#তুমি_আমার_ভালোবাসা
#পর্ব_২২
#Munni_Akter_Priya
.
.
মৃন্ময়ের দেশে আসার কোনো ইচ্ছেই ছিল না। একদিকে ফাহাদ মৃন্ময়ের ভাই আর সবেচেয়ে কাছের বন্ধু। আর অন্যদিকে দেশে গেলে প্রিয়ার একাকিত্ব! সব মিলিয়ে খুব প্যারায় আছে। ফাহাদও সাফ সাফ জানিয়ে দিয়েছে, যেভাবেই হোক মৃন্ময়কে আসতেই হবে। তাই অগত্যা মৃন্ময়কে রাজি হতে হয়। গায়ে হলুদের রাতে ফ্লাইটে ওঠে মৃন্ময়। বিয়ের দিন সকালেই পৌঁছে যাবে।
.
আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে এদিক সেদিক দুলে দুলে নিজেকে দেখছে প্রিয়া। এভাবে দেখার কারণও আছে। ছোট থেকেই প্রিয়ার খুব শখ বউ সাজার। একবার প্রিয়া ছোট ভাইয়ার সাথে, ভাইয়ার বন্ধুর বড় ভাইয়ের বিয়ের বৌভাতের দাওয়াত খেতে যায়। তখন বউ এর দিকে অপলকভাবে তাকিয়ে ছিল। ছোট ভাইয়া ধাক্কা দিয়ে বলেছিল,
“কিরে কি দেখছিস এভাবে?”
“ভাইয়া ঐটা কি বউ?”
“হ্যাঁ।”
“ভাইয়া আমিও বউ সাজবো। ও ভাইয়া আমিও বউ সাজবো।”
প্রিয়া প্রায় চেঁচামেচি করেই কথাটা বলে। চারপাশের লোকজন তখন প্রিয়ার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে। ছয় বছর বয়সী একটা মেয়ে! সে কিনা বউ সাজতে চাইছে। ভারী মজার বিষয়। কেউ কেউ আবার এই কান্ড দেখে হাসছেও। ছোট ভাইয়া কিছুতেই প্রিয়াকে শান্ত করতে পারছিলো না। তখন যার বিয়ে সে বললো,
“তুমি বউ সাজবে?”
“হ্যাঁ। আমি ঐ মেয়েটার মত বউ সাজবো।”
“কিন্তু বউ সাজলে তো বিয়ে করতে হয়।”
“তাহলে আমিও বিয়ে করবো।”
উপস্থিত সকলে হেসে দিলো। সেও হেসে বললো,
“তুমি বর কোথায় পাবে?”
“তুমি কি হও ঐ বউটার?”
“আমিই তো ওর বর।”
“তাহলে তুমি আমারও বর হবে। ও বড় বউ আর আমি ছোট বউ।”
প্রিয়ার এই কথা শুনে সকলের সে কি হাসি। দম ফাঁটিয়ে হেসেছিল সবাই।
কথাগুলো ভেবেই আয়নার দিকে তাকিয়ে হাসলো প্রিয়া। কি কান্ডটাই না করেছিল সেদিন। সবাই তো এখনো ক্ষেপায় প্রিয়াকে। বিশেষ করে ঐ ভাইয়াটা। দেখা হলেই সবসময় বলতো,
“কি গো ছোট বউ আমায় মনে আছে?”
তখন যে প্রিয়া কি লজ্জা পেতো।
আজ প্রিয়াও বউ সেজেছে। লাল টুকটুকে বউ। ঘেরওয়ালা লাল লেহেঙ্গা পড়েছে। পাথরের গলার হার, কানের দুল, টিকলি, আর নাকে নোলক পড়েছে। দুই হাত মেহেদীর রঙে আবির্ভূত। দুই হাত ভর্তি লাল চুড়ি। হাত নাড়ালেই সেগুলো রিনিকঝিনিক আওয়াজ করছে। আওয়াজটা শুনতে বেশ লাগছে প্রিয়ার। চুলগুলো সুন্দর করে খোঁপা করা। তাতে আবার অনেকগুলো গোলাপ গুঁজে দেওয়া। ব্রাইডাল সাজ। গাঢ় কাজলে চোখগুলো টানা টানা লাগছে। নিজেকে বউ সাজে দেখে নিজেই নিজের প্রেমে পড়ে যাচ্ছে। প্রিয়া যেমনভাবে বউ সাজতে চেয়েছিল তেমনভাবেই সাজানো হয়েছে। ফাহাদ বলেছিল বিয়ের সব কিছু, এমনকি অর্নামেন্টসও ফাহাদ নিজে পছন্দ করেছে। আর পার্লারের লোকও ফাহাদই ঠিক করে দিয়েছে। প্রিয়া আপনমনেই ভাবে,
“ফাহাদ আমার পছন্দ জানলো কিভাবে? ও কি মন পড়তে পারে? নাকি ওর আর আমার চয়েজ এক? তাই বলে এত মিল? অদ্ভুত!”
আঙ্গুল কামড়ে কিছুক্ষণ কথাগুলো ভাবলো। এরপর আবার নিজেই বললো,
“ধুর ছাই! যাই হোক, মানুষটা আমার মনের মত সাজিয়েছে এটাই তো অনেক।”
এতক্ষণে আয়নায় লক্ষ করলো পেছনে মা, লামিয়া, পৃথা দাঁড়িয়ে মিটমিট করে হাসছে। ওদের এভাবে হাসতে দেখে প্রিয়া লজ্জা পেয়ে যায়। মা প্রিয়ার দিকে এগিয়ে এসে প্রিয়া দুইগালে চুমু খায়।
“আমার মেয়েটাকে কি সুন্দর লাগছে! মনে হচ্ছে চোখের সামনে লাল টুকটুকে একটা পরী দাঁড়িয়ে আছে। আজ যদি তোর বাবা থাকতেন, তাহলে দেখতি কত খুশি হত সে। দুচোখ ভরে দেখতো তার ছোট্ট পরীকে।”
মায়ের চোখে পানি স্পষ্ট। প্রিয়ার নিজের বুকেও মোচর দিয়ে ওঠে। মাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দেয়। মা তৎক্ষণাৎ প্রিয়ার চোখের পানি মুছে দিয়ে বলেন,
“খবরদার! আজ আর কোনো কান্না নয়। আমার মেয়েকে দেখতে পঁচা লাগবে এটা আমি চাইনা। তুই ওদের সাথে বাহিরে আয়। আমি দেখি সবাই রেডি হলো কি’না।”
“মা, ভাবীরা আসেনি?”
“না।”
প্রিয়ার মুখটা মলিন হয়ে গেলো। প্রিয়া ভেবেছে অন্তত আজ বিয়ের দিনে ভাবীরা আসবে। ননোদের বিয়ে অথচ দুই ভাবীর এক ভাবীও থাকবেনা। এত খুশির মুহুর্তেও তাদের পাশে পাবেনা। তারা অন্যায় করেছে করুক, আজকে যদি একবার আসতো প্রিয়া সব ভুলে যেত সব। আজ প্রিয়া ভালোবাসার মানুষটিকে নিজের করে পেতে চলেছে। তাই সবার ওপর মান-অভিমানের ভ্যানিশ করে দিতো। মা হেসে বলেন,
“আসেনি এখনো। তবে আসবে।”
প্রিয়া খুশি হয়ে বলে,
“সত্যিই আসবে?”
“হ্যাঁ।”
“কখন আসবে কখন?”
“ওরা সরাসরি কমিউনিটি সেন্টারে আসবে।”
“আচ্ছা।”
মা চলে যাওয়ার পর লামিয়া এগিয়ে আসলো। প্রিয়া দুলেদুলে বলে,
“আপু, আমায় কেমন লাগছেরে?”
“শাঁকচুন্নির মত।”
প্রিয়া মুখটা গোমড়া করে বলে,
“আপু!!! অন্তত আজ সত্যি বল।”
“সত্যিই তো বললাম।”
“রাখ তোর সত্যি। ভেবেছিলাম তোর যদি ছেলে হয় তাহলে আমার মেয়ের সাথে বিয়ে দিবো। কিন্তু এখন ডিসিশন চেঞ্জ। এমন হিংসুক বেয়াইন আমার চাইনা।”
“এখনো বিয়ে হলো না, কিছু হলো না আর তুই বাচ্চার বিয়ে পর্যন্ত চলে গেছিস?”
“ভাবতে কি কিছু করা লাগে নাকি।”
“ফাজিল।”
প্রিয়ার দুলাভাই দ্রুতবেগে রুমে প্রবেশ করলেন।
“কই কই আমার জানের টুকরাটা কই।”
দুলাভাই প্রিয়াকে আদর করে জানের টুকরা বলে ডাকে। এর ঘোর প্রতিবাদ জানায় একদিন লামিয়া। তখন দুলাভাই বলেছিল,
“তুমি তো আমার জান। আর শালিকা আমার জানের টুকরা। ভালো তো আমি তোমাকেই বেশি বাসি।”
লামিয়া মুখে কিছু না বললেও মনে মনে হেসেছিল।
দুলাভাইকে দেখে প্রিয়া আহ্লাদী স্বরে বললো,
“সুইটহার্ট দুলাভাই দেখেন না আপনার বউ কেমন হিংসা করে আমাকে।”
“কি? লামিয়া হিংসা করে তোমাকে? আমার জানের টুকরাকে হিংসা করে? এত্তবড় সাহস। কই কই সেই হিংসুক মহিলা?”
“ঐতো আপনার পিছনে।”
দুলাভাই পিছন ফিরে তাকাতেই ফাঁকা একটা ঢোক গিলে। লামিয়া কোমড়ে হাত রেখে চোখ গরম করে তাকিয়ে আছে। দুলাভাই একটু কেশে লামিয়াকে বলে,
“ও আমার লামু জান এমনে তাকাও ক্যান বাবু? ওপস স্যরি! এখন তো তুমি হবু বাবুর মা।”
“একটু আগে কি বলছো? আমি মহিলা?”
“ছিহ্। এটা বললাম নাকি আমি? কখন বললাম? এই জানের টুকরা আমি কি এটা বলেছি?”
“দুলাভাই এটা কি হলো? বাঘের মত গর্জন করে এখন বিড়ালের মত ম্যাউ ম্যাউ করছেন?”
তিনি হতাশ গলায় বলেন,
“জানের টুকরা রে, দিনশেষে তো একরুমেই থাকতে হয়। তখন যদি খুন্তির স্বাদ নিতে পারতে তাহলে বুঝতা এমন ম্যাউ ম্যাউ কেন করছি!”
দুলাভাইর কথা শুনে প্রিয়া আর পৃথা হাসতে হাসতে সোফায় গড়াগড়ি খাচ্ছে। দুলাভাই বলেন,
“হাসো হাসো। সত্যি বললে তো হাসবাই। তোমার বান্ধবী পৃথাকে জিজ্ঞেস করে দেখো ওর জামাইরেও এমনেই হাদানি-পাদানি দিয়ে রাখে। ওর কথাই বা কি বলছি আর! আজ বিয়েটা হোক। বেচারা ফাহাদেরও এই অবস্থাই হবে। তোমরা বউরা তো বাড়িতে একেকজন প্রেসিডেন্ট!”
ওরা এখনো হেসেই চলেছে।
“হাসি শেষ হয়েছে আমার জানের টুকরা? চলো তাড়াতাড়ি। কমিউনিটি সেন্টারে বরের আগে পৌঁছাতে হবে। ভাইয়ারা তাড়া দিচ্ছে।”
প্রিয়া কোনো রকমে হাসি থামিয়ে বলে,
“চলেন।”
রুমের বাহিরে যেতেই বড় ভাইয়া আর ছোট ভাইয়া প্রিয়াকে বুকে জড়িয়ে নেয় পরম আদরে। পাশ থেকে ঐ ভাইয়াটা মানে যাকে প্রিয়া বর হওয়ার কথা বলেছিল। সে বলে,
“ছোট বউ আমায় রেখেই অন্য কাউকে বিয়ে করবে?”
প্রিয়ার মুখ লজ্জায় লাল হয়ে যায়।
গাড়িতে পৃথা আর প্রিয়া পাশাপাশি বসেছে। হঠাৎ পৃথাকে খোঁচা মেরে প্রিয়া বলে,
“ঐ আর কতক্ষণে পৌঁছাবো?”
“বেশি সময় লাগবে না। কেন?”
“কেন আবার কি? ফাহাদকে জামাই সেজে কেমন লাগছে দেখবো না?”
“এত পাগল হচ্ছিস কেন?”
“তোর বিয়ের সময় তুই মনে হয় হসনি?”
“তোর মত এত না।”
“চুপ কর! ঝগরা করবিনা ঝগরুটে।”
“হুহ। ভিডিও কল দিয়ে দেখলেই তো হয়।”
“নারে। সেটা হবেনা।”
“কেন?”
“গায়ে হলুদের রাতেই বলে দিয়েছি বিয়ের সাজে সরাসরি দেখবো। কোনো ভিডিও কল হবেনা, এমনকি কোনো ছবিও শেয়ার করা হবেনা।”
“তাহলে আরকি! একটু তো ওয়েট করতেই হবে।”
“হুম। আকাশ ভাইয়া কোথায়?”
“তোর ভাইয়াদের সাথে আছে।”
“ওহ্।”
.
.
কমিউনিটি সেন্টারে পৌঁছেই ভাবীদের দেখতে পায়। প্রিয়াকে দেখে তারা হাসি হাসি মুখে এগিয়ে আসে।
“তোমাকে কি সুন্দর লাগছে প্রিয়ু।”
“এত সুন্দর ননোদিনীকে তোমরা কষ্ট দাও কিভাবে?”
প্রিয়ার কথাটা শুনে ভাবীদের মুখ মলিন হয়ে যায়। প্রিয়া দুই ভাবীর হাত ধরে বলে,
“ভাবী যা হওয়ার হয়েছে ভুলে যাও প্লিজ। মনের মধ্যে আর কোনো ক্ষোভ রেখো না। রামিম সেদিন ওরকম বিহেভ না করলে এত ঘটনা ঘটতো না। কিন্তু দেখো, রামিমও বিয়ে করেছে অন্য কাউকে। আমিও আমার ভালোবাসার মানুষটিকে বিয়ে করছি। তাহলে আর কিসের রাগ অভিমান থাকবে বলো? আর আমার ওপর যদি রাগ অভিমান থাকেও তাহলে কোনো সমস্যা নেই। আমি তো পরের ঘরে চলেই যাবো। আমাকে তোমাদের সহ্য করতে হবেনা। তোমরা শুধু ভাইয়াদের নিয়ে মায়ের সাথে এক বাড়িতে থাকো প্লিজ। আমি চলে আসাতে আমার মা যে বড্ড একা হয়ে যাবে গো। আবার আগের মত সবাই এক হয়ে যাও। নাতি-নাতনিদের নিয়ে মায়ের সময় কেটে যাবে। আমার মাকে তোমরা কেউ কষ্ট দিয়ো না গো। যদি মাকে বোঝা মনে হয় কোনোদিন এক সেকেন্ডের জন্যও তাহলে সাথে সাথে আমাকে ফোন দিবে। আমার জান্নাতকে আমি আমার কাছে এনে রাখবো। তবুও অবহেলা করো না মাকে।”
“তুমি কি আমাদের এতই খারাপ ভাবো প্রিয়ু? আমরা এখন থেকে সবাই একসাথে থাকবো আগের মত। মায়ের কোনো অবহেলা হবেনা। মাথায় তুলে রাখবো দেখো। আর তোমার প্রতিও আমাদের কোনো রাগ নেই। দোষ করলে আমরা করেছি। তুমি তো কোনো দোষ করোনি। উল্টো আমরাই ক্ষমার অযোগ্য।”
“তোমাদের ওপর কোনো রাগ নেই আমার ভাবী। এইযে তোমরা সব রাগ অভিমান ভুলে আমার বিয়েতে এসেছো, একসাথে থাকবে বলেছো এটাই আমার বিয়ের বড় গিফ্ট। আর কিচ্ছু চাইনা তোমাদের থেকে।”
“পাগলী বোন।”
বড় ভাইয়ার দুই বাচ্চা আর ছোট ভাইয়ার এক বাচ্চা মোট তিনজনে মিলে প্রিয়ার লেহেঙ্গা ধরে টানছে। প্রিয়া নিচে তাকিয়ে দেখে তিন বিচ্ছুকে। লেহেঙ্গা ধরে বলে,
“আব্বু, আম্মু আমার লেহেঙ্গা এভাবে টানলে তো খুলে যাবে। তখন তো লজ্জা পাবো ফুপি।”
ছোট ভাইয়ার ছেলেটা তুতলিয়ে তুতলিয়ে বলে,
“ও পুপি, পুপি তুমালে ছুন্দল নাগতাছে। আছো ছুবি তুলবো।”
“আমার বাবাটা ছবি তুলবে?”
“আমলা ছুবাই ছুবি তুলবো।”
“আচ্ছা চলো ফটোগ্রাফারকে বলি আমাদের চারজনের সুন্দর করে ছবি তুলে দিতে। ঠিক আছে?”
“আচ্চা।”
প্রিয়া তিন পিচ্চিকে নিয়ে বিভিন্ন স্টাইলে ছবি তুলতে ব্যস্ত। ঐদিকে বরযাত্রী এসে পড়েছে সে খেয়ালই নাই। সবাই বরের কাছে এগিয়ে গিয়েছে। পৃথাসহ প্রিয়ার স্কুল ও কলেজের বন্ধু-বান্ধবীরা গেট ধরে টাকা দাবি করেছে। খুব হৈচৈ হচ্ছে। পিচ্চিগুলা শব্দ শুনে বলে,
“মনে হয় বর এসেছে। এই চল চল বর দেখি।”
ফটোগ্রাফার বলে,
“ম্যাম আপনি দাঁড়ান, কিছু সিঙ্গেল ছবি তু্লি আপনার।”
“ঠিক আছে।”
গেটের সব ঝামেলা চুকিয়ে বরযাত্রীরা ভেতরে প্রবেশ করে। ফাহাদ ভেতরে গিয়ে থমকে যায় প্রিয়াকে দেখে। প্রিয়া তখন ছবি তোলায় ব্যস্ত। চোখ ধাধিয়ে যাচ্ছে ফাহাদের। বউ সাজে কাউকে এতটা সুন্দর লাগতে পারে! শুধু একজোড়া চোখ নয়! দুইজোড়া চোখ প্রিয়ার ওপর স্থির। একজোড়া ফাহাদের আর অন্যজোরা মৃন্ময়ের। মৃন্ময়ের দৃষ্টি ভরা অবাক, কৌতুহল আর সেই সাথে বুকে চিনচিনে ব্যথা অনুভব করা। মৃন্ময় মনে মনে ভাবে,
“আমি কি ঠিক দেখছি! প্রিয়া এখানে! তাও বউ সাজে!”
কয়েকজন ফাহাদকে নিয়ে বসায়। মৃন্ময় তখনো ঠায় দাঁড়িয়ে আছে। পা চলছে না ওর। মনে হচ্ছে মাটি কামড় দিয়ে ধরে রেখেছে। ছবি তোলা শেষে প্রিয়া ফাহাদের দিকে তাকিয়ে হা হয়ে যায়। লাল খয়েরী সেরোয়ানিতে অপূর্ব লাগছে ফাহাদকে। বাম হাতে একটা কালো ঘড়ি। মাথায় পাগড়ী নেই। পাগড়ীটা পড়ে আছে পাশের একজন ছেলে। সম্ভবত ফাহাদের বন্ধু হবে। পৃথা এসে প্রিয়াকে ফাহাদের পাশে বসায়। আড়চোখে ফাহাদকে দেখছে প্রিয়া। লাজুক লাজুক চোখে তাকায় বারবার। হুট করেই সামনে দৃষ্টি যায়। প্রিয়ার হাসি বিলীন হয়ে যায়। মৃন্ময় এখানে কেন?
তখনই ফাহাদ ইশারায় মৃন্ময়কে ডাকে,
“এদিকে আয় মৃন্ময়। ওখানে দাঁড়িয়ে আছিস কেন?”
প্রিয়া ভ্রু কুঁচকে বলে,
“কে উনি?”
“আমার ভাই।”
“আমি তো জানতাম তুমি একাই আর ফুল।”
“আরে ও আমার খালাতো ভাই। এতদিন বাহিরে ছিল। আমার বিয়েতে এসেছে।”
“ওহ্।”
প্রিয়ার মনে এবার ভয় ঢুকে যায়। মৃন্ময় ফাহাদের ভাই! ফাহাদ যদি জানতে পারে মৃন্ময় প্রিয়াকে ভালোবাসে তাহলে! তাহলে কি হবে? ভাইয়ের জন্য ত্যাগ করবে? আবার স্বপ্ন ভেঙ্গে যাবে! ভয়ে ঘেমে যাচ্ছে প্রিয়া। ফাহাদ প্রিয়াকে ঘামতে দেখে বলে,
“আর ইউ ওকে?”
“ইয়াহ্।”
প্রিয়ার বান্ধবীরা সব দৌড়ে আসে। ফাহাদকে টেনে নিয়ে বলে,
“চলেন দুলাভাই ছবি তুলবো।”
প্রিয়ার কিচ্ছু ভালো লাগছেনা। চারপাশে চোখ বুলায় প্রিয়া। সকলের এত হাসিখুশি মুহুর্ত কি নিমিষেই শেষ হয়ে যাবে? মৃন্ময় ধীরে ধীরে প্রিয়ার দিকে এগিয়ে আসে। তখনই ফুল এসে প্রিয়াকে নিয়ে যায় ছবি তোলার জন্য। প্রিয়ার হাসি আসছেনা। মুখে জোরপূর্বক কৃত্রিম হাসি ফুঁটিয়ে ছবি তুলছে। বিষয়টা খেয়াল করেছে ফাহাদ। সবার চোখের আড়ালে নিয়ে যায় প্রিয়াকে।
“কি হয়েছে তোমার প্রিয়া? এমন ভীত দেখাচ্ছে কেন তোমাকে?”
আচমকা ফাহাদকে জড়িয়ে ধরে প্রিয়া।
“তুমি আমায় ঠকাবেনা তো ফাহাদ? আমায় ছেড়ে যাবেনা তো?”
“রিলাক্স! কি হয়েছে আমায় বলো।”
“মৃ…ন্ম…য়!!”
“মৃন্ময় কি?”
প্রিয়া চুপ করে আছে।
ফাহাদ বললো,
“আমি বিয়েটা করবো না।”
প্রিয়ার মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়লো।
“বিয়ে করবেনা মানে?”
“আমি বিয়েটা করবোনা! এটাই বলবো ভেবেছিলে?”
ফাহাদের কথার কিছুই বুঝতেই পারছেনা প্রিয়া। হ্যাঁচকা টান দিয়ে প্রিয়াকে নিজের কাছে নিয়ে আসে। চোখে চোখ রেখে বলে,
“আমি সব জানি। মৃন্ময়ের সাথে তোমার বিয়ে ঠিক হয়েছিল। মৃন্ময় রিমির জন্য বিয়েটাও ভেঙ্গে দেয়। এরপর মৃন্ময় তোমাকে ভালোবেসে ফেলে। সব জেনেশুনেই আমি এতদূর এগিয়েছি।”
“তুমি সব জানতে? সব জেনেও বিয়ে করছো?”
“লিসেন প্রিয়া, আমি এতটা মহৎ নই যে নিজের ভালোবাসাকে ভাইয়ের হাতে তুলে দিবো। হ্যাঁ দিতাম হয়তো, যদি তুমি মৃন্ময়কে ভালোবাসতে। আমি এটাও জানতাম যে তুমি মৃন্ময়কে ভালোবাসতে না। শুধুমাত্র পরিবারের কথা ভেবে বিয়ে করতে রাজি হয়েছিলে। আস্তে আস্তে তুমি মৃন্ময়কে বিশ্বাস করতে শুরু করেছিলে তখনই মৃন্ময় তোমায় ঠকায়।”
“তুমি এসব কি করে জানো?”
“ছোট ভাইয়া বলেছে।”
“আর মৃন্ময় যে আমাকে ভালোবাসে এটা কিভাবে জেনেছো?”
“যেদিন মৃন্ময় প্রথম তোমাকে অফিসের এলাকায় দেখে। ঐদিন সন্ধ্যায় আমি আর মৃন্ময় রেষ্টুরেন্টে খেতে গিয়েছিলাম। তোমার পিছু যখন আমরা নিই তখন তোমায় পেছন থেকে দেখেই চিনেছিলাম। বিশ্বাস করো তখন এত কষ্ট হয়েছিল এটা ভেবে যে মৃন্ময় আর আমার ভালোবাসার মানুষটা একজনই। অনেকবার ভেবেছিলাম সরে যাবো। কিন্তু মন বললো এই ভুল করিস না। তখন আমি সব ইনরফরমেশন নিতে লাগলাম। এরপর যখন তোমার ভাইয়ার সাথে পরিচয় হয় ভাইয়াকে সব খুলে বললাম। পরে ভাইয়া সব বলেছে।”
“তাহলে আমার প্রথম অতীতের কথাও তুমি জানতে? এজন্যই আমার কথাগুলো তখন শুনোনি?”
“হ্যাঁ জানতাম। কিন্তু ঐগুলা ভাইয়া বলেনি। তোমার ডায়েরী পড়ে জেনেছি। প্রথম যেদিন তোমার ঘরে নানীর সাথে বসে গল্প করি সেদিনই টেবিলে তোমার ডায়েরী পাই এবং লুকিয়ে নিয়ে আসি বাসায়। বিশ্বাস করো এত কেঁদেছি ডায়েরীটা পড়ে যা বলে বোঝাতে পারবো না। আর ডায়েরীটা পড়ার পর থেকেই তোমার প্রতি ভালোবাসা কয়েকশ গুণ বেড়ে যায়। মনে মনে এটাই প্রতিজ্ঞা নেই, তোমাকে কিছুতেই হারাতে দিবো না। কি করে ছাড়বো বলো? ভালোবাসি তো খুব।”
প্রিয়া ফাহাদের বুকে মাথা রেখে নিঃশব্দে কাঁদে। সকল ভয় দূর হয়ে গেছে। আসলে সবাই এক হয়না। ভুল মানুষের মাঝেও একজন সঠিক মানুষ আসে আমাদের জীবনে। হয়তো আমরা চিনিনা নয়তো দেড়িতে চিনি। আর ফাহাদ সেই সঠিক মানুষটাই।
.
ফাহাদের সাথে প্রিয়ার বিয়েটা খুব সুন্দরভাবে মিটে যায়। ধুমধাম করে বিয়ে হয়। কোনোকিছুরই কমতি ছিল না বিয়ের আয়োজনে। সবাই যখন খাওয়া-দাওয়ায় ব্যস্ত তখন মৃন্ময় প্রিয়ার কাছে আসে।
“প্রকৃতি কতটা নিষ্ঠুর প্রতিশোধ নেয় তাইনা প্রিয়া?”
প্রিয়া মৃন্ময়ের দিকে উৎসুক দৃষ্টিতে তাকায়।
মৃন্ময়ের চোখমুখ লাল হয়ে আছে। না পাওয়ার কষ্টটা ভেতরে পুড়ে ছাই করে দিচ্ছে। মুখ দিয়ে কথা বের হচ্ছেনা। কোনোরকমে বললো,
“শুধুমাত্র একটা ভুল আমার জীবনটাকে এলোমেলো করে দিলো। সেদিন যদি রিমির কথায় গলে ঐ ভুলটা না করতাম তাহলে তোমায় পেতাম। তুমি আমার বউ হতে। কিন্তু প্রকৃতি কি প্রতিশোধটাই নিলো দেখো! তোমাকে ভাইয়ের বউ বানিয়ে দিলো। অন্য কাউকে বিয়ে করলেও হয়তো সহ্য করতে পারতাম কিন্তু এই কষ্টটা অসহনীয় প্রিয়া। প্রকৃতির প্রতিশোধ খুব কঠিন খুব।”
“মিষ্টার মৃন্ময়, একটা সঠিক সিদ্ধান্ত জীবনকে যেমন সুন্দর করতে পারে তেমনি একটি ভুল সিদ্ধান্ত জীবনকে শেষও করতে পারে। তাছাড়া আমার যা বলার সেদিনই বলে দিয়েছি। আজ আর নতুন করে কিছু বলার নেই। আমার ভালোবাসার মানুষটা ফাহাদ’ই।”
“না পাওয়ার কষ্ট সহ্য করা যায়। কিন্তু পেয়েও হারানোর কষ্ট সহ্য করা যায়না।”
“আমি মনে করি, আল্লাহ্ যা করে ভালোর জন্যই করে।”
প্রিয়া আর কথা বাড়ায় না। সামনের দিকে এগিয়ে যায়। প্রিয়ার যাওয়ার দিকে একরাশ আফসোস নিয়ে তাকিয়ে থাকে মৃন্ময়।
প্রিয়াকে একটা চেয়ারে টেনে বসায় দুলাভাই।
“বসো বসো, নিজের বিয়েতে নিজেই খাবেনা?”
বলেই এক লোকমা বিরিয়ানি প্রিয়ার মুখে তুলে দিলো। আর ছোট ভাইয়া সেই মুহুর্তের ছবি তুলে নিলো। জন্মদিনে পঁচাতে কাজে লাগবে পরে….
#তুমি_আমার_ভালোবাসা
#পর্ব_২৩
#Munni_Akter_Priya
.
.
দরজার সামনে দাঁড়িয়ে দুলাভাই ফাহাদকে বলে,
“বুঝলা ফাহাদ, বিড়ালের মত ম্যাউ ম্যাউ করার আগেই বাসরঘরে বিড়াল মেরে ফেলো।”
ফাহাদ কি বললো শোনা গেলো না। প্রিয়া আড়ি পেতে শোনার চেষ্টা করছে। দুলাভাই আবার বলে,
“হাইসো না মিয়া। আমার শালিকারে তো চিনো না। এমন নাকানিচুবানি খাওয়াইবো টেরও পাইবা না।”
দুলাভাইর সাথে সাথে আকাশসহ আরো অনেকেই হোহো করে হেসে দিলো। শুধুমাত্র মৃন্ময়ই চুপ করে আছে। ওর এসবের ভেতর একদম থাকার ইচ্ছে ছিলনা। সবার জোড়াজুড়িতেই বাসরঘরের সামনে আসা। মৃন্ময়কে বেশ ভালো করেই দেখছে ফাহাদ। ফাহাদ ভাবে, কষ্ট হওয়াটাই স্বাভাবিক। সবাই চলে যাওয়ার পর ফাহাদ রুমে ঢোকে। প্রিয়া তখন দরজার আড়ালে ছিল। আচমকা প্রিয়াকে দেখে ভয় পেয়ে যায়।
“ওমা গোওওও!”
প্রিয়া ফাহাদের মুখ চেপে ধরে বলে,
“চুপ! এভাবে চেঁচাচ্ছো কেন? আমি কি চোর না ডাকাত?”
প্রিয়ার হাত সরিয়ে ফাহাদ বলে,
“তুমি এখানে কেন?”
“শুনছিলাম।”
“কি?”
“তোমাদের কথা। দুলাভাই বিড়াল মারার কথা বললো কেন? নিরীহ বিড়ালের দোষ কি?”
ফাহাদ মিটমিট করে হাসছে।
“উত্তর না দিয়ে এমন চোরের মত হাসছো কেন?”
“চোররা এভাবে হাসে?”
“এটাকে চোরামি হাসিই বলে।”
“আর কত রকম হাসি আছে?”
“কথা ঘুরাচ্ছো কেন?”
“কখন কথা ঘুরালাম?”
“বিড়াল মারার কথায় ছিলাম আমরা।”
“ওহ আচ্ছা। বিড়ালের তো অনেক দোষ। কোনটা রেখে কোনটা বলবো?”
“যেগুলো মেইন সেগুলোই বলো।”
“আচ্ছা বলছি। আসো।”
ফাহাদ প্রিয়াকে টেনে ড্রেসিংটেবিলের সামনে নিয়ে যায়। পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে বলে,
“জানো বিড়ালটাকে না আমার মারতে ইচ্ছে করেনা।”
“তাহলে মেরো না।”
“মারবোই তো না। এত কিউট বিড়াল কেউ মারতে নাকি?”
“কোথায় সেই বিড়াল? আমিও দেখবো।”
“দেখবে?”
“হ্যাঁ।”
“শিওর?”
“পাক্কা শিওর।”
“আচ্ছা। আয়নার দিকে তাকিয়ে দেখো লাল লেহেঙ্গা পড়া মেয়েটাই বিড়াল।”
প্রিয়া চোখগুলো বড় বড় করে বলে,
“কিহ্? আমি বিড়াল?”
ফাহাদের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়েই পিঠে কয়েক দফা কিল বসিয়ে দিলো। ফাহাদ মার খেয়ে বলে,
“দুলাভাই ঠিকই বলেছিল। এজন্যই বাসর রাতে আগে বিড়াল মারা উচিত। এখন বিড়ালের হাতেই আমায় মার খেতে হচ্ছে?”
“আরো মার খাওয়ার ইচ্ছে আছে?”
“না, না। আমি আর তোমার ধারেকাছেও ঘেষছি না। আমি শুতে গেলাম।”
ফাহাদ বিছানার একপাশে গিয়ে শুয়ে পড়লো। পিছু পিছু প্রিয়াও গেলো। প্রিয়াকে দেখে ফাহাদ অন্যপাশে ঘুরে শুলো। আর মিটিমিটি হাসে। পেছন থেকে প্রিয়া বলে,
“তোমার কি খুব লেগেছে?”
ফাহাদ চুপ।
“কথা বলছো না কেন?”
ফাহাদ কথা বলছে না দেখে প্রিয়াও বিছানায় উঠে গেলো। ফাহাদের দুই হাতের মাঝখান দিয়ে একদম মুখোমুখি বালিশে মাথা রাখলো প্রিয়া। ফাহাদ একবার তাকিয়ে আবার চোখ বন্ধ করে ফেলে। প্রিয়া ফাহাদের গালে হাত রেখে বলে,
“রাগ করেছো?”
“আমি রাগ করলেই কার কি আসে যায় তাতে?”
“অনেক কিছু আসে যায়।”
“সরো।”
“না সরবো না।”
প্রিয়া এক হাত-পা ফাহাদের ওপর দিয়ে জাপটে ধরে শুয়ে রইলো। ফাহাদ আর তখন রাগের অভিনয় করে থাকতে পারলো না। চট করে প্রিয়াকে জড়িয়ে ধরে হেসে দিলো।
“রাগ শেষ?”
“আমি কি সত্যি রাগ করেছিলাম নাকি?”
“তাহলে কি মিথ্যা রাগ করেছিলে?”
“হ্যাঁ। যাতে তুমি নিজ থেকেই কাছে আসো।”
“কি ফাজিল!!”
ফাহাদ প্রিয়াকে ধরে উঠে বসায়।
“আচ্ছা প্রিয়া একটা জিনিস খেয়াল করেছো?”
“কি?”
“তোমাকে এত এত গয়না দিয়েছি। কিন্তু একটা জিনিস দেইনি।”
“কি?”
“ভেবে দেখো তো কি!”
“আমি তো কোনো কিছুর কমতি দেখছি না।”
“পা দাও।”
“মানে?”
“আরে দাও না।”
প্রিয়া পা এগিয়ে দিলো।
“এখন দেখেছো কিসের কমতি?”
“নূপুর!!”
“হ্যাঁ।
ফাহাদ বিছানা থেকে নেমে হাঁটু গেড়ে বসে। প্রিয়ার পা ফাহাদের হাঁটুর ওপর রাখে। খুব যত্নসহকারে নূপুরগুলো পড়িয়ে দেয়। নূপুরের সৌন্দর্যে প্রিয়া বিষ্মিত হয়। ফাহাদ আলতো করে প্রিয়ার পায়ে চুমু খায়। প্রিয়া শিউরে উঠে পা সরিয়ে নেয়। ফাহাদ প্রিয়ার পাশে বসে। পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে প্রিয়ার ঘাড়ে মুখ ডোবায়।
“ফাহাদ!”
“হু।”
“আমার না আনইজি লাগছে।”
সাথে সাথে ফাহাদ প্রিয়াকে ছেড়ে দিয়ে বলে,
“স্যরি।”
“স্যরি কেন?”
“তোমার আনইজি লাগবে এমন কিছু করা ঠিক হবেনা।”
“আরে আমি বলতে চেয়েছি, এই ভারী ড্রেসে আমার আনইজি লাগছে। ড্রেসটা চেঞ্জ করা দরকার।”
“তোমার লাগেজ তো ফুলের ঘরে মেবি। দাঁড়াও আমি নিয়ে আসি।”
“না, না। লাগবে না।”
“তোমার না আনইজি লাগছে?”
“হ্যাঁ। তো?”
“তো ড্রেস চেঞ্জ করবে না?”
“করবো তো। তোমার কোনো ড্রেস দাও।”
“আমার ড্রেস তোমার গায়ে লাগবে।”
“না তো! তুমি যেই মোটা।”
“আমি একটুও মোটা নই। আমি একদম ফিট।”
“কচু। এখন তোমার একটা লুঙ্গি আর শার্ট দাও।”
“তুমি লুঙ্গি পড়বে?”
“হ্যাঁ পড়বো। দাও।”
ফাহাদ একটা লুঙ্গি আর শার্ট এগিয়ে দেয় প্রিয়ার দিকে।
“এখানে দাঁড়িয়ে আছো কেন? আমার চেঞ্জ করা দেখবে?”
“দেখলে কি হয়েছে?”
প্রিয়া চোখ গরম করে তাকায়। ফাহাদ,
“যাচ্ছি যাচ্ছি।”
বলে ব্যালকোনিতে চলে যায়।
প্রিয়া লাইট নিভিয়ে দিয়ে ডিম লাইট জ্বালিয়ে দেয়। শার্ট পড়তে পারলেও লুঙ্গিটা কিছুতেই পড়তে পারছেনা। অনেক চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়। হতাশ হয়ে বিছানায় বসে পড়ে।
ফাহাদ ব্যালকোনি থেকে বলে,
“হয়েছে তোমার?”
“না, ফাহাদ।”
“আমি কি রুমে আসবো?”
“আসো।”
ফাহাদ রুমে এসে দেখে লুঙ্গি হাতে নিয়ে প্রিয়া বসে আছে হতাশ মুখে। শার্ট’টা হাঁটুর এক ইঞ্চি উপরে ছুঁই ছুঁই করছে। এভাবে দেখে ফাহাদের ঘোর লেগে যায়। নিজেকে সামলে নিয়ে বলে,
“লুঙ্গি পড়ছো না কেন?”
“পারছিনা তো। এত প্যাঁচের জিনিস পড়ো কিভাবে তোমরা?”
ফাহাদ হো হো করে হেসে দিলো। প্রিয়া বিরক্ত নিয়ে বললো,
“এত হেসো না তো। পারলে লুঙ্গিটা পড়িয়ে দাও।”
“আমি পড়িয়ে দিবো?”
“এমন একটা ভাব ধরছো যেন আমি পরপুরুষকে বলেছি। দাও দাও পড়িয়ে দাও।”
“আচ্ছা উঠে দাঁড়াও।”
প্রিয়াকে এমন অবস্থায় দেখে ফাহাদের মাথা ঘুরে ওঠে। কত স্বপ্নই দেখেছে প্রিয়াকে বউ করার। কিন্তু এত কাছে এসেও ফাহাদের সব তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে। লুঙ্গি পড়ানো শেষে প্রিয়া ড্রেসিংটেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে ঘুরে ঘুরে নিজেকে দেখছে। ফাহাদের দৃষ্টি তখন প্রিয়ার ওপর। কত হাসিখুশি একটা মেয়ে। ফাহাদ আস্তে আস্তে প্রিয়ার দিকে এগিয়ে যায়। প্রিয়া ফাহাদের দিকে ঘুরে বলে,
“দেখো তো আমায় কেমন লাগছে!”
ফাহাদ প্রিয়ার মুখের ওপর আলতো করে হাত রাখলো। পাজকোলে করে বিছানায় নিয়ে যায়। প্রিয়ার তখন দম যায় যায় অবস্থা। ফাহাদ যতই কাছে যাচ্ছে প্রিয়ার নিঃশ্বাস ততই ভারী হচ্ছে। একটা সময় এতটা কাছাকাছি এসে পড়ে যে দুজনের নিঃশ্বাস একত্রে মিসে যাচ্ছে। প্রিয়ার চুলগুলো হাতখোঁপা করা ছিল। বাম হাতে খোঁপাটা খুলে দেয় ফাহাদ। চুলে মুখ ডুবিয়ে ঘ্রাণ নিতে থাকে। মাতাল করা ঘ্রাণ। বাম হাত প্রিয়ার ঘাড়ে রেখে কপালে, গালে, ঠোঁটে, গলায় আলতো করে চুমু খায়। এরপর ঘাড়ে গভীর চুমু এঁকে দেয়। প্রিয়ার অবাধ্য হাত তখন ফাহাদের শার্ট আঁকড়ে ধরে। ফাহাদ এক হাতে প্রিয়ার শার্টের বোঁতামগুলো খুলে ফেলে।
একটা সময় দুজনই হারিয়ে যায় ভালোবাসার অসীম সীমায়। যেখানে কেউ আটকানোর নেই, কেউ বাঁধা দেওয়ার নেই। একটি ভালোবাসা সম্পূর্ণ পূর্ণতা পেতে মোহিত হয়ে ওঠেছে একে অপরের ভালোবাসায়।
.
.
সকাল সকাল গোসল করে ফ্রেশ হয়ে নেয় প্রিয়া। ড্রয়িংরুমে গিয়ে দেখে সবাই কাজে ব্যস্ত। বৌভাতের আয়োজনের ব্যবস্থা করছে। প্রিয়া শ্বাশুরীর দিকে এগিয়ে যায়। শ্বাশুরী মা তখন মৃন্ময়ের সাথে কথা বলছো। কিছু একটা নিয়ে শ্বাশুরী-মা খুব বকছে মৃন্ময়কে। মৃন্ময় প্রিয়াকে দেখে থমকে যায়। কালো জর্জেট একটা শাড়ি পড়েছে প্রিয়া। হাতে ম্যাচিং করা কালো চুড়ি। নাকে সাদা পাথরের ছোট্ট একটা নাকফুল। লম্বা চুলগুলো থেকে পানির ফোঁটা পড়ছে। পায়ের নূপুরগুলোর শব্দ কানে বাজছে। মাথায় কাপড় দেওয়া। একদম স্নিগ্ধ লাগছে। মৃন্ময়ের কষ্ট যেন বহুগুণ বেড়ে যায়। প্রিয়া এগিয়ে গিয়ে শ্বাশুরীকে সালাম করে। তিনি বলেন,
“আরে তুমি এত সকালে ঘুম থেকে ওঠেছো কেন?”
“আমি তাড়াতাড়িই ঘুম থেকে ওঠি সবসময়।”
“এখন থেকে এত তাড়াতাড়ি ওঠার দরকার নেই। বাড়ির সব কাজ করার জন্য মানুষ আছে।”
“আচ্ছা আমি তাহলে ফুলের কাছে যাই?”
“দেখো গিয়ে ঘুমাচ্ছে হয়তো। পারলে একটু ওকেই ঘুম থেকে তোলো। খুব ঘুমকাতুরে হয়েছে।”
মৃন্ময় প্রিয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। চোখ সরছেনা। প্রিয়া এখন সম্পূর্ণই অন্য একজনের। সেই অন্য একজনটা আর কেউ নয়। নিজেরই ভাই ফাহাদ। মৃন্ময় আজই এখান থেকে চলে যেতে চাইছে। এভাবে প্রিয়াকে দেখতে পারছেনা। নিজেকে সামলানো কঠিন হয়ে যাচ্ছে। এটা নিয়েই সকাল সকাল খালামনির সাথে কথা কাটাকাটি হচ্ছে। মৃন্ময়ের মা এসে তার বোনকে বোঝায় যাতে মৃন্ময়কে যেতে দেয়। কারণ তিনি তো মা। নিজের ছেলের কষ্টটা তিনি বুঝতে পারছেন।
প্রিয়া ফুলের রুমে গিয়ে দেখে ফুল ঘুমাচ্ছে। দুই/তিন বার ডাকতেই ফুল ঘুম থেকে ওঠে যায়। প্রিয়াকে জড়িয়ে ধরে বলে,
“ভাবী তুমি!!! তাই তো বলি এত তাড়াতাড়ি আমার ঘুম ভাঙ্গলো কিভাবে।”
“আমি ডেকেছি বলে ঘুম ভেঙ্গেছে?”
“হুম। কারণ তুমি তো যাদু জানো।”
ফাহাদ শার্টের হাত ফোল্ড করতে করতে ফুলের রুমে ঢুকে বলে,
“এখানে ননোদকে আদর করে ঘুম ভাঙ্গানো হচ্ছে! অথচ আমার বেলায় আদর নেই?”
ফুল বলে,
“ভাইয়া তুমি এত হিংসুটে কেন বলো তো?”
“সত্যি বললে তো হিংসুক হবোই। আমাকে একটু চুমুটুমু দিয়ে ঘুম ভাঙ্গালে তোর ভাবীর মহাভারত কি অশুদ্ধ হয়ে যেত রে?”
“তুমি না দিনদিন নির্লজ্জ হয়ে যাচ্ছো ভাইয়া।”
“তোর ভাবীও তাই বলে। তুই তো দেখছি তোর ভাবীর মত হবি।”
“তাও ভালো। তোমার মত তো হবো না।”
“কি বললি?”
ফুল প্রিয়াকে ছেড়ে দিয়ে দৌঁড়ে ওয়াশরুমে চলে যায়। প্রিয়া আড়চোখে ফাহাদকে দেখছে। লজ্জায় ভালো করে তাকাতে পারছেনা। ফাহাদও কালো কালার শার্ট পড়েছে। চুলগুলো স্পাই করেছে। দেয়ালের সাথে এক পা তুলে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। প্রিয়া লাজুক লাজুক মুখে বলে,
“ওভাবে কি দেখছো?”
“আমার লজ্জাবতী বউকে দেখছি। কালকে কি ডোজ বেশি হয়ে গেছিল?”
“ফাজিল, কুত্তা।”
প্রিয়া দৌঁড় দিতে নিলেই ফাহাদ হাত ধরে ফেলে। জড়িয়ে ধরে চুমু খেতে থাকে। ফুল তখন ওয়াশরুম থেকে বের হয়।
“এহেম!! এহেম!!”
প্রিয়া ফাহাদের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে দৌঁড়ে চলে যায়……
চলবে….