#ডিভোর্স_অাত_ :পর
.পর্ব ১৮
.
শিমুল স্হির চোখে তাকিয়ে আছে, ল্যাপটপের স্ক্রিনের দিকে।
এত গভীর আনন্দ কতদিন আগে তাকে ছুঁয়ে গেছে, মনে করতে পারছেনা।
“হয়তো আরো একবার তোমার সাথে, গোটা শহর ঘুরে ঘুরে খুঁজে বের করতে পারি একটা শিউলি গাছ…কুয়াশা ভোরে ধোয়া ওঠা কফির মগে দিতে পারি আয়েশি চুমুক…গভীর আনন্দে ঘুরতে পারি একুশের বইমেলায়… সেই পুরনো দিনের মতো।”
শিমুল গভীর মনোযোগ দিয়ে আবার পড়লো মেইলটা।
রিয়া লিখেছে তাকে।
বিশ্বাস হতে চাইছে না।
যদিও রিয়াকে মেইল পাঠাবার পর থেকেই প্রতি মূহুর্ত্যে রিয়ার কাছ থেকে এরকম একটা মেইল পাবার আশা নিয়ে অপেক্ষা করেছে শিমুল
মেইলটা রিয়াই করেছে।
এটা রিয়ার স্টাইল। এভাবেই লিখতো ও।
একবার শিমুলকে জন্মদিনে লিখেছিল,
“মায়ের জন্য আজ আমার হৃদয় নিংড়ানো ভালবাসা রইল….কারণ এরকম একটি দিনে তিনি তোমাকে জন্ম দিয়েছিলেন।”
একটু আলাদা অন্যদের থেকে।
বিয়ের পর রিয়া ভোর বেলা শিউলি কুড়োবে বলে ইচ্ছে প্রকাশ করেছিল। শিমুলদের বাসার আশে-পাশে কোন শিউলি গাছ ছিলনা।
ওরা ঢাকা শহর ঘুরে ঘুরে শিউলি গাছ খুঁজে বের করেছিল। রিয়া কি যে খুশী হয়েছিল সেদিন !
রিয়া কি সত্যিই ফিরবে তার জীবনে ?
নিজেকেই যেন প্রশ্ন করলো শিমুল
রায়নার ফাইনাল পরীক্ষা শুরু হয়েছে দু’দিন হলো। প্রথম দিন ইংলিশ ছিল।
ওর প্রিপারেশন খুবই ভাল।
রায়না সব বিষয়েই ভাল নম্বর পায়। রিয়া মহা ব্যস্ত থাকে বছরের এই সময়টাতে।
স্কুলের পরীক্ষার আগে থেকে শুরু হয় প্রশ্নপত্র তৈরী করার মধ্য দিয়ে ওর ব্যস্ততা।
এরপর পরীক্ষা, খাতা দেখা, রেজাল্ট শীট তৈরী করা। নিঃশ্বাস ফেলার সময় থাকেনা। তার মধ্য রায়নার পরীক্ষা।
ওকেও তো একটু পড়াতে হয়।
প্রথম পরীক্ষার দিন সকালে শিমুল ফোন করেছিল, মেয়েকে উইশ করার জন্য।
পরীক্ষা শুরুর দিন থেকে অবশ্য প্রতিদিনই সকালে ফোন করছে রায়নার সাথে কথা বলার জন্য।
মেয়েকে উইশ করে,সেদিন জানতে চেয়েছে রিয়া কেমন আছে।
রিয়া শিমুল কে মেইল করেছে।
কিন্ত এখন পর্যন্ত কথা হয়নি। স্কুলের ঝামেলা শেষ হলে দেখা যাবে।
শিমুল ধন্যবাদ জানিয়ে ছোট্ট একটা মেইল পাঠিয়েছে।
আজ পরীক্ষার হলে একটি মেয়ে হট্যৎ অসুস্হ হয়ে পড়েছিল ।
ক্লাস নাইনে পড়ে মেয়েটি।
সকালে ঠিকমত খায়নি, তার উপর পরীক্ষার টেনশনে মাথা ঘুরে উঠেছিল।
তাড়াতাড়ি তাকে ধরে সিক রুমে নিয়ে যাওয়া হলো। ভিপি ম্যাডাম দেখতে এসে একটু রাগ করলেন, ‘এতটুকুন সব মেয়েরা, এখনই ডায়েটিং করে…ঠিকমত খায়না…কি করে এত ধকল সহৃ হবে শরীরে ?’
রিয়া হেসে ফেললো ম্যাডামের কথা শুনে।
ম্যাডাম বললেন, ‘হেসো না রিয়া । এটাই করে ওরা। দাড়াও আগামী বছরের শুরুতে প্যারেন্টস মিটিং এ এই বিষয় নিয়ে কথা বলতে হবে প্যারেন্সদের সঙ্গে।
ডায়েটিং করতে গিয়ে অসুস্হ হয়ে যাবে মেয়েরা ! আমরা তো এমন ছিলাম না ? এখনকার মেয়েরা এমন কেন বলো তো ?’
এদিকে আবার অসুস্হ মেয়েটিকে তিনি আদর করে গ্লুকোজ পানি খাওয়ালেন নিজ হাতে। তারপর একটু সুস্হ হয়ে উঠলে আবার পরীক্ষার হলে পাঠাবার ব্যবস্হা করলেন।
রিয়া ভিপি ম্যাডামকে যত দেখে তত মুগ্ধ হয়।ওর মাঝে মাঝে মনে হয়, তিনি এই স্কুলের সকলের মা।
তিনি না থাকলে এই স্কুল মা-হারা হয়ে যাবে।
রাতে ঘুমুতে যেতে দেরী হচ্ছে রিয়ার গত ক’দিন যাবৎ। পরীক্ষার খাতা চেক্ করতে করতে বেশ রাত হয়ে যায়।
ডিসেম্বরেই তো রেজাল্ট দেয়া হয়। কাজেই যেসব পরীক্ষা হয়ে গেছে, সেগুলোর খাতা দেখাও শুরু করে দিয়েছে ওরা।
সাধারণত ; ডিসেম্বরের বিশ তারিখের মধ্যেই রেজাল্ট হয়ে যায় ওদের স্কুলে।
এবার ছুটিতে রায়নাকে নিয়ে কোথাও একটা বেড়াতে যেতে হবে।
গ্রামের দিকে গেলে কেমন হয় ?
ভালই হবে মনে হয়।
গ্রামের শীত একটু অন্যরকম।
সকালের নরম রোদে পিঠ লাগিয়ে বসে রোদ পোহানো আর গরম গরম ভাপা পিঠা খাওয়ার মজাটাই আলাদা।
গাছ থেকে সতেজ শাক্-সবজি তুলে রান্না করে খেতে দারুণ লাগে।
নদীর পানিতে ঝাঁপাঝাঁপি…
এই আনন্দগুলো অবশ্যই রায়নাকে দিতে হবে। রিয়া পাতলা কম্বলটা গায়ে টেনে নিয়ে আলোটা নিভিয়ে দিল।
আজ রায়নার রেজাল্ট দিয়েছে।
সব বিষয়েই খুব ভাল নম্বর পেয়েছে।
সে খুব খুশী। বাবাকে রেজাল্ট জানানোর জন্য অস্হির হয়ে আছে।
এক নম্বরের জন্য প্রথম হতে পরেনি।
ক্লাসে ২য় হয়েছে। রিয়া বলেছে,তাতে কি হয়েছে ? পাঁচটা শাখা মিলে ২য় হয়েছে, এটা কম কি ?
শিমুল ফোন করেছে।
প্রচন্ড উৎফুল্ল হয়ে কথা বলছে বাপ-মেয়ে।
শিমুল খুব খুশী মেয়ের রেজাল্টে।
স্পিকার অন করে কথা বলছে রায়না।
শিমুল বলছে,তোমার মাকে আমার পক্ষ থেকে অনেক ধন্যবাদ। তোমার জন্য তোমার মা এত কষ্ট করেছেন বলেই তুমি এত ভাল রেজাল্ট করেছো।
রায়না কল কল করে কথা বলে যাচ্ছে তার বাবার সাথে। রিয়া চায়ের মগ আর পেপার নিয়ে শোবার ঘরের বারান্দায় চলে এলো।
আজ থেকে স্কুল ছুটি।
ছুটির কয়টা দিন গ্রামে যাবে ঠিক করলো।
বিকেলে বাবা এসে রায়নাকে নিয়ে যাবে ও বাসায়। রিয়া কাল সকালে রহিমা খালাকে নিয়ে একবারে যাবে। রিয়ার বড় বোনও আসবে ছেলে-মেয়েদের নিয়ে।
তারপর ওরা সবাই মিলে একসাথে রিয়ার দাদা বাড়ী যাবো।
আজ রাতে কোনআন শরীফের অনুবাদ নিয়ে বসতে হবে। এ ক’দিন যা ঝামেলা গেল যে এ ব্যাপারটা নিয়ে ভাববারও সময় পায়নি রিয়া।
শিমুলের সাথে কথা বলতেও হবে।
বিকেলে রায়না তার নানাভাই এর সাথে চলে গেল নানার বাসায়। খুব খুশী সে, বহুদিন পর নানাু-নানুর সাথে একা সময় কাটাতে যাচ্ছে।
যদিও আগামীকালই মা চলে আসবে।
তবুও আজ সে একা যাচ্ছে।
মা তাকে একটু বড় ভাবছে তাহলে !
নানুবাসায় যাওয়ার পথে নার্সারী আছে একটা। সেখানে রিক্সা থামিয়ে ২/৩ গাছের চারা কিনলো। আজ নানু বাসায় গিয়ে ছাদে গাছ লাগাবে। রায়না খুব খুশী আজ।
সারাদিন খুব আনন্দে কাটছে তার।
আগামীকাল চিটাগং থেকে নেহা আপুরা আসবে। কি মজা ! বড় খালামনি কত্তো আদর করে ওকে। নেহা আপু, নেহাল ভাইয়া সবাই আসবে। ওরা একসাথে গ্রামে বোড়াতে যাবে। এবার গ্রামে গেলে বড়শি দিয়ে মাছ ধরা শিখবে রায়না।
নেহাল ভাইয়া বলেছে,রায়না তোকে এবার মাছ ধরা শিখিয়ে দেবো।
রায়না খুব দুঃচিন্তায় আছে। কারণ, তার তো কোন বড়শী নেই !
তবে নানাভাই বলেছেন,ওখানে সব ব্যবস্হা করা আছে।
রায়না পুরোটা বিকেল ছাঁদে গাছ লাগিয়ে কাটালো। বুয়া সাহায্য করেছে। এমনকি নানা ভাইও সাথে সাথে থেকেছেন।
রায়নার ভীষণ ভাল লাগছে নিজ হাতে গাছ লাগাতে পেরে।
সন্ধ্যার আগে আগে সে সদ্য লাগানো গাছ গুলোতে পানি দিল।
রিয়া আছরের নামাজ শেষ করে কোরআন শরীফের অনুবাদ নিয়ে বসলো।
২য় পারা, সুরা বাকারার ২২৬ নম্বর আয়াত থেকে পড়তে শুরু করলো,” যারা স্ত্রীর সাথে সংগত না হওয়ার শপথ করে,তারা চার মাস অপেক্ষা করবে।অতঃপর যদি তারা মিলে যায়,তবে নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল ও দয়ালু।
(২২৭) আর যদি তারা তালাক দেয়ার সংকল্প করে তবে আল্লাহ সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞানী।”
রিয়া পড়তে লাগলো… “(২৩০)অতঃপর সে যদি তালাক দেয় তবে অন্য স্বামীর সাথে বিবাহ না হওয়া পর্যন্ত স্ত্রী তার জন্য বৈধ হবে না;অতপর সে (২য় স্বামী) যদি তালাক দেয় আর উভয়ে মনে করে যে, আল্লাহ্ র নির্দেশিত পথে চলতে পারবে তবে তাদের পূর্ণমিলনে কোন দোষ হবে না। এগুলো আল্লাহ র সীমারেখা। জ্ঞানী লোকদের জন্য তিনি এগুলো স্পষ্ট বর্ণনা করেন।”
রিয়ার গলা শুকিয়ে আসছে।
মাথা ঝিম ঝিম করে উঠলো।
রিয়া কোনআন শরীফ বন্ধ করে উঠে পড়লো।
মূল বিষয়টা বুঝতে পারলেও পুরোপুরি স্পষ্ট হলোনা রিয়ার কাছে।
পূর্ণমিলন সহজ কোন ব্যাপার নয় এটুকু বুঝতে পারছে।
এক কাপ চা খেলো।
অস্হির লাগছে রিয়ার। বিষয়টা পরিষ্কার হওয়া দরকার।
রিয়া গুগলে এ তালাক লিখে সার্চ দিলো।
অনেকক্ষণ ধরে এটার উপরে যাবতীয় সঠিক তথ্য এবং সেই তথ্যের ব্যাখা জানার চেষ্টা করলো।
রিয়া বোখারী শরীফের ২য় খন্ডের ৭৯১ পৃষ্ঠায় কোনআন শরীফে দেয়া তালাকের ব্যাখাটা পেয়ে গেল।
রিয়া ব্যাখাটা মনোযোগ দিয়ে পড়লো,
“যখন কোন পুরুষ তার স্ত্রীকে তিন তালাক দিয়ে দেয়,তখন তার স্ত্রী তার জন্য হারাম হয়ে যায়। সে তখন তার স্ত্রীকে আর ফিরিয়ে নিতে পারেনা স্ত্রী হিসেবে। ইদ্দত পালনের সময়েও না, শেষেও না।
তবে সে তার স্ত্রীর সাথে আবার পুণর্বিবাহ করতে পারবে,যদি তার স্ত্রীর অন্য একজন ব্যক্তির সাথে বিবাহ হয় এবং ২য় স্বামীর সাথে (সহবাস সহ) বসবাস করে।
তারপর, ২য় স্বামী যদি তাকে স্ব-ইচ্ছায় এবং সঙ্গত কোন কারনে তালাক দিয়ে দেয় বা ২য় স্বামীর মৃত্যু ঘটে, তাহলে এই নারী তার প্রথম স্বামীর সাথে পুণর্বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারবে। তা না হলে নয়।
শুধুমাত্র একটি চুক্তির মাধ্যমে কাউকে বিবাহ করে (সহবাস সহ/ছাড়া) ২য় স্বামীর থেকে তালাক নিয়ে, প্রথম স্বামীর কাছে ফিরে যাওয়া যাবেনা।
এটাকে ইসলাম সমর্থন করে না।”
রিয়ার অবসন্ন লাগতে লাগলো।
বুকের ভেতরে ঝড় বয়ে যাচ্ছে ওর।
এমন কঠিন অবস্হার সম্মুখিন হতে হবে কোনদিন ভাবেনি।
রিয়া কি করবে কিছুই বুঝতে পারলো না।
সন্ধ্যার ছায়া নেমে এসেছে ঘরে।
রিয়া চোখ বন্ধ করে শুয়ে থাকলো কিছুক্ষণ।
আকাশ-পাতাল ভাবছে।
কোন কূল-কিনারা খুঁজে পেলো না।
এত অদ্ভুত, এত কঠিন নিয়ম কেন, এটা নিয়েই ভাবছে রিয়া।
কত কিছুই জানিনা আমরা, না জেনেই কত কি করে বসে থাকি, ভাবলো রিয়া।
নিজের উপর রাগ হলো ওর।
যখন শিমুলের সাথে ডিভোর্স হয়েছিল, তখন তো উচিৎ ছিল, ডিভোর্স সংক্রান্ত যাবতীয় বিষয়টা নিয়ে খোঁজ -খবর করা, এই বিষয়ে ভালমত জানার চেষ্টা করা।
তারপর ডিভোর্সের মত এত কঠিন সিদ্ধান্তটা নেয়া। রিয়া সেটা করেনি।
তখন তো রাগ, জেদ,অভিমান এগুলো নিয়েই বেশী ভেবেছে রিয়া।
আর তখন আশে পাশের আত্মীয় পরিজন অনেকেই ওর সিদ্ধান্তকেই সাপোর্ট করেছিল, বাবা-মা ছাড়া।
আজ রিয়া ভাল করে বুঝতে পারছে, বাবা-মা কেন এতবার বলেছিলেন, শিমুলের কাছে ফিরে যেতে।
আচ্ছা, শিমুলও কি তার মতই কোন কিছু না জেনেই ডিভোর্সের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল ?
নাকি সব জেনেই করেছিল ?
রিয়ার ধারনা, শিমুল ও রাগের মাথায় ডিভোর্সের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল।
বেশীর ভাগ মানুষই তাই করে।
কিন্তু করা একেবারেই উচিৎ নয়, স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক কোন ছেলে-খেলার জিনিস নয়।
পবিত্র একটা সম্পর্ক এটা।
এই সম্পর্ককে অনেক যত্নের সাথে পরিচর্যা করতে হয়। রক্তের সম্পর্কগুলো মাঝে যা কিছুই ঘটুক.. ফিরে ফিরে আসে বেশীর ভাগ সময়ই।
কিন্তু যে সম্পর্কের ভিত্ কলমা বা মন্ত্র পড়ে, কাগজে সই করে সৃষ্টি হয়,তারপর দু’জন মানুষের শরীর এবং মনের আদান-প্রদানের মধ্য দিয়ে যে সম্পর্কের ভিতকে আরো শক্ত করতে হয়, সেই সম্পর্ককে যত্ন আর পরিচর্যা ছাড়া কি ধরে রাখা যায় ?
রিয়া দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো।
এতটা বোঝার ক্ষমতা বা মন তার কেন ছিলনা এগারো বছর আগে ?
রায়নার মুখ মনে পড়লো !
বাবা-মা দু’জনকেই পাশে চায় মেয়েটা।
একজন সন্তানের পক্ষে খুব ন্যায্য চাওয়া।
বাবা-মায়ের কোন অধিকার নেই সন্তানকে এভাবে বঞ্চিত করা।
তবুও,অপরিনামদর্শি বাবা-মায়েরা শুধু নিজেদের কথা ভেবেই আলাদা হয়ে যায়।
রিয়া-শিমুল যেমন করেছিল।
রায়নার একটু সুখের জন্য কত কিছুই না করার চেষ্টা করে রিয়া।
অথচ,সেদিন একবারও ভাবেনি, যেভাবে আজ ভাবছে।
কিন্তু আসলেই কি চাইলেই সব করা যায় ?
রিয়া কতটুকু করতে পারে ?
রিয়া মেয়েকে সুখী সুন্দর একটা জীবন দিতে চায়। কিন্তু নিজেকে এতটা অসম্মানিত করে কি চায় ?
অসম্মানই বটে।
শিমুলের সাথে নতুন করে পায়ে পা মিলিয়ে হাঁটতে চাওয়ার জন্য, রিয়া কি এমন কিছু করবে, যা তার জন্য মর্যাদা হানিকর ? একেবারেই অনভিপ্রেত ?
রাতে মা ফোন করে জানতে চাইলেন, সকালে কখন আসবে রিয়া।
কাল নয়,পরশুদিন মার ওখানে যাবে রিয়া,মাকে জানিয়ে দিলো।
রিয়ার এই মুহুর্ত্যে যা মানসিক অবস্হা,তাতে সবার সাথে হৈ চৈ করার মত অবস্হায় নেই।
রাতে ভিপি ম্যাডামকে ফোন করে সকালে দেখা করতে চাইলো।
ম্যাডাম সকালে যেতে বললেন তার বাসায়।
সারারাত ঠিক মত ঘুমোতে পারলো না রিয়া।
এপাশ-ওপাশ করলো।
ঘুরে-ফিরে রায়না আর শিমুলের মুখ মনে পড়তে লাগলো।
রাতটা খুব দীর্ঘ মনে হলো।
শিমুলের গভীর মনোযোগ দিয়ে বোঝার চেষ্টা করছে পুরো বিষয়টা। ওর চোখ ল্যাপটপের স্ক্রিনে।
গতকাল রাতে নিউইয়র্কে বসবাসরত সব স্কুল-বন্ধুদের গেট-টুগেদার ছিল।
তুমুল আড্ডার সময় বন্ধুরা শিমুল কে খোঁচাখুঁচি শুরু করেছিল আর কতকাল এরকম একা থাকবে বলে।
বন্ধুদের এই কথার জবাবে শিমুল স্বানন্দে জানিয়েছিল, তার জীবনের হারিয়ে যাওয়া আনন্দকে নতুন করে ফিরে পাওয়ার সম্ভাবনার কথাটা।
সবাই খুব খুশী হয়েছিল শুনে।
তবে শামীম বলছিল,নতুন করে শুরু করতে কিছু নিয়ম মানতে হবে এবং সেই নিয়ম নাকি যথেষ্ট কঠোর।
শিমুল কিছুটা জানে। তবে আজ ভালভাবে জানার চেষ্টা করছে।
রিয়াকে ফিরে পেতে চেয়েছে, কিন্ত এই দিকগুলোর কথা ভাবেনি একেবারেই।
কিন্তু ভাবতে হবে অবশ্যই।
শিমুলের মধ্য ধর্ম নিয়ে কোন ধরনের গোঁড়ামী নেই, তবে শিমুল ধর্মীয় নিয়মগুলো ভাল ভাবে মেনে চলে।
তাই শিমুল জেনে বা না জেনেও কোন ধরনের ভুল কাজ করতে চায়না।
তালাকের উপরে কোনআন শরীফে পরিষ্কার নির্দেশনা আছে।
এতক্ষণ,সেটায় পড়ছিল সে।
অস্হির বোধ করছে শিমুল
জানার মধ্যেও এতকিছু অজানা ছিল ?
ফিরে পাওয়ার আনন্দে আচ্ছন্ন শিমুলের মন বিষর্ন্ন হয়ে উঠলো।
কি হবে এখন ?
রিয়াকে ছেড়ে নতুন করে যখন শুরু করেছিল নীলার সাথে,তখন রিয়ার কষ্ট হয়েছিল নিঃসন্দেহে। আজ খুব ভালভাবে বুঝতে পারছে শিমুল।
রিয়াকে ফিরে পেতে গেলে যা করতে হবে সেটা কি মেনে নিতে পারবে সে ?
প্রচন্ড যন্ত্রনা হচ্ছে শিমুলের ।
আজ এতদিন বাদে শিমুলের মনে হচ্ছে, দাম্পত্য জীবনে যত ঝামেলায় আসুক না কেন,খুব ভেবে চিন্তে বিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নেয়া উচিৎ সকল দম্পতির।
যদি এমন হয়, আর কোন ভাবেই একসাথে থাকা যাচ্ছে না এবং আবার কোনদিন ভুল ভেঙে ফিরে আসার কোন সম্ভবনাও নেই, তবেই শুধুমাত্র ডিভোর্স দেয়া উচিৎ একে অপরকে।
কারণ, ইসলামে তালাককে সবচেয়ে নিকৃষ্টতম জায়েজ কাজ হিসেবে ধরা হয়।
নিকৃষ্টতম জায়েজ এজন্য বলা হয়, কারণ স্বামী-স্ত্রীর সামান্য ভুলে,রাগে বা দোষের পরিপ্রেক্ষিতে তালাকের মত ঘটনা ঘটে।
তারপর, কোন এক সময় কোন কোন দম্পতির ভুল ভাঙে এবং তারা আবার পূর্ব সম্পর্কে ফিরতে চায়।
এই ফিরে আসাটা তখন আর খুব সহজ হয়না।
কারণ, একজন নারীর পক্ষে অন্য কাউকে বিয়ে করে (সহবাস সহ), আবার ২য় স্বামীর থেকে তালাক নিয়ে ১ম স্বামীর কাছে ফিরে আসাটা প্রায় অসম্ভব বলে মনে হলো শিমুলের ।
তবে কোন নারী যদি প্রথম বিয়ে ভেঙে যাওয়ার পর স্বাভাবিক ভাবেই নতুন ভাবে শুরু করার উদ্দেশ্যে ২য় বিবাহ করে, এবং কোন কারণে ২য় বিবাহও ডিভোর্স হয়ে যায়, তখন প্রথম স্বামীর সাথে পুণর্বিবাহ করতে কোন সমস্যা হয় না।
কিন্তু, কেউ যদি শুধুমাত্র চুক্তির মাধ্যমে ২য় বিবাহ করে (সহবাস ছাড়া) এবং ২য় স্বামীর কাছ থেকে কোন কারণ ছাড়াই তালাক নিয়ে ১ম স্বামীর কাছে ফিরে যায়,সেটা জায়েয হবেনা।
কারণ,ইসলাম এটাকে সমর্থন করেনা।
শিমুল নিজেকে ধিক্কার দিলো মনে মনে, তাদেরও কি অদৌ এমন পরিস্হিতি তৈরী হয়েছিল ? এভাবে আলাদা হওয়ার মত ?
শুধুমাত্র রাগ আর জেদের বসে সম্পর্কটাকে তিক্ত করে তুলেছিল ওরা।
আজকের দিনের কথা একবারও মাথায় আসেনি।
রায়নার জন্মের পরই তো তাদের বিচ্ছেদ ঘটেছিল। তখন কেন রায়নার কথাটা একবারও ভাবেনি ওরা ??
আজ যেমন ভাবছে ???
(চলবে..)
Copy post