#প্রেম_ছোয়ালে
Part:11+12+13+14+15
Writer:Suvhan Årag (ছদ্মনাম)
–দেখ সাওদা এটা কোন কথা না।ওরা হয়তো পরে দাওয়াত দেবে এজন্য
–শোন আপু বিয়ে র,আর তিনদিন বাকি।এখনো দাওয়াত দেয় নি।তুই বল এটা কি ভাববার বিষয় নয়
নীলিকা মুখে যাই বলুক সে নিজেও এই নিয়ে চিন্তিত
–হ্যা আশফি বলো
–কি হয়েছে তোমার মন খারাপ না কি?
–না।আশফি একটা কথা জিজ্ঞাসা করবো
–কি বলো
–কাল তো আমাদের গায়ে হলুদ তাই না
–হুম
–বলছি তোমাদের বাড়ি র পাশে ঐ যে আবির তুষার আছে না সাওদা র বন্ধু ওরা নাকি জানেই না তোমার বিয়ে
নীলিকা র কথা শুনে আশফি রীতিমতো ঘামতে শুরু করলো।আদৌ শেষ রক্ষা হবে তো
–আরে তুমি তো জানো আমাদের পারিবারিক অবস্থা ।আসলে হয়েছে কি বলোতো বাবা এক এক বাড়ি র মুরুব্বি ছাড়া কাউকে দাওয়াত দেন নি।বাড়ি র বড় রা আসলেই তো সব হয়।বোঝো ই তো ।হঠাত্ বিয়ে বাবা র কাছে টাকা তেমন কোথায়
নীলিকা ও ভাবলো আসলেই ঠিক ।সে তো জানে আশফির অবস্থা ।শুধু শুধু সে আশফি কে ভুল বুঝছিল
–আশফি তুমি আমাকে ভুল বুঝো না ।ক্ষমা করে দিও ।আমি তোমাকে এই কথা,,,,
–আরে না একটু ও ভুল বুঝিনি।তুমি এখন যাও তো ঘুমিয়ে পরো।কাল গায়ে হলুদ।তার পরের দিন তুমি আমার শুধু আমার
–হুম।শুভ রাত্রি
–শুভ রাত্রি
–নীলি
–হুম আর কিছু বলবে
–বাসি ভালো
–আমিও
–রাখছি।আল্লাহ্ হাফেজ
–আল্লাহ্ হাফেজ
পরের দিন নীলির গায়ে হলুদ ও হয়ে গেল
কিন্তু সবাই এর মধ্যে খুশিতে থাকলেও সাওদা র মনে খুঁত খুঁত করছে
কারণ নীলিকা র গায়ে হলুদের তত্ত্ব খুব ই সাধারন ভাবে পাঠিয়েছে আশফি রা।বাড়ি র আত্মীয় স্বজন ও কেমন কানা খুসরা করছে
নীলিকা র মনে একটু খারাপ লাগলে ও পরে আশফির বাবা র আর্থিক অবস্থা ভেবে নিজেকে সান্ত্বনা দিচ্ছে
সন্ধ্যা নেমে এসেছে।বাইরে পাখিরা ও সব কিচিরমিচির করতে করতে ঘরে ফিরে যাচ্ছে ।নীলিকা গায়ে একটা সুতির শাড়ি জরানো।গ্রিল এ হাত দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে নীলিকা
এমন সময় সাওদা র প্রবেশ
–আপু
–হ্যাঁ কিছু বলবি
–কি কষ্ট হচ্ছে
–কেন
–আমাদের ছেড়ে চলে যাবি তাই
–তা একটু হচ্ছে
–আমার খুব কষ্ট হচ্ছে ।তোকে ছাড়া কিভাবে থাকবো
–দুর পাগলি।এই তো বেশি দূরে তো যাচ্ছি না।যখন ইচ্ছে হবে মনে পরবে চলে যাবি আমার কাছে
–হুম
–আর কিছু বলবি
–শোন আশফি ভাইয়া দের বাড়ি গায়ে হলুদ এর তত্ত্ব দিতে গেলাম না
–হ্যাঁ তুই আর নাবিলা গিয়ে ছিলি ,কেন
–জানিস বাড়ি তে কোন মেহমান নেই।আমরা গিয়ে ছি তাতে যেন আঙ্কেল আন্টি মাইশা কেমন যেন খুশি না।তারা কোন রকমে তত্ত্ব টা নিয়ে একপাশে রেখে নিজেদের কাজে চলে গেল
–আশফি ছিল না
–না ।ভাইয়া নাকি কি কিনতে বাজারে গেছিল
–ওও
–তার পর আমরা আর বসিনি।এরকম কেউ ব্যবহার করে বাড়ি তে নতুন মেহমান আসলে
–বাদ দে সবাই তো সমান না
–হুম ।কিন্তু কি বলতো ওদের বাড়িতে গেলে মনেই হবে না এটা কোন বিয়ে বাড়ি
–আচ্ছা তুই যা
নীলি আর কথা বাড়াতে চাইছে না।সে তো জানে আশফি তাকে সব বলেছে এই নিয়ে
–আপু আরেকটা কথা
–হুম বল
–বাবা তোর ব্যবহার এ সেদিন অনেক কষ্ট পেয়ে ছে কিন্তু ।তুই তো কাল চলেই যাবি।বাবা র কাছে ক্ষমা চেয়ে নিস ।যতো যাই হোক বাবা মা কে কষ্ট দিয়ে কখনো সুখী হওয়া যায় না ।তাদের দোয়া লাগেই।যদিও তারা কখনো সন্তান এর কষ্ট টাকে মনে রাখেন না।তারা সব সময় তাদের সন্তানদের সুখী দেখতে চান ।তুই একবার ক্ষমা চেয়ে নিস
সাওদা চলে গেল ।নীলিকা ও ভাবছে আসলেই সেদিন সে অন্যায় করেছে ।তার উচিত হয় নি তার বাবার সাথে ঐ ভাবে কথা বলা
কপালে হাত রেখে চোখ বুজে বিছানায় শুয়ে আছেন নাবিল সাহেব।বাড়ি ভরতি লোক।কিন্তু তার মনে আনন্দ এর চেয়ে কষ্ট বেশি হচ্ছে ।নীলিকা তার প্রথম সন্তান ।প্রথম দিন আধো আধো বুলিতে যখন বাবা ডাক শুনেছিল মেয়ে র মুখ দিয়ে সেদিন যেন পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষ মনে হয়েছিল তার নিজে কে
তার নীলিকা কাল বিয়ে হলে চলে যাবে ।ঘর টা ফাঁকা হয়ে যাবে।খাবার টেবিলে যখন সবাই খেতে বসবে একটা চেয়ার ফাঁকা হয়ে যাবে।এসব ভাবতেই মনের কষ্ট টা আরো বেড়ে যাচ্ছে
শত হলেও বাবা ।নিজের মেয়ে কে অন্য র হাতে তুলে দিতে হবে আজীবন এর জন্য ।একজন ছেলে র চেয়ে একজন মেয়ে র বাবা র দায়িত্ব চিন্তা বেশি।কারণ তাকে তার মেয়ে কে সারাজীবন এর জন্য তুলে দিতে হয় অচেনা কারোর হাতে।তার একটা ই চিন্তা হয় তার মেয়ে কে সে সুখী রাখবে তো তার বাবা যেভাবে তার সকল ইচ্ছে পূরন করেছে আবদার গুলো মিটিয়ে ছে সে ও তাই করবে তো
আসলে ই একটা ছেলে বিয়ে করলে কিছু হারায় না বরং পায়।তার পরিবারের খেয়াল রাখার মতো কেউ।কিন্তু একটা মেয়ে চাইলে ও সে পারে না যখন তখন বাবা র বাড়ি যেতে বাবা মায়ের কাছে থাকতে তাকে আজীবন খেটে যেতে হয় তার সংসার এর জন্য ।বাড়ি তে যে মেয়ে মাছের মাথা ছাড়া খেত না সেই মেয়ে টা শশুর বাড়ি তে দিব্যি মাছের লেজ টা খেয়ে ভাত টা শেষ করে কখনো আবার সেই টুকু ও পায় না
এমন সময় নীলিকা ঘরে এসে ওর বাবা র পাশে গিয়ে বসে মাথায় হাত রাখে
–বাবা
–কে,,,নীলি মা ,তুমি
–হ্যাঁ আমি।এই অবেলাতে শুয়ে আছো যে
–ঐ এমনি একটু মাথা ধরেছে
–আমি মাথা টিপে দেব
–না।তুমি এখন গিয়ে রেস্ট নেও।কাল আবার সারাদিন তোমাকে ব্যস্ত থাকতে হবে ।ঘুমাতে ও পারবে না ঠিক করে।এখন গিয়ে ঘুমিয়ে নেও একটু যাও
–দি না বাবা ।কাল তো চলেই যাব
নীলির কথা শুনে নাবিল সাহেব আর চোখের পানি আটকাতে পারলেন না ।মেয়ে কে জরিয়ে ধরে কেঁদে দিলেন
–বাবা কাদছো কেন।তুমি কাদলে আমি কিভাবে ওখানে গিয়ে ভালো থাকবো বলোতো
–না আমার মেয়ে সুখে থাকবে।আমি সব সময় দোআ করি
–বাবা আমাকে ক্ষমা করে দেও।সেদিন তোমার সাথে খুব খারাপ ব্যবহার করেছি আমি ক্ষমা করে দেও
–দূর পাগলি।আমি কি ওসব মনে রেখেছি না কি।রাগ করলে মানুষ এর ঘাড়ে শয়তান ভর করে।তখন তার হিতাহিত জ্ঞান ও থাকে না।তার খেয়াল থাকে না সে কাকে কি বলছে।রাগ তো আমরা মা বাবা ও তোদের ওপর করি।তাই বলে কি চাইলেও তোরা বাবা মা এর ওপর রাগ করিস ।ওটা কিছু না
আসলে ই আল্লাহ্ র কাছে মা বাবা র দোআ কবুল হয় সরাসরি ।সাথে সাথে কবুল হয়ে যায় ।চাই সে দোআ হোক বা বদ দোআ।এজন্য মহানবী(স:) রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে বলেছেন।কারণ সন্তান এর প্রতি একটু রাগলে অনেক সময় বাবা মা সন্তান কে বদ দোআ দিয়ে ফেলেন।তারা পরে সেগুলো ভুল লে আল্লাহ্ র দরবারে তাদের দোআ সাথে সাথে কবুল হয়ে যায় ।এজন্য মা বাবা কখনো তার সন্তান কে বদ দোআ দেওয়া উচিত না রাগের মাথায় ।তারা কখনো সন্তান এর খারাপ চান না ।কিন্তু দেখা যায় তাদের অজান্তেই তাদের রাগের এই বদ দোআ তাদের সন্তানদের জন্য খারাপ হতে পারে
রাতের বেলা
আশফি বসে আছে ঘরে।কাল তার ফ্লাইট।আবার কাল ই তার বিয়ের কথা ছিল।কি অদ্ভুত নিয়তি
আশফির খুব ইচ্ছে করছে আজ শেষ বারের মতো রাতটা তার নীল পরীর সাথে কাটাতে
“””আর একটি বার যেতে চাই
তোমার নীড়ে
শুধু একবার নয় বার বার যেতে চাই
তোমার বিহনে তোমার নীড়ে তে
নিজেকে তোমার বদ্ধবাহুতে দেখতে চাই
সকাল টা তোমার ভেজা চুল এর পানি ছিটে তে শুরু করতে চাই
আমার মান অভিমান
সব না বলা কথা গুলো কে
তোমার আঁচলে ঢেলে দিতে চাই
তোমার কোলে মাথা রেখে
বলতেই চাই আমার সুপ্ত ইতিহাস
তুমি শুনবে কি
প্রিয়তমা,,,”””
–আমাকে যেতেই হবে ।শেষ বারের জন্য হলেও।যেতে হবে আমার নীল পরীর কাছে।রাত এখন ও অনেক বাকি ।এই রাত টাকে তোমার স্মৃতি তে ভরে নিয়ে যেতে চাই নীল পরী
আশফি উঠে বাড়ি থেকে বেরিয়ে হাঁটা ধরলো।উদ্দেশ্য নীলিকা র বাড়ি
চলবে———-
#প্রেম_ছোয়ালে
Part:12
Writer:Suvhan Årag (ছদ্মনাম)
নীলিকা বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আছে।আর নিচে আশফি।
আজ বাদে কাল বিয়ে ।এখন আশফি র সাথে তার দেখা করাটা বড়ই বেমানান ।তার পর এতো রাত।
দুজনের কানেই ফোন।আশফি সেই কখন থেকে নীলিকা কে নিচে নেমে আসতে বলছে।কিন্তু নীলিকা আসতে পারছে না ।আসবেই বা কিভাবে
–নীলি তুমি আসবে কি না বলো।নাহলে কিন্তু আমি সত্যি এখন গিয়ে তোমাদের কলিংবেল চাপ দেব
–আশফি প্লিজ বোঝা র চেষ্টা করো।এই রাত বারোটা র সময় কিভাবে আসবো আমি
–আমি কিছু জানিনা ।তোমাকে আসতেই হবে
–আচ্ছা দাঁড়াও ।সাওদা কে ডাকি
নীলিকা ফোন কেটে চুপিচুপি পা টিপে সাওদা র কাছে গেল।সাওদা র রুমে ও অনেকে শুয়েছে
–সাওদা এই সাওদা
–কে কে
–চুপপ আসতে আমি ।আপু
–তুই এতো রাতে এখানে কি করছিস
–চল না বাইরে একটু ।কথা আছে
–কেন আমার খুব ঘুম পাচ্ছে রে
–আহ চলনা
কোন উপায় না পেয়ে সাওদা বাইরে বেরলো।
–কি হয়েছে।বল ।আমার ঘুম পাচ্ছে
–রাখ তোর ঘুম ।আগে আমার বেরোনোর ব্যবস্থা কর
–মানেএএএ
নীলিকা সাওদা কে সব খুলে বললো
–এই তোর মাথা খারাপ আপু
–প্লিজ বোন আমার ।এই কাজ টা করে দে
সাওদা না পেরে দরজা খুলে দিল
–শোন আমি তোর রুমে ঘুমোচ্ছি ।তুই কিন্তু ঘরে আসার আগে আমাকে ফোন দিস
–আচ্ছা
–আর শোন এখন রাত।বেশিক্খন একা বাইরে থাকিস না
–আরে আশফি ই তো
–আপু সে এখনো তো র স্বামী হয় নি।হবে ।হওয়া আর হবে দুটোর পার্থক্য তো নিশ্চয়ই বুঝিস
সাওদা আর কিছু বললো না।দরজা বন্ধ করে দিল।নীলিকা সাওদা র বলা কথা গুলো বেশ বুঝতে পারছে
এদিকে আশফি নীলিকা দের বাড়ি র পেছনের বাগানে দাঁড়িয়ে মশার কামড় খাচ্ছে ।এ সময় তা কিয়ে দেখে নীলিকা আসছে।একটা খয়েরি রঙের সুতীর শাড়ি ।মাথা তে ঘোমটা দেওয়া ।একদম নতুন বৌ ভাব
নীলিকা আশফি র কাছাকাছি চলে এলো।আশফি র চাহনি দেখে সে বেশ লজ্জা পাচ্ছে
–আশফি
–,,,,,,,
–আশফিইইই
–ওও হ্যাঁ
–হা করে তাকিয়ে থাকবে না কি ।
— উহ চলো বসি
–কোথায়
–কেন এই ঘাসের ওপর
–তোমার মাথা খারাপ ।ঘাস তো সব ভেজা
–আহ চলোতো।কিছু হবে
আশফি নীলিকা র হাত টেনে নিয়ে ঘাসের ওপর গিয়ে বসালো।তারপর নিজেও বসলো
–এতো রাতে এখানে ভেজা ঘাসে বসে মশার কামড় খেতে ডেকেছো কেন বলোতো
–তোমাকে দেখব তাই
–কেন কাল ই তো দেখতে পারতে
–আজ ই তো শেষ।কাল কিভাবে দেখবো(আনমনে)
–আজ ই শেষ মানে
–আরে প্রেমিকা হিসেবে শেষ দেখা তাই বলছিলাম
–ওওও
–তোমাকে শাড়ি তে একদম নতুন বৌ লাগছে
নীলিকা আশফি র কথাতে লজ্জা পেল
–আগে দেখোনি যেন
–দেখেছি।কিন্তু আজ যেন বেশি ই ভালো লাগছে
–ওও
–শোন বিয়ে র পর কিন্তু এতো শাড়ি পরবে না
–কেন
–আমার এতো শাড়ি সব সময় পরা পছন্দ না।মাঝে মাঝে পরলে ঠিক আছে
–আচ্ছা জনাব
–নীলি তোমাকে তো একটা জিনিস দিতে ভুলে গেছি
–কি
আশফি পকেট থেকে একটা গোলাপ এর কড়ি বের করলো
–এই নাও
–কড়ি
–হ্যাঁ আমার গাছের ।সকাল এ ফুটেছিল
–কিন্তু ফুল তো ফোটে নি।কাল ই দিতে।ফুটে যেত তখন
–যদি দেওয়া না হয়
–তোমার কি হয়েছে বলোতো।কি সব উল্টা পাল্টা বলছো।কিছু লুকাচ্ছো আমার থেকে?
–আরে না।কিছু না
আশফি পকেট থেকে একটা ক্যান্ডি বের করে নীলিকা কে দিল
–এই নাও।আর এটা ছিল দেওয়া র
–হা হা।তুমি পারো ও বটে
নীলিকা ক্যান্ডি খোসা ছারিয়ে মুখে দিল।আশফি তাকিয়ে দেখছে।এই হয়তো শেষ দেখা।আর কবে দেখা হবে তার প্রেয়সী র সাথে
–এই নীল পরী
–বলুন নীল পুরুষ
–তোমার কোলে একটু মাথা রাখতে দেবে
–একদম না।বিয়ের আগে এসব মেলামেশা হারাম।অলরেডি আমরা অনেক পাপ করে ফেলেছি।দুজনে হাত ধরে ঘুরেছি ।দু একবার হাগ করেছি।এগুলো বড় পাপ আশফি।তওবা কর।আমি প্রথম এ ওতো বুঝতে পারি নি ।এখন জানি ।তাই জেনে শুনে পাপ করতে চাই না
আশফি র মনটা খারাপ হয়ে গেল ।ভেবেছিল তার নীল পরী র কোলে মাথা রেখে একটু আকাশ টা দেখবে।কিন্তু সেটা ও হলো না
–আচ্ছা ঠিক আছে।তোমার হাত দেখি মেহেদী দিয়ে ছো দেখছি
–হুম দিতে হবে না
–এই ভেতরে “‘A””অক্ষর কেন।এটা কার নাম
–আমার স্বামী র নাম এর অক্ষর
–মানে
আশফি আবেগে খেয়াল করে নি তার নিজের নাম ই ঐ অক্ষর এ।
কিন্তু নিয়তি র কি খেলা।সেদিন নীলিকা র কথা সত্যি ছিল।ওর স্বামীর নাম সত্যি “”A””অক্ষর দিয়ে
–আরে বুদ্ধু তোমার নাম ই তো ঐ অক্ষর এ
–ইশ ভুলেই গেছিলাম
আশফি লজ্জা পেয়ে মাথা চুলকাচ্ছে ।আর নীলিকা খিল খিলিয়ে হাসছে।আশফি মন ভরে সেই হাসি টা দেখছে
হঠাত্ আশফি নীলিকা কে জরিয়ে ধরে
–আশফি কি করছো।আমি বললাম কি একটু আগে ।আশফি ছারো
–হুশশশ
আশফি নীলিকা র ঠোঁটের দিকে এগোচ্ছে
নীলিকা র মনে অন্য কিছু বলছে।আশফি র চোখে নেশাক্ত তা।নীলিকা বুঝতে পারছে না কেন আশফি এমন করছে।কিন্তু এটা বুঝতে পারছে তাকে না থামালে আরো বড় পাপ হবে
হঠাত্ অনেক জোরে ই নীলিকা আশফি কে ধাক্কা দিয়ে নিজের থেকে সরিয়ে দিল
–আশফিইই
ধাক্কা খেয়ে আশফি নিজের মধ্যে এলো ।এতোক্খন সে নিজের মধ্যে ছিল না
–নীলিকা আই এম সরি।আসলে
–রাত হয়েছে আশফি।বাড়ি যাও।আমার ঘুম পাচ্ছে
নীলিকা উঠে হাঁটা শুরু করলো
আশফি বুঝতে পারলো নীলিকা রাগ করেছে ।আশফি নীলিকা কে ডাক দিল
–নীলিইই
নীলিকা পেছনে ঘুরলো
–কিছু বলবে
–আমি নিজের মধ্যে ছিলাম না।সরি
–আমি কিছু মনে করিনি।তুমি বাসায় যাও
— এই নীল পরী
–বলো নীল পুরুষ
–বাসি ভালো
–আমিও
নীলিকা দরজা দিকে গেল।দরজা খুলতে গিয়ে ও থেমে গেল।কি মনে করে পেছনে তাকালো
আশফি ছলছল চোখে নীলিকা র দিকে তাকিয়ে আছে
নীলিকা র বুকের ভেতর টা কেমন মোচড় দিয়ে উঠলো ।মনে শুধু একটা অনুভূতি হচ্ছে এই যেন আশফি র সাথে তার শেষ দেখা
আশফি নীলিকা কে উদ্দেশ্য করে হাত নাড়লো।নীলিকা ও একটু মুচকি হেসে হাত নাড়লো
এমন সময় সাওদা এসে দরজা খুলল ।নীলিকা ভেতরে চলে।আশফি নীলিকা র যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।দরজা বন্ধ হয়ে গেল
আশফি র চোখ দিয়ে এক ফোটা পানি গরিয়ে পরলো
–ভালো থেকো নীল পরী ।ভুল বুঝো না আমাকে।ভুলে যেও না ।আমি তোমার ই থাকব।তুমি শুধু একটু অপেক্ষা করো নীল পরী।হাল ছেড়ে দিও না।আমার হয় এ থেকো।বড্ড ভালোবাসি তোমায়
আশফি বাড়ি র দিকে রওনা হলো।আজকে র রাত সে কখনো ভুলতে পারবে না।
এদিকে চোখ বুজে ঘুমানোর চেষ্টা করছে নীলিকা ।কিন্তু পারছে না।
তার কাছে শুধু এটাই মনে হচ্ছে রাত টা যদি থমকে যেত সময় টা যদি থেমে যেত তাহলে ভালো হতো ।আজকের রাতটা তার বিয়ের আগের শেষ রাত আশফি র সাথে কাটানোর।নীলিকা কখনো ভুলবে না এই স্মৃতি এই রাত
নীলিকা তো তখনো জানতো না,আসলেই সেই রাত সে ভুলতে পারবে না কোনদিন
এই সেই রাত আশফি আর নীলিকা র শেষ রাত।আর কখনো হবে না তাদের মিলন।আর একসাথে ঘুরা হবে না কখনো রমনা পার্কে কোন ফেব্রুয়ারি তে
আসলেই কি অদ্ভুত নিয়তি
কেউ জানে না, পরের দিনের সূর্যোদয় নীলিকা র জীবন এ সূর্যাস্ত এর মতো ডুবে যাবে
চলবে————
#প্রেম_ছোয়ালে
Part:13
Writer:Suvhan Årag (ছদ্মনাম)
পরের দিন সকালে
নাবিল সাহেব ফজরের নামাজ পড়ে মোনাজাত করতে আল্লাহ্ র দরবারে দু হাত উঠালেন
—–হে আল্লাহ্ ।ক্ষমা করে দিও আমাকে।আমি জেনে না জেনে বুঝে না বুঝে যতো পাপ করেছি সব ক্ষমা করে দিও।হে আল্লাহ্ আমি তোমার কাছে শুকরিয়া যতোই আদায় করি তবুও শেষ হবে না।আল্লাহ্ এমন কোন একদিন এ তুমি আমাকে বাবা হওয়ার অনুভূতি দিয়ে ছিলে।সে আল্লাহ্ আমি আজ বড় নিরুপায় অসহায় বাবা হয়ে তোমার দরবারে হাত তুলেছি।তুমি আমার সন্তান কে সুখী করো।তার জীবন এর জন্য কোনটি সবচেয়ে উপযুক্ত সেটি তুমি ই ভালো জানো ।নিশ্চয়ই তোমার সিদ্ধান্ত ই সর্বশ্রেষ্ঠ কল্যানময়।আমিন
নাবিল সাহেব মোনাজাত শেষ করলেন
বেলা বারোটা
আশফি দের বাড়ি থেকে এখন ও কোন তত্ত্ব ও আসে নি।নীলিকা র বাবা তার বড় মেয়ে র জন্য আলাদা করে এমনি বেনারসি কিনেছিলেন আর সামর্থ্য মতো হালকা গহনা।সেগুলো দিয়ে ই বধু সেজে বসে আছে নীলিকা
আত্মীয় স্বজন সবার মুখে এক কথা,,,বরের বাড়ি তো কাছেই দেরী হচ্ছে কেন
অবশেষে একটা বাজে
আত্মীয় স্বজন দের কে খাওয়া র জন্য নিয়ে গেলেন নাবিল সাহেব
এদিকে
নীলিকা র কেমন অস্বস্তি লাগছে।সেই সকাল থেকে আশফি র সাথে কোন কথা হয় নি।আশফি র ফোন বন্ধ
নীলিকা আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আছে।আজ নীলিকা কে কোন পরীর চেয়ে কম লাগছে না
–তোমার কি আজ আমাকে পছন্দ হবে নীল পুরুষ ।সবাই বলছে তুমি নাকি জ্ঞান হারাবে ।তুমি কি সত্যি আমাকে দেখে অবাক হবে মুগ্ধ নয়নে দেখবে আমাকে।আমার এ সাজ শুধু তোমার জন্য ।আজ থেকে আমরা দুজন এক হয়ে যাব নীল পুরুষ ।কিন্তু কেন এতো ভয় করছে।তুমি কেন এতো দেরী করছো নীল পুরুষ ।তোমার নীল পরী যে আজ শুধু তোমার ই অপেক্ষা তে আছে।
এসব ভাবতে ভাবতে হঠাত্ সাওদা র প্রবেশ
–আপু
–হুম বল।আশফি রা এসেছে
–না আপু।দেড়টা বাজে ।আশফি ভাইয়া র নাম্বার ওনার মা বাবা বোন সকলের নাম্বার বন্ধ
নীলিকা র মনে এক অজানা ভয় ঢুকে গেল।বুকটা কেঁপে উঠলো
হঠাত্ নিচে আওয়াজ হলো।বেশ চেঁচামেচির
–সাওদা কি হয়েছে রে
–জানিনা তো।চল দেখি
–চল
সাওদা আর নীলিকা নিচে গিয়ে দেখে আত্মীয় স্বজন সবাই মুখ চাওয়া চাওয়ি করছে।নীলিকা র বাবা তার চশমা খুলে মাথায় হাত দিয়ে সোফাতে বসে আছেন ।আর পাশে নীলিকা র মা কাঁদছেন ।আর স্বামী কে সান্ত্বনা দিচ্ছে ন
— মা কি হয়েছে
নীলিকা র প্রশ্ন শুনে ঘর ভরতি মানুষ ওর দিকে তাকালো
এমন সময় আবির নীলিকা র সামনে আসলো
–আমি বলছি আপু
–আরে আবির তুই
–হ্যাঁ রে সাওদা।তোকে সেদিন বলেছিলাম না আশফি ভাইয়া দের বাড়ি তে কোন বিয়ে হচ্ছে না
–মানে টা কী।তাহলে আপুর বিয়ে
–আশফি ভাইয়া আর ওনার ফ্যামিলি মিলে ওনাকে এয়ারপোর্ট এ এগিয়ে দিতে গেছে
কথা টা শুনে নীলিকা র যেন পা থেকে মাটি সরে যাচ্ছে
–এই আবির তুমি কি ভুলভাল কথা বলছো
–আপু সত্যি বলছি আমি।সাওদা আমাকে ফোন করেছিল ঐ বাড়ি তে সবাই এতো দেরী কেন করছে সেটা দেখার জন্য ।আমি পরে গিয়ে দেখি বাড়ি তে তালা ঝুলছে।পাশের প্রতিবেশী রা বললো বারোটার দিকে আশফি ভাইয়া সবার কাছ থেকে দোআ নিয়ে রওনা হয়েছে।আজ দুইটা তে ওনার ফ্লাইট
–না এটা কি বলছো তুমি
এমন সময় নীলিকা র বাবা ও মুখ খুললেন
–আমি তোমাকে প্রথম এই বলেছিলাম মা,এই ছেলে টাকে আমার সুবিধা র মনে হয় নি।আজ দেখো স্বার্থপরের মতো তোমাকে রেখে সে ঠিকই বিদেশ চলে যাচ্ছে
নীলিকা র চোখ দিয়ে অঝোরে পানি পরছে।নীলিকা একবার ঘড়ি র দিকে তাকালো।দুইটা বাজতে এখনো পঁচিশ মিনিট।নীলিকা কে যেতে হবে তার প্রশ্ন এর উওর নিতে
হঠাত্ বৌ সাজ নিয়ে নীলিকা দৌড়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেল
–নীলি নীলি মা,,,,সাওদা শিগগিরই দেখ ও কোথায় যাচ্ছে
এদিকে নীলিকা তাড়াতাড়ি রাস্তায় এসে অটো নিল
–মামা এয়ারপোর্ট এ যাবেন।মামা দ্রুত চলুন।দেরী হয়ে যাবে অনেক
এদিকে সাওদা নীলিকা কে খুজতে এসে নিজেও আরেকটা অটো নিয়ে নীলিকা কে ফলো করতে লাগলো।আর ওর বাবা মা আর আবির পেছনে আসছে
গুনে গুনে সাত মিনিট বাকি
নীলিকা এয়ারপোর্ট এ এসে পৌছালো।নীলিকা ভাড়া না দিয়ে ই চলে যাচ্ছে ।এদিকে ড্রাইভার তাকে ডাকছে সেদিকে হুশ নেই
–আপা আপা আমার ভাড়া
–আমি দিচ্ছি
সাওদা ভাড়া মিটিয়ে নীলিকা র পিছু নিল
এয়ারপোর্ট এ ঢুকতে আরেক ঝামেলা ।পুলিশ এসে সামনে দাঁড়ালো ।আসলেই বিপদের সময় বিপদের পর বিপদ লেগেই থাকে
নীলিকা এক প্রকার টেনে হিচড়ে সবার থেকে নিজেকে ছারিয়ে ভেতরে ঢুকে গেলো।এদিকে সাওদা এসে পুলিশ কে সব খুলে বলছে
সবাই এক প্রকার অবাক চোখে তাকিয়ে আছে নীলিকা র দিকে।তাকাবে নাই বা কেন।এমন বৌ সাজে এয়ারপোর্ট এ কেউ ঢোকে নাকি
সবাই এসব বলাবলি করছে।আর নীলিকা র ভেজা চোখ দুটো শুধু খুঁজছে আশফি কে
এদিকে
আশফি বাবা মায়ের সাথে শেষ বার কোলাকুলি করছে ।আর কতো দিন পর দেখা হবে কারোর জানা নেই
হঠাত্ পাশ থেকে কেউ বলে উঠলো
—আরে এখানে এরকম নতুন বৌ সাজে মেয়ে টা কি করছে
আশফি বাবা কে ছেড়ে সামনে তাকিয়ে অবাক ।আর এদিকে নীলিকা র চোখ ও যায় আশফির দিকে।লাগেজ নিয়ে সেজেগুজে আশফি তার পরিবারের সাথে দাঁড়িয়ে আছে
আশফি র চোখ যেন থমকে গেল।সে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে নীলিকা র দিকে
এদিকে
মাইশা ওর বাবা মা সব তো প্রায় অপ্রস্তুত হয়ে গেল
–এই মেয়ে এখানে কি করছে
–বাবা এই মেয়ে কে সরাতে হবে।নইলে দেখবে ভাইয়া আর দেশ ছারতে চাইবে না
আশফি র মা তাড়াতাড়ি ছেলের কাছে গেলেন
–আশফি বাবা কি দেখছিস দাঁড়িয়ে ।তোর দেরী হয়ে যাচ্ছে ।শিগগিরই যা।প্লেন ছেড়ে দেবে তো
এমন সময় নীলিকা আশফি র দিকে এগিয়ে আসে।নীলিকা কে আটকাতে মাইশা পথ আগলে দাঁড়িয়ে পরে
–দেখো নীলি আপু আমার ভাইয়া তার মেধা তার যোগ্যতা দিয়ে এতো কিছু পেয়েছে।তুমি এখন আমার ভাইয়া র জীবন নষ্ট করতে এসো না।বেরিয়ে যাও এখান থেকে
মাইশা র কথা বলতে দেরী হঠাত্ ঠাস করে চড় পরলো মাইশা র গালে ।মাইশা মুখে হাত দিয়ে সামনে তাকিয়ে দেখে সাওদা
–আপু তুই যা।তোর জীবন নষ্ট করার অধিকার কারোর নেই।আমি এদের দেখছি
নীলিকা আশফি র দিকে এগিয়ে গেল
সাওদা আরো দুটো থাপ্পড় দিল মাইশা র গালে
–যোগ্যতা ।ছোট লোক জোচ্চোর ঠকবাজ সব।তোদের মতো লোকের কাছে আমার বোনকে তুলে দিতে চাওয়া টাই ভুল ছিল
–সাওদা তোমার সাহস কম না
–থাপ্পড় কি আর কয়েকটা খাবি।এখন পুলিশ ডেকে তোদের পুরো পরিবার কে ধরাবো দাঁড়া
এদিকে নীলিকা আশফির মুখোমুখি গিয়ে দাঁড়িয়ে ছে।আশফি মাথা নিচু করলো নীলিকা কে দেখে
–তুমি এখানে কেন আশফি?দুপুর গড়াতে চললো বিয়ে র দেরী হয়ে যাচ্ছে ।চলো
খুব শান্ত গলাতে কথা টা বলে নীলিকা আশফি র হাত ধরলো
–চলো
আশফি নীলিকা র হাত ছারিয়ে নিল
–ক্ষমা করে দিও নীল পরী।আমি নিরুপায় ।আমাকে যেতে হবে
–কিসের নিরুপায় তুই।হ্যাঁ ।আগে মনে ছিল না।তাহলে কেন সেদিন ফোন করে নাটক করলি ।বললি আমাকে ছেড়ে থাকতে পারবি না।বল
নীলিকা আশফি র কলার ধরে কাঁদতে কাঁদতে কথা গুলো বললো ।নীলিকা র কান্না দেখে আশফির ও চোখে পানি চলে এলো
–তোমার বাবা বলেছিল তোমাকে বিয়ে না করলে পুলিশ কেস দেবেন।আর তাছাড়া আমার ও আত্মসম্মান আছে।বেকার হয়ে আজীবন তোমার ঘরজামাই থাকার ইচ্ছে আমার নেই
–আত্মসম্মান ।এই জানোয়ার আমার আত্মসম্মান নেই।পুরো বাড়ি ভরতি মানুষ এর সামনে আমার আমার পরিবার কে অপমান করার অধিকার তোকে কে দিয়ে ছে বল
–ক্ষমা করে দেও।তবু আমাকে ভুলে যেও না নীল পরী।তুমি ভুলে গেলে আমি কোথায় যাব।একদিন এর কষ্ট এর জন্য আমার এতোদিন এর ভালোবাসা টাকে ভুলে যেও না।অপেক্ষা করো আমার ।আমি নিরুপায়
আশফি নীলিকা কে জরিয়ে ধরলো।এদিকে নীলিকা ও রাগ ভুলে গেল
–আশফি আশফি প্লিজ আমাকে ছেড়ে যেও না ।চলো আমরা সব শুরু করি।ভুলে যাও এসব।কথা দিচ্ছি কখনো তিন বেলা না খেয়ে থাকলে ও তোমার কাছে কিছু চাইবো না।তুমি থাকলেই চলবে আমার ।আশফি প্লিজ আমাকে ছেড়ে যেও না।আমি মরে যাব
–আমি ও মরে যাব তোমাকে ছাড়া ।তুমি শুধু আমার থেকো নীল পরী।ফিরে আসবো একদিন এসে সব ঠিক করে দেব।তুমি আমার অপেক্ষায় থাকবে তো
নীলিকা র কথার প্রেক্ষিতে আশফি র এমন প্রশ্ন নীলিকা মোটেও আশা করে নি
এদিকে
মাইকে এনাউন্স হচ্ছে
–আর পাঁচ মিনিট পর ফ্লাইট ছেড়ে দেবে ।সকল যাত্রী কে আসন গ্রহণ করতে বলা হচ্ছে
আশফি র মা এসে নীলিকা কে আশফি র থেকে ছারিয়ে গালি থাপ্পড় দিয়ে ধাক্কা মেরে ফ্লোরে ফেলে দিলেন
–আআআ আ
পরে গিয়ে নীলিকা র হাতের কাচের চুড়ি গুলো ভেঙে হাতে ঢুকে গেছে।রক্ত ঝরছে।নীলিকা ব্যথা পেয়ে রক্তাক্ত হাত নিয়ে আশফির দিকে তাকালো।সাওদা এসে নীলিকা কে ধরলো
আশেপাশের সবাই সিনেমা দেখার মতো তাকিয়ে আছে
–অপয়া মেয়ে ।সব সময় আমার ছেলেটার সুখের বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়
–মাআঋঋ
–আর একটা কথা বলবি না।তুই যা তোর প্লেন ছেড়ে দেবে ।তুই যদি না যাস তো আমার মরা মুখ দেখবি আশফি
–মাআঋঋ
আশফি র মা বেশ নাটকের সুরে কথাটা বললেন ।এদিকে নীলিকা কে কাঁদতে দেখে ওর হাতে রক্ত থেকে আশফি র বুকেও যেন রক্ত ক্ষরন হচ্ছে ।আশফি মন চাইছে সব কিছু ছেড়ে তার নীল পরিকে নিয়ে থাকতে
কিন্তু আশফি নিরুপায় ।মায়ের আদেশ
চোখে পানি নিয়ে আশফি নীলিকা র দিকে তাকালো।এদিকে নীলিকা ও আশা নিয়ে বসে আছে এই অবস্থা তে তার আশফি তাকে ফেলে যাবে না
–আশফি আমাকে ছেড়ে যেও না আশফিইইই
আশফি আর কোন দিক না তাকিয়ে বুকে পাথর চাপা দিয়ে লাগেজ টা হাতে নিল
–ভালো থেকো নীল পরী।ক্ষমা করে দিও।তুমি আমার থেকো।শুধু অপেক্ষা করো একটু ।আমি আসবো
বলেই আশফি হাঁটা শুরু করলো
–আশফিইইই আশফি আশফি আমি মরে যাব আশফি।আশফি ইইই
নীলিকা র আ হাজারি আশফির কান পর্যন্ত পৌছালেও আশফি থামলো না
কিছুক্ষণ পর
প্লেন টেক অফ করছে
ভেজা চোখে চোখ বুজে নীলিকা র বৌ সাজের মুখ টা শেষ বারের মতো মনে করছে আশফি
—
কতো বার ভেবেছী
আমার প্রতি স্বপ্ন এ তোমাকে দেখেছি
তুমি বধু সেজে দাঁড়িয়ে আছো
আমার দোর গোড়ায়
কিন্তু কে জানতো
হবে আজ নিয়তি
কিন্তু দেখেও হবে না দেখার সৌভাগ্য
তুমি আমার থেকো
তোমার প্রতি দিনের শুরু তে আমাকে রেখো
তোমার অপেক্ষায় আমি রোজ থাকবো
তুমি থেকো
প্রিয়তমা
ভালো থেকো নীল পরী “””
বর্তমানে
সেইদিন এর নীলিকা র সেই কান্না র আওয়াজ আজ ও আশফির কানে বাজে।আশফি কে ঘুমোতে দেয় না
আশফি অতীত এর গল্প বলতে বলতে কেঁদে দিল
আশফি নীলিকা র দিকে তাকিয়ে দেখে নীলিকা র চোখে কোন পানি নেই।মুখে এক তৃপ্তি র হাসি।ভাবটা এমন যে সে জেন কোন রূপকথা শুনছে
–আমাকে ক্ষমা করে দেও নীল পরী ।চলো সব শুরু করি আবার ।কথা দিচ্ছি আর কাঁদতে দেব না
নীলিকা আশফি র কথা শুনে হাসলো
–জানো আশফি সেদিন তুমি হয়তো আমাদের গল্প এর সমাপ্তি টেনেছিলে।কিন্তু তুমি নিজে ও জানো না ঐ টায় ছিল আমার সূচনা
–মানে
–চলো তোমাকে এবার আরেকটা গল্প বলি।আমার গল্প ।যেটা সমাপ্তি থেকে শুরু ।আমার দ্বিতীয় হয়েও প্রথম প্রেম এর গল্প
নীলিকা বলা শুরু করলো
এদিকে
আহসান গাড়ি চালাচ্ছে ।আর বার বার শার্টে র হাতা দিয়ে চোখ মুছছে ।চোখের পানি যেন বাধ মানছে না
আহসান আর সইতে পারছে না
প্রতি বিবাহবার্ষিকী তে সে তার হলদে পাখিকে সারপ্রাইজ দেয়।আজ ও তার ব্যতিক্রম নয়
সে কোন রকম না জানি এ তার হলদে পাখিকে কে আজ তার ভালোবাসার মানুষ এর কাছে তুলে দিয়েছে
আহসান চোখ বুজছে ।কাঁদছে ।আর অতীত টাকে ভাবছে
কেমন ছিল আহসান এর ভালোবাসা র গল্প
চলবে———
#প্রেম_ছোয়ালে
Part:14
Writer:Suvhan Årag (ছদ্মনাম)
(ভেবেছিলাম লেখালেখি ছেড়ে দেব।কিন্তু অনেকে বললো ইসলামিক গল্প লিখুন আপনি।এতে আপনার পাপ হবে না।বরং মানুষের উপকার করতে পারবেন।তাই ইসলামিক ভাবেই শেষ করবো সব গল্প ।শুধু মুসলিম না সকল ধর্ম এর পাঠক দের জন্য পারলে ভালো কিছু দেওয়া র চেষ্টা করবো।আর যেহেতু প্রথম আল্লাহ্ র রহমতে মোটামুটি কিছু আয়াত জানি।কিন্তু সূরার নাম ইত্যাদি জানিনা।মনে থাকে না।তাই প্রথম প্রথম সেগুলো ইনডিরেক্ট লি উল্লেখ করে লিখছি।ভুল ত্রুটি হলে ক্ষমা করবেন।পারলে আমার পেজে একটু নক দিয়ে ধরিয়ে দেবেন।আমি মানুষ ।ভুল হওয়া স্বাভাবিক)
আহসান চোখের পানি ফেলছে ড্রাইভিং করছে
আর ডুব দিচ্ছে অতীতে
নীলিকা র আর আহসান এর বিয়ে র ঠিক চার বছর আগে
একদিন সকালে আমান সাহেব তার ছেলে আহসান আর স্ত্রী কে রেডি হতে বললেন
–বাবা প্লিজ আমি কোথাও যাব না।আমার চাকরির পড়া পড়তে হবে
–বাদ দাও।অনেক পরেছো।এখনো বয়স পরে আছে।চাকরির সময় পালিয়ে যাচ্ছে না
–কিন্তু বাবা,,,
–তুমি জানো আমি একজন সামান্য ডাক্তার ।কিন্তু আজকে যাদের বাড়ি তে যাব আল্লাহ্ র রহমতে সেই লোকটার সাহায্য র জন্য আজ আমি এখানে।তুমি জানো তোমার দাদু কতো গরীব ছিলেন।আমার মেডিকেল পড়াটা হতো না যদি না সেদিন উনি টাকাটা ধার দিতেন।তুমি জানো তিনি পরে তা ফেরত নেন নি।উনি তোমার দাদুর খুব ভালো বন্ধু ।কখনো ওনার ঋন শোধ করা সম্ভব না।আজ উনি ওনার ছেলের বিয়ে তে দাওয়াত দিয়ে ছেন।আমাদের উচিত যাওয়া
মনে রেখো—–“””তুমি যদি অতীতকে ভুলে বর্তমান নিয়ে থাকতে চাও তো তুমি ভুল,তুমি যদি অতীত কে চোখের পাতায় রেখে বর্তমানে র পথে হাঁটো দেখবে তুমি সঠিক দিকে যাচ্ছ।অতীত আমাদের অনেক কিছু শিক্ষা দেয়।খারাপ হোক বা ভালো অতীত কখনো ভুলতে নেই”””
আহসান অবশেষে তার বাবার কথা শুনে চলে গেল সেই দূর গ্রামে
আল্লাহ্ প্রত্যেকটি স্ত্রী কে সৃষ্টি করেছেন তার স্বামীর বুকের বাম পাজরের থেকে।এটা আল্লাহ্ র ইচ্ছে ।কখনো না কখনো তারা মিলবে ই
হয়তো এই কারনেই সেদিন নিজের অজান্তেই আহসান তার বাবার কথাতে রাজী হয়েছিল
বিয়ে বাড়ি তে সবাই যখন ব্যস্ত আহসান তখন একটু বেরিয়েছিল গ্রামের পরিবেশ দেখতে
মাঠের মধ্যে দিয়ে হাঁটছে আহসান ।এই প্রকৃতি র বাতাসে নিশ্বাস ছেড়ে যে শান্তি শহরের দামী এসিতে শুয়ে ও সেই শান্তি নেই
“””আমি হয়েছি পাগল
আমি উন্মাদ
তোমার বদ্ধ খাঁচা থেকে মুক্ত করে দেও আমায়
আমি ছুটে যাব
পায়ে হেঁটে
সেই অজ পাড়া গায়ে
আমি শুধু চাই
হোক না সময় সংক্ষিপ্ত
আমি শুধু শ্বাস নেব
একটু বুক ভরে
বসে রব আনমনে
কোন বটের ছায়া তলে””‘
চোখ বুজে গভীর নিশ্বাস নিতে নিতে আহসান বুলি আওড়াছ্ছিল
হঠাত্
কিছু চেঁচামেচির আওয়াজ এ আহসান চোখ খুলে
সামনে তাকিয়ে দেখে একটা বকুল ফুলের গাছের নিচে কিছু ছোট ছেলে মেয়ে র সাথে একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে।সবাই ফুল তুলে সেটা নিয়ে কাড়াকাড়ি করছে
আহসান এর চোখ আটকে যায় সেই মেয়ে র দিকে।পরনে তার ছিল হলুদ রঙের কামিজ।আর রূপের বর্ণনা না হয় নাই দিলাম
আহসান শুধু সামনে তা কিয়েই আছে।অনার্স মাস্টার্স সম্পন্ন করেছে কিন্তু আজ অবধি কোন মেয়ে র দিকে সে ওভাবে তাকায়নি।সকলকে বোনের নজরে দেখেছে।
ইসলাম এ পরনারী কে দেখা হারাম।এই আয়াত আহসান ভালোই রপ্ত করেছিল
দ্রুত আহসান চোখ সরিয়ে নেয়।এটাই ভাবে কি করছে সে।চোখের যিনা করে ফেললো না তো।আহসান তওবা করতে থাকে
হঠাত্ আহসান এর চোখ যায় গাছের ডালে বসে থাকা কালো হলুদ মিশ্রণে র সোনা বৌ পাখির দিকে।কেন জানি হলদে পাখির মধ্যে দেখতে পায় সে নীলিকা র প্রতিচ্ছবি ।মুখ থেকে অজান্তেই বেরিয়ে আসে হলদেপাখি
সেদিন বিয়ে বাড়ি তে ফিরে আহসান রাতে ঘুমাতে পারে নি।বারবার ভেসে আসছিল নীলিকা র মুখ
রাতে তাহাজ্জুদ নামাজে বসে সে।আল্লাহ্ র কাছে একটা ই প্রার্থনা করে আল্লাহ্ যেন তাকে ক্ষমা করেন
পরের দিন সকালে হাত মুখ ধুতে গিয়ে আহসান সামনে তাকিয়ে দেখে সেই মেয়ে টি গালে ব্রাশ দিয়ে দাঁত মাজতে মাজতে কল পারের দিকে আসছে
আশে পাশের লোকের কথাতে জানতে পারে ঐ মেয়ে টি ওরা দাদু র বন্ধু র কোন দুঃসম্পকের নাতনি।বিয়ে উপলক্ষে তারাও এখানে এসেছে
আহসান আর ভেবে পারেনা।বারবার ঐ মেয়ে র দিকে তার চোখ অজান্তেই চলে যাচ্ছে ।তবে কি শয়তান তাকে এভাবে ভুল পথে নেওয়া র চেষ্টা করছে
আহসান কিছু ভেবে পায় না
–আহসান
–,,,,,
–আহসান
–হ্যাঁ মা বলো
–কাল আমাদের যেতে হবে
–ও
–তোর কি কিছু হয়েছে।কাল থেকে দেখছি কেমন উদাস
মা বাবা র কাছে কোন কিছুই লুকায়নি আহসান ।সব বলে দেয় তার মাকে
–মা আমি শয়তান এর প্ররোচনায় পরছি।অনেক পাপ করে ফেলছি
–মেয়ে টা কী দেখলে চিনতে পারবি
পরে বিয়ে বাড়ি তেই আবার নীলিকা কে দেখে আহসান এর মা ।তার বেশ পছন্দ হয় মেয়ে টিকে
–আহসান তোকে একটা কথা বলি
–হ্যাঁ
–তোর বয়স হচ্ছে ।চাকরির পর তো বিয়ে করতেই হবে।আমার মেয়ে টিকে বেশ পছন্দ হয়েছে
–কিন্তু মা,,,,
–কোন কিন্তু নৃ।আমি তোর বাবা র সাথে কথা বলে আসছি
আহসান এর মা চলে যায় ।সে দাঁড়িয়ে ভাবে নীলিকা কে দেখার পর থেকেই তার মনে এক অজানা অনুভূতি জাগ্রত হয়েছে।
—–তবে কি মেয়ে টিকে আমি,,,,,,,মা ঠিক বলেছে।ওর পরিবার যদি রাজী হয় তবে তাই হোক।বৈধ ভাবে পাব আমার ভালোবাসা
পরের দিন সবাই চলে গেলেও আহসান এর পরিবার আর নীলিকা র পরিবার থেকে যায় ।কারন হঠাত্ অবরোধ ঘোষণা ।ঢাকা অবধি পৌছাবে কি ভাবে
নীলিকা এদিকে ঘুম এ বে ভোর
?