#সে_কি_জানে🍁
#Writter: Ishanur Tasmia [Mira]
#part: {25}
.
.
.
আজ সারাদিন রেয়ানের সাথে একফোটাও কথা বলিনি নি আমি।।এমনকি দেখাও করি নি।।ভাবছি একেবারে রাত ১২টার সময় দেখা দিবো তার সামনে।।কিন্তু রেয়ান তো আমাকে দেখার জন্য অকুল হয়ে আছেন।।বেচারা রান্না ঘরে,, দিধার রুমে, মার রুমে ৩-৪বার উঁকিঝুঁকিও দিয়েছেন।।এক নজর যেন আমাকে দেখতে পারেন সেই আশায়।।রিহানকে দিয়েও আমাকে অনেক বার ডাকিয়েছেন।।কিন্তু বরাবরই উনি নিরাশ হোন।।এদিকে ডিউটির টাইম হয়ে যাওয়ায় এক প্রকার হতাশ হয়েই রেয়ান চলে যান পুলিশস্টেসনে।।আর আমি!!আমি লেগে যাই রেয়ানের জন্মদিনের সারপ্রাইজ প্লেন করতে।।আমি,,দিধা,,তুরান,, মা,,রেয়ানের বাবা-মা আর রিহান।।সবাই মিলে রেয়ানের জন্য সারপ্রাইজ প্লেন করছি।।
.
রেয়ান তার ডিউটি শেষ করে বাসায় আসেন প্রায় রাত ১০টার দিকে।।এবারও রুমে পায়চারি করছেন উনি।।আমি আসছি না কেন সে জন্যে!!দিধা রেয়ানের জন্য খাবার দিতে উনার রুমে যেতেই উনি কিছুটা অস্থির হয়ে বলে উঠেন……
—” দিধা!! তোর ভাবী কোই??আজকে সকাল থেকেই আমার সামনে আসে না।।কিছু কি হয়েছে??ও কি রাগ করেছে আমার সাথে??আমি কি কোনো ভুল করে ফেলেছি?? ”
—” ভাইয়া থামো!!ভাবীর কিচ্ছু হয় নি আর তুমিও কিচ্ছু করোনি।। ”
—” তাহলে তোর ভাবী আমার সামনে আসে না কেন?? ওকে রুমে আসতে বল আমার ওর সাথে কথা আছে!! ”
—” ভাবী ব্যস্ত ভাইয়া।।এখন আসতে পারবে না।। ”
বলেই দিধা আর দাঁড়ালো না সেখানে।।বের হয়ে গেল রুম থেকে।।আর রেয়ান!!সে নির্বাক তাকিয়ে আছে দিধার যাওয়ার দিকে।।বুঝতে পারছে না এমনি কি করেছে সে যে আমি তার সামনে আসছি না।।অনেকটা সময় আমার আসার অপেক্ষায়ই কাটিয়ে দেন রেয়ান।।রাত তখন প্রায় ১১টা বেজে ৫৫ মিনিট।।হঠাৎ রেয়ানের ফোনে একটা মেসেজ আসে।।যাতে লিখা…….
—” ছাদে আসুন।।কথা আছে।। ”
ব্যস!! এতটুকু লিখা পড়তেই রেয়ান দ্রুত পায়ে ছাদের দিকে এগোতে থাকেন।।পারলে উড়ে চলে যান ছাদে।।যেহেতু উড়তে পারবেন না আপাতত দ্রুতভাবে হেঁটে যাওয়াই উত্তম তার জন্য।।
ছাদে যেতেই রেয়ান চরম অবাক।।আশেপাশের ডেকোরেশসন দেখে উনি বিস্মিত।।তবে এ-ই বিস্মিত মাখা চেহারায় হাসির রেখা ফুটে উঠে যখন উনি সামনে থাকা দেওয়ালে “Happy Birthday” লিখাটা দেখতে পান।।জোড়ে জোড়ে আমার নাম ডাকা শুরু করেন উনি।।কিন্তু আমি তার সামনে আসি নি।।বরাবর ১২টার সময় আসতে করে উনার পিছনে এসে বলে উঠি……
—” Happy Birthday My Dear Hitlar husband ”
সাথে সাথে পিছনে ফিরে তাকান রেয়ান।।আমাকে দেখে মুচকি হেসে হালকা কণ্ঠে বলেন…..
—” Thank you ”
তার কথায় স্মিত হাসলাম আমি।।পরক্ষনে জড়িয়ে ধরলাম তাকে।।হুট করে জড়িয়ে ধরায় বেশ অবাক হলেন রেয়ান।।তারপর মিষ্টি সরে বললেন….
—” ভালোবাসি ”
—” ভালোবাসি আমিও ”
কথাটা বলার প্রায় সাথে সাথেই আড়াল থেকে দিধা,, তুরান,,রেয়ানে মা-বাবা,,মা আর রিহান বের হয়ে আসেন।।দুষ্টোমি কণ্ঠে দিধা বলে উঠে……
—” তোমাদের রোমেঞ্চ শেষ হলে এখন কেক কাটা শুরু করা যাক।। ”
দিধার কথা শুনে রেয়ান আমার কপালে একটা চুমু দিয়ে বলেন….
—” উহু।।এখনও শেষ হয় নি।। ”
তার এমন কথা শুনে বরাবরের মতো এবারও বললাম….
—” অসভ্য ”
.
এরপর কেটে যায় ২মাস।।আজকে আমার জীবনের সবচেয়ে আনন্দের মুহুর্ত।।আমি যে মা হতে চলেছি।।রেয়ান আসলেই এ কথাটা বলব তাকে।।আচ্ছা কথাটা শুনে উনি কি রিয়েক্ট দিবেন।।খুশি হবেন??আমাকে কোলে তুলে নাচবেন??নাকি আমার ভাবনারও বেশি কিছু করবেন!!ভাবতে ভাবতেই আয়নার সামনে এসে দাঁড়ালাম।।আজকে সাজবো আমি।।রেয়ানের জন্য সাজবো!!হঠাৎ পেটে কারও হাতের ছোঁয়া অনুভব করি।।সে আমার গলায় মুখ ডুবিয়ে নেশা ভরা কণ্ঠে বলে উঠেন…..
—” আজকে সাজছো যে??কোনো কি বিশেষ কিছু?? ”
—” হুম ”
বলেই ফিরে তাকালাম তার দিকে।।তাকে জড়িয়ে ধরে ফিসফিস করে বলে উঠলাম…..
—” আপনি বাবা হবেন।। ”
কথাটা বলতেই কিছুটা দূরে গিয়ে দাঁড়ান উনি।।দু’হাত দিয়ে নিজের মাথার চুল খুব শক্ত করে ধরে আছেন ।।পরক্ষনেই আমার সামনে হাঁটু গেড়ে বসে পড়েন।।প্যান্টের পকেট থেকে একটা আংটি বের করে আমার সামনে ধরে কিছুটা কাঁপাকাঁপা কণ্ঠে বলে উঠেন……
—” আআমি ভেভেবেছিলাম এ আংটি দিয়ে আজকে তোমাকে সারপ্রাইজ দিবো।।বাট!!তুমিই উল্টা আমাকে সারপ্রাইজ দিয়ে দিয়েছো।।সত্যি বলতে আমার জীবনের সবচেয়ে বড় সারপ্রাইজ এটা।।এ মুহুর্তে কি করব বুঝতে পারছি না মিরা।।তাই হয়তো গুছিয়ে কথাও বলতে পারছি না।।খুন নার্ভাস লাগছে জানো।।আচ্ছা মিরা,, আসলেই আমি বাবা হবো।। ”
তার এমন রুপ দেখে আমার হাসি পাচ্ছে।।প্রচুর হাসি!!তবে সেটা প্রকাশ করলাম না।।মুচকি হেসে তাকে বললাম…..
—” জ্বী।। ”
কথাটা শুনা মাত্র উঠে দাঁড়ালেন উনি।।শক্ত করে জড়িয়ে ধরেন আমায়।।তারপর অসংখ্য চুমু দিতে লাগলেন আমার মুখে!!
.
এর ১মাস পর থেকে শুরু হয় আমার রেয়ানকে জ্বালানো।।এরজন্য ঠিকমতো ডিউটিও করতে পারতেন না উনি।।আর না ঘুমাতে পারতেন রাতে।।মাঝরাতে তাকে ঘুম থেকে ডেকে খাবার আনতে বলি।।এই তো এখন।।আমার খুব ইচ্ছে করছে আইস্ক্রিম খেতে।।রাত প্রায় ৩টা বাজে।।রেয়ান আমার পাশেই ঘুমিয়ে আছেন।।তাকে ডাকতে ইচ্ছে করছে না আমার মোটেও।।কিন্তু আমি নিরুপায়।।আইস্ক্রিম যে খেতেই হবে আমার।।তাই আস্তে আস্তে ডাকতে লাগলাম তাকে।।কিছুক্ষন ডাকার পর রেয়ান ধড়ফড়িয়ে উঠে বসেন।।অস্থির কণ্ঠে বলে উঠলেন……
—” কি হয়েছে মরুভূমি??কোথাও কি ব্যথা করছে?? ডাক্তারের কাছে যাবে?? ”
—” না!! ”
—” তাহলে?? ”
আমি ইনোসেন্ট ফেস করে বললাম…..
—” আইস্ক্রিম খাবো।। ”
—” আইস্ক্রিম তো বাসায় নেই বউ।।চিপস্ খাবা?? ”
—” না আমি আইস্ক্রিমই খাবো।। ”
—” আমি বানিয়ে দিলে হবে?? ”
—” আপনি পারবেন বানাতে।। ”
—” ইউটিউব থেকে দেখে বানাবো।।চলবে?? ”
—” হুম।। ”
—” আচ্ছা তুমি শুয়ে থাকো আমি বানিয়ে আনছি।। ”
—” না আমিও যাবো আপনার সাথে।। ”
—” কিন্তু!! ”
—” প্লিজ!! ”
—” আচ্ছা চলো।। ”
বলেই রেয়ান কোলে তুলে নিলেন আমায়।।তারপর রান্নাঘরে নিয়ে চুলার পাশে একটু দুরত্ব রেখে বসিয়ে দিলেন আমাকে।।তারপর লেগে গেলেন কাজে।। তার দিকে অপলক তাকিয়ে আছি আমি।।আসলে এ মানুষটা এমন কেন।।একটুও কি বিরক্ত হয় না সে।।আমি তাকে এত জ্বালাই তবুও একটু “উফফ” বলে শব্দও করে না সে।।কেন??একবার করেছিলাম তাকে প্রশ্নটা।।উত্তরে সে বলেছিলো……
—” তুমি আমাকে ভালোবাসো দেখে আমার তোমার প্রতি এ-ই ছোট ছোট খেয়াল রাখাও তোমার কাছে অনেক বড় মনে হয়।।যদি ভালো না বাসতে!!তাহলে এর চেয়ে বেশি খেয়াল রাখলেও তোমার চোখে পড়তো না।।তাছাড়া কষ্টটা তো আমি তোমার জন্য করছি না।।করছি শুধু আমার ছোট বেবি যে তোমার পেটে এখন আছে।। আর আমার মরুভূমির জন্য!!তোমার জন্য মোটেও করছিনা।। ”
কথাটা বলেই তখন উনি খুব মিষ্টি করে একটা হাসি দিয়েছিলেন।।তার হাসিটা দেখে যেন মনে মনে হিংসে হতে লাগলো আমার।।আমি কেন তার মতো তাকে ভালোবাসতে পারি না।।আমারও যে ইচ্ছে করে তাকে ভালোবাসতে।।তার মতো করে!!
.
রেয়ানের ভালোবাসার পৃথিবীতে থাকতে থাকতে আজ ৫টা বছর কেটে গেছে।।অনেক কিছু পরিবর্তন হয়েছে এ ৫বছরে।।শুধু পরিবর্তন হয়নি রেয়ানের আমার প্রতি ভালোবাসা।।সময়ের সাথে সাথে ভালোবাসাটাও যেন আরও বেড়ে গেছে তার।।এ-ই তো এখন।।আমি,, রিহান,,কুহু,,তুরান এক লাইনে বসে আছি বিছানায়।।আমাদের সামনেই দাঁড়িয়ে আছেন রেয়ান।।উদ্দেশ্য আমাকে চুল বেঁধে দিবেন!!
সবার মাথা বেঁধে দেওয়ার পর রেয়ান আমাকে চুল বেঁধে দেওয়া শুরু করে দেন।।প্রথমে আমার চুলে ঝুটি করেন উনি।।তারপর চোখে কাজল আর ঠোঁটে একটু মেরিল লাগিয়ে দেন।।অতপর কপালে গভীর ভাবে চুমু দেন উনি।।সাথে সাথে কুহু বলে উঠে….
—” বাবাই,,আমাল উম্মা কোই।।আমাকেও উম্মা দাও।। ”
কুহুর কথায় তাল মিলিয়ে তুরানও বলে উঠে…..
—” আমাকেও উম্মা দাও।। ”
এবার রিহানও বলে…….
—” হুম বাবাই।।আমাকেও কপালে চুমু দিতে হবে।। ”
তাদের সবার প্রতিউত্তরে রেয়ান শুধু হাসলেন।।তারপর এক এক করে তিনজনেরই কপালে চুমু দিয়ে দিলেন উনি।।পরক্ষনে তাদের উদ্দেশ্য করে বলে উঠেন……
—” এবার তোরা ড্রইংরুমে গিয়ে বয়।।আমি রেডি হয়ে আসছি।।তারপর সবাই মিলে স্কুলে যাবো।। ”
কথাটা বলতে না বলতেই তিনজনই মিটিমিটি হাসতে হাসতে চলে যায় ড্রইংরুমে।।এদিকে তারা যেতেই রেয়ান কোলে তুলে নেন আমায়।।আয়নার সামনে দাঁড় করে আমার হাতে টাই ধরিয়ে দেন।।তারপর আমার কোমড় জড়িয়ে বলেন…..
—” তো মিসেস হিটলার।।আমার টাই-টা পড়িয়ে দাও আমাকে।। ”
তার কথায় ভ্রুঁ কুঁচকে এলো আমার।।ভ্রুঁ কুঁচকেই তাকে বললাম…..
—” আমি হিটলার?? ”
—” হুম।।তুমিই তো আমাকে সবসময় হিটলার ডাকো।।সো!!হিটলারের বউ তো মিসেস হিটলারই হবে।। ”
—” না!!আমি মরুভূমিই ঠিক আছি।। ”
—” তাই?? ”
—” হুম তাই।।এখন দুষ্টোমি বন্ধ করুন।।তিন বাচ্চার বাবা হয়ে গেছেন তাও আপনার এ অসভ্যতামি আর দুষ্টোমি এখনও গেল না।। ”
—” আর তুমিও তো তিন বাচ্চার মা হয়ে গেছ।।এখনও তোমাকে রোমেঞ্চ শিখাতে পারলাম না আমি।।হায় আমার কপাল।। ”
—” চুপ থাকুন!! ”
—” অবশ্যই না।।আসো তোমাকে রোমেঞ্চ শিখাই।। ”
—” না।।আপনার অফিস আর বাচ্চাদের স্কুলের দেড়ি হয়ে যাচ্ছে।। ”
বলেই তার টাই বাঁধতে লাগলাম আমি।।আর সে আমার দিকে অপলক তাকিয়ে আছেন।।হঠাৎ-ই বলে উঠেন……
—” ভালোবাসি প্রিয়তমা।। ”
বলতে বলতেই উনি আমার গালে চুমু দিতে এগিয়ে এলেন।।কিন্তু চুমু দেওয়া আর হলো না।।তার আগেই আমাদের ৩টা ছেলেমেয়ে এসে হাজির।।আমাদেরকে এভাবে দেখে হাসছে তারা।।আর রেয়ান!!সে আমার থেকে কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে আছেন।।তার মুখে বিরাজ করেছে একরাশ কালো মেঘ।।আর মুখে ফিসফিস করে বলছেন…..
—” এ বাচ্চাগুলোর জন্য আমার রোমেঞ্চের ১২টা বেজে যায় প্রতিবার।। ”
কথাটা বলতেই যেন তার মুখ আরও কালো হয়ে যায়।।রেয়ানের কানের কাছে গিয়ে আমি ফিসফিসিয়ে বলে উঠি…..
—” #সে_কি_জানে তাকে এখন কতটা কিউট লাগছে।।তাকে বলো আমিও আমার প্রিয় বরকে ভালোবাসি।। ”
বলেই চোখ টিপ মারলাম আমি।।সাথে সাথে রেয়ান জোড়ে জোড়ে হেসে দিলেন।।
………………………সমাপ্ত……………………..
[
তুরান না দিধার বরের নাম তাহলে রেয়ানে ছেলে হলো কি ভাবে।