‘মেঘাচ্ছন্ন আকাশ’
-জান্নাত খান
পর্ব-৩|
[১৮+ এলার্ট!গল্প লিখতে যেয়ে অপ্রাসঙ্গিক শব্দ বা প্রেমের মুহুর্ত ফুটাতে যেয়ে যদি চটি নামে আখ্যায়িত করা হয়,তাই আগে থেকে সতর্কতা বানী দেয়া হলো।’]
.
-‘জীবন অনেক বড় এবং কঠিন।চলার পথে বাধা আসবেই তা সরিয়ে জীবনে আগাতে হবে এটা মানি।যেহেতু আপনার মেয়ের ট্রমাটা যে কারোর পক্ষে মেনে নেয়া সম্ভব নয় সেহেতু আপনাকেই পারতে হবে কিভাবে তাকে এই ট্রমা না মনে করিয়ে দেয়ার।যেহেতু তার কিছুই মনে নাই এটা আপনার জন্য প্লাস পয়েন্ট।সে তার অতীত ভুলেছে ঠিকই কিন্তু তার সাথে ঘটে যাওয়া সেই মর্মান্তিক স্মৃতি সে এখনো হয়তো কোনখানে মুছতে পারে নি।আপনি তো দেখেলনই,কেও তাকে ধরলে সে কিভাবে চিৎকার দিয়ে উঠে।’
ডাক্তার এক নাগাড়ে এই কথাগুলো বলে দীর্ঘশ্বাস ফেললো।রাগিবের দিকে তাকিয়ে আছেন উনি।
রাগিব বললো,
-‘ডাক্তার আমি আমার মেয়েকে সুস্থ স্বাভাবিক জীবন দিব।আমার জান প্রান দিয়ে হলেও আমি তাকে রক্ষা করবো।’
ডাক্তার ম্লান হাসলো।তিনি তার চশমাটা আরেকটু নাকের ভেতরের দিকে ঠেলে দিয়ে বললেন,
-‘রেইপ ইজ দ্যা মোস্ট সেন্সিটিভ ম্যাটার ইন দ্যা হোল ওয়ার্ল্ড। কারো ইচ্ছার বিরুদ্ধে যখন তার সাথে ফিজিক্যাল হয় তখন ঠিক কতোটা পেইনফুল আমার ০℅ ও ধারনা করতে পারবো না মিস্টার রাগিব।’
ডাক্তার কথাটা বলে ছোট্ট করে শ্বাস ফেললেন।রাগিব মুখটা ঘুরিয়ে চোখের জলটা মুছে দিলেন।
রাগিব বললো,
-‘হয়তো অতীতের তিক্ততা মুছে যাওয়া সম্ভব না কিন্তু আমি সেই তিক্ততা কারো দ্বারা তার সামনে আনতে দিব না।’
ডাক্তার বললো,
-‘আরেকটা কথা।’
রাগিব মুখ তুলে চেয়ে রইলো।ডাক্তার ইতস্তত বোধ করছে কথা বলার সময়।উনি চাইলেও মনে হচ্ছে না কিছু শেয়ার করতে বাধা দিচ্ছে তাকে।ডাক্তার এমন ইতস্তত বোধ দেখে,
রাগিব বললো,
-‘এনিথিং সিরিয়াস টপিক ডক্টর?প্লিজ বি ইজি।’
ডাক্তার কিছুক্ষন সময় নিয়ে বললো,
-‘তার ড্যামেজ শরীর টা আমরা প্লাস্টিক সার্জারি দিয়ে মুছে দিলেও কখনো তার মনের ঘা আমরা মুছতে পারবো না।রুপের পরিবর্তন আমরা দিলেও,জীবন আল্লাহ দিয়েছেন।আপনার মেয়ের জরায়ুর মুখটা ধারালো অস্ত্র দিয়ে পুরো ঝাঝড়া করে দিয়েছে বাস্টার্ড রা।আমরা যতটুক সম্ভব পেরেছ সেইটা কভার করতে কিন্তু কতটুক সেটা কভারেজ হয়েছে আমরা জানি।কিন্তু….”
ডাক্তারের থেমে যাওয়া দেখে রাগিব প্রশ্ন করলো,
-‘কিন্তু কি ডাক্তার?’
ডাক্তার ইতস্তত বোধ নিয়ে বললো,
-‘সর্বপ্রথম উনি মেয়ে।উনাকে অনেক বাজেভাবে রেইপ করা হয়েছে।জরায়ুর মুখটা পুরো নষ্ট করে দিয়েছে তারা।যদি কখনো উনার বিয়ে দেন তবে শি উইল নেভার কনসিভ।তার বাচ্চা নেয়ার চান্স ১%।যদি এই ১% এর মাঝেও বাচ্চা নেই উনি,শি উইল বি ফুল ফিনিশড।কারন,তার জরায়ু বাচ্চার ক্যারির করার মতো অবস্থাতে নেই।আর হবেও না।আই ডোন্ট নো ইভেন, উনার বিয়ে হলে ফিজিক্যাল উনার আসলে কি হতে পারে।’
ডাক্তারের কথা শুনে থম মেরে গেলো রাগিব।অনুভূতি, ভাব সব শুন্য হয়ে গেছে।বেশ কিছুক্ষন সে ওইভাবে বসে রইলো।ডাক্তারের উঠে যেয়ে রাগিবের কধে হাত দিয়ে বললো,
-‘লাইফ ইজ নট অনলি এবাউট সেক্স।ওকে কর্মঠ ও বানান,তাকে সাহসী করেন।আর এই ম্যারেজ সেইটা আল্লাহর উপর ছেড়ে দেন।আপনার মেয়ের জীবন টা পুরোটা খোলা বইয়ের মতো আর সেই জীবনে যদি কেও আসতেই চায় তার সবটুকু পড়েই আসবে আল্লাহ রহমতের ইশারায়।’
ডাক্তার কিছুক্ষন থেমে আবারো বললো,
-‘তবে আরেকটা কথা।আপনার মেয়ে যখন নিজে এসে জানতে চাইবে অতীত সেদিন পর্যন্ত নিজেকে তৈরী করে নেন।কারন,ডেসটিনি বলে একটা কথা আছে।পৃথিবী গোল,আর এই গোল পৃথিবীর চারপাশের মানুষ ঘুরতে ঘুরতে যখন তাকে দেখবে তাকে আবারো সেই পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করবে।হয়তো আল্লাহ পাক,ততদিন তাকে ওইটুক ধৈর্য্য দিয়ে দিনে হ্যান্ডেল করার।কিন্তু যখন সে আপনার চোখে চোখ রেখে তার অতীতের বিষাদময় তিক্ততা জানতে চাইবে তখন নিজেকে সামলিয়ে বলে দিয়েন।কারন এই জাহিল দুনিয়াতে সেই কিন্তু আপনাকেই একমাত্র ভরসা করে।তাই সে ভরসা যেন ভাঙ্গে।’
ডাক্তার কথাগুলো বলে চলে গেলো।রাগিব বসে রয়েছে চেয়ারে।প্রশ্নগুলো ঘুরছে মাথায় ঘূর্নিঝড়ের মতো।মাথার একপাশ বড় ভনভন করছে।বিবেক থেকে প্রশ্ন আসছে,
-‘তুমি কি পারবে?’
.
১০১নাম্বার কেবিনের সাদা পর্দায় ঘেরা সিঙ্গেল বেডে শুয়ে আছে সেই নারী।চোখের নিচে ডার্কসার্কেলে ভরা।কত ক্লান্তি ঝেকে বসে আছে দু’চোখ ভরে।বেডের ছোট স্টিলের টুলে বসে আছে রাগিব।মনে মনে মেয়ের নাম ঠিক করে ফেলেছে।কি নাম দিবে।আসলে নাম ঠিক না,নামটা ঠিক বাইশ বছর আগে থেকেই ঠিক করে রেখেছিলো তার প্রিয়তমার সাথে।
রাগিব মেয়ের দিকে তাকিয়ে নাম দিলো,
-‘আয়েশা জাহান প্রিশা।’
রাগিব মেয়ের চুলে হাত বুলাতে বুলাতে বললো,
-‘আমার প্রিন্সেস প্রিশা মামুনি।আমার ছোট্ট খুকি।আমার কলিজা।আমার পরী মা।’
রাগিব এমন নানান আলাপ করেই চলে যাচ্ছে মেয়ের সাথে।এইসব বলতে বলতে,তার খেয়াল হলো প্রিশা একটু নড়ে উঠলো।রাগিব সরে আসলো।প্রিশা একটু সময় নিয়ে ধীরে ধীরে চোখ খুলছে।চোখ খুলে সে আবার হকচকিয়ে গেছে।বুকটা হাই স্পিডে দুরুদুরু করছে।আশেপাশে কে আছে দেখতে লাগলো।মনে হচ্ছে তাকে কেও আবার মারবে।পাশে কাওকে দেখতে পেয়ে সে বেডের অপরপ্রান্তে একটু সরে গেলো।
রাগিব নিজেকে সামলিয়ে নিয়ে বললো,
-‘মা বাবাকে দেখে ভয় পায়?এটা ঠিক না প্রিন্সেস।আমি যে তোমার বাবা।দেখো আমাকে।’
রাগিব এরকম কথা বলতে বলতে প্রিশার কাছে তার মাথায় হাত বুলাতে লাগলো।প্রিশার মাথায় হাত বুলাতে তার মনে হলো খুব কষ্ট তার মনে দলা পাকিয়ে কান্না আসছে।চিৎকার কান্না আসছে।বলতে ইচ্ছা করছে,
-‘কেন এতো কষ্ট হচ্ছে আমার শরীরের।নিজের শরীরটা ভার ভার লাগছে খুব।’
রাগিব যখন প্রিশার মাথাটা নিজের বুকের সাথে চেপে ধরলো তখনই প্রিশা হাউমাউ করে চিৎকার দিয়ে কাদঁতে লাগলো।আর বলছে,
-‘তুমি তো বাবা আমার তাই না।বাবারা সব জানে আমার মনে হচ্ছে।তাহলে বলো বাবা আমার কেন কষ্ট হচ্ছে?তুমি যে ধরে আছো তোমার বুকে আমাকে আমি একটু শান্তি পাচ্ছি কিন্তু তুমি ছাড়লেই মনে হচ্ছে কেও আমাকে মারবে কাটবে।তুমিই বলো বাবা আমার কেনো এরকম লাগছে।আর বুকের ভেতর এরকম অশান্তি কেন লাগছে।আর জানো বাবা কিছুক্ষন পর পর মনে হচ্ছে কেও আমার এই যে শরীরের কামড় দিচ্ছে বা মারছে আমাকে।বলো না বাবা আমার কেন এতো কষ্ট হচ্ছে।কেন মনে হচ্ছে আমার শরীরের প্রতিটা পশমে কেও জ্বালিয়ে দিচ্ছে।’
প্রিশার প্রতিটা কথা রাগিবের বুকে তীরের মতো বাধছে। হাউমাউ করে কাদছেঁ প্রিশা কিন্তু বুকটা ফেটে চৌচির হচ্ছে রাগিবের।পৃথিবীর সমস্ত শক্তি দিয়ে যদি এক করে তার মেয়ের কষ্ট দূর করতে পারতো তাই করতো সে।রাগিব প্রিশার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।প্রিশা ফোপাচ্ছে।এইভাবে হাত বুলাতে বুলাতে প্রিশা শান্ত হয়।
রাগিবের বুক থেকে মাথা উঠালো প্রিশা।মুখের এপাশে ওপাশে পানি লেগে আছে তার।
রাগিব মায়াভরে কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলো প্রিশাকে,
-‘কিছু লাগবে আমার মায়ের?’
প্রিশা বললো,
-‘বাবা আমার এইখান টা জ্বলছে।মনে হচ্ছে কিছু হবে।’
প্রিশার দেখানোর জায়গটা ছিলো নিজের তলপেটের স্থানে।রাগিব বুঝতে পেরে বললো,
-‘আমি একটা আন্টিকে ডেকে দিব তুমি তার সাথে যাবে কেমন।আর তোমার এটা আবার লাগলে এই যে আমার মায়ের ছোট ছোট আঙ্গুল আছে না।এইটা দেখিয়ে বলবা ওকে মা?’
প্রিশার অনামিকা আঙ্গুল ধরে রাগিব দেখিয়ে দিলো।প্রিশা ভয় পেয়ে বললো,
-‘না বাবা আমি যাবো না।কেও যদি আমাকে মেরে দেয়।প্লিজ বাবা আমি যাবো না।’
প্রিশাএ ছটপটানি দেখে রাগিব বললো,
-‘আচ্ছা মা আমি নিয়ে যাবো কিন্তু আন্টিকেও লাগবে।বাবা একা তো পারবে না।ইউ নো না,বাবার বিগ গার্ল প্রিশা।আমিও থাকবো।আন্টি কিছু করলে তাকে আমি আর আমার মা মিলে হুশ হুশ ফট ফট করে মারবো।’
বাবার কথায় আশস্ত পেয়ে প্রিশা শান্ত হলো।নার্সকে ডাকলো রাগিব।নার্স প্রিশাকে ধরে গেলে প্রিশা বাবার কব্জি ধরে।বাথরুমে যেয়ে বসালো প্রিশাকে রাগিব।দরজার বাহিরে দাড়িয়ে।প্রিশাকে চোখ বন্ধ করতে বলেছে নয়তো রাগিবকে আসতে দিতো না।রাগিব বাহিরে বসে আছে।তখনই প্রিশার আর্তনাদ,রাগিবের বুকটা কেপে উঠলো।
নার্স বললো,
-‘উনার জরায়ুর মুখটা আসলে কভারেজ হলেও এতো প্রস্রাব না করার ফলে একটু শোচনীয়।আর ওই জরায়ুর মুখটা বিক্ষত থাকার কারনে উনার কষ্ট।’
প্রিশা চিৎকার দিয়ে রাগিবকে ডেকে বলছে,
-‘বাবা আমার এই জায়গা এতো কষ্ট হচ্ছে কেন।আমি এইটা আর করবো না।আমার অনেক কষ্ট হচ্ছে বাবা।আমি শ্বাস নিতে পারছি না বাবা।মনে হচ্ছে কেও কেটে ছিড়ে ফেলে দিচ্ছে বাবা।বাবা আমাকে বাচাঁও।।প্লিজ বাবা!’
নার্সের চোখে পানি চলে আসছে।রাগিব দেয়াল মাথা দিয়ে কাদঁছে।দেয়ালের প্রতিটা অক্ষর জানে প্রিশার কষ্ট।
-‘কেন মেয়েদের এতো কষ্ট?’
চলবে