গল্প: আমার গল্পে শুধু তুমি
লেখক: হাচনাইন হোসেন সাব্বির
পর্ব:১০
তূর্য রাগে গম গম করতে করতে অন্তীর দিকে এগিয়ে যায়।কিছু দূর গিয়ে আবার পেছন ফিরে আসে।একটু পরেই অন্তীর পরীক্ষা শুরু হবে এখান অন্তীর জন্য সামন্য মেন্টাল প্রেশারও অনেক খারাপ হতে পারে।পরীক্ষার কথা ভেবে তূর্য আর সামনে এগোই না।চুপ চাপ গাড়ির ভেতরে গিয়ে বসে সিগারেটটা জ্বালিয়ে নেয়।সিগারেটই হয়তো তূর্যকে ক্ষনিকের জন্য চুপ করিয়ে রাখতে পারবে….
আজ অন্তীর পরীক্ষার প্রথম দিন যথা রিতী তিয়াশ আর অথৈ অন্তীকে পরীক্ষার সেন্টারে নিয়ে আসে।অন্তীর মা অন্তীর বাবাকে একা বাসায় রেখে আসতে পারেনি।অন্তী পরীক্ষা হলে ঢুকতে যাবেই এমন সময় কানে আসে কারো একজনের ডাক।অন্তী পেছন ফিরে তাকাতেই দেখে বড় খালামুনি আর সাগর ভাইয়া পেছন থেকে অন্তীকে ডাকতে ডাকতে এগিয়ে আসছে।
অন্তী খালামুনিকে দেখে থেমে যায়। সত্যিই বড্ড অন্যায় হয়ে গেছে।এতো কিছুর মাঝে খালামুনির সাথে একবারও কথা হয়নি। অন্তী খালামুনিকে সালাম দেয়।অন্তীর খালামুনিও অন্তীকে দোয়া করে দেয়।একটু টুকটাক কথা বলে অন্তীর খালামুনি অথৈ এর কাছে এগিয়ে যায়।
অন্তী ভেতরে ঢুকতে গেলে সাগড় পেছন থেকে অন্তীকে ডাক দেয়!
-অন্তী
-হু ভাইয়া বলুন,
-আমার সাথে তো একটা ও কথা বললে না? -আসলে আমার হাতে বেশি সময় নেই আমাকে ভেতরে যেতে হবে!! -ও আচ্ছা।
-অন্তী তুমি না কি তূর্যকে…
-প্লিজ ভাইয়া এইসব কথা বলার সময় এখন না! -ওও সরি। তুমি ভালো করে পরীক্ষা দাও আজ তো আমরা আছিই পরে না হয় কথা হবে….
-হু
অন্তী আর কথা না বাড়িয়ে দ্রুত পায়ে ভেতরে চলে যায়। এদিকে তূর্য যখন অন্তীর এক্সাম সেন্টারে পৌছায় তখনই চোখ যায় অন্তীর দিকে…. প্রেমিক পুরুষের চোখ এমনই হয় হাজার লোকের ভিরেও চোখ দুটো প্রিয়সির দিকেই যায়
তূর্য অন্তীর দিকে এগোতোই দেখে সাগর অন্তীর গা ঘেষে দাড়িয়ে আছে।রাগ যেন মুহূর্তের মধ্যে তূর্যর মাথায় চড়ে গেলো!
কোই সে তো একবার ও আমার কাছে এলো না অথচ সাগর ভাইকে ঠিকই খবর পাঠানো হয়ে গেছে,, তূর্য হাজার রাগ করলেও অন্তীকে আপাতোতো সে কোনো মেন্টাল প্রেশার দিতে চায় না।
তূর্য গাড়িতে অপেক্ষা করে।অন্তীর পরীক্ষা শেষ না হওয়া পর্যন্ত সে অপেক্ষা করে। অন্তী পরীক্ষা শেষ করে বের হতেই তূর্য দ্রুত পায়ে এগিয়ে যায় অন্তীর কাছে।তিয়াশ তূর্যকে অন্তীর কাছে যেতে দেখে অথৈকে আর অন্তীর কাছে যেতে দেয় না।সাগর তো আগেই মাকে নিয়ে অন্তীদের বাড়িতে চলে গেছে।
এদিকে হটাৎ করে সামনে তূর্যকে দেখে অন্তী চমকে যায়।কিছুক্ষন স্থির হয়ে অন্তী তূর্যর পাশ কেটে চলে আসতে নিলে তূর্য অন্তীর হাত চেপে ধরে…
-কি করছেন?হাত ছাড়ুন
-কি হলো?এটা কিন্তু একটা পাবলিক প্লেস!
-বাড়ি চল!
-বাড়িই তো যাবো।
-তাহলে এতো কথা বলছিস কেন?(অন্তীকে টানতে টানতে)
-বলছি তার কারণ আমি আপনার সাথে কোথাও যাবো না।আমি তিয়াশ ভাইয়ার সাথে যাবো!ছাড়ুন আমাকে… অন্তী এক ঝটকায় তূর্যর থেকে নিজের হাতটা ছাড়িয়ে নেয়।তূর্য এবার আরো শক্ত করে অন্তীর হাত চেপে ধরে,, -যখন বলেছি যাবে তখন যাবে আমার সাথেই যাবে!
তূর্য বেশ গলা ভার করে অন্তীকে ধমক দেয় অন্তী এবার চুপ হয়ে যায়। তূর্য অন্তীকে গাড়িতে বসিয়ে দেয়।অন্তী মুখ গোমরা করে গাড়িতে বসে পড়ে।
-পরীক্ষা কেমন হয়েছে?
-আমি কিছু জানতে চেয়েছি?
-কি হলো?
-ভালো হয়েছে।
-ভালো হলেই ভালো…
এবার দুজনেই চুপ হয়ে যায়।দুজনের মৌনতা কাটিয়ে অন্তী বলতে শুরু করে,, -তূর্য ভাইয়া প্লিজ আমি ঐ বাড়িতে যাবো না।আমার দুদিন পর আরেকটা পরীক্ষা আছে আমাকে তো পড়তে হবে বলো!!
তূর্য অন্তীর কথার কোনো জবাব দেয় না। -সাগর কি আজ তোদের ওখানেই থাকবে?
-হু।
কিন্তু প্লিজ আমি ঐ বাড়িতে যাবো না…. -চুপ।তোকে নিয়ে গেলে তো তুই যাবি!
– তূর্য অন্তীকে নিয়ে অন্তীদের বাড়িতে আসে।তূর্য গাড়িটা এক সাইডে পার্ক করতে চলে যায়।আর অন্তী ছুট লাগায় ভেতরে যাবার জন্য।অন্তী বাড়ির কলিং বেলটা পর পর দু বার বাজাতেই সাগর এসে দরজাটা খুলে দেয়।
অন্তীকে দেখ সাগর এলেডি বাল্বের মতো জ্বলে উঠে,,
-অন্তী তুমি এসেছো!
-হুহ দেখতেই তো পাচ্ছো এসেছি এখন সড়ো আমাকে ভেতরে যেতে দাও
-অন্তী আমার তোমার সাথে কিছু কথা ছিলো!
-আগে আমাকে ভেতরে তো যেতে দেবে…
সাগর আর অন্তীর গোটা নামটা মুখে নিতে পারে নি।অন্তীর পেছনে তূর্যকে দেখা মাত্রই এলেডি বাল্ব যেন মুহূর্তেই ফিউজ হয়ে যায়।
সাগর দরজার কাছ থেকে সরে দাড়ায়। তূর্য বেশ তোড়জোড় করেই এসেছে।অন্তীর পরীক্ষা শেষ না হওয়া পর্যন্ত তূর্য অন্তীর সাথেই থাকবে।তূর্যর এই সিদ্ধান্তে অন্তী নারাজ হলেও মা আর দাদীর মুখের উপর কোনো কথা বলার জো নেই তার।
অন্তীর সারা দিনটা বইয়ে মুখ গুজেই কেটে যায়। তূর্যও সারাদিন অন্তীর পাশে পাশেই আছে যদিও কেউ কারো সাথে কোনো কথা বলছে না তবুও। অন্তী যেখানে যেখানে যাচ্ছে তূর্যও অন্তীকে ছায়ার মতো অনুসরণ করছে।
অন্তীর দাদী তো রিতিমতো তূর্যকে নিয়ে ঠাট্টা করা শুরু করে দিয়েছে নাতী গো তুই তো দেখছি ভালোই বউয়ের আচল ধরা হইছিস তূর্য নানীর কথায় শুধু একটু হাসে।এদিকে অন্তী গা জ্বলছে।অন্তীর এক মুহূর্তও তূর্যর সাথে থাকতে ইচ্ছে করছে না।
রাতে সবাই যে যার মতো ঘরে শুতে এলে অন্তী তূর্যও ঘরে আসে।অন্তী বই পত্র গুছিয়ে ঘর থেকে বেরুতে নিলে তূর্য অন্তীকে আটকায়।
-এগুলো নিয়ে কোথায় যাচ্ছিস?
-পাশের ঘরে!
-মানে
-আমি রাতে পড়তে ভালোবাসি তুমি তো এটাও ভুলে গেছো!
-তো?
-আমি আলো জ্বালিয়ে পড়লে তুমি ঘুমাবে কি করে?
-আমি কি তোকে বলেছি আমি ঘুমাবো?
-তাহলে?
-চুপচাপ বই পত্র নিয়ে পড়তে বস!
অন্তীর আর অথৈ এর ঘরে যাওয়া হয় না।অন্তী রাগে গজ গজ করতে করতে টেবিলে বই খাতা নিয়ে বসে পড়ে!! বেশ কিছুক্ষন চুপ থাকার পর অন্তীই নিরবতা কাটিয়ে তূর্যর দিকে প্রশ্ন ছুড়ে মারে,,
-কেন এসেছো এখানে? কি চাই আপনার?
-মানে
-মানে এটাই বাড়িতে আপনার মেমসাহেবকে রেখে আবার আমার কাছে আসার কারণ?এক রাতে মন ভরেনি নাকি?? তূর্য এবার নিজেকে সামলাতে পাড়ে না।উঠে এসে অন্তীর গালে কষে একটা চড় মারে।
-অনেক সাহস হয়েছে তোর।ঐ যে এক দিন বলেছিলাম তুই আমার থুতু ফেলারও যোগ্য না! -তো যাও না যে তোমার যোগ্য তার কাছে যাও আমাকে…… তূর্য এবার অন্তীকে শক্ত করে দেওয়ালের সাথে চেপে ধরে,, -নিজের বউকে অন্যের হাতে তুলে দেওয়ার মতো প্রেমিক পুরুষ আমি নই!তোর সাগর ভাই যেদিন এখান থেকে চলে যাবে সেদিনই আমি এখান থেকে চলে যাবো!
অন্তী ছল ছল চোখে তূর্যর দিকে তাকায়,, -তোমার মেমসাহেব তোমাকে আমার কাছে থাকতে দিবে তো??
তূর্য কথা সম্পূর্ন করার আগেই তূর্যর ফোনটা বেজে উঠে….. -ঐ দেখো তোমার মেমসাহেবের ডাক পড়েছে বোধয়,, অন্তী কথাটা বলেই তূর্যর কাছ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নেয়।তারপর দরজা খুলে বাহিরে চলে আসে। অন্তী কান্না করতে করতে বাড়ির উঠানে আসতেই চোখ যায় উঠানের শেষ প্রান্তে দাড়িয়ে থাকা দুজন ছায়া মূর্তির দিকে….
মৃদু চাঁদের আলো আফছা সবকিছু….অন্তী দেখতে পায়, দুজন ছায়া মূর্তী একে অপরের সাথে লেপ্টে দাড়িয়ে আছে অন্তী মৃদু পায়ে এগিয়ে যায় সে দিকে…..