#তুই_আমার_সুরঞ্জনা
Part–14
#Arishan_Nur
প্রমিতি যেন বরফের মতো জমে গেল। তার নিশ্বাস আটকে আসছে। নিরব প্রমিতির আরো কাছে গেল। এবং প্রমিতিকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিল। প্রমিতি লজ্জায় লাল হয়ে মাথাটা টুপ করে নিচু করে ফেলে।
তা দেখে নিরবের মনের মধ্যে ছোট-খাটো ভূমিকম্প হয়ে গেল। সে মুগ্ধ নয়নে প্রমিতির পানে চেয়ে রইল। ইশ! লজ্জা পেলেও বুঝি মেয়েদেরকে এতো বেশি সুন্দর লাগে?
এই মূহুর্তে নিরবের কাছে প্রমিতিকে খুব আপন লাগছে। অথচ পড়শুদিনের আগে এই মেয়েটাকে সে চিনত পর্যন্ত না। আর আজকে নাকি তার বউ হয়ে গেল! কি অদ্ভুত!
নিরব প্রমিতিকে মন ভরে দেখছে এবং চোখের তৃষ্ণা মেটাচ্ছে।
হুট করে নিরব প্রমিতির দিকে অগ্রসর হতে লাগলো, এবং নিরব প্রমিতির কোমড় চেপে ধরল। প্রমিতি আবারো কেপে উঠে।
নিরব প্রমিতির মাথাটা জোড় করে উচু করায়৷
প্রমিতির লজ্জায় নিরবের দিকে তাকাতে পর্যন্ত পারছে না।
নিরব আস্তে আস্তে প্রমিতির দিকে এগিয়ে যেই না প্রমিতির ঠোঁট ছোয়াবে ওমনি প্রমিতি নিরবের মুখের উপর হাঁচ্চু বলে একটা হাঁচি দিল।
তারপর প্রমিতি নাক টেনে বলে উঠে, সর্যি! সর্যি! আসলে এতো সকালে গোসল করার জন্য ঠান্ডা লেগে গেছে।
নিরব মুখটা কালো করে বলে, সর্দি ও তো লেগেছে?
প্রমিতি নাক টানতে টানতে বলে, হুম।
–এতো সকালে কেন গোসল করতে গেলে?
–সুমি খালা বলেছিল তাই।
নিরব মনে মনে বলে, খালামনি আপনার সমস্যাটা কি? কেন আমার পিছনে লেগে আছে? ধ্যাত! ভালোই লাগেনা।
বলে নিরব গটগট করে বাইরে বেরিয়ে গেল।
প্রমিতি অবাক হয়ে নিরবের যাওয়ার দিকে চেয়ে রইল। সে বুঝতে পারছে না যে নিরব রেগে গেল কিনা?
একটু পর প্রমিতিও নিরবের পিছু পিছু বাইরে বেরিয়ে দেখে নিরবের নাস্তা খাওয়া ওলমোস্ট শেষ।
তাকে দেখে বেগম বলে উঠে, বউমা, তুমি বসে পড়ো। একসাথে নাস্তা খাও।
প্রমিতি হালকা হেসে নিরবের পাশের চেয়ারে বসে পড়ল।
কিছুক্ষন পর লিনা আর বরকত ও চলে এলো।
সবাই একসাথে নাস্তা করতে লাগলো।
নিরব খাওয়ার মাঝে বলে উঠে, আমাকে অফিস যেতে হবে। সো এখনি রওনা হবো।
সুমি খালা তা শুনে বলে৷ সেকি! বিয়ের পরের দিন তুই অফিস যাবি? একদিন না গেলে কি হবে? যাস না আজকে।
নিরব বিরক্তি নিয়ে মনে মনে বলে, থেকেই বা লাভ কি? আপনি তো খুব বউয়ের সাথে একা কোয়ালিটি টাইম স্পেন্ড করতে দিবেন। খুব ভালো করেই জানা আছে, কিছুক্ষন পর আবার দল-বল নিয়ে হাজির হয়ে মুভি দেখতে বসবেন। যে মহিলা বাসররাতে একা থাকতে দেয় নি, সে কিনা দিনের বেলা থাকতে দিবে, যতোসব আজাইরা ঢং মারতেসে এখন। কিন্তু মুখে বলল, আর্জেন্ট একটা কাজ আছে।
লিনা বলে উঠে, আমাকেও যেতে হবে। মিটিং আছে।
বরকত বলল, আমারো ভার্সিটিতে ক্লাস আছে। লিনা তোমাকে আমি ড্রপ করে দিব।
লিনা খেতে খেতে বলে, ওকে।
কিছুক্ষনের মধ্যে বরকত-লিনা আর নিরব বেরিয়ে গেল।
নিরব একবারো প্রমিতির সাথে কথা বলে নি। এতে কিছুটা মন খারাপ হয় প্রমিতির। ছেলেটার প্রতি একদিনেই দুর্বল হয়ে পড়েছে প্রমিতি । নিরব তার সাথে কথা না বলায় প্রমিতির এখন কান্না করতে মন চাচ্ছে।
প্রমিতিরা দুপুরের পরপর নিরবের বাসায় চলে আসে।
বেগম প্রমিতিকে নিজের বাসায় ঢুকিয়ে বলে, আজকে থেকে আমার ছেলেটার দায়িত্ব তোমার সেই সাথে এই বাসার দায়িত্বটাও তোমার কাধে দিয়ে দিলাম। আজকে থেকে আমি আর মা রিটায়ার্ডমেন্টে চলে গেলাম। বলে এক গাল হাসল।
প্রমিতি হালকা হেসে চারপাশে তাকালো। চারিপাশে আভিজাত্যর আভাস। টিভিতে যেরকম বাসা-বাড়ি দেখায় ঠিক সেই রকমভাবেই সাজানো ঘরটা। ভেলভেটের সোফা। সোফার সামনে বড় টিভি। ওয়ালপেইন্ট করা।
বেগম প্রমিতিকে নিরবের রুমে নিয়ে গেল। এবং বলল।,আজ থেকে এটা তোমার রুম।
প্রমিতি হেসে দিল আর বলল, আপনি অনেক ভালো মনের মানুষ , আন্টি।
বেগম ভ্রু কুচকে বলে, আন্টি কাকে বললে? আমি তোমার মা হই। মা বলে ডাকবে।
একথা শুনে প্রমিতি আবেগী হয়ে বেগমকে জড়িয়ে ধরে কেদে দিল।
তা দেখে বেগম বিচলিত হয়ে গেল এবং বলল কি হয়েছে, মা কাদছো কেন? কেউ কিছু বলেছে?
প্রমিতি নাক টেনে বলে, নাহ। আসলে আপনার কাছ থেকে যে এতো ভালোবাসা পাব তা কল্পনা ও করতে পারিনি।
বেগম প্রমিতির মাথায় হাত রেখে বলে, পাগল মেয়ে কোথাকার। একি! তোমার তো ঠান্ডা লেগে গেছে।
প্রমিতি হালকা স্বরে বলে।,হু।
–আচ্ছাব,তুমি রেস্ট নাও। আমি মেডিসিন পাঠিয়ে দিচ্ছি।
–জি ঠিক আছে।
বেগম প্রমিতিকে নিরবের রুমে রেখে চলে গেল।
প্রমিতি বেগম যাওয়ার পর নিরবের রুমটা দেখতে লাগল। নিরবের রুমটা খুব সুন্দর করে সাজানো। একটা দেয়াল জুড়ে বিশাল বড় ফ্রেমে নিরবের ছবি বাধানো। প্রমিতির চোখ আটকে গেল নিরবের ছবিটার দিকে। সত্যি মনোমুগ্ধকর একটা ছবি। প্রমিতিকে যে বিষয়টা টানছে তাহলো নিরবের মুচকি হাসি!
হাসির আকার খুব বেশি না। হালকা হাসি ঝুলে আছে মুখে। কিন্তু প্রমিতির কাছে মনে হচ্ছে, নিরবের এই হাসির মতো নিখুত হাসি দুনিয়া তে আর একটাও নেই।
আচ্ছা, প্রমিতি কি এই ছেলেটার প্রেমে পড়ে গেল নাকি?
এমন উদ্ভট চিন্তা মাথায় আসতেই প্রমিতি আনমনে হেসে উঠে। আর শাড়ি আচল হাতের সাথে প্যাচাতে লাগে।
কোন কিছু করার না থাকলে প্রমিতি ওড়না দিয়ে এভাবে খেলা শুরু করে। আজকে ওড়না নেই তাই শাড়ির আচল দিয়েই কাজ চালাচ্ছে সে।
কিছুক্ষন পর বেগম প্রমিতিকে মেডিসিন দিয়ে গেল। প্রমিতি তা খেয়ে নিল এবং রেস্ট নেওয়ার জন্য বিছানায় শুয়ে পড়ল।
★★★
বরকত টিচারস রুমে বসে আছে। নিরব কিছুক্ষন আগে ফোন দিয়ে ভার্সিটিতেই থাকতে বলেছে। সে নাকি বরকতের সাথে কথা বলবে। বরকত জানে আজকে তার অবস্থা কাহিল। কারন নিরব তো তাকে ছাড়বে না। ধোলাই তো খাবেই।
বরকত এসব ভাবতে ভাবতেই পিপাসা পেয়ে গেল তার। সে সামনে থাকা গ্লাসটা থেকে পানি খেয়ে নিল আর মনে মনে আল্লাহকে স্মরন করতে লাগলো।
কিছুক্ষন পর সত্যি নিরব তার রুমে আসল। বরকত তাকে দেখে জোড়পূর্বক হেসে বলে, কেমন আছিস রে?
নিরব বরকতের বিপরীতে বসে পড়ে এবং বলে, আছি ভালোই। আপনি বলেন, আপনি কেমন আছেন?
–আ,,,আমি আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি।
–সবকিছু কিন্তু তোর জন্য হয়েছে।
বরকত বলল, আমার জন্য কি হয়েছে?
নিরব দাতে দাত চেপে বলে, হাসপাতালে আগ বাড়িয়ে কে তোকে মিথ্যা বলতে বলেছে শুনি?
বরকত অবাক হওয়ার ভান করে বলে,মিথ্যা কই বললাম?
–প্রমিতি যে আমার বউ হয় —এই কথাটা মিথ্যা বলিস নি?
–না তো। মিথ্যা কেন বলব। প্রমিতি তো তোর ই বউ হয়।
এবার নিরব নিজেই টাস্কি খেল। এক দন্ড ভেবে নিয়ে বলে, সেটা ঠিক যে আমার বউ হয়।কিন্তু তুই যদি মিথ্যা না বলতি তবে আজকে এমন দিন দেখার লাগত না। তাই সব দোষ তোর।
বরকত জোড় গলায় বলে, দেখ, তোকে কে রেকলেসলি ড্রাইভিং করতে বলেছিল?
–আমি রাফ ভাবে গাড়ি চালাই নি। ও গাড়ির সামনে চলে আসছিল। এখানে আমার ফল্ট কোথায়?
বরকত বলল, তোর কোন দোষ নাই? কে বলছিল তোকে প্রমিতিকে হোটেলে নিয়ে গিয়ে রাখতে? আমি বলছিলাম?
নিরব মিইয়ে গেল এবং বলল, তো কি বাসায় আনতাম?
–দেখ। দোষ কিন্তু তোর ই। ওইসব এখন বাদ দে। সংসারে মন দে।
নিরব এবার বলে, সত্যি কথা বলি একটা?
–বল৷
–আমার না প্রমিতিকে খুব মনে ধরেছে। (লজ্জা পেয়ে বলে নিরব)
একথা শুনে বরকত বলে, ও আল্লাহ! তাই নাকি?
–ইয়েস, দোস। তোকে আমি ধোলাই দিতে আসি নি বরং থ্যাংকস জনাতে এসেছি। তুই যদি ওইরকম বোকামি না করতি তাইলে আমি প্রমিতিকে এভাবে কাছে পেতাম না। জানিস, ওর চোখের দিকে তাকালে না, আমি সব ভুলে যাই। ওর চোখে চোখ রাখলে বুকের ভেতরটা কেমন করে উঠে। নিশ্বাস আটকে যায়। সবকিছু গুলিয়ে ফেলি। প্রমিতির দিকে তাকালে মনে হয় জগতটা থেমে গেছে বা আমি আর ও ছাড়া এই জগতে কেউ নেই৷ ওকে দেখলে কেমন জানি অনুভূতি জাগে মনের গহীনে। কালকে যখন তোরা আমাকে আর ওকে আলাদা রাখলি না? বিশ্বাস কর, ওই সময় তোদের সব ক’টার মাথা ফাটিয়ে দিতে মন চাচ্ছিল। জেলাস ফিল হচ্ছিল! আমার বউয়ের সাথে তোরা কেন থাকবি? আমি, জাস্ট আমি থাকব! আর কালকে ভোরে যখন ও বলল, ওর খুদা লাগছে, তখন আমি নিরব চৌধুরি যার কিনা গুলশানে ছয়তলা বিল্ডিং সে স্বয়ং প্রমিতির জন্য রান্না করতে চলে গেলাম। ভেবে দেখ!
বরকত খুব মনোযোগ দিয়ে কথাগুলো শুনে বলে, বন্ধু তুমি তো রোমিও হয়ে গেলা৷
নিরব লাজুক হেসে বলে, হয়তোবা!!
বরকত বলে, হয়তোবা আবার কি? 100%! তুই প্রেমে পড়ছিস।
–আচ্ছা। চল উঠি। তোকে ট্রিট দিব।
বরকত বলে, আরে, লাগবে না। আমার বউ বাসায় একা আছে।
–লিনাকে কল করে বলে দিয়েছি। তুই চল তো।
–ওকে।
তারপর বরকতের অফিস থেকে নিরব আর বরকত বেরিয়ে চলে গেল।
★★★
রোহানের হাতে ঢাকা যাওয়ার টিকিট। কিছুক্ষন পর সে গাড়িতে উঠবে। অনেক কষ্টে সে জানতে পেরেছে প্রমিতি পার্লার থেকে পালিয়ে সোজা বাস স্টান্ড এ গিয়েছিল এবং তার কিছুক্ষন পর সে ঢাকার পথে রওনা দেয়। রোহান বুঝে পাচ্ছে না, ঢাকার মতো এতো বড় শহরে কোথায় খুজে পাবে সে প্রমিতিকে? কিন্তু রংপুরে বসে থেকেও তো লাভ নেই। আর খালা তার উপর বেশ চেতে আছে। রোহান পড়েছে বিপাকে।
না পেল হাস আর না পেল হাসের সোনার ডিম। কথায় আছে না আমও গেল ছালাও গেল –রোহানের হয়েছে সেই অবস্থা!
চলবে৷
[