#স্বামী
#লেখাঃ_নুসরাত_জাহান
#পর্বঃ_১৪
সোহানের শরীরে উঠে দাঁড়ানোর মতো বিন্দুমাত্র শক্তি নেই। নিলয়ের কথা শুনে হাত-পা থরথর করে কাঁপছে। কপাল বেয়ে ঘাম পরছে। কষ্টে চোখদুটো ঝাপসা হয়ে আসছে। নিলয়ের এমন বাজে প্রস্তাবটা শুনে গালে থাপ্পর বসানোর বদলে রাগটাকে পানি করে ভিক্ষা চাওয়া লাগছে যাতে ও ভিডিওটা ডিলিট করে। কিন্তু নিলয় হারামীর কথা শুনে মনে হচ্ছে না সে এমন কিছু করবে।
সেদিনের পুরোনা কথাগুলো মনে পরলে বুকের বা পাশটায় চিনচিন করে ব্যথা করে।
কলেজে উঠার পরে কত মেয়েকে যে সোহানের মনে লেগেছিল তার কোন হিসেব নেই। সুন্দরী মেয়েদের পাগল ছিল। পরীক্ষা শেষ করে সোহান আগে হল থেকে বেরিয়ে সোজা ক্যাম্পাসে বটগাছের নিচে বসে তখনি দূর থেকে দেখল নিলয় একটা সুন্দরী মেয়ের সাথে হাসতে হাসতে এদিকটায় আসছে। মেয়েটিকে দেখে পুরুষত্ব জেগে ওঠে ওর। দীর্ঘশ্বাস নিয়ে চুপচাপ বসে মেয়েটিকে দেখছে। প্রথম দেখায় মেয়েটিও সোহানের দিকে ঢ্যাবঢ্যাব করে তাকিয়ে থাকে।
নিলয় সোহানের পাশে বসে গায়ের উপরে হাত রেখে বলল,
– সোহান এই হল লিজা যাকে আমি ভালোবাসি। ওকে বিয়ে করতে চাই।
লিজার দিকে সেই যে তাকিয়ে থাকে একবারের জন্যও চোখের পলক ফেলছে না সোহান।
– এই সোহান তুই ঠিকাছিস তো.!
– হ্যাঁ ঠিকাছি।
– তাইলে তুই থাক আমি লিজাকে নিয়ে যাচ্ছি।
– কোথায় যাস.?
– কাজ আছে পরে কথা বলব।
নিলয় চলে যাচ্ছে লিজাকে সাথে করে কিন্তু লিজা পিছন থেকে সোহানের দিকে বারবার তাকাচ্ছে।
কলেজ থেকে বেরিয়ে বাসায় গিয়ে বিছানায় বসল কিন্তু এক সেকেন্ডের জন্যও ভালো লাগছে না সোহানের। সারাক্ষণ লিজার কথা মনে পরে। নিলয়টা এত সুন্দরী একটা মেয়ের সাথে প্রেম করবে এটা তো হতে পারে না। আজকাল প্রেম হল টাইম পাস। সাতদিন প্রেম করে বলে বেড শেয়ার করব না হলে রিলেশন রাখব না। যখন মেয়েটি রাজি হয় তখন তাকে ইচ্ছামতো ভোগ করে। কয়েকদিন নিজের চাহিদা মিটানোর পরে মেয়েটি পুরানো হয়ে যায় বলে আরেকজনকে খোঁজ করে। তবে এটা পুরুষদের ক্ষেত্রেই বেশি হয়। মেয়েরা যে ভালো এমনটা নয় তবে পুরুষদের দোষেই খারাপ হয়।
খুব কম মানুষই আছে যারা প্রেমের পবিত্রতা বজায় রেখেছে। ইসলামে তো প্রেম করাকে একেবারে নিষিদ্ধ করা হয়েছে তবুও মানুষ প্রেমের প্রতি ঝোঁকে। এটাকে ভালোবাসা বলে না বলে শরীর বিতরন।
নিলয়ও মনে হয় টাইম পাসই করছে। আমার ভাগ্যে তো সেটাও জোটে না।
পরেরদিন সকালে কলেজে গিয়ে গেইটের সামনে অপেক্ষা করছে সোহান। লিজা কলেজে ঢুকলে ওর হাতে একটা চিরকুট ধরিয়ে দিয়ে সামনের দিকে হাঁটা শুরু করল।
আজ নিলয় কলেজে আসেনি। এই সুযোগটাকে কাজে লাগিয়ে লিজার কাছে গেল। লিজা মাঠের এক কোণে একা বসে বসে কানে হেডফোন দিয়ে গান শুনছে। সোহান আসলে কান থেকে হেডফোনটা খুলে বলল,
– কিছু বলবে..?
– চিরকুটটা পড়েছ..?
ভ্রু কুঁচকে লিজা বলল,
– পরিনি পড়ব তবে কী লেখা আছে.?
– সব যদি বলে দেই তাহলে কী হয়.? তুমি নিজে খুলে পড় তাহলে বুঝবে। আমার মোবাইল নাম্বারটা লেখা আছে ফ্রি থাকলে কল দিও।
সোহান যাওয়ার জন্য পা বাড়াবে তখনি লিজা বলল,
– তুমি আমাকে ভালোবাস.?
লিজার কথা শুনে মুখটা ঘুরিয়ে বলল,
– তার মানে তুমি আমাকে মিথ্যা বলেছ যে তুমি চিরকুটটা পড়নি! লিজা তোমাকে প্রথম দেখে আমার খুব ভালো লেগেছে যার কারণে এমনটা বলা।
– তুমি নিজেও দারুণ স্মার্ট। তোমাকে দেখলে সব মেয়েদেরই পছন্দ হবে।
– তার মানে তোমারও হয়েছে..?
– সব ছেলেদেরই আমার পছন্দ বিশেষ করে স্মার্ট আর ধনী পরিবারের ছেলেদের।
– তার মানে সব ছেলেদের সাথে শুতে পারবে.?
– আমি সব ছেলেদের সাথে শুতে যাব কেন.? যাকে ভালো লাগবে তার সাথে শুব।
– আমি তোমার সাথে শুতে চাই তুমি কী রাজি.?
– তুমি নিলয়ের বন্ধু তাই এটা আমি পারব না কারণ নিলয় আমাকে বিয়ে করবে বলে কথা দিয়েছে। নিলয় অন্য আর পাঁচজন ছেলেদের মতো না। আজ ওর সাথে পরিচয় প্রায় দু’মাস এখন পর্যন্ত বলেনি লিজা চলো আমরা বেড শেয়ার করি। নিলয় শুধু এটাই বলে বিয়ের আগে যদি একটা মেয়ে তার সবকিছু দিয়ে দেয় তাহলে ওই মেয়ের প্রতি ছেলেটির নেশা কমে যায়। আমি অনেক ছেলের সাথে শুয়েছি সবকিছুই নিলয় জানে তবুও আমাকে মেনে নিয়েছে। লিজা পেটে দায়ে শুয়েছে ইনজয় করার জন্য নয়। আমার সমস্ত খবর জেনেও
আজ পর্যন্ত পুরানো কথা নিয়ে খোটা দেয়নি নিলয়।
সোহান লিজার হাত ধরে অনেকবার বুঝনোর চেষ্টা করেও কোন লাভ হয়নি। কথাগুলো আর মনে করতে পারছে না। কিছুতেই ঘটে যাওয়া কথাগুলো মনে করতে পারছে না। কষ্টে বুক ফেটে যাচ্ছে। হঠাৎ করে এমনটা হবে বুঝতেই পারেনি সোহান।
সব কিছু ভাবতেই সোহানের ফোন বেজে উঠল। চোখ ভর্তি পানি ছলছল করছে। স্ক্রিনের দিকে তাকাতেই দেখে নিলয়ের নাম্বার।
কলটা রিসিভ করে হ্যালো বলতে নিলয় বলল,
– কী রে শালা এভাবে বসে থেকে লাভ নাই বাসায় গিয়ে ভাবির সাথে গল্প কর। আমি এখন রাখছি ৭২ ঘন্টার সময় দিলাম তার ভেতরে কী করবি আমাকে জানাবি..? না হলে বুঝতেই তো পারিস কী হবে তোর..?
– নিলয় শোন আমার কথাটা একটু বোঝার চেষ্টা কর ভাই। কথাটা শোনার আগেই নিলয় কলটা কেটে দিল। সোহান তো হ্যালো হ্যালো বলেই যাচ্ছে হঠাৎ ফোনটা হাতে নিয়ে দেখে নিলয়ের সংযোগ বিছিন্ন হয়ে গেছে।
টেনশনে একদম মুখটা শুকিয়ে গেছে।
পুরো রাস্তায় চিন্তা করতে করতে বাসায় আসল। এক সেকেন্ডের জন্য কোথাও থামেনি। রুমে এসে বিছানার উপরে বসে পরল। সমস্ত মুখ লাল হয়ে আছে। চুলগুলো এলোমেলো হয়ে গেছে।
আমি রুমে ঢুকতেই অনেকটা অবাক হলাম কারণ সোহান তো বলে গেছিল ফিরতে রাত হবে কিন্তু এত তাড়াতাড়ি কীভাবে ফিরে আসল..? তাকে দেখে অনেকটা উদাসীন মনে হচ্ছে। পা বাড়িয়ে সোহানের কাছে গিয়ে বসলাম। গায়ে হাত দিতেই সোহান আমাকে জাপটে ধরে হাউমাউ করে কাঁদতে লাগল। কিছু বুঝে উঠার আগেই সোহান আমার কপালে চুমু দিয়ে বলল,
– আমি গোসল করতে যাচ্ছি ততক্ষণে তুমি আমার জন্য ভাত টেবিলে সাজাও।
– আপনি খেয়ে আসেননি.?
– নাহ্ কথাটা বলে টাওয়াল আর কোয়াটার প্যান্ট নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকল। ওয়াশরুমে ঢুকে ঝরণার পানি ছেড়ে দিয়ে তার নিচে দাঁড়িয়ে ভিজতে লাগল। আয়নায় নিজের চেহারার দিকে বারবার তাকাচ্ছে। চোখ মুখ তার লাল হয়ে ফুলে উঠেছে। দীর্ঘ আধা ঘন্টা এভাবে দাঁড়িয়ে থেকে টাওয়াল দিয়ে গা মুছে কোয়াটার প্যান্ট পরে বেরিয়ে আসল। টাওয়ালটা ব্যালকুনিতে মেলে দিয়ে পরনে থাকা জিন্সের প্যান্ট ও মেলে দিল। রুমে এসে সোহানকে বললাম,
– এত রাতে প্যান্টটা না দিলেও হত। পানি পরে ব্যালকুনিটা ভিজে একাকার হয়ে যাবে। সোহান বলল,
– ভিজলে সমস্যা কী কালকে সকালে রোদের তাপে সমস্ত পানি শুকিয়ে যাবে।
– আপনার সাথে কথায় পারব না তাই তর্কেও যেতে চাই না। এখন খেতে চলেন।
– হুম।
ডাইনিং রুমে গিয়ে চেয়ার টেনে বসল সোহান। জান্নাত প্লেটে খাবার বেরে দিচ্ছে। সোহানের মা এসে তার ছেলেকে বলল,
– তুই এত তাড়াতাড়ি ফিরে আসলি যে..? তার উপরে ডিনার ও করিসনি। বিয়ে বাড়িতে কোন সমস্যা হয়েছে..?
মায়ের কথা শুনে সোহান কী বলবে খুঁজে পাচ্ছে না। তবুও তোতলাতে তোতলাতে বলল, বিয়েটা হবে না। ছেলের আগে একটা বিবাহ ছিল যার কারণে অনেক ঝামেলা হয়েছে। যেখানে বিয়েটা হচ্ছে না সেখানে কী খাওয়া যায় তুমি বল মা.?
– সেটা ঠিকাছে যেহেতু বিয়েটা হয়নি তাই খাবার গলা দিয়ে নামবে না। যাই হোক কালকে জান্নাতকে কলেজে নিয়ে যাবি প্রিন্সিপাল কল করে জানিয়ে দিয়েছে।
সোহান এক লোকমা মুখে তুলে বলল,
– মা তুমি কী সত্যি জান্নাতকে কলেজে পড়াবে.?
– হ্যাঁ। কেন তোকে তো সেদিন বললাম যে জান্নাতের সমস্ত দায়ভার আমার তারপর আবার এটা জিজ্ঞেস করছিস কেন.?
– আচ্ছা ঠিকাছে। শিউর হলাম আবার বলা তো যায় না অনেক সময় দেখা যায় মতামত চেইঞ্জ হয় তাই আবারও জিজ্ঞেস করলাম।
– এখন তুই ঠিকমত খাওয়া-দাওয়া কর।
মা চলে চলে সোহান আস্তে আস্তে ভাত খাচ্ছে আর নিলয়ের কথা ভাবছে। মাথার একপাশ হঠাৎ করে ব্যথা করছে। ভাত খাওয়া শেষ করে হাত ধুয়ে দাঁত ব্রাশ করে রুমে গিয়ে এসি অন করে শুয়ে পরল।
সোহানকে দেখে কেন জানি সন্দেহ লাগছে আমার। আমার কেন জানি মনে হচ্ছে তার মনের ভেতরে কিছু একটা চলছে কিন্তু কী সেটাই বুঝতে পারছি না। যেভাবেই হোক কথাটা জানতেই হবে।
লোপা প্লেট, গ্লাস ধুয়ে টেবিলের উপরে উপুর করে রেখে রুমে ঢুকল। রুমে ঢুকে দেখে লাইট বন্ধ করা। সোহান শুয়ে পরেছে কিন্তু ডিম লাইনটাও জ্বালায়নি। ধীরে ধীরে বিছানার পাশে গেলাম। সোহান ওপাশ ফিরে শুয়ে আছে। বুঝতে পারছি না তাকে জিজ্ঞেস করাটা ঠিক হবে কিনা! অনেক চেষ্টা করে অবশেষে মুখ খুললাম,
– আচ্ছা আপনার কী কোন সমস্যা হয়েছে..? না মনে বলছিলাম আজ কয়েকদিন ধরে চুপচাপ। কিছু বলছেন না যে..?
– কিছু হয়নি।
– কিছু হয়নি এটা বললেই কী আমি মেনে নিব প্লিজ বলেন কী হয়েছে.?
– জান্নাত তুমি অতিরিক্ত কথা বলছ। এত প্রশ্ন করছ কেন..? তোমার কোন চাহিদা পূরণ করানো বাকী আছে বলো..? তবুও যদি থাকে কালকে লিস্ট দিবে। যা লিখবে সব কিছু বিকালের ভেতরে আমি এনে দিব।
– আমার কোন চাহিদা নেই আমি অল্পতেই সন্তুষ্ট। আপনি আমার সাথে এভাবে কথা বলছেন কেন..? কিছু জানতে চাওয়াটা কী অপরাধ.? সব সময় রাগ করে কথা বলেন মনে হয় আমি আপনার পূর্ব জন্মের শত্রু।
– হ্যাঁ অপরাধ। কারণ আমি তোমার সব চাহিদা পূরণ করতে পারছি কিন্তু তুমি আমার কোন চাহিদা পূরণ করতে পারছ না। আমি যেভাবে চাই সেভাবে পাচ্ছি না।
– আপনার কী মাথা ঠিকাছে.? কী সব বলছেন.? তখন এতগুলো বলেছেন এখন আবারও সেই টপিক নিয়ে শুরু করেছেন। আসলে আপনি এত পারেন..? হাউ ফানি! রাতে ঘুমানোর সময় যখন আপনি ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পরেন তখন একা একা ভাবী আপনার শরীরের কী ঝাঝ.? মনে হয় সারাদিন ডুবে থাকলেও চাহিদা মিটবে না। আপনি এত শক্তি কোথায় পান..? আপনাকে যত দেখছি ততই রাগ লাগছে। ইচ্ছা করছে আপনাকে ডিভোর্স দিয়ে চলে যাই কিন্তু কী করব আমি চলে গেলে মা, বাবাকে হারাতে হবে। অথচ আপনি যেভাবে শুরু করেছেন তাতে আমার আত্মহত্যা করা ছাড়া কোন রাস্তা থাকবে না।
সোহান শোয়া ছেড়ে উঠে আমার বুকের উপরে উঠে গলা চেপে ধরে বলল, খবরদার আমাকে ছেড়ে যাওয়ার কথা ভুলেও ভাববে না তাহলে গলা টিপে আমিই মেরে ফেলব।
– হ্যাঁ মেরে ফেলেন আমারও আর বাঁচতে ইচ্ছা করে না। মরলেই ভালো হয় অন্ততপক্ষে আপনার প্যারা থেকে তো বাঁচব।
জান্নাত, জান্নাত বলে নিজের মাথার চুল নিজেই টানছে সোহান।
– আপনি কী পাগল হয়ে গেছেন..?
– হ্যাঁ আমি পাগল হয়ে গেছি। তোমার রুপে পাগল হয়ে গেছি।
– আপনি আমার রুমে পাগল হোননি, হয়েছেন মোহে পরে। আপনার একটা শরীরের প্রয়োজন ছিল যার কারণে আমার সাথে এমন করছেন।
সোহান এবার আমার গলাটা আরও জোরে চেপে ধরল।
আমি কথা বলতে পারছিলাম না মনে হচ্ছিল দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।
চলবে…………..