নুর পর্ব ২৫+২৬

#নূর💔
Writer-Moon Hossain
[Shabnaj Hossain Moon]
Part-25-26
মেহেরাব মোমের একটা হাত নিয়ে বসে আছে ঘন্টাখানেক ধরে। মনে হচ্ছে সারা জীবন এই হাতটা ধরে বসে থাকতে।
মোমের দুই হাতে মন ভরে চুমু দিয়ে নিজের বুকে মোমের হাতগুলোর স্পর্শ ছোঁয়াল।
মোম কে সে অবশেষে বোঝাতে পেরেছে মেহেরাব তার স্বামী।
মোম নিজের কথা গুলো পর্যালোচনা করতে লাগলো।
হঠাৎ তার কি হলো যে সে স্বীকার করলো মেহেরাব তার স্বামী? নিজের মনে নিজেই উত্তর খুঁজছে সে।
কথা গুলো বলার পর
মনটা হালকা লাগছে। প্রশান্তিতে আড়ষ্ট সে। কথা গুলো যেন সে মন থেকে বলেছে এমন মনে হচ্ছে।
মনে মনে সে কি কোন ভাবে মেহেরাব কে অনুভব করছে?
গালে মেহেরাবের গরম স্পর্শ পেয়ে চোখ মেলে তাকালো।
-কি ভাবছো সুইটহার্ট?
-আপনি এই মুহুর্তে কি ভাবছেন?
-কোন বিষয়ে?
মোম ইতস্তত করে বলল- ঐ যে আমার এক্স হাসব্যান্ড।
এক্সের সাথে হাসব্যান্ড ওয়ার্ডটা শুনে মেহেরাবের মনে হলো তার কানে কেউ গরম গলিত লোহা ঢেলে দিয়েছে।
মেহেরাব রাগান্বিত ভাবে বলল- হাসব্যান্ড কথাটা আসছে কোথা থেকে?
তোমার একটাই হাসব্যান্ড সে হলো আমি। হ্যাঁ আমি তোমার লাইফে লেট করে এন্ট্রি নিয়েছি। এজন্য একটা ভুল হয়েছে প্রকৃতির দ্বারা। প্রকৃতি তাকে আমার অবর্তমানে তোমার সামনে উপস্থাপন করে দিয়েছিল।
ভুল প্রকৃতির তোমার না। কোন ভাবেই সে তোমার কেউ না। আমি তোমার সব। এই জীবনে মৃত্যুর আগপর্যন্ত আমি তোমার হাসব্যান্ড এবং তুমি আমার ওয়াইফ। মৃত্যুর পর আবার আমরা মিলিত হব যদি আমাদের মনের মিল থাকে। বেহেশতে নাকি মনের সকল আশা পূরণ করা হয় মুখ ফুটে বলতেও হয়না। আমার মনে সর্বদা তুমি ছিলে, তুমি রবে। আল্লাহ তায়ালা অনন্ত কালের জন্য তোমাকে আমার কাছে এনে দেবে। ইনশাআল্লাহ!
আমাদের দুজনের মধ্যে পরকালের বেহেশতে কেউ থাকবে না। এমনকি ইহকালের এই জীবনেও কেউ থাকবে না কারণ আমি কাউকে ঢুকতে দেব না। ইনশাআল্লাহ!
মোম এক মনে মেহেরাবের কথা শুনে যাচ্ছে।
মেহেরাব মোমের গালে দুই হাত রেখে অস্ফুটে স্বরে বলল- ঐ লোকটা শুধু লোকটা। ও আমাদের কেউ নয়। আমরা ওর কেউ নই। কথা টা ভালো ভাবে বুঝতে হবে তোমাকে।
আমি তোমার এবং তুমি শুধু আমার। এই মেহেরাবের তুমি।
কথাগুলো তোমার মস্তিষ্কে ও হৃদয়ে গেঁথে নাও সুইটহার্ট!
মোম দীর্ঘনিশ্বাস ফেললো।
মেহেরাব চট করেই নিজেকে সামলে নিলো। যেন কিছুই হয়নি এতোক্ষণ।
-অনেক ক্ষিদে পেয়েছে আমার।ক্ষিদের জন্য হাত-পা নাড়াতে পাচ্ছিনা। কখন যেন তোমাকে খেয়ে ফেলি হা! হা!হা!।
আমাকে খাইয়ে দাও তো সুইটহার্ট। তোমার হাতে অমৃতের স্বাদ।
মেহেরাব হাসিমাখা মুখ নিয়ে মোমের সাথে কথা বলছে আর প্লেটে চিকেন-পাস্তা সার্ভ করছে।গ্লাসে কোমল পানীয় ঢালছে।
মোম ভেবেছিল আসলাম কে দেখে মেহেরাব ভয়ংকর রিয়েক্ট করবে। কিন্তু মেহেরাব এমন কিছুই করলো না।
মোম আসলামের বিষয়টি তোলার আগে মেহেরাব ভালোবাসার দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল শুধু মোমের দিকে।
আসলাম কে সে যেন দেখেনি এমন ভাব করলো।
মেহেরাব সব রকম সিচুয়েশনে নিজেকে মানিয়ে নিতে জানে। রাগের সিচুয়েশনে রাগ দেখাবে, আদরযত্নের সময় আদরযত্ন করবে। নিমিষেই নিজেকে কন্ট্রোল করতে জানে।
.
.
মেহেরাব নিজের জীবন কে আল্লাহর কাছে সমর্পণ করেছে। মুসলিম মানেই আল্লাহর কাছে নিজের ইচ্ছে জীবন ইচ্ছে গুলো সমর্পণ করা। মেহেরাব চেষ্টা করে সব সময় ইসলামিক কর্মকান্ডে নিজেকে জরিয়ে রাখতে। যাতে মহান আল্লাহ কে অধীক স্বরণে রাখা যায়। ইবলিশের কুমন্ত্রণা থেকে রক্ষা পাওয়া যায়, পাপ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। মেহেরাবের কখনো মনে হয়না সে ধর্মে বিশ্বাসী ছিলো না। নাস্তিক ছিলো। তার মনে হয় আল্লাহ তায়ালা তার সাথে সব সময় ছিলো। মনে হয় আল্লাহ তায়ালার এবাদত সে জন্মলগ্ন থেকেই করে এসেছে। মেহেরাব কঠোর পরিশ্রম করে নিজেকে আল্লাহর নেক বান্দা হিসেবে প্রমাণ করতে চায় আল্লাহর কাছে।
মেহেরাব নিজেকে একজন পরিপূর্ণ মুসলিম হিসেবে গড়ে তোলার জন্য হিদায়ত,তাকওয়ার জন্য আল্লাহর দরবারে ফরিয়াদ জানায়। পরিপূর্ণ মুসলিম তাকে বলে যার কাছে আল্লাহর হিদায়ত, তাকওয়া রয়েছে।
আল্লাহর কাছে হিদায়াত,তাকওয়ার জন্য দোয়াঃ

اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ الْهُدَى وَالتُّقَى وَالْعَفَافَ وَالْغِنَى ‏”‏ ‏.‏

উচ্চারণ ঃ আল্লাহুম্মা ইন্নি আস আলুকাল হুদা ওয়াত – তুকা ওয়াল আফাফা ওয়াল গিনা।

‘আবদুল্লাহ ইবনু মাস’উদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:

নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এ দু’আ করতেন, “হে আল্লাহ্‌! তোমার কাছে আমি হিদায়াত, তাকওয়া , চরিত্রের নির্মলতা ও আত্মনির্ভরশীলতা প্রার্থনা করি”

জামে’ আত-তিরমিজি, হাদিস নং ৩৪৮৯

আসলাম বসে আছে লেকের কাছে। আচ্ছা সে কি সপ্ন দেখছে? হতে পারে।
মোমের বিয়ে হয়েছে, স্বামীর সাথে তার পরিচয় হয়েছে। স্বামী শব্দটা সে কয়েকবার উচ্চারণ করলো।
এতোদিন যার জন্য বুকে একটু একটু ভালোবাসা জমা রেখেছিল সে-সব এক পলকে মিথ্যে হয়ে গেলো?
বুকে খুব ব্যাথা হচ্ছে, উফফ। তার ক্ষমতার রাজত্ব দিয়ে ব্যাথাটা সারানো যাবেনা। কখনো না।
মোমের স্বামী, মোমের স্বামী কথা গুলো তার মগজে বিঁধে যাচ্ছে। তাহলে সে কে? মোমের কে সে?
.
মোম বেডে বসে আছে।
মোমের মনে কি চলছে সে নিজেও জানেনা।
আসলাম এতোদিন পর তার সামনে দুঃসপ্নে মতো এসেছে।
আসলাম নামটা সে মনে করতে চায়না। বালিকা কিশোরী মোম আর এখনকার তরুণী মোমের মধ্যে আকাশ পাতাল তফাৎ।
সে ছোট বেলায় ভুল করেছে। ভালোবাসা কি তার সঠিক অর্থ সে তখন জানতো না। তবে তামা কে সে হিরে ভেবে বিশ্বাস করেছে। ভরসা রেখেছিলো। আসলাম সময় মতো নিজের আসল রুপ দেখিয়েছে। ভেঙে গুড়িয়ে দিয়েছে তার বিশ্বাস, ভরসা। আসলাম তার সামনে ফাঁদ পেতে রেখেছিলো।মোহের ঝালে আটকাতে চেয়েছিল।
মোম এতোটাই শকড হয়েছিল মোহ থেকে বেরিয়ে বাস্তবতা দেখে তা সে কল্পনাও করতে চায়না।
আল্লাহর রহমতে আর পরিবারের ভালোবাসায় নিজের আবেগ গুলো কন্ট্রোল করতে শিখেছে মোম সে যাত্রায়। তার জন্য সেই সময়টা আল্লাহর একটা পরিক্ষা ছিলো।
প্রথমে কষ্ট হতো মেনে নিতে কেউ তার ভরসা, বিশ্বাস, সপ্ন ভেঙেছে। বয়স যখন বাড়তে থাকে তখন কষ্ট কমতে থাকে। একপর্যায়ে কষ্টটা রাগে, ক্ষোভে পরিণত হয়। মোম যত বড় হতে শুরু করলো ততোই কঠোর, আত্মসংযমী, আত্মপ্রত্যয়ী নিজের চরিত্রে ধারণ করলো।
আসলাম কে সে ঘৃণা করে। প্রচন্ড ঘৃণা।
মোম কে মেহেরাব ড্রপ করে দিলো ইউনিভার্সিটি তে।
নামার সময় হাত ধরে বলেছিল- আমার জন্য ওয়েট করবে। তোমাকে পিক করবো।
-ওকে।
-আর শোন, তোমার কি দুপুরে না খেয়ে থাকতে খুব কষ্ট হবে?
-কেন? আমার কাজ আছে। ফিরতে বিকেল হবে।
আমিও দুপুরে খাব না।
একসাথে বিকেলে লাঞ্চ করবো আমরা।
-ওআচ্ছা।
-সমুদ্রের উপর রেস্তোরাঁয় তুমি আমি নির্মল হাওয়ায় লাঞ্চ করবো।
রাজি আছো?
-আমার দুপুরে না খেয়ে থাকতে কষ্ট হবে না।
একটু লেট করে লাঞ্চ করলে কিছু হবে না।
-উওর টা শুনে খুশি হলাম।
মোম সামনের দিকে হাঁটা শুরু করলে মেহেরাব আবার ডেকে উঠে।
-সুইটহার্ট?
মোম হাত দিয়ে ইশারা করে বলে- হোয়াট?
-তুমি আমাকে অনেক শান্তি দিয়েছো। এখন আমি শান্তিতে ঘুমুতে পারি।
আমার এখন কোন কষ্ট নেই।
মেহেরাব আঙুল ঠোঁটে ছুঁয়ে মোমের দিকে ইশারা করে বললো – আই লাভ ইউ সুইটহার্ট! আই লাভ ইউ ভেরি মাচ। আই কান্ট লিভ ইউদাউথ ইউ!
মোম বিস্ময় কাটিয়ে অল্প হাত নাড়িয়ে বিধায় জানালো মেহেরাব কে।
মেহেরাব মোমের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইল যতক্ষণ পর্যন্ত মোম কে দেখা যাচ্ছে ততক্ষণ!
ক্লাসের কিছু মিনিট বাকি! মোম ডিপার্টমেন্টের ফাঁকা জায়গায় সিঁড়িতে বসে রইলে।
মেহেরাব তাকে বড্ড ভাবাচ্ছে। এতোদিন পর্যন্ত মেহেরাব কে সে অবজার্ভ করেনি। মেহেরাব কে নিয়ে বিন্দু মাত্র ভাবেনি। তবে কিছুদিন থেকে মেহেরাব কে সে অবজার্ভ করছে। তাকে নিয়ে ভাবছে।
মেহেরাবের কাছে মোমের সকল রোগের ঔষধ রয়েছে এমন মনে হচ্ছে।মনে হচ্ছে মেহেরাব ভরসার জায়গা, বিশ্বাসের জায়গা।মেহেরাব সে মানুষ যার আগমন বুঝিয়ে দেয় মোম নিরাপদ।
মেহেরাব ছোটদের মতো অতি দুষ্টু তবে পাপী নয়। শিশুদের মতো অবুঝ। একটু যত্ন নিলেই মেহেরাব আল্লাহর রহমতে একজন পরিপূর্ণ মুসলিমে পরিণত হবে।
মোম পেছন থেকে কারও নিশ্বাসের আওয়াজ পেলো। মোমের বসে থাকা জায়গা টা একদম নির্জন৷
অজানা এক আতঙ্কে মোম কে গ্রাস করলো। যদিও সে সাহসী।
মোমের সামনে আসলাম এসে দাঁড়ালো।
-আসসালামু আলাইকুম।
মোম ভ্যানিটি ব্যাগ নিয়ে হাঁটা শুরু করলো।
আসলামও পেছন পেছন
ছুটছে।
-মোম একটু দাঁড়াও। কথা আছে।
মোম যতটা দ্রুত সম্ভব ততটা দ্রুত হাঁটছে।
আসলাম উচ্চস্বরে বলছে-দাড়াও দাড়াও। কথা আছে। স্ট্যান্ডআপ।
মোম সোজা ক্লাসে ঢুকে গেলো।
আসলামও ক্লাসে ঢুকলো।
মোম মাঝখানে অনেক গুলো ছেলে মেয়েদের সঙ্গে বসে আছে।
আসলাম ক্লাসের বাহিরে চলে গেলো কিছুক্ষণ দাড়িয়ে থেকে।
মোম হাফ ছেড়ে বাঁচল।
মনে হচ্ছিল কোন হায়েনা তার পেছনে পড়েছিল।
দুপুরে মেহেরাব চোখ বন্ধ করে বসে আছে অফিসের ইজিচেয়ারে।
বাবার অবর্তমানে তাকে এখানকার অফিসে আসতে হচ্ছে। বসের দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে। একটানা ফাইলে কাজ করে অনেকটা ক্লান্তি এসেছে।
মোমের কথা খুব মনে পড়ছে।
ক্লান্তিকর পরিস্থিতিতে প্রিয় মানুষদের বিচ্ছেদ ভয়ংকর ভাবে ফুটে উঠে। বুকের মাঝে শূন্যতার সৃষ্টি হয়৷ মনে হয় না জানি কতকাল ধরে প্রিয়মুখটা দেখা হয়না।
ফোনে মোমের ফটো দেখে হাত বুলাতে লাগলো মেহেরাব।
কত যুদ্ধ করে মোমের এই ফটোটা মেহেরাব ফোনের ফ্রেমে ক্যামেরা বন্দি করেছে তা মেহেরাব জানে।
ফটো না তোলার জন্য মোম কত যুক্তি,কত হাদিস, কত লেকচার।
মোম কে কিছুতেই বোঝানো যাচ্ছেনা শুধু মাত্র ফোনে মোমের ফটো টা থাকবে। মোমের অবর্তমানে মোম কে সে দেখতে পায় যেন৷ একটু পর পর মোম কে তার দেখতে ইচ্ছে করেনা, বরং সারাক্ষণ দেখতে ইচ্ছে করে। মোম এখনো তৈরি না একসাথে বসবাস করার জন্য। মেহেরাব অন্যদের মতো না।জোরজবরদস্তি করবে না সে একসাথে থাকার জন্য। সে মোম কে সময় দিয়েছে।
মোম বলেছিল – যখন দেখতে ইচ্ছে করবে তখনই চলে আসবেন বা গাড়ি পাঠিয়ে দেবেন আমাকে নিতে।
মেহেরাব বলেছিল- এটা কি বললে? যখন তোমাকে দেখতে ইচ্ছে করবে তখন কিভাবে দেখব তোমাকে? আমার এপার্টমেন্ট থেকে তোমার হোস্টেলে আসতে আসতে তোমাকে না দেখতে পেয়ে হার্ট অ্যাটাক করলে তখন কি হবে?
-এইটুকু সময়ের মধ্যে আমাকে না দেখতে পেয়ে হার্ট অ্যাটাক করে ফেলবেন?
-ইয়েস। আমার যখন তোমাকে দেখতে ইচ্ছে করবে তখন দেখতে হবে তোমাকে। পরে দেখলে সেটা হবে এক্সট্রা। পরের দেখা পরের হিসেব। বর্তমানটা আসল।
-কিন্তু আপনি তো আমাকে প্রতিদিন দেখছেন। সারাদিন একই চেহেরা দেখতে আপনার ইচ্ছে করবে না।
পুরোনো হয়ে যাব আমি।
মেহেরাব মোমের হাত স্পর্শ করে চুমু খেলো।
মোমের চোখে চোখ রেখে অস্ফুটে ঘোর লাগানো কন্ঠে বলল-তুমি আমার জন্য কি তা তুমি জানো না সুইটহার্ট। কিছু কিছু বিষয়ে ভালোবাসা কখনো পুরোনো হয়না। ভালোবাসা বিভিন্ন ভাবে নতুন করে জন্ম নেয়।
-আপনি একটা পাগল।
-এনি ডাউট?
-নো।
মেহেরাব দুষ্টুমি করে বলল- আচ্ছা ধরো আমি যখন বাথটাবে বসে আছি তখন তোমাকে দেখতে ইচ্ছে করলো। তখন কি আমি টাওয়াল পড়ে-ই হোস্টলে আসব তোমার সাথে দেখা করতে?
-কখনো না।
-ধরো ঐ সিচুয়েশনে আমি কি গাড়ি পাঠাব তোমাকে নিয়ে আসতে আমার বাথটাবে।
মোমের বড় বড় চোখ গুলো আর বড় হয়ে গেলো।
মেহেরাব মোমের চিন্তা করতে করতে প্রশান্তিতে দীর্ঘশ্বাস ফেললো। দীর্ঘশ্বাস টা ছিলো ভালোলাগার। মোম অনেকটাই সহজ হয়েছে তার সাথে।তাকে ইগনোর করেনা। বেশ গুরুত্ব দিচ্ছে, অবজার্ভ করেছে। ধীরেধীরে অতীত মুছে মোমের মনে বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ দুটোই জায়গা দখল করে নেবে সে।
মোম তো অনেক আগেই মেহেরাবের হৃদয় হরণ করেছে। মনে জায়গা নিয়েছে পুরোপুরি। মেহেরাবের অস্তিত্ব এখন মোমের দখলে।
মেহেরাব এই তো সেদিন বেপরোয়া ভাবে জীবনযাপন করতো। কোন দুঃশ্চিন্তা ছিলো না তার। যা ইচ্ছে তাই করতো মুক্ত পাখির মতো।
কিন্তু এখন সে দুশ্চিন্তা করে বউয়ের জন্য। হোস্টেল ইউনিভার্সিটিতে পড়ে থাকা বউয়ের চিন্তায় মগ্ন থাকে সারাক্ষণ। ক্ষণে ক্ষণে সে দুশ্চিন্তায় ভোগে নতুন বিয়ে করা বউয়ের জন্য।
সে পুরোপুরি বন্দী মোম নামের একটা মেয়ের কাছে।
এই বন্দীও সুখের স্বাড় জীবন থেকে।
মেহেরাব মোমের ফটোতে হাত বুলাতে বুলাতে কয়েকবার নিজের ভালোবাসার প্রকাশ করলো।
অনুরোধ করলো মেহেরাবের ভালোবাসা বুঝতে।
তার ভালোবাসা গ্রহণ করতে। মেহেরাব কে সুখী করতে, তাকে ভালোবাসতে।
প্রতিউওরে মোমের বড় বড় রাগী রাগী চোখ গুলো তাকিয়ে রইলো এক দৃষ্টিতে মেহেরাবের দিকে।
সেই দৃষ্টিতে একটাই কথা-আপনি পাগল।
-ইয়েস। আই এম ম্যাড। ম্যাড ফর ইউ। ম্যাড ফর ইউর লাভ।
কবে আমার ভালোবাসা ফিল করবে বলো তো সুইটহার্ট?
মেহেরাবের ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে উঠলো।
সে মোমের ফটোতে অজস্র চুমু দিয়ে নামাজ পড়ার জন্য উঠে দাঁড়ালো।
.
মোম ক্লাস শেষ হতেই সোজা ইউনিভার্সিটি থেকে বের হতে লাগলো। আশেপাশে তাকালো না পর্যন্ত। মনে হচ্ছে সব জায়গায় আসলাম নামের আতঙ্ক বেগানা লোক।
এখুনি মোমের পিছু নেবে লোকটা।
তাকে একটুও সুযোগ দেবে না মোম।
যা ভাবা তাই। আসলাম মোম কে পিছু পিছু ডাকছে।
মেহেরাবের গাড়িতে মোম কে ঢুকতে দেখা গেলো।
আসলাম এতোক্ষণে মেহেরাব কে তেমন ভাবে ভাবেনি।। মেহেরাব কে ইচ্ছে করছে…..। নিজের রাগ কন্ট্রোল করলো আসলাম।
রেস্তোরাঁর বাহিরে দাড়িয়ে আছে আসলাম।
মোম মেহেরাব রেস্তোরাঁয়।
আসলাম কি করবে ভেবে পাচ্ছেনা।।
পর পর কয়েকদিন আসলাম মোম কে তাড়া করলো।
মোমের সাথে কথা বলার জন্য ছুটে বেড়ালো। কিন্তু কোন লাভ হয়নি৷ মোম তাকে একটুও সুযোগ দেয়নি।
আচ্ছা মোম কি তাকে এখন ভুলে গিয়েছে? অনুভব করেনা তাকে? ভালেবাসেনা তাকে?
মেহেরাব কি তাহলে একমাত্র বাঁধা তাদের মধ্যে?
মোম ডিপার্টমেন্টর পাশের সিঁড়িঘরে বসে আছে।
মোম মেহেরাবের কথা ভাবছে। ছেলেটা তাকে কনফিউজড করে তুলেছে। মেহেরাবের সাথে বর্তমান আচরণ গুলো তার মন থেকে করা। সে না চাইতেও এমন সহজ আচরণ করছে মেহেরাবের সাথ৷

মোম কারও স্পর্শ পেলো।
পেছনে ঘুরে তাকাতেই আসলাম কে দেখতে পেলো।
মোম রাগে অন্ধ প্রায়।
-হাউ ডেয়ার ইউ টাচ মি?
-হোয়াট?
তোমাকে কি টাচও করতে পারব না?
-ডোন্ট টাচ মি। দূর, দূরে থাকুন আমার থেকে।
আমি পরস্ত্রী। আমাকে টাচ করতে পারবেন না মানেটা কি? কি মিন করতে চান?
-সেটা তুমি জানো।
-না।
-তুমি আমার ভালোবাসা। আমার ভালোবাসা কে টাচ করব আমি। তাতে পরস্ত্রীর কি হলো?
-এক মিনিট। কি বললেন? ভালোবাসা?
ভালোবাসার ওয়ার্ড জানেন আপনি?
-জানি বলেই ভুল স্বীকার করেছি। ফিরে এসেছি।
তোমার ভালোবাসার সম্মান দিতে।
-ওয়েট ওয়েট, আমার ভালোবাসা মানে?
-সবকিছুর মানে মানে কেন করছো? আমি তোমাকে ভালোবাসি আর তুমি আমাকে ভালোবাসো। আমাদের মাঝে একটু ভুলবোঝাবুঝি হয়েছে।
-একটু ভুলবোঝাবুঝি হয়েছে?
-হ্যাঁ। এটা মিটিয়ে নিলেই তো সবকিছু ক্লিয়ার।
মোম আসলামের দিকে একবার তাকিয়েই চোখ সরিয়ে নিলো।
মোমের রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছে।
মোম নিজেকে সামলে নিলো। এদিক ওদিক তাকিয়ে বলল- আপনি শিশু নন। আপনার সৃতিও ভালো।
-অবশ্যই।
-আপনি কি বুঝতে পাচ্ছেন না আমি অন্য লোকের ওয়াইফ। আমার হাসব্যান্ড আছে। আমার বিয়ে হয়েছে। আগে যা ভুল হয়েছে তা এখন শুধরে গিয়েছে। আপনি আমার অতীত। বর্তমান হলো আমি একজনের স্ত্রী।
আপনি বারবার অন্যের স্ত্রী কে কেন ভালোবাসি ভালোবাসি বলছেন? আপনি কেন আমার পথ আগলে দাড়িয়েছেন? আপনি আমার জন্য বেগানা পুরুষ।আপনি আমার সাথে কথা বলতে পারেন না এভাবে আটকিয়ে।
এসব পাপ।
কেন বোঝেন না আপনি পাপ করছেন। সাথে আমাকেও পাপে ডোবাতে চাচ্ছেন।
মোম এখন অন্য লোকের স্ত্রী। আর সে মোমের জন্য বেগানা লোক! আসলামের বুকে কেউ খঞ্জর চালচ্ছে মনে হচ্ছে।
কি যে কষ্ট!

.
.
♥আল কুরআনের ৮১ টি উপদেশবাণীর ১টি বাণীঃ
২৫। ক্রোধ সংবরণ করো। [সূরা আল-ইমরান ৩:১৩৪]
.
চলবে……..💔💔💔
.
.
.
#নূর💔
Writer-Moon Home
[Shabnaj Hossain Moon]
Part-26
মেহেরাব মোমের হাত দুটো শক্ত করে ধরে রইলো।
কোন কথা বলছে না।
তাকিয়ে আছে সমুদ্রের নীল চোখ নিয়ে মেহেরাবের দিকে।
মোম ভাবছে আসলামের সাথে কথা-কাটাকাটি বিরোধ টা কি মেহেরাব জেনে গিয়েছে?
জানার কথা না। মোম আসলাম ছাড়া সেখানে ২য় কেউ ছিলো।
তাছাড়া সে তো আসলামের তালে তাল মেলায়নি। তবে মেহেরাব মানতে পারবে না সে আসলামের সাথে কথা বলেছে।
মোম সহজভাবে বলল- নামাজ পড়বেন না?
-এখন কোন ওয়াক্ত?
-আছরের ওয়াক্ত অনেক আগেই শেষ হয়েছে। কিছু ক্ষণের মধ্যে মাগরিবের ওয়াক্ত শুরু হবে।
-তো?.
-নিষিদ্ধ ওয়াক্ত চলছে।
মেহেরাব আগুন গরম চোখে তাকালো মোমের দিকে।
-এখন বলেছো নামাজ পরতে?
-ওভাবে তাকানোর কিছু নেই। ভুল করে বলেছি।
আপনি ওমন ভাবে তাকিয়ে আছেন বলেই আমি এমন ভুল করেছি৷।
-তো কিভাবে তাকাবো?
ভালোবাসার দৃষ্টিতে তাকালে সেটা তো নিতে পারও না।
রোমান্টিক দৃষ্টিতে তাকালে তো তুমি হার্টফেল করবে।
-উফফ, যেভাবেই তাকান বাট গরম চোখে তাকাবেন না৷
-হোয়াই? গরম চোখে তাকানো টা কি শুধু তোমার জন্য আল্লাহ তায়ালা বরাদ্দ করেছে?
মোম কিছু বললো না।।
মেহেরাব এবার নিজের ঘোল পাল্টালো।
একটা রোমান্টিক নেশার দৃষ্টিতে সে তাকালো মোমের দিকে।।
মোমের মনে হলো গরম দৃষ্টি মেহেরাবের সমস্ত দৃষ্টি থেকে সেরা। এই দৃষ্টিতে মেহেরাব শুধু তাকিয়ে থাকবে, মোম কে ফুলের আচরও দেবেনা।
কিন্তু রোমান্টিক দৃষ্টি!
মোম একটু অস্ফুটে কন্ঠে বলল- গরম দৃষ্টি ভালো।।
আচমকা মোমকে জরিয়ে ধরলো মেহেরাব।
-কি হয়েছে? বলুন আমাকে?
শান্ত হন।
-না। শান্তির দিন শেষ।
আমার ভয়ের সাথে পরিচয় ছিলো না। এখন পরিচয় হয়েছে।
-কিভাবে?
-তোমাকে হারানোর ভয়।
আমার ভয় করছে, টেনশন করছে।।
তুমি আমাকে যদি ছেড়ে চলে যাও সেই ভয়ে আমি নিশ্বাস নিতে পাচ্ছিনা।
আল্লাহ তায়ালা সাক্ষ্যি,
তুমি আমার অস্তিত্ব ক্যান্ডল।
আই কান্ট লিভ উইদাউট ইউ।
আই লাভ ইউ। আই লাভ ইউ। আই লাভ ইউ।
মোম মেহেরাবের পিঠে হাত বুলাতে শুরু করলো কিন্তু মুখ ফুটে বলতে পাচ্ছেনা কিছু।
মেহেরাব মোম কে নিজের সাথে যতটা সম্ভব শরীরে সমস্ত শক্তি দিয়ে জরিয়ে ধরে আছে৷।
মোমের খোঁজখবর নেওয়ার জন্য কিছু মেয়ে স্টুডেন্টদের নির্দেশ দিয়েছিল।
তারাই নিউজ দিয়েছে আসলামের।
একটা লোকের সাথে মোমের খুব কথা-কাটাকাটি হয়েছে।
লোকটা কয়েক দিন ধরে মোমের পেছনে ঘুরছে। ফলো করছে মেহেরাব মোম কে।
মেহেরাব যা ব্যবস্থা নেওয়ার নেবে।
মোম কে এসব সে জানাতে চায়না। মোম একটু হলেও চিন্তা করতে পারে তাই মেহেরাব আসলামের নাম পর্যন্ত নিতে চায়না। ওদের মধ্যে ২য় কাউকে মেহেরাব সহ্য করতে পারেনা।
কখনো সম্ভব না এটা সহ্য করা। মোম এখন শুধু তার। আল্লাহ তায়ালা জানেন কে আসল ভালোবাসা মোমের। মেহেরাবের জীবনে মোম কি সেটা আল্লাহ তায়ালা জানেন। মেহেরাবের নিঃস্বার্থ, পাকপবিত্র ভালোবাসা মোমের প্রতি সেটা তো আল্লাহর রহমত।
মোম কে হালকা ভাবে ছেড়ে চোখের দিকে তাকিয়ে ভাঙা গলায় বলল- শুধু একটা কথাই তুমি জেনে রেখো।
তুমি আমাকে ভালোবাসো আর না বাসো, আমি তোমাকে ভালোবাসি। এবং সারাজীবন বাসব। ইহকাল পরকাল সব সময়ে তোমাকে ভালোবাসব।
তুমি যদি সপ্নেও ভাব আমাকে ছেড়ে চলে যাবে অন্যের হাত ধরে তো তো।
মেহেরাব থামলো।
আমি মহা পাপ করব।
সমুদ্রের মধ্যে ঝাপ দিয়ে মাছের খাবার হব, আইফেল টাওয়ার থেকে লাফিয়ে ভর্তা হব৷নইতো আগুনে লাফ দিয়ে জ্বলসানো কাবাব হব।
সুইসাইড করব মহান আল্লাহ তায়ালার শপথ।
মোম মেহেরাবের ঠোঁটে আঙুল রাখলো।
-এসব বলে না। আপনি তো জানেন সুইসাইড মহা পাপ।
এর জন্য কঠিন শাস্তি। দোযখ বাসি হতে হবে।
আর এমন কথা বলবেন না। আপনি তো পাপের রাস্তা থেকে চলে এসেছেন তাইনা?
-হোক পাপ।তাতে তোমার কি?
মোম মাথা নিচু করে আছে।
-দেখেছো তোমার কিছু না।

আমি তো পাপী। ইহকালেও শাস্তি, পরকালেও শাস্তি। শাস্তি শাস্তি শাস্তি।
আমাকে নিয়ে শাস্তির উৎসব হবে।
মেহেরাবের সমুদ্রের মতো নীল চোখের কোণে বালু বেলার বালির মতো সোনালী পানি চিকচিক করছে।
ফর্সা মুখটা রক্তবীজের মতো লাল টুকটুকে। স্পষ্ট ভয়ের ছাপ।
মোম মেহেরাবের চোখের পানি মুছে দিলো।
মেহেরাবের গাল স্পর্শ করে চোখে চোখ রেখে বলল- আপনিও একটা কথা জেনে রাখুন, যদি আপনাকে আমি ভালো না বাসিও তবুও অন্য কারও হবো না। আপনি আমার সাথে চালাকি করেছিলেন তাই আমি কিছু অন্যায় করেছি, অতীতের কিছু কারণের জন্য আপনার ভালোবাসা অনুভব করতে পাচ্ছিনা,আপনি তো বুঝতে পারেন হঠাৎ করে কেউ কাউকে ভালোবাসতে পারেনা কারণ মন কারও বসে থাকেনা, এমনকি নিজের বসেও না। তার মানে এই নয় আমি চরিত্রহীনা,অন্যের হাত ধরে চলে যাব। এটাই সত্যি। এই সত্যিটা কখনো পাল্টাবে না। আল্লাহ তায়ালা না করুক আপনার কিছু হয়ে গেলেও অন্যের হাত ধরব না বা কাউকে ধরতেও দেব না।
কথা গুলো মাথায় ঢুকিয়ে নিন।
মোম মেহেরাবের গালে হাত বুলিয়ে নেকাব লাগিয়ে উঠে দাঁড়ালো।
আজান দিচ্ছে! আজানটা কেন যেন আগের আজান গুলো থেকেও মুখরিত হচ্ছে।
মোম হেঁটে হেঁটে যাচ্ছে ধীরে ধীরে।
আচ্ছা পৃথিবীটা এতো সুন্দর কেন? মনোরম কেন?
প্রিয় মানুষ যখন বিশ্বাস দেয়, ভরসা দেয় তখন পৃথিবীতে নেমে আসে সুন্দর মনোরম শান্তি।
আসলাম টেবিলে পা তুলে বসে আছে সোফায়।
মাথায় হাত দিয়ে চোখ বন্ধ করে রেখেছে। মাঝে মাঝে মাথা চুলকাচ্ছে।
দুপাশে দুজন বডি বিল্ডার টাইপ লোক।
একজন বলল-এনি প্রবলেম?
আরেকজন বলল-ওয়াট হ্যাপেন্ড স্যার?
আসলামের পার্সোনাল পিএ হাত দিয়ে ইশারা করলো কথা না বলতে।
আসলাম উঠে দাঁড়ালো।
বেলকনিতে গেলো।
নিচে তাকিয়ে কিছু দেখার চেষ্টা করলো।
বেড লাক আসলামের কিছুই দেখা গেলো না।
সে এতো উপরে উঠেছে যে কিছুই দেখা যাচ্ছেনা। সে একদম একা। সাথে আছে একরাশ বুক ভরা শূন্যতা, একাকীত্ব, যন্ত্রণা।
নিজের হাতে নিজের ভালোবাসা কে সে মেরেছে। গলা টিপে হত্যা করেছে ভালোবাসা কে।
আল্লাহর কাছে একটাই চাওয়া সেই দিন গুলো ফিরিয়ে দিতে। একবার যদি সে অতীতে ফিরে যেতে পারতো তো সবকিছু ঠিক করে ফেলতো।
একজন ক্ষমতাবান বিজনেস না হয়ে ভালোবাসার স্বামী হিসেবে সুখের দিন কাটাতো সে। আসল হিরে রেখে মরীচিকার পেছনে ছুটেছে সে।
এখন হাড়ে হাড়ে সে টের পাচ্ছে। বেঁচে থাকা মানে হলো মনের শান্তি, আর মনের সুখের শান্তি একমাত্র প্রিয়তমা মোম।
মোম কে সে হারিয়ে ফেলেছে কথাটা মনে করতে চায়না সে। আল্লাহর কাছে একটাই দোয়া যেন মোম কে সে হাসিল করতে পারে ২য় বারের মতো। নিজের অন্যায়টুকু সে শুধরে ফেলতে চায় যেকোনো মূল্যে।
কি হবে ঐশ্বর্য, রাজত্ব, ক্ষমতা দিয়ে যদি প্রিয়তমা স্ত্রী মোম না থাকে? আসলাম নিজের মনে শক্তি সঞ্চয় করলো মোম কে আবারও স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করার জন্য চিরতরে।
.
.
প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর প্রিয় উম্মতেকে বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় মহান রবের ওপর ভরসা করে বের হওয়ার জন্য সুপরামর্শ দিয়েছেন। দোয়াটি পড়ে বের হওয়ার পর থেকে ঘরে ফিরার আগ পর্যন্ত সে আল্লাহ তাআলার জিম্মায় থাকবে। বাহিরের জটিল ও কঠিন বিপদ-আপদ থেকে বেঁচে যাবে।

প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঘর থেকে বের হওয়ার সময় এ দোয়া পড়তে বলেছেন-

بِسْمِ اللهِ تَوَكَّلْتُ عَلَى اللهِ وَ لَا حَوْلَ وَ لَا قُوَّةَ اِلَّا بِاللَّهِ

উচ্চারণ : ‘বিসমিল্লাহি, তাওয়াক্কালতু আলাল্লাহি, ওয়া লা হাওলা ওয়া লা কুওয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহি।’

অর্থ : আল্লাহর নামে (বের হচ্ছি); আল্লাহর ওপর ভরসা করলাম। আর আল্লাহর সাহায্য ছাড়া কোনো উপায় নেই; আল্লাহর সাহায্য ছাড়া কোনো শক্তিও নেই।’ (তিরমিজি, আবু দাউদ)

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে ঘর থেবে বাহিরে বের হওয়ার তাঁর জিম্মায় থাকার তাওফিক দান করুন। যাবতীয় অন্যায় ও পাপ কাজ এবং বিপদ-আপদ থেকে বিরত থাকার তাওফিক দান করুন।
মেহেরাব মোমের কপালে চুমু দিয়ে বলল-আমিন।
আল্লাহ তায়ালা তোমার রক্ষা করুক। তোমাকে উনার কাছে তুলে দিলাম। উনি তোমাকে দেখে রাখবেন৷
মোম মাথা নাড়ালো।
মাঝে মাঝে দূরে কোথাও হাওয়া চেঞ্জ করা ভালো শরীর ও মনের জন্য। স্টাডি করতে করতে একগুঁয়ে হয়ে গিয়েছিলে প্রায়। আমি বুঝি।
তবুও তোমাকে এসময় দূরে যেতে দিতে ইচ্ছে করছে না।
-আমি সাবধানে থাকব।
মোম কে বাসের সবচেয়ে নরম সিটে বসিয়েছে মেহেরাব। প্রতিটা সিট সে হাত দিয়ে চ্যাক করেছে। সবচেয়ে নরম তুলতুলে কোনটা সেটাই বের করারর চেষ্টা করেছে।
মোম বলেছিল- সবগুলো এক রকম তুলতুলে।
মেহেরাব অনুনয়ের স্বরে বলেছে-একটু চ্যাক করে দেখি।এমনতো হতে পারে এই বাসের সিট গুলোর একটা সিটে কোন ওয়ার্কার একটু বেশি তুলো দিয়েছে।
আল্লাহর দয়াতে সবচেয়ে নরম তুলতুলে সিটের সন্ধান পাওয়া যাবে৷ আল্লাহর দয়া অপরিসীম।
মোম হাসবে নাকি কাঁদবে বোঝে উঠতে পারেনা।

-ইয়েস এই সিটটা সবচেয়ে ভালো। বসো এখানে সুইটহার্ট।
একটু দাড়াও দাড়াও।
-আবার কি হলো?
-রুমাল দিয়ে মুছে দিই।
রুমাল কোথায়! রুমাল কোথায় গেলো।
রুমাল না পেয়ে মেহেরাব নিজের শার্টের বোতাম খুলতে লাগলো। আজ শার্ট দিয়েই সে সিট মুছে দেবে ওয়াইফের বসার জন্য।
-কি করছেন কি?
এই নিন এটা দিয়ে মুছুন।
থাক আমি মুছে নিচ্ছি।
আপনি একটা পাগল।
-হ্যাঁ ম্যাড ফর ওয়াইফ।
মেহেরাবের শার্টের বোতাম লাগিয়ে দিতে দিতে মোম বলল- আপনি এমন কেন?
-কি রকম?
-মনে হয় জানেন না?
-জানিনাতো।
-সবকিছু জানেন অথচ বলছেন জানেন না। হাসালেন।
-আমার চোখের দিকে তাকাও তুমিও সব জেনে যাবে।
-ঢং করবেন নাতো।
-তাহলে কি করব? আদর করব?
মোম মেহেরাবের বুকে কয়েকটা কিল দিয়ে বলল- ঠোঁট দুটো সেলাই করে ফেলব।
মোমের দুইহাত মেহেরাব হাসতে হাসতে তার হাতের মুঠোয় নিয়ে বলল- তোমার হাতগুলো তো খুব নরম৷ অবশ্য প্রাচ্যের সব মেয়েরাই নরম তুলতুলে হয়, বেশি বেশি তৈলাক্ত মালমশলা খাবার খাওয়ার জন্য।তোমরা প্রাচ্যের মেয়েরা বিয়ে করার জন্য একদম পারফ্যাক্ট।
তোমার নরম তুলতুলে হাতের আঘাত গুলো মনে হচ্ছিল কোন তুলোর আঘাত।উফফ,দারুণ মজা লেগেছে। আচ্ছা আমরা সংসার করব যখন তখন তিন বেলা এমন ডোজ দিয়ো তো তোমার নরম তুলতুলে মলমলে হাতের।
-ইশশ,কি চিন্তাভাবনা আপনার। নরম তুলতুলে মলমলে ছিঃ ছিঃ কি ল্যাংগুয়েজ। ক্যারেক্টরলেস।
-কি বললে? স্বামীকে ক্যারেক্টরলেস বলা হচ্ছে? পরকালে জবাবদিহি করতে হবে।
-জবাবদিহি করলে করব। এখন বিধায় হন।
আপনার জন্য লেট হচ্ছে বাস ছাড়াতে।দেড় ঘন্টা ধরে নানান সুতোয় বাস থেকে নামছেন না।নামুন তো। বিয়ে আপনি একাই করেননি। বউ আপনার একার নন আর স্বামিও পৃথিবীতে একটা নন।
-বাট তুমি আমার লাভলী ওয়াইফ একজন।
মেহেরাব কথাটা এমন ভাবে মোমের চোখের দিকে তাকিয়ে বলল যে মোম মেহেরাবের সমুদ্রের নীল চোখের গভীরে হারিয়ে গেলো।
মোমের ব্যাগপত্র আগেই মেহেরাব সযত্নে গুছিয়ে তুলে দিয়েছে বাসে।।
বাস ছেড়ে দিচ্ছে।
মেহেরাব জানালা দিয়ে মেহেরাবের হাত ধরে রেখেছে।
-হাত ছাড়ুন। ব্যথা পাবেন।
-একটু পর।
বাস স্পীডে চলতে শুরু করুক তারপর।
বাস চলছে সাথে মেহেরাবও চলছে।
-তোমার ক্ষিদে লাগতে পারে বাসে হামবার্গে পৌঁছানোর আগে। টিফিনবাক্সে খাবার রাখা আছে।
মিনারেল ওয়াটারও রাখা আছে।
-জানি। আপনি বলেছিলেন।
-আমাকে ফোন করবে কিন্তু একটু পর পর।
নাম্বার আছে তো?
-আপনি দিয়েছেন আমার ফোনে সেভ করে।
-আমি তোমাকে ফোন করব আধঘন্টা পরপর। ফোন তোমার সাথে সাথে রাখবে।
-আচ্ছা।
হাতটা ছাড়ুন। আপনি ব্যাথা পাবেন।
-পেলে পাব। তবে ভালো লাগছে।
মোমের দুশ্চিন্তা বাড়ছে মেহেরাবের জন্য যদি কিছু হয়ে যায়। মোম একেবারে চলে যাচ্ছে?
বাস হালকা গতিতে যাওয়ার সময় আপনাআপনি হাত ছুটে গেলো মোমের।
মেহেরাবের চোখ দুটো ছলছল করতে শুরু করেছে।
বাস স্পীড গতিতে চলছে সাথে মেহেরাবও নিজের অজান্তে দৌড়াচ্ছে।
মোম জানালা দিয়ে বারবার নিষেধ করছে দৌড়াতে।
মেহেরাব হাসিমাখা মুখে মোমের দিকে তাকিয়ে দৌড়াচ্ছে।
মেহেরাবের চোখের পানি মোমের দৃষ্টির অগোচর হলো না।
মোমের মন ছটফট করতে শুরু করেছে। মনে হচ্ছে কিছু একটা বুক থেকে সরে শূন্য হতে শুরু করেছে।
সে যদি একবার বলতো- আমার সাথে ট্যুরে চলুন।
মোম জানে মেহেরাব একপায়ে রাজি হবে।
মেহেরাব নিজ থেকে যেতে পারতো কিন্তু সে মোমের বলার জন্য ওয়েট করেছিল।
ভেবেছিল মোম বলবে-আপনি একা একা কি করবেন? আমার সাথে চলুন। আমার গার্ড হবেন।
মেহেরাব অনেক্ক্ষণ ধরে দৌঁড়ানোর পর বাসটা কে হারিয়ে ফেললো।
মনে হচ্ছে মোম কে হারিয়ে ফেলেছে সে।
রাস্তায় হাঁটু গেঁড়ে নিশ্বাস নিচ্ছে সে। মোমের প্রতি ভালোবাসা তার দিনের দিন বাড়ছে এবং বাড়তেই থাকবে।
আসলাম ভোর থেকেই গাড়িতে বসে মেহেরাবের কান্ডকারখানা গুলো দেখলো। সে কখনো মোমের গায়ে স্পর্শ করেনি আর মেহেরাব কিনা। আসলামের সহ্য হচ্ছে না। তার প্রিয়তমা কে একটা সাদা চামড়ার লোক স্পর্শ করছে বারবার অনায়াসে। মাথায় রক্ত উঠে যাচ্ছে আসলামের।
মোমের সামনে কিছু করতে পাচ্ছিল না সে।
কিন্তু এখন? এখন তো মোম নেই।।
ফাঁকা রোড। সিসিটিভি ক্যামেরা কে ফাঁকি দেওয়া যাবে। মেহেরাব অসতর্ক হয়ে রোডের মাঝে এসে পড়েছিল।
ড্রাইভারের দোষ নেই।তাছাড়া ড্রাইভার কে কেউ তো দেখবে না। ড্রাইভার তো ঘটনা ঘটিয়ে দাড়িয়ে থাকবে না।
মেহেরাব ওদের মধ্যে এসেছে। তাই ওকে সরিয়ে দিলেই আবার দু-জন এক হতে পারবে। আসলামের স্ত্রী মোম। এটাই সত্যি! এবংনিয়তি।
মেহেরাব কে সে পিষে ফেলবে রোডে গাড়ির চাকায়। যেন মোম শেষ দেখাও দেখতে না পারে মেহেরাব কে।

.
♥আল কুরআনের ৮১টি উপদেশবাণীর ১টি বাণীঃ
২৬। রূঢ় ভাষা ব্যবহার করো না। [সূরা আল-ইমরান ৩:১৫৯]
.
.
চলবে……..♥♥♥

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here