#জোর_করে_ভালোবাসবো_তোকে
#পর্ব – ১৯
#শিফা_আফরিন
.
.
🍁
হিয়া – হ্যা কর না। আমি তো এক পায়ে খাড়া।
বাই দ্য ওয়ে আপুই ভাইয়া কোথায়? ঘুম থেকে উঠেনি নাকি?
আঁচল – ও চলে গেছে রিমি কে নিয়ে।
হিয়া – মানে! এতো সকাল সকাল চলে গেলো?
আঁচল – আসলে মা বাবা আর রিমি আজ গ্রামের বাড়ি যাবে তাই সকাল সকাল রিমিকে নিয়ে বেরিয়ে গেছে।
বিকেলে এসে আমাকে নিয়ে যাবে।
হিয়া – রিমিও চলে গেলো। মেয়েটার সাথে ভালো করে কথাও বলা হলো না। আর তুইও চলে যাবি ধুর ভাল্লাগে না।
আঁচল – মন খারাপ করার কি আছে বোকা মেয়ে। এখন তো আর নিজের স্বাধীনতায় চলতে পারবো না বোন।
হিয়া – হুম। আপুই তোকে একটা কথা বলবো? কিছু মনে করিস না প্লিজ।
আঁচল – হ্যা বল।
হিয়া – রেহান ভাইয়া সত্যিই অনেক ভালো। ঐ জিসান ছ্যামড়ার মতো না। তুই ভাইয়াকে আর কষ্ট দিস না আপুই প্লিজ।
আঁচল – হুম জানি তো। (মুচকি হেসে)
আঁচল আর হিয়া কথা বলছে অমনি রিয়াদ আঁচলের বাবা মা আসে।
রিয়াদ – কি কথা হচ্ছে দু’জনের?
আঁচল – কিছুনা ভাইয়া। এমনিই।
আঁচলের বাবা – রেহান কোথায় আঁচল? ও কি ঘুম থেকে উঠে নি?
আঁচলের মা – আরে ও তো সকাল সকাল বেরিয়ে গেছে রিমি কে নিয়ে। আজ ওদের গ্রামের বাড়ি যেতে হবে কাজ আছে কিসের তাই।
আঁচলের বাবা – ওহহ আচ্ছা। আঁচল ও চলে যাবি?
আঁচল – হ্যা বাবা। বিকেলে যাবো।
রিয়াদ – সেকি! আর দুটো দিন থাক।
আঁচল – না ভাইয়া।
রিয়াদ – বাবা দেখেছো তোমার মেয়ে কেমন জামাই পাগল হয়েছে? (মুচকি হেসে)
আঁচল – ভাইয়া…..
আঁচলের বাবা – হয়েছে এবার খাওয়া শেষ কর তোরা।
এদিকে…
রেহান ওর বাবা মা আর রিমিকে স্টেশন এ ড্রপ করে দেয়।
রেহানের মা – রেহান শোন….
রেহান – হুম বলো মা।
রেহানের – ঐ দিনের মতো আবার ঝামেলা করিস না। যদি আমি শুনি তুই আবার ড্রিংক করেছিস তো তোর কপালে শনি আছে বলে গেলাম।
রেহান – ওহো মা আমি এই সব করিনা তুমি তো জানোই।
রেহানের বাবা – করিস না তো ঐ দিন কে করেছিলো?? আমি??
রেহান – মেবি (মাথা চুলকিয়ে)
রেহানের বাবা – দেখেছো তোমার ছেলে কতো টা বজ্জাত হয়েছে? এই বয়সের বাবাকে বলছে ড্রিংক করে!!!
রেহান – আমি কোথায় বললাম? তুমিই তো বললে!!
রেহানের মা – আহা হয়ছে তোমরা থামো তো। রেহান শোন… আঁচল কে দেখে রাখিস। ওর কিছু প্রয়োজন হলে এনে দিস।
আর ওকে একা ফেলে রেখে বেশি খন কোথাও থাকিস না।
রেহান – ওক্কে মেরি মা।
রিমি – ভাইয়া তুই বাসায় চলে যা এবার ট্রেন ছাড়ার টাইম হয়ে গেছে।
সাবধানে থাকিস কেমন?
রেহান – হ্যা তুইও। (মুচকি হেসে)
তারপর রেহান সবাইকে বিদায় জানিয়ে চলে আসে৷
আঁচল হিয়ার সাথে অনেকক্ষণ গল্প করে নিজের রুমে চলে আসে।
আঁচল রুমে আসতেই দেখে রেহানের মিসডকল।
আঁচল একটা বই নিয়ে বেলকনির দোলনায় বসে পড়তে থাকে। আঁচল ভেবেছিলো রেহান হয়তো আবার ওকে ফোন দিবে কিন্তু না রেহান আর ফোন দেয়নি।
আঁচল একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ফোন টা নিজের পাশে রেখেই চোখ বন্ধ করে।
বিকেলে…
হটাৎ দরজায় বেল বাজতেই হিয়া গিয়ে দরজা খুলে দেয়।
হিয়া – ভাইয়া! আপনি সকালে না বলেই চলে গেলেন যে?
রেহান – শালিক পাখি ভেতরে আসতে দিবে না? নাকি দরজার বাহিরে থেকেই সব বলবো? (মুচকি হেসে)
হিয়া – হ্যা হ্যা আসুন। কিন্তু শালিক পাখি মানে টা কি (অবাক হয়ে)
রেহান – শালিকার আদুরে ডাক হলো শালিক পাখি। (ভেতরে আসতে আসতে)
হিয়া – ওহো ভাইয়া এতো বুদ্ধি থাকে কই?
রেহান – আমার বুদ্ধি নিয়ে গবেষণা করে তুমি পেরে উঠবে না শালিকা তার চেয়ে বরং এটা নাও। (একটা বক্স প্যাকেট করা)
হিয়া – এটা কি?
রেহান – ধরে নাও এটাই তোমার ট্রিট।
হিয়া উৎসাহিত হয়ে প্যাকেট টা খুলে দেখে একটা নতুন মোবাইল।
হিয়া – ওওওমাই গডডড!!! ভাইয়াআআ!! নতুন ফোন! এত্তোগুলো ধন্যবাদ ভাইয়া।
রেহান হেসে দেয়।
রেহান – এবার বলো আমার আমানত কোথায়?
হিয়া – আমানত?? (অবাক হয়ে)
রেহান – আরে পিচ্চি!! আমার বউ কোথায় বলো?
হিয়া – ওহো! আপুই নিজের রুমে ভাইয়া।
রেহান – ওক্কে শালিক পাখি।
রেহান আঁচলের রুমে এসে দেখে আঁচল নেই।
রেহান বেলকনিতে যেতেই দেখে আঁচল একটা বই বুকের উপর রেখে ঘুমিয়ে আছে।
রেহান মুচকি হেসে আচলের কাছ থেকে বই টা সরিয়ে নিয়ে আঁচল কে কোলে তোলে নেয়।
আঁচলের ঘুম ভেঙ্গে যেতেই দেখে রেহান আঁচল কে কোলে নিয়ে দাড়িয়ে আছে।
আঁচল – আপনি এসে গেছেন?
রেহান – হুম। যাবে না?
আঁচল – যাবো তো। আপনি বসুন আমি ফ্রেশ হয়ে রেডি হয়ে নিই।
রেহান আঁচল কে কোল থেকে নামিয়ে আঁচলের কপালে চুমু দিয়ে বলে….
রেহান – যাও। আমি ওয়েট করছি।
আঁচল মুচকি হেসে ওয়াশরুমে চলে যায়।
রেহান খাটে আধশোয়া হয়ে বই পড়ছে। কিছুক্ষণ পর আঁচল বের হতেই রেহানকে দেখে মুচকি হাসে।
রেহান – বেইবি এই ভাবে হেসো না মরে যাবো তো।
আঁচল রেহানের কথা শুনে জোরে হেসে দেয়।
রেহান – শুনো… শাড়ি পড়েই চলো। গাড়ি করেই তো যাবো সমস্যা নেই।
আঁচল – ওকে। শুনুন…
রেহান – হ্যা বলো
আঁচল – একটু হিয়াকে ডেকে দিন না প্লিজ।
রেহান – কেনো? (ভ্রু কুঁচকে)
আঁচল – এতো প্রশ্ন না করে ডেকে দিন।
রেহান – আগে বলো কেনো?
আঁচল – ইয়ে মানে… আমার সেফটিপিন
টা লাগিয়ে দিতে।
রেহান – ওওও এই কথা?
তো আমি আছি কি করতে শুনি?
আঁচল – আপনি মানে (চোখ বড়বড় করে)
রেহান – আমি মানে আমি!! আমি লাগিয়ে দিই। (চোখ মেরে)
আঁচল – আপনিইই!!!
রেহান – হুম বেইবি। (আঁচলের দিকে এগুতে এগুতে)
আঁচল – লাগবে না আপনার হেল্প। আমিই হিয়াকে ডেকে আনছি —- বলেই চলে যেনে নেয়। রেহান আঁচলের হাত ধরে টেনে আঁচল কে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয়৷
আঁচল – আ আপনার হেল্প ল লাগবে না।
রেহান – চুপপপ…
রেহান আঁচল কে পিছনে ঘুরিয়ে শাড়ির আঁচল টা ঠিক করে সেফটিপিন টা হাতে নিয়ে ইচ্ছে করে আঁচলের ঘাড়ে লাগিয়ে দেয়।
আঁচল – আউউউচচচ। আমি কাপড়ে লাগাতে বলেছি আমার শরীরে না। স্টুপিড কোথাকার।
রেহান – মুচকি হেসে শাড়িতে পিন টা লাগিয়ে দেয়।
রেহান – বেশি লেগেছে বউ? (আঁচলের কানে ফিসফিসিয়ে)
আঁচল – উহুম। সরুন।
রেহান আঁচলের ঘাড়ে চুমু দিয়ে আঁচল কে ছেড়ে দেয়।
হটাৎ রেহানের এমন কাজে আঁচল থমকে যায়।
আঁচল কে স্থির থাকতে দেখে রেহান আঁচলের কাছে এসে বলে…
রেহান – আরও লাগবে চুমু… চোখ মেরে
রেহানের কথায় আঁচলের ধ্যান ফিরে। আঁচল রাগি সুরে বলে…
আঁচল – ডেভিল কোথাকার। আচ্ছা একটা কথা বলুন তো… আপনি শাড়িতে পিন লাগানো শিখেছেন কিভাবে?
রেহান – কিভাবে আবার! আগে আরও ৪, ৫ টা বউয়ের শাড়িতে পিন লাগিয়ে দিয়েছি তাই। (দাঁতে দাঁত চেঁপে)
আঁচল – কিইইই!!
রেহান – আর একটা কথাও না বলে রেডি হও। নয়তো তোমার খবর আছে (ধমক দিয়ে)
আঁচল – আমি তো রেডিই।
রেহান – ওকে চলো তাহলে।
আঁচল আর রেহান নিচে নামতেই দেখে সবাই ড্রয়িং রুমে বসে টিভি দেখছে।
ওদের কে দেখেই আঁচলের বাবা বলে উঠে….
আঁচলের বাবা – চলে যাচ্ছিস?
আঁচল – হ্যা বাবা। (আঁচলের মন টা খারাপ হয়ে যায়।)
আঁচলের মা – সাবধানে থাকিস মা।
আঁচল – হ্যা মা চিন্তা করো না।
রিয়াদ – আঁচল শোন। রেহানের সাথে আর খারাপ ব্যবহার করিস না।
হিয়া – হ্যা আপুই। ভাইয়ার সাথে রাগ করিস না।
আঁচল – আচ্ছা বাবা ঠিক আছে। তোমরা সবাই ভালো থেকো।
রিয়াদ – সাবধানে যাস।
আঁচল – ঠিক আছে ভাইয়া।
আঁচল আর রেহান বিদায় নিয়ে বেরিয়ে পড়ে।
আঁচল বেচারি মন খারাপ করে গাড়িতে বসে আছে। রেহান বুঝতে পারছে আঁচলের মন খারাপ।
রেহান – বেইবি… এখন কিন্তু আমার কাছ থেকে পালাতে পারবে না আর। (মুচকি হেসে)
চলবে…??