Real_Love♥
Oniya_Chowdhury
Part: 37
.
.
আপুর রুমে বেডের উপর পা ঝুলিয়ে বসে আছি!আপু আমার পাশে বসতে বসতে বললেন,
– হিয়া!
– হুম!
– সবার নজর কিন্তু একবার হলেও তোমার ঠোঁটের উপর পরেছিলো!তুমি যতই লুকানোর চেষ্টা করো না কেনো!
আপুর কথা শুনে আমি মাথা নিচু করে ফেললাম!
আপু আমার কাধে হাত দিয়ে বললেন,
– চুলগুলো সামনে এনে রাখবে তাহলে ঘাড়ের দাগগুলো আর দেখা যাবে না!
আপুর কথাটা শুনে আমি দ্রুত মাথায় কাপড় দিলাম!মাথার কাপড় কখন পড়ে গিয়েছিলো খেয়াল-ই করি নি!
.
– থাক…আর ঢাকার প্রয়োজন নেই!দেখে ফেলেছি অলরেডি!ইফাজটা এত্ত অত্যাচারী হলো কবে?কি অবস্থা করেছে তোমার!রাতে কখন ঘুমিয়েছো?
আপুর কথাগুলো আর নিতে পারছিলাম না!প্রসঙ্গ পাল্টে বললাম,
– মাহিন কোথায় আপু?
আমার প্রশ্নটা শুনে আপু হেসে বললেন,
– লজ্জা পাচ্ছো?থাক…বলতে হবে না!তোমার চোখমুখ দেখে মনে হচ্ছিলো সারারাত অসভ্যটা তোমাকে ঘুমোতে দেয়নি!
– নাহ্ আপু….ওরকম কিছু না!ভোরের দিকে একটু ঘুমিয়েছিলাম!
কথাটা শোনামাত্রই আপু হেসে উঠলেন!আমার হাতটা ধরে বললেন,
– এখানে কেউ ডিস্টার্ব করতে আসবে না!একটু ঘুমিয়ে নিতে পারো!কিছুক্ষণ পর আবার গেষ্টরা আসা শুরু করবে তখন কিন্তু আর রেস্ট নিতে পারবে না!
.
আপু কিভাবে যে বুঝে যায় আমাকে!চোখদুটো সত্যি ভারী হয়ে আসছিলো!আমি আপুকে জড়িয়ে ধরে কিছুক্ষণ পর ছেড়ে দিয়ে সোজা শুয়ে পরলাম!আপু আমার মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বললেন,
– শীতের ভোরবেলা বলতে কিন্তু ছয়টা-সাতটাকে বুঝায়!ইয়াশ তোমাদের রুমের দরজায় নক করেছিলো আটটার দিকে!তারমানে তুমি মাত্র একঘন্টার মতো ঘুমানোর সুযোগ পেয়েছো!কয়েকদিন ধরে এমনিতেই তোমার উপর দিয়ে যা গিয়েছে….আজ রাতটা ছাড় দেওয়া উচিৎ ছিলো অসভ্যটার!
.
আমি আপুকে জড়িয়ে ধরে বললাম,
– তোমার ভাইটা খুব খারাপ!শেষ করে দিয়েছে আমাকে!
আমার কথা শুনে আপু হাসতে হাসতে আধশোয়া থেকে একেবারে শুয়ে পরলো!
আপুর কান্ড দেখে আমি আপুকে হাসি থামাতে বললাম!
– হাসবে না আপু!
– ওকে…ওকে!আর হাসবো না!এইটুকুন একটা শরীরে এরকম অত্যাচার করা সত্যিই উচিৎ হয়নি ইফাজের!
– হুম!
– তুমি কিছু করোনি?ইচ্ছামতো খাঁমচাতে আমার মতো!
আপুর কথা শুনে আমি হা হয়ে আপুর দিকে তাকালাম!আপু হাসতে হাসতে বললো,
– মাহিনের বাবা তো আমার উপর ক্ষেঁপে গিয়ে পিঠ দেখিয়ে বলেছিলো”কি হাল করেছো আমার একবার দেখো!”আমি কিছু না বলে রাক্ষসীদের মতো হেসেছিলাম সেদিন!
আপুর কাহিনী শুনে আমি হাসবো নাকি কাঁদবো,বুঝতে পারছি না!
.
হঠাৎ করে উনি রুমে ঢুকে বললেন,
– আপু,নিচে আম্মু ডাকছে!
আপু উঠে রাগী লুকে উনার দিকে তাকিয়ে বললেন,
– এখন হিয়া ঘুমাবে!ডিস্টার্ব করিস না!বের হ্ রুম থেকে!
– উফ্!আপু….যাও তো!
– বিরক্ত করিস না!
– হিয়া রুমে চলো!নিজের রুম থাকতে এখানে কেনো ঘুমাচ্ছো?
– ইফাজ….ওর শরীরের অবস্থাটা একবার দেখেছিস?কি হাল করেছিস মেয়েটার!আবার এখন শুরু করবি!!!
– ইশ্….আমি একাই মনে হয় করেছি!আমার পিঠে…..উফ্ কিসব বলছি!হিয়া….উঠে আসো!আমি এখন কিচ্ছু করবো না…প্রমিজ!
– থাপ্পড় খাবি কিন্তু এখন আমার!বের হ্….
– তুমি আগে বের হও!নিচে যেয়ে শুনে আসো আম্মু কি বলে!
– তোর চালাকি তোর কাছে রাখ!
.
এতক্ষণ আমি শুয়ে শুয়ে দুইভাইবোনের ঝগড়া দেখছিলাম!আমি উঠে বসে আপুকে বললাম,
– আপু….শুয়ে পরো তো!
– টিয়াপাখি!ঠিক হচ্ছে না কিন্তু…. চলো!
কথাটা বলেই উনি আমার হাত ধরে টেনে জোর করে বেড থেকে নামিয়ে নিজের রুমে নিয়ে এলেন!আপু আটকানোর চেষ্টা করেও পারলো না!
.
রুমের দরজা লক করে সোজা আমাকে কোলে তুলে বেডে শুইয়ে দিয়ে বললেন,
– এখন ঘুমাও!
কথাটা বলেই উনি আমাকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে পরলেন!
– কি হলো…এখনো চোখ খোলা কেনো?
– এভাবে আমার ঘুম আসবে না!আপনি চলে….
– হুশ্!আমি কোত্থাও যাচ্ছি না!আর ঘুম না আসলে বলো,আমি রোম্যান্স শুরু করে দেই!
– উফ্….ছাড়ুন তো!
– উহু!
– আমি নিচে যাবো!
– নিচে কিছু নেই!
– হাত সড়ান!সুঁড়সুঁড়ি লাগছে!
– সবজায়গায় সুঁড়সুঁড়ি নিয়ে ঘুরে বেড়াও কেনো?
– ধ্যাৎ….সড়ুন তো!
– মাইর লাগাবো কিন্তু এখন!
– ….
– কোনো কনট্রাসেপটিভ নেওয়া চলবে না…বুঝতে পেরেছো?
হঠাৎ করে উনার এরকম কথা শুনে আমি চমকে উঠলাম!উনার দিকে তাকাতেই উনি আমার কপালে আর ঠোঁটের কোণায় চুমো দিয়ে বললেন,
– ঘুমাও!
.
আমি আর কিছু না বলে চুপচাপ চোখ বন্ধ করে ঘুমানোর চেষ্টা করলাম!
.
কখন ঘুমিয়ে পরেছি খেয়াল-ই করি নি!চোখ খুলে ঘড়ির দিকে তাকাতেই দেখলাম এগারোটা পনেরো বাঁজে!পাশে উনাকে দেখতে না পেয়ে আশেপাশে তাকাতেই দেখলাম পাঞ্জাবী পরে আয়নার সামনে দাড়িয়ে হাত দিয়ে চুল ঠিক করছেন!আমি উঠে বসতেই উনি আমার দিকে তাকিয়ে কিউট একটা হাসি দিয়ে বললেন,
– ঘুম ভাঙ্গলো তাহলে মহারানীর!
– হুম!কোথাও যাচ্ছেন?
– নিচে!তোমার আত্নীয়স্বজন সবাই এসেছেন!শোনো….বেডসাইড টেবিলে খাবার ঢেকে রাখা আছে,উঠে ফ্রেশ হয়ে খেয়ে নাও!
– ক্ষিধে নেই!এখন খাবো না!পরে খাবো!
উনি দ্রুত আমার হাত ধরে টেনে বেড থেকে নামিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকিয়ে দিয়ে বললেন,
– পাঁচমিনিটে বের হবে!
.
আমি আর কথা না বাড়িয়ে পাচঁমিনিটের বেশি সময় নিয়ে ফ্রেশ হলাম!ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে দেখলাম উনি সোফায় বসে বসে ফোন দেখছেন!আমাকে বের হতে দেখে উনি সোফা ছেড়ে বেডে এসে বসে খাবার প্লেটটা হাতে নিয়ে বললেন,
– নাও বসো!
আমি টাওয়াল দিয়ে হাতমুখ মুছে উনার সামনে বসতেই উনি এক লোকমা মুখের সামনে ধরে বললেন,
– হা করো!
– আমি একাই খেতে পারবো!আমাকে দিন….
– পারবে না!হা করো!
– দরজা কি লক করা?
– হুম…কেনো?
– নাহ্… কিছু না!
আমি আর কথা বাড়ালাম না!চুপচাপ খেতে লাগলাম!
উনি খাওয়াতে খাওয়াতে বললেন,
– শরীর ঠিক আছে তো তোমার?
– মানে?হঠাৎ এই প্রশ্ন?
– তোমার শরীরের যা অবস্থা!এই অবস্থায় কালকের ধকলটা সহ্য করতে পেরেছো নাকি,তাই আরকি জিজ্ঞেস করলাম!
কথাটা বলেই উনি দুষ্টুমি ভরা চাহনি নিয়ে হাসতে লাগলেন!
আমি উনার হাঁটুভাঁজ করা পায়ে কয়েকটা কিল দিয়ে বললাম,
– অসভ্য কোথাকার!!!
.
প্লেটের অর্ধেক খাবার শেষ করে আমি যখন পানি খেয়ে উঠে আসতে নিচ্ছিলাম সাথে সাথেই উনি খোঁপ করে আমার হাতটা ধরে বললেন,
– কোথায় যাওয়া হচ্ছে?
– আর খাবো না…
– বসো!
– পেট ভরে গেছে…প্লিজ!
– তোমার পেট ভরেছে কিন্তু আমার বাবুগুলোর পেট এখনও ভরে নি!বাকি অর্ধেক এখন বাবুরা শেষ করবে!
কথাটা বলেই উনি হাত টেনে উনার সামনে বসিয়ে বললেন,
– নাও হা করো…বাবুর মা!
– পেটে একদম জায়গা নেই!
– অনেক জায়গা আছে!
– নেই!
– আছে….
– বাবুগুলোর মা কিন্তু এবার কান্না করে দিবে!
আমার কথাটা শুনে উনি চোখ বড় বড় করে বিস্মিত হয়ে আমার দিকে তাকাতেই আমি লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেললাম!
.
উনি প্লেটটা রেখে আমার সাথে একদম লেগে বসে আমার পায়ের উপর পা তুলে দিয়ে ভ্রুঁ নাচিয়ে বললেন,
– কি বললে,টিয়াপাখি!বাবুদের বাবা শুনতে পায় নি!আর একবার বলো তো…
.
.
(চলবে)