স্বামী পর্ব ৯

#স্বামী
#লেখনীতেঃ_নুসরাত_জাহান
#পর্বঃ_৯

নিলয় গাড়িতে বসে প্যানপ্যান করছে আর ফাঁকে ফাঁকে আমার দিকে তাকাচ্ছে। সামনে থাকা আয়নার দিকে চোখ পড়তেই দেখি নিয়ল দাঁত কেলিয়ে হাসছে।
সোহান আর নিলয় দুজনেই জমিয়ে আড্ডা দিচ্ছে আর হাসছে।

কিছুদূর যাওয়ার পরে সোহান মার্কেটের সামনে এসে গাড়িটা দাঁড় করল।

সোহান গাড়ি দিয়ে নেমে দরজার সামনে আমার নামার অপেক্ষা করছে। নিলয়ও সাথে সাথে নেমে সোহানের পাশে দাঁড়িয়ে আমার পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখছে। আমি দেখেও না দেখার ভান করে সোহানকে বললাম,
– এখানে দাঁড়িয়ে থাকবেন নাকি সামনে যাবেন।
– হ্যাঁ চল।

নিলয়ের ফোন বেজে উঠল। কথা বলতে বলতে সামনের দিকে এগিয়ে গেল। সোহান আমার হাত ধরে হাঁটতে লাগল।
কিছুক্ষণ পরে নিলয় পিছনে ফিরে এসে বলল,
– সোহান আমার জরুরি একটা কাজ পড়েছে আমার এখুনি যাওয়া লাগবে।
– এখনি..?
– হ্যাঁ। আর শোন খুব শীঘ্রই আমার বিয়ে খাওয়ার জন্য রেডী থাকিস।
– আলহামদুলিল্লাহ অপেক্ষায় রইলাম।
নিলয় দাঁত বের করে বলল,
– ভাবী আমি যাচ্ছি বিয়েতে কিন্তু অবশ্যই আসবেন।
– জি।

নিলয় হাঁটছে আর ভাবছে ইসসস যদি এক রাতের জন্য জান্নাতকে পেতাম তাহলে জীবনটা বোধহয় স্বার্থক হত। জান্নাত ভাবীকে দেখার পরে মনের ভেতরটা কেমন কেমন জানি করে। রাতের ঘুম হারাম হয়ে গেছে। ইচ্ছা করে ওর বুকের উপরে শুয়ে থাকি। এতটা হট দেখলেই বুকের মাঝে কেমন জানি করে।

সোহান আমার হাত ধরে মার্কেটে ঢুকে নিজের পছন্দ মতো কিছু ড্রেস কিনে দিল, সাথে কিছু গহনা।
শপিং শেষ করে রেস্টুরেন্টে বসল খাওয়ার জন্য। মোগলাই, কাবাব আর হট কফি খেয়ে বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দিল।

বাসার আসার পথে গুড়িগুড়ি বৃষ্টি শুরু হয়েছে। ভালোই লাগছে বাতাসটা। সোহান গাড়ি চালিয়ে বাসায় পৌঁছিয়ে ব্যাগগুলো রুমে রেখে এসি অন করে সোফার উপরে বসল।

এদিকে আমার প্রচন্ড শীত শীত লাগছে। কিন্তু তার তো গরম লাগছে ভেবে কোন কিছু না বলে জামা চেইঞ্জ করার জন্য ওয়াশরুমে ঢুকে একটুপর বেরিয়ে আসলাম।

রাত ১২ টা বাজে সোহানের পাশে শুয়ে পড়লাম। সোহানের ফোন কলের সেই মেয়েটির কথা ভাবতে ভাবতে কখন যে চোখের পাতা এক হয়ে গেছে বুঝতেই পারিনি।

মধ্যরাতে সোহানের হাতের স্পর্শে ঘুম ভেঙে চোখ মেলে তাকাই। সোহান পিঠের উপরে হাত রেখে নাড়াচাড়া করছে। বুঝতে পারলাম সে কী বলতে চাচ্ছে..? তার এখন আমার শরীরটা দরকার! সোহানের ডাকে সাড়া না দিয়ে চুপচাপ চোখ বন্ধ করে রাখলাম।
হঠাৎ সোহানের গলা শুনলাম।
– জান্নাত তুমি কী ঘুমিয়ে গেছ..?
– না, ঘুমাইনি।
– তাহলে ওভাবে মুখ ঘুরিয়ে রেখেছ কেন..?
– তাইলে কী করব..?
– বাহ্ রে কী করবে সেটাও আমাকে বলে দিতে হবে..?
– হ্যাঁ বলে দিতে হবে কারণ আমার নিজস্ব কোন মতামত নেই। বর্তমানে আমি এখন কাঠের পুতুল হয়ে গেছি। বলুন কী বলতে চান..?
– কাছে আসো, ভালো লাগছে না। তোমাকে আদর করব।
– এখন কয়টা বাজে দেখেছেন..? একটুপরে ফজরের আজান দিবে।
– আড়াইটা বাজে। তাছাড়া এটাই এখন বেস্ট সময় সেক্সের জন্য। ফজরের আজান তো দিবে পৌঁনে চারটায়। তার ভেতরে দু’বার আদর করা যাবে।
সোহানের কথা শুনে ভীষণ রাগ উঠেছে। মানুষটাকে কিছুতেই মিলাতে পারছে না। হঠাৎ বৃষ্টির মতো, যখন খুশি নেমে যায়।
– কী হল..? চুপ করে আছ কেন..?
– আমার কিছু বলার নেই আপনার যেমন ভালো লাগে তেমনি করেন। আমার শরীরটা আমাকে দান করলাম। যেদিন থেকে বিয়ে হয়েছে সেদিন থেকে আপনার নামে দলিল করে দিয়েছি।
– এত কথা বলে টাইম ওয়েস্ট করতে চাই না। জলদি কাছে আসো। জান্নাত তুমি খুব সেক্সি। সারাদিন তোমার মাঝে ডুবে থাকতে ইচ্ছা হয়। জান্নাত এখন থেকে দিনে সময় পেলে আমাকে সময় দিবে। তোমাকে দেখলে আমার নেশা ধরে যায়। নেশা করার প্রয়োজন হয় না। তোমার শরীরটা আমাকে টেনে নিয়ে আসে।
দীর্ঘশ্বাস ফেলে ভাবলাম না চাইতেও নিজের শরীরটাকে বিকিয়ে দিতে হল স্বামী নামের মানুষটার কাছে।
এরচেয়ে পতিতালয়ে থাকলেও নিজের মন মতো সব করা যেত কিন্তু আমার জীবনটা একদম তেজপাতা হয়ে গেল।
কিছুক্ষণ পরে ক্লান্ত শরীরে পাশে শুয়ে পড়ল সোহান। আজ খুব কষ্ট হয়েছে আমার। খুব দূর্বল লাগছে।

বিছানা দিয়ে আস্তে করে নেমে টাওয়ালটা নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকলাম। চুলগুলো টাওয়ালে পেঁচিয়ে বেরিয়ে আসতেই দেখি সোহান সামনে দাঁড়িয়ে আছে।
– একি আপনি..?
– হুম আমি। দেখতে এলাম তোমাকে নগ্ন শরীরে কেমন লাগে..?
উফফ কী ফিগার তোমার..? এককথায় তোমার পুরো শরীরটা আমাকে এত বেশী আকৃষ্ট করে বলে বুঝাতে পারব না। আবার যখন শাওয়ার নিবে তখন টাওয়াল পেঁচিয়ে বেরিয়ে এসে আমার সামনে টাওয়ালটা খুলে ফেলবে। আমি তোমাকে ভালো করে দেখব বলেই হা হা হা করে হাসতে হাসতে ওয়াশরুমে ঢুকল সোহান।

সোহানের কার্যকলাপে আমার মেজাজ পুরো গরম। রাগে শরীরটা জ্বলছে। ছিঃ মানুষ এতটা লুচ্চা হয় কীভাবে..? কথায় কোন রস নেই আছে শুধু কীভাবে আমাকে ভোগ করবে।

ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে সোহান বিছানায় গিয়ে কোলবালিশ কোলে নিয়ে শুয়ে পড়ল।

চারিদিকে ফজরের আজান শোন যাচ্ছে। ওজু করে নামাজ আদায় করে বিছানায় হেলান দিয়ে শুয়ে পড়লাম।

কিছুক্ষণের ভেতরেই আকাশ পরিস্কার করে এলো। আমি দু’চোখের পাতা এক করতে যাব তখনি দরজায় কলিংবেল বাজল।

আমি দরজা খুলতে যাব তখনি সাথী দরজা খুলে অবাক হয়ে যায়। আপনি এত সকালবেলা..?
– হুম। লঞ্চে করে এসেছি তো তাই তাড়াতাড়ি চলে এসেছি। জান্নাত কোথায় একটু ডাক দাও।
– ভাবী তো এখন ঘুমাচ্ছে। একটা কাজ করুন আপনিও গিয়ে বিশ্রাম করুণ পরে ভাবীর সাথে দেখা করবেন।
আপনি আসবেন একটা কল করে তো বলবেন তাহলে ড্রাইভার পাঠিয়ে অন্ততপক্ষে আপনাকে আনিয়ে নিতাম।

– আসলে তাড়াহুড়া করে আসার কারণে জানানো হয়নি।
– ঠিকাছে। আমার সাথে আসুন গেস্ট রুমটা দেখিয়ে দিচ্ছি।
– আচ্ছা মা।

সাথী জান্নাতের বাবা জাহিদ সাহেবকে গেস্ট রুমে রেখে মায়ের রুমে গিয়ে পুরো ব্যাপারটা বলল।

সকাল ৮ টা..

সাথী চায়ের মগ হাতে জাহিদ সাহেবের রুমে গিয়ে বলল,
– আপনি ঘুমাননি..?
– না ঘুম তো আসেনি।
– একটু চেষ্টা করতেন। লঞ্চে তো আর ঘুমানো যায় না। চায়ের মগটা এগিয়ে দিয়ে বলল, চা টা খেয়ে নিন দেখবেন ভালো লাগবে।
– হুম। চা খেতে খেতে বলল,
জান্নাতকে একটু ডেকে দাও।
– আচ্ছা বলছি।

আমি ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে এসে দেখি সাথী রুমের সামনে ঘুরঘুর করছে। আমার বেরোনোর উপস্থিতি টের পেয়ে সাথী আমাকে জিজ্ঞেস করল,
– ভাবী আসব!
– হুম আসো।
– ভাবী তোমার বাবা এসেছে খুব সকালবেলা। তুমি ঘুমানো ছিলে বলে ডাকিনি এখন যাও দেখা করে এসো।
– বাবা এসেছে..?
– হ্যাঁ এসেছে। এখন গেস্ট রুমে আছে তুমি তাড়াতাড়ি যাও।

আমি দৌঁড়ে গিয়ে গেস্ট রুমে ঢুকে বাবাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলাম।
– জান্নাত মা, কাঁদিস না। কী হয়েছে..? তুই ভালো আছিস তো..?
– হ্যাঁ বাবা খুব ভালো আছি। তুমি কেমন আছ..?
– তোকে ছাড়া কীভাবে ভালো থাকি..? একি জান্নাত চেহারার কী হাল করেছিস তুই..?
আমি আর বাবাকে দেখে কান্নায় ভেঙে পরি। হুট করেই মাটিতে বসে পড়ি।
জান্নাতের কান্না দেখে জাহিদ সাহেব
নিজেকে সামলাতে না পেরে দু’চোখে পানি ছলছল করছে।
মেয়েকে কোন মতে শান্ত করে বিছানার উপরে বসে মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল,
– মা রে তুই কী আমার উপরে অভিমাণ করেছিস..? আমাকে ভুল বুঝিস না মা।
চোখের পানি মুছে নিয়ে বাবাকে বললাম,
– মা কেমন আছে বাবা..? তুমি এতটা পাষাণ কীভাবে হলে..? একটাবারও কল দিয়ে আমার খোঁজ নিলে না। আমি না তোমার কলিজার টুকরা। আমাকে দূর দেশে ছেড়ে দিয়ে তোমরা কী শান্তিতে আছ..?
– তোর মায়ের শরীরটা আগের চেয়ে ভালো আছে। তোর কথা সারাদিন বলে আর কাঁদে।
– বাবা হঠাৎ করে তুমি এলে যে কোন কারণ আছে..?
– কোন কারণ নেই। তোকে দেখতে ইচ্ছা করছিল তাই চলে এলাম। আর তোর ভর্তিটা ট্যান্সফার করিয়ে কাগজপত্র তোর শাশুড়িকে দিয়ে যাব।
– সত্যি বাবা! আমি আবার পড়াশুনা করব!
– হ্যাঁ মা।

সোহানের মা এসে বলল,
বাবা-মেয়ে কী গল্প করেই কাটিয়ে দিবে..? নাস্তা করবে কখন..? আগে নাস্তা শেষ করে গল্প কর কেমন।
– জি মা।

জান্নাত তুই বেয়াইকে সাথে নিয়ে ডাইনিং রুমে আয়।
বাবাকে সাথে নিয়ে নাস্তা সেরে রুমে ঢুকলাম। বাবা ততক্ষণে সোহানের মায়ের কাছে গেল।
– কিছু বলবেন..?
– হ্যাঁ। আপনি তো জান্নাতকে ট্যান্সফার করিয়ে আপনার এখানের কলেজে আনতে বলেছিলেন আমি তাই করে সমস্ত কাগজপত্র নিয়ে এসেছি।
– আলহামদুলিল্লাহ, শুনে খুশি হলাম খুব চিন্তায় ছিলাম এটা নিয়ে। জান্নাতের মাকেও নিয়ে আসতেন তাইলে তো ভালো হত।
– জান্নাতের মায়ের শরীরটা এত বেশি ভালো না তাই আসতে চাইলেও আমি নিয়ে আসিনি। আমি কালকে সকালের বাসে চলে যাব।
– কী বলেন..? আজকে এলেন আবার কালকেই চলে যাবেন এটা কী হয় বলেন.?
– জান্নাতের মা সুস্থ হলে একসময় আসব তখন না হয় বেশ কয়েকদিন থেকে যাব।
– এখন থাকলেই মনে বেশি খুশি হতাম।
– এখন না অন্য কোনদিন!
– আচ্ছা আপনি চা খাবেন..?
– চা হলে তো ভালো হয়। তবে একটু আগে সাথী দিয়েছিল।
– যাক সমস্যা নেই আবার খাবেন। আমাদের বাসায় সবাই কফি পছন্দ করে আর আপনার মেয়ে তো তেমন একটা চা পছন্দ করে না। নিজের জন্য চা বানানোটা খুবই বিরক্তিকর লাগে।
– ভালো কথা বলেছেন। তাহলে আর দেরী না করে আমার আর আপনার জন্য চা বানিয়ে আনেন।
– হুম।

দুপুরবেলা রুমে এসে জান্নাতকে না দেখে রুমের চারদিকে চোখ বুলায় সোহান।

হঠাৎ ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে এই যে আপনি কী কিছু খুঁজছেন..?

পিছনে তাকিয়ে সোহান পুরো অবাক হয়ে যায়। আজ জান্নাতকে অন্য রকম লাগছে। এতদিন তো গ্রামের মেয়ে বলে অপমান করেছে কিন্তু এটা এখন কাকে দেখছে..? সত্যি কী জান্নাত নাকি ভুল দেখছে?
মাথায় স্টাইল করে ভেজা চুল বেধে রেখেছে আর লং স্কার্ট আর টপস পড়ে গলার উপরে শিপনের ওড়না।
সোহান হা করে তাকিয়ে আছে।
– কী দেখছেন..?
– কিছু না।
– তাকিয়ে আছেন কেন..?
– এমনি!
– আচ্ছা শোনেন কফি খাবেন..?
– তুমি বানিয়ে খাওয়াবে..?
– জি।
– তাহলে আমি বসি তুমি বানিয়ে নিয়ে এসো।

জান্নাত চলে গেলে সোহান ফ্যালফ্যাল করে আমার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে।

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here