মেঘাচ্ছন্ন আকাশ পর্ব ১

‘মেঘাচ্ছন্ন আকাশ’
-জান্নাত খান
পর্ব-১|

[১৮+ এলার্ট।যদিও অপ্রাসঙ্গিক শব্দ ব্যবহার হয়ে যায় বা প্রেমের মুহূর্ত ফুটাতে যেয়ে যদি চটি হয়ে যায়।তাই আগে থেকে এলার্ট করলাম]

.
ইবলিশ রোডের চৌরাস্তায় একটা জিপ থামলো।সেই জিপ থেকে একটা মেয়েকে ধাক্কা দিয়ে পাশের নর্দমাযুক্ত ড্রেইনে ফেলে দিলো। তারা মেয়েটিকে ফেলে দিয়ে সেখান থেকে জিপ নিয়ে কেটে পরলো।মেয়েটি ওই ময়লাযুক্ত ড্রেইনে করুন দশা নিয়ে পরে রইলো।মেয়েটির গায়ের উপর দিয়ে বিভিন্ন নোংরা পোকা হেটে যাচ্ছে।ইদুঁর তার দাতঁ দিয়ে মেয়েটার ছিড়া জামাতে কামড় দিচ্ছে।

.
ভোর হয়ে গেছে।চারিদিকে আলো ফুটতে শুরু করে দিয়েছে।চাওয়ালা দোকান খুলে চা বসিয়ে দিচ্ছে চুলোয়।চাওয়ালা চা চুলোয় বসিয়ে দেখতে পেলো ড্রেনের ওখানে মাছি ভনভন করছে।সাধারণত কোন পচাঁ জায়গাতেই মাছি ভনভন করে।ওখানে আবার কি!কয়েকটা কুকুর রীতিমতো ঘেউ ঘেউ শুরু করে দিয়েছে!ব্যাপারটা একটু কেমন লাগাতে চাওয়ালা মনসুর ওই ড্রেইনের দিকে এগোলো।তারপর উনি যা দেখলো তা দেখার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলো না।দেখার সাথে সাথে উনার আর্তচিৎকার ভেসে আসছে,
-‘ইয়া আল্লাহ!’

.
চারিদিকে লোকে ভরে গেছে।সবাই ঘিরে আছে ওই ড্রেইনের পাশটাকে।এম্বুলেন্স ডাকা হয়েছে মরদেহ নিয়ে যাওয়ার জন্য।গন্ধের জন্য সবাই নাক চেপে আছে।কেও ছুইয়ে দেখার সাহস ও পাচ্ছে না।নানান রকম কথা চলছে আশেপাশে।
-‘কোথায়কার মেয়ে!এইভাবে পরে আছে।’

এইরকম নানান অবান্তর কথাবার্তা।এর মাঝে পুলিশ চলে আসছে।তারা তাদের ফোর্সের মাধ্যমে ভিড় ক্লিয়ার করলো।হাই কমিশনার রাগিব দাড়িয়ে সবার কাছে তথ্য নিচ্ছে কিভাবে কি হলো।কেও চিনে কি না মেয়েটাকে।এইরকম নানান প্রশ্ন!

এম্বুলেন্স হাজির হয়ে গেলো কিছুক্ষনের মাঝে।সবাইকে সরিয়ে যখন লাশকে তুললো ওয়ার্ড বয়।ভুলবশত ওয়ার্ডবয়ের হাত চলে যায় লাশের হাতে। ওয়ার্ডবয় চিৎকার দিয়ে বলছে,
-‘ইনি জীবিত আছে।’

তাড়াহুড়ো করে তাকে হাসপাতালে হহস্তান্তর করা হলো।সেখানে নিয়ে যাওয়ার পর।ডাক্তার তার কাজ শুরু করলো।ডাক্তার বের হয়ে এসে বলে,
-‘৮৫% মুখ নষ্ট হয়ে গেছে ছুড়ির আঘাত বারবার চালানোর কারনে।এন্ড মোস্ট ইম্পট্যান্ট দিস ইজ এ রেইপ কেইস।মেয়েটার জরায়ুতে কোন ধারালো ছুড়ি চালানো হয়েছে।অনেক ক্ষতবিক্ষত করা হয়েছে তার শরীরকে।’

রাগিব বললো,
-‘এখন কি করা যায়?’

ডাক্তার বললো,
-‘সোজা কথায় বললে,ওর পুরো বডি প্লাস্টিক সার্জারি করা লাগবে।এখানে সম্ভব নয়।বাংলাদেশে সব যন্ত্রপাতি ও নেয়।তাই এই কেস বিডি’র কেওই হ্যান্ডেল করতে পারবে না।আপনাকে তাকে আমেরিকা নিয়ে যেতে হবে।নতুন জীবন আর নতুন চেহারা দিতে হবে আপনাকে তার।মেয়েটা মনে প্রানে বাচঁতে চাইছে।সে নিজের জীবনের সাথে বাচাঁর জন্য লড়াই করতেছে।’

রাগিব চিন্তিত হয়ে গেলো।কি করবে সে।সে বললো,
-‘আই নিড সাম টাইম ডক্টর।’

ডাক্তার মাথা ঝাকালো।রাগিব ডাক্তারের কেবিন ছেড়ে বের হয়ে গেলো।ডাক্তার কেবিনে বসে কেইস স্টাডি করতে লাগলো।ভ্রু কুচকে চিন্তা করতে লাগলো,
-‘কারা এতো নির্মম হয়ে এইরক জঘন্য কাজ করতে পারে?’

.
রাগিব হন্তদন্ত হয়ে ডাক্তারের কেবিনে ঢুকে বললো,
-‘আপনি ওকে আমেরিকার পাঠানোর ব্যবস্থা করুন।বাকিটা আমি সামলে নিব।’

ডাক্তার কিছুক্ষন চেয়ে রয়ে বললো,
-‘ওকে বাট ওই মেয়ে আপনার কি লাগে? রেফারেন্স চাইলে কি বলবেন?’

রাগিব বললো,
-‘শি ইজ মাই ডটার।’

ডাক্তার আকস্মিকভাবে চেয়ে রইলো রাগিবের দিকে।তারপর বললো,
-‘বেষ্ট অফ লাক।’

রাগিব ম্লান হাসলো।ডাক্তার ঘোষনা দিলো বডিকে পাঠানো হবে বাহিরে।রাগিব নিজের রিটায়ার্ড এর লেটার জমা দিলো তাকে প্রশ্ন করা হয়েছিলো কেনো সে চাকরীর ছাড়ছে এতো দ্রুত?

উত্তরে রাগিব বলেছিলো,
-‘এক মেয়ে দুনিয়া ছেড়ে চলে গিয়েছে!আরেক মেয়েকে বাচাঁতে যাচ্ছি!’

.
দুই বছর পর,

-‘আপনি এখনো গ্লাসের বাহিরে তাকিয়ে কি দেখেন?’

ইংরেজ নার্স জিজ্ঞেস করলো রাগিবকে।রাগিবের চোখে মোটা ফ্রেইমের চশমা।সে উত্তর দিলো,
-‘আমার মেয়ে কখন চোখ খুলবে সেটা দেখার অপেক্ষাই।’

তখন ই ঠাস করে কিছু পরে যাওয়ার আওয়াজ হলো।রাগিব দৌড়ে কেবিনে গেলো।দেখছে তার মেয়ের জ্ঞান ফিরেছে।দুই বছর লেগেছে তার জ্ঞান ফিরতে আর সারা শরীরের ব্যান্ডজ এখনো।ঘা শুকোই নি।অনেক বড় অপারেশন ছিলো অনেকদিন টাইম লেগেছিলো।আনসাকসেসফুল হচ্ছিলো বারবার একে অপারেশন করতে। চতুর্থবারের বেলায় সক্ষম হয়েছে।এখন ব্যান্ডেজ খুলে দেখতে হবে কতটুক সক্ষম।

নার্সটা বলছে বারবার,
-‘হেয় রিল্যাক্স।ইউ আর ইন হসপিটাল।’

নার্সের কোন কথায় কানে ঢুকছে না।মেয়েটা ছটপট করছে।ব্যান্ডেজ গুলো টেনে ছিড়ছে।রাগিব শুধু থম মেরে দেখছে।কি আছে এই চার আঙ্গুল কপালে!

চলবে

.

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here