললাম, ‘রমজান ভাই, আমাদের ভুল হয়ে গেছে। আমাদের স্নেহাকে ফিরিয়ে দিন দয়া করে।’
ডন সাহেব আমাকে খুঁটিয়ে দেখলো কিছুক্ষণ, তারপর বললো, ‘আমার প্রিয়তমাকে আমার কাছে নিয়ে আসো, তাহলে স্নেহাকে পাবে তোমরা।’
-আমরা দুঃখিত রমজান ভাই, আন্টি এখন ওর স্বামীর কাছে, ওকে আনতে পারিনি।’
-ওকে আনতে না পারলে স্নেহাকে পাবেনা।’
এবার মোটকু বললো, ‘কেন? ওকে কেন প্রয়োজন? ওকে তো আমার প্রয়োজন। ও আমাকে ভালোবাসে।’
মোটকুকে খুঁটিয়ে দেখলো এবার রমজান ভাই। তারপর বললো, ‘তুই তাহলে সেই মোটকু?’
-খবরদার মোটকু বলবেনা, আমি মোটেও মোটা না।’ গলা উঁচু করে বললো মোটকু।
আমি বললাম, ‘রমজান ভাই, আপনি এই মোটকুকেও রেখে দেন। ও আন্টিকে ভালোবাসে। আর আমরা তাহলে আন্টিকে নিয়ে আসি এখন।’
খুশি হয়ে রমজান ভাই বললো, ‘খুব ভালো বুদ্ধি দিয়েছো। তোমার প্রতি আমি খুশি হয়েছি।’
-আমিও আপনার প্রতি খুশি হয়েছি। আপনার মতো হ্যান্ডসাম, সুদর্শন লোক থাকতে এই মোটকু কেন ভালোবাসবে আন্টিকে?’
আমার পাম্প শুনে রমজান ভাই লজ্জা পেতে শুরু করলো। লজ্জায় মুখটা নিচু করে বললো, ‘আরেকবার বলো তো কথাটা…..’
-এই মোটকু কেন ভালোবাসবে আন্টিকে?
-না, না, ওটা না, তার আগেরটা…..
-আমিও খুশি হয়েছি আপনার উপর।
-আরে তার পরেরটা……’ উত্তেজিত হয়ে গেলো ডন। বুঝতে পারছি পাম্পে কাজ হয়েছে। তাই বললাম, ‘আপনার মতো হ্যান্ডসাম, সুদর্শন লোক….’
-ব্যাস, ব্যাস, ব্যাস…. অতোটুকু বললেই হবে। সত্যি কি আমি দেখতে হ্যান্ডসাম, সুদর্শন?
-আরে কী বলেন? নায়কে ভর্তি হলে সব নায়ক ফেল করতো আপনার কাছে।’
-সত্যি? তোমার সাথে আরো আগে কেন দেখা হয়নি আমার?
-সত্য বলছি। আপনি নায়ক হলে এই মোটকু হবে ভিলেন।’
আমার কথা শেষ হতেই রমজান ভাই নায়কের মতো গিয়ে মোটুকুর পেটে ঘুষি চালালো। কিন্তু দুঃখের বিষয় এতবড় পেটে কচু গাছ সাইজের লোক ঘুষি মারায়, রমজান ভাই আরো পেছনে গিয়ে পড়লো। মোটকুর কিছুই হলো না…….
.
.
(চলবে…..)
.
.
(