#বউ চুরি
#সিজন-১
পর্ব ঃ ৫
লেখিকা ঃ জান্নাতুল নাঈমা
বন্ধু দের সাথে রেষ্টুরেন্টে বসে আড্ডা দিচ্ছে মুসকান। রায়া,হেনা,আবির,রাফি,নিলয়,আশা,সাতজন মিলে আড্ডা দিচ্ছে। এদিকে ইমনের এক চামচা আবির এর খোজ নিয়ে এখন আবির কোথায় আছে সেই খবড় ও ইমনের কাছে পৌঁছে দিলো। সাথে যে মুসকান ও রয়েছে এটাও তাকে জানানো হয়েছে।
ইমন মিটিং শেষ করে একটার দিকে রেষ্টুরেন্টের উদ্দেশ্য বের হলো।তার সাথে সব সময় বাইরে তার চ্যালারা থাকে। কিন্তু এখন সে মুসকানের কাছে যাচ্ছে তাই এদের সাথে নেওয়া যাবে না । কারন মুসকান কে তার ক্ষমতা সম্পর্কে সে জানাতে চায় না। তাই তার চ্যালাদের বললো-
আমি মুসকান কে যখন নিয়ে চলে আসবো তারপর তোমরা ওখানে যাবে। মুসকানের সামনে কেউ আসবে না। আমরা চলে যাওয়ার পর আসবে। আর দূরত্ব বজায় রেখেউ ওয়েট করবে রেষ্টুরেন্টের বাইরে।
ঠিকাছে ভাই। আপনি যান।
ইমন সানগ্লাস টা চোখে দিয়ে গাড়িতে ওঠে বোসলো। ড্রাইভার গাড়ী স্টার্ট দিলো।
নয়টায় বাসা থেকে বের হয়েছো এখন একটা বাজে। একটু বেশীই স্বাধীনতা পেয়ে গেছো বোধ হয়। শুধু মাএ ছোটো বলে তোমাকে আমি ছাড় দিচ্ছি। তাই বলে লিমিট ক্রস করবে আর আমি সেটা দেখেও চুপচাপ থাকবো এটা ভাবলে তুমি ভুল মুসকান। (মনে মনে)
মুসকান কাল যে তোকে রাতে ফোন দিলাম কে ধরেছিলো?
ফোন দিয়েছিলি মানে? কখন আমিতো জানি না।
কি বলছিস? একটা ছেলে ধরেছিলো তো।
ছেলে মানে। কে তাহলে ইমন ভাইয়া না তো। এই যা সর্বনাশ। ( মনে মনে)
তুই কি বলেছিস উত্তেজিত হয়ে জিগ্যাস করলো মুসকান?
তেমন কিছুতো বলিনি, তোর সাথে কথা বলতে চেয়েছি বাট কেটে দিলো।
ওহ যাক বাচালি।
কেনো কে ছিলো?
ইমন ভাইয়া।
তোর ভাই?
হ্যা বড় চাচার ছেলে বড্ড জ্বালায় দোস্ত।
কি বলছিস দোস্ত ইমন ভাইয়া তোকে জ্বালায়? ( রায়া)
বড় ভাই থাকলে এমনই হয় বুঝলি। ( আবির)
আরে না আমার নিজের ভাই খুব ভালো বড় ভাই ও ছোটটাও বাট ইমন ভাইয়া বেশি রাগি। আর বেশি খবড় দারি করে।
সবাই মুসকানের কথা শুনে তাকালো ওর দিকে।
তোর ভাইটা বেস হ্যান্ডসাম রে। আমার তো সেই লাগে।যখনি দেখি ইচ্ছা করে গিয়ে প্রোপোজ করিগা। ( হেনা)
তোর তো হ্যান্ডসাম ছেলে দেখলেই প্রোপজ করতে ইচ্ছে করে । ( আশা)
সবাই হো হো করে হেসে ওঠলো।
যা ভাবছো তা না। উপরে ফিটফাট ভিতরে সদরঘাট বুঝলা। বাইরে থেকে যতটা সুন্দর ভেতরে ততোটাই বদমেজাজি। ( মুসকান)
তাতে কি এমন পারসোনালিটির ছেলেইতো আমি চাই রে।
এই হেনা এই কথা গুলো আমাদের সামনে বলেছিস ভালো কথা। আর কারো সামনে বলিস না। ইমন ভাইয়ের কানে গেলে আর আস্ত রাখবে না। তার চ্যালারাই তোকে ওঠিয়ে নিয়ে যাবো গা। ( রাফি )
সবাই বড় বড় করে তাকালো। মুসকান তো অবাক হয়ে চেয়ে রইলো।
কি বলছিস ভাইয়ার চ্যালা মানে?
সে কি রে তুই তোর ভাইয়ের ব্যাপারেই জানিস না। ( নিলয় )
এই আমিও তো জানিনা। আমাকেও বল। ( আবির )
আরে ওর ভাই তো………. আর বাকি টুকু বলতে পারলো না রাফি তার আগেই হেনা বললো- ঐ তো আমার ক্রাশ আসছে…. ওয়াও কি লাগছেরে মুসকান।
সবাই তাকালো রেষ্টুরেন্টের বাইরে ইমন ঢুকছে। মুসকান এর হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসলো। ভয়ে ঢোক গিললো।
আল্লাহ এখানে ভাইয়া কি করে আসলো । আমি এখানে এটা জানে না তো?
এই এতো ভয় পাচ্ছিস কেনো? বন্ধুদের সাথে আসতেই পারিস এতো ভয়ের কি আছে? ( আবির )
সারাদিন তো বই এ মুখ গুজে থাকিস এতো বড় একজন নেতার ছেলে, বড় একজন নেতা তাকেই চিনিস না । আর ওনি অনেক রাগী মানুষ তাও তো জানিস না। ( নিলয় )
আরে নাম তো শুনেছি।কিন্তু ইনিই যে ওর ভাই তা তো জানিনা। ( আবির )
মুসকান ভয়ে ভয়ে বসে রইলো আর আল্লাহ আল্লাহ করতে থাকলো।হেনা এক ধ্যানে তাকিয়ে আছে। রায়া বুঝতে পারছে মুসকান কে কি পরিমান বকা খেতে হবে। আশাও তাকিয়ে আছে সামনে দেখতে দেখতে ইমন তাদের কাছে চলে আসলো।
ভাইয়া ভালো আছেন?? ( রায়া )
ভাই কেমন আছেন? দাড়িয়ে বললো – নিলয়, রাফি,আবির।
ইমন – ভালো। তোমাদের কাজ শেষ?
আমতা আমতা করে বললো রায়া – আসলে আমার জন্মদিন তো তাই ট্রিট…..৷
থামিয়ে দিয়ে – যা জিগ্যাস করেছি সেটাই বলো?
হ্যা। ( রায়া )
মুসকান তাহলে এখন চলো। বাড়ি ফিরতে হবে।
ভাইয়া ওদের সাথে যাই।
চোখ রাঙিয়ে – পাঁচ মিনিটের মধ্যে আসবে আমি ওয়েট করছি বলেই বেরিয়ে গেলো।
সবার সামনে মুসকান জোর পূর্বক হাসি দিয়ে বিদায় জানিয়ে বেরিয়ে পড়লো মাথা নিচু করে।
এতো কড়া শাসন। ব্যাপারটা কেমন যেনো লাগছে। ( আশা )
তোর সব জায়গাতেই গোয়ান্দা গিরী তাই না । ওনি মানুষ টাই এমন ওনার বাড়ীর মেয়েকে তো গার্ড এ রাখবেই। ( রাফি )
ঠিক বলেছিস৷ ( নিলয় )
চল সবাই মলিন মুখে বললো রায়া। কারন সে জানে মুসকানের সাথে এখন কি হবে।
হে চল। ( নিলয় )
আমারো জানি কেমন একটা লাগছে৷ কাল ফোন করেছিলাম তখনো কেমন একটা যেনো বিহেইভ করলো।( আবির )
আরে ছাড় তো চল সবাই। ( হেনা )
ওরা সবাই বেরিয়ে পড়লো মেয়েরা এক রিকশা নিয়ে চলে গেলো।কিন্তু নিলয়, রাফি,আর আবির যেতে পারলো না । ইমনের চ্যালারা তাদের পথ আটকিয়েছে।
মুসকানের সাথে তোমাদের কি সম্পর্ক?? ( রাকেশ ইমনের বিশ্বস্ত একজন চ্যালা)
মানে কি বলছেন আমরা সেইম ক্লাশে পড়ি। আমরা ফ্রেন্ড।
ফ্রেন্ড তো ভালো কথা এতো ঘুরাঘুরি কিসের। আর রাত করে ফোন দেওয়া কিসের। আবিরের দিকে তাকিয়ে বললো রাকেশ।
দেখুন আমি জাস্ট খবড় নেওয়ার জন্য ফোন দিয়েছিলাম।
তোকে খবড় নেওয়ার জন্য কতো টাকা দিয়ে রাখা হয়েছে?? (রেগে গিয়ে)
রাকেশ ভাই সত্যি আমরা শুধুই বন্ধু আর কিছু না৷ ( নিলয় )
আর কিছু হওয়ার চেষ্টা ও করবিনা। আর নিলয় তুই তো চিনিস ইমন ভাই কে তুই আবিরকে বলে দিস যেনো মুসকান কে ফোন না দেয় আর কখনো।ভাই রেগে গেলে কিন্তু আমাদের আর কিছু করার থাকবে না। দ্বীতিয়বার যেনো এমনটা আর না হয়।
ওকে ভাই এমন হবে না। ( নিলয় )
রাফি আর আবির অবাক হয়ে শুনছে এটা কেমন বিহেইভ । বোনের ফ্রেন্ড রা ফোন দিলে এমন থ্রেড কেউ দেয় । আবির, রাফি অবাক হয়ে দাড়িয়ে রইলো।
রাকেশ হাজারটা কথা শুনিয়ে দিলো।আর বললো মুসকানের সাথে পড়া শোনার ব্যাপার ছাড়া কোনো কথা না বলতে। ইমন ভাইয়ের কড়া নিষেধ রয়েছে। নিলয় তাদের ভালো করে জানে তাই সে সব কথায় সম্মতি দিয়ে তাদের থেকে বিদায় নিয়ে চলে এলো।
রাকেশ ইমনকে ফোন দিয়ে বললো – ভাই কাজ শেষ।
ইমন রেখে দিয়ে সোজা বাসার দিকে চললো।
নিলয় এটা কি হলো??
আবির তুই আর মুসকান কে ফোন দিবি না।পড়ার ব্যাপারে রায়াকে জানাবি রায়া মুসকানকে জানাবে। আসলে আশা ঠিকি বলেছে কিছু একটা গোলমাল আছে। আমিও অবাক হয়েছি আমরা তো ক্লাসমেট আমাদের সাথেও কথা বলা বারন। এর পেছনে নিশ্চয়ই বড় কোনো কারন আছে ।
আমার মনে হয় ইমন ভাই মুসকান কে পছন্দ করে। ( রাফি )
তা কি করে হয় ওরা ভাই বোন। ( আবির )
আপন না চাচাতো। আর আমি একটা ছেলে হয়ে আরেকটা ছেলের এইসব বিহেভিয়ার অবশ্যই বুঝবো ( রাফি )
হতে পারে এটা ওদের ব্যাপার বাদ দে। ( নিলয় )
বাসার সামনে এসে অনেক জোরে ব্রেক করলো ইমন। মুসকান ভয় পেয়ে গেলো। পুরো রাস্তায় কেউ কারো সাথে কথা বলেনি।
মুসকান ইমনের দিকে মলিন মুখে তাকালো।
হা করে কি দেখছো নামো। ধমকে ওঠলো ইমন মুসকান কেঁপে ওঠলো। তারাহুরো করে নামতে গিয়ে হুড়মুড়িয়ে পড়ে গেলো। ইমন তারাতারি গাড়ি থেকে নেমে মুসকান কে ওঠালো।
এতো কেয়ারলেস কেনো তুমি? সারাদিন বাইরে ছিলে তখন তারাহুরো করো নি। এখন বাসার সামনে এসে কিসের তারাহুরো? যাও ভেতরে যাও।
মুসকান কেঁপে ওঠলো হাতে একটু ছিলে গেছে । হাত ধরেই বাসার ভিতর চলে গেলো। ইমন ড্রাইভার কে হাড়ি পার্ক করেতে বলে ভিতরে গেলো।
মুসকান কে আর দেখতে পারলো না। হয়তো নিজের রুমে আছে আমি মা কে ফোন দিয়ে শুনি কখন আসবে।
হ্যালো মা কখন ফিরবে?
এইতো বাবা ফিরছি । তোর কাকি কদিন পর ফিরবে আমি আর তোর বাবা আসছি।
ওকে রাখছি।
আমার জাস্ট দম বন্ধ লাগছে। ছোট থেকে অনেক সহ্য করেছি আর পারছিনা। কি ভেবেছে কি নিজেকে আমার অভিভাবক। আমার মা আছে বাবা আছে বড় ভাই আছে। তারা তো এমন নয় মামনি বড় বাবা তারাও এমন নয় । ইমন ভাইয়া কি পেয়েছেটা কি বন্ধু দের সাথেও আড্ডা দেওয়া যাবে না তার জন্য। ওটা করা যাবে না সেটা করা যাবে না। এমনকি আমার ফোনটাও তার অনুমতি নিয়ে কেনা হয় । না আমি আর এসব সহ্য করবো না আমারো একটা লাইফ আছে। চাচাতো ভাই ভাইয়ের মতো থাকবে এতোটা বাড়াবাড়ি আর সহ্য করবো না। আম্মু আসুক তারপর এর একটা হেস্তনেস্ত করেই ছাড়বো। রাগে ফুসসে আর একমনে রুমে পাইচারী করতে করতে কথা গুলো বলে যাচ্ছে মুসকান।
ইমন রুমের সামনে থেকে সবটা শুনেছে। এমনিতেই তার মাথা গরম হয়ে ছিলো এসব শুনে আরো দ্বিগুন রাগ ওঠে গেলো রুমে ঢুকতেই মুসকান স্টপ হয়ে গেলো। চুপ করে দাড়িয়ে রইলো আর ভয়ে ঢোক গিললো।
সহ্য টা কে করছে তুমি না আমি? আর কি হেস্তনেস্ত করবে তুমি ?
নয়টায় বের হয়েছো দুটায় ফিরেছো।
এতোটা বেপরোয়া ব্যবহার এই বাসায় চলবে না। আর এতো ছেলে বন্ধুদের সাথে মেশাও যাবে না। পড়াশোনা করার জন্য তোমাকে বাসার বাইরে যেতে দেওয়া হয়। কারো সাথে আড্ডা দেওয়ার জন্য না।
আমিতো বললামই রায়ার জন্মদিন আজ। চোখ তুলে তাকিয়ে বললো মুসকান।
জন্মদিন তো কি হয়েছে চার ঘন্টা রেষ্টুরেন্টে থাকতে হবে তোমার?
ওরা তো আমার বন্ধুই ওদের সাথে একদিন আড্ডা দিয়েছি এতে কি হয়েছে? রেগে গিয়ে এই প্রথম মুসকান ইমনের মুখের ওপর জবাব দিলো।
ইমন তো অবাক যে মেয়ে কোনদিন ভয়ে তার দিকে চোখ তুলে কথা অবদি বলেনি। সে আজ মুখে মুখে তর্ক করছে।
চুপপ একদম চুপ। মুখে মুখে তর্ক করাও শিখে গেছো। বড় হয়ে গেছো অনেক এতোটা অধঃপতন তোমার।
মুসকান কেঁপে ওঠলো। তবুও আজ সে নিজেকে স্ট্রং রেখে ইমনের সাথে সরাসরি কথা বলবে। সে তার বেশ কিছু প্রশ্নের জবাব চাইবে।
চোখ দুটো পানিতে টলমল করছে। নিজেকে স্বাভাবিক করে নিয়ে বললো – ছোট থেকে আমার সব কিছুতে তুমি বাঁধা দিয়েছো । কখনো তোমার কথার অবাধ্য হইনি। আমার খাওয়ার ব্যাপারে, আমি কি পোশাক পড়বো সেই ব্যাপারে, আমি কোন স্কুলে পড়বো কোন কলেজে পড়বো সবটাই তোমার ঠিক করে দেওয়া। বাসায় সবাই তোমার কথায় ওঠে আর বসে এমনকি আমার নিজের মা বাবা,আর ভাইয়েরাও। কিন্তু সবকিছুর তো একটা সীমা আছে ভাইয়া। আমি আর পারছিনা আমার নিজেরও একটা লাইফ আছে, আমার নিজের একটা পরিবার আছে । তুমি কেনো আমার লাইফ এতো হ্যান্ডেল করবে। এটা কি বাড়াবাড়ি না? সব মেনে নিলাম কিন্তু আমি তোমার জন্য আমার বন্ধু দের সাথেও আড্ডা দিতে পারবোনা। কোন ভাই এমন হয় বলোতো। আমার ফ্রেন্ড দের ও তো বড় ভাই আছে তারা তো এমন না। আমার নিজের ভাই ও তো এমন টা করে না । তুমি কেনো এমন করো সব বিষয়ে, আমার আর ভালো লাগছেনা এসব আর না । বলেই কাঁদতে কাঁদতে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।
ইমন স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। সে বিশ্বাস করতে পারছে না মুসকান তাকে এসব বলে গেলো। সবেমাএ কলেজে পড়ছে এখনি ও এইসব বলছে তাহলে আর কিছুদিন পর কি বলবে। আমার ওকে এতো আগলে রাখাটা ওর বিরক্ত লাগছে। নিজের পরিবার আর আমাকে আলাদা করে দেখছে। শুধুমাএ বন্ধু দের সাথে আড্ডা দিতে বারন করেছি বলে আজ এতো সব কথা বললো।তার মানে এগুলো ওর আগে থেকেই মনে ছিলো শুধু আজ বিরক্ত হয়েই সব বললো। এতোদূর এগিয়ে গেছে বিষয় গুলো।
আমি কেনো এমন করছি সেটা তো ওকে এখনি জানাতে চাইনা। কিন্তু পরিস্থিতি তো অন্যদিকে মোড় নিচ্ছে। আমার অধিকার নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে মুসকান। আমার এতোদিনের পরিশ্রম কে ও এতোটা তুচ্ছ করে ফেলছে না এটা কিছুতেই হতে দেওয়া যাবে না।
রুম থেকে বেরিয়ে যাবে এমন সময় থমকে দাঁড়ালো।
ভাবতে লাগলো- মুসকান তো এই কথা টা ঠিকি বলেছে বোনদের তো এতোটা গাইড দিয়েও কেউ রাখে না । ও তো আর জানে না ওর আমার সম্পর্ক তাইতো এগুলো মেনে নিতে পারেনা যখন জানবে তখন ঠিকি বুঝবে সবটা। আমি মায়ের সাথে রাতেই কথা বলবো।
মুসকান ছাদের রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে আছে। মনটা তার বড্ড খারাপ। কিছু ভালো লাগছেনা তার। সন্ধ্যা হয়ে এসেছে তাই নিজের রুমে গিয়ে সুয়ে পড়লো।
কিছু ক্ষন পরেই ইরাবতী আর মোজাম্মেল চৌধুরী বাড়ি ফিরলেন। ফিরেই মুসকানের সাথে দেখা করতে তার রুমে আসলো।
একি মেয়েটা এই অসময়ে সুয়ে আছে শরীরটা কি এখনো খারাপ নাকি।
মুসকান, মুসকান।
মামনি তুমি এসেছো। বলেই ওঠে ইরাবতী কে জরিয়ে ধরে কাঁদতে লাগলো মুসকান।
কি হয়েছে মা কাঁদছো কেনো এইতো এসে গেছি। কি হয়েছে বলো?
মুসকান কেঁদেই চলেছে। কাঁদতে কাঁদতে আর কিছু বলতেই পারছেনা। ইরাবতী মুখটা ওঠিয়ে চোখের পানি মুছে কপালে চুমু দিয়ে বললো – কি হয়েছে বল মা ইমন বকেছে?
মুসকান আবারো তাকে জরিয়ে ধরে কাঁদতে লাগলো। ইরাবতী বুঝলো হয়তো ইমন কিছু বলেছে।
মুসকান কাঁদতে কাঁদতে বলে ওঠলো- আমার সব কিছুতে ইমন ভাইয়া কেনো এতো বাধা দেয়। কেনো আমি অন্য সবার মতো ফ্রি ভাবে চলতে পারিনা। ভাইয়া কেনো আমাকে সব কিছুতেই এতো বকাবকি করে। আমার আর ভালো লাগছেনা কিছু আমি আর এসব নিতে পারছি না।
মুসকান দেখি দেখি আমার দিকে তাকাওতো। কি বলছো হুম? ইমনতো তোমাকে কতো ভালোবাসে কতো কেয়ার করে। ভালবাসা থেকেই তো শাসন আসে তাইনা। সেটা নিয়ে এতো কাঁদতে হয় বোকা মেয়ে।
ভালোতো তোমারাও বাসো সবাই বাসে কই তোমরা তো এমন করো না।
কেনো যে ইমন এমন করে সেটা যদি তুই জানতি তাহলে কি আর এইভাবে কাদতি। তুই যে ওর হৃদপিন্ড মা ওটা বোঝার সময় তো এখনো হয়ে আসেনিরে। ( মনে মনে)
আমরা করিনা কিন্তু ওর ভালবাসা আলাদা তাই এমন করে এটা নিয়ে এতো মন খারাপ করার কিছু হয় নি মা। যাও ফ্রেশ হয়ে নাও মুখটা শুখিয়ে গেছে।
না মামনি আমি কিছু করবো না। তুমি ভাইয়াকে বলো আমার সাথে যেনো এমন না করে। আমি আমার বন্ধু বান্ধব দের সাথেও কেনো মিশতে পারবো না বলো?
ইরাবতী চিন্তিত মুখ করে বললো।
মানে?
হুম মামনি। মুসকান সবটা খুলে বললো ইরাবতী কে।
তুমি তো এটা ঠিক করোনি মা। এতো সময় বাইরে ছিলে কেনো।
সরি মামনি। তাই বলে আর ওদের সাথে মিশতে পারবো না এটা কেমন কথা?
আচ্ছা সেটা আমি দেখছি।
মুসকানের চোখ চকচক করে ওঠলো। সত্যি….
হুম সত্যি।
আচ্ছা তুমি কিন্তু বলে দিবে ভাইয়া কে।
হুম যাও ফ্রেশ হয়ে পড়তে বোসো।
ওকে মামনি বলেই ইরাবতীর গালে কিস করলো।
ইরাবতী হাসতে হাসতে বললো- পাগলী একটা।
রাত দশটা বেজে গেছে ইমন এখনো বাড়ি ফিরে নি। সেই যে মুসকানের সাথে কথা কাটাকাটি করে বেরিয়েছে আর ফিরে নি। ইরাবতী ফোন করে তারাতারি আসতে বলাতে এসে কলিং বেল বাজালো ইমন। ইরাবতী গিয়ে দরজা খুলে দিলো।
ইমন গিয়ে সোফায় বোসলো । ইরাবতী এক গ্লাস পানি নিয়ে ইমনকে দিলো।
মুখটা শুখিয়ে গেছে কেমন সারাদিন খাসনি কিছু? ফ্রেশ হয়ে আয় খেতে দিবো।
না মা তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে ।
আমারো আছে। আগে খেয়ে নে পড়ে সব শুনবো।
না আগে কথা শুনো তার পর ।
ইরাবতী ছেলের জেদের সাথে পারবেনা তাই বললো – ঠিকাছে বল।
মুসকান কে আর এভাবে দূরে রাখা ঠিক হবে না মা।
সব শুনেছি আমি । তুই শুধু শুধু ভয় পাচ্ছিস কিছু হবে না। আর একটা বছর ওয়েট কর ওর এক্সামটা হোক তার পর যা করার করবি।
কিন্তু ও আমাকে আজ যা বলেছে।
কি?
সব খুলে বললো। সব শুনে ইরাবতী হেসে দিলো।
আরে পাগল মেয়েটা তো বুঝোনা তাই অমন বলেছে সব ঠিক হয়ে যাবে। ধীরে ধীরে সবটা বুঝাবো দেখিস সব ঠিক হয়ে যাবে। তারাহুরো করে কিছু করা ঠিক হবেনা।
কিন্তু মা।
আর কোনো কিন্তু না । তুই এইসব চিন্তা বাদ দিয়ে ওকে ওর মতো থাকতে দে একটা বছরই তো । পড়াশোনা করলে বন্ধু বান্ধব থাকবেই এটা নিয়ে এমন করিস না। তুই তোর বাবার ব্যবসায় মনোযোগ দে তো। কদিন পর বিয়ে করবি বউ কে নিজের রোজগারে খাওয়াতে হবে তো ।
মায়ের কথা মেনে নিলো ইমন । আর এক বছর সে তার বউ এর জন্য অপেক্ষা করবে। মুসকানকেও এতো বেশী শাসন করবে না। এতে মুসকানের চোখে সে খারাপ হয়ে যাবে। তাই ভাবলো থাকুক ও ওর মতো। আমার জিনিস তো আমারই থাকবে। আর পৃথিবীতে কারো সাধ্য নেই আমার জিনিসে হাত দেওয়ার।
ডিনার করে যে যার মতো ঘুমিয়ে পড়লো। বেশ কিছুদিন হলো ইমন মুসকানকে আর বকাবকি করেনা। মুসকান পড়াশোনা আর বন্ধু বান্ধব নিয়ে ব্যাস্ত। ইমন ও বাবার ব্যাবসা আর নির্বাচন নিয়ে বেশ বিজি । কিন্তু ইমনের চ্যালারা ঠিকি মুসকানের খোঁজ খবড় ইমনকে দেয় । আবির, নিলয়,রাফি এরা তেমন মিশে না মুসকানের সাথে শুধু দরকারে কথা বলে তবুও খুব কম।
এদিকে মুসকান নিজের ইচ্ছে মতো চলাফেরা করছে। ইমন তাকে আর কিছু বলে না বলে মনে মনে বেশ খুশি। ইমন তার সামনেও আসেনা। কিন্তু রাতে ঘুমানোর পর মাঝরাতে ঠিকি মুসকানের রুমে এসে তার মুখপানে দীর্ঘসময় চেয়ে থাকে। যা ইমন আর উপরওয়ালা ছাড়া কেউ জানে না।
জয় নামের এক ছেলের সাথে ফেসবুকে আলাপ হয় মুসকানের। বেশ কিছু দিন যাবতই তাদের কথা হয়। ইদানীং পড়াশোনা বাদ দিয়েও অনলাইনে থাকে মুসকান। জয়ের সাথে কথা বলতে বলতে একমাসে সেটা তার অভ্যাসে পরিনত হয়েছে। বই সামনে নিয়ে চ্যাট করে যায় সমান তালে। ইরাবতী খাওয়িয়ে দেয় আর মুসকান চ্যাট করে। মুসকানের এই বিষয় গুলা কারো চোখ এড়ায় না। ইমন ও বেশ লক্ষ করছে কিন্তু নির্বাচনের জন্য বেশ ব্যাস্ত থাকায় এদিকে তেমন গুরুত্ব দিতে পারেনি। রাতে ডিনার শেষে ইমন নিজের রুমে গিয়ে ল্যাপটবে কিছু কাজ করে মুসকানের আইডি লগ ইন করলো। আইডি লগ ইন করে যা দেখলো এতে ইমনের মাথা পুরো খারাপ হয়ে গেলো। রাগে পুরো শরীর কাঁপতে লাগলো৷ তার এতোদিনের সাজানো স্বপ্ন এইভাবে নষ্ট হতে পারেনা ।
মুসকান কে স্বাধীনতা দিয়ে মায়ের কথা শুনাটা কি তাহলে আমার জীবনে কাল হয়ে দাঁড়ালো।
নিজের জিনিসে এই ইমন কখনোই ছাড় দিবেনা। তুমি কতো বড় ভুল করলে এবার হারে হারে টের পাবে৷ আর এই জয় কার জিনিসে হাত দিয়েছে সেটা এবার বুঝবে। আর তোমার প্রেমলীলা আমি বের করছি বলেই দ্রুত মুসকানের রুমের দিকে পা বাড়ালো ইমন।
চলবে…………………..