#স্বামী
#লেখনীতেঃ_নুসরাত_জাহান
#পর্বঃ_৩৭_অন্তিম_পর্ব
জান্নাতকে বুকের সাথে জাপটে ধরে হাউমাউ করে কাঁদতে লাগল সোহান। সোহানকে এভাবে কাঁদতে দেখে শুভ অবাক না হয়ে পারল না। সোহানকে কখনও এভাবে কাঁদতে দেখেনি। কাঁদার ভেতরে অনেক ধরণ আছে। নিজের জন্য মানুষ যেভাবে কাঁদে অন্যের জন্য কখনও কাঁদে না। অতিরিক্ত ভালোবাসা থাকলে হয়তো বুকের গভির থেকে কষ্টটা অনুভব করা যায়।
সোহান নিজে নিজে ভীষণ অনুতপ্ত। জান্নাতের প্রতি এতটাই অবহেলা করেছে যার জন্য বুকের ভেতরটা হাহাকার করে কাঁদে। আজ জান্নাতের যদি কিছু হয়ে যায় তাইলে নিজেকে ক্ষমা করতে পারবে না।
জান্নাতকে কোলে তুলে হসপিটালের উদ্দেশ্যে রওনা দেওয়ার জন্য হাঁটতে লাগল। শুভ আর সোহানের মা ছেলের সাথে রওনা দিল। সিঁড়ি বেয়ে জান্নাতকে কোলে তুলে নামতে শুরু করল।
সোহান কাঁদছে আর হাঁটছে। বুকের ভেতরে প্রচণ্ড পরিমাণে ব্যথা করছে।
গ্যারেজ থেকে গাড়িটা বের করে জান্নাতে পিছনের সিটে মায়ের কোলে তুলে দিয়ে সামনের সিটে শুভ আর সোহান বসল। গাড়ি খুব জোরে জোরে টানছে। হসপিটালের সামনে গিয়ে গাড়িটা দাঁড় করিয়ে সিট খুলে জান্নাতকে কোলে নিয়ে লিফটে উঠে ইর্মারজেন্সি বিভাগ ঢুকল। ডাক্তার সবাইকে বের হয়ে যেতে বলল। অনেকক্ষণ পরে বেরিয়ে এসে বলল,
– ভয় নেই প্রেশন্ট ঠিকাছে। তবে পিরোটা সিউর হওয়ার জন্য কয়েকটা টেস্ট করানো লাগবে। যার রিপোর্ট পেলে কনফ্রম হওয়া যাবে।
জান্নাতের টেস্টের রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পরে ডাক্তার বলল,
প্রেশেন্ট প্রেগন্যান্ট ছিল!
-জি।
– আল্লাহর অশেষ রহমতে মা এবং বাচ্চা সবাই ভালো আছে। সোহান জান্নাতের কাছে গিয়ে সিটে বসল।
জান্নাতকে একটুপরে বাসায় নিয়ে যাওয়া হবে। সোহান জান্নাতের দিকে তাকিয়ে থাকল। সোহানের তাকানো দেখে জান্নাত অন্যদিকে তাকাল।
সোহানের চোখ পানিতে টলটল করছে। জান্নাতের হাত ধরে কাঁপা গলায় বলল,
– জান্নাত প্লিজ আমার উপরে আর অভিমান করে থেকো না খুব কষ্ট লাগছে আমার। আমার ভুলগুলো একবার ক্ষমা করে নিজেকে ভালো হওয়ার একটাবার সুযোগ দাও।
শুভ এগিয়ে এসে জান্নাতের কপালে হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল,
– সোহানকে ক্ষমা করে দে। কেউ তার ভুল বুঝতে পেরে ক্ষমা চাইলে তাকে ক্ষমা করে দেওয়া উচিত। সোহানের মা এসে বলল,
– মা হিসাবে তোর কাছে একটাই অনুরোধ আমার ছেলেটাকে ক্ষমা করে দে কথা দিলাম জীবনে তোর কাছে আর কোন দাবী নিয়ে আসব না।
মা আর আপুর কথা শুনে জান্নাত নিজেকে সামলাতে পারল না। হাউমাউ করে কাঁদতে লাগল।
মিনিট দশেক পরে হসপিটাল থেকে বেরিয়ে গাড়িতে উঠার জন্য দরজা খুলতে যাবে তখনি জান্নাতের চোখ আটকে গেলে সামনে দাঁড়িয়ে নিলয়ের দিকে। নিলয় ফোনে কথা বলছে আর হাসছে। জান্নাত সোহাকে বলল,
– নি,,,,,,নি,,,,নি,,,,
জান্নাতের তোতলানো দেখে সোহান সামনে তাকিয়ে জান্নাতকে বলল,
– এই তুমি ঠিকাছ?
– নিলয়।
– নিলয়! কোথায় নিলয়?
– ঐ তো সামনে দাঁড়িয়ে।
– কোথায়? আমি তো কাউকে দেখতে পারছি না।
– ভালো করে দেখুন নিলয় সামনে দাঁড়িয়ে ফোনে কথা বলছে।
সোহান সব জায়গায় চোখ বুলায় কিন্তু কোথাও নিলয়কে দেখতে পায় না। অবশেষে বুঝতে পারল অসুস্থতার কারণে জান্নাতের মাথায় হয়তো সমস্যা হয়েছে। সোহান জান্নাতকে গাড়িতে বসিয়ে সিট বেল্ট বাঁধল। গাড়ি স্টার্ট দিল।
কিছুক্ষণের ভেতরে বাসার সামনে এসে গেইট খুলে গাড়িটা গ্যারেজে রেখে বাসায় ঢুকল। জান্নাতকে সোফার উপরে শুয়ে দিয়ে ড্রেসআপ চেইন্জ করে ফ্রেশ হয়ে জান্নাতের কাছে বসল। শুভ কফি আর চা বানিয়ে নিয়ে এসে বলল,
– নাও দুজনে যার যেটা পছন্দ সেটা খেয়ে নাও। সোহান কফি নিল আর জান্নাত চা। দুজনের খাওয়া শুরু করল। জান্নাত এক চুমুক চায়ের কাপে দিচ্ছে আর ফাঁকেফাঁকে জানালার দিকে তাকাচ্ছে। কিছুটা অস্বস্তি কাজ করছে তার।
– জান্নাত তোমার কী খারাপ লাগছে?
-“…………..”
– জান্নাত!
– “………..”
– সোহান জান্নাতের গায়ে হাত রাখতেই লাফিয়ে উঠে সোহাকে জড়িয়ে ধরল।
– জান্নাত তুমি কী কোন বিষয় নিয়ে টেনশনে আছো? তোমাকে দেখে অনেক চিন্তিত মনে হচ্ছে।
– “…………..”
সোহান বুঝতে পারল জান্নাতের শরীর খারাপ লাগছে। বুকের ভেতরে শক্ত করে চেপে ধরে রেখেছে। জান্নাতকে বালিশের সাথে শুইয়ে রেখে কপালে হাত বুলিয়ে দিল। বাতাসে উড়ে উড়ে চুলগুলো কপালের উপরে এসে পরল। হাত দিয়ে চুলগুলো সরিয়ে দিয়ে অপলোক দৃষ্টিতে জান্নাতের দিকে তাকিয়ে থাকল সোহান। ভীষণ মায়াবী মুখ। জান্নাতকে রেখে বিছানা দিয়ে নামার জন্য পা বাড়াতে যাবে তখন বুঝতে পারল কেউ তার শার্ট আঁকড়ে ধরে রেখেছে। হালকাভাবে পিছনে ফিরে তাকিয়ে দেখল, জান্নাতের একটা হাত দিয়ে তার শার্ট ধরে রেখেছে। ঘুমান্ত অবস্থায় বিরক্ত করতে চায়নি সোহান। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে জান্নাতের হাত থেকে শার্টটা ছাড়িয়ে নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেল।
রাত ১১ টার দিকে সোহান রুমে আসল।
রুমে এসে লাইটগুলো জ্বালিয়ে জান্নাতকে ডিনার করতে আস্তে করে ডাক দিল। সোহানের ডাক জান্নাতের কান পর্যন্ত পৌঁছানোর আগেই জান্নাত চোখ খুলে তাকাল।।
জান্নাতকে দেখে ঠোঁটের কোণে অস্ফুট হাসি ফুটল সোহানের। তোমার শরীর এখন কেমন?
– আলহামদুলিল্লাহ। কাঁধে হাত দিতে দিতে বলল জান্নাত।
– তোমার কাঁধে কী পেইন করছে? আমি ম্যাসেজ করে দিব।
– জানি না হঠাৎ করে কাঁধে পেইন করছে। হয়তো উল্টাপাল্টা ঘুমানো হয়েছে যার কারণে এমনটা হয়েছে।
– তুমি দুই মিনিট দাঁড়াও আমি যাব আর আসব।
– কোথায় যাবেন?
– তেল গরম করতে।
– কিছু লাগবে না এমনিতে কমে যাবে।
– চুপপপপ, একদম চুপপপ। আমি যা বলব তাই হবে। তোমার কথাশুনে বিপদ আনব নাকি।
জান্নাত অনেকটা স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করছে। নিজের অনিচ্ছা স্বর্তেও সোহানকে ক্ষমা করেছে। সোহানের মা, বোন এত করে অনুরোধ করেছে সেটা জান্নাত কী করে ফেলতে পারে। ভাগ্যের উপরে সবকিছু নির্ভর এটা মেনে নিয়ে সামনে এগিয়ে যাবার পরিকল্পনায় মগ্ন জান্নাত। জান্নাত উপলদ্ধি করতে পারছে শ্বাশুড়ি, ননদ যতই ভালোবাসুক না কেন নিজের ছেলে আর ভাইয়ের সামনে পরের মেয়ে একটা কাঁটা মাত্র। মুখে যতই বলুক ছেলের বউকে নিজের মেয়ে ভাববে কিন্তু সময়ই বলে দেয় পরের মেয়েকে কখনও নিজের মেয়ে ভাবে না। হয়তো হাতে গোণা দু,একটা হতে পারে বাকী সব শ্বাশুড়িবাড়ি এক। জান্নাত একদম গভির থেকে কথাগুলো উপলদ্ধি করছে। তবুও একদিক থেকে শ্বাশুড়ি, ননদের এটা ভেবে সম্মান করছে তারা শুধুমাত্র সোহানকে ক্ষমা করতে বলেছে এছাড়া সবদিক থেকে তারা পুরোপুরি সার্পোট দিয়েছে। এটা তো অস্বাভাবিক কিছু নয় কারণ সন্তান যতই খারাপ কাজ করুক না কেন মা-বাবা, বোনদের কাছে সেটা সামান্য বিষয়। সেটা হোক আপনার বেলায় বা অন্যের বেলায়। কথায় তো আছে রসুনের গোড়া কিন্তু এক জায়গায়।
সোহান জান্নাতের কাঁধে আলতো করে ম্যাসেজ করে দিচ্ছে। জান্নাত,,,এই জান্নাত।
সোহানের কথাশুনে কল্পনার রাজ্য থেকে বেরিয়ে এসে বলল,
– জি।
– এখন কেমন লাগছে?
– হাতটা সরিয়ে নিন তো অনুভব করে বলছি। সোহান হাত সরিয়ে নিয়ে জান্নাতের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। জান্নাত,,,খুব টেনশনে আছি তোমার ব্যথা কী কমছে?
– আগের থেকে অনেকটা ভালো লাগছে। তবে ব্যথা এমনই হয় যখন ডাক্তার থাকে তখন রোগ খুঁজে পাওয়া যায় না।
– মানে?
– ধরুণ আপনার মোবাইলের টার্চে সমস্যা হয়েছে আপনি মোবাইলটা দোকানে নিয়ে গেলেন এবং মেকানিককে সমস্যাটা বলছেন। কিন্তু আশ্চর্য! মেকানিকের হাতে গিয়ে ফোনটা দিব্য কাজ করছে কোন সমস্যা নেই। আপনি ফোনটা নিয়ে চলে আসলেন। আসার সময় মেকানিকের মজুরি বাবাদ ২০০ টাকা দিয়ে এলেন। তাছাড়া আসা যাওয়ার গাড়ি ভাড়া সহ প্রায় ৩০০ টাকা গেছে। বাসায় এসে মনের খুশিতে সোফার উপরে শুয়ে পায়ের উপরে পা তুলে ফোনটা ধরলেন। WI-Fi লাইনে কানেক্ট করলেন এবং ম্যাসেঞ্জারে ম্যাসেজ আসল। বান্ধবীর ম্যাসেজ এটা দেখে তো আপনার ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটল কারণ বউ এখন বেঘোর ঘুম ঘুমাচ্ছে এই ফাঁকে বান্ধবীর সাথে কিছুক্ষ টাংকি মারা যাক ভেবে ম্যাসেজ টাইপিং করতে গিয়ে লিখলেন I miss u.. টার্চে কাছ না করাী কারণে I love u বাহ্ এটা দেখে তো বান্ধবী মহা খুশি ফিরতি রিপ্লে আসল I love u too jan😘
আচমকাই পিছনে তাকিয়ে দেখেন বউ রাগে কটমট করে তাকিয়ে আছে এখনি কাঁচা গিলে খাবে। মোবাইলটা হাত থেকে ফ্লোরে পরে টার্চটা ফেটে গেল বলে হা হা হা করে হাসল জান্নাত। এবার বলেন কেমন লাগল কাহিনীটা। যদি এমন হত তাইলে কেমন হত?
মুখটা ভেঁংচি কেটে বলল,
– যদি ফোনে এমন টার্চে সমস্যা হত তাইলে ফোনটাকে ডাস্টবিনে ছুঁড়ে ফেলে দিতাম আর নতুন একটা আই ফোন কিনতাম বলে দাঁতগুলো বের করে হাসল।
হঠাৎ ঘড়ি দিকে চোখ পরল সোহানের দেখল পৌঁনে একটা বাজে। জান্নাত কয়টা বাজে দেখছ খাওয়া লাগবে না। ওষুধ আছে সেটা কী ভুলে গেছ? আমি ও আজকে তোমার গল্পের ভেতরে ডুবে ছিলাম অনেকদিন পরে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম।
দুজনে রাতের ডিনার সেরে শুয়ে পরলেন। সকালবেলা শুভর ডাকে দুজনের ঘুম ভাঙল। সোহান আড়মোড়া দিয়ে জান্নাতকে জাপটে ধরে কাঁধ থেকে চুলগুলো সরিয়ে আলতো করে চুমো খেল।
জান্নাত মুখ লুকিয়ে মুচকি হেসে বলল,
– সকালবেলা কী শুরু করলেন?
– কী শুরু করব? বউকে একটু আদর করলাম। জান্নাত তুমি তো পড়াশুনাটা ঠিক মতো করবে কেমন? আমি চাই তুমি নিজে শিক্ষিত হও কারণ একটা সন্তানের জন্য একজন শিক্ষত মা খুব জরুরি। তোমাকে দিয়ে চাকরী করাব না ঠিকাছে তবুও তুমি শিক্ষিত হও এটাই চাই। তাইলে আজ থেকে মন দিয়ে পড়াশুনা করবে কেমন।
– মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ সূচক সম্মোধন করল জান্নাত।
সোহান বিছানা দিয়ে নেমে ফ্রেশ হয়ে নাস্তার টেবিলে গেল। জান্নাত যায়নি বলে সবাই জিজ্ঞাস করল,
– জান্নাত কোথায়? সকালে ওষুধ নেই? খাবে কখন? নিয়ম মেনে না চললে তো বাচ্চার সমস্যা হবে। এমনিতেই মেয়েটা এতটা উইক যা বলার মতো না।
জান্নাত কথা বলার মাঝে এসে বলল,
– এই তো আমি এসে পরেছি।
শুভ আপু জান্নাতকে দেখে হাসল। এই তো জান্নাত এসে পরেছে।
নাস্তার টেবিলে বসে সবাই নাস্তা খাচ্ছে।
তখনি দরজায় বেল পরল। সোহান চেয়ার ঠেলে উঠে দরজাটা খুলে দিয়ে অবাক হল। আন্টি আপনি?
সোহাকে জড়িয়ে ধরলে কাঁদতে শুরু করল নিলয়ের মা জাহানারা। বাবা তুমি জানো আমার ছেলে নিলয় আর বেঁচে নেই।
– হ্যাঁ আন্টি জানি।
– প্রথমে সবাই মনে করেছিল নিলয়কে কেউ খুন করেছে। কালকে রাতে নিলয়ের রুম পরিষ্কার করতে গিয়ে বিছানার নিচে একটা চিঠি দেখতে পেলাম। কৌতুহল বশত চিঠিটা খুলে পুরোটা পরে বিস্মিত হলাম। নিলয় চিঠিতে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছে আমার মৃত্যুর জন্য আমি নিজেই দায়ী। অনেক ডিপ্রেশনে পরে আত্নহত্যা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। জীবনে অনেক চাওয়া পাওয়া পূর্ণ হলেও শেষ চাওয়াটা সোহানের কারণে পূর্ণ হয়নি। সোহান এখন সুখে আছে কিন্তু আমার সুখ কপালে ছিল না বলেই আজ আমি এত বড় সিদ্ধান্ত নিয়েছি। একদম শেষ লাইনে লেখা ছিল মা, আমাকে তুমি ক্ষমা করে দিও জানি একদিন তোমার হাতে এই চিঠিটা থাকবে আর তখন তুমি কাঁদবে কিন্তু বিশ্বাস কর মা তখন আমি অনেক দূরে থাকব যেখান থেকে কেউ আর ফেরত আসতে পারবে না। তুমি সোহানের মাঝে আমাকে খুঁজে নিও। কথাটা বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পরল জাহানারা বেগম।
সোহান নিজেকে সামলাতে না পেরে জাহানারা বেগমকে জড়িয়ে ধরল।
মা একছেলে নেই তো কী হয়েছে আরেক ছেলে তো আছে।
শুভ এসে বলল,
– আন্টি আমাকে কী আপনার পর মনে হয়? আমরা থাকতে আপনার এত চিন্তা করা লাগবে না। ছেলের সাথে সাথে আরও তিন মেয়ে পেলেন। জান্নাত আর সাথী এগিয়ে আসল। সাথী বলল,
– আন্টি আপু ঠিকি বলেছেন। আজ থেকে আমরা আপনার সন্তান।
জান্নাত রুমে একাকী বসে আছে আনমনে। হঠাৎ রুমে সোহান আসল।
জান্নাতের পাশে বসে কাঁধে হাত দিতেই লাফিয়ে উঠে চিৎকার দিল সে। সোহান তো পুরোই অবাক। কোন কিছু জিজ্ঞাস না করে পাশে শুয়ে পরল।
৬ মাস পরে।
যতদিন যাচ্ছে ততই জান্নাতের মানসিক সমস্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘুমের ভেতরে চিৎকার দিয়ে লাফিয়ে উঠা, একা একা উচ্চস্বরে হাসা, একা একা কথা বলা এটা ওর প্রতিদিনের রুটিন হয়ে দাঁড়িয়ে। মানুষ যখন অতিরিক্ত ডিপ্রেশনে ভুগতে থাকে তখন নিজের স্বাভাবিক জ্ঞান থাকে না এটা কোন অবাস্তব না।
সেদিনের পর থেকে সোহান জান্নাতের প্রতি নিজের চেয়েও বেশি যত্ন নিচ্ছে। জান্নাতকে দেখাশুনা করার জন্য একজন নার্স রেখেছে যাতে ওর কোন কষ্ট না হয়। সোহান জান্নাতের অবস্থা দেখে রিতীমত থতমত খাচ্ছে। কী ছিল আর কী হল? সামান্য একটা ঝড়ে তার সাজানো সংসারটা মোমবাতির নিভু আলোয় জ্বলছে। জোড়ে বাতাস বইলে নিভে যাবে এমন সংশয় নিয়ে দিন কাটাচ্ছে। সোহান এখন নামাজ পরা শুরু করেছে। যতবার জয়নামাজে নামাজ আদায় করছে ততবারই আল্লাহর কাছে কান্নাকাটি করে নিজের করা ভুলের জন্য ক্ষমা চাচ্ছে আর শুধু একটাই ফরিয়াদ করছে হে আল্লাহ, হে রহমতের মালিক জীবনে যত পাপ করেছি অন্যায় করেছি সবকিছু জেনে বুঝে করেছি তার জন্য তওবা করছি বেঁচে থাকতে এমন পাপ কাজ করব না। হে আল্লাহ আমার জীবনের বিনিময়ে তুমি আমার স্ত্রীকে সুস্থ করে স্বাভাবিকভাবে বাঁচার মতো সুযোগ করে দাও। আমি যেন মায়ের আদেশ পালানের সাথে সাথে স্ত্রী, সন্তানদের নিয়ে সুখে থাকতে পারি। তুমি তো পৃথিবীর সমস্ত সুখ আমাকে দিয়েছ তার জন্য তোমার দরবারে শুকরিয়য় জানাই। এভাবে প্রতিদিন একজন স্বামী আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করছে। আল্লাহ ক্ষমাশীল নিশ্চয়ই তিনি তার বান্দাকে ক্ষমা করে জান্নাতকে আবারও স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনবে এটাই একমাত্র বিশ্বাস।
💗 সমাপ্ত💗
জীবনটা একটা রঙ্গমঞ্চ। মানুষ যখন সবকিছু পায় তখন আল্লাহকে চিনে না। দুদিনের এই দুনিয়াতে নিজের ইচ্ছামত সবকিছু করে। কিন্তু এটা ভাবে না জীবনটা একটা তুচ্ছ বস্তু। শরীরটা মাটির তৈরী। শরীরের ভেতরে যে প্রাণপাখিটা আছে এটা আল্লাহর নিদিষ্ট সময় মতো আজরাইল এসে জান কবজ করে যাবে। হিসেব হবে হাশরের ময়দানে ততদিন পর্যন্ত মাটির নিচের ঘরে থাকতে হবে। তাই সবার দুনিয়াতে বসে আখিরাতের জন্য কিছু রেখে যাওয়া যাতে হাশরের ময়দানে শাস্তিটা কম হয়।
সোহান যখন সবকিছু পেয়েছিল তখন সে জান্নাতকে মূল্যায়ন করেনি কিন্তু সব শেষ হওয়ার পরে তার কদর বুঝেছে। জান্নাত হয়তোবা স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসবে কিন্তু কবে আসবে সেটা সময়ই বলে দিবে। যেমন দাঁত থাকতে কেউ দাঁতের মর্যাদা বুঝে না।
নোট:::: দুঃখিত গল্পটা দিতে দেরী করার জন্য। কেমন হয়েছে জানাবেন। আবারও ফিরে আসব নতুন কোন গল্প নিয়ে কারণ মানুষের জীবনটাই একটা গল্প।