#খোলা_জানালা
#৪র্থ_পর্ব
#অনন্য_শফিক
‘
‘
‘
নাঈমের মা তার বুকের গোপন জায়গা থেকে মোবাইল ফোন বের করলেন। তারপর বাবার ফোনে কল দিয়ে বললেন,’ছিঃ ছিঃ ছিঃ!বেয়াই সাহেব,আপনার মেয়ে তো আপনার সাথে সাথে আমারও জাত কূল ডুবাইলো!’
বাবা ও পাশ থেকে অস্থির হয়ে জিজ্ঞেস করলেন,’কী হয়েছে বেয়াইন?কী করেছে মীরা?’
নাঈমের মা তার কন্ঠ নামিয়ে এনে বললেন,’বলতেও তো লজ্জা লাগে!কিন্তু না বললেও যে হয় না বেয়াই!আপনার মেয়ের আরেক ছেলের সাথে সম্পর্ক আছে।গতকাল রাতে আমার ছেলেরে ঘুমে রাইখা সে তার ওই প্রেমিকের সাথে দেখা করার সময় আমার হাতে নাতে ধরা পড়ছে!’
নাঈমের মায়ের কথা শুনে আমার কান কেমন যেন স্তব্ধ হয়ে এলো।মনে হলো মিথ্যের কোন রাজ্যে এসে আটকে গেছি আমি।বাবাও ও পাশ থেকে চুপ হয়ে গেছেন কেন জানি!হয়তোবা এমন নোংরা একটা কথা নিজ মেয়ের সম্পর্কে শুনবেন তা তিনি কল্পনাও করেননি।কিন্তু আমার বিশ্বাস বাবা মা এ কথা বিশ্বাস করবেন না কোন সময়।তারা তো আমায় চেনেন।জগতের সব মানুষ মিলে এক হয়ে আমার বৈরিতা করলেও তারা ঠিক আমার মাথার ছায়া হয়ে থাকবেন।তারা আমায় বিশ্বাস করবেন।কারণ তারা জানেন আমি কেমন!কোন প্রকৃতির!
বাবার থেকে কোন সাড়া না পেয়ে নাঈমের মা এবার বললেন,’বেয়াই সাহেব আপনি ইচ্ছে করেই আমার সর্বনাশটা করেছেন।আমার নম্র ভদ্র ছেলেটার কাছে আপনার ঘরের নষ্ট জিনিসটা চালিয়ে দিয়েছেন!আমি জানি আপনাকে এসব বলে কোন লাভ নাই।কারণ আপনি শুনেও না শোনার ভান করে থাকবেন।বেয়াই,নিজে যখন শিক্ষক ছিলেন তখন তো খুব গলা বড়ো করে নৈতিক শিক্ষা দিতেন।এখন তো দেখি নিজের ঘরেই অনৈতিকতার কোম্পানি!’
কথাগুলো একদমে বলে হি হি করে হেসে উঠলেন নাঈমের মা।
বাবা ও পাশ থেকে শুধু একটা লম্বা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন।কিন্তু কথা বললেন না।
নাঈমের মা এবার বললেন,’বেয়াইনের কাছে একটু ফোনটা দেন।দুইটা কথা বলি।’
বাবা মার কাছে ফোন দিলেন।
এবার নাঈমের মা মাকে বললেন,’বান্ধবী,বিরাট তো গর্ব করতা জামাই নিয়া।তোমার মাস্টার জামাই পবিত্র।তোমার সংসার পবিত্র।পবিত্র জামাইর সাথে মেলামেশা কইরা তাইলে অপবিত্র সন্তান জন্ম দিলা কেন?’
মা বোধহয় বেশ অবাক হয়েছেন।
তিনি কথার প্যাঁচগোছ না বোঝে সরাসরি বললেন,’কী হয়ছে মিনা?কোন সমস্যা হয়ছে?মীরা কোন বেয়াদবি করছে?’
‘না না।বেয়াদবী করে নাই।শুধু বাসর রাইতে নিজের জামাইরে ঘুমের অষুধ খাইয়ে ঘুম পাতাইয়া রাইখা পুরান প্রেমিকের সাথে—‘
কথাটা শেষ করতে পারলেন না নাঈমের মা।তার আগেই নাঈম তার মায়ের হাত থেকে ফোন কেড়ে নিয়ে সে মাকে বললো,’শুনুন।আমার মা আপনাদের কাছে সব সত্য বলেনি।বানিয়ে বলছে।আপনারা আজকেই আসুন প্লিজ!নয়তো সমস্যা হবে আপনাদের মেয়ের!’
ও পাশ থেকে মা আর কথা বলার সময় পাননি।তার আগেই নাঈমের কাছ থেকে ফোন কেড়ে নিলো তার মা।তারপর ওর কলার ধরে টেনে বারান্দার বাইরে এনে উঠোনে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়ে বললো,’যা তুই এ বাড়ি থেকে বের হয়ে যা।আজ থেকে তুই আমার সন্তান না।যা ভাগ।বউ নিয়া ভাগ।যাও যাও তুমিও সাথে যাও।বাইর হও আমার ঘর থাইকা।’
নাঈমের সাথে আমাকেও বাড়ি থেকে বের হয়ে যেতে বললেন তার মা।আমি বারান্দা থেকে যখন উঠোনে নেমে যেতে চাইলাম তখন নাঈম এসে আমার হাত ধরে বললো,’না।তুমি ঘর থেকে বের হবে না।আমিও বের হবো না।এই ঘরটা আমার মায়ের নয়।আমার বাবার।মৃত্যুর পর বাবার সম্পত্তিতে তার সন্তানের অধিকার বেশি।আর যে মা অসৎ তাকে সত্যের পথে ফিরিয়ে আনা সন্তানের কর্তব্য।আমি সেই কর্তব্য পালন করবো।আজ তোমার বাবা মা এখানে আসবেন।তারপর দেখবো প্রতারক কে ছিল?তোমার বাবা যদি আমার মাকে একদিন ঠকিয়ে থাকেন এর জবাবদিহীতা তিনি এখানে করে যাবেন।আর আমার মাও তার কাছে এই জবাবদিহীতা করবেন যে কোন অপরাধে তিনি তোমার উপর অত্যাচার করেছেন এবং তোমার চরিত্রে কেন কালিমা লেপেছেন!’
ছেলের মুখ থেকে এমন যৌক্তিক আর প্রতিবাদী কথা শোনে নাঈমের মা কেমন যেন ঝড়ে নিভে যাওয়া বাতির মতো দপ করে নিভে গেলেন।
‘
#চলবে
‘