“সাবিহার বিয়ে”
পার্ট-: ২৫-২৬-২৭ একসাথে
পার্ট -২৫
মেহবুব গাড়ির লুকিং গ্লাস দিয়ে সাবিহাকে
দেখছিল যতক্ষন পারছিল।এক সময় মোড়
ঘুরতেই সাবিহা আয়না থেকে হারিয়ে
গেল।দেখতে দেখতে হঠাৎ খেয়াল
করল ওর চোখের কোনা ভিজে
উঠেছে,চোখটা ঝাপসা হয়ে আছে।
চশমাটা খুলে চোখটা মুছল,ওর ইচ্ছা
করছিল চিৎকার করে কাঁদতে। মেয়েরা
কত সহজেই কাঁদতে পারে,নিজের
বুকের মধ্যকার কষ্টগুলো কান্নার
মাধ্যমেই বের করে দিতে পারে আর
ছেলেরা শত ব্যাথা সত্ত্বেও তা পারে
না।ব্যাথাগুলো দলাপাকিয়ে বুকের
মধ্যেই থেকে যায়,সময়ের সাথে
সাথে তা আরও বাড়ে।মেহবুবেরও এখন
সেই অবস্থা। বাসায় বোনকে কথা দিয়ে
আসছে যে ভাবিকে নিয়ে আসবে
এখন গিয়ে কি বলবে?? মা বাবা সাবিহাকে
কত ভালবাসে, ওর জন্য তারা মেহবুবের
সাথেও কথা বলে না ঠিক করে।তাছারা ও
তো সাবিহাকে আস্তে আস্তে
ভালবেসেছিল।ওর কথাবলা,হাসা, খুনসুটি সব
কিছু।,রিতার দেওয়া কষ্টগুলো ভুলতে
চেয়েছিল।কখনই সাবিহাকে তা বলে
উঠতে পারে নি কারন ও ভয় পেত যদি
সাবিহা ওর প্রতি ক্ষোভের বশত ফিরিয়ে
দেয় তখন ও বাঁচতেই পারবে না।আর
যখন বলে উঠল তখন সব শেষ!!!!
মেহবুব অফিসে গেল সোজা, বাসায়
ফিরলো না।চাইল যে অফিসের কাজের
মধ্যে ডুবে থাকলে কিছুটা মন খারাপ
কমবে আর কাজ হতে ফেরার পথে
ওর ল’য়ারের সাথে দেখা করবে।
কিসের কি কাজেই মন ফিরাতে পারছিল না।
সারারাতের এত লম্বা জার্নি তারপরও ইচ্ছা
করে অফিসে থাকল,বারবার মোবাইল
বের করে ওদের একএে ঘুরার
সময়ের সেলফি গুলো দেখছিল।
-আমার লজ্জা লাগে আপনার সাথে ছবি
তুলতে।
-কেন?দেখছো সবাই কত সুন্দর করে
ছবি তুলে আর তুমি একজন নাক কুচঁকানো
বুড়ি,শুধু নাক কুঁচকাও।
-আমি মোটেই বুড়ি না,আপনি নিজে
বুড়ো।
-ওই তো তুমি আমার পুচঁকি বউ খালি ঢং কর।
সাবিহাকে ও কত মজা করে বিভিন্ন ভাবে
ভেঙাত আর ও ঠোট ফুলাত বারবার।আচ্ছা
সাবিহা কি এসব স্মৃতি ভুলে গেছে? হয়ত
ও খারাপ ছিল কিন্তু ওদের এসব স্মৃতি
গুলো তো মেহবুব কোন ভনিতা
করে নি বা ওকে কষ্ট দেয় নি তাহলে
সাবিহা কি পারবে সব ভুলে যেতে?ভাবল
হয়ত সাবিহা পারবে কারন ও তো ওকে
ভালবাসেনি উলটো সবসময় ওর বউ
হিসেবে ওর অবহেলাই
পেয়েছে,বিভিন্ন দিক দিয়ে চোখের
পানি ছাড়া তো মেহবুব ওকে কিছুই দেয়
নি।
নাহ্ এদিকে সাবিহা ঠিকই ভুলতে পারছিল না
ওকে।এতদিনের একটা সম্পর্ক যার
মধ্যে হাসি কান্না সব পেয়েছে শুধু বাকি
ছিল ভালবাসা শব্দটার।তাও পেয়েছে,এই
একটা শব্দ ছিল ওর কাছে সবচেয়ে দামি
যখন বুঝতে পেরেছে জীবনে
পরিবারের মানুষ ছাড়াও অন্য আরও একজন
মানুষের ভালবাসা দামী। যে হবে ওর
জীবন সগুী।এই প্রকাশ করার মুহূর্তের
জন্য ও অধীর আগ্রহে অপেক্ষা
করেছে অনেকদিন।কিন্তু আজ যে
ভাবে এই মুহূর্তটা আসল নিজেই ভাবতে
পারে নি যে মেহবুবের মনে এটা জন্ম
নিয়েছে ওরই অজান্তে, যেখানে ও
মেহবুব সম্পর্কে শুধু খারাপ ধারনাই
রেখেছিল।মেহবুবের প্রতিটা সঙ ওর
অসহ্য লাগত, বাধ্য হয়ে চলত এমনকি
খুলনায় ওকে দেখেও কি খারাপ আচারন
করত,ওকি একবারও ভেবেছিল
মেহবুবের মনে এসব ছিল।ওকে
কখনই কিছুই বুঝতে দেয় নি ও।ওর সাথে
কাটানো খারাপ সময়গুলোর স্মৃতিও আজ
মনে পরলো।
ওদিকে মেহবুব বিকেলে কোনমতে
কাজ শেষ করে উকিলের কাছে গেল
তাকে বললো যত তারাতারি সম্ভব
ডির্ভোস পেপার তৈরি করতে।সব কাজ
শেষ করে বাসায় যখন ফিরলো ও
পুরো পুরি বিদ্ধস্ত।কোনমতে
খেয়ে শুয়ে পরলো, বেডসাইট
টেবিলে ওদের ওয়েডিং ছবিটা দেখল।
মনে পরল যখন সাবিহার সাথে রাতে
ফোনে কথা বলত তখন বার বার ছবিটার
দিকে তাকাত, উঠে গিয়ে ছবিটা
আলমারিতে রেখে দিল নইলে ও রাতে
ঘুমুতেই পারবে না কিন্তু তাতেও রেহাই
নেই সোফাটার দিকে তাকিয়ে থাকল
শেষমেষ নিজে উঠে সোফায়
শুলো।কুশনে মাথা এলিয়ে দিয়ে
ভাবতে লাগল ও আসলে সাবিহার সাথে
কতটা খারাপ করছে,একটা মেয়ে কত
সপ্ন নিয়ে আসছিল আর সেখানে ও
দিনের পর দিন মেয়েটাকে বিছানার
বদলে সোফায় থাকতে দিত আর নিজে
বিছানায় মাতালের মতো শুয়ে থাকত।হঠাৎ
টের পেল ওর গা গরম হয়ে যাচ্ছে,
মনে হয় জর আসবে।গরমে
কয়েকদিন দৌড়াদৌড়ির ফল!!
পরদিন সকালে মেহবুবের ঘুম ভাঙল
মায়ের হাতের ছোয়ায়। -কি রে তোর
এত জর আর এখনও ঘুমাচ্ছিস বাবা?তুই
ছোট বাচ্চা?
-টের পাই নি মা।
-তা কেন টের পাবি?মা ছাড়া দেখভালের
আর কে আছে?
মেহবুব বুঝল মায়ের এ নাটক সাবিহা
পর্যন্ত গিয়ে শেষ হবে,হলোও তাই।
অনেক কথা বলার পর সে সাবিহার কথা
উঠাল,
-কত সখ করে বউ আনছিলাম সাবিহার
মতো মেয়ে আমার ছেলের সেই
সুখ সইবে কেন!!?
-মা তুমি না আমাকে ঔষধ দেবার কথা
বলছিলা? তো দাও।
-হ্যা পাঠিয়ে দিচ্ছি।তুই আগে ফ্রেশ হ
তারপর কিছু খ আগে।
ওর বোন ট্রেতে করে ওর জন্য
খাবার আর ঔষধ নিয়ে আসলো। -কিরে
তুই কিভাবে অসুস্থ হলি?ভাবি তোকে
ধোলাই দিছে?
-আমি কি তোর মত শয়তান?
-তা আর বলতে? আচ্ছা ভাবিকে ফোন
দে জিজ্ঞেস কর কি কি ঔষধ খাবি?
-পারবো না তোর ভাবি ভাল ডা. না।সে
আমার ট্রিটমেন্ট ভাল করে করে না আর
তুই যা তো ভাগ এখান হতে।
-তুই না বলেছিলি ভাবি আসবে তা কেন
আসে নি?
-ওর কাজ আছে তাই ব্যস্ত।সে আসবে
না।
-ধূর!! হাহ্ বুঝি না তোর মতিগতি বুঝলি?আমি
মাকে বললাম।
ওর বোন মুখ ঝামটা দিয়ে চলে গেল।
যাক্ ওই বলুক গিয়ে মাকে,ওর ইচ্ছে
নেই।আসলে কোথাও মনের মধ্যে
ওর বলছিল যে সাবিহা আসবে।
মেহবুব নাস্তা আর ঔষধ খেয়ে কোন
মতে অফিসে গেল,দুপুর নাগাত জর
আরও বাড়ল।বুঝলোনা হঠাৎ ওর শরীর
এতটা কেন খারাপ হলো আগে তো
হয় নি।সেনাবাহিনীর সদস্য হিসেবে কত
ট্রেনিং করেছে, ওর শরীর সবসময়
ফিট থাকত আজ সামান্য একটু জরে এত
কাহিল অবস্থা!! মা ফোন দিয়ে বাসায়
যেতে বলল ও ওভাবল আসলে ওর
রেস্ট দরকার।
বাসায় যাবার পথে সাবিহার হসপিটাল সামনে
পরল,ওর মনটা মোচর দিয়ে উঠল।আচ্ছা
সাবিহা কি জয়েন করেছে?একটু দেখে
যাবে?বা ওর বাসা তো হসপিটালের
কাছেই গিয়ে দেখে আসবে ওর ‘ডাবিহা
ম্যাম’ কি করছে?নাহ্ এখন সাবিহার সাথে
দেখা করার মানে নেই,অনেক বিরক্ত
করতো ওকে।তাছাড়া ওরা একজন
আরেকজনকে দেখলে যদি দূর্বল
হয়ে যায়!! সাবিহার হসপিটালের পাশেই
ফুচকা ওয়ালাকে দেখে ওদের ফুচকা
খাওয়ার দৃশ্য মনে পরল।একদিন ওরা খাচ্ছিল
আর বরাবরের মতোই ওরা খুনসুটি
করতে ছিল হঠাৎ দেখে সাবিহার কিছু
স্টুডেন্টস ওদের দিকে তাকিয়ে
আছে,ও তো পুরো পালাই পালাই
অবস্থা। পরে গাড়িতে উঠে সে কি হাসি!!
মোবাইলে ওর ছবি দেখতে দেখতে
বলল-ইস্ সেদিন আর আসবে
#পার্ট-২৬
রাতে মেহবুব অফিসের কাজ নিয়ে বসল
লেপটপে।ওদিকে গায়ে জর আর
মনটাও অসহ্য লাগছিল।কিন্তু কোন উপায়
নেই। খুলনা যাওয়ায় ছুটিতে অনেক কাজ
জমে গেছে।একবার ভাবলো সাবিহার
কাছে যাবে আবার চিন্তা করলো এত
রাতে যাবে ওর বাসায়, ওরা জানে ওরা
সম্পর্কে কি কিন্তু অন্য সবাই তো
জানে না আর দিন হলেও কথা ছিল।অবশ্য
ইতিমধ্যে আশেপাশের ফ্লাটের
লোকজন ওকে চিনে গেছে।আগে
তো অফিসের কাজ সেরেই সাবিহার বাসা।
মাঝে মাঝে খেতও ওখানে।অবশ্য
এখন বরং চাইলেও পারবে না খুব সহজে
যেতে।ইচ্ছে হয় সাবিহার মনের
বিরুদ্ধে গিয়ে ওকে এখানে এনে
জোর করে রাখে।কিন্তু ও তা শত
চেস্টা করেও পারবে না এখন,ইচ্ছা
করলেও ওর সাথে খারাপ আচরণ করতে
পারবে না।এসব ভাবছে হঠাৎ করে
দেখলো ওর ইমেইলে অফিস
থেকে মেইল।মেইল টা চেক করল।
ও দেশের বাইরে জন্য এপ্লাই
করেছিল তার সিলেকশনের লিস্ট।
ওকেও সিলেক্ট করা হয়েছে। ভালও
লাগলো আবার খারাপও লাগল।ভাল লাগলো
একারনে যে এখান থেকে গেলেই
ও সাবিহার সব স্মৃতি ভুলে
যাবে,ডির্ভোসের ডিপ্রেশন হতে
মুক্তি পাবে অন্যদিকে সাবিহারও ওদের
এই বিয়েটা থেকে মুক্তি মিলবে,ঢাকায়
দূজন থাকা মানেই নানা অযুহাতে ওদের
দেখা হওয়া।তাতে দুজনের শুধু কষ্টই
বাড়বে আবার খারাপ লাগলো একারনে
যে সাবিহাকে তাহলে চিরদিনের মতো
হারাবে।
এই চিন্তা করলো সকালে নাস্তার
টেবিলে সবাইকে জানাবে, মা বাবা ওকে
কাছে না পেয়ে হয়ত কষ্ট পাবে কিন্তু
ও এখানে থাকলেও তো তারা ওর
বিয়ের বা ডির্ভোসের ব্যাপারে কষ্ট
পাবেন।তারথেকে এই ই ভাল সবাইকে
যে যার মতো থাকতে দিয়ে ও দূরে
কোথাও চলে যাক।কিন্তু সাবিহাকে
কিভাবে জানাবে আবার ভাবল ওকে
জানিয়েও বা কি হবে ওর তো কিছু
আসে যায় না।
পরদিন সকালে,
-মা একটা কথা ছিল আমি অফিসের একটা
স্পেশাল মিশনে যাচ্ছি মিনিমাম এক বছর
লাগবে।
-আচ্ছা সাবিহাকে কি রেখে যাবি?না নিয়ে
যাবি?
-মা তোমরা জানো এর উওর কি।
-তুই এখনও ওকে চাস না? আসলে কি
করতে চাস বলবি কিছু?
-আমি আর সাবিহা ডির্ভোস নিচ্ছি।নোটিশ
ওর কাছে আগেই গেছে আজকে
লেটারে সাইন করে পাঠিয়ে দিব।
ওর এই কথা শুনে মা আর কিছুই বলতে
পারে না,কান্নাকাটি করা শুরু করল।ভাবি
বললো,
তোমরাএতবড় একটা ডিশিসন নিয়ে
ফেলছো কেউই তো বললা
না,কালতো সাবিহাও বলল না কিছু।
-ভাবি এতে বলার কি আছে।তোমরা তো
সেই প্রথম হতেই সব দেখছো
আমাদের মধ্যকার সমস্যাগুলো আমরা
আলাদাও থাকছি মাসের পর মাস।তো
ডির্ভোস ছাড়া উপায় আছে কোন?
-উপায় আছে,তুই চাইলেই উপায় আছে।
তুই সাবিহাকে নিয়ে আয় বাবা।-বাবা বলল।
মেহবুব আর তখন বলল না যে এখন ও
চায় কিন্তু সাবিহা চায় না কারন তখন এরা ঐ
মেয়েটার পিছনে পরবে। ও ভাল
আছে ভাল থাকুক।
এতক্ষনে মা বলল,-সাবিহার মা বাবাকে কে
জবাব দিবে?
-আমিই দিব, বলে মেহবুব অফিসের ব্যাগ
নিয়ে বের হয়ে আসলো।অফিসে
পৌছেই সাবিহাকে ফোন দিল,
-ব্যস্ত আছ?
-না।বলুন।
-এখনও রাগ আমার উপর?
-না।
-আচ্ছা তোমার মন ভাল করার দুটো কারন
বলি।শোনো,আমার ল’য়ার আজ কাগজ
নিয়ে আসবে আমি সাইন করে
তোমাকে পাঠিয়ে দিব তুমিও করে দিও
আর আমি দেশের বাইরে চলে যাচ্ছি
অফিস থেকে সহসা আর ঢাকা ফিরছি না।
সো মেহবুব নামের বিরক্তিকর অধ্যায়
শেষ হলো তোমার জীবন থেকে।
কনগ্রাচুলেশন।
-আপনিও তো এই বিয়ে শাদি বউ এসব
থেকে বাচঁতে চেয়েছেন সো
আপনার আশা পূরণ হলো শেষমেষ।
কনগ্রাচুলেশন।
-থ্যাংকস।আর হ্যা তোমার বাবাকেও আমি
ফোন দিচ্ছি তুমি কোন স্ট্রেস নিও না।
আমার জন্যই সব সমস্যা আমিই সব সামলে
দিয়ে তারপর যাব।তুমি নিজেকে শক্ত
রেখ প্লিজ। মোটেই কাঁদবা না।বল?
-আমি কাদঁলে আপনার কি এসে যায়?
-তুমি যদি কাঁদ আমি এপাশে ভাল থাকতে
পারব না।
-আপনি তো এটাই চাইতেন।
-আবার পুরোনো কথা?বলছি না খারাপ সব
কিছু ভুলে যাবা আর ভাল টুকু মনে রাখবা।
-আপনার এখনও ইচ্ছে হয় আমাকে বকা
দেওয়ার?
-আমি আর তুমি যখন বুড়ো হয়ে যাব যদি
দেখা হয় দেখবা তখনও আমি তোমাকে
বকব ডাবিহা ম্যাম।
মোবাইলে এরপর ওরা অনেকক্ষন চুপ
করে থাকল শেষে সাবিহা বলল,
-আপনি যাবার আগে আমার সাথে দেখা
করে যাবেন না?
-না যাব না। তাহলে আমি যেতে পারব না।
এই বলে মেহবুব ফোন কেটে দিল।
সাবিহা যে ওদিকে কাদঁতে কাদঁতে অস্থির
হয়ে গেছে তা ও জানে।কিছুই করার
নেই। যখন ওর শ্বশুরকে ফোন দিল
বুঝতে পারছিল না কি বলবে তারপরও সব
বলল তাকে।সাবিহার পরিবারের কেউ
বিশ্বাসই করতে পারছিল না ওদের মধ্যে
এত সমস্যা ছিল কারন ওরা তো নরমালি
তাদের সামনে চলত।ওদিকে ওর উকিল
বলে দিয়েছে সে পেপার নিয়ে
আসতেছে ওর অফিসে।এরই মধ্যে
ওর বন্ধুর ফোন,
-কিরে ভাবিকে জোর করে রাখতে
পারছিস?
-না তা আর হলো কৈ?
-তাহলে তোরা সত্যি ডির্ভোস নিবি?
-ও আমার সাথে থাকতে চায় না।
-তাই সে বলল আর ওমনি তুই ও মানলি?তুই
সত্যি করে বল তো ভাবিকে তুই
ভালবাসিস?
-হ্যা
-রিতার থেকেও?
-হ্যা। আমি ফিল করেছি তা।আর সাবিহা খুবই
ভাল মেয়ে।
-তুই যে দূরে যাবি থাকতে পারবি?
-পারব না মনে হয় আর কিবা করার আছে
পারতে হবে।
-শোন তুই এই একটু হলেই দেবদাস
হওয়া বাদ দে। মানুষ প্রেমের জন্য কি না
করে আর তুই? কাজের কাজ কর
তাইলেই দেখবি সব সমস্যা সলভ।আমি
তোর জবাব শুনেই বুঝতে পারছি ভাবি
সম্পর্কে তোর ফিলিংস।আর ভাবি
তোকে চাবে না কেন গাধা? তোরে
বিয়া করছে কি এমনি এমনি?সে তো
তোর গাধামি দেখে আসতে চায় না।
এখন আমি যা বলব তুই তা করবি, নিজের মাথা
খাটাবি না।
-আচ্ছা শুনব কথা, বল কি বলবি।
ওর বন্ধু ওকে কিছু পরামর্শ দিল।মেহবুবও
কথা দিল শেষ উপায় হিসেবে ও সাবিহার
জন্য হলেও তা করবে।
#পার্ট-২৭
বিকেলে যখন মেহবুবের অফিসে ওর
উকিল আসলো তখন ও ডির্ভোস
পেপারে সাইন করল এবং উকিলকে কিছু
পেপারস দিল আর বললো সাবিহার বাসায়
গিয়ে ওর শিখানো মতে কথা বলতে।
সে কিছুটা আপওি করলেও মেহবুবের
অনুরোধ ফেলতে পারলো না।
যাইহোক সে গেল সাবিহার বাসায়।এদিকে
মেহবুবের গা দিয়ে ঘাম ছুটছে ভয়ে
যদি সাবিহা পেপারস গুলো পড়ে বা অন্য
রিয়েক্ট করে তখন? ও লজ্জায় মরে
যাবে। বন্ধুর কাছে তো বলছে সাবিহা
ওকেও ভালবাসতে শুরু করেছে এখন
যদি তা না হয়!!!?সাবিহার বাবাও ফোন দিচ্ছে,
ও পারছে না ধরতে।কি বলবে?ওর কাছে
তো কোন উওর নেই,থাকত যদি না ও
সাবিহাকে না পেতে চাইত।খারাপ লাগছিল
সাবিহার পরিবারের কথা মনে করে,না জানি
ওকে তারা কতটা খারাপ ভাবছে।
ওদিকে সাবিহা না পারছে নিজেকে
বুঝাতে না পারছে পরিবারকে বুঝাতে।মা
বাবা বোন ভাইয়া এরা বার বার ফোন
দিচ্ছে। মা তো খুব কান্নাকাটি করল,সে
মানতেই পারছে না মেহবুবের মতো
এত ভাল ছেলে এমন করবে।দুদিন
আগেও তো ওরা বেরিয়ে
এলো,মেহবুব তো পুরো ওদের
ফ্যামিলির একজন হয়ে উঠেছিল।তাহলে
কেন এমন করল?নিশ্চই সাবিহা ওকে কষ্ট
দিছে,ওর যে ঘাড়তেড়ামি সভাব!!সাবিহা
জানত যে শেষে এমন কথাই আসবে।
ও বার বার বুঝানোর চেষ্টা করলো
মাকে যে ওদের প্রথম থেকেই
সমস্যা।কিন্তু কে বুঝে কার কথা।
মেহবুবের মা বাবাও ফোন দিল ও
উলটো তাদের বুঝালো-দেখেন মা,
আমাদের তো সেই প্রথম থেকে
সমস্যা ছিল তো আলাদা হয়ে যাওয়াই
ভালো।আর উনি তো এমনিই বাইরে
চলে যাচ্ছে, সে ভালো থাকবে।
-আর তুই?
-মা আমাদের মধ্যে এমন কোন ভালো
সম্পর্ক ছিল না যে আমি কষ্ট পাব।
-কি বলিস তুই? তাহলে মেহবুব যে
তোর কাছে বারবার যেত, অনেক রাত
করে বাসায় আসত,অফিস ছাড়া তো
তোর কাছেই পরে থাকত।ভালো
সম্পর্ক না থাকলে কি এমন হয়?আমিও
এরজন্য তোকে আনার জন্য
জোরাজুরি করতাম না। থাক ওরা ওদের মত।
সাবিহা কি বলবে ভেবে পেল না,পরে
তাদের সাথে দেখা করবে বলে
রেখে দিল।
ও আসলে নিজেই বুঝে নি যে এই
ডির্ভোসটা ওকে এতটা নাড়া দিবে নাহলে
ও তো ঠিকই সব কিছুর জন্য তৈরি
ছিল,কিভাবে সব কিছু ম্যানেজ করবে সব
ভেবে রেখেছিল আর এখন?ও কি
জানত যে মেহবুব ওকে ভালবেসে
ফেলবে আর এভাবে ওর জন্য দরদ
দেখাবে,এখন ও নিজেই তো মনে
মনে ওকে চায়।আজ যদি মেহবুব কঠিন
থাকতো আগের মতো তাহলে
হয়তো ওর মনও কঠিন থাকত।কেন
মেহবুব সেদিন ওকে জোর করে নি?
তাহলে তো আজ একসাথে থাকত।
কেন বুঝে নাই ওই বুড়ো মেজর, যে
সাবিহাও রাগের বশত ওকে দূরে সরিয়ে
দিছে!!
সন্ধ্যায় মেহবুবের উকিল আসলো ওর
বাসায় ডির্ভোসের কাগজ নিয়ে।সাবিহা
ভাবতেই পারছিল না যে এত তারাতারি কাগজ
আসবে।ভাবছিল এখনও হয়ত মেহবুব কিছু
একটা করবে ওকে পাওয়ার জন্য,হয়ত
আরও সময় নিবে তাই তো ওর একটা
ফোনের জন্য দুপুর হতে অপেক্ষা
করছে।কিন্তু ওর সব চিন্তায় পানি পরলো
যখন ওর ল’ইয়ার বলল যে -মেহবুব
সাহেব সাইন করে দিয়েছে,আপনিও
করে দিন।
সাবিহা কথাটা নিজ কানে বিশ্বাসই করতে
পারছিল না। ও কাগজটা হাতে নিয়ে
চোখে অন্ধকার দেখতে ছিল,কাগজটা
পড়বে কি?ওর চোখটা ভিজে
উঠছিল,শরীরও সারাদিন না খাওয়ার পরে
খারাপ লাগছিল খুব।ও তাড়াতারি কাগজে সই
করে দিল,একবারের জন্য পড়েও
দেখলো না পড়েই বা কি হবে জানে
তো ওতে কি লেখা আছে।
কোনমতে তাকে বিদায় দিয়ে এসে
বেডে শুয়ে থাকল।
মেহবুবকে একটা টেক্সট করলো
যে ও সাইন করেছে পেপারে আর ও
যেন ওকে আর ফোন না দেয়। এতে
অবশ্য ওর অভিমানই ছিল বেশি।তারপর
ফোনটাও সুইচ অফ করে রাখল।মেহবুব
ভাবছিল হয়ত সাবিহা ফোনদিয়ে কান্নাকাটি
করবে এই ফাঁকে ও সত্যিটা বলবে কিন্তু
না ওকে হতাশ করে দিয়ে শুধুই বলল ও
সাইন করে দিয়েছে।আর ফোন
দিতেও নিষেধ করেছে, এখন ও কি
করবে? নিজের জালে নিজেই আটকা
পরেছে। তারপরও ও অপেক্ষা করতে
রাজি এরপরও যদি সাবিহা কিছু না বলে তাহলে
ও নিজেই গিয়ে সব সত্যি বলে দিবে
ওকে আর নিয়ে আসবে নিজের কাছে
আপাতত ওর বন্ধুর সাথে এই পরামর্শ করল
যে কিভাবে কি করবে।
পরের দু তিন দিন দুজনের উপর প্রচুর
ঝড় ঝাপটা গেল দু পরিবারকে সামলাতে।
মেহবুবের মা বা ওর উপর নাখোশ হয়ে
কথাই বন্ধ করে দিল, সাবিহার মা অনেক
কান্নাকাটি করল,সাবিহার যদি কোন ভুল হয়
যেন মেহবুব নিজ বুদ্ধিতে ওকে মাফ
করে।কিভাবে বলে যে মা সব ভুল
আমার!! তারপরও কিছু বলল না যে প্লিজ
তোমরা একটু ধৈর্য্য ধরো,আমি
সাবিহাকে আনবো।
ওদিকে সাবিহা নিজেকে সব কিছু থেকে
গুটিয়ে নিয়েছে সবার থেকে
যোগাযোগ অফ রাখছে,মা
বোনকেও বলেছে ওকে যেন
কিছুদিন ডিস্টার্ব না করে, একা থাকতে
চাচ্ছে কিছুদিন , শুধু মাএ হসপিটাল আর ক্লাস
নিয়ে পরে আছে।খাওয়াদাওয়াও করছে
না ঠিকমতো।বারবার ভাবত হয়ত মেহবুব
ওর সাথে কথা না বলতে পেরে বাসায়
ছুটে আসবে নয়ত হসপিটালে আসবে।
হসপিটাল থেকে ফেরার পথে বারবার
চারপাশ দেখত যে মেহবুবের গাড়ি
আছে কিনা।ক্লাসের মধ্যে বসেও বার
বার জানালা দিকে চোখ ফিরাত যদি হঠাৎ
মেহবুবের মুখটা দেখতে পায়!! নাহ
আসে নি ও এতে সাবিহার অভিমান আরও
বেড়ে গেল মেহবুবের প্রতি।
এদিকে মেহবুব সাবিহার খবর জানার জন্য
ব্যাকুল প্রায় ফোনও দিতে পারছে না
আর বাসায়ও যেতে পারছে না শুধু
হসপিটালের বাইরে ওর অফিসের একটা
গাড়ি নিয়ে ওকে দেখে আসলো।
একয়দিনে পুরো শুকিয়ে গেছে ও,
করলো কি ওর ছোট বোনকে সব
বলল,সে তো রেগে মেগে ওকে
মারতে চলে আসলো,পুরো পরিস্তিতি
শুনার পর শান্ত হলো।কথা দিল যে ওকে
হেল্প করবে আর ওর কথা মত কাজও
করবে।পরে মেহবুব ওকে ভালো
মতো বুঝিয়ে সাবিহার বাসায় পাঠাল এটা জানার
জন্য যে ও কি ভাবছে এখন।
সাবিহা তো এদিকে ওর বোনকে
পেয়ে খুব খুশি।খুব গল্প করল তবে
অনেকক্ষন ধরে ও উসখুস করল যে
কিভাবে মেহবুবের একটু খবর পাবে,
ওকি আদৌ চলে গেছে!?একবারও দেখা
করল না ওর সাথে??পরে ওর বোন
নিজেই বলা শুরু করল,
-ভাবি জানো ভাইয়া না ইদানিং অনেক রাত
করে বাড়িতে ফেরে আর খুব
ভোরে বের হয়ে যায়, খায়ও না
ঠিকমতো জানো?আবার মাতলামি করা শুরু
করছে।
শুনে সাবিহার বুকটা ছাঁত করে উঠল।কি!
মেহবুব এসব বাজে কাজ আবার শুরু
করছে?ও জানে এবার ওর জন্যই
লোকটা খুব কষ্ট পাচ্ছে। মুখে কিছু
বলল না অবশ্য। ও ওতো শুনতে চায়
মেহবুবের কথা।
-ভাইয়ার তো ফ্লাইটেরও ডেট ফিক্সড
হয়ে গেছে।কেন তোমাকে বলে
নি?
-নাহ তার সাথে কথা হয়নি
-পরশু যাবে ভোরে।না জানি ওখানে
গিয়ে কি করে।