নাসিফ দরজা বন্ধ করে এগোতে থাকে আমার দিকে। মুখে এক কুটিল হাসি। আজ তুমি শেষ।এরপর আমায় ধাক্কা দিয়ে বিছানায় ফেলে দু’হাত চেপে ধরে বালিশের সাথে। অতঃপর গায়ের উপর উঠে পড়ে দ্রুত। নিজের দু’পায়ের মাঝে আমার দু’পা শক্ত করে আবদ্ধ করে।বোরকা খুলতে মুখের নেকাব উঠিয়ে ফেলে। আমি দৃঢ়ভাবে চোখ বন্ধ করে আছি। ইশ! মুখ তো দেখেই ফেলল। নাফিস মনে মনে বলে, এতো ভীষণ সুন্দরী মেয়ে! পুরো গোলাপ ফুলের মতো তরতাজা! খালি বসে খাবে, মরার মতো পড়ে পড়ে ঘুমাবে। এদিকে আমি বেচারা খেটে মরবো।বিনিময়ে কিছু পাবো না তা কি হয়!
দুই দিন আগে,
নাফিস অফিস থেকে সবেমাত্র ফিরছে। রেড সিগনালে গাড়ি সারি বেঁধে জ্যামে আটকে আছে। এমন সময় দৌড়ে গাড়ির দরজা খুলে পাশে বসে এক মেয়ে। বুঝতেই পারছেন,মেয়েটা আসলে আমি। নাফিস চমকে তাকায়। বোরকা, নেকাবে পুরো মুখ ঢেকে রেখেছে মেয়েটা। এদিক ওদিক ঘুরেও মুখের লেশ দেখার উপায় নেই।
নাসিফ বললো,
” কে আপনি? নামুন গাড়ি থেকে! ”
আমি বলি,
” আমি মিতান্তর বর্ষা। এর বেশি জেনে কাজ নেই।”
নাসিফ কিছু বলার আগেই দরজার একগুচ্ছ লোক এসে ধাক্কা দেই। লোকগুলো বলতে থাকে,
” ওই মিয়া খুলেন দেখি। ওই মেয়েটারে বাইরে আসতে বলেন। পালাই যাবে কই?”
আমি ভাবনাহীন হয়ে আরামে বসে বললাম,
” খুলে দেন। ”
নাসিফ খুলতেই ওরা আমার হাত ধরে টানাটানি করতে থাকে। ফলে আমার চিৎকারে আশেপাশে লোক গাড়ি থেকে নেমে আসে।বড় একটা জটলা পেকে যায়। আমি বললাম,
” আরে আমি আমার দেবরের সাথে বাড়ি ফিরছি। কোথ থেকে গুন্ডা লোকগুলা এসে আমাকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে। আপনারা কিছু করেন! দাঁড়িয়ে দেখছেন কি?”
তারপর নাসিফের দিকে তাকিয়ে বললাম,
” তোমার এদের সাথে ওইযে মারপিট হয়েছিল। মিটমাট করোনি তো এখনো? দেখো এর জন্য কত হ্যারেজমেন্ট হতে হচ্ছে। কি জবাব দেব তোমার ভাইকে? হা করে না দেখে পুলিশকে খবর দাও। দাও দাও… জলদি।”
নাসিফের ফোন দেয়ার আগেই পুলিশ এসে হাজির। ভিড়ের কেউ হয়তো ফোন করে ব্যাপারটা জানিয়েছে। ফলস্বরূপ আমাদের থানায় যেতে হলো। নাসিফ এদিকে ভয়ে জড়সড়। থানা-পুলিশে আগে থেকেই অনেক ভয় ওর। আমি কথার প্যাঁচে পুলিশকে বুঝাতে সক্ষম হলাম নাসিফই আমার দেবর। কথামতো সেদিন থেকে আমি এক আজ্ঞাত ব্যক্তির বউ আর নাসিফের ভাবি।
নাসিফের বাড়ি এসে দুটো দিন পুরো বোরকা পরে বসে আছি। যখন যখন ও বাইরে যায় তখন একটু খুলে আবার পরে ফেলি। সুন্দরী মেয়ে দেখে ছেলেটার নীতি যদি খারাপ হয়ে যায় এই ভয়ে।
আলিশান বাড়িতে আয়েশ করেই দিন পার করছি। নাসিফ কিছু জিজ্ঞেস করলেই ফ্যালফ্যাল করে কতক্ষণ তাকিয়ে থাকি। কোনো কৈফিয়ত দিতে গেলেই পুরো ফেঁসে যাবো। তাই মুখ এটে বসে থাকি। খুব বেশি জেরায় পড়লে বেহুঁশ হবার ভান করি। এভাবে দুটো দিন কেটে গেলেও আজ পুরো ফেঁসে গিয়েছি। সত্যিই যদি নাসিফ ফাঁকা বাড়িতে সুযোগ নিয়ে কিছু করে! লোকজন কেউ এগিয়ে আসবে না। কারণ এ বাড়ির বিশাল উঁচু প্রাচীরের বাইরে কোনো চিৎকারের আওয়াজ পৌঁছাতে পারবে না।
বর্তমান,
নাসিফ ঠোঁটে ঠোঁট মেশানোর আগেই আমি চেঁচিয়ে বলি,
” থামুন প্লিজ।”
“বলো কি চাও তুমি? স্যার আসবার আগেই সব ঝামেলা ঝাঁট করে কেটে পড়ো। নইলে কারো রক্ষা হবে না।”- নাসিফ রাগান্বিতভাবে বলে।
” স্যার!”
” হুম। অনিব কায়সার চৌধুরী। আমি তো উনার সামান্য কর্মচারী। ”
“কি?”
আজ আমি সত্যিই অজ্ঞান হয়ে যাবো। ছিঃ এমন লোকের সাথে দু’দিন কাটালাম।যদিও ঘর আলাদা। তবুও এখন লোকটাকে দেখলেই কেমন রাগ হচ্ছে। মাথাটা ভেঙে দিতে মন চাইছে। হঠাৎ মাথায় তরতর করে ফন্দি এঁটে নিলাম।
নাসিফ আবার প্রশ্ন করলো,
” কে তুমি? কেনো এসেছ?”
আমি দ্রুত হেসে বলি,
” সম্মান দিয়ে কথা বলো বুঝলে! আমি কে জানলে আকাশ থেকে পড়বে। আমি তোমার স্যারের বউ। এইজন্যই তো তোমাকে দেবরের পরিচয় দিয়েছি। অনিব আমাকে খুব তোমার কথা বলতো। ”
.
.
.
.
.
পরবর্তী কয়েক ঘন্টায় অনিব কায়সার চৌধুরীর পুরো পরিবার চলে এলো। সবার কৌতুহল দৃষ্টি পুরো আমাকে ঘিরে। উনার বাবা নেই। তাই মা এসেছেন। ভদ্রমহিলা বেশ মার্জিত পোশাকে এসেছেন। তার পাশে দুই ছোট বোন। অনিবের মা কিছু বলার আগেই দুই বোন কথা শুরু করে দেয়।
ওদের কথায় জানতে পারি একজনের নাম মিতি। ও ক্লাস এইটে পড়ে। আরেকজন দিতি, ইন্টার ফার্স্ট ইয়ার। খুব কথা বলতে পছন্দ করে। অথচ ভদ্রমহিলা কোনো প্রশ্ন করছেন না। আমাকে ক্যামেরার মতো ফোকাস করে বসে আছেন। হয়তো অপেক্ষা করছেন অনিব চৌধুরীর আগমনের।
আমি ইতোমধ্যে বোরকা ত্যাগ করেছি। নিচে একটা মেরুন রঙের সালোয়ার কামিজ পরে ছিলাম,ওটাই রয়েছে এখনো।
বাইরে একটা গাড়ি এসে থামলো। আমার বুক ধুকধুক করছে। ওই মানুষ চলে এলো নাতো? কি বলবো আমি? যাকে দেখিনি, বুঝিনি, চিনি না, ওই মানুষের সামনে মিথ্যা বলবো কিভাবে? আর তিনি যদি বলেন এ মেয়ে মিথ্যা বলছে,তাহলে কি হবে? কেন এত জট পাকিয়ে ফেললাম সব?
চলবে…..
Unexpected_lover
part_01
#Rimy_islam