সাবিহার বিয়ে পর্ব ১৯+২০+২১

সাবিহার বিয়ে”
লেখক :-শ্রাবণী ঘোষ
পার্ট-১৯-২০-২১
একসাথে,

রাতে সাবিহাকে কয়েকবার ফোন দিল
মেহবুব।ও ধরে নি।শেষে কখন যে
ঘুমিয়ে পরল নিজেই জানে না,যখন ঘুম
ভাঙল ঘড়িতে দেখে সাড়ে ছয়টা।
ধরফর করে উঠল।হিসেব করে দেখল
যে স্ট্যান্ডে পৌছুঁতে পারবে কিনা এক
ঘণ্টার মধ্যে ওকে যেভাবেই হোক।
কোনো মতে ফ্রেশ হয়ে গাড়ি
নিয়ে বের হলো। আসার সময় বোন
বলছিল -ভাইয়া কৈ যাস?
উওরে বলেছিল-তোর ভাবিকে
আনতে।
-কি এত সকালে?
ও আর কোন কথা না বলে চলে
আসছিল।যখন অর্ধেক পথ পেরোল
দেখে সাতটা বিশ । টেনশনে ও পুরো
অস্থির হয়ে গেছিল।একবার ভাবল
সাবিহাকে ফোন দিবে পরে চিন্তা করল
না যে লোক আমার থেকে পালাতে
চায় সে যদি জানতে পারে আমি তার পিছু
নিয়েছি তাহলে সে অন্য পথ ধরবে।
যখন গাবতলি পৌছাল ঘড়িতে তখন সাতটা
চল্লিশ। তখন বাজঁল নতুন বিপওি, ওতো
জানে না সাবিহা কোন বাসে যাবে। এই
বিশ মিনিটে কিভাবে খুজঁবে??তখন করল
কি ওখানের এক সার্জেন্টকে নিজের
পরিচয় দিল।তাকে বলল আটটায় খুলনায়
যাবে এমন বাস আটকাতে এবং সেই
বাসের সুপারভাইজারকে জিজ্ঞাস করবে
যে তাদের যাএী লিস্টে সাবিহার নামে
কোন যাএী আছে কিনা??সে
কয়েকজন কনস্টেবলকে বলল।বেশ
কিছুক্ষন পর সবাই এসে বলল -স্যার মিনিমাম
দশটা গাড়ি আটটার সময় খুলনার উদ্দেশ্যে
রওনা দিয়েছে কিন্তু সাবিহার নামে কেউ
নেই।
কথাটা শুনে মেহবুব খুব আশাহত হলো।
তাহলে কি সাবিহা আরও আগে চলে
গেছে?নাকি ও আসবে বুঝতে
পেরে চলে গেল? জানার জন্য
কাউকে ফোন দিবে সে উপায়ও নেই।
সাবিহাকে ফোন দিল আবার ফোন অফ।ও
আরও কিছুক্ষন থাকল যদি সাবিহা আসে
কিন্তু না আসল না। শেষমেষ
সার্জেন্টকে বলে কন্সটেবলদের
পাঠাল সব খুলনাগামী বাসের টিকিট
কাউন্টারে শেষ ভরসা হিসেবে কারন
এমনও তো হতে পারে যে অন্য
টাইমে সাবিহা টিকিট কাটছে।হ্যাঁ শেষে
ঠিকই পেল খুলনাগামী যাএী সাবিহার নাম
কিন্তু সে আরও একঘন্টা আগে চলে
গেছে সাতটার বাসে।শুনে ওর পাগলের
মতো অবস্থা হলো।কি করবে
ভেবে পাচ্ছিল না। ওর এই অবস্থা
দেখে সেই সার্জেন্ট জিজ্ঞাস করল –
স্যার উনি কে? কোন ক্রাইম করছে?
আমি কি সিগনালে জানাব?এক ঘণ্টায় বেশি
দূরে যায় নি। কোন না কোন জায়গায়
ঠিকই ধরা পরবে যদি না ফেরিতে উঠে
যায়।আপনি শুধু ছবিটা দেন।আমি পাঠাই।
মেহবুব রাজি হলো না কারন এতে সাবিহা
কে হেনন্তা হতে হবে।জবাবে শুধু
তাকে বলল-হ্যা সে ক্রাইম করছে আমার
ভালো বউ হয়ে আর এর সাজা আমি
নিজে তাকে দেব। থ্যাংকস।–বলে
চলে এলো।
সার্জেন্ট আর কনস্টেবলরা ওর এই
জবাবে পুরো হা।
বাসায় যখন এলো দেখে ওর পরিবারের
সবাই বসে আছে ওদের জন্য।
-কি রে সাবিহা কোথায়?? এই বলে মা
পিছনে দেখল।
-মা ভাইয়া বোধহয় ভাবির সাথে আবার ঝগড়া
করেছে তাই তো ভাবি আসে নি।–
বোন বলল।
-তুই চুপ থাক।জানিস বাবা আমি সাবিহাকে কাল
থেকে কতবার ফোন দিয়েছি ও ধরল
না। ও কি আমার উপরও রাগ?
ভাবি বলল-দেখো আমরা নাস্তাও বানিয়েছি
তোমাদের জন্য।সাবিহা কই? আসল না
কেন?
মেহবুবের কোন কথারই উওর দিতে
ইচ্ছে হলো না সোজা ওর রুমে গেল
আর যাবার সময় বলল-ও আসবে দেরি
হবে আর তোমরা কেউ ওর ফ্যামিলিতে
জানিও না। তারা কিছুই জানে না সমস্যার কথা।
আমি অফিসে যাব দেরি হয়ে যাচ্ছে।
অফিসে বসে কাজের ফাঁকে ফাঁকে
ভাবতে লাগল কিভাবে কি করবে। ওর
মনে আরও জিদ চেপে গেল সাবিহাকে
কাছে পাবার।শেষে ওর এক বন্ধু
ফোনে বলল-তুই সোজা ভাবির বাসায়
চলে যা।জোর করে নিয়ে আয় ঢাকা
লাগলে ব্লাকমেইল কর। দূরে বসে
কিছুই হবে না।
এই কথাটা ওর মনে ধরল।এখন যা কিছুই
করতে হবে সোজাসুজি করবে। সাবিহা
ম্যাম অনেক ঘুরাইছো আর না।
ওদিকে সাবিহা সকালে রওনা দেয়ায়
বিকেলবেলাই খুলনা পৌঁছে গেল। সবাই
তো খুব খুশি ওকে পেয়ে তবে
একটু আচাহত হলো তাদের নতুন
জামাইকে না পেয়ে।
-সাবিহা মেহবুব কেন আসলো না রে? মা
জানতে চাইল।
-মা ওনার অনেক কাজ।
-তাও তো অন্তত একদিনের জন্য
আসত, তুই ও বললি কাউকে ফোন দিবা না
আমরা আরও মেহবুব বা ওর ফ্যামিলির
কাউকে ফোন দেই নি।
-কিভাবে আসবে? আমরা কি ওদের
কাউকে দাওয়াত দিয়েছি?এটা তুমি একদম
উচিৎ করো নি আম্মু। ওর পরিবার না আসত
মেহবুবকে আমাদের নিজের বলা উচিৎ
ছিল।তোমার জোরের জন্য আমরা পারি
নি।
-না বাবা তোমরা বলো নি এরজন্য আসে
নি তা না উনি ব্যস্ত।
ভাবল একটু পরে যখন সেপারশন লেটার
দেখাব তখন বুঝবা তোমরা কেন সে
আসে নি??ওদিকে তিতুন আর তিতলি তো
খুব রাগ। তারা সাবিহার জন্য না তাদের
আংকেলের জন্য হাহুতাশ করতে ছিল।
মেহবুবকে না আনার জন্য ওকে কিছু
বকাবকিও করল।এত লম্বা জার্নির পর
ওদের এই কথা আর সহ্য হলো না। ও ও
উলটা বকা দিয়ে ওদের ভাগিয়ে দিল।
যখন ওর দুলাভাই বলল,-মেহবুব কেন
আসবে না? ও ই তো বলল যে
তোমরা আসছ, ও তখন একটু ব্যস্ত ছিল
তাই আমাকে বলল তোমার কাছ হতে
জানতে যে কখন তুমি টিকিট কাটছ।
শুনে তো পুরো থ সাবিহা। ওর
মাথাপুরো এলোমেলো হয়ে গেল।
তারমানে ভাইয়া মেহবুবকে সব
বলেছে?আর মেহবুব ওর খবর জানার
জন্য উলটো ব্যস্ততার অজুহাত দিছে।
শয়তান মেজর!!!!! ভাগ্য ভালো ওর নাইট
সিফট ছয়টায় শেষ হওয়ায় জ্যাম এরাতে
ব্যাগ নিয়ে তখনই ও বাসস্ট্যান্ডে চলে
আসে নইলে আটটার সময় আসলে
মেহবুব টানতে টানতে ওকে নিয়ে
যেত।হাঁপ ছেড়ে বাঁচল বুদ্ধি না করে
তখন রওনা না দিলে না জানি কি হতো।কিন্তু
সাবিহা যতই হাঁপ ছাড়ুক না কেন ও তো
জানে না ওদিকে ওর মেজর সাহেব কি
করছে ওকে পাওয়ার জন্য
#part-২০
সারাটাদিন মেহবুবের খুব বিরক্তিতে
কাটল।যতই কাজের মধ্যে ডুবার চেস্টা
করুক না কেন কোনভাবেই নিজের
মেজাজ ঠিকরাখতে পারছিল না।সাবিহাকে
ফোন দিয়েছিল বরাবরের মতো
ফোন অফ। ওদিকে টেনশনও হচ্ছিল
যে ঠিকঠাক পৌছালো কিনা শেষে
বিকেলে ওর শাশুর ওকে ফোন দিয়ে
জানাল যে সাবিহা পৌছে গেছে। সে
সরল মনে এও জিজ্ঞেস করল,
– বাবা তুমি কেন আস নি? বিয়ের পরে
একটু ঘোড়াফিরা কর দূজন। কাজ তো
সবসময়ই থাকবে।সাবিহা বলল তুমি খুবই
ব্যস্ত তাই আসো নি আমরা আরও
তোমার জন্য অপেক্ষা করেছি।
মেহবুব তো আর বলতে পারে না
কেন আসতে পারে নি, তার মেয়ে কি
কি কান্ড করেছে। শুধু বলল-আমি পরে
সময় করে আসব।
উওরে ওর শাশুর বলেছিল-ঠিক আছে
তাহলে সাবিহা যখন যাবে তুমি ওকে নিতে
এসো তাহলে একটু বেড়ানোও হবে।
তখন এই কথাটা ওর মনে ধরল আসলেই
তো এটা তো সম্ভব। ওখানে গিয়ে
সাবিহাকে নিয়ে আসবে তাহলে ঐ পিচ্চি
ডাবিহা কিছুই করতে পারবে না। কারন ও
চাচ্ছিল না সাবিহা ওর ফ্যামিলিতে সব জানাক
তাহলে সবাই ওর বিপরীতে যাবে তখন
ওর পরিবারের সবাই উলটো ওকে ভুল
বুঝবে।আর যাই হোক কোন মা বাবা
তাদের মেয়েকে এমন কারও হাতে
দিতে রাজি হবে না যে তাদের
মেয়েকে প্রতি পদে পদে কষ্ট
দিয়েছে।তাহলে ও সাবিহাকে
সারাজীবনের জন্য হারাবে।তাই ও ওর
বন্ধুর বুদ্ধি অনুযায়ী বলল-বাবা আমি কাল
ভোরের গাড়িতে আসছি।
-এতো খুবই ভাল বাবা।তুমি কখন রওনা দিবা
শুধু আমাকে জানাবা। আমি বাসস্ট্যান্ডে
থাকব তোমাকে আনার জন্য।
-বাবা আপনি প্লিজ সাবিহাকে বলবেন না।
আমি আসলে জানাতে চাচ্ছি না কারন ওর
সাথে আমি যাই নি এটা নিয়ে একটু মন খারাপ
করছিল।তাই ভাবলাম হঠাৎ গিয়ে হাজির
হবো।
নিজের লজ্জার মাথা খেয়ে ওর
শাশুরকে একথা বলল।
ওর শাশুর হাসতে হাসতে বলল-ঠিক আছে
বাবা আমরা ওকে জানাব না।
ফোন রাখার পর ভাবল ডাবিহা ম্যাম তুমি আমার
হাতে আর কি কি করাবা?এরপরও যদি জেদ
করো হাত পায়ে শিকল বেঁধে খুলনা
হতে নিয়ে আসব।ওদিকে বাসায় ফোন
দিয়ে ওর বোনকে বলল,
এই শোন , তোর ভাবি খুলনা গেছে
আমি তাকে নিয়ে আসতে কাল
ভোরেই রওনা দিব।তোকেই শুধু
বললাম।তুই তোর টেপ রেকর্ডার
বাজিয়ে কাউকে বলবি না নইলে সাবিহার
কানে যাবে।সবাইকে আমি বলব
অফিসের কাজে বাইরে যাচ্ছি,এদিকে
তুই সামাল দিবি।
-তোর জন্য কিছুই করতে রাজি না শুধু
করব ভাবির জন্য।
-তাই না?মনে রাখিস আমারটা গুছিয়ে
তোকে দূর করব আর সব থেকে
খারাপ লোকের সাথে তোকে বিয়ে
দিব।
-তোর মতো খারাপ ভাই পেয়ে আমার
অভ্যাস হয়ে গেছে এখন আর শত
খারাপেও কিছু আসবে না। হাহ্।
-পটর পটর করিস না ভাবিকে যদি পেতে
যাস তাহলে আমার ব্যাগটা গুছা।
-আমি তো তোর কাজের লোক না?
-ব্যাগটা একটু দয়া করে গুছারে মা,কথা কম
বল।ব্যাগ না গুছালে কিন্তু আমি যাব না আর
ভাবিও আসবে না।তাহলে সারাজীবন
কাজের লোক বানিয়েই রাখব।
-ভাবি তোকে তার কাজের লোক
বানিয়ে রাখবে।
-হুম রাখ এবার।
ফোন রেখে নিজেই হেসে বলল,-
কাল তোমার চেহারাটা আমি খুব মজা নিয়ে
দেখব মিসেস মেহবুব।
মলে গেল সাবিহার জন্য শাড়ি কিনলো।
বাসার সবার জন্য কিছু না কিছু কিনলো।মনে
পড়ল সাবিহাকে নিয়ে যেদিন বের হয়ে
ছিল সেদিন ওর সাথে যাচ্ছেতাই ব্যবহার
করেছিল।এখন ওসব ও ভাবতেই পারছিল
না।
ওদিকে ও বাড়ির সবাই তো খুব খুশি। তারা
জোরেশোরে আয়োজন শুরু করল
মেহবুবের জন্য।সাবিহাকে কিছুই বলল না
আর ও ও খুব ক্লান্ত লং জার্নি আর মানসিক
সম্যাগুলো তো আছেই। বাসার সবার খুশি
আর আয়োজন দেখে ভাবল বিয়ের
এতদিন পর বাসায় আসছে তাই এমন অবস্থা।
ভেবেছিল যে রাতেই সব কথা বলবে
কিন্তু সবার খুশিটা দেখে নিজেকে
দমিয়ে রাখল।ভাবল পরে একটু ফ্রি হয়ে
বলবে,এত সুন্দর হাসি খুশি মুখের কি
অবস্থা হবে চিন্তা করে ওর বুকটা হাহাকার
করে উঠল।
রাতে মেহবুব বাসায় ফিরে দেখে
বোন ওর ব্যাগ গুছিয়ে রাখছে। খাবার
টেবিলে সবাইকে বলে ও কাল বাইরে
যাচ্ছে কারও কোন ভাবান্তর হলো না।
জানেই এই উদাসীনতার কারন কি তারপরও
বলল না কিছু। খেয়ে রুমে এসে শুয়ে
পরল। সোফাটার দিকে তাকিয়ে আবার
সাবিহার কথা মনে পরল।ভাবল ম্যাম আসার
আগে এটাকে সরাতে হবে,নইলে
নিজের কাছে পাবে না।
খুব সকালবেলা রওনা হলো ও।ওর
শাশুরকে জানাল কখন গাড়িতে উঠল।
দুপুরবেলা পৌছালো ও খুলনায়। এত লম্বা
জানিং অনেকদিন পর করলো। পুরো
কাহিল অবস্থা কিন্তু মনের মধ্যে
কোথায় যেন খুশি একটা ভাব।বাস
থেকে নেমে দেখে সাবিহার বাবা
আর ওর দুলাভাই ওর জন্য অপেক্ষা
করছে।সাথে তিতুনও হাজির ওকে
দেখে দৌড়ে এসে কোলে উঠল।
পরে ওর শাশুর আর দূলাভাইকে সালাম করল
কুশলাদি জিজ্ঞাস করে বাসার পথে রওনা
হলো।
ওদিকে তিতুন যখন বাসস্ট্যান্ডে যাবার
জন্য রেডি হাচ্ছিল তখন সাবিহা জিজ্ঞেস
করে,-বাবা কোথায় যাচ্ছ এই দুপুরবেলা?
-আংকেলকে আনতে।
-কোন আংকেল?
-বলবো না।
-বলো না কে আসতেছে?
তখন তিতলি বললো -আমাদের মেহবুব
আংকেল!!
কি?? কথাটা শুনে যেন সাবিহার মাথায় বাঁজ
পরল।ও তারাতারি মায়ের কাছে গিয়ে
জানতে চাইল,
-মা মেজর আসতেছে?
-হুম
-আমাকে বলো নি কেন?
-তোকে বলতে মানা করছে ও।তুই নাকি
কস্ট পাইছিস ও আসে নি তাই?এরজন্য
সারপ্রাইজ।
ও আর কিছু না বলে রান্নাঘর থেকে
চলে আসল।বোনের কাছে এসে
চেচাঁল কিছুক্ষন সে অন্তত কেন বলে
নি ওকে?? নিজের রুমে গিয়ে কাঁদল।
এখন কি করবে? ইচ্ছে করছে দৌড়ে
কোথাও পালিয়ে যায়।মেহবুব এসে কি
করবে এই চিন্তা করেই ওর ঘাম ছুটে
যাচ্ছিল।তখনই শুনে কলিংবেলের শব্দ।
ও আর উঠে না। একটু পর শুনে ওর মা
আর বোন ডাকছে।এখন আর না গিয়েও
উপায় নাই,চোখ নাক মুখ মুছে ড্রয়িংরুমে
গেল,দেখল মেহবুব তিতুনকে
কোলে নিয়ে সোফায় বসা। লং
জার্নিতে পুরো বিধ্বস্ত অবস্থা। অন্য
সময় হলে ওর খারাপ লাগত কিন্তু এখন
মেজাজ গরম হচ্ছে। আর মেহবুব সবার
সাথে এমন ভাবে কথা কথা বলছে আর
এত নিরিহভাবে তাকাচ্ছে যেন ও
দিনদুনিয়ার কিছু বুঝে না, সুবোধ বালক।
সাবিহা মনে মনে বলল,-ব্যাটা বুড়া!!
ওর মা বলল,-মেহবুবকে রুমে নিয়ে যা।
ও ফ্রেশ হোক।
সাবিহা মায়ের কথা মতো মেহবুবকে
নিজের রুমে নিয়ে গেল।ওর হাতে
একটা টাওয়েল দিয়ে বলল,
-আপনি ফ্রেশ হোন বাথরুমে গিয়ে।
আমি আসছি।
ও বলেই পিছন ফিরে চলে আসা ধরছিল
শুনে মেহবুব বলছে,-আরে খালামনি তুমি
এখনো এখানে? পালাবে না? আমি তো
বুঝছিলাম তোমাকে খুজাঁর জন্য হয়ত
পুরো বাংলাদেশ ঘুরতে হবে।

part-২১
এই প্রথম শ্বশুড় বাড়িতে আসার পর বেশ
ভালই লাগছে মেহবুবের। ও তো
প্রথমে ভাবছিল যে এভাবে হুট করে
চলে আসা, তাদের সাথে বিয়েরপর
কোন ভালো সম্পর্ক না রাখা না জানে
পরিস্থিতি কেমন হয় কিন্তু সাবিহার মা বাবা
ওকে খুব আপন করে নিল।আর ওর
বোন এবং দুলাভাইয়ের সাথে তো
আগে থেকেই ভালো সম্পর্ক।
তিতুনদের কথা বলতে গেলে বলতে
হবে যে ওরা পুরো জেকে
ধরেছে মেহবুবকে। একজন হয়
কোলে চড়ছে নইলে আরেকজন
কাঁধে।সাবিহার বোন ওদের বকা দিলেও
এসে ওর কোলে লুকাচ্ছে।ও বাড়িতে
যাবার পর থেকে খাচ্ছেও খুব,
দুপুরবেলা খাবার সময় তো দুদিক দিয়ে
সাবিহার মা আর বোন খাবার হাতে জেকে
ধরল ওকে যেন আজই ওকে সব
খাওয়াতে হবে।মনে মনে ভাবল,-
আল্লাহ বাঁচাও। মুখে সারাক্ষণ হাসি রাখল
তারপরও যাতে ওর ব্যবহারে কষ্ট না পায়
তারা।এত লম্বা জার্নি করে নি অনেকদিন
হলো পুরো হাত পা ব্যাথা করছিল কিন্তু
যার জন্য আসা সে সারাটা ক্ষন মুখ
গোমড়া করে রইল।সবাই যখন সন্ধ্যায়
আড্ডা দিতে ছিল তখনও। মেহবুব ঠিকই
বুঝতে পারছিল ওর মনের অবস্থা।বেশ
কয়েকবার চোখাচুখিও হলো। সাবিহা
আসলে ভয়ে ওরকম চুপসে গেছে।
ওর চুপসানো মুখ মেহবুবকে আরও
আনন্দ দিল।যাই হোক রাতের খাবার পর
মেহবুব যখন সাবিহার সাথে ওর রুমে
গেল তখন ও পুরো বিদ্ধস্ত অবস্থায়।
বিছানায় শোবার সাথে সাথেই গভীর
ঘুমে তলিয়ে যাবে এমন অবস্থা
হয়েছে ওর।তারপরেও রেহাই নেই
তিতুন বায়না জুরে দিল সেও তার
আংকেলের সাথে শুবে।সাবিহার বোন
যত বুঝায় না আংকেল ক্লান্ত তিতুন ততই
জিদ করছে এবার একটু আশাহত হলো
মেহবুব কারন ও চাচ্ছিল কখন একটু
সাবিহাকে কাছে পাবে। বিয়ের আজ ছয়
মাস পর ওরা এক রুমে এরআগে যতই
থাকুক না কেন একএে তখন তো
দূজনের ভাল সম্পর্ক ছিল না তফাৎ এটুকুই
যে তখন ও চাইত না থাকতে আর আজ
সাবিহা চাচ্ছে না।ও অবাক হয়ে দেখল
যে সাবিহা এতক্ষণ কথা বলে নি এখন হঠাৎ
করে বলছে -আপু থাক না ও,ছোট মানুষ
তো।
মেহবুব সব বুঝতে পারল যে আসলে
সাবিহা কি চায়?তিতুন থাকলে তো মেহবুব
কিছু বলতে পারবে না ওকে, তাই ওকে
যেতে দিচ্ছে না। এমনি তে তো
তিতুনদের সাথে ঝগড়া লেগেই থাকে
কিন্তু আজ খুব দরদ দেখাচ্ছে, বাহ ডাবিহা
ম্যাম!!আপনি পারেন ও কিন্তু কতক্ষন
পারবেন? ও কিছুই বলল না শুধু দেখতে
চাইল সাবিহা কি বলে।
শেষে একপ্রকার জোর করেই ওর
বোন তিতুনকে নিয়ে গেল।মেহবুব
বিছানায় বসা ছিল তারা যেতেই ও উঠে
রুমের দরজা লাগিয়ে দিল।সাবিহা বলে
উঠল,
-কি করছেন?
-কান তো গেছে এখন চোখও গেল
নাকি? দেখো না দরজা দিচ্ছি?
-আপনি দরজা খুলুন। আমি বেরবো, পানি
খাব।
-সত্যি তোমার চোখ গেছে।
দেখো না আপু পানি রেখে গেছে
সাইট টেবিলে?
এখন সাবিহা কি বলবে!!?তাড়াতারি বললো,-
নাহ আমি ডাইনিংয়ে গিয়ে খাব।
সারাদিন দৌড়াদৌড়ির পর সাবিহার এই
গোরামীতে মেহবুব খুবই বিরক্ত
হলো।জোরে ধমকও দিতে পারছিল না।
বাসার সবাই শুনবে তাই।
-দেখো ফালতু জিদ করো না,ওখানে
পানি রাখা আছে খেয়ে শুয়ে পর।
-আমি খাব না।
তখন ও পানি ঢেলে সাবিহার মুখের কাছে
গ্লাস নিয়ে বলল,-নাও খাও আমি খাইয়ে
দিচ্ছি।
-আমি খাব না।
-খাও বলছি।এবার একটু জোরে কঠিন
গলায় বলল।সাবিহা ভয়ে তারাতারি পানি খেল
এক চুমুক। মেহবুব হাসল।আসলে তো
ওর পানির পিপাসা পায় নি।ও তো রুম হতে
বেরুবার জন্য বলছে।আজ যাই হোক ও
সাবিহাকে রুম থেকে বেরোতেই
দিবে না। বিছানায় শুয়ে বললো -খালামনি
আমার কাঁধটা একটু চেপে দাও না। পুরো
দিনটা আজ যা ধকল গেল তোমার জন্য
তোমার তো আমার পাশে বসে সেবা
করা উচিৎ।
বলেই সাবিহার হাতটা ধরে নিজের পাশে
নিয়ে বসাল ও।সাবিহা রাগে ভিতরে ভিতরে
জলতে লাগল।
মেহবুব আরও ইচ্ছা করে বলল,-তোমার
ওই নরম হাত দিয়ে আমার কাঁধটা টিপে দাও।
আমার ক্লান্তি চলে যাবে।
-আমি আমার হাত দিয়ে মানুষের গলাও
চেপে ধরে মেরে ফেলতে পারি।
-তুমি তো এমনিতেই আমাকে মারছো
প্রতিনিয়ত।
বলেই ও সাবিহার কোলের উপর শুয়ে
পরল।সাবিহা শত চেস্টা করেও ওকে
তুলতে পারল না। ওর এই অবস্থা দেখে
মেহবুব তো হেসে খুন।
-আচ্ছা দিচ্ছি চেপে, বিছানায় উপুর হয়ে
শোন।
-এভাবে কর না।ভালই তো লাগছে।
-পারব না।বিছানায় শোন।
তখন মেহবুব বিছানায় উপুর হয়ে শুলো।
তখনি সাবিহা ওর পিঠের উপর ধূমধাম করে
দুটো কিল দিয়ে যখনি বিছানা থেকে
নেমে দরজার দিকে এগুলো খপ
করে মেহবুব ওর হাতটা হেচঁকা টান দিয়ে
ধরে ফেলল।এবার মেহবুবের
মেজাজ গরম হয়ে গেল।ঝাঝাঁলো
কণ্ঠে বলল,
-কোথায় যাচ্ছ?
-বাইরে।
-তা তো বুঝলাম।কিন্তু কেন?
-এমনি।
-এমনি, না?চুপচাপ ভালো মেয়ের মতো
শুয়ে পর।আমার মেজাজ গরম করো না
নইলে খুব খারাপ অবস্থা করব তোমার।
আমার সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে।
যাও।
জোরে ধমক দিল মেহবুব।সাবিহা তারাতারি
বিছানার একপাশে গুটিশুটি মেরে শুয়ে
পরল।মেহবুবও শুয়ে সাবিহার গায়ে চাদর
টেনে দিল।শুয়ে চোখ বুঝার সাথে
সাথে ঘুম নেমে আসল।ওর ঘুম ভাঙল
হঠাৎ হালকা ফোঁপানির শব্দে, তখন মধ্য
রাত।ভাল ভাবে তাকিয়ে দেখল সাবিহা
কাদঁছে বিছানায় বসে।উঠে ওর পাশে
এসে বলল,
-কাঁদছ কেন পিচ্চি সোনা।
-কিছুনা।
-বলে ফেল।আর কত মনে জমিয়ে
রাখবা কথা।
-আপনি আমাকে বকা দিলেন কেন?
-সরি।আমার মাথা ঠিক ছিল না তোমার বিহেভ
দেখে।
তুমি তো তিতুন আর তিতলির থেকেও
দুষ্ট।কেন এমন উরু উরু কর বল?আমি
তো তোমার জন্যই এখানে আসছি। তুমি
দূরে থাকলে আমার ভাল লাগে বলো?
বেশ নরম আদুরে কন্ঠেই বলল।
-আপনি কেন আসছেন? আমি আর ঢাকায়
যাব না।
মেহবুব হেসে দিল।-আচ্ছা যাবা না
ঠিকআছে? এখন নিজে ঘুমাও আর
আমাকেও ঘুমুতে দাও।প্লিজ।আমরা কাল এ
নিয়ে কথা বলবো।
বলেই দুজন দুদিকে ফিরে ঘুমিয়ে পরল।
সকালে আগে ঘুম ভাঙল মেহবুবের।
প্রথমে বুজতে পারল না ওর অবস্থানটা
যখন পারলো দেখে সাবিহা আর ও দুজন
একে অপরকে জারিয়ে ধরে ঘুমিয়ে
আছে।গালে গাল, হাতে হাত,ঠোঁটে
ঠোঁট।ঘুমের মধ্যে কখন দুজন
দুজনের পাশাপাশি আসছে কেউ জানে
না। যখন হাতটা সরাতে চাইল তখন সাবিহারও
ঘুম ভাঙলো। ওর আফসোস হচ্ছিল ইস্
এভাবে আরও একটু থাকা যেত।এখনি
তো ম্যাডামের কটরমটর শুরু হবে।
কিন্তু না উলটো সাবিহা লজ্জায় সিটিয়ে
গেল।ও ওর ওড়নাটা খুজঁতে ছিল।মেহবুব
দেখল ওটা ওদের পায়ের কাছে, উঠে
গিয়ে ওড়নাটা ওর হাতে দিয়ে ওয়াশরুমে
চলে গেল।জানে ও এখানে থাকলে
মেয়েটা লজ্জায় মরেই যাবে।

চলবে ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here