গল্পঃ #ইংলিশ_টিচার
#পর্ব_০৮
শুভ ভাবছে মিলি শুভকে দেখলে কি রিয়েকশন দিবে, এত্ত গুলো দিন চলে গেছে তাদের যোগাযোগ ছিলনা।
শুভ এবার খুব চিন্তায় পরে গেছে, কিভাবে এন্ট্রি নিবে? সিনেমাতে নায়ক যেমন অনেক বছর পর নায়িকার কাছে গেলে নেয় সেভাবে? কই লালালালাহ লালালালাহ মিউজিক তো বাজছেন না।
ঠিক তখনি শুভ খেয়াল করলো এত্ত ঝামেলার মধ্যে শুভ নিজের যে কি হাল হয়েছে তাই খেয়াল করেনি।
মিলি আগের চেয়ে কত কিউট হয়ে গেছে তাই মিলির সামনে এভাবে যাওয়া টা ঠিক হবে না।
তখনি শুভর পাশদিয়ে টপস আর জিন্স পড়া এক মেয়ে চলে যাচ্ছে।শুভ আর সময় না নিয়ে অনেকটা বোকার মতো বলে বসলো,
-এইযে মিস শুনছেন?
মেয়েটার বড় বড় চোখ গুলোকে আরো বড় করে তাকিয়ে শুভকে বললো,
-কি ব্যাপার? আর হ্যাঁ আমি মিস না আমি ডাঃ মিসেস হাসান।
-আচ্ছা সরি ডাঃ মিসেস হাসান।আচ্ছা আপনি ডাক্তার? আমি যা অনুমান করছিলাম তাহলে তা আর হলো না।আচ্ছা সরি ডিস্টার্ব করলাম।
-আমি ডাক্তার কেন হব? আমার স্বামী ডাক্তার।
শুভর এবার বেশ হাসি পাচ্ছে। এই মেয়েটা তার স্বামীর পরিচয় দিতে কত অহংকার করছে আর মিলি যে কিনা তার স্বামী তার কলেজের টিচার তা নিয়ে তার বিন্দুমাত্র অহংকার ছিলোনা বরং এইটা সে লুকাতে চাইতো।
শুভ মনে মনে ভাবছে আচ্ছা তার কি মিলিকে নিয়ে অহংকার হচ্ছে?
শুভ এবার এসব ভাবা বাদ দিয়ে মেয়েটিকে বললো,
আসলে আপনাকে দেখে আমি বুঝিনি আপনি মিসেস।
-এটা অবশ্য ঠিক, আমাকে দেখে অনেকেই বুঝেনা আমি মিস নাকি মিসেস।
শুভর এবার আরো হাসি পাচ্ছে,আচ্ছা দেখতে ছোট লাগছে এটা বললে সব মেয়েরা কি খুশি হয়?
মনে হয়না, মিলিকে বললে তো উল্টো রেগে যেতো।
শুভ এবার আর কিছু ভাবতে চায়না। সবকিছুতেই মিলিকে টেনে নিয়ে আসছে শুভর অবচেতন মন যা এই সময় একদম ঠিক হচ্ছেনা।এখন প্রত্যেক টা মিনিট অনেক দামি।
শুভ এবার নিজের কাজের উপর ফুল ফোকাস করে বললো,
আমার কেন জানি মনে হচ্ছে আপনি খুব সাজগোজ করতে পছন্দ করেন।আপনি এসব ব্যাপারে খুব সচেতন। আপনার এই ব্যাগে অনেক কিছু আছে যেমন ধরেন আয়না, চিরুনি আর যা যা লাগে সবকিছু।
মেয়েটা এবার তার বড়বড় চোখগেলো আরো বড়বড় করে বললো,
-আপনি কিভাবে বুঝলেন? বেশ বুদ্ধিমান তো? হুম আমি সব সময় এসব সাথে রাখি।
-তাহলে আমাকে এখন আয়না আর চিরুনি দিয়ে একটু সাহায্য করুন।চুলের অবস্থা দেখুন,ঘেমে কি অবস্থা হয়ে আছি।আমার স্ত্রী রাগ করে আছে, আমাদের মাঝে একটু প্রবলেম চলছে যার জন্য ৪ বছর যোগাযোগ ছিলোনা। এখন যদি এই অবস্থায় যায় কেমন না ব্যাপার টা?
মেয়েটা দুই মিনিট ভেবে ব্যাগ থেকে আয়না আর চিরুনি বের করে দিলো আর সাথে একটা বডি স্প্রে।
শুভ বললো,
-মেয়েদের টা ব্যবহার করবো?
-আরে মিয়া মেয়েদের আয়না আর চিরুনি ব্যবহার করতে পেরেছেন আর বডি স্প্রে পারবেননা?আপনি এত্ত কথা না পেঁচিয়ে প্রথমেই বলতে পারতেন যে আপনার চিরুনি আর আয়না দরকার। আর হ্যাঁ বডি স্প্রে টা আমার স্বামীর। এখন হয়তো প্রশ্ন করবেন কেন আমি ছেলের বডি স্প্রে সাথে রাখি,তাই আমিই বলে দেয় আসলে আমার স্বামী এত্ত কাজে ব্যস্ত থাকে যে তার অবস্থা আপনার মতোই হয়ে যায়, ধরেন আমার সাথে শপিং যাবে তখন তার সাথে কথা বলার মতো অবস্থা আর থাকেনা তখন ব্যাগ থেকে এই বডি স্প্রে টা আগে হাতে ধরাই দেই।
শুভ মেয়েটার বুদ্ধিকে প্রশংসা করতে করতে চুল ঠিক করে, টিস্যু দিয়ে ঘাম মুছে বডি স্প্রে দেয়।
শুভ মেয়েটাকে অনেকবার ধন্যবাদ জানায়।
মেয়েটা শুভকে অল দ্যা বেষ্ট বলে বিদায় নেয়।
শুভ এবার বেশ কনফিডেন্স। একটু একটু করে মিলির কাছে চলেই আসলো আর শুভর হার্টবিট কম্পিত হতে লাগলো,মিলি দাঁড়িয়ে আছে আর বাচ্চাগুলো নিজেরা নিজেরা নাচছে।
শুভ মিলিকে গিয়ে আস্তে করে বললো
-মিলি
কিন্তু মিলি পিছনে ফিরছেই না।হয়তো মিউজিক এত্ত বেশি তাই শুনতে পাচ্ছেনা,শুভ এবার বেশ শব্দ করে ডাক দিলো মিলি বলে।বাচ্চাগুলা পর্যন্ত নাচ থেমে দাঁড়িয়ে গেলো, মিলি মিউজিক অফ করলো। পরিবেশ বেশ থমথমে হয়ে গেছে। শুভ এতটাও আওয়াজ করতে চায় নি।
শুভ চুপ করে আছে তাই মিলি বললো
-জ্বী মিস্টার শুভ মিলি শুনছে,আপনি বলতে পারেন।
শুভ আমতাআমতা করছে কিছু বলতে পারছেনা।
-কি হলো মিস্টার শুভ?
শুভ এবার অনেক চেষ্টা করে মুখ দিয়ে শব্দ বের করলো,
-বলছি ওয়েট, তুমি মিউজিক দেও মিলি বাচ্চারা নাচুক। তারা তাকিয়ে আছে।
-আরে আরে আপনি কি এমন কথা বলবেন যে বাচ্চারা শুনলে প্রবলেম হয়ে যাবে?
-আচ্ছা ওকে বলছি। বাচ্চারা মনোযোগ দিয়ে শুনো।
কিন্তু বাচ্চাকাচ্চা গুলো মনোযোগ দিলো না বরং চিল্লানো শুরু করলো।
এই বাচ্চা গুলো কেমন শত্রুতা শুরু করলো,
শুভ মিলিকে বললো,
-মিলি আমাকে ১ ঘন্টা সময় দিবে প্লিজ?
-আমি আপনাকে সময় কেন দিবো?
-কারণ অনেককিছু তোমাকে বলা হয়নি এখনো।
-সরি,এখন আমি বাসায় যাবো।
-প্লিজ প্লিজ শুধু ১ ঘন্টা দাও আমাকে, একটা রিকশা নিবো ১ ঘন্টার জন্য।
-আচ্ছা এক ঘণ্টা সময় আমি দিতে রাজি আছি তবে আমার একটা শর্ত রয়েছে।
-কিসের শর্ত?
শুভ মিলিকে খুব ভালো করে চিনে তাই শুভ বুঝতে পারছে আজ মিলি তাকে নাস্তানাবুদ করে ছাড়বে, কিন্তু রাজি না হয়েও উপায় নাই কারণ মিলির সাথে কথা বলা খুব জরুরি।
শুভ মিলিকে বলে,
-আমি রাজি, বলো কি করতে হবে??
-বাচ্চাদের একটু বিনোদন দিতে হবে।
-কিভাবে?
-কিভাবে মানে নেচে।
-নেচে মানে আমি তো এসব পারিনা। প্লিজ মিলি পাগলামি করবেনা।
-তাহলে বাসায় গেলাম।
-না,ওকে আমি নাচবো কিন্তু হাসবেনা।
-বাচ্চাদের বিনোদন দিবেন,তাই হাসতেই হবে।
-আচ্ছা ওকে।
মিলি গান সিলেক্ট করে দিবো, গান বাজতে শুরু করেছে দিলবার দিলবার হু দিলবার দিলবার,,
শুভ বেচারা সময় নষ্ট করবেনা বলে গানেই নাচা শুরু করলো আর বাচ্চাগুলো হাহাহা করে হাসতে লাগলো।
মিলি যা চাচ্ছিল তা তো শুভ করে দিলো এখন মিলির কথা রাখার পালা।
শুভ রিকশা ভাড়া করলো ১ ঘন্টার জন্য আর রিকশা।
মিলি প্রথমে রিকশাতে উঠলো আর তারপর শুভ উঠলো।
রিকশা একটু সামনে আগাতেই মিলি তার চুল গুলো ছেড়ে দিলো। চুল গুলা এবার বাতাসে উড়ছে, শুভর মুখে গিয়ে বারবার চুল গুলো পরছে। মিলি যদিও সরিয়ে নিতে চাচ্ছে কিন্তু কাজ হচ্ছেনা।
মিলি অনেকটা রেগে শুভকে বলে,
-আচ্ছা এভাবে বসিয়ে রাখতে আপনি আমাকে এনেছেন???
-না,বলবো তো।অবশ্যই বলবো, আমাকে বলতে তো হবেই।
-তো বলেন না কেন???
-আচ্ছা বলছি। মিলি কি শ্যাম্পু ইউজ করেছো ? আগে তো এটা করতে না।
-অহ আপনি এইটা জানার জন্য আমাকে এনেছেন এখানে।বাহ বাহ!!
-আরে বলছি তো একটু সময় দাও,কথা গুলো ভেতরে সাজিয়ে নিচ্ছি।আচ্ছা আই এম সরি,সেদিন তোমার সাথে এমন কথা আমার ঠিক হয়নি।সত্যি বলছি তুমি যখন পরীক্ষা দিচ্ছিলে, তখন দেখা করতে আসছিলাম সরি বলার জন্য কিন্তু আমার ইগোর জন্য বলতে পারিনি।
তারপর রেজাল্ট এর দিন সকালেই তোমার বাসায় যাবো ভেবেছি, কলেজ থেকে তোমাদের বাসায় যায় কিন্তু গিয়ে জানতে পারি তোমরা আর সেখানে থাকো না।আব্বু যে মারা গেছেন তাও সেদিন জানতে পারছি।আমি জানি আমি অনেক ভুল করেছি।
তুমি যেদিন চলে আসছিলা সেদিন তোমাকে অনেক খুঁজেছি কিন্তু খুঁজে পায়নি। আমি আমাদের সেই রুমটাতে সেদিন থেকে আর থাকিনা কারণ সেখানে গেলেই আমি তোমাকে অনেক মিস করি।প্লিজ মিলি মাফ করে দাও।
-কত সহজ বলা সবকিছু কিন্তু সবকিছু মেনে নেওয়া কি এত সহজ?
নিশ্চয় নয়।
আর কিছুদিন পর আমি ডাক্তার হয়ে যাবো। কে বলতে পারে এই যোগ্যতার জন্য হয়তো আমাকে মেনে নিয়েছেন।
আর সবচেয়ে বড় কথা ৪ বছর অনেকটা সময় এই ৪ বছর আমি নিজেকে সামলে নিয়েছি।
সেই রাতের পর নিজেকে এই অবস্থানে নিয়ে আসতে আমাকে অনেক কষ্ট করতে হয়েছে, তবে একজনের কথা শুনে শুনে আমি অনেক মোটিভেশন পেয়েছি।
আর মজার ব্যাপার হলো এই একজন আয়মান সাদিক বা সুলেমান সুখন না এই একজন হলেন আপনি।
আপনি আমাকে এত্ত পরিমাণের অপমান করেছেন আমি শুধু সেগুলো মনে করেছি, আজ দেখুন আমার অবস্থান কোথায়।
শুভ আপনি চাইলে আয়মান সাদিক কিংবা সুলেমান সুখনের মতো মোটিভেশন দেওয়া পেশা হিসেবে নিতে পারেন তবে তারা মিষ্টি মিষ্টি কথা বলে আপনি না হয় তিতা তিতা কথা বলবেন।
-প্লিজ মিলি ফিরে চলো, বিয়ে করোনা প্লিজ।
-আমার বিয়ে? আপনি কিভাবে জানলেন?
-প্রতিরাতে তোমার আইডি চেক করতাম কখন এক্টিভ করো তার অপেক্ষায় থাকতাম, এই এক আইডি ছাড়া আর কোনো যোগাযোগব্যবস্থা ছিলো না তাই।একদিন তোমার একটা পোস্ট দেখলাম আর সেখানে তুমি বিয়ের দাওয়াত দিয়েছিলে।
-বাহ বাহ! কত বুদ্ধিমান। এত্ত বুদ্ধি মাথায় তাহলে এটা বুঝেন না এই লাস্ট মোমেন্টে এসে বিয়ে না করলে কি হবে।আর আমি বিয়ে না করবোই বা কেন?
একজন স্বার্থপর মানুষের কথা ভেবে আরেকজন ভালো মানুষকে ঠকানোর কোনো ইচ্ছে নাই।
সো প্লিজ এসব আজগুবি চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলেন।
মিলি বিয়ের কার্ড একটা ব্যাগ থেকে নিয়ে শুভকে দেয় আর বলে সেদিন যেন অবশ্যই শুভ আসে।
তারপর মিলি আর ১ মিনিট সময় ও রিকশায় থাকেনা।
শুভ কার্ড টা পকেটে ঢুকিয়ে তার শার্টের হাতা দিয়ে চোখ দিয়ে টুপটুপ করে পরা পানিগুলো মুছে।
সেদিন বাসায় গিয়ে শুভ লাইট অফ করে দিয়ে দরজা বন্ধ করে দেয়।শুভর মা অনেকবার ডাক দেয় খেয়ে যেতে কিন্তু শুভ আসেনি।
আজ শুক্রবার আর আজ মিলির বিয়ে। কোনো স্বামী নিশ্চয় তার স্ত্রীর আরেক টা বিয়ে হতে দেখতে পারেনা।
শুভ ও পারছেনা।
শুভ সারারাত ঘুমাতে পারেনি তাই চোখ কেমন লাল হয়ে আছে।
শুভর মা দেখে তো ভয় পেয়ে প্রশ্ন করে বসে,
-তুই নেশা করেছিস?বাবা এইটা তুই কি করলি?
-আরে মা কিসব বলো। না এমন কিছুনা।সারারাত মাথাব্যথায় ঘুমাতে পারেনি তাই হয়তো দেখতে এমন লাগছে।
আচ্ছা মা খাবার রেডি করো আমাকে আবার বের হতে হবে।
-যাবি কোথায়?
-আজ মিলির বিয়ে ডিভোর্স পেপার এরসাথে কিছু তো গিফট দিতে হবে তাইনা।
-শুভ বাবা এসব তুই কি বলছিস।
-হ্যাঁ মা ঠিকি বলছি।
শুভ খাবার খেয়ে বের হয়ে ফুলের দোকানে গেলো, সেখান থেকে ৪ টা গোলাপ নিলো।
গোলাপ এক হাতে আর অন্য হাতে ডিভোর্স পেপার নিয়ে শুভ কমিউনিটি সেন্টারে গেলো।
চলবে,