প্রতিশোধ পর্ব ৪

প্রতিশোধ
চতুর্থ_পর্ব

sagor_Islam_Raj

আমার জ্ঞ্যান ফিরলে দেখি আমি ফ্লোরে পড়ে আছি।আমি উঠে বসতে চেষ্টা করি।কিন্তু তখন উঠে বসতে আমার অনেক কষ্ট হচ্ছিলো।গলাটা অনেক ব্যাথা হয়ে আছে।আমি অনেক কষ্টে উঠে বসি।ঠিক তখন আমার মাথায় পানি পড়ে।ভালো করে খেয়াল করে দেখি আমি বাথরুমের ফ্লোরে পড়ে আছি।আমি তো রুমে ছিলাম তাহলে বাথরুমে কি করে আসলাম।

আমি উঠে বাইরে বের হয়ে আসি।আমার শরীর তখন অনেক দুর্বল ছিল।ঠিত তখন আমার ফোনটা বেজে উঠে।পকেট থেকে বের করে দেখি মনির নাম্বার।

আমি অনেকটা চমকে উঠি।মনির নাম্বার থেকে ফোন এটা কিভাবে সম্ভব?আমি ফোনটা রিসিভ করতেই ওপার থেকে বলে
–ভাইয়া আমি তোর বাড়িতে যাবো।আমাকে নিয়ে যা।
কথাটা শুনে আমার হার্টবিট দ্বিগুন হয়ে যায়।কাল রাতে যার মৃত্যু হলো আমার সামনে সে ফোনে কথা বলছে?

আমি দৌড়ে রুমে চলে যাই।মারিয়া ফ্লোরে পড়ে আছে।বিছানাতে মনির লাশ নেই।কোনো রক্তের দাগ নেই।একদম সবকিছু কিছু ঠিকঠাক।মনে হচ্ছে কাল রাতে এখানে কিছু হয়নি।আমি কি তাহলে স্বপ্ন দেখেছি?স্বপ্ন যদি দেখতাম তাহলে রাতে দেখতাম কিন্তু মনিকে তো কাল দিনেও দেখেছি।অফিস থেকে ফেরার পর মনি দরজা খুলেছিলো।

আমার সাথে কি হচ্ছে এসব কিছু বুঝতে পারছিনা।এটা কিভাবে সম্ভব?আমি আমার গলাতে হাত দেই।হ্যা গলাতে মনে হচ্ছে কিছু দিয়ে চেপে ধরা হয়েছিলো।অনেক ব্যাথা হয়ে আছে।আমার গলাতে দাগ আছে।আমি রুম থেকে বাথরুমে।মনি আমার সামনে মারা গেছে।তার গলা দিয়ে ফিনকি দিয়ে রক্ত বের হচ্ছিলো।অনেক সটফট করছিলো মনি।তাহলে মনি এখন আবার ফোন দিলো কি করে?

আমার ফোনটা আবার বেজে উঠে। আমি ফোনটা রিসিভ করি
–কিরে ভাইয়া ফোন ধরে কথা বলছিস না কেন?
–মনি তুই ঠিক আছিস?
–হ্যা আমি তো ঠিক আছি।কিন্তু কেন ভাইয়া?
–তুই কোথায় আছিস?
–আমি তো আমার রুমে শুয়ে আছি।কলেজ অফ তাই তোকে সকাল সকাল ফোন দিলাম।
–তোর ফোনে এমবি আছে?আমাকে ইমুতে ফোন দে।
–হঠাৎ ইমুতে ফোন দিতে বলছিস যে।
–কথা কম বলে যেটা বলছি সেটা কর।

তারপর মনি ইমুতে ফোন দেয়।মনিকে দেখে আমি ফ্লোরে বসে পড়ি।অনেক আদরের ছোট বোন আমার।তার কাল রাতে মৃত্যু দেখে অনেক ভয় পেয়ে গেছিলাম।কিন্তু এখন তাকে দেখে মনে হচ্ছে এখন আমি পৃথিবীর সব থেকে খুশি ব্যাক্তি।
–ভাইয়া তোর মুখ এমন শুকনা দেখাচ্ছে কেন?কি হয়েছে তোর?ভাবির সাথে ঝগড়া করছিস?
–না না আমার কিছু হয়নি।আমার সময় হলে তোকে নিয়ে আসবনি।
–আমাকে আজকেই নিয়ে যেতে হবে।কতদিন ভাবিকে দেখিনি।ভাবি কোথাই?

মনির কথাতে আমি মারিয়ার দিকে তাকাই।এখনো গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন।
–তোর ভাবি ঘুমাচ্ছে। ঘুম থেকে উঠলে তোকে ফোন দিতে বলবনি।

বলেই ফোনটা কেটে দেই।আমার মাথায় তখন অনেক গুলো প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে।কি হচ্ছে এসব?একটার পর একটা নতুন কাহিনী ঘটে যাচ্ছে।যার কোনো কিনারা খুজে পাচ্ছিনা।আমি মারিয়াকে ফ্লোর থেকে তুলে বিছানে শুইয়ে দেই।তারপর তার শরীর চাদর দিয়ে ঢেকে দেই।

আমি বাইরে বের হয়ে আসি।এক কাপ কফি বানাই।তারপর কফি খেতেখেতে ভাবছি।কাল রাতে মনির মৃত দেহ নিজের চোখে দেখেছি।আজকে মনি নিজে ফোন দিয়েছে।এটা কি করে হতে পারে।আজকে যে মনি ফোন দিয়েছে সেটা কোনো রহস্য নয়তো?এটা কি বাস্তবে মনি?নাকি এটাও কোনো গোলক ধাধা?আমার মাথায় তখন কিছু কাজ করছেনা।

আমার অফিসের টাইম হয়েগেছে।তাই আর ভাবতে পারলাম না।কোনো মতে রেডি হয়ে অফিসে চলে যাই।আমি আমার কেবিনে ঢুকতেই দেখি রুপা আমার কেবিনে বসে আছে।
–কি ব্যাপার স্যারর আজকে এত লেট?
আমি ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি সত্যি ৩০ মিনিট লেট করে ফেলেছি।অফিসের মধ্যে আমি প্রতিদিন সঠিক সময়ে আসি কিন্তু আজ সবার পরে এসেছি।
–ঘুম থেকে উঠতে দেরি হয়েছিলে।তাই একটু লেট হয়েছে।
–কি ব্যপারা স্যার আপনার চোখ গুলো লাল হয়ে আছে।মুখে আচঁড়ের দাগ।রাতে কি ভাবির সাথে বেশি রাউন্ড খেলেছেন নাকি?

রুপার কথা শুনে আমার অনেক রাগ হয়।তার মাঝে পজেটিভ কথা বলে কিছু নাই।সব সময় নেগেটিভ কিছু না কিছু ভাববে।
–দেখুন আপনি আমার যাস্ট এসিস্টেন্ট তাই আপনার লিমিট ক্রস করবেননা।

আমি এভাবে রুপাকে বলবো সে হয়তো এটা কোনো ভাবে অনুধাবন করতে পারেনি।রুপা কেবিন থেকে বেরিয়ে যায়।

আমি আমার মত কাজ করতে শুরু করি।কয়দিন যেসব ঘটনা ঘটছে এতে কাজে মন বসাতে অনেক কষ্ট হচ্ছে।কিন্তু তাও করা লাগছে।কাজের মধ্যে হঠাৎ মনে হয় টিপু বলেছিলো আমার বাড়িতে খুন হয়েছিলো সেটা শুধু স্যারের কাছের লোক জানে।অন্যকেউ জানেনা।আর রুপা স্যারের অনেক কাছের মানুষ। রুপাকেই জিগ্যেস করতে বলেছিলো টিপু।

আমি রুপাকে কেবিনে ডেকে পাঠাই।রুপা কেবিনে আসে।
–স্যার কিছু বলবেন?
–হ্যা বলবো।আপনাকে কিছু প্রশ্ন করবো তার সঠিক উত্তর দিবেন।
–যদি উত্তর জানি তাহলে অবশ্যই দিব।
–আচ্ছা আমার বাড়িতে একটা মেয়ে মারা যায়।কিন্তু কিভাবে কেউ জানেনা।আপনি কতটুকু জানেন?
রুপা আমার দিকে ভ্রু কুচকে তাকায়।তারপর কিছুখন নিরব হয়ে থাকে।তারপর বলে
–স্যার মারা গেছিলো মেয়েটা বাথরুমে পা ফসকে পড়ে গিয়ে।
–সত্যি কলছেন না মিথ্যা?
–আপনাকে মিথ্যা কেন বলবো।
রুপা যে মিথ্যা কথা বলে সেটা আমি বুঝতে পারছি।আমি রুপাকে আরো কিছু জিগ্যেস করবো ঠিক তখন করিম চাচা হাজির কফি নিয়ে।

কফিটা রেখে আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসে।আমি তার হাসির কারন খুজে পাইনা।কেন হাসছে সে।আমার কেবিনের চারিদিকে অনেক কর্মচারি। কথায় আছে দেয়ালেরও কান আছে।তাই রুপাকে সেখানে আর কিছু বললাম না।কিন্তু আমাকে সবকিছু জানতেই হবে।রুপার মুখ কি করে খুলবো?মাথায় কিছু আসছেনা।

–রুপা আমি বলছি কি আপনার সাথে কি কোনো হোটেলে ডিনার করা যাবে?যদি আপনার কোনো সমস্যা না থাকে।
রুপা আমার কথা শুনে চমকে উঠে।তাকে আমি ডিনারের অফার দিচ্ছি।
— না না স্যার আমার কোন সমস্যা নেই অবশ্যই ডিনার করা যাবে।
–তাহলে আজকে ডিনার আমার সাথেই করছেন?
–হ্যা স্যার আপনার সাথেই করবো আজকে ডিনার।

তারপর আমি আমার কাজে মন দেই।অফিস শেষ হলে মারিয়াকে ফোন দেই।
–মারিয়া আজকে আমার ফিরতে দেরি হবে তুমি রাতের খাবার খেয়ে নিও।
–ফিরতে দেরি হবে কেন?
–অফিসের কাজ শেষ করতে দেরি হয়ে যাবে।(আজকে প্রথম এটা নিয়ে মিথ্যা বললাম)
–আচ্ছা ঠিক আছে তাড়াতাড়ি এসো আমার অনেক ভয় করবে একা থাকতে।
–ঠিক আছে।

আমি ফোনটা রেখে দেই।জানিনা আমি কাজের রহস্য বের করতে গিয়ে অন্যকোনো অন্যায় করছি কিনা।জানিনা আমি ঠিক করছি কি ভুল করছি।তবে আমাকে তার রহস্য বের করতেই হবে।

আমি অফিস শেষে বাইরে রুপার জন্য ওয়েট করতে থাকি।এমন সময় টিপুকে দেখি।সে স্যারকে নিয়ে বাসায় যাবে।আমাকে দেখে টিপু আমার কাছে আসে।
–কি স্যার রুপা ম্যাডামের সাথে কোথাও যাচ্ছেন নাকি?
আমি টিপুর দিকে ভ্রু কুচকে তাকাই।টিপু কি করে জানলো এ বিষয়ে?
–তুমি কি করে জানলে যে আমি রুপার সাথে কোথাও যাচ্ছি?
–আরে স্যার এটা জানা আমার কাছে কোনো বড় ব্যাপার না।তবে একটা কথা বলি আপনি আমার অনেক পরিচিত।রুপা ম্যাডামের দেয়া জিনিস ব্যবহার করবেননা।
–কেন বলতো? তার জিনিস ব্যবহার করলে কি হবে?
–সেটা তো বলা যাবেনা।আমি যতটুকু পারি বলে সাহায্য করেছি পরের কাজ আপনার।

বলেই হোহোহো করে হাসতে হাসতে সেখান থেকে চলে যায়।এমনিতেই মাথার মধ্যে অনেক কথার উত্তর শুন্য যেগুলোর উত্তর খুজার চেষ্টা করছি।তার মাঝে টিপু আরেকটা প্রশ্নবোধক চিহৃ বসিয়ে দিলো।আমি এসব ভাবছি ঠিক তখন রুপা হাজির।

–চলেন স্যার আমি রেডি।
–ঠিক আছে চলেন।

আমি গাড়ি নিয়ে গেছিলাম।তাই গাড়িতে উঠে একটা রেস্টুরেন্টে যাই।তারপর সেখানে ডিনারের অডার করি।খেতেখেতে রুপাকে সব কিছু জিগ্যেস করবো।তার থেকে আমাকে সব কিছু জানতেই হবে।আমরা ডিনার খাওয়া শুরু করেছি।রুপা মুচকি মুচকি হাসতেছে।কিন্তু আমার হাসি বের হচ্ছেনা।
–আচ্ছা রুপা আমার বাড়িতে যে মেয়েটা মারা যায় সে কি সত্যি পা ফোসকে মারা যায়?
রুপা খাওয়া বন্ধ করে দেয় তারপর আমার মুখের দিকে তাকায়।সে হয়তো আশা করেনি আমি তাকে আবার এমন প্রশ্ন করবো।
–কি স্যার কোথায় ডিনার করে মজা করবো তা না আপনি সেই মরা মেয়েকে নিয়ে পড়ে আছেন।
আমি বুঝতে পারি রুপা মুখ খুলবেনা।তার মুখ খুলাতে হলে তার দুর্বলতাতে হাত দিতে হবে।

আমি চেয়ার থেকে উঠে রুপার কাছে যাই।তার কানেকানে বলি আপনি যদি সত্যি কথা বলেন কি হয়েছিলো সেদিন তাহলে আপনি যেটা চান সেটা পাবেন।

রুপা আমার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে। সে হয়তো এমন অফারের কথা ভাবতে পারেনি।রুপা কিছুখন চুপ করে থাকে তারপর বলে
–মেয়াকে খুন করা হয়েছিলো।কিন্তু স্যারের অনেক টাকা ছিলো সব কিছু টাকা দিয়ে কিনে নেয়।আর মৃত্যুটাকে একসিডেন্ট বলে চালিয়ে দেয়।
–কিভাবে মারা গেছিলো?
–সেটা জানিনা স্যার। সেদিন আমি শফিক সাহেবের সাথে রাত কাটাচ্ছিলাম।পরে আমি সব জানতে পারি।
–এই শফিকটা কে?
–যার মৃত্যু হয়েছিলো তার স্বামী।আমাদের অফিসেই চাকরি করতো।এখন সে জেলে আছে।আমাদের এমডিকে মারার চেষ্টা করেছিলো তখন তাকে পুলিশ ধরে।
–এমডি স্যারকে মারার চেষ্টা কেন করেছিলো?
–ওর বউকে খুন করা হয়েছিলো সেটা শফিক স্যার জানতে পারে তখন মারার চেষ্টা করে।
–শফিক সাহেব কি করে জানতে পেরেছিলো?
রুপা আমার দিকে তাকায়
–স্যার এটা আমি বলতে পারবোনা স্যরি স্যার।
-কিন্তু কেন বলতে পারবেনা?
—আমি জানি কেন মিমিকে মারা হয়েছিলো (যে খুন হয়)
আমি তাকিয়ে দেখি মারিয়া দাড়িয়ে আছে কথাটা সে বলেছে।আমি হকচকিয়ে উঠি মারিয়াকে দেখে।তাকে এখানে দেখবো আমি কখনো আশা করিনি।আমি অনেকটা ভয় পেয়ে যাই।রুপা মারিয়াকে দেখেই কেটে পড়েছে।

আমি এখন কি করবো কিছু বুঝতে পারছিনা।মারিয়া আমার হাত ধরে টানতে টানতে গাড়িতে নিয়ে যায়।মারিয়া গাড়ি চালাতে শুরু করে।কিন্তু মারিয়া গাড়ি চালাতে পারেনা।তাহলে আজকে কি করে গাড়ি চালাচ্ছে?এটা কি করে সম্ভব?আমি মারিয়ার মুখের দিকে তাকাতে পারছিনা।নিচের দিকে মাথা করে রেখেছি।

মারিয়ার কাছে আমি মুখ দেখাবো কি করে বুঝতে পারছিনা।মনে হচ্ছে আজকর পৃথিবীর সব কষ্ট ভয় আমার কাছে এসেছে।
–মারিয়া আমার ভুল হয়েগেছে। আর কখনো মিথ্যা বলবোনা।
বলে মারিয়ার দিকে তাকাই।কিন্তু এটা কি গাড়িতে মারিয়া নেই।ড্রাইভিং সিট ফাকা।গাড়ি একা একা চলছে।আমি অনেকটা ভয় পেয়ে যাই।মারিয়া কোথায় গেলো?

আমি এসব ভাবছি ঠিক তখন গাড়িটা একসিডেন্ট করে।তারপর কি হয় আমার মনে নেই।যখন চোখ খুলি তখন দেখি আমি খাবার টেবিলের চেয়ারের ওপর বসে আছি।মনি আমাকে ডাকছে
–ভাইয়া এই ভাইয়া তোকে কতখন থেকে ডাকছি কথা বলছিস না কেন?
আমি মনিকে দেখে অবাক হয়ে যাই।মনি এখানে?মনি কখন এলো?আমি তো গাড়িতে ছিলাম একসিডেন্ট হয়।আমি পুরা শরীরে হাত দেই কোথাও ক্ষত নেই।
–মনি তুই কখন এলি এখানে?
–কি বলিস ভাইয়া তোর মাথা ঠিক আছে?আমি তো বিকালে এসেছি।
–বিকালে মানে?তোকে তো আমার আনতে যাবার কথা ছিলো?
–কি যাতা বলছিস?আমি তো বিকালে এসেছি।আর তুই সেই তখন থেকে খাবার টেবিলেই বসে আছিস।
আমি ঘরির দিকে তাকিয়ে দেখি ১১টা বাজে।তাহলে কি আমি এতখন যা দেখলাম তা সবকিছু স্বপ্ন ছিলো?এগুলো কি সামনে হবে?মনি কি তাহলে সত্যি মারা যাবে?আমি কি তাহলে ভবিষ্যৎ নিয়ে দেখলাম?আমার গায়ের লম খাড়া হয়ে যায়।

চলবে………

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here