গল্প: অস্টিওপ্যাথ..
শেষ পর্ব:
খালা রাগান্বিত কণ্ঠে বললেন,
—অস্টিওপ্যাথ সাহেব, উই ডোন্ট নিড এনি হেল্প।প্লিজ লিভ অাস…
অামি গাড়ির দরজা অাটকে দিলাম।
—দেখুন, ম্যাডাম।একজন ডাক্তারের কাছে সবথেকে অাগে তারঁ পেশেন্ট।দেখলে তো অার সমস্যা নেই..
—এঁই খবরদার! গাড়ির কাছে অাসবেনা। স্টপ!
—-ম্যাম, একটু অাগেই তো বললেন ক্রিটিকাল কন্ডিশন।একজন ডক্টরকে তাঁর কাজ করতে দিচ্ছেন না, এটা কি এথিকেল্লি ঠিক হচ্ছে??
খালার মেজাজ চূড়ান্ত চটে গেলো, তিনি চিৎকার করে ড্রাইভারকে বললেন,
—সিদ্দিক, সিদ্দিক!! এই ছাগলারে ২চড় মেরে বিদায় কর।সে অামাকে এথিকস শেখাতে অাসছে, নুরুন্নাহার চৌধুরীকে এথিকস শিখায়।কতবড় সাহস!
সিদ্দিক মহা উৎসাহে চড় দিতে গেলো,
তার অাগেই ডাক্তার সাহেব সিদ্দিককে চড় মেরে দিলেন; “ও মাগো” বলে সিদ্দিক মাটিতে বসে পড়লো।
খালা ভয় পেয়ে গেলেন।ভীত কণ্ঠে বললেন,
—তোমাকে অামি পুলিশে দিবো! তুমি জানো না তুমি কার ড্রাইভারকে চড় দিয়েছো!?
ডাক্তার শক্তকণ্ঠে বললেন,
—অামার তো মনে হয় অাপনারাই কাউকে ইনজুরড করে গাড়িতে নিয়ে এসেছেন……
অবস্থা বেগতিক দেখে,
অামি গাড়ির জানালা দিয়ে, মুখ বাড়িয়ে বললাম,
—অাসলে, মিস্টার, এখানে একটা মিস অান্ডারস্ট্যান্ডিং হয়ে গেছে।কারো পা মচকায়নি।উই অার হার্টিলি সরি ডক্টর!
ডাক্তার অাশ্বাসের স্বরে বললেন,
–অাপনি ভয় পাবেন না ম্যাম, অাপনি নেমে অাসুন।অামি দেখছি।
অামি স্মীত হেসে বললাম,
—নাথিং টু ওরি।ইনি অামার খালা হয়! অামাকে পাত্রী দেখাতে নিয়ে এসেছেন।অামার শাড়ি খুলে গেছে; এজন্যই অামি নামতে পারছি না।সরি ফর এভরিথিং।
ডাক্তার অামার কথা শুনে হতভম্ব! অবিশ্বাসী দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে থাকলেন।
খালা দ্রুত গাড়িতে উঠে এলেন।সিদ্দিক একমুহূর্ত দেড়ি না করে গাড়ি নিয়ে হুশ করে বেড়িয়ে এলো।
—বুঝলি নিতু, ঐ ব্যাটা ডাক্তার ফাক্তার কিছু না।সবই ভেলকি।বিশাল কোনো মতলব ছিলো, অামার তো মনে হয় গাড়িটাকে ফলো করতে করতে এসেছিলো।সিদ্দিক মহাজ্ঞানীর মত বলল,
—বিরাট কোনো গ্যাংগের লোক হবে, খালা।জীবনে অনেক চড় খাইছি, কিন্তু এরকম চড়, খাই নাই।অাল্লাহ পাকের অশেষ মেহেরবানি যে দাঁত পড়ে নাই।
খালা ব্যস্ত ভঙ্গিতে বিভিন্ন জায়গায় ফোন করছেন।পুলিশের সব উচ্চপদে উনার লিংক অাছে।
সিদ্দিক বিরস মুখে বলল,
–নিতু অাপা, অাগে দাঁতের ডাক্তারের কাছে যাই?চাপার একটা দাতঁ নইড়া গেছে মনে হয়! বিষম বেদনা করতাছে।
অামি চুপ করে থাকলাম।
ফোন রেখে খালা চিন্তিতভাবে বললেন,
—স্পেসিফিক ক্লু ছাড়া তো ওরা কিছু করতে পারবে না, বলছে।
সিদ্দিক মৃদু হেসে বলল,
—খালা, ব্যাটার গাড়ির নাম্বার মুখস্থ করে অাসছি।খালুরে শুধু নাম্বারটা ধরায় দেন।খেল খতম।
নিতুর খালু মালেক সাহেব, পুলিশের এসিপি, এখন স্পেশাল ক্রাইম ব্রাঞ্চে অাছেন।
সিদ্দিক একটা ডেন্টাল ক্লিনিকের সামনে এসে গাড়ি থামালো।বেচারা কিছু বুঝে উঠার অাগেই, খালা সিদ্দিককে অারেকটা চড় মারলেন।
—রামছাগল, তোর কি কান্ডজ্ঞান নেই??
এক মেয়ে অাধা নেংটা হয়ে শাড়ি খুলে বসে অাছে, অার তুই ব্যস্ত দাঁতের ডাক্তার দেখাতে।অাগে বাসায় চল।
সিদ্দিক চুপচাপ, বাসার দিকে গাড়ি ঘুড়ালো!
খালা বিড়বিড় করতে থাকলেন,
—অামি অাছি, মহাবলদদের নিয়ে।এক মেয়ে শাড়ি খোলা, এক গাঁধার দাঁতে ব্যাথা অার তোর খালু মাথাছিলা টাক্লা যে এই বলদটাকে কোথা থেকে ড্রাইভার ধরে নিয়ে অাসলো…….১৪০০০টাকা বেতন দিই, এক চড় খেয়ে বলে “মাগো”….
ইম্পসিবল।
অামি জানালা দিয়ে বাইরে তাকালাম।
ডাক্তার সাহেবের হতভম্ব চেহারাটার জন্য মায়া হতে লাগলো…..
রাত অাটটার দিকে ধানমন্ডী থানার ওসি সাহেব ফোন করে জানালেন,
“সাসপেক্টকে পাওয়া গেছে, তাঁর নাম অাবিদ হাসান। তাঁর সব তথ্য নিয়ে জানা গেছে, তিনি সদ্য পাস করা একজন ডক্টর।একটা প্রাইভেট হসপিটালে কর্মরত অাছেন।প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে কোনো কিছুই স্বীকার করছে না।তবে ভিক্টিম এসে কনফার্ম করলে, তাঁকে কোর্টে চালান করে দেয়া হবে।
পুলিশের কথা শুনে নিতু অস্থির হয়ে পড়লো, তাঁর হাত পা কাঁপতে লাগলো, দুনিয়া ভেংগে কান্না পেলো,
কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে বললো,…
— বাবা, তুমি গাড়ি বের করতে বলো!অামি এক্ষুণি থানায় যাবো.এক্ষুণি…..
নিতুর বাবা রিটায়ার্ড চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট অানিসুর রহমান, কান্নায় অস্থির হওয়া মেয়েকে নিয়ে থানায় গেলেন।
থানায় গিয়ে অভিযোগ শুনে নিতু স্তব্ধ!
—স্যার অামরা একটা প্রাইমারি কেইস রেডী করেছি, অাসামী গাড়ি ছিনতাইয়ের জন্য ড্রাইভারকে মারধোর করে।গাড়িতে থাকা নিতু ম্যাম তাঁকে বাঁধা দিতে গেলে, তিনি নিতু ম্যামের শাড়ি খুলে ফেলে ;ফিজিক্যালি হ্যারাস করে।ওসি সাহেব বিজয়ীর ভংগিতে বললেন,
ড্রাইভার ঠিকঠাক স্বীকারোক্তি দিলে, ২বছরের জেল নিশ্চিত, স্যার।
ছিঃ কি অশ্লীল মিথ্যা!!কি অপমান!!
লজ্জায় নিতুর মাথা কাটা যাচ্ছিলো প্রায়! অাবিদ সাহেবের দিকে নিতু যেনো তাকাতেই পারছিলো না।ইশ্ বেচারার ঠোট ফোলে গেছে।গাল কেটে ছড়ে একাকার।একটা চোখ তো মনে হয় খুলতেই পারছে না।
নিতু ডুকরে কেঁদে উঠলো…
রাত সাড়ে দশটা নাগাদ, অানিস সাহেব, অাবিদকে থানা থেকে রিলিজ করিয়ে, হাসপাতালে নিয়ে ব্যান্ডেজ করিয়ে বাসায় দিয়ে অাসলেন।পুরো রাস্তা নিতু চুপ করে থাকলো।
অাবিদ সাহেব শুধু একবার বিড়বিড় করে বলল,
—পুলিশ হলো গিয়ে নাম্বার ওয়ান অস্টিওপ্যাথ।কোথায় মারলে হাড় ভাংগবে না, এ বিষয়ে তাঁরা বিশেষজ্ঞ….
থানা থেকে বাসায় অাসবার পর নিতু অনবরত কেঁদেই যাচ্ছে। কিছুতেই তাঁর কান্না থামছে না।
ভীষণ কষ্ট হচ্ছে তাঁর; ভীষণ……
পরদিন সারাদিন নিতু খায় নি।ভার্সিটি যায়নি।
অানিস সাহেব মেয়ের কান্না থামাতে অস্থির হয়ে পড়লেন,
বাধ্য হয়ে
ডক্টর অাবিদকে ফোন করলেন,
—- ডক্টর অাবিদ! অামার মেয়ে পদার্থবিদ্যার সেরা ছাত্রী।তাঁর মেন্টাল স্ট্রেন্থ অসাধারণ।
জীবনে পদার্থবিদ্যার বই ছাড়া সেকেন্ড কেনোকিছুর জন্য সে কাঁদেনি।এই প্রথম সে অাপনার ব্যাথায় ব্যথিত হয়ে একটানা কাঁদছে….লজ্জায়
সে অাপনাকে ফোন করতে পারছেনা।
অামার ধারণা, অাপনি যদি পরম মমতায় তাঁর মাথায় একটু হাত রাখেন, তাঁর কান্না থেমে যাবে।
অাপনি কি দয়া করে একটু অাসবেন?
……
(সমাপ্ত)
😲😲😲😲😁😁😁😁😂😂😂😂