আঁধার_ভিড়ে_সন্ধ্যাতারা❤ পর্ব ২+৩

#আঁধার_ভিড়ে_সন্ধ্যাতারা❤️
#লেখিকা-মালিহা_খান❤️
#পর্ব-২/৩

আরিয়ান বিস্ময়ে ভ্রু উচায়,ঘাঁড় হাল্কা কাত করে তীর্যক কন্ঠে বলে,
—“তুমি রাশেদ চৌধুরির মেয়ে?”

মায়ার ঘুম পাচ্ছে।ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে সাড়ে চারটা অর্থ্যাৎ প্রায় ভোড় হয়ে গেছে।একবার চোখ কচলে সে উওর দেয়,
—“জি”।

আরিয়ান চোখজোড়া বন্ধ করে।রাশেদের মেয়ে আছে সে জানে।তবে রাশেদ নাকি সবসময় ওর মেয়েকে এইসব থেকে দুরে রাখে।জনসম্মুখে কখনো ওর মেয়েকে আনেনা।হয়তো ভাবে তার হাজারো শত্রুর ভিড়ে,হাজারো পাপের অভিশাপে যদি মেয়েকে হারিয়ে ফেলে।হতে পারে,এই মেয়েই তার সবচেয়ে বড় দূর্বলতা।তাই এ নিয়ে সে ও বেশি মাথা ঘামাতোনা।তার শত্রুতা রাশেদের সাথে।ওর মেয়ের সাথে তো নয়।আর তার মতে,”দুর্বলতায় কেবল দুর্বল ব্যক্তিরাই আঘাত করে।দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে জেতার চেয়ে হেরে যাওয়াও শ্রেয়।”

মায়া ছোট্ট করে একটা হাই তুলে মুখের সামনের চুলগুলো ঘাড়ের পিছে দিয়ে দেয়।ছেঁড়া জামাটা সে খেয়াল করেনি।ফলস্বরূপ উন্মুক্ত হয়ে যায় ফর্সা কাঁধ।চোখ খুলে সর্বপ্রথম আরিয়ানের দৃষ্টি যায় সেদিকে।স্হির হয়ে যায় মনিগুলো।মায়া আবারো হাই তুলে।ঘুমঘুম চোখগুলোতে চোখ পরতেই চট করে ওঠে দাঁড়ায় আরিয়ান।লাইট নিভিয়ে দিয়ে বলে,

—“ঘুমিয়ে পড়ো,আমি এখানেই আছি”।

মায়া মাথা নাড়িয়ে শুয়ে পড়ে।ঘুম পেলে তার হুঁশ থাকেনা।কিছু সময়ের মধ্যই গভীর ঘুমে বিভোর হয়ে যায় সে।
আরিয়ান ফোনটা হাতে নিয়ে ব্যালকনিতে চলে যায়।ভোরবেলা বেশ স্নিগ্ধ পরিবেশ থাকে।আজকের ভোরটা যেন একটু বেশিই স্নিগ্ধ।কিছুক্ষন ফোন ঘাটাঘাটি করে একটা চিরপরিচিত নাম্বারে কল দেয় সে…
—————
মেয়ের চিন্তায় পাগলপ্রায় রাশেদ চৌধুরি।কাল সন্ধ্যা থেকে নিঁখোজ তার মেয়ে।কোন জায়গায় খোঁজ করা বাদ দেয়নি।অতিরিক্ত অনুরোধের কারণেই মেয়েকে বাইরে যাওয়ার অনুমতি দিয়েছিলো সে।সঙ্গে যথেষ্ট নিরাপত্তার ব্যবস্থাও করেছিলো।একটা জরুরি কাজে আটকে গিয়েছিলো নয়তো সে নিজেই যেতো মেয়ের সাথে।এখন আফসোস হচ্ছে কেন সে গেলোনা?

সচরাচর মেয়েকে বাইরে যেতে দেয়না রাশেদ।কখন কোন শত্রু কি করে ফেলবে!মেয়েকে একরকম লুকিয়েই রাখে সে।কাল খুব অনুরোধ করছিলো বান্ধবীর বাসায় যাবে তাই মেনে গিয়েছিলো সে।মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে না করতে পারেনি।সব ঠি কঠাকই ছিলো তবে সন্ধ্যার দিকে ফোন দিয়ে দেখে মায়ার ফোন অফ।এমনকি তার সাথে পাঠানো বডিগার্ডদের ফোনও অফ।তখনই ভয়টা জেঁকে বসে তার।তারপর খোঁজ নিয়ে জানতে পারে।যেখানে মায়া গিয়েছিলো সেখান থেকে ফেরার পথের রাস্তায়ই গাড়িতে ড্রাইভার ছিলো মৃত অবস্থায়।আর বডিগার্ডরা গাড়ির বাইরে তবে তারাও মৃত ছিলো।মায়া ছিলোনা সেখানে।

হঠাৎ কল আসায় চমকে উঠে সে।ভাবনায় ভাঁটা পরে তার।অতি প্যানিকে নাম্বার না দেখেই ফোন তুলে সে।
ওপাশের মানুষটার কথা না শুনেই ক্ষীপ্ত কন্ঠে বলে,

—“হ্যালো,কে?কি হয়েছে?”

রাশেদের এমন উদ্বিগ্ন কন্ঠে বেশ মজা পেলো আরিয়ান।তথাপি একটু ব্যঙ্গ করে বললো,
—“নাম্বার টা দেখে তো ফোনটা তুলবি।কখন কে ফোন দেয় একটু নজরে রাখা উচিত।”

আরিয়ানের কন্ঠ শুনে রাগে ফেটে পড়ে রাশেদ চৌধুরি।এসময় নিশ্চয় তার সাথে রসিকতা করতে ফোন দেবেনা আরিয়ান।তার সকল ধ্যান-ধারনা কেবল একটা দিকেই ইঙ্গিত করে তাহলো,”তাদের শত্রুতার জের ধরে,আরিয়ানই মায়াকে কিডন্যাপ করেছে।”তীব্র জেদ নিয়ে সে চিৎকার সমতুল্য কন্ঠে বলে,
—“মায়া?মায়া তোর কাছে?তুই কিডন্যাপ করেছিস মায়াকে?”

মেয়ের জন্য চিন্তাটা রাশেদ চৌধুরির কন্ঠেই প্রকাশ পাচ্ছে।তাচ্ছিল্যর স্বুরে হাসে আরিয়ান।তারপর যথেষ্ট গাম্ভীর্য রেখে বলে,

—“প্রথমটা ঠি কই ধরেছিস।হ্যাঁ,তোর মেয়ে আমার কাছেই আছে।…তবে দ্বিতীয় ধারণাটা ভুল…

আরিয়ানের কথার মাঝেই গর্জে উঠে রাশেদ।
—“আমার মেয়ের গায়ে যদি একটা আঁচরও পরে তুই দেখিস আরিয়ান।পরিণাম ভালো হবেনা।আমি..।

—“ওই চুপ,তোর কি মনে হয় তোর মেয়েকে আমি রেপ করবো?নিজের মতো ভাবিস সবাইকে?দিনে যে হাজারটা মেয়ের জীবন নষ্ট করিস,খেলনার বস্তু মনে করিস তখন খেয়াল থাকেনা?ওরাও কারো সন্তান?…।

—“ওইসবের সাথে আমার মেয়ের কোন তুলনা হয়না।”

পাশে রাখা একটা কাঁচের শো পিস সজোরে আছাড় মারে আরিয়ান।ঘৃনায় গা ঝাঁ ঝাঁ করছে তার।ঘাড় ঘুড়িয়ে কাঁচের দরজার ভেতর দিয়ে একবার মায়াকে দেখে নেয়।তার আওয়াজে আবার ঘুম ভেঙে গেল নাকি ওর।নাহ্,মায়া গুটিশুটি হয়ে শুয়ে আছে।হাত বাড়িয়ে দরজাটা সম্পূর্ণ আটকে দিয়ে পুনরায় বলে সে,

—“আরিয়ান খান তোর মতো কাপুরুষ নয় যে মেয়েদেরকে শত্রুতার মাঝে টেনে আনবে।আজকে আমি না বাঁচালে তোর মেয়ের অবস্থা কি হত সেটা আর বলার প্রয়োজন বোধ করছিনা।একটা শ্বাস ফেলে শান্ত হওয়ার চেষ্টা করে আরিয়ান তারপর স্বাভাবিক কন্ঠে বলে,তোর মেয়ের সাথে আমার কোন শত্রুতা নেই।কাল পৌছে যাবে বাসায়”।বলেই খট করে ফোনটা কেটে দেয়।

রাশেদ চৌধুরি ধপ করে সোফায় বসে পরে।তার সবচেয়ে বড় শত্রু হওয়ার পরও সে জানে আরিয়ান কেমন।
একবার যখন আরিয়ান বলেছে তার মেয়ের কোনো ক্ষতি হবেনা;মানে হবেনা।তার সিদ্ধান্তে সবসময় অনড় থাকে আরিয়ান।এজন্যই শত্রু হিসেবেও আরিয়ানকে পছন্দ তার।এ যেন বাঘে বাঘে লড়াই।

রুমে যায় আরিয়ান।একদৃষ্টিতে মায়ার ঘুমন্ত মুখের দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকে।ভাবে,রাশেদ চৌধুরির মতো জঘন্য একটা লোকের মেয়ে এতটা ইনোসেন্ট কিভাবে হতে পারে?কি নিষ্পাপ,মায়াবী হয়ে ঘুমিয়ে আছে।

————
সকালে ঘুম ভাঙে মায়ার।আড়মোড়া ভেঙে উঠে বসে সে।
তখনই রুমে প্রবেশ করে আরিয়ান।তার পরণে ফর্মাল গেট-আপ।মায়াকে বসে থাকতে দেখে সে এগিয়ে যায়।
প্যাকেট থেকে ওড়নাটা বের করে মায়ার কোলের ওপর রেখে হাল্কা কেঁশে বলে,
—“পড়ে নাও”।

মায়া কিংকর্তব্যবিমূড় হয়ে তাকায়।এতটা সময় সে এই অবস্থায় ছিলো অথচ তার খেয়ালই নেই।এত গাধা কেন ও!লোকটা না জানি কি ভাবছে।লজ্জায় লাল হয়ে দ্রুত ওড়নাটা গায়ে জড়ালো।আরিয়ান তখন আয়নার সামনে দাড়িয়ে ঘড়ি পরছে।এলোমেলো চুলগুলো হাতখোপা করতে করতে বিছানা থেকে নেমে এক পা ফেলতে নিলেই হাঁটুর ব্যাথায় ককিয়ে উঠে মায়া।পরে যেতে নিলেই শক্ত হাতে তাকে ধরে ফেলে আরিয়ান।একহাত কোমড়ে আর একহাত হাতের বাহুতে।তাকে বিছানায় বসিয়ে দিয়ে ধমকে উঠে বলে,
-“একা উঠতে গেলে কেনো?জানোনা পায়ে ক্ষত?স্টুপিড!!

আরিয়ানের রাম ধমকে ফুঁপিয়ে উঠে মায়া।এত জোরে ধমক তো দুরের কথা কখনো কেউ তাকে বকেওনি।চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পরে তার।

—“Why are you crying?ব্যাথা হচ্ছে বেশি?…মায়া উওর না দেয়ায় আবারো উঁচু গলায় বলে,কথা বলছোনা কেন?

মায়া কাঁদতে কাঁদতেই বলে,
—“আপনি আমাকে বকছেন কেন?”

আরিয়ান হতভম্ব হয়ে যায়।সামান্য ধমকানোয় মেয়েটা এভাবে কাঁদছে।এই মেয়ে কি আসলেই এতোটা বোকাসোকা নাকি অভিনয় করছে।রাশেদ চৌধুরির মেয়ে এতোটা ভালো কি করে হয়?
গলার স্বর নামিয়ে সে বলে,

—“আচ্ছা,ফাইন।বকবোনা আর।এবার কান্না বন্ধ কর।

মায়া কান্না থামিয়ে দেয়।আরিয়ান জুতো বের করে নিচে রাখো।ইশারায় মায়াকে পরে নিতে বলে।বিনাবাক্য মায়া জুতো গুলো পরে নেয়।সাইজ একটু বড় তবে ভালো হয়েছে ব্যান্ডেজে লাগছে না।পকেটে ফোনটা আর রিভলবার টা ডুকিয়ে কাছে এসে আচমকাই মায়াকে কোলে তুলে নেয় আরিয়ান।মায়া ব্যালেন্স রাখতে হুট করে দুহাতে গলা জড়িয়ে ধরে আরিয়ানের।সচকিত হয়ে বলে,

—“কি করছেন?”

আরিয়ান হাঁটতে হাঁটতে বলে,
—“হাঁটতে পারবেনা এখন।আর এতো প্যানিক হওয়ার কিছু নেই।কালও তোমাকে কোলে করেই এনেছি।উড়ে উড়ে আসোনাই।”

মায়া চুপ হয়ে যায়।কথার পিঠে বলার মতো কিছু খুঁজে পায়না।তবে অসস্তি হয় তার।ঘোর অসস্তি।
আরিয়ান এসে গাড়িতে বসিয়ে দেয় তাকে।নিজেও তার পাশে বসে ড্রাইভারকে গাড়ি স্টার্ট দিতে বলে।তন্ময় বসেছে ড্রাইভারের পাশে।আরিয়ান আর মায়াকে দেখে মুচকি হাসে সে।আরিয়ান তখন ফোনে ব্যস্ত।
জামাকাপড় টেনে ঠি কঠাক হয়ে বসে মায়া।তাকিয়ে থাকে জানালার বাইরে।তার ভাগ্য অনেক সহায় এতো ভালো মানুষের কাছে এসেই সাহায্য চেয়েছিলো সে।

দীর্ঘক্ষন পর গাড়ি থামে রাশেদ চৌধুরি বাড়ির সামনে।রাশেদ চৌধুরি ইশারায় দরজা খুলে দিতে বলে।একটানে গাড়ি ঢুকে যায় তাদের বাড়ির ভেতর।আড়িয়ান বাঁকা হাসে…..

চলবে…

#আধার_ভিড়ে_সন্ধ্যাতারা❤️
#লেখিকা-মালিহা_খান❤️
#পর্ব-৩

রাশেদ চৌধুরি দ্রুতপায়ে সামনে যেয়ে দাড়ায়।তন্ময় নেমে মায়ার পাশের গাড়ির দরজা খুলে দেয়।বাবাকে দেখে মুখে মিষ্টি হাসি ফুটে ওঠে মায়ার।আরিয়ান আড়চোখে একবার দেখে আবার ফোনের দিকে দৃষ্টি দেয়।রাশেদ চৌধুরি কে দেখে এমনেই তার রাগ মাথায় চড়ে গিয়েছে বস্তুত এই মুহূর্তে সে কোনো তর্কে জড়াতে চাচ্ছেনা।
গাড়ির ভিতরেই মাথা ঢুকিয়ে মেয়েকে বুকে জড়িয়ে ধরে রাশেদ।মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে,

—“তুমি ঠি ক আছো মা?”

বাবার মনের অবস্থা বুঝতে পারছে মায়া।একহাতে বাবাকে ধরে মৃদু কন্ঠে বলে,
—“আমি ঠি ক আছি বাবা।কিছু হয়নি তো।”

রাশেদ মায়াকে ছেড়ে দেয়।গাড়ি থেকে বেরোনোর জন্য একহাত ধরে বলে,
—“বের হয়ে আসো।”

মায়া বেরোতে নিলেই তার অপরপাশের হাত ধরে টেনে নেয় আরিয়ান।মায়া অপ্রস্তুত হয়ে পরে।তার একহাত টেনে ধরেছে রাশেদ চৌধুরি আর আরেকহাত ধরেছে আরিয়ান।মাঝখানে ফেঁসে গিয়েছে সে।
অত:পর আরিয়ানের দিকে তাকিয়ে চাপা স্বরে বলে,

—“আপনি কি এখন বাবার সামনেও আমাকে কোলে তুলে নিবেন?বলে হাতটা ছাড়ানোর জন্য একটু নাড়াতেই আরো শক্ত করে তা আবদ্ধ করে নেয় আরিয়ান।
মায়া আরো অপ্রস্তুত হয়ে পরে।উনি চাচ্ছেটা কি?এরমধ্যই রাশেদ চৌধুরি বলে,
—“কি হলো মা?বের হও।

মায়া অধৈর্য হয়ে অনুরোধের স্বরে বলে,

—“আমি পারবো হাঁটতে।ব্যাথা নেই তো এখন।…ছাড়ুন”।

আরিয়ান পাত্তা না দিয়ে তন্ময়কে কিছু একটা ইশারা করে।তন্ময় মাথা নাড়িয়ে রাশেদ চৌধুরিকে বলে,

—“আপনার মেয়ে ইনজুরড।হাঁটতে পারবেননা এখন।ফিমেল কাউকে ডেকে বলুন ধরে নিয়ে যেতে।”

রাশেদের মাথায় যেনো বাঁজ পরে।মায়ার গালে হাত রেখে তাড়াহুড়ো করে বলে,
—“কিভাবে?কোথায় ব্যাথা পেয়েছো?”
মায়া কিছু বলবে তার আগেই উনি পাশে দাড়ানো বডিগার্ডদের কিছু একটা ইশারা করে।দু’সেকেন্ডর মাথায় সেখানে তিনজন ফিমেল সার্ভেনট হাজির হয়।
রাশেদ চৌধুরি একটু সরে দাড়ায়।মেয়েগুলা তাকে ধরতে আসতেই মায়া আরিয়ানকে উদ্দেশ্য করে মৃদু গলায় বলে,

—“এবারতো হাতটা ছাড়ুন”।
আরিয়ান বাঁধন আলগা করে দিতেই দ্রুত হাতটা ছাড়িয়ে নেয় মায়া।গাড়ি থেকে বের হওয়ার আগমুহূর্তে সে বলে,
—“ধন্যবাদ”।
আরিয়ান তার দিকে তাকায়না।সামনে তাকিয়েই ভরাট গলায় বলে,
—“সাবধানে থেকো”।
তন্মধ্য আর কোনো কথা হয়না।মায়া ভেতরে চলে যায়।তার পিছু পিছু রাশেদ চৌধুরিও চলে যায়।তন্ময় গাড়ির দরজা আটকে দেয়।আরিয়ান আবারো ফোন নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পরে।শুধু তন্ময় বসার পর বলে,
—“গোডাউনে চল।গুপ্তচরের মুখ থেকে গুপ্তধন বের করে আসি।”

তন্ময় অগোছালো ভাবে হাসে।না জানি আজ কি হতে চলেছে!!
————–—
পরণের জামা পাল্টে নিয়েছে মায়া। ডক্টর ডেকে পায়ের ব্যান্ডেজও চেনজ করে দেয়া হয়েছে।কোনরকম চলাফেরার অনুমতি নাই তার।বাবা তাকে গতকালের ব্যাপারে কিছুই জিজ্ঞেস করেনি।তাই সেও কিছু বলেনি।
নিজের বেডে শুয়ে আছে মায়া।আবারো সেই বন্দি জীবন।আগে তো যাও পুরা বাসায় ঘোরাফিরা করতো এখন পা না সাড়া পর্যন্ত বিছানায়ই থাকতে হবে।যদিও বাসা থেকে বের হলেও একরকম বন্দীই থাকে সে।সবসময় সাথে থাকে এতগুলা বডিগার্ড।বন্দুক নিয়ে যেভাবে আশেপাশে ঘিরে থাকে একরকম ভয়ই করে তার।তারউপর কাল যা হলো বাবা তো মনে হয়না তাকে আগামী তিনমাসের মধ্যেও বেরোতে দিবে।
ভার্সিটিতে পরে সে।সব পড়াশোনা বাসার মধ্যই।রোজকার নোটস বাসায় দিয়ে যাওয়া হয়।পরীক্ষা ছাড়া খুব বেশি প্রয়োজন না হলে ভার্সিটি যাওয়া হয়না।দীর্ঘ-শ্বাস ছাড়ে মায়া।তারও ইচ্ছা করে মুক্ত পাখির মতো ঘুরে বেড়াতে।নির্দিধায় এখানে-সেখানে যেতে।কিন্তু পারেনা।বাবার সব কথা অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলে সে।
বাবা ছাড়া আর কেইবা আছে তার?চোখটা বন্ধ করে ঘুমানোর চেষ্টা করে মায়া।চট করে মাথায় একটা বিষয় আসে,”আচ্ছা,লোকটার নাম টাইতো সে জানেনা।যতদূর মনে হলো বাবা তাকে চিনে।তারমানে সে সেরকম কেউই হবে।বাইরের দুনিয়া থেকে তাকে সর্বদাই দুরে রাখে বাবা।”


একটা কাঠের একটা চেয়ার টেনে বসে আরিয়ান।রুমটায় ভ্যাপসা ভাব।দেয়ালে পুরোনো রক্তের দাগ।আরিয়ান তন্ময়কে উদ্দেশ্য করে বলে,
—“মুখ খুলে দে।শুনি কি বলতে চায়?”

সামনে পড়ে থাকা ব্যক্তিটাকে মুখের কাপড়টা নামিয়ে দেয় তন্ময়।লোকটা হাঁপাতে হাঁপাতে দম নেয়।আরিয়ান হাসে।ভয়ংকর হাসি।
পাশে থাকা বড়ছুড়িটা তুলে নিয়ে ঘোরাতে ঘোরাতে বলে,
—“শেষ একটা সুযোগ দিচ্ছি।নিজ মুখে স্বীকার কর তুই রাশেদের পাঠানো গুপ্তচর।”

লোকটা কোনরকম বলে,
—“আমি..আমি..কারো লোক না।আমি কিছু করিনি।আমাকে ছেড়ে দেন।”

আরিয়ান গর্জে ওঠে। ছুড়িটা যেয়ে লোকটার হাতের বাহুতে ঢুকিয়ে দেয়।কলকল করে রক্ত পরতে থাকে।তন্ময় চোখ বন্ধ করে আবার খুলে।ছুড়িটা বের করে ফেলেছে আরিয়ান।
সোজা বুকে মারতে গেলেই লোকটা বলে উঠে,
—“আমি রাশেদ চৌধুরির লোক।রাশেদ চৌধুরিই পাঠিয়েছে আমাকে।”

পায়রে উপর পা তুলে শান্ত হয়ে বসে আরিয়ান।সন্ধিহান কন্ঠে বলে,
—“কেন পাঠিয়েছে?আমাকে মারতে?”

হাতের বাহু চেপে ধরে রক্ত আটকানোর চেষ্টা করছে লোকটা।আরিয়ানের প্রশ্নের উওরে অষ্পষ্ট স্বরে সে বলে,
—“..জি”।

—“ওহ্,আচ্ছা”।বলে কিছুক্ষন শান্ত থেকে হাতের ছুড়িটা দিয়ে একটানে লোকটার মাথা ছিন্ন করে দেয়।তন্ময় কয়েক কদম পিছিয়ে যায়।আরিয়ানের শার্টে রক্তের ছিঁটা আসে।একপাশে মাথাটা পরে থাকে লোকটার।
আরিয়ান উঠে দাড়ায় শার্টের হাতাটা কনুই পর্যন্ত ওঠাতে ওঠাতে বলে,
—“কাল সকালে এটা সুন্দর মতো পাঠিয়ে দিবি রাশেদের বাসায়।”

আরিয়ান বেরিয়ে যায়।লোকটার দেহটা একবার দেখে নিয়ে তন্ময়ও বেরিয়ে যায়।দীর্ঘ-শ্বাস ফেলে সে।লোকটা তার যোগ্য শাস্তিই পেয়েছে।
—————
শাওয়ার নিয়ে টাওয়াল পরে বেরিয়ে আসে আরিয়ান।আয়নার সামনে দাড়িয়ে চুল মুছছিলো তখনই দেখতে পায় বিছানায় কিছু একটা আলোর রিফলেক্ট পরে জলজল করছে।ভ্রু কুচকে সেদিকে এগিয়ে যায় আরিয়ান।জিনিসটা হাতে নিতেই দেখে একটা সাদা পাথরের পায়েল।এটাতো কাল মায়ার পায়ে দেখেছিলো।মায়া তো নিশ্চয়ই এটা খুলে রাখেনি।হয়তো কাল যখন ডাক্তার মহিলা ব্যান্ডেজ করেছে তখন খুলে রেখেছে আর পড়ায়নি।পায়েলটা হাতে নিয়ে আলমারির দিকে এগিয়ে যায় আরিয়ান।একটা বক্স খুলে সেটা রেখে দেয় খুব সযত্নে…

~চলবে~

[ধীরে ধীরে রহস্য খুলবে।ততদিন ধৈর্য নিয়ে পড়ুন।সবাইকে শুভ রাত্রি❤️]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here