#পবিত্র_সম্পর্ক
#পর্ব_তিন
#Nishat_Tasnim_Nishi
–“সুন্দর হয়েছে না?আমার ফোনের ক্যামেরা ও সরি ইশির ফোনের ক্যামেরা তো একদম জোস। দাড়ান শাশুড়ি আম্মুকে জিজ্ঞেস করি সুন্দর হয়েছে কী না?”
রুহি যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই উনি দৌড়ে এসে আমার হাত ধরে ফেললেন।
—“প্লিজ,প্লিজ।”
–“ওকে,যাবো না।কিন্তুু এর বদলে আমি কি পাবো?”
–“যা বলো তাই করবো।”
—“ওকে,মেনে নিলাম। এ একমাস আপনাকে আমার সব কথা শুনতে হবে।”
–“আচ্ছা শুনবো।”
–“সত্যি তো?আমার বিশ্বাস হচ্ছে না।”
—“কি করলে বিশ্বাস হবে?”
–“এখন গিয়ে ওই মেয়েটাকে অপমান করে ব্রেক আপ করে ফেলবেন।”
–“নাআআআ”
–“উফফ,কান ফাটিয়ে দিবেন তো।এখনই তো না বলতেছেন,তাহলে পরে কী হবে।ওকে আমি গিয়ে দেখিয়ে আসছি।”
–“এই না না। আমি যাচ্ছি।”
বলেই রোহান কেঁদে দিলো। রুহির দিকে কটমট দৃষ্টিতে তাকিয়ে চোখের পানি মুছে ফেললো।এরপর রোহান তার গার্লফ্রেন্ডের কাছে গিয়ে বললো,,,
–“মিম,তুমি চলে যাও।”
–“কেনো বেবী?তুমি এভাবে বলছো কেনো?ওই মেয়ে কে আর ও তুমি ওর সাথে কিসের কথা বলতেছিলে?”
–“তোমাকে কেনো বলবো?যাও এখান থেকে আর এরপর আমার সাথে যোগাযোগ করবে না।”
কথাটা শুনার সাথে সাথে মিম রোহানকে জড়িয়ে ধরে বললো,,
—“বেবী,,তুমি এসব কি বলছো?আমি তোমাকে ছাড়া বাচবো না।আমি তোমাকে প্রচুর ভালোবাসি।”
রোহান মনে মনে ভাবলো,আগে জীবন বাঁচানো ফরজ।এখন তো শুধু রুহি দেখেছে,এরপর যদি আরো কেউ দেখে তাহলে তো শেষ। ও রেগে গেলো,মিম কে এক ঝটকায় সরিয়ে গালে চটাস চটাস করে দুইটা থাপ্পর দিয়ে বললো,,
—“তুই যাবি নাকি অন্য কিছু করবো?”
মিম গালে হাত দিয়ে ছলছল নয়নে ওর দিকে তাকিয়ে বললো,,
—“বেবী তুমি আমায় মারলে?আমি তোমার সাথে কথা বলবো না।”
–“বলিস না।এখন যা এখান থেকে,এমনিতপও আমি তোর সাথে কোনো কথা বলবো না।সারাদিন এটা কিনে দে,ওটা কিনে দে,,তোর থেকে তো মাহি আরো ভালো ছিলো ও আমাকেও একটা ঘড়ি কিনে দিয়েছিলো।তুই আমাকে একদিন ঝালমুড়ি খাইয়ে দশদিন খোটা দিয়েছিস।যা ফকির নি তোর সাথে এখনই ব্রেক আপ।”
এতক্ষণ মিম নিজের আত্মসম্মান পরোয়া করে নি কারনও ভেবেছে,রোহান ডিম পাড়া হাসের মতো।কিন্তু এখন ওর আত্নসম্মান নিয়ে কথা বলায় মিম রেগে গিয়ে চেঁচিয়ে বললো,,
–“আরে যা,,তোর সাথে আমার কোনো কথা নেই। আমি তো ঝালমুড়ি খাওয়াইছি।তুই তো একটা চকলেটও কিনে দেস নাই,কিপ্টা হারামি।প্রতিদিন ই তো ওয়ালেট ফেলে আসোছ। তুই ফকির তোর চৌদ্দ গুষ্ঠি ফকির। এই দেখ আমার রাকিব আমাকে আই ফোন কিনে দিয়েছে। ফকিরের বাচ্চা তুই তো আমাকে কোনোদিন এক বোতল পানিও কিনে দেস নাই। যা ভাগ,তুই কি ব্রেকআপ করবি, আমিই করে ফেললাম।”
কথাগুলো এক দমে মিম বলে ওর পার্স নিয়ে স্টাইল করে হাটতে হাটতে বের হয়ে গেলো। রোহান ও পিছন থেকে চেচিয়ে বললো,,”আরে যা যা,,তোর মত কত মিম দেখছি। আর এদিকে রুহি হা হয়ে ওদের দিকে তাকিয়ে রইলো।ও ভাবলো কি আর হলো কী?ও ভেবেছে হয়তো ওদের প্রেম সত্যিকার অর্থে আর রোহান হয়তো অন্যকিছু বলে কথা কাটিয়ে দিবে।কিন্তুু বিষয়টা এমন মোটেও এমন নয়,রোহান কখনই প্রেম-ভালোবাসা নিয়ে সিরিয়াস ছিলো না। ফ্রেন্ডদের কথার চাপ থেকে বাঁচতে গার্লফ্রেন্ড বানিয়েছে। কখনো সিরিয়াস কারো সাথে রিলেশনে যায় নি,ওর প্রত্যেকটা গার্লফ্রেন্ডের ই আলাদা দু-চারটা বয়ফ্রেন্ড আছে। তাই তো সহজেই মিম এর সাথে ব্রেকআপ করে ফেলেছে।
রুহি ঘরের মধ্যে পায়চারী করছে সেই কখন থেকে,,কেমন অস্থির অস্থির হয়ে আছে। একটু আগে ইশির ফোন থেকে ওর বয়ফ্রেন্ডকে ফোন দিয়েছিলো, দু তিনবার রিং হওয়ার পর রিসিভ ও হয়েছিলো। রুহি উৎফুল্ল হয়ে কিছু বলতে নিচ্ছিলো তার আগেই ওপাশ থেকে মেয়েলী কন্ঠ ইংরেজী ভাষায় বলে উঠলো,,”কে আপনি?” রিসাদের ফোনে মেয়ের কন্ঠ শুনে থমকে যায় রুহি একদম চুপ করে যায়।কৌতূহল নিয়ে ফোনের ওপাশের বিষয় শুনতে নিমগ্ন হয়ে পড়ে। মেয়েটি বারবার বলে যাচ্ছে “কে আপনি,কাকে চান?” রুহির কোনো জবাব না পেয়ে মেয়েটি রিসাদকে ইংরেজী ভাষায় বললো,,” বেবী,দেখো না কে ফোন দিয়েছে। কথা বলছে না তো।”
ঘুমু ঘুমু কন্ঠে রিসাদ বললো,,”বেবী,ফোন রাখো।তুমি এদিকে আসো,আই ওয়ান্ট ইউ মোর।”
কথাটা শেষ হওয়ার সাথে সাথে ফোন টা কাটা গেলো।
সেই তখন থেকেই ও টেনশনে শেষ,আচ্ছা রিসাদের কী অন্য মেয়ের সাথে সম্পর্ক আছে?রুহি আর ভাবতে পারছে না টেনশনে শেষ।ওর মাথায় একবার কোনো বিষয় ঘুরপাক খেলে ও সেটা সমাধান না করা পর্যন্ত থাকতে পারে না। তাই ও পায়চারী করতে করতে সিদ্ধান্ত নিলো এ বিষয় খবর নিয়ে দেখবে। তাই ও তৎক্ষনাত ইশিকার ফোন থেকে ওর ফ্রেন্ড সার্কেলকে বলে রিসাদ এখন কোথায় আছে কী করতেছে কার সাথে আছে,সব খবর দিতে..!!
কারন এর আগেও রিসাদকে ওর বহুবার সন্দেহ হয়েছে,তখন ততটা পাত্তা দেয় নি। কিন্তুু সকালে রোহানের কাহিনী দেখে ও বিষয়টা হালকা হিসেবে নেই নি,যদি রিসাদেরও সত্যি গফ থাকে,ও তো মরেই যাবে।
ঘন্টাখানেক পর ইশিকার ফোনটা বেজে উঠলো,রুহি ফোনের পাশেই ছিলো।ও সচেতন চোখে ফোনের দিকে তাকালো,বন্ধুর নামটা ফোনের স্ক্রিনে দেখে ও ব্যস্তভঙ্গিতে রিসিভ করলো। রুহি কিছু বলার আগেই রুহির বন্ধুরা এক এক করে রিসাদের বিষয়ে সব বলতে লাগলো। রিসাদ যে টাকার জন্য এর আগেও বহু বড়লোক মেয়ের পিছনে পড়েছে,সেটা রুহি আজ জানলো।সব শুনে রুহি চুপ করে রইলো,কিছুক্ষন পর হুম বলে কেটে দিলো। মিনিটখানেক পর ও ফিকরে কেঁদে দিলো। শেষ কবে কেঁদেছিলো মনেই নেই,সবসময় হাসিখুশি থাকতো।কান্না-কাটি একদম ই করতো না। ও দুটো জায়গায় দূর্বল এক হলো ওর মামা আর দুই রিসাদ। রিসাদকে সেই কলেজ লাইফ থেকে ভালোবাসে। একবার একটা মেয়ে বলেছিলো যপ রিসাদ ওকে ঠকিয়েছে, রুহি তখন রাগ করে রিসাদকে যা নয় তা বলেছিলো কিন্তু এরপর রিসাদ প্রমানসহ দেখালো যে ও নির্দোষ, সেই থেকে ও রিসাদকে এক বিন্দু পরিমানও অবিশ্বাস করে না,রিসাদ যেভাবে বলে ওভাবেই সব করে।এখন পর্যন্ত ওর মামাকেও রিসাদের কথা বলে নি কারন রিসাদ বারন করেছিলো। রুহির কান্নার বেগ ধীরে ধীরে বাড়তে লাগলো,একটা সময় একটু জোরেই কেঁদে দিলো। তখন রুমের পাশ দিয়ে রোহান যাচ্ছিলো,রুহির কান্নার আওয়াজ পেয়ে ও ব্যস্ত হয়ে রুমে প্রবেশ করলো। ফ্লোরে বসে মোবাইল বুকে নিয়ে ফুফিয়ে কান্না করে চলছে রুহি।রুমে প্রবেশ করে রুহিকে এ অবস্থায় দেখে রোহান কিছুটা হকচকিয়ে গেলো।ও দ্রুত হেটে রুহির পাশে গিয়ে বসে পড়ে।ব্যস্তভঙ্গিতে বারবার বলতে লাগলো,,”কি হয়েছে রুহি?আপনি ঠিক আছেন তো?”
রুহি আগের মতো কেঁদেই চলছে,কান্না করতে করতে রুহির হেচকি উঠে যায়। রোহানের দিকে তাকিয়ে কাতর দৃষ্টিতে বললো,,”ভালোবাসায় কেনো এত কষ্ট?” রুহির প্রশ্ন শুনে রোহান থতমত খেয়ে যায়, ও তো কখনো কাউকে ভালোইবাসে নি ও কীভাবে উত্তর দিবে। রোহান রুহির হাত ধরে বললো,,”কী হয়েছে?” রুহি কয়েক মুহূর্ত মেঝেতে স্থির দৃষ্টি নিক্ষেপ করে এক এক করে সব বললো। কথা বলার ফাকে ফাকে রুহি ফিকরে কেঁদে দিয়েছিলো,আর রোহান এক দৃষ্টিতে রুহির দিকে তাকিয়ে রইলো। কান্না করলেও নারীকে যে এতটা আবেদনময়ী লাগতে পারে রোহানের জানা ছিলো না, ওর কেনো যেনো রুহিকে ভালো লাগতে শুরু করে। পরক্ষণে ভাবলো, প্রত্যেক মেয়েকে দেখলেই তো ওর এমন মনে হয়। এ কথা ভেবে চুপ করে গেলো।ও কী বলে রুহিকে শান্তনা দিবে ওর নিজেরেই তো আজকে ব্রেকআপ হয়েছে। রুহির দিকে ভালো করে তাকিয়ে মনে মনে ঠিক করলো মেয়েটা দদেখতে তো খারাপ ননা শুধু ব্যবহার ই না একটু খারাপ বাকি সব তো ঠিকই আছে।তাহলে তো রুহিকে লাইন মারতেই পারে।তারউপর লিগ্যাল ওয়াইফ। এখন রুহি একদম ভেঙ্গে গিয়েছে এই সুযোগ ওকে একটু শান্তনা দেখাই,তাহলে নিশ্চিত প্রেমে পরে যাবে। এ আশা নিয়ে ও রুহির কাধে হাত দিয়ে বললো,,”থাক,কেঁদো না।কিছু ছেলেরা এমন বাজে হয়,কেনো যে এমন করে বুঝা যায় না।তু,,” রোহানের কথা শেষ হওয়ার আগে রুহি হাত ঝটকা মেরে সরিয়ে দিয়ে বলে একটু সরে বসে কথা বলেন।রোহান অবাক হয়ে রুহির দিকে তাকালো,”এ কেমন মেয়েরে ভাঙ্গবে তবু মচকাবে না!”
.
চলবে?