#জোর_করে_ভালোবাসবো_তোকে
#পর্ব – ১২
#শিফা_আফরিন
.
🍁
রিমি দৌড়ে গিয়ে দরজা খুলেই চিৎকার করে উঠে…
রিমি – ভাইয়াআআ…
রেহান সোজা হয়ে দাড়াতে পারছে না। হাতে ড্রিংক এর বোতল। শার্টের ইন টাও ঠিক নেই। টাই টাও অর্ধেক খুলে বাঁকা হয়ে আছে। চুল গুলো এলোমেলো।
রিমি এই প্রথম নিজের ভাইকে এতো টা অগোছালো দেখছে। যে ছেলে এতোটা পরিপাটি তার আজ এই হাল শুধুমাত্র আঁচলের জন্য। হ্যা…আঁচলের জন্যই আজ ভাইয়া ড্রিংক করেছে। রিমি কিছুতেই রেহানের এমন অবস্থা মানতে পারছে না।
রিমি – (সব হয়েছে তোমার জন্য ভাবি। আমার ভাইয়া আজ পর্যন্ত ড্রিংক করা তো দূরে থাক খারাপ কোনো ছেলেদের সাথে কথাও বলেনি। আমার ভালো ভাইয়াটা তোমার জন্য এই পথে গিয়েছে। আমি তোমাকে কখনো ক্ষমা করবো না ভাবি। নেভার… মনে মনে)
রেহানের বাবা মা একপ্রকার দৌড়ে দরজার সামনে আসে।
রেহানের বাবা – কিরে রিমি তুই ভাইয়া বলে চিৎকার করে আর কিছু বললি না ক…….
রেহানের বাবা মা রেহানকে দেখে থমকে যায়। এই রেহান যেনো তাদের কাছে অচেনা লাগছে।
রিমি আগের মতোই ঠাঁই দাঁড়িয়ে কেঁদে যাচ্ছে।
রেহানের মা – রেহান তোর এই অবস্থা কেনো? কি হয়েছে তোর। (রেহানকে ঝাকুনি দিয়ে)
রেহান ওর মার কাধে মাথা ফেলে মাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দেয়।
রেহান – মা জানো ও আমাকে অনেক কষ্ট দিচ্ছে। আমি আর পারছি না মা। তুমিই বলো আমি কি এতোটাই খারাপ মা। মা আমার সত্যিই অনেক কষ্ট হই। মরে যেতে ইচ্ছে করে। তুমি তো জানো মা আমি কখনো কাউকে ভালোবাসি নি। ওকে তো প্রথম থেকেই অনেকটা ভালোবেসে ফেলেছি। নিজের থেকেও বেশি। ও কেনো বুঝতে পারে না মা। ওকে তুমি বুঝাও না ও আমাকে ছেড়ে চলে গেলে আমি মরেই যাবো মা। (কাঁদতে কাঁদতে)
রেহানের মুখে মরে যাওয়ার কথা শুনে রেহানের মার ভেতর টা কেমন মোচড় দিয়ে উঠে। রিমিও শব্দ করে কেঁদে দেয় রেহানের মা শক্ত করে রেহান কে জড়িয়ে ধরে বলে….
রেহানের মা – কি হয়েছে তোর বাবা? কেনো এই সব বলছিস? কি হয়েছে আমাকে বল না। (কেঁদে দিয়ে)
রেহানের বাবা – কিরে রিমি রেহান এইসব কেনো বলছে রে। কি হয়েছে ওর ?
রিমি – মা বাবা তোমরাও না! দেখতেই তো পারছো ভাইয়ার অবস্থা। কি থেকে কি বলে ফেলছে এই সব না ধরলে হইনা?
আমি বরং ভাইয়া কে রুমে দিয়ে আসি। কিছুক্ষন পর লেবুর পানি খাইয়ে আসবো নি।
রিমি রেহানের কাছে যেতেই রেহান ইশারা করে রিমিকে দাঁড়াতে বলে।
রেহান – আমি যেতে পারবো। তুই রুমে যা।
রিমি – ভাইয়া তুই পারবি না। তুই তো দাঁড়াতেই পারছিস না যাবি কিভাবে?
রেহান – বললাম না আমি পারবো তুই যা। বলেই রেহান দুলতে দুলতে রুমের দিকে যেতে থাকে।
রেহানের মা – রিমি তুই বরং রেহানের জন্য লেবুর পানি নিয়ে যা।
রিমি – হ্যা মা যাচ্ছি।
এদিকে আঁচল বেলকনিতে কান্না করতে করতে ঘুমিয়ে পড়ে।
রেহান ধীরে ধীরে রুমে এসে আঁচলকে খুজছে কিন্তু পাচ্ছেনা।
রেহান সারা রুম পাগলের মতো খুজছে কিন্তু আঁচলকে কোথাও দেখতে পায় না।
রেহান – আমি যা ভেবে ছিলাম তাই হয়েছে। তুমি ঠিক আমাকে ছেড়ে চলে গেলে আঁচল। তুমি ঐ জিসানের সাথে চলে গেলে!
আমি কিভাবে থা……
হটাৎ রেহানের চোখ যায় বেলকনিতে। রেহান স্তব্ধ হয়ে যায়। আঁচল গুটিশুটি মেরে বেলকনিতে শুয়ে আছে।
রেহান – এইতো আমার আঁচল। আমি জানতাম তুমি কখনো আমায় ছেড়ে যেতে পারবে না। সরি সোনা তোমায় আবার ভুল বুঝেছিলাম।
রেহান বেলকনিতে আঁচলের কাছে যায়। আঁচল গভীর ঘুমে। চুল গুলো এলোমেলো হয়ে আছে। রেহান আঁচলের মাথার কাছে বসে পড়ে।
একহাতে আঁচলের মাথাটা নিজের কোলে রাখে। আরেক হাতে আঁচলের চুল গুলো ঠিক করতে থাকে।
আঁচল কিছুটা নড়েচড়ে উঠে।
হটাৎ রেহান আঁচলের ঠোঁটে ঠোঁট মিলিয়ে দেয়। ঘুমের মধ্যেই আঁচলের মনে হচ্ছে কেউ যেনো তার নিশ্বাস বন্ধ করে ফেলতে চাইছে।
আঁচল সাথে সাথে চোখ মেলে তাকিয়ে দেখে রেহান।
আঁচল রেহানকে ধাক্কা মেরে সরিয়ে দেয়।
রেহান কিছুটা দূরে সরে যেতেই আঁচল তারাতারি করে উঠে বসে।
আঁচল – আপনি ড্রিংক করেছেন? (অবাক হয়ে)
রেহান – কই! না তো।
আঁচল – একদম মিথ্যে বলবেন না। ড্রিংক না করলে আপনার মুখ থেকে এতো বাজে গন্ধ কেনো আসছে। আপনি ড্রিংক ও করেন? কই আগে জানতাম না তো! আর কি কি গুন আছে আপনার।
রেহান আঁচলের কথার উত্তর না দিয়ে আঁচলের কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়ে। আঁচল বেশ অবাক হয়ে যায়। হটাৎ করে রেহান এমন কিছু করবে আঁচল ভাবতেও পারেনি।
রেহান – বেইবি জানো আমি তখন তোমাকে কোথাও পাচ্ছিলাম না। আমার না অনেক কষ্ট লাগছিলো। এইযে এইখানে কষ্ট হচ্ছিলো (নিজের বুকে হাত দিয়ে)
আমি তো তোমাকে অনেক ভালোবাসি। তুমি জিসানকে ভালোবাসো আমি আর কিছু বলবো না কিন্তু আমাকে ছেড়ে যেও না সোনা।
আঁচল রেহানের এমন বাচ্চামো দেখে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।
আঁচল- আপনি উঠে রুমে যান। এখন আপনার মাথা ঠিক নেই৷।
রেহান – তুমি নিয়ে চলো না বেইবি প্লিজ। (করুন সুরে)
আঁচল – আমি কিভাবে নিবো শুনি?
রেহান – কেনো? কোলে করে নিবে! (মুচকি হেসে)
রেহানের কথা শুনে আঁচল যেনো গাছ থেকে ধপ করে পড়েছে। বলে কি? ড্রিংক করে কি মাথার তার কয়েকটা ছিড়ে গেলো নাকি!
আঁচল – আপনার মাথা টা কি গেছে? কি সব বলছেন আপনি? আমি আপনাকে কোলে নিবো? আপনার মতো একটা হাতিকে আমি কোলে নিতে পারবো? কি মনে হই আপনার!
রেহান – ওওও পারবে না! (অসহায় ভাবে)
আঁচল – না পারবো না।
রেহান – তাহলে আর কি করার আমিই বরং তোমাকে কোলে নিয়ে যাই। (আঁচলের কোল থেকে মাথা তুলতে তুলতে)
আঁচল – কিইইই!!! আপনি এই অবস্থায় আমাকে কোলে নিবেন!! আপনি কি পাগল হয়ে গেছেন? নিজেই তো ঠিক করে হাটতে পারছেন না আবার আমাকে কোলে নিয়ে আমার কোমড় টার বারোটা বাজাবেন তাই তো!
রেহান – মোটেই না। দেখোই না পারি কিনা। বলেই রেহান আঁচলকে কোলে তুলে নেয়।
আঁচল বেচারি ভয়ে কাচুমাচু হয়ে গেছে। এমনিতেই রেহান দুলতে দুলতে হাটছে তার মধ্যে আবার আঁচলকে কোলে নিয়েছে। এখন যদি ফেলে টেলে দেয় তো কি হবে!!
আঁচল – দেখুন রেহান ভালোই ভালোই আমাকে নামান বলছি। বেশি বাড়াবাড়ি করছেন আপনি। নামান আমায়।
কে শুনে কার কথা রেহান দুলতে দুলতে আঁচলকে নিয়ে রুমে যাচ্ছে।
আঁচল ভয়ে রেহানের শার্টের কলার শক্ত করে ধরে আছে।
রেহান আঁচলকে খাটের কাছে এনেই ধপ করে বিছানায় ফেলে দিয়ে নিজেও আঁচলের উপর পড়ে যায়।
আঁচল – রেহান আপনার মুখ থেকে বাজে গন্ধ বের হচ্ছে প্লিজ আপনি সরুন।
রেহান আঁচলের মুখের সামনে মুখ এনে দেখে আঁচল চোখ মুখ খিচে আছে।
রেহান – বাজে গন্ধই তোমাকে সহ্য করতে হবে বেইবি। (মুচকি হেসে)
আঁচল – কি হচ্ছে টা কি। ছাড়ুন আমায়। আপনি গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসুন। আপনার মুখের বাজে গন্ধ টা কিছুটা হলেও কমে যাবে। যান প্লিজ।
রেহান – তুমি ফ্রেশ করিয়ে দাও না বেইবি। (আঁচলের গলায় মুখ গুঁজে)
রেহানের কথা শুনে আঁচলের চোখ বড় বড় হয়ে যায়।
আঁচল – বুঝেছি আপনি এবার সত্যিই পাগল হয়ে গিয়েছেন তাই এই সব অদ্ভুত কথা বলছেন। আর কিছুক্ষন আপনার সাথে থাকলে না আমিও পাগল হয়ে যাবো বুঝেছেন?
রেহান – আমি কি এমন ভুল বলেছি? আমি তো তোমার স্বামীই তাই না।
আঁচল – স্বামী না ছাই। আপনি যান তো। (বিরক্ত হয়ে)
রেহান – না যাবো না (কাঁদো কাঁদো হয়ে)
আঁচল রেহানের ফেইস দেখে না হেসে পারে না। কেমন বাচ্চাদের মতো আচরণ করছে দেখো।
দেখলে তো মনেই হবেনা উনি এক নাম্বারের ডেভিল।
চলবে…???