# Love_warning
# your_love_is_my_drug_addiction
# Part_24
# ফারজানা
শিশির ওর আম্মুর দিকে তাকালো দেখলো ওর আম্মুও চুপচাপ বসে আছে। শিশিরের আম্মু এমনি অনেক সাহসী হলে কি স্বামীর কাছে একদম ভীতু। শিশির কোনো উপায় না পেয়ে নিজের রুমে এসে তিতি কে ফোন দিলো……
“কি রে স্যারের হবু বউ সরি মেম কেমন আছেন? আর আপনার কি খবর একেবারে ভুলে গেছেন দেখছি?”
“তিতি এএএএ”
“ওই কান্না করছিস কেনো কি হয়েছে বলতো?”
“আব্বু আমার বিয়ে অন্য কোথায় দিয়ে দিবে”
“হাহাহা প্লিজ পরের একটা জোকস বল শিশির বেবি”
“এইটা জোকস না সত্যি আব্বুর বন্ধুর ছেলের সাথে নাকি বিয়ে দিবে আমার”
“কি বলছিস আংকেল এমন কিছু বলবে বা তোর বিরুদ্ধে যাবে আমার কেমন যেনো ট্রাস্ট হচ্ছে না”
“সত্যিই এখন আব্বু আমার আর স্যারের মাঝে ভিলেন হয়ে দাড়িয়েছে। ”
“তো কি করবি বলে ভাবছিস?”
“শালী যদি আমিই ভেবে সব ঠিক করতে পারতাম তোকে ফোন দিতাম নাকি?”
“ওই খবরদার বকাঝকা করবি না দাড়া আমাকে ভাবতে দে”
“তাড়াতাড়ি ভাব আর বল”
“আমাকে কি তোর প্রবলেম সলভ করার মেশিন মনে হয় নাকি?”
“এত কথা না বলে ভাব তাড়াতাড়ি আমার ফোনের টাকা শেষ হয়ে যাচ্ছে”
“কিপ্তি কোথাকার। আচ্ছা তুই কি প্রবণ ভাইয়াকে বলেছিস এই বিষয়ে”
“নাহ আগেই তোকে বলছি”
“তাহলে শুন তুই প্রবণ ভাইয়াকে কথাটা বল। আর সাথে এইটাও বল স্যার যেনো তোর বাসায় বিয়ের প্রস্তাব পাঠায়”
“আমি এত তাড়াতাড়ি বিয়ে করবো না”
“তাহলে তোর আব্বুর পছন্দের ছেলেকে বিয়ে করে ফেল টাটা”
“এই না না ওকে যা তুই যেহেতু বলছিস আমি স্যার কে ফোন দিচ্ছি”
“হুম দে বাট মিসকল দিস না”
“আমার ইচ্ছা আমি যা মন চায় দিবো তোর কি কুত্তি”
“নাহ তোর ভালোর জন্যই বলছিলাম মিসকল না দেওয়ার জন্য”
তিতি মুখ চেপে হাসছে শিশিরের কথা শুনে….
“তুই হাসছিস তাই না?”
“একদম না”
“হাসলে তোর মুখে পঁচা ডিম ছুড়ে মারবো হুহহ”
“ওই তুই রাখতো। মানুষ ঠিকই বলে পরের উপকার করতে নাই যদি মানুষটা তোর মতো তার ছিড়া হয়”
“আমি তার ছিড়া তুই তার ছিড়া”
তিতি ফোনের ওপাশ থেকে ফোন কেটে দেয়…..
“হ্যালো হ্যালো ওই তিতি মুরগি।।।। যাহ ফোন কেটে দিছে। কি করবো তিতি তো বললো স্যার কে ফোন দেওয়ার জন্য বরং ফোন দেই।”
শিশির প্রবণ কে ফোন দিলো……
“হ্যালো আসসালামু আলাইকুম আন্টি কেমন আছেন বাড়ির সবাই ভালতো?”
“ওই আমাকে তোমার কোন দিক থেকে আন্টি আন্টি লাগে বলতো?”
“ওহহ সরি। দাড়াও আমি ভুলে ফোন ধরে ফেলেছি ফোন কেটে আমি কল দিচ্ছি”
“সমস্যা নাই আমিতো মিসকল দেই নাই”
“আমি মনে হয় স্বপ্ন দেখছি দাড়াও ঘুম থেকে উঠছি”
“ওই মজা করেন কেনো আপনি আমার সাথে”
“মজা করছি না সিউর হচ্ছি তুমি কি সত্যিই ফোন দিয়েছো নাকি স্বপ্ন দেখছি”
“আমাকে কি আপনার কিপ্টা মনে হয়?”
“তাতো অবশ্যই”
“ওই কি বললেন আপনি?”
“নাহ তেমন কিছু না এখন বলো কি বলবে?”
“আপনি কি খুব বিজি যে যা বলার তাড়াতাড়ি বলতে হবে”
“আল্লাহ এ কার পাল্লায় পড়লাম। নাহ বিজি না তুমি তোমার সময় অনুযায়ী বলো কোনো সমস্যা নাই”
“ধ্যাত মুডটাই নস্ট হয়ে গেলো”
শিশির ফোন কেটে দিলো। ওর এখন রাগ হচ্ছে প্রবণের উপর। কেনো যে সে ভালোবাসতে গেলো……
প্রবণ ফোন দিলো শিশির ধরলো না। অনেকবার ফোন দেওয়ার পর শিশির ফোন ধরলো…..
“কি হয়েছে আজ আমার মেঘ পরীর মন খারাপ বুঝি?”
শিশির কান্না করছে। প্রবণ শিশিরের কান্নার আওয়াজ শুনতে পেলো……
“কি হয়েছে মেঘ পরী এইভাবে কান্না করছো কেনো কিছু কি হয়েছে প্লিজ বলো মেঘ পরী?”
“আব্বু আব্বু আমার…..”
কান্নার জন্য কথা বলতেই পারছে না শিশির….
“কি হয়েছে আংকেলের ঠিক আছে তো? বাসার সবাই ভালো আছে তো? বলো কি হয়েছে?”
“আব্বু আমার বিয়ে ওনার বন্ধুর ছেলের সাথে ঠিক করেছে”
“ওহহ আচ্ছা। হোয়াট…..?”
“আব্বু আজ বলছে এখন কি করবো আমি আপনি কিছু একটা করুন প্লিজ”
“তুমি কান্না করো না মেঘ পরী । আমি আছিতো সব ঠিক করে ফেলবো। প্লিজ কান্না থামাও এখন তোমার চোখে কান্না মানায় না মেঘ পরী”
“আমার বিয়ে যদি অন্য কোথাও হয়ে যায় তখন কি করবো আমি”
“আমাকে বিয়ের দাওয়াত দিও কতদিন বিয়ে খাই নি”
“আপনি এই সময়ে মজা করছেন আমার সাথে?”
“ওকে যাও মজা করবো না। আমি তোমার আব্বু মানে আমার শশুর মশাইয়ের সাথে কথা বলবো তুমি চিন্তা করো না ওকে”
“কবে কথা বলবেন?”
“এইসব নিয়ে তোমার ভাবতে হবে না। আমি আছিতো”
“হুম”
“এইবার হাসো। তোমার তো আবার বকবক আর না হেসে থাকতে পারো না তাই না পেত্নী রাণী”
“হিহিহিহি। আপনি প্রথম ভয় পেয়েছিলেন তাই না”
“উহু”
“মিথ্যা বলেন কেনো?”
“কি মিথ্যা বলেছি?”
“আপনি ভয় পেয়েছিলেন আমি জানি। আপনি প্রথম আমায় চিনতে পারেন নাই। প্রথম সত্যিই ভুত ভেবেছিলেন…..”
শিশির আর প্রবণ কথা বলতে লাগলো।
।।
।।
।।
।।
“তিতি একটু এইদিকে আয়তো মা”
তিতিরের আম্মু তিতি কে ডাকছে তাই তিতি ওর মায়ের কাছে গিয়ে বললো…..
“হুম আম্মু বলো ?”
“আজ তোর দাদু ফোন দিয়েছিলো”
“কেমন আছে দাদু? এখন শরীল ভালো আছেতো?”
“হুম ওনার শরীল এখন ভালো আছে। ওনি আজ ফোন দিয়ে বললো তোকে আর অর্ণবকে ওইখানে যেতে”
“কেনো? হটাৎ করে দাদু এই কথা বললো কেনো?”
“ওনার তো এখন বয়স হয়েছে তাই ওনি চায় তোদের দুইজন একসাথে দেখতে। আর ওনি চায়ছে তোরা দুইজন কিছুদিন ওনার কাছে গিয়ে থাকিস।”
“কিন্তু অর্ণবের দুইজন কাজিন এসেছে ওদের বাসায়। এখন ওদের রেখে ও কিভাবে যাবে?”
“আমি বলেছি তোর দাদুকে তখন ওনি বললেন ওদেরও সাথে নিয়ে যাওয়ার জন্য। সবাই একসাথে থাকলে নাকি ওনার ভালো লাগবে তাছাড়া শিশিরকেও বলেছে তোদের সাথে নিয়ে যাওয়ার জন্য। শিশিরের পাগলামিকে নাকি খুব মিস করছেন ওনি।”
“আচ্ছা আমি ওদের সাথে কথা বলি দেখি কি বলে”
“হুম। দেখ আর শিশিরের আব্বু আম্মু কে আমি বলবো নে ওরা বারণ করবে না তাছাড়া ওনারাও তো তোর দাদুকে কত সম্মান করে”
“ওকে”
তিতি রুমে এসে অর্ণবকে সব কথা খুলে বললো। অর্ণব রাজি হলো। যেহেতু শুভ্র সামু বাংলাদেশে এসেছে ঘুরার জন্য তাই ওদের কোনো প্রবলেম ছিলো না। তিতি ফোন দিয়ে প্রবণকেও বললো কলেজ থেকে কিছুদিনের ছুটি নেওয়ার জন্য। আর ও আর শিশিরও কিছুদিন ছুটি নিলো কলেজ থেকে……
।।
।।
।।
।।
।।
অর্ণব গাড়ি নিয়ে যেতে চাইছিলো কিন্তু তিতি বারণ করলো। যেহেতু সবাই একসাথে তাই ঘুরতে যাওয়ার মজাই আলাদা। তিতি আর শিশির বায়না করলো ওরা ট্রেনে চড়ে যাবে। সামু শুভ্র এতদিন কানাডায় থেকেছে তাই ওরা ট্রেনে চড়ার মজা সম্পর্কে জানে না। অর্ণবও নাকি কোনোদিন ট্রেনে উঠে নাই তাই তিতি জোর করেই বললো ওরা ট্রেনে চড়ে যাবে।
সামুর প্রথম আপত্তি ছিলো ট্রেনে চড়া নিয়ে পরে শুভ্রের কথা শুনে হ্যাঁ বলে দেয়……
ওরা ছয় জন আলাদা একটা কেবিন ভাড়া নেয়। প্রথম সিটে অর্ণব প্রবণ আর শুভ্র বসে আর তাদের বিপরীত মুখো হয়ে তিতি শিশির আর সামু বসে।
অনেক হৈ হুল্লোড় করেই তাদের জার্নি শুরু হলো। তিতি শুভ্রের দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারে শুভ্রের মনের অবস্থা। সামুর মনে এখন ট্রেনের চড়ার আনন্দ প্রকাশ পাচ্ছে। সামুকে তিতি আর শিশির জানালার পাশে বসিয়েছে। সামুর কাছে বাহিরের পরিবেশটা খুব ভালোই লাগছে।
“সবাই কত আনন্দে যাচ্ছে কিন্তু শুভ্র ভাইয়া ওনার মনে কোনো আনন্দ নেই এইটা কি ভালো লাগে। বেচারা একটা মেয়েকে ভালোবেসে আজ কি কষ্টই না পাচ্ছে। ওনার মনে হয়তো এখন সব মেয়েদের নিয়ে খারাপ চিন্তা ভাবনা ঘুরছে।”
“ওই মুরগি কি ভাবছিস আয় সেলফি তুলি”
প্রবণ শিশিরের কথা শুনে বললো…..
“তোমার নাম মেঘ পরী না ‘সেলফি তুলি’ দেওয়া উচিত ছিলো”
প্রবণের কথায় সবাই হাসলো কিন্তু সামু বাদে।
“সবাই তো দেখছি খুব খুশি কিন্তু আমার কষ্ট খুশি কেউ বুঝলো না। অর্ণব তুইও বুঝলি না। তুই তো আমায় ছোট থেকেই চিনিস তাহলে কেনো এই মেয়ের সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে আমায় কষ্ট দিচ্ছিস। তোর মনে কি আমার জন্য একটু ভালোবাসা নেই। আর শুভ্র ভাইয়া ওতো দেখছি এখন অন্য মানুষ হয়ে গেছে। শুনলাম তিতি ওর মায়াবিনী না। তাই এখন আর আমায় হেল্প করছে না। সবাই স্বার্থপর কেউ স্বার্থ ছাড়া কাওকে হেল্প করে না। কারো সাহায্যর দরকার নাই আমি আমার ভালোবাসা ঠিকই অর্জন করতে পারি হুহহ”
সামু জানালার বাহিরে তাকিয়ে মনে মনে ভাবতে লাগলো……
“কি রে সামু তোর ভালো লাগছে না ট্রেনে?”
“খুব ভালো লাগছে অর্ণব। এই প্রথম ট্রেনে উঠেছে সত্যিই খুব ভালো লাগছে। থ্যাংক ইউ তিতি অ্যান্ড শিশির। তোমাদের জন্যই আজ এত সুন্দর একটা দিন মনের মতো উপভোগ করতে লাগলাম”
“ধন্যবাদ আপু”
তিতি ও শিশির সামুর সাথে কথা বলতে লাগলো। কোনটা কি বুঝাতে লাগলো সামুও হেসে হেসে কথা বলতে লাগলো।
শুভ্রর কাছে সামুর এই হটাৎ পরিবর্তনটা যেনো কেমন লাগলো। সবার মাঝে জিজ্ঞাসাও করতে পারছে না এই হটাৎ পরিবর্তনের কারণটা।
“ভাবী আপনি নাকি খুব ভালো গান পারেন মেঘ পরী বলেছে ”
“হুম তিতি মুরগি খুব ভালো গান পারে। আমরা যখন স্কুল কলেজ থেকে ট্যুরে যেতাম তখন তিতি গান বলতো সব স্যার মেমরা তিতির গানে মুগ্ধ ছিলো।”
“তো তুমি কি বলতে তখন”
“আমিতো ভালো কৌতুক বলতাম আর সবার মন জয় করতাম”
“তুমি তো নিজেই জুকার তোমার কি আর কৌতুক বলা লাগে”
আবারো প্রবণের কথায় সবাই হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খেতে লাগলো……
“তিতির পাখি বলো একটা গান?”
“হুম তিতি বলো প্লিজ আমিও শুনতে চাই। কতদিন খালি কণ্ঠে কারো গান শুনিনি। আগেতো অর্ণব গাইতো এখন অবশ্যই বলে না”
সামুর কথা টেনে নিয়ে শুভ্র বললো….
“তাহলে আজ তিতি ভাবী আর অর্ণবের একটা ডুয়েট গান হয়ে যাক কি বলো গাইস?”
শিশির প্রবণ মত দিলো। সামু না চাওয়া সত্বেও সম্মতি দিলো। তিতি অর্ণব দুজনের দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হাসি দিয়ে বললো…..
“ওকে গাইবো তবে বাংলা গান”
সামু বললো….
“বাংলা কেনো এইসব গান এখন কেউ শুনে যত্তসব গাঁজা খাওয়া গান”
তিতি বললো…..
“ছিঃ সামু আপু আমরা বাঙালি আমাদের মুখে বাংলায় মানায়। আমাদের বাংলা গানগুলি খুব সুন্দর কিন্তু আমরা এখন বলিউডের হলিউডের সাথে তাল মিলিয়ে বাংলা গান ভুলেই যাচ্ছি। আমরা যেমন আমাদের তাই বলা উচিত আপু। আমরা কেনো অন্যদের অনুসরণ করবো আমরা আমাদেরকেই অনুসরন করি এইটাই ভালো”
“তিতির পাখি তুমি একদম ঠিক কথায় বলেছো আমরা বাংলা গানেই গাইবো শুরু করো”
শিশির প্রবণ শুভ্র খুশিতে বলে উঠলো……
“ইয়াহুউউউউউউ”
আমার স্বপ্ন তুমি ওগো চিরদিনের সাথী।
তুমি সূর্য ঊঠা ভোর আমার আর তাঁরায় ভরা রাতি।।
আমি তোমার ছায়া
তোমার আকাশ নীলে আজি নিত্য মেঘের মায়া
তোমায় কাছে পেয়ে
পৃথিবীতে কে আর সুখী বল আমার চেয়ে।
হাতের আঁড়াল দিয়ে বাঁচাও ঝড়ের মুখে বাঁচি।।
তুমি ছেড়ো না হাত পথে
যদি আধার আসে নেমে
গ্রহন যত কর আমায় ততই বাধো প্রেমে।
পাশেই আমার থাকো
জীবনটাকে শান্তি দিয়ে সবুজ করে রাখো
তোমার পুজার দুঃখ সুখের প্রেমের মালা গাথি।।
অর্ণব আর তিতি গানটি একে অপরের দিকে তাকিয়ে বললো…..
চলবে……